ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৪১

0
1140

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

নীলিমার বিয়ে শেষ হওয়ার পর পুষ্প ও রাইয়ান তাদের বাসায় চলে যায়। বাসায় যাওয়ার পর রাইয়ান খেয়াল করলো পুষ্প এখনো তাকে এড়িয়ে চলছে, যা রাইয়ান মেনে নিতে পারছে না।

রাতে পুষ্প এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে এসে দেখে রাইয়ান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। পুষ্প দুধের গ্লাসটা রাইয়ানকে দিয়ে পেছনে ফিরতে রাইয়ান বললো,
– এখন তো আর বিয়ে বাড়িতে নেই আমরা, তাহলে এখন আমাকে ইগনোর করার কারণ কি?
পুষ্প নিরাশ হয়ে রাইয়ান দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি শুধু তোমাকে নয় বাবা,মা, নুরী সবাইকেই এড়িয়ে চলছি।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– কিন্তু কেন?
– তুমি কি ভুলে গেছো আর কিছুদিন পরই আমাদের ডিভোর্স হতে চলছে? আর মাত্র ৭ দিন থাকবো আমি এ বাড়িতে এরপরই আমাকে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।

পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ানের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। এ কদিন পুষ্পর সাথে থাকতে থাকতে  সময়টা কখন চলে গেলো রাইয়ান তা বুঝতেই পারে নি।

পুষ্প আবার বললো,
– এ বাড়ি আর বাড়ির মানুষদের মায়ায় আর জড়াতে চাই না আমি। তাই সবাইকে এড়িয়ে চলছি। এতে তোমার আমার দুজনেরই মঙ্গল। আর তোমাকেও বলছি যতটা পারো আমাকে এড়িয়ে চলো।

বলেই পুষ্প রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাইয়ান এতোক্ষণ নির্বাক হয়ে পুষ্পর কথা শুনচ্ছিলো। কিছুই বলার নেই তার। অবশ্য পুষ্পর কথায় তো ঠিক।
নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগী হয়ে যায় সে।

দেখতে দেখতে ৭ দিন পেরিয়ে গেলো। আজ কোর্টে রাইয়ান আর পুষ্পর ডিভোর্স হবে।

সকাল থেকেই মিসেস মাহমুদা কান্না জুড়ে বসেছে। তিনি রাইয়ানকে বার বার বুঝাচ্ছে।
– রাইয়ান একদিন তোকে আমি বলেছিলাম পুষ্পকে ডিভোর্স দিতে আর আজ সেই আমিই বলছি পুষ্পকে তুই ডিভোর্স দিস না। পুষ্প ছাড়া আমার এই ঘরবাড়ি, সংসার সব অসম্পূর্ণ। তোর জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পুষ্পর থেকে ভালো মেয়ে তুই কখনো খুজে পাবি না।

রাইয়ান তা মাকে বুঝানোর জন্য বললো,
– মা সেটা সম্ভব না। এ ৩ মাস আমরা একে অপরকে বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি।

মি. রাশেদ বললো,
– স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তো বন্ধুর সম্পর্কই থাকে বাবা। তুই আবার একটু ভেবে নে।

– বাবা আমার ভাবাতেই তো বাস্তবতা পাল্টে যাবে না। ৩ মাস আগেও তো এটাই হওয়ার কথা ছিল। আর পুষ্পও তো ডিভোর্সটা চায়। আমাদের জন্য তো আর আমি পুষ্পকে আটকে রাখতে পারি না।

অন্যদিকে পুষ্প নিজের সব কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিয়েছে। রুমের সব কিছু গুছিয়ে রুমে চোখ বুলিয়ে চোখে ছলছল পানি নিয়ে ভাবছে,
– কাল থেকে এসব কিছুতে আর আমার কোনো অধিকার থাকবে না। কাল থেকে আমি এ বাড়ির আপন বলে কেউ হবো না।

চোখে ছলছল পানি নিয়ে নিজের কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বের হতেই নুরী এসে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
– ভাবি, তুমি যেয়ো না প্লিজ। তুমি ছাড়া এ বাড়ি ফাঁকা হয়ে যাবে। তোমাকে ছাড়া তো আমার একদিনো চলে না। প্লিজ যেয়ো না তুমি।

পুষ্প নুরীকে সামলে বললো,
– একদিন না একদিন তো যেতেই হবে বলো। এ বাড়িতে ৩ মাসের সময় নিয়ে এসেছিলাম আর এ ৩ মাসে তোমরা আমাকে এতোটা আপন করে নিয়েছো এটাই আমার কাছে অনেক। এখন আমার সময় শেষ এখানে, আমাকে যে যেতেই হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।

বলেই পুষ্প ব্যাগ নিয়ে নিচে গিয়ে দেখলো রাইয়ান নিচে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
পুষ্পকে দেখে মিসেস মাহমুদা এসে বললো,
– পুষ্প, তোকে তো আমার কিছু বলার অধিকারও নেই। তোর ওপর আমি অনেক অন্যায় করেছি, যদি পারিস আমাকে আমাকে মাফ করে দিস।
-না মা, কি বলছো এসব? আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি, তোমাদের মন থেকে তো আর চলে যাচ্ছি না। তোমার যখনি আমার কথা মনে পড়বে আমাকে ফোন করে বলবে, আমি চলে আসবো। তুমি তোমার আর বাবার খেয়াল রেখো। এখন আমাকে বিদায় দাও।

বলেই পুষ্প রাইয়ানকে বললো,
– চলো।
রাইয়ানের পুষ্পকে কিছুই বলার নেই। তাই চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে।

সকাল ১১ টা বাজে। পুষ্প আর রাইয়ান দুজনই জর্জের সামনে বসে আছে। জর্জ তাদের সামনে ডিভোর্স পেপার দিয়ে তাতে সই করতে বলে।

রাইয়ান কলম হাতে নিয়ে একবার পুষ্পর দিকে তাকায়৷ তার মনে হচ্ছে তার বুকে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। সই করতে একদম ইচ্ছা হচ্ছে না। তবুও পুষ্পর দিকে তাকিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেয়।

পুষ্প কলমটা নেওয়ার শক্তিটুকুও তার হাতে পাচ্ছে না। হাত কাঁপছে তার। বুকের সব যন্ত্রণা ভেসে ওঠেছে। চোখে পানি ছলছল করছে। তবুও বোনের কথা ভেবে অনেক কষ্টে সাইনটা করে জর্জের দিকে এগিয়ে দেয় পেপারগুলো।

জর্জ ডিভোর্স পেপারগুলো দেখে বললো,
– আপনাদের ডিভোর্স কোর্ট গ্রহন করেছে। আজ থেকে আপনারা বিবাহ বন্ধনে আর আবদ্ধ নন।

কথাটা যেন পুষ্পর কানে বাঁজের মতো পড়লো। নিজের বুকে হাজারটা ছুড়ি চালাতে ইচ্ছে করছে তার। তবুও কিছু না বলে সেখান থেকে বের হতেই পুষ্প দেখলো বাহিরে আফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
– মা, তুমি এখানে?
আফিয়া বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,
– ভেবেছিলাম এ ৩ মাসে তুই সব কিছু পাল্টে নিবি। আল্লাহর দেওয়া এ সুযোগটাকে কাজে লাগাবি। কিন্তু তুই…..
– মা সবকিছুই তো নিজের ইচ্ছামতো সবসময় হয় না। আমার ভাগ্যে এ ডিভোর্স ছিলো, তাই হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর রাইয়ান ভিতর থেকে এসে বললো,
– চলো, আমি তোমাদের বাসায় দিয়ে আসি।
পুষ্প বললো,
– না। আমি মায়ের সাথে চলে যেতে পারবো, তুমি চলে যাও।

পুষ্পর সাথে আর কোনো কথা না বলে রাইয়ান গাড়ির দিকে এগুতে লাগলো। এগুতে এগুতে রাইয়ান একবার পিছনে ফিরে পুষ্পর দিকে তাকিয় দেখলো, পুষ্প চোখে ছলছল পানি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মনের সব কষ্ট তার চোখের পানি জানান দিচ্ছে রাইয়ানকে। পুষ্পকে এমনভাবে আর দেখতে পারছে না রাইয়ান, তাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠে চলে যায়।

বাসায় এসে রাইয়ান সরাসরি নিজের রুমের ভিতর চলে যায়। কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
– এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার? এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো আর এটাই হয়েছে তবে কেন আমার মনে আছোড় দিচ্ছে? নিজের ওপর কেনো এতো রাগ হচ্ছে?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রাইয়ান বললো,
– এতোদিন পুষ্পর সাথে থাকার ফলে আমার পুষ্পের অভ্যাস হয়ে ওঠেছে। তাই হয়তো সে চলে যাওয়ায় এতো কষ্ট লাগছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় রাইয়ান।

সারাদিন রুম থেকে আর বের হয়নি রাইয়ান। রাতে মিসেস মাহমুদা রুমে রাইয়ানের খাবার নিয়ে আসে। খাবার প্লেট দেখে রাইয়ান বললো,
– তুমি খেয়েছো মা?
– সে কথা তোর না জানলেও হবে।
রাগে কথাটি বলে প্লেটটা রেখে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে যায় মিসেস মাহমুদা।

সারারাত ঘুম হয়নি রাইয়ানের। মনের ভিতর কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা অনুভব করছে। পুষ্পকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার। এসব ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে যায়।

ঘড়ির দিকে রাইয়ান তাকিয়ে দেখলো ৮ টা বেজে গেছে। রাইয়ানের মনে হলো, এখন পুষ্প থাকলে ফোনের রিংটোন বাজিয়ে আমার কানের কাছে ধরতো আমাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।

আস্তে আস্তে ওঠে ওয়াসরুমে যায় রাইয়ান। রেডি হয়ে আলামারীতে নিজের অফিসের ফাইলগুলো না পেয়ে রাইয়ান বলে ওঠলো,
– পুষ্প আমার ফাইলগুলো কোথায় রেখেছো?
পরক্ষণেই তার মনে হলো পুষ্প তো নেই। হতাশ হয়ে রাইয়ান ফাইলটা খুজে বের করে গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে।
আজ নাস্তার টেবিলে গিয়ে রাইয়ান অবাক হয়। কারণ আজ কেউ নাস্তা করতে আসে নি। তার মনে হচ্ছে সেই বাড়িতে একা মানুষ একজন৷ তার জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে দিয়েছে কেউ। রাইয়ান কোন আওয়াজ না করে নাস্তা খেতে শুরু করে। খেতে খেতে হঠাৎ রাইয়ান বলে ওঠে,
– পুষ্প আমার কফিটা দিলে না যে?

একটুপর কেউ তার পাশে একটা কফির মগ রাখে। রাইয়ান তাকিয়ে দেখলো পাশে মিসেস মাহমুদা দাঁড়িয়ে আছে।

রাইয়ান মিসেস মাহমুদার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন,
– পুষ্পর মতো আমি এতো ভালো কফি বানাতে পারি না। যা পেরেছি বানিয়েছি আর তাই খেয়ে নিও।
বলেই মিসেস মাহমুদা হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

রাইয়ান মিসেস মাহমুদার রাগ বুঝতে পেরে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার খেতে শুরু করে।

– কি হচ্ছে আমার সাথে? পুষ্পকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। যতই ওকে ভোলার চেষ্টা ততই ওর জন্য মনটা কেঁদে ওঠে।
গাড়িতে বসে নিজেকে নিজেই বলছে রাইয়ান। এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে। রাইয়ান ফোনটা নিয়ে দেখলো পাপড়ির কল। পাপড়ির সাথে এখন কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই রাইয়ানের। তাই ফোনটা কেটে দেয়।
কিন্তু পাপড়ি বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে। রাইয়ান বাধ্য হয়ে ফোন ধরে বললো,
– হ্যালো?
– হ্যালো রাইয়ান, কেমন আছেন?
রাইয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,
– সেটা তোমার জানার দরকার নেই। কেনো কল দিয়েছো সেটা বলো?
– আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন? একটু জরুরি কথা ছিলো।
– না। আমি এখন কারো সাথে দেখা করতে চাই না।
– রাইয়ান প্লিজ, না করবেন না। আজকে একটিবার দেখা করেন, এরপর কখন আপনাকে কিছু বলবো না।
রাইয়ান কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
– আচ্ছা, কোথায় আসতে হবে বলো?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে