ত্রিভুজ প্রেম পর্ব – ১৭

0
1125

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৭

নীল বিয়ে বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজেও পাপড়িকে খুজে পাচ্ছে না।
– কি ব্যাপার, গেলো কই মেয়েটা?
অবশেষে পাপড়ি খুজে না পেয়ে রূপাকে গিয়ে পাপড়ির কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু রূপাও জানে না পাপড়ি কোথায়। নীল মনে মনে বলছে
– ঐসময়ের ঐ ঘটনার জন্য পাপড়ি কি রাগ করে কোথাও চলে গেলো?
সব জায়গায় পাপড়িকে খুজে নীল যখন হতাশ হয়ে বাড়ির ভিতর যেতে লাগলো তখনি তার সাথে অবিনাশ বাবুর সাথে দেখা হয়। নীলেকে হতাশ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে নীল, এমন হতাশ দেখাচ্ছে কেন?
– আংকেল, পাপড়িকে খুজে পাচ্ছি না।
– আমি পাপড়িকে অনেকক্ষণ আগে ঐ রুমটাই যেতে দেখেছিলাম, তুমি ঐ রুমটা একটু দেখে আসো।
– ওকে

নীল ঐ রুমে গিয়ে দেখলো পাপড়ি ঘুমাচ্ছে। পাপড়িকে ঘুমাতে দেখে নীলের খুব রাগ ওঠে।
– তাকে আমি সারা বাড়ি খুজতে খুজতে হয়রান আর সে ঘুমাচ্ছে।
বলেই নীল পাপড়িকে ডাক দেওয়ার জন্য কাছে যেতেই পাপড়ির ঘুমন্ত চেহেরা দেখে আর ডাক দিতে পারলো না।
একদম ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমচ্ছে পাপড়ি। তার গালে এখনো হলুদ লেগে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখের সামনের চুলগুলো নীল আস্তে করে সরিয়ে কানের পেছনে সরিয়ে দেয়। নীলের ইচ্ছে করছে পাপড়ির কপালে একটা চুমো এঁকে দিতে, কিন্তু সে অধিকার সে এখনো পাইনি।
– সারাদিন অনেক খাটুনি খেটেছে পাপড়ি।  থাক এখন আর ডাক দিয়ে লাভ নেই। একটু ঘুমিয়ে নেক তারপর কথাটা বলবো।

সকাল হতেই আফিয়া বেগম আর দাদী  বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছোটখাটো বিয়ে হলেও তো অনেক কাজ করতে হবে তাদের। এসব ব্যস্ততার মধ্যে পাপড়িকে কথাটা জানানোর কথা ভুলেই গেছে আফিয়া বেগম।
অপরদিকে পুষ্প কেঁদেই চলেছে। নিজেকে এ বিয়ের জন্য কিছুতেই প্রস্তুত করতে পারছে না সে। বারবার মা,দাদী,পাপড়ি সবার মুখটা তার চোখের সামনে ভাসছে। যে ছেলেটার নাম জানে না, কখনো দেখেই নি তার সাথে কিভাবে থাকবে সে। পাপড়ির সাথে একবার কথা বললে হয়ত তার মনটা এখন হালকা হবে এই ভেবে সে নীলকে ফোন দেয়। কিন্তু নীল ফোন ধরছে না।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আজ রূপার বিয়ে। রূপা কোন ভাইবোন না থাকায় বিয়ের সবকিছু দেখাশোনা করছে পাপড়ি আর নীল। নীল তার ফোন চার্জে দিয়ে  বাহিরে কাজ করছে। তাই পুষ্পর ফোনটাও সে দেখে নি। আর বিয়ের এসব ব্যস্ততায় নীলও আফিয়া বেগমের ফোনের কথা পাপড়িকে বলতে ভুলে গেছে। 

এদিকে রাইয়ানের মন খুশিতে নাচছে। আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা তারপরই আমি পুষ্প কে নিজের করে পাবো। কিন্তু তার মনে একটাই কষ্ট রয়ে গেলো পুষ্প যে এ বিয়েতে রাজি তা একবার সে নিজের মুখে রাইয়ানকে বললে হয়তো তার মনে একটু শান্তি পেতো।

বড়যাত্রী চলে এসেছে। পাপড়ি বড়যাত্রীদের আমন্ত্রণে দাঁড়িয়ে আছে সরবত দিয়ে। খুব সুন্দর করে সেজেছে। লাল শাড়িতে একদম বউ বউ লাগছে পাপড়িকে। দূর থেকে নীল পাপড়িকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।
হঠাৎ নীল লক্ষ করলো বরের সাথে আসা বরের বন্ধুগুলো পাপড়ি বাজে নজরে দেখছে যা নীলের একদম সহ্য হচ্ছে না। নীল সেখানে গিয়ে পাপড়িকে ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে এলো।
-ছাড় আমাকে, ব্যাথা পাচ্ছি তো।
বলতে নীল পাপড়িকে ছেড়ে দিলো।
– তুই আমাকে ঐখান থেকে এভাবে টেনে এনেছিস কেনো?
-তুই ঐখানে যাবি না।
– কেনো?
– এতো প্রশ্নের উত্তর তোকে দিতে পারবো না। তোকে বলেছি যাবি না তো যাবি না। আর যদি যাস তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তুই গিয়ে রূপার সাথে বসে থাকবি আর সবসময় রূপার কাছেই থাকবি। মনে থাকবে?
(রাগী কন্ঠে)
নীলকে এতটা রাগে যেতে দেখে পাপড়িও ভয় পেয়ে যায় তাই চুপচাপ নীলের কথা মেনে নিয়ে রূপার কাছে চলে যায়।

সারাদিন কেটে যায়। রূপার বিয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে। নীল খেয়াল করলো পাপড়ির মুখটা শুকিয়ে গেছে।
– পাপড়ি কি সারাদিন কিছু খায়নি? আমার কথা মানতে গিয়ে হয়তো রাগ করে কিছুই খায়নি। এই মেয়েটাকে নিয়েও পারা যায় না আর।
নীল গিয়ে পাপড়িকে জিজ্ঞেস করলো
– খেয়েছিস?
পাপড়ি কিছু বলছে না।
-বুজেছি খাস নি। আমার সাথে রাগ করে না খেয়ে থাকবি?
পাপড়ি কিছুই বলছে না। পাপড়িকে চুপ থাকতে দেখে নীল এবার রাগ ওঠে যায়। থমক দিয়ে বলে
– কি বলছি শুনতে পারছিস না? খাস নি কেন?
-তুই তো বলেছিস রূপার সাথে যেন সবসময় থাকি, ওর কাছ থেকে যেন দূরে না যায়।
– তাই বলে তোকে আমি খেতে মানা করেছিলাম। তুই বস এখানে আমি খাবার নিয়ে আসছি।
নীল গিয়ে পাপড়ির জন্য খাবার নিয়ে আসে।
– নে, খেয়ে নে।
– না খাবো না।  আমার খিদে নেই।(রাগ করে)
নীল হাত ধুয়ে খাবার মাখিয়ে পাপড়ির সামনে ধরে বলে
– নে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পাপড়ি নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। খাবার মুখ নিচ্ছে না। নীল আবার ধমক দিয়ে বললো
– খাবার মুখে নে।
পাপড়ি এবার  মুখে খাবার নেয়। নীল পাপড়িকে খাইয়ে দিতে দিতে আবার বলতে শুরু করে,
-তুই কেন বুজিস না, আমি যা বলসি তোর ভালোর জন্যই বলসি। বরের বন্ধুগুলো একদম ভালো না। তোকে অন্য নজরে দেখছিলো। তাই তোকে তখন ঐখান থেকে টেনে এনেছিলাম। আর তুই এতে আমার সাথে রাগ করে খাবার খাস নি।
নীলকে এভাবে দেখে পাপড়ির মনে আবার ঐ অনুভূতিটা জেগে ওঠলো। এমন কেন লাগছে তার। পাপড়ি নীলের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
– দেখ এখানে আমার সাথে এসেছিস তুই।  তোর সকল দায়িত্ব জেঠিমা…
বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো নীল। নীলকে এমন করতে দেখে পাপড়িরও ঘোর ভাঙ্গে। নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
– তোকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি।  কাল জেঠিমা আমার ফোনে কল দিয়েছিলো তোর সাথে কথা বলার জন্য।
– কি কথা?
– তা বলেনি। তবে মনে হচ্ছে কোন জরুরি কথায় বলতে চেয়েছিলো। ওহ! আমার ফোন তো চার্জেই ফেলে রেখছি। তুই গিয়ে ফোনটা নিয়ে জেঠিমাকে কল দে। আমি হাত ধুয়ে আসছি।

ফোনটা নিয়েই পাপড়ি দেখলো, পুষ্প ও আফিয়া বেগমের অনেকগুলো কল।
– এতো কল কেন দিয়েছে মা আর আপু। আর নীলটাও কি, ফোনটা নিজের সাথে রাখবে না।
বলেই কল দেয় আফিয়া বেগমকে।
-হ্যালো মা। কি ব্যাপার, কি হয়েছে? এতো কল কেনো দিয়েছো?
-ফোন রেখে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তোরা? সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি?
– আরে মা, বিয়ে বাড়িতে কাজ নিয়ে বিজি হয়ে গিয়েছিলাম। কি হয়েছে, সেটা বলো?
– শোন, পুষ্পের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
– ওহ! এটা তো খুশির সংবাদ।
– হ্যা। আর কালকেই পুষ্পর বিয়ে।
– কিহ! কি বলছো এসব? কালকেই বিয়ে? এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন মা? আর আমাকে ছাড়া তোমরা আপুর বিয়ে ঠিক করে ফেললে?
– এসব কথা, এখন ফোনে বলা সম্ভব না। তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।
– কিন্তু এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে। ট্রেন তো পাবো না আর বাসে এতো রাতে এতোটা পথ আসা রিক্সের ব্যাপার।
– আচ্ছা তাহলে তোরা ভোর সকালের ট্রেনেই রওনা হয়ে যা। আর শোন রূপার কাছে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস। ওকে কথা দিয়েও আমরা ওর বিয়েতে আসতে পারিনি।
– হুম।
– রাখি এখন।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে