দুই পথের পথিক পর্ব-২০

0
130

#দুই_পথের_পথিক
#পর্বঃ২০
#বর্ষা
”নাহিন জানো একসময় না আমার খুব বাচ্চা পছন্দ ছিলো।বলতে পারেন মা হওয়ার স্বপ্ন প্রতিবেলাতেই দেখতাম। একজন ভালো মা হওয়ার স্বপ্ন।মায়ের ভালোবাসা কি তা তো তখন জানতাম না,আকুলতা ছিলো অনেক বেশি..”

কুহেলিকা নাহিনের বুকে মাথা রেখে বলতে থাকে।আজ জ্যোস্না রাত।বেলকনির দরজা খোলা হওয়ায় অন্ধকার রুমও যেন আলোকিত হয়ে আছে।কুহেলিকার কথার মাঝেই নাহিন বলে ওঠে,

”আমার কিন্তু বাচ্চা অনেক ভালোই লাগে। তুমি বললে আমরা কিন্তু…”

কুহেলিকা চোখ রাঙানি দেয় নাহিনকে।নাহিন হেসে ফেলে।কুহেলিকা সিরিয়াস হয়ে বলে,

”কাল সকালে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
”কি সারপ্রাইজ?”
”আমার ওয়াদা পূরণের একাংশ”
”মানে?”
”সকাল হোক জানতে পারবে।এখন ঘুমাতে দেও তো।”

নাহিনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে কুহু। পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির স্থান যেন এই স্থানটাই।ক্লান্ত নাহিনও আদূরে বউকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।আবার কালকে কি হয় তার জন্যও তো তর সইছে না তার।নাহিন চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।

নাহিন ঘুমিয়ে পড়তেই রাত দুইটার দিকে জেগে ওঠে কুহেলিকা।নাহিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মোবাইল হাতে নেয়।ভুলে করে আর ভিডিও সেন্ট করাই হয়নি তার। তাইতো তা মনে পড়তেই ঘুম উড়ে গেছে।দ্রুত ভিডিও পাঠায় কুহেলিকা।সত্যিই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বড্ড উপকারী।আর একটা দিন দেরি হলেই হয়তো আর প্রমাণগুলো পাওয়া যেতো না।থ্যাংকস টু আল্লাহ।

কুহেলিকাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে নাহিন ভ্রু কুঁচকে মিটিমিটি চোখে তা দেখে।তার ঘুম যে বড্ড পাতলা।তার আদুরিনী বাঁধন ছুটাতেই তার ঘুম উড়ে গেছে।তবে তা জানতে দেয়না সে তার বউকে।বিশ্বাস আছে।আর যেহেতু বলেছে কাল তার জন্য সারপ্রাইজ আছে। তাহলে নিশ্চয়ই আছে।অন্ধ বিশ্বাস করছে তবে নিজের ভালোবাসার ওপর ভরসা করছে।আটবছরে যতোটুকু চেনা যায় তার চেয়েও বেশি যেন কুহেলিকা তার কাছে।তবে মেয়েটার রহস্যগুলো সে নিজেই সামনে আনছে।নাহিন চায়ও না কুহেলিকা তার মতের বিরুদ্ধে নাহিনের প্রভাবে রহস্যের সমাধান করুক।নাহিন জানে কুহেলিকা সঠিক সময়ে ঠিক বলবে তাকে।

মধ্যরাতে রাস্তায় জাগ্রত অধিকাংশ মানুষ হয় নয়তো চোর নয়তো পুলিশ।চোর জাগে চুরির উদ্দেশ্যে আর পুলিশ জাগে সাধারণ জনগণকে এদের হাত থেকে রক্ষা করতে।আর এই দুই শ্রেণীর বাইরে যারা তারা হলো খেটে খাওয়া মানুষ। রিক্সায় করে যাত্রী পৌঁছে দেয় এই মধ্যরাতেও। অবশ্য এই খেটে খাওয়া মানুষের বদনামে কয়েক চোরও রাতের বেলা রিক্সায় যাত্রী নিয়ে লুটে খায় যাত্রীকে।সম্মানহানি হয় এই খেটে খাওয়া মানুষদের।আজও তেমনি ঘটছে।

রাস্তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী তৌফিকুল সাহেব আর লামিয়া বেগম হাঁটছিলেন। নিত্যদিনের অভ্যাস এই দম্পতির মাঝরাতে হাঁটতে বের হওয়া।বয়স বেশি হয়নি বিয়ের। তাইতো এই রোমাঞ্চকতা। তৌফিকুল সাহেব জারিফের এক্স সিক্রেটারি। জারিফের কালা অধ্যায় সম্পর্কে প্রায় সবই জানা ওর।বিয়ের আগে আগেই চাকরি ছেড়েছে।পেয়েছে বড় অংকের টাকা। তবে লোভী মানুষদের সাথে থাকলে লোভও যে বেড়ে যায় কয়েকগুণ।তাইতো জারিফের শত্রুকে তারই গোপন কয়েক বৈঠকখানার ঠিকানা বলে লুফে নিয়েছে বেশ বড় বড় কয়েক অংক।লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।তাইতো তৌফিকুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু।

লামিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর মাথা বরাবর গুলি করে মাস্ক পরিহিত লোকটা। তৌফিকুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর মাথা বরাবর আঘাত করে কেউ।জারিফ দাঁড়িয়ে। তাদের ব্যবসায় ধোঁকাবাজির জায়গা নেই।আর যে ধোঁকা দেয় তার বেঁচে থাকার জায়গা নেই।তবে এতো সহ্য মৃত্যুও যে কাম্য নয়।

জারিফের ইশারায় লোক তিনটে তৌফিকুল আর ওর বউয়ের দেহ সরিয়ে ফেলে। তৌফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় গোডাউনে আর লামিয়ার দেহ!লামিয়ার দেহ যায় পদ্মার মাছেদের উদ্দেশ্যে।

জারিফ বাড়ি ফিরে দেখে বউ তার চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তবে জারিফের এক চড় খেতেই সেই চোখ রাঙানি চোখ দুটো মাটিতে নিবদ্ধ হয়।জোভান,জারিফ,জিদান প্রত্যেকের বউই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। ভালোবেসে কিংবা সমাজের ভেদভাও দূর করতে তারা বিয়ে করেনি।তারা তো বিয়ে করেছে বউ যাতে থাকে নিশ্চুপ, নির্বিকার। তার কথা বলা থাকবে বারণ।চোখ থাকবে মাটিতে।বাচ্চাগুলোকেও বাড়িতে রাখেনি।হোস্টেলেই থাকে ইয়ামান,রুহি,জয়া,জয়।জোভানের এক ছেলে জয়।জারিফের দুই সন্তান ইয়ামান,রুহি।আর জিদানের বড় মেয়ে জয়া।জয়া কলেজে ভর্তির প্রিপারেশন নিচ্ছে।ইয়ামান ক্লাস এইটে,রুহি টেইনে।আর জয় ক্লাস সিক্সে।

জারিফের চড় খেয়ে চুপচাপ থাকলেও মনে মনে স্বামীর পতন চায় ইরুসি।আজ কতগুলো বছর ধরে সংসার ধর্মে নিজেকে আটকে রেখেছে। শশুর-শাশুড়ির সেবা করছে তাও কারো মন পেয়ে ওঠা হলো না।কান্না লুকিয়ে ইরুসি সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়।জারিফ বউয়ের চলে যাওয়ায় আরো রেগে যায়।জুতা ছুড়ে মারে ওপরের দিকে।তবে ওপরে ছুঁড়ে মারা জিনিস সবসময় নিজের মুখেই লাগে।তেমনি জুতাটাও পড়েছে জারিফের মুখে।

****

তানজিল চৌধুরী এখন বোনের বাসাতেই থাকেন। বোনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন কষ্টের আভাস পান।প্রশ্ন জাগে সন্তান কই তোর!তবে আর জিজ্ঞেস করে ওঠা হয় না।তানজিল চৌধুরী এই রাতেও ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।অন্ধকারের সাথে যেন অন্ধকার অন্ধকার খেলছেন!

”তানজিল?”

বোনের কন্ঠ পেতেই ফ্লাসলাইট চালান তিনি।সামনে বড় বোন দাঁড়িয়ে। সামনের সোফায় জায়গা ফাঁকা থাকতে কি ভেবে যেন তানজিল চৌধুরী জায়গা ছেড়ে দেন। ভাইয়ের পাশেই বসেন কাশফিয়া চৌধুরী।বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করেন।

”আপা ঠিক আছিস তুই?”
”হুম”

চোখ বন্ধ করে সোফার হাতলে মাথা রাখেন তিনি।মৃদু স্বর।ভাইকে বলার আছে অনেককিছু।তবে দ্বিধাবোধ কিছুই বলতে দিচ্ছে না।

নাহিদ খান বিছানায় কাসফিয়াকে না দেখে ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে আসতে নিয়েও ঘরে ফিরে যান।ভাই এর সাথে হয়তো দুঃখের ভাগ করবে।নাহিদ খানও তো চান তার বউটার চাপা দুঃখ একটু কমুক।কম তো সময় একসাথে নেই।প্রায় চল্লিশ বছর একসাথে!নাহিদ খান বেলকনিতে চলে যান।ফোন এসেছে।

কাসফিয়া চৌধুরী কিছুক্ষণ নিরব কান্না কেঁদে বলে ওঠেন,

”মাই আমি তোদের সাথে অন্যায় করেছিলাম পালিয়ে এসে।তাই তোদের সাথে করা অন্যায়ের শাস্তিও পেয়েছি আমরা”

”কি বলতে চাচ্ছিস আপা?”

তানজিল চৌধুরী যেন কিছুই বোঝেন না।তবে আন্দাজ করতে পারেন কি বলতে চলেছেন কাসফিয়া। কাসফিয়া চৌধুরী বলে ওঠেন,
”আব্বুকে সন্তান স্নেহ থেকে দূরে সরিয়ে আমি কখনো সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি।আমি মা হতে পারিনি।”

তানজিল চৌধুরী কি বলবেন ভেবে পান না।তবে সান্ত্বনা দিতে বলেন,
”আপা তুই ভুল ভাবছিস।আব্বা তোকে অনেক ভালোবাসতো তুই তো জানিস।আব্বা সবসময় তোর সুখের কথাই চিন্তা করেছে।আর মা হতে পারা না পারা সব তো আল্লাহর হাতে বল!”

কাসফিয়া চৌধুরী যেন শান্ত হওয়ার পরিবর্তে আরো জোরেই কেঁদে ওঠেন।তানজিল চৌধুরী একপাশে বোনকে জড়িয়ে নেয়।নাহিদ খান স্ত্রীর কান্নার শব্দে ছুটে আসেন। অষ্টাদশী প্রেমিকা থেকে আজ এতো বছরের বউ তার। ছোট বাচ্চার মতোই তো সামলে এসেছে বউকে তিনি।তাইতো তানজিল সরিয়ে বউকে ঘরে নিয়ে এসেছে।এই সেই বলে ভুলানোর চেষ্টা করছে।

*****

কায়েস মির্জা জুলফিকারকে ইচ্ছে মতো জুতা পেটা করছে।কারণ একটাই কুহেলিকাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।তবে রুমানা আফরোজ যেন আরো ক্ষেপে ওঠেন তাতে। জুলফিকার আর ওনার মাঝে এসে অনেকটা চেঁচিয়েই বলে ওঠেন,
”নিজের ছেলেরে মারতাছেন এমন একটা মেয়ের জন্য যে আমাদের রক্তই না।নাকি ওই মেয়ের মায়ের সাথে…”

কায়েস মির্জা ঠাসিয়ে চড় লাগান স্ত্রীর গালে। চেঁচিয়ে বলে ওঠেন,
”তোমাকে যদি আরো আগে এই চড়টা মারার বোধ হতো তবে আজ এমন কিছুই হতো না।”

”তুমি আমায় মারলে?থাকবো না আমি তোমার সংসারে আর।আজই ভাইয়ের বাড়ি চলে যাবো!”(রুমানা আফরোজ)

”যাও যাও।দেখো গিয়ে তোমার ভাই তোমায় জায়গা দেয় কিনা!তোমার ভাই জায়গা দিলেও ভাবী যে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে তার নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি।যাও যাও”(কায়েস)

”আব্বু তুমি আমার আম্মুর সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না”(জুলফিকার)

”তোর থেকে শিখতে হবে কিভাবে কথা বলবো।যা বেড়িয়ে যা এই বাড়ি থেকে।যার বাড়িতে থাকছিস তাকে নিয়েই বাজে মন্তব্য করছিস।বেহায়া, অকৃতজ্ঞের দল”(কায়েস)

কায়েস মির্জা যেন কুহেলিকার সেদিনের সাহায্যে ভালো হয়ে গেছেন।কুহেলিকার শরীরে তার রক্ত না থাকলেও কুহেলিকার রক্ত আছে তার শরীরে।জীবন বাঁচাতে সেদিন দিয়েছিলো তো তাকে।বয়স বাড়লে‌ অধিকাংশ পাপের কথা মানুষের মস্তিষ্কে ঘোরে।আর তাইতো মানুষ অস্থিরতায় পাগল প্রায় হয়ে যায়।

রুমানা আফরোজ ব্যাগ গুছিয়ে বাইরে এসেছেন।সোফায় বসে কায়েস মির্জা দেখছেন।তবে আটকানোর মতো মন মানসিকতা নেই তার।এই বিবেকহীন মানুষটাকে বিবেক বান বানাতে আগে কষ্ট যে দিতেই হবে।বোঝাতে হবে এই যে বিশাল বাড়িতে থাকছে খাচ্ছে তা তার নিজের নয় বরং অন্যের দান।তাই যেন সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।নাকি সেই মানুষটির প্রতি ক্ষিপ্রতা!তবে চিন্তাও হচ্ছে এই শেষরাতে বউ তার নেশায়লুপ্ত ছেলে নিয়ে কোথায় যাবে!

****

ঢাকাবাসী যেন আজ বড্ড অবাক।একসাথে দুইটা চমকপ্রদ সংবাদ। প্রথমত আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদ চৌধুরী টেক্সটাইল রিওপনিং আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে লোমহর্ষক। দুইটা ভিডিও তবে দুইটাতেই দোষী জারিফ মুনতাসির।সাংবাদিক আগে পৌঁছেছে।তার কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশের আগমন।

সকাল সকাল এতো চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ছুটে গেছে কুহু আর নাহিনেরও।কুহেলিকা হাসে তার মানে কাজ হয়েছে। আর নাহিন ভ্রু কুচকায়।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে দু’জনই নিচে যায়।প্রেসের লোকেরা ঘিরে ধরেছে পুরো বাড়ি। দারোয়ান ভয়ে গেট খুলে পালিয়েছে।সদর দরজা লাগানো।তাইতো ধাক্কাধাক্কি তীব্র শোনাচ্ছে।নাহিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুহেলিকা ফর্মাল ড্রেসে এসে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে পুলিশের লোকেরা ভেতরে ঢুকে লাঠি দিয়ে বেরিকেট বানিয়ে আটকায় সাংবাদিকদের।

নাহিন এর দিকে তাকিয়ে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করে,

”স্যার মিষ্টার জারিফের রুমটা কোথায়?”

নাহিন হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয়।বুঝে ফেলে কুহেলিকার প্রতিটি চাল। তবে সামনে কি হয় তাও দেখতে চায়।জারিফকে বাইরে নিয়ে এসেছে অফিসাররা।তবে এখনো নেশা কাটেনি জারিফের।

ফাতেমা বেগম আর রাব্বি মুনতাসিরও ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসেছেন রুম থেকে।রাব্বি মুনতাসির কাকে কাকে যেন ফোন দিচ্ছেন।ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তবে কেউই ফোন ধরছে না তার।রাব্বি মুনতাসির নিরুপায় হয়ে পুলিশদের কাছে আগে রিজন জানতে চান।রিজন যদি হয় ঠুনকো তবে টাকা দিয়ে মিটিয়ে নিবে এমনই ভাবছেন তিনি।তবে উনি তো আর জানেন না পুলিশ নয় মিডিয়া তার ছেলের কালো চিট্ঠা ফাঁস করছে।

”আপনার ছেলে জারিফ দুইমাস পূর্বে একটা পাগলিকে রেপ করার চেষ্টা করছে,আবার তার ঠিক দুইদিন আগে সে ওভার ব্রিজের নিচে এক পথচারী মেয়েকে…! সিসিটিভি আমাদের কাছে আছে। তবে মেয়েটার চেহারা দেখা না গেলেও আপনার সুপুত্রের চেহারা সুস্পষ্ট। তাছাড়া কাল রাতে খুনও করেছে আপনার ছেলে এক নারীকে। লাপাত্তা তার স্বামী”(পুলিশ)

”স্যার টাকা লেনদেন করে যদি…”(ফাতেমা)

”মিসেস আপনি আমাকে ঘুষ দিতে চাচ্ছেন!আপনি জানেন পুলিশকে ঘুষের কথা বলার অপরাধে আপনার জেল হতে পারে!”(পুলিশ

”সরি স্যার সরি।মহিলা মানুষ বেশি বুঝে,এতো গভীরভাবে নিবেন না‌ দয়া করে।স্যার আমার মনে হচ্ছে আমার ছেলেকে কেউ ফাসাচ্ছে।বোঝার চেষ্টা করুন ”(রাব্বি)

নাহিন আর ইরুসি ওপর থেকেই সব দেখছে।ইরুসির মুখে প্রশান্তি স্পষ্ট।নাহিন লক্ষ্য করে।তবে নাহিন বোঝে না কেন জারিফের স্ত্রী তাকে বাঁচাতে ছুটছে না। নাকি জারিফ তার বউয়ের সাথেও প্রতিনিয়ত অন্যায় করে যে তার বউয়েরও তার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছে!নাহিন ভাবে না আর। তবে নিজের রুমে চলে যায়।যাওয়ার পূর্বে নিজের বাবা-মায়ের রুমের দরজা বাইরে দিয়ে খুলে দিয়ে যায়।সে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে বাইরে দিয়ে দরজা আটকে দিয়েছিলো।চায়নি তার মা কষ্ট পাক কোনো কারণে।তবে এই কারণটা তো তার মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে!তবে কুহু কোথায় গেল এই চিন্তাতে মগ্ন থেকেই রুমের দিকে অগ্রসরিত হয় নাহিন।

”কুহু?”

অবিশ্বাস্য স্বরে নাহিন জিজ্ঞেস করে।কুহেলিকা রুমে বসে আছে।কুহেলিকা নাহিনের অবিশ্বাস্য মুখশ্রী দেখে বলে,
”আরে সদর দরজা দিয়েই এসেছি। তুমি মায়ের ঘরের দিকে গিয়েছিলে তাই দেখনি।”
”এসব কিভাবে হলো কুহু?”(নাহিন)
”কোন সব?(কুহু)
”বলবে?(নাহিন)

কুহেলিকা নাহিনের কাছে এসে বলে ওঠে,”রেপ কেস গুলোর ভিডিও আমিই দিয়েছিলাম।খুন, লাপাত্তা বিষয়ে আমিও জানি না।হয়তো জারিফেরই শত্রু।”

”তুমি ভিডিও পেয়েছিলে কোথায়?”(নাহিন)
”বাংলাদেশে প্রথম যেদিন আসি। সেদিনটায় আমি ব্লগিং করেছিলাম।রাত এগারোটায় ঢাকায় পৌঁছেছি একটু না ঘোরাঘুরি করলে হয়। বারোটার দিকে আমার বাস ছিলো।তবে শর্টকাট নিতে বাইক ভাড়া করে নির্জন দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ক্যামেরার ভিডিও তে চোখ আটকে যায়। একজন পুরুষ এক নারীর সাথে .….!আমার সহ্য হয় না।চারপাশ নির্জন।তাইতো আমি আর ওই বাইকের ভাইয়া মিলে জারিফকে সেদিন রেকর্ড করার পাশাপাশি ইচ্ছে মতো মারি।সেখান থেকে কিছুই দূরে ফেলে আসি..আর”(কুহেলিকা)

”আর আর কি কুহেলিকা?”(নাহিন)

”দরজায় দেখো”

কুহেলিকার কথায় দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় জোভান দাঁড়িয়ে আছে।ছুটে এসে কুহেলিকার গাঁয়ে হাত দিতে নেবে তার পূর্বেই হাত ধরে ফেলে নাহিন।জোভান যেন পাগলা কুত্তায় পরিণত হয়েছে।নাহিনকে মারতে শুরু করে।নাহিনও কম কিসে।লেগে যায় দুজনার।কুহেলিকা থামাতে গেলে জোভান ধাক্কা মারে। টেবিলের কোণায় লেগে কেটে যায় ওর মাথা।ধস্তাধস্তির শব্দ পুলিশেরা উপরে চলে আসে।থামায় দু’জনকে।জোভানকে থ্রেট দিয়ে যায়।ভাই জেলে যাচ্ছে নিজে জেলে যাওয়ার যেন বন্দোবস্ত না করে!

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে