ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৫

0
1115

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৫

– কিরে এখনো রেডি হস নি? কখন বলে গেছি রেডি হতে তোকে? একটু পরই তো পুষ্পর পরিবার চলে আসবে।
শায়নের এমন কথায় রাইয়ান বললো
-আরে একটু এদিকে আয় না? কি পরবো তাই তো বুজতে পারতেছি না। তুই একটা কিছু একটা সিলেক্ট করে দে প্লিজ?
শায়ন রাইয়ানের রুমের ভিতর ঢুকে একদম অবাক হয়ে গেল।
– কিরে, কি হাল করেছিস রুমের কাপড়-চোপড় দিয়ে?
– কি করবো, একটা জামাও পছন্দ হচ্ছে না। তুই একটা কিছু পছন্দ করে দে?
-হা হা হা। তুই তো দেখছি মেয়েদের থেকেও বেশি।
রাইয়ান একটু রেগে বললো
– তোর হাসি শেষ করে আমাকে একটু হেল্প কর, কোনটা পড়বো বল?
– আচ্ছা।
শায়ন অনেক খুঁজাখুঁজি করে একটা হলুদ পাঞ্জাবি বের করে বললো
– এটা পড়। এটাতে তোকে খুব ভালো মানাবে।

আজ রূপার গায়ে হলুদ। সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। রূপাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে বাহিরে নিয়ে এলো পাপড়ি। একটু পরই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
নীল হা করে তাকিয়ে আছে পাপড়ির দিকে। খুব সুন্দর লাগছে। হলুদ শাড়িতে দারুণ লাগছে পাপড়িকে। নীলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি কাছে গিয়ে বললো
– জানি আমি সুন্দরী তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবি আমার দিকে?
পাপড়ির এমন কথা শুনে নীল তার নজর অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। আর বলে
– কে বলেছে যে তোকে দেখছি। তোর মতো শাকচুন্নিকে কে দেখবে? এতো মেকাপ করেছিস যে এখন তোর চেহেরাটাই একদম বাজে লাগছে।
নীলের এ কথা শুনে পাপড়ি রাগী চোখে তাকায় নীলের দিকে। আর কোন কথা না বলে চলে যায় সেখান থেকে।

আফিয়া বেগম আর দাদী বাসায় আসতেই মি. রাশেদ তাদের সালাম দিয়ে ভিতরে আনে।
তাদের আসতে দেখে মিসেস মাহমুদা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে থাকে।
অনেকক্ষণ খোশগল্প করার পর দাদী একবার  জিজ্ঞেস করে ফেলে
– তা ছেলের মাকে তো দেখছি নাহ? তিনি কোথায়?
দাদীর মুখে এ কথা শুনে মি. রাশেদের মুখটা গম্ভীর করে বলে
– আসলে রাইয়ানের মায়ের শরীরটা ভালো নেই তাই রুমে বিশ্রাম করছে।
কথাটা শেষ করতেই শায়ন রাইয়ানকে নিয়ে আসে।
রাইয়ানকে দেখে দাদী বললো
– ছবির থেকে তোমায় বাস্তবে আরো সুন্দর লাগছে।
দাদীর এমন কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় রাইয়ান।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর আফিয়া বেগম  রাইয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
– তোমার কোম্পানিটার নামটা জানা হলো না?
– চৌধুরী গ্রুপস ওফ কোম্পানি।
রাইয়ানের মুখে কোম্পানিটার নামটা শুনেই নামটা খুব পরিচিত মনে হলো আফিয়া বেগমের। কিন্তু কোথায় শুনেছে তা মনে পড়েছে না।
রাইয়ানের একটা জরুরি কল আসায় রাইয়ান সেখান থেকে ওঠে চলে যেতেই মি. রাশেদ বলে ওঠে
– তা রাইয়ানকে তো আপনাদের পছন্দ হয়েছে, তাহলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা যাক।
মি. রাশেদের এমন কথা শুনে দাদী খুশি হয়ে বললো
-হ্যা, তা তো করতেই পারি। তবে ছেলে মেয়েদের আলাদা একসাথে একটু কথা বলে নিলে তাদের জন্য ভালো হতো না?
– আর কথা বলে কি লাভ, আমার ছেলে তো আপনাদের মেয়েকে পছন্দ করছেই। তবে পুষ্পর কি রাইয়ানকে পছন্দ হয় নি?
– না তেমন কোন বিষয় না।
– তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা মেয়ে বিয়ে করে আনার জন্য একদম প্রস্তুত। আর আমি চাচ্ছি আগামী শুক্রবারেই বিয়ের দিন ঠিক করতে।
শুক্রবার শুনতেই আফিয়া বেগম ও দাদী দুজনেই চমকে ওঠে।  আফিয়া বেগম বলে
– শুক্রবার তো পরশুদিন। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে তারিখ কেনো?
আফিয়া বেগমের সাথে সাথে দাদীও বলে ওঠে
-হ্যা, বউমা তো ঠিকি বলছে। বিয়েতে এতো তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। আমরা বরং একমাস পর বিয়ের তারিখটা রাখি।
তাদের কথা মি. রাশেদ মুখ গম্ভীর করে বললো
– আমি জানি আপনারা এ বিয়েতে এতো তাড়াহুড়ো করতে চান না। তবে আমি আপনাদের কিছু দেখাতে চাই আসুন আমার সাথে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আয়নার সামনে গিয়ে পাপড়ি নিজের চেহেরা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে
– সত্যিই কি বেশি মেকাপ করে ফেলছি? বেশি বাজে দেখা যাচ্ছে আমায়?
পেছন থেকে নীল এসে বললো
-হ্যা, অনেক বাজে দেখে যাচ্ছে তোকে।
বলেই দু হাত দিয়ে পাপড়ির মুখে অনেকগুলো হলুদ লাগিয়ে বললো
– এখন অনেক সুন্দর লাগছে।
নীল এমন কান্ডে পাপড়ি রেগে ফায়ার।
– রামছাগল, নীলের বাচ্চা এটা কি করলি তুই?
নীল হাসতে হাসতে বললো
– তোকে একটু মেকাপ করে দিলাম।
– তোকে আজ আমি হলুদ দিয়েই গোসল করাবো, দাড়া তুই।
– এ্যাহ, আমাকে ধরতে পারলে তো তুই।
পাপড়ি দুই হাতে হলুদ বাটা নিয়ে নীলকে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ নীলকে ধরতে পেরে পাপড়ি নীলকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে হলুদ লাগাতে থাকে।
এই মাখামাখিতে দুজনের খেয়ালই ছিলো না যে তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। যখন খেয়াল হয় দুজনেই সরে দাড়ায়। দুজনের ভিতরের কেমন একটা অনুভূতি কাজ করছে। নীল তার অনুভূতিগুলোর কারণ জানতে পারলেও পাপড়ি তার অনুভুতির কারণ বুঝতে পারছে না। পাপড়ি মনে মনে বললো
– আগে তো কখনো নীলের কাছে গেলে এমন ফিল করিনি, তবে আজ কেন এমন ফিল করলাম।
অন্যদিকে নীল তো মহাখুশি। তাকে পাপড়ি এমনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। সারাজীবন পাপড়িকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে চায় সে।

মি. রাশেদ একটা রুমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে  দূর থেকে তার বাবাকে আফিয়া বেগম ও দাদীকে দেখিয়ে বলেন
– ইনি আমার বাবা। কিছুদিন আগে বেইনস্টোক করে এক পাশের ব্রেইন ডেমেজ হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন বাবার হাতে বেশি সময় নেই। যেকোন সময় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারে, আমরা যেন ওনার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ না রাখি।
কথাটা বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মি. রাশেদ আবার বলে
-আমার বাবা আমার সন্তানদের মধ্যে রাইয়ানকে একটু বেশিই ভালোবাসে। তাই শেষ বেলাই তিনি রাইয়ানের বিয়েটা দেখে যেতে চান। যাওয়ার আগে নিজের নাত-বৌয়ের চেহেরাটুকু দেখে যেতে চান। এবার বলুন আমি কি খুব তাড়াহুড়ো করছি?

মি. রাশেদের মুখে এসব শুনে আফিয়া বেগম ও দাদীর মন খারাপ হয়ে যায়। তারা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মি. রাশেদকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষাও নেই তাদের কাছে।
মি. রাশেদ আবার বললো
– যখন শুনেছি রাইয়ান পুষ্পকে পছন্দ করে তখন মনটা আমার খুশিতে ভরে গেছে। পুষ্পকেও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। পুষ্প এ বাড়িতে এলে তাকে আমরা আমাদের মেয়ের মতোই রাখবো। এবার আপনারা বলেন আপনাদের কি মত?
মি. রাশেদ এর কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
– আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এ শুক্রবার বিয়ে কিভাবে সম্ভব? এছাড়া পুষ্পর ছোটবোন পাপড়ি সেও বাড়িতে নেই। আর যৌতুক….
কথাটা শুনতেই মি. রাশেদ বললো
– ছি..ছি.. বোন এসব কি বলছেন? আল্লাহর রহমতে আমাদের টাকা-পয়সার কোন কমতি নেই। আমরা শুধু আপনার মেয়েকে চাই। আর আমি জানি সব বাবা-মা এরই তাদের মেয়েকে ধুমদাম করে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু এখন আপাতত আমরা ছোট করে বিয়েটা সম্পন্ন করি পরে না হয় বড় করে আয়োজন করবো। কথা দিচ্ছি আপনার মেয়ের আদর-যত্নে কোন কমতি রাখবো না।

মি. রাশেদের এমন কথা শুনে দাদী বললো
-আপনি যদি কিছু না মনে করেন আমি বৌমায়ের সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই?
– হ্যা হ্যা কেনো নয়, আপনারা কথা বলুন আমি নিচে যাচ্ছি।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে