দেয়াল পর্ব – ৫

0
1921

#দেয়াল
পর্ব – ৫
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
তিন্নিকে দেখতে এসেছে ছেলেপক্ষের লোকজন।
তিন্নিকে সাজিয়ে গুছিয়ে তাদের সামনে বসানো হয়েছে, অথচ মেয়েটাকে এমনিতেই সুন্দর লাগে।
খোলা চুল, কোনো মেকআপ ছাড়া তৈলাক্ত মুখেও মেয়েটাকে সুন্দর লাগে।
এত কাছে থেকে রামিম মেয়েটাকে দেখেছে কখন খারাপ লাগে তার অজানা নয়।
তবে রামিমের সবসময়ই ভালো লাগে তিন্নিকে।
রামিম বাসায় ফিরে বিকেলে।
সারাদিন রন্টি মামা তাকে নিয়ে ঘুরেছে।
রন্টি মামা ভিষন খুশি, জিরু বাবা উপায় বলে দিয়েছে।
রামিম নিজের কথা বলেনা জিরু বাবাকে।
বলে কি লাভ? সে তো জানে সম্ভবনা এই দেয়াল ভাঙা।

বাসায় লোকজন দেখে রামিম বুঝে ফেলে তিন্নিকে দেখতে এসেছে।
চুপচাপ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয় রামিম।
তিথী এসেছে।
দরজা ধাক্কাছে রুমের।
রামিম দরজা খুলে দেয়।
তিথী অভিমানী কন্ঠে বলে,

– তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করলাম আর তুই না খেয়েই চলে আসলি? আসবিই তো আমি তোর কে!
– আরে রন্টু মামা নিয়ে গেছিলো ঘুরতে আমি কি করতাম?
– তোর কিছুই করতে হবেনা চুপচাপ বস এখানে।

তিথী টিফিন বক্স থেকে বিরিয়ানি বের করে প্লেটে রাখে।
রামিম মুগ্ধ চোখে দেখে মেয়েটাকে।
শীত চলে যাবার সময় হয়েছে রোদের খুব তেজ।
এখনই ঘাম বের হচ্ছে।
তিথী ঘেমে গেছে কিছুটা।
রামিম জানালা খুলে দেয়, সুড়সুড় করে বাতাস ঢুকে রুমে।
ঠান্ডা বাতাসে ঘাম উবে যায় তিথীর।

– আয় তোকে খাইয়ে দেই।
– আমি নিজের হাতে খাই?
– নাহ আমি খাইয়ে দিবো।
– আচ্ছা দরজা আটকে দিয়ে আয়।
– নাহ খোলা থাকুক।

তিথী হাতের আঙুলে অল্প কিছুটা বিরিয়ানি তুলে রামিমকে খাইয়ে দেয়।
রামিমের ঠোঁটের স্পর্শে পুরো শরির শিরশির করে উঠে তিথীর।
ইচ্ছা হয় একটা কিস করতে।
রামিম তৃপ্তি নিয়ে খায়। মেয়েটা বিরিয়ানি বেশ ভালোই রান্না করে।
অল্প অল্প করে খেতে থাকে রামিম।
হঠাৎ মনে পড়ে তিথী খেয়েছে?

– কিরে তুই খাইছিস?
– নাহ।
– কেনো?
– এমনিতেই।
– হা কর।

রামিম তিথীর মুখে খাবার তুলে দেয় তিথী চোখ বন্ধ করে ফেলে।
রামিম ছেলেটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে তিথী।
আস্তে করে আঙুলে কামড় দেয় তিথী, রামিম উহ করে উঠে।
তিথী হাসতে থাকে।
রামিম রাগি চোখে তাকায় তিথীর হাসি দেখে রাগ পড়ে যায়।
মেয়েটাকে কখনো ভালোভাবে খেয়াল করেনি রামিম। মেয়েটার গালের দুপাশে দুটো তিল।
তিন্নির পিঠের দিকে আছে কিন্তু গালে নেই।

ডানগালে তিল থাকলে সে নাকি সুখি থাকে সবসময় আর বা গালে থাকলে দুঃখি।
এই মেয়েটার তো দু পাশেই আছে।
সুখ দুঃখ মিলিয়েই তার জিবন।

সন্ধার পর তিন্নি রুমে আসে।
রামিম তাকায়না তিন্নির দিকে।
বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে – বস।
তিন্নি বসেনা।
দরজা আটকে দিয়ে রামিমের কাছে আসে।
– এদিকে তাকা।
– বাহ সুন্দর লাগছে তোকে। পছন্দ করেছে নিশ্চয়?
– আমি মানা করে দিছি তাদের।
– কেনো?
রামিম উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করে।
– ছেলের বয়স বেশি। আমি বাবাকে বলে দিয়েছি এই বিয়ে হবেনা। বাবা মানা করে দিয়েছে তাদের।

রামিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তবে সে ভেবেছিলো তার জন্য হয়তো মানা করেছে।
যাই হোক আপাতত বিয়ে হওয়ার চান্স নেই এতেই রামিম খুশি।
তিন্নির দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারেনা রামিম।
শাড়ি, চুড়ি, গোছানো চুল, মেকআপ আর ছোট একটা টিপ অন্যরকম লাগছে আজ।

সাজানো গোছানো একটা মেয়ে আর তিন্নি পার্থক্য অনেক।
এই মেয়েটা বউ হওয়ার যোগ্য আর তিন্নি মেয়েটা সারাজীবন পাশে থাকার।
এই সাজগোছে বড় অচেনা তিন্নি।
মেকআপের আড়ালে ঢেকে গেছে তিন্নি। সামনে দাড়িয়ে আছে চেনা অচেনা একটা মেয়ে।

রামিম তিন্নির হাত ধরে।
তিন্নি ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নেয়।
– রামিম এভাবে হাত ধরবিনা, ভুলে যাসনা আমি কে।

রামিম পিছিয়ে আসে।
তিন্নি মেয়েটা আলোর মতো, ধরার চেষ্টা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুনা।

কামরুল সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়েন।
রামিম তিন্নির বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে তাকে।
একবার ভাবছে দুজনের সুখের কথা আবার সমাজের কথা।
এই সমাজ একটা দেয়াল দিয়ে রেখেছে।
সেটা ভাঙতে গেলে ক্ষতিপূরণ স্বরুপ মান সম্মান হারাতে হবে।

রাত হয়েছে পাশাপাশি শুয়ে আছে কামরুল সাহেব আর নাজনীন বেগম।
কামরুল সাহেব এমনিতেই কম কথা বলেন আর নাজনীন বেগমও ইদানীং কথা বলছেনা খুব একটা।
মোটামুটি নিরব একটা পরিবেশ, এই রুমে যে দুজন মানুষ আছে সেটা বুঝা অসম্ভব। মাঝে মাঝে কামরুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন।

তিথী তিন্নি আর রামিম তিনজন বসে ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।
তিথী বকবক করতেছে রামিম তিন্নি কিছুটা চুপচাপ।
তিথী রামিমকে ভালোবাসলেও সে চায় রামিম যার সাথেই থাকুক ভালো থাকুক।
তাই তিন্নির প্রতি কোনো খারাপ কিছু কাজ করেনা তার।
রামিম তিন্নিকে ভালোবাসলে তার কি করার আছে।

রামিম আর তিন্নির মাঝে এই কদিনে অনেক দুরত্ব বেড়েছে। আগের মতন কথা হয়না ঝগড়া করা হয়না রাগ অভিমানও হয়না।
শীতের শেষ হাল্কা বাতাস বইছে।
হঠাৎ মেঘ গর্জন করে উঠে।
তিন্নি তিথী দুজনেই জড়িয়ে ধরে রামিমকে।
কয়েক মুহুর্ত পরই তিনজনের অট্টহাসির শব্দ পাওয়া যায়।
তিনজনের হাসির শব্দে কামরুল সাহেব একটু স্বস্তি পান।
এ বাড়ি এখনো ঘুমায় নি জেগে আছে।
কয়েকটা মানুষ জেগে আছে তবে ভিতরটা মরে গেছে। ভিতরে পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে, মাছি উড়ছে ভোঁ ভোঁ করে। কয়েকটা পোকা উঠে আসছে হ্রদপিন্ড থেকে।
তবুও তারা জেগে আছে এই সমাজের নিয়মের কারনে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে