দেয়াল পর্ব – ৮

0
1816

#দেয়াল
পর্ব – ৮
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
সকাল, একটা অনিন্দ্য সুন্দর সকাল।
গরমকাল, কুঁয়াশা নেই, ঠান্ডাও নেই।
মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে, জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে রুমে।
ঘুম ভেঙে যায় তিন্নির। মেয়েটা এ বাড়িতে সবচেয়ে বেশি অসহায়। রামিম তবু তিন্নিকে বলতে পারে সে তাকে ভালোবাসে কিন্তু তিন্নির হাত পা বাধা সাথে মুখটাও। সে বলতেও পারেনা নিজের মনের অব্যক্ত কথাগুলো।
কেটে যায় আর কিছু সকাল।
তিন্নির বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।
রামিম ছেলেটা অসহায়ের মত শুধু তাকিয়ে দেখে তিন্নিকে।
কান্নামিশ্রিত চোখে গলা ভারি করে একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে সিগারেটে টান দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই তার।

মানুষ মাঝেমাঝে কিছু পরিস্থিতিতে পড়ে যেখানে দুইটা উপায় থাকে একটা হলো পারব না, আরেকটা তুই করিস না।

তুই করিস না কথাটা অনেক বড় একটা শর্তের বিনিময়ে হয়।
এমন একটা কথা যেটাকে অমান্য করা যায়না।
অমান্য করলে কয়েকটা মানুষের জিবন নষ্ট হয়ে যাবে। এর থেকে নিজের কষ্টটা মেনে নেওয়াটাই উত্তম মনে করে মানবজাতি।
তবে বিবেকহীনরা অন্য দলে। তারা একবার যা ভাবে তা করবেই।

ছাদে দাড়িয়ে আছে তিথী আর রামিম।
তিথী একটা কথা বলেছে রামিমকে।
খুবই ছোট একটি কথা তবে কথাটার প্রতিক্রিয়া থেকে যাবে সারাজিবন।
কখনো হয়তো ক্ষত হয়ে জ্বলবে আবার কখনো আগুন হয়ে পোড়াবে কখনো বা বরফ শীতল অনুভূতি দিবে।
রামিম জানেনা কোনটা হবে তবে রামিমের উত্তর একটাই – তিন্নি ছাড়া আমার জিবনে কেউ আসবেনা।

তিথী আজ কান্না করেনা। হাস্যজল একটা মুখ নিয়ে মনে মনে বলে,
– রামিম তুই সত্যি তিন্নিকেই ভালোবাসিস। আমি তোর কেউ না।

তিথী চলে যায়। কিছু গল্পের সমাপ্তি এভাবেই হয়ে যায় কিছু গল্প থেকে যায়, জ্বালায়, পোড়ায়, কাঁদায়,ভাবায় আবার হাসায়।
কখনো কখনো এমন মনে হয় যে একটা কিডনি নেই।
বাম পাশটা খালি কখনোবা মনে হয় আমার হ্রদপিন্ড ডানপাশে এরকম হাজারো ভাবনায় কল্পনায় থেকে যায় কিছু গল্প।

রামিম দুদিন হলো বাসায় ফিরেনা।
সিহাবের বাড়ি থাকে।
সিহাব রামিমের বন্ধু।
বাড়ি না ফেরার কারন নিশ্চয় অজানা নয় কারোরই।
রামিমের এত কোলাহল ভালো লাগেনা।
এত মানুষজন এত ভিড়, কেনো এত মানুষ বাড়িতে?
তিন্নির গায়ে হলুদ আজ, কাল বিয়ে।
এত তারাতারি যে বিয়ের ডেট পড়ে যাবে সেটা কেউ ভাবেনি তবে তিন্নিকে তাদের এতটাই পছন্দ হয়েছে যে এত তারাতারি বিয়ের ব্যবস্থা।

কামরুল সাহেব খোঁজ নিয়ে সিহাবদের বাড়িতে আসেন।
রামিম চিৎপটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানছিলো কামরুল সাহেব রুমে প্রবেশ করেন।
রামিম অবাক হয়না, সিগারেটও ফেলে না।
কেউ আসেনি এমন একটা ভাব নেয় রামিম।
কামরুল সাহেব রাগান্বিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মত রামিমের গায়ে হাত তুলেন।
চড় খেয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে মেঝেতে পড়ে গেছে।
রামিম মুচকি হেসে কামরুল সাহেবের পিছুপিছু যায়।
সে জানেও না কেনো মারলো সিগারেট খাওয়ায় নাকি বাসায় না যাওয়ায়?
অবশ্য বাসায় না থাকলে তারই ভালো এমনটাই ভাবে রামিম।
রামিম পিছুপিছু হাটে আর ভাবে আমি তোমার কথা রাখবো বাবা।

বাহ বাড়িটা তো বেশ ভালোই সাজিয়েছে।
আজ রামিম তিন্নির বিয়ে হলে কতইনা ভালো হতো।
দুজনেই আজ হাসতো একে অপরকে দৌড়ে হলুদ লাগাতো, কখনো আলাদা হতে হতোনা তাদের। আগের নিয়মেই চলতো তাদের বৈবাহিক জিবন।
কেউ কাওকে ওগো শুনছো ডাকতো না, ডাকতো রামিম এদিকে আয়।
রামিমও হয়তো রাগ করে ঝগড়া করতোনা।
তিন্নি ভুল করলে চুল টেনে দৌড় দিতো।
দুটো বাচ্চা সবসময় বাচ্চাই থেকে যেতো।
কিন্তু আজ?
বুকে কষ্ট চেপে হাসিমুখে দেখতে হচ্ছে তিন্নির বিয়ের কাজ।
কারন সমাজ কি বলবে?

রামিম বাসায় আসার পর আর বাইরে বেরোয়নি।
ধোঁয়ায় কেশে উঠে রামিম।
দম বন্ধ হয়ে আসে তার। জানালা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, কয়েক মুহুর্ত পরই ঘুম।

তিন্নি পাশে বসে আছে, কাঁদতে কাঁদতে মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে,গায়ে থেকে হলুদের গন্ধ আসছে। মাদকতা আবার কাজ করছে রামিমের।
নাজনীন বেগম মুর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছেন, দরজার পাশে কামরুল সাহেব।
পানির মগ আর বালতি নিয়ে রহিমা কাকি বসে আছেন।
টুনি এ ঘরে আসবেনা তার আবার অসুস্থ মানুষে এলার্জি।
বাকি শুধু রোস্তম মিয়া, সেও এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহলেই পরিপূর্ন।
রামিম চোখ খুলে তিন্নিকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।

তিন্নি মেয়েটা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা,
– বাবা আমি রামিমের সাথে থাকতে চাই।ওকে বিয়ে করতে চাই।

রামিম কিন্তু ঠিকই বলেছিলো কেউ মানেনি।
না তিন্নি না কামরুল সাহেব।
মানিয়ে নেওয়াটাই ভালো তবে রামিমের কি হবে?
ছেলেটার কষ্টে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় তিন্নি।
একবার কি বলা যায়না?
রামিম তোকে অনেক ভালোবাসি।তোর থেকেও বেশি নিজের থেকেও বেশি। আমাকে নিয়ে চলে যা অনেকদুরে, যেখানে কোনো সমাজ নেই নেই কোনো মানুষ যেখানে কেউ জানবেনা তুই আমি দুজন ভাই বোন।

রামিম ঘুমের ঘোরে বলে উঠে,
– তিন্নি চল পালাই, আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। তুই আমার না হলে আমার জিবন বৃথা।

তিন্নি শব্দ করে কাঁদে।
কামরুল সাহেব দরজা ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান, রহিমা কাকি আচলে মুখ ঢেকে বেরিয়ে যান নাজনীন বেগমও চলে যান।
এই সময়টা একান্তই দুজনের।
রামিম – তিন্নির।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে