তোর_শহরে_ভালোবাসা পর্ব-১২

0
2230

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
………{সিজন-২}
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~১২

??
সামু ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে কিন্তু আদির উঠার খবর নেই।
সামু আদির পাশে বসে ওকে ডাকছে,
“এই যে শুনছেন?উঠুন।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আদি তীব্র শব্দে মুখ দিয়ে হু হা শব্দ করছে।তারপর আবার চুপ হয়ে যাচ্ছে।

সামু উঠে দাড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বলছে,
কি ঘুম রে বাবা মানুষ মরে গেলেও হুশ হবেনা।
সামু তারপর আবারো ডাকলে লগলো।
“এই যে উঠুন।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সামু বারবার একি লাইন আওড়াচ্ছে।ওর বিরক্ত লাগছে বারবার এক শব্দ বলতে।
মনে মনে ভাবছে,
“তাহলে কি বলবো ওগো স্বামি উঠো।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সে অধিকার কি এখনো হয়েছে।।সামু হাত বাড়িয়ে ওকে ধাক্কা দেওয়ার কথা ভাবছে তারপর আবার হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।
কেননা ওর গায়ে হাত দেওয়ার অধিকার সামুর নেই।এটাই মনে করে।

সামু অবশেষে সাত-পাঁচ ভেবে ধাক্কা মারলো পিঠে।আদি নড়েচড়ে উঠে।
“প্লিজ তাড়াতাড়ি উঠুন।”

আদি ঘুমঘুম চোখে বললো,
—–আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।

সামুর অনেকক্ষন যাবত রাগ হচ্ছে।এখন আর রাগ কন্ট্রোল হচ্ছে না।
—–ঠিক আছে আমি মামনি অথবা বাবাকে ডাকি।

আদি আধো আধো করে চোখ মেলে বললো,
—–কিহ!!

—–আমাকে ভার্সিটি নিয়ে যাবেন না?কখন থেকে ডাকছি আর আপনি পরে পরে ঘুমাচ্ছেন।

আদি আড়মোড়া ভেঙে বললো,
—–ঘুম হয়নি।

—–কেন হবেনা?গতকাল আর্লি ঘুমিয়েছেন।এতো ঘুমানোর পরেও এই কথা।উঠুন নয়তো বাবাকে ডাকবো।

আদি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—–পারলে তুলো।

সামু ভ্রু কুচকে হাতের দিকে চেয়ে আছে।
তারপর রাগের মাথায় হাত ধরে জোরে টান দিলো কিন্তু দুঃখের বিষয় আদিকে এক চুলও নড়াতে পারেনি।
সামু ভেবেছিলো এক টানে উঠিয়ে ফেলতে পারবে।সামু আরো কয়েক বার চেষ্টা করে হতাশ হলো।আদি হাসছে।সেটা দেখে রাগে সামুর গা জ্বলে যাচ্ছে।

রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
——আমার মতো বাচ্চা মেয়েকে বলছে হাতিকে তুলতে।হাস্যকর।

—–একটা মানুষকে তোলার জোর নেই কিন্তু গলায় তো বেশ জোর।ঝগড়া করার জোর।

সামু রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কেননা ওর দেরি হয়ে যাচ্ছে।সামু টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
—–আপনার কথা হয়ে গেলে দয়া করে রেডি হয়ে নিন।আমি নিচে নাস্তার টেবিলে আছি।

সামু চলে যেতেই আদি উঠে বসে।তারপর বিরবির করে বললো,
—–শান্তির দিন শেষ।এখন আজীবন বউয়ের পেছনে ঘুরো।

সামু নাস্তা করছে আর বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে।আদি আসছে কিনা চেক করছে।
“হায় আল্লাহ!এই বান্দা কি আবার ঘুমিয়ে পড়লো নাকি??”

আদি এডিটিউট নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে।সামু আদির গেটাব দেখে মনে মনে কয়েকশো ক্রাশ খেলো।আড়চোখে আদিকে দেখছে।আদি ডাইনিংয়ের সামনে এসে এক গ্লাস জুস শেষ করে সামুর উদ্দেশ্যে বললো,
—–তোমার হয়েছে?

সামু তাড়াতাড়ি করে উঠে ব্যাগ হাতে নিতে গেলো।হাত লেগে ব্যাগ নিচে পড়ে গেলো।
আদি সামুকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে বললো,
—–আরে রিলেক্স।আস্তে।
আদি সামুর ব্যাগ তুলে দিলো।
ওরা এক সাথে দু’জন হাটছে।পেছন থেকে আদির মা বলছে,
“মাশাল্লাহ দুটোকে একসাথে কত সুন্দর লাগছে।দোয়া করি তাড়াতাড়ি যেনো ওদের মাঝে সব ঠিক হয়ে যায়।”

আদি আর সামু পাশাপাশি বসে।আদি ড্রাইভ করছে।সামু চুপচাপ বাইরে চেয়ে আছে।
হটাৎ ব্যাগে ওর ফোন বেজে উঠলো।সামু বাহিরে দেখায় এত্তটাই মত্ত যে খেয়াল করেনি।
আদি সামুকে লক্ষ্য করে বললো,
—–তোমার ফোন বাজছে।

সামু আদির কথা শুনে মাথা ঘুরিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।ফোনের স্কিনে চোখ যেতেই ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো।কপালে রাগ ফুটে উঠেছে।
রাজ ফোন করছে।রাজকে সব সোসাইল সাইট থেকে ব্লক করেছে।নাম্বার ডিলিট করেছে।ভাবে নি রাজ ওকে এতকিছুর পরও ফোন করার সাহস পাবে।আদি সামুকে খেয়াল করছে।।
আদি সামুর দিকে চেয়ে বললো,
—–পিক করো।

সামু আদিকে কিছুনা বলে কাটার জন্য আংগুল বাড়ালেই আদি ফোন কেড়ে নিয়ে ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিলো।সামু ভীতচোখে চেয়ে আছে।
আদি রিসিভ করে কথা বলছে না ওপাশ থেকে শুধু নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে।

অনেকক্ষণ পর কথা বললো ওপাশ থেকে।
—–সামান্তা!!!

আদি চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নিলো।ওর মুখে সামান্তা নামটাও সহ্য হচ্ছে না।তারপর চোখ খোলে গম্ভীরমুখে বললো,
—–সামান্তা নয় আমি সামান্তার হাসব্যান্ড আদি বলছি।কে আপনি? কি বলতে চান বলুন।আমি ওকে বলে দিবো।

আদির মুখে হাসব্যান্ড কথাটা শুনে সামুর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল অনুভূতি প্রবাহিত হয়ে গেলো।কেন জানি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

ওপাশ থেকে বললো,
—–আমি পরে ফোন করে নিবো।

আদি দাতে দাত রাগী কন্ঠে বললো,
—–“এমন ছ্যাচড়া বেহায়া লোক জীবনেও দেখিনি।এর পর যদি আর ফোন করেন তো আপনার বুঝাপড়া আমার সাথে হবে।স্ট্রে এওয়ে ফ্রম হার।মাইন্ড ইট।”
আদি রাজকে কিছু বলতে না দিয়ে খট করে ফোন কেটে নাম্বার ব্লক করে ফোন সামান্তার ব্যাগের উপর রাখলো।

আদি রাগে কাপছে।ও সামনের দিকে চেয়ে ড্রাইভ করছে।সামান্তাকে এ বিষয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করে নি।সামান্তা কিছু বলতে চাইছে আবার আদির ফেস দেখে চুপ করে গেলো।সামান্তা আড়চোখে কিছুক্ষণ পর পর আদিকে দেখছে।
হটাৎ এভাবে রেগে যাওয়ার কারণ উদ্ধার করতে পারছেনা।রাগ হতে পারে তাই এতো রাগ?সে রাগের স্থায়িত্ব এতক্ষণ?

ওর ভার্সিটির গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে আদি চুপ করে বসে আছে।সামু আদির দিকে একবার চেয়ে গাড়ির দরজা খোলে বের হচ্ছে।
আদি শুধু বললো,
—–কটায় তোমাকে নিতে আসবো?

—–৪টায়।

সামু গেটের ভেতরে ঢুকার কিছুক্ষণ পর আদি গাড়ি স্টার্ট দিলো।

সামু যেতেই ওর ফ্রেন্ডরা ওকে ঘিরে ধরলো।বিয়ের পর প্রথম আজ ভার্সিটি এসেছে।ওর বিয়েতে শুধু জানভি গিয়েছে।তাই জানভিই শুধু জানে কার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো আর কার সাথে হয়েছে।

সামু কাউকে কিছু জানাতে চায়না।তাই হাসিমুখে হ্যা তে হ্যা মেলাচ্ছে আর ওদের কথায় ছোট্ট করে হাসি উপহার দিচ্ছে।
জানভি বুঝতে পারছে সামু হেরিটেজ হচ্ছে।
জানভি কোনোভাবে ওদের সরিয়ে সামুর সাথে একা কথা বলছে।
“সবকিছু কেমন চলছে?”

সামু শুকনো হেসে বললো,ভালো।

জানভি সামুর এই ছোট্ট উত্তরে সন্তুষ্ট নয় তাই আবারো প্রশ্ন করলো,
—–সব ঠিকঠাক তো?নতুন করে কোনো সমস্যা মানে ভাইয়ার সাথে সব ঠিক আছে তো?এগুলো আমার জিজ্ঞেস করা উচিত হচ্ছে না তবুও ফ্রেন্ড হিসেবে আমি তোর জন্য খুব ওরিড।তাই জিজ্ঞেস করছি।

—–এই চলছে সকাল-বিকাল নিয়ম করে ঝগড়া ।

জানভি সামুর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।
—–ঝগড়া!!
ইয়া আল্লাহ!! এখুনি ঝগড়া? এটাকে ঝগড়া বলে না খুনসুটি বলে।প্রেম হওয়ার আগেই খুনসুটি?

সামু ভাবলেশহীন ভাবে বললো,আর প্রেম!!এতোকিছুর পরও প্রেম?

—–বোন বিয়ে করেছিস,,বিয়ে এমন একটা পরিত্র বন্ধন যেখানে নিজে থেকেই সেই বন্ধনে আটকা পরে যায়।পড়তে বাধ্য।তোর ভালোবাসা শুধু তারই প্রাপ্য।বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না।তাই গা ছাড়া ভাব না দেখিয়ে সম্পর্কটা ঠিক করার চেষ্টা কর।তুই দুপা আগানোর চেষ্টা কর তাহলে জিজু বাধ্য হবে তোর দিকে আগানোর।এক পা হলেও আগাবে।ট্রাই ইট।

আদি ৪টার আগেই ভার্সিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।গাড়িতে হেলান দিয়ে গেটের দিকে চেয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর সামু বের হলো ওর বন্ধুদের সাথে।সামুর চোখ আদির উপর পড়লো।জানভি বললো,
—–ওয়াও!! জিজু তোকে নিতে এসেছে?

বাকিরা জানভির কথা শুনে সামনে তাকালো সেখানে আদিকে দেখতে পেলো।
জানভি সামুকে বললো,
—–জিজুকে একটু ট্রাই করি।একটু মজা নেই।

সামু মুচকি হেসে চোখের ইশারায় হ্যা বললো।

জানভি আর দু-তিনজন মেয়ে আদির সামনে এসে হাজির।
জানভি বললো,
—–হায় জিজু আমি আপনার আধাঘরওয়ালী মানে শালিকা।

আদি মুচকি হেসে হায় জানালো।ওরা মনে হচ্ছে হুমড়ি খেয়ে ওর উপর পড়বে।আদি দুপা পেছনে গেলো।সামু দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করেছে।জানভি ইচ্ছে করে নানান নেকামি কথা বলছে।এমন ভাব করছে যেনো আদির গায়ের উপর পড়ে যাবে।আদি কিছুক্ষণ পর পর একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে।ওর প্রচুর অস্বস্তি লাগছে।কিন্তু কিছুই করতে পারছেনা।ওরা একটার পর একটা বলেই যাচ্ছে।সামু দূর থেকে হাসছে আর ভাবছে,
—–ইনি মেয়েদের সাথে এত অস্বস্তিতে পড়ে যায় তারমানে মেয়েদের সাথে মেলামেশা কম।গুড।আই লাইক ইট।

আদি কোনো রকমে ওদের থেকে ছাড়া পেয়ে সামুর কাছে গেলো।যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।
—–এরা তোমার ফ্রেন্ড?এটা কি করে সম্ভব?গায়ে পড়া মেয়ে যত্তসব।তোমার সাথে তো এদের যায়ই না ফ্রেন্ডশিপ কিভাবে হলো?নেকা গায়ে পড়া।

সামু কোনো উত্তর না দিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।
—–কেন নেকা গায়ে পড়া মেয়ে আপনার পছন্দ না?

—-উহু!!
আমার পছন্দ এমন মেয়ে যারা বলবে দূর থেকে দেখছো দূরেই থাকো কাছে এসোনা।আ’ম অনলি মাই হাসবেন্ড প্রপার্টি।আমার উপর আমার হাসব্যান্ড ছাড়া কারো অধিকার নেই।

আদির কথা শুনে সামু বললো,
—–চলুন যাওয়া যাক।

সামু গাড়িতে বসে জানালার দিকে ঘুরে আছে।কোনো কিছু বারবার হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে।সামুর ফোনে একটা মেসেজ এলো জানভির মেসেজ।
“দোস্ত জিজু সলিড লোক।দেখলি না কেমন উসখুস করছিলো।”

সামু মেসেজ দেখে মুচকি হাসি দিলো।

সামু বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।পড়নের প্লাজু পায়ের অনেকটা উপরে উঠে আছে।ফরসা পায়ের কালো পশমগুলো দেখা যাচ্ছে।ঘুমে এতোটাই বিভোর কোনো কিছুর দিকে হুশ নেই।আদি সামুকে এই অবস্থায় দেখে টাস্কি খেলো।চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।ঢুক গিলে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলো।
তারপর মনে মনে বলছে,
“কি করছিলি আদি?ডোন্ট।”

আদি ফ্রেশ হয়ে আসতেই আবারো সামুর দিকে চোখ গেলো।এইবার চোখ আর সরাতে পারছেনা।চোখ আটকে গেছে।হুট করে আদির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো।
আদি আস্তে আস্তে ওর পাশে বসে ওর পায়ের পশম ধরে টান দিলো।
সামান্তার ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে ওর পায়ে কিছু একটা আটকে আছে।হয়তো কোনো পোকা কামড়াচ্ছে।
সামুর মনে হচ্ছে তেলাপোকায় কামড় দিচ্ছে।
সামু চোখ খোলে লাফিয়ে উঠে বসে।তেলাপোকা তেলাপোকা করে চিতকার করছে।তারপর আদিকে দেখতে পায় ওর চোখেমুখে দুষ্ট হাসি লেপ্টে আছে।

সামু নিজের পায়ের অবস্থা দেখে প্লাজু টান মেরে নামিয়ে নিলো।
—–আপনি?এভাবে ভয় দেখানোর মানে কি?

—–যাক একটা কিছু তাহলে ভয় পাও।তোমাকে ভয় দেখাতে আমি তেলাপোকা চাষ করবো।আর হ্যা পরবর্তী থেকে হাত-পা ঢেকে ঘুমাবে।সব সময় কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হবেনা।।।

সামু আদির কথা শুনে চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো।বলে কি।
সামু দাতে দাত চেপে বললো,
—–আপনি আসলেই একটা তেলাপোকা।লুচু তেলাপোকা।

সামু উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আদি সামুর যাওয়ার দিকে চেয়ে বললো,
—–সব আমার দোষ। নিজে এলোমেলো হয়ে ঘুমাবে তাতে কিছুনা আমি কমেন্ট করলেই দোষ।কিসিনে সেহি কাহা সাদি বরবাদি।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে