তোর শহরে ভালোবাসা {সিজন-২ } পর্ব~১

0
4282

#তোর_শহরে_ভালোবাসা??
…..{সিজন-২ }
#ফাবিহা_নওশীন

পর্ব~১

??
“আদি তোমাকে কতবার বলেছি ড্রাংক অবস্থায় ড্রাইভ করবেনা।কিন্তু তুমি কসম খেয়েছো আমার কথা শুনবে না।তোমার বাবা যদি জানতে পারে কি হবে বুঝতে পারছো?তোমাকে বাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে বের করবে।এর আগেও তুমি অনেক ঘটনা ঘটিয়েছো।তোমার পাপার কানে পৌছানোর আগে আমি সব ম্যানেজ করে নিয়েছি কিন্তু এবারের ব্যাপারটা আলাদা।আমি কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা।”
আদির মা নয়নতারা চৌধুরী আদিকে শাসাচ্ছেন।

আদি চোয়াল শক্ত করে বললো,
—-মা তুমি আমাকে ট্রাস্ট কেন করছোনা?আমি কতবার বলবো আমি ড্রাংক অবস্থায় ড্রাইভ করিনি।করিনি।

—–শাট আপ।লো ইউর ভয়েস।প্রে করো যাতে মেয়েটা বেচে যায় নয়তো তোমার লাইফ হেল হয়ে যাবে।

—–মা প্লিজ,,তুমি চাইলেই ম্যানেজ করে নিতে পারবে।আমি তো ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করিনি।আমরা ওর ট্রিটমেন্টের দায়িত্ব নেবো।তুমি শফিক আংকেলের সাথে কথা বলে ওর ফ্যামিলিকে গোপনে খোজার চেষ্টা করতে বলো।কোনো কেইস যেনো না হয়।তারপর ওর ফ্যামিলিকে পাওয়া গেলে সব মিটে গেলো।

আদির মা বললো,
—–এতো ইজি??তোমার কাছে সব ইজি মনে হচ্ছে? ওর ফ্যামিলিকে কি জবাব দেবো?

—–মা মেয়েটার ড্রেসাপ দেখে মনে হচ্ছে না হাইক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে।সো প্রব্লেম হবে না।

আদির মা রেগে কিছুটা চেচিয়ে বললো,
—–আদি!!! তুমি ক্লাস দেখছো? ও একটা মানুষ।তুমি নিজেকে ছাড়া তো আর কাউকে মানুষ মনে করো না।আশেপাশের মানুষগুলোকেও মানুষ বলতে শিখো।
এসো তোমাকে দেখাচ্ছি।

আদির মা আদির হাত ধরে টানতে টানতে আই সি ও এর বাইরে গ্লাসের সামনে নিয়ে গেলো।বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে ভিতরে একটা মেয়ে পেসেন্টের পোশাক পরিহিত শুয়ে আছে।শরীর মাথায় ব্যান্ডেজ করা।মাথার আঘাতটা গুরুতর।ডাক্তাররা তার ট্রিটমেন্ট করছে।মেয়েটার মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া।বন্ধ চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।

—–দেখো বাচ্চা মেয়েটা কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে।ওর জায়গায় আজ নিশিও হতে পারতো।বুঝতে পারছো?

আদি একপলক সেদিকে তাকালো।দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা মুখটা।মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকায় আরো দেখতে পারছেনা।কিছুক্ষণ পর পর কেপে উঠছে।
আদি কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর বললো,
—–মা মানছি আমার দ্বারা ভুল হয়েছে কিন্তু এটা এক্সিডেন্ট ছিলো।আর এর জন্য আমি যতটা দায়ী ওই মেয়েটাও ততটাই দায়ী।ও রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিলো।এর পরেও যদি তুমি আমাকে শাস্তি দিতে চাও তাহলে আমার আর কিছু বলার নাই।তুমি চাইলে বাবাকে বলতে পারে।

আদি কথাগুলো বলে হসপিটাল থেকে হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে।ডক্টর বাইরে বেরিয়ে এলো।আদির মা এগিয়ে গেলো।ডক্টর আদির মায়ের পরিচিত।
—–আপা মেয়েটার অবস্থা ভালো না।অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল।

আদির মা আকুতিভরা কন্ঠে বললো,
—–ভাই যেভাবেই হোক ওকে বাচাও।ওর যেনো কিছু না হয়।তবে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।

—–আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
ডক্টর আবার ভিতরে চলে গেলো।আদির মা বারবার আল্লাহকে ডাকছে।
“আল্লাহ মেয়েটাকে ঠিক করে দেও।কত কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।না জানি কোন মায়ের সন্তান।”

আদি গাড়ি স্টার্ট দিলো।আর মনে করতে লাগলো আগের ঘটনা।

পড়ন্ত দুপুর।সূর্যের তাপ বেড়েই চলেছে।একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে।ফোনে কথা বলছে আর কিছু খোজছে।মেয়েটা ফোন রেখে রাস্তা পাড় হচ্ছিলো।তবে সে কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলো।রোদের প্রখরতায় মুখ পুড়ে যাচ্ছিলো তাই ওড়না টেনে নিলো মাথায়।আদি ফোনে ব্যস্ত ছিলো।হটাৎ ওর চোখ পড়লো সামনে।একটা মেয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে।
—–ওহ নো!
আদি দুহাতে স্টেয়ারিং চেপে গাড়ি ব্রেক করার চেষ্টা করলো কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলো কেননা গাড়ি ফুল স্পিডে চলছিলো।তারপর যা ঘটলো তাতে আদির শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম।গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটা চিতকার করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো।আদি চোখ বন্ধ করে নিলো।
চোখ খুলতেই দেখলো রাস্তায় মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।আদি একবার গাড়ি ব্যাক করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো কিন্তু কোনো কারনে যেতে পারলো না।ওর মন শায় দেয়নি।আদি গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলো রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটি পড়ে আছে।সাদা জামা জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে গেছে।মাথা ফেটে রক্তে মুখ মেখে গেছে।চুল ভিজে গেছে।আদি এক পলক দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।পাব্লিক আদিকে জেকে ধরলো।আদি দুজনের সাহায্য নিয়ে মেয়েটিকে হসপিটালে নিয়ে এলো।তারপর ওর মাকে ফোন দিয়ে জানালে তিনিও সেখানে উপস্থিত হয়।

২দিন পর মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে।হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে।আদির মা আর বোন নিশিতা হসপিটালে যাচ্ছে।
নিশি বললো,
—–মা,ভাইয়াকে জানানো উচিত মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে।

আদির মা তাচ্ছিল্য করে বললো,
—-নিশি তুইও না।তোর ভাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।সে যে একটা মেয়েকে মার্ডার করে ফেলেছিলো সেটা মনে আছে কিনা সন্দেহ।আর জ্ঞান ফিরেছে জানানো উচিত?
ও জেনে কি করবে?যত যন্ত্রণা আমার।এই ঘটনা হাইড করতে আমার কতকিছু করতে হয়েছে।মেয়েটা সুস্থ হলেই হয়।

—–তাও ঠিক।কিন্তু মা মেয়েটার ফ্যামিলির খোজও তো পাওয়া গেলো না।

—–তোর শফিক আংকেল চেষ্টা করছে।আসলে নিউজপেপারে দিলে হয়তো পাওয়া যেতো।এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা যেনো জানাজানি না হয় তাই শফিক একাই চেষ্টা করছে।এজন্য দেরি হচ্ছে।

অতঃপর ওরা হসপিটালে পৌছে গেলো।কেবিনে ঢুকেই নার্সের কাছে জানতে পারলো মেয়েটা কিছুক্ষণ আগে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।
নার্স চলে যাওয়ার পর নিশি বেডের পাশে দাড়িয়ে মেয়েটাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
—–মা দেখো মেয়েটা কত মিষ্টি?

নিশির মা মুচকি হেসে বললো,
—–হুম মাশাল্লাহ অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।আল্লাহ যেনো ওকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেয়।
(মেয়েটার গালে হাত রেখে)

গালে হাত রাখতেই মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ করে পিটপিট করে চোখ মেললো।নিশি আর ও মাকে দেখছে।
নিশি উত্তেজিত হয়ে বললো,
—–মা চোখ মেলেছে।

নিশির মা মেয়েটার চোখে অনেক প্রশ্ন দেখতে পারছে তাই বললো,
—–ভয় পেওনা।আমরাই তোমাকে হসপিটালে এনেছি।আমার ছেলের গাড়িতে তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছে।ওর জন্য আজ তোমার এই অবস্থা।আমি ওর পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
তোমার নাম কি মা?

মেয়েটা ঘনঘন পলক ফেলে ঠোঁট নাড়ানোর চেষ্টা করছে।ঠোট কাপছে কিন্তু কথা বলতে পারছেনা।মাথায় টান লাগছে।

নিশি বুঝতে পেরে বললো,
—–মা ওর হয়তো কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।

নিশির মা বললো,
——ইটস অলরাইট।এখন কিছু বলতে হবেনা।

মেয়েটা ঠোঁট নাড়িয়ে বলার চেষ্টা করছে,
—–সা…ম..

—–নিজেকে প্রেশার দিওনা।তোমার বাবা-মা হয়তো অনেক চিন্তা করছে তাই তাদের ইনফর্ম করার জন্য জানা প্রয়োজন ছিলো।বাট তুমি যেহেতু বেশিই অসুস্থ তাই নিজের উপর প্রেশার দিওনা।

নিশি বললো,
—–মা বাদ দেও।দুদিন চলে গেছে।তারা অলরেডি দুদিন টেনশনে পাড় করে দিছে।ও আগে সুস্থ হোক।
তারপর নিশি টুল টেনে বসে বললো,
—–যেহেতু অর্ধেক নাম বলেছো অর্ধেক নামেই ডাকি সাম আমি নিশিতা নিশি।তুমি নিশি ডাকতে পারো।
তারপর শুরু হয়ে গেলো নিশির বকবকানি।
মেয়েটা ওর কথা শুনে মুচকি হাসছে।যদিও এর জন্য ব্যথা সহ্য করতে হচ্ছে।

সাতদিন পর।
নিশি আর ওর মা হাসপাতালে যাচ্ছে।আজকে রিলিজ পাবে হসপিটাল থেকে।নিশি আর ওর মা আজকে মেয়েটাকে ওর বলা এড্রেস অনুযায়ী জায়গায় পৌছে দেবে।হাসপাতালের সব কাজ শেষ করে ওরা গাড়িতে উঠে বসেছে।নিশি প্রশ্ন করলো,
—–তোমার নামটা যেনো কি?ভুলে গেছি।

—–সামান্তা সেহনুজ।আপু আপনি আমাকে সামু বলে ডাকতে পারেন।

—–সামু!!ইয়াপ।সামু বলেই ডাকবো।আর হ্যা তুমিও আমাকে তুমি করে সম্ভোধন করবে।ওকে কিউটি?

সামান্তা মাথা নাড়ালো।

নিশির মা বললো,
—-তোমার বাবা-মাকে না ফোন করে একাই যাচ্ছো কেন?ওদের জানালে ওরা হসপিটালে আসতো।আর তাছাড়া তুমি আমাদেরও আনতে চাওনি।একা একাই আসতে চাইলে ব্যাপারটা কি?

সামান্তা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
—–আসলে আমি আমার বন্ধুর ফ্ল্যাটে যাচ্ছি বাসায় না।

—–বন্ধুর ফ্ল্যাটে?এই অবস্থায় বাসায় না গিয়ে বন্ধুর ফ্ল্যাটে?তুমি এখনো অসুস্থ।এই অবস্থায়?

সামান্তা চুপ করে আছে।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।নিশি আর নিশির মা ওর মুখের দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে।তারপর দুজন দুজনের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।বুঝতে পারছে ওরা সামু উত্তর দিতে চাইছেনা।

সামান্তা আমতা আমতা করে বললো,
—–আসলে আমার বাসা সিলেট।এখানে আমি আর আমার ফ্রেন্ড একসাথে এই বিল্ডিংয়ে থাকি।

—-ওহহ(স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে)

ওরা ৮তলা একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো।লিফট দিয়ে ৪তলায় গেলো।ওদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাড়াতেই দেখলো সেখানে তালা ঝুলছে।

সামান্তা বললো,
—-অরিন হয়তো বাইরে গেছে।ওর নাম্বার আমার মুখস্থ নেই।এক্সিডেন্টের সময় ফোন কোথায় চলে গেছে জানিনা।আমি বরং এখানে অপেক্ষা করি।আপনারা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন।

নিশির মা বললো,
—–সে না আমরা যাচ্ছি কিন্তু তুমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।বিল্ডিংয়ের ওনারের কাছে ডুব্লিকেট চাবি থাকতে পারে তুমি নিয়ে এসো।
তখনই বিল্ডিংয়ের ওনার ওদের কাছে এসে বললো,
—–তোমার নাম সামান্তা?

—–জ্বি আংকেল।

—–আসলে তোমার ফ্রেন্ড অরিন ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে।ও বাসায় চলে গেছে।তোমাকে নাকি খোজে পাওয়া যাচ্ছে না।তাই ও ভেবেছে তুমি বাসায় চলে গেছো।

সামান্তার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।অরিন চলে গেছে তাহলে ওর কি হবে।সামান্তা কাপা কাপা গলায় বললো,
—–অরিন হটাৎ চলে গেলো?

—–বললো হুট করে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাই ৪দিন আগে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে গেছে।

সামান্তা কিছু বলার মতো খুজে পাচ্ছেনা।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে এই শহরে কিছুদিন যাবত এসেছে।এখন কোথায় যাবে?কি করবে?
সামান্তার চোখে পানি টলমল করছে।
বিল্ডিংয়ের ওনার কিছুক্ষণ পর একটা লাজেগ এনে দিলো।

—–অরিন তোমার জিনিসপত্র দিয়ে গেছে।যদি কখনো আসো তাই।

নিশি আর নিশির মায়ের ব্যাপারটা সুবিধার ঠেকছেনা।

আদি হাত-পা ছড়িয়ে কুশন জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।হটাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো।আদি ঘুমঘুম চোখে বিছানায় হাতড়িয়ে ফোন নিয়ে রিসিভ করে বললো,
——হ্যা..লো…!!
ওপাশ থেকে কিছু বললো।আদি উত্তর দিলো,
—–আই উইল বি দেয়ার ইন টাইম।
তারপর ফোন কেটে আবারো ঘুমিয়ে পরলো।

.

ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সামান্তার চোখ লাল হয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে।
সামান্তা হাতে হাত ঘষতে ঘষতে বললো,
—–একচুয়ালি আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।

নিশি বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–পালিয়ে!!!
নিশি আরো কিছু বলতে যাবে তখনই নিশির মা ইশারায় চুপ থাকতে বললো।

সামান্তা আবারো বলতে লাগলো।
—–হুম।আসলে আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে তাই পালিয়ে এসেছি।আমার আব্বু একজন রাজনৈতিক নেতা।আর তার পজিশন হাই করতে সে অন্য আরেকজন নেতার ছেলের সাথে হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে।যে ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে সে একটা গুন্ডা,বদমাইশ,মেয়ে বাজ,
ড্রাগস ব্যবসায়ী।এসব খেয়ে দিন দুপুরে তাল হয়ে পড়ে থাকে।আমার চেয়ে বয়সে ১০বছরের বড়।আমার উপর তার বাজে নজর পড়েছে।
আমি আব্বুকে অনেকবার বলেছি কিন্তু আব্বু শুনতে রাজি নয়।তাই পালিয়ে অরিনের কাছে চলে আসি।অরিন আমার স্কুলফ্রেন্ড।ও আমাকে বললো ঢাকায় চলে আয়।আমি একটা ফ্ল্যাট নিয়ে একা থাকি।তুই আরামসে থাকতে পারবি।পছন্দমতো ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে এখানেই থাকবি কেউ খোজে পাবেনা।আমি তোর জন্য টিউশনির ব্যবস্থা করে দেবো চলে যাবে।আমি ওর সাহসেই ঢাকায় এসেছি।আর ওইদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে এসেছিলাম কিন্তু এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো।ভাগ্যটাই খারাপ সব খারাপ হচ্ছে।বুঝতে পারছিনা কি করবো?

নিশির মা সবটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-আর তোমার মা?

—–নেই।ছোট থাকতেই আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
সামান্তার চোখ বেয়ে পড়লো।

নিশি চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
—–ডোন্ট ক্রাই বেবি।সব ঠিক হয়ে যাবে।মা কিছু করো।

নিশির মা মুচকি হেসে বললো,
——তুমি আমাদের সাথে চলো আমাদের বাড়ি।

—–আপনাদের বাড়ি?না সে হয়না।এমনিতেই আপনারা অনেক করছেন আমার জন্য।

—–হেই কোনো মহত্ত্ব করিনি।আমার ভাইয়ের জন্য তোমার আজ এই অবস্থা।তাই তোমার দায়িত্ব নিয়েছি।এখন আর কথা না বলে আমাদের সাথে চলো।

সামান্তা না চাইতেও জোর করে ওরা ওকে বাড়িতে নিয়ে এলো।
ওদের গাড়ি একটা বড় বাড়ির সামনে এসে থামলো।বাড়ির বাইরে কালো পোশাকের গার্ডরা ঘুরছে।
সামান্তার অস্বস্তি লাগছে।নিশি সামান্তাকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বললো,
—–এই যে তোমার রুম যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।

—–ধন্যবাদ আপু।
সামান্তা ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ভাবছে কি হতে কি হয়ে গেলো।কি ভেবে বাড়ি ছেড়েছিলো আর কি হয়ে গেলো।কোথায় এসে পড়লো।ভাগ্য কোথায় নিয়ে এলো।

রাত ১০টা।আদি নাইট ক্লাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
আদি ড্রিংক করছে।একটা মেয়ে অনেকক্ষন যাবত দূর থেকে ওকে দেখছে।ওর কাছে এসে হাসিমুখে হায় বললো।আদি এক পলক দেখে আবার ড্রিংকে মনোযোগ দিলো।
মেয়েটা হতাশ হয়ে চলে গেলো।আদির ফ্রেন্ড আদির কাধ চাপকে বললো,
—–বেচারির দিল টুট গায়া।

আদি মুচকি হাসলো।আদির ফ্রেন্ড বললো,
—–তুই এতো হার্টলেস কেন রে?এতো সুন্দর কিউট একটা মেয়ের মন ভেঙে দিলি?

আদি বললো,
—–তো কি করবো?তোদের মতো সব মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করবো।আদিল চৌধুরীর সব নেশা আছে কিন্তু মেয়ের নেশা নেই।

ওর বন্ধু বললো,
——শালা তোর কপালে শনি আছে।একদিন কারো নেশায় এমনভাবে ডুববি সাতরে পাড় পাবিনা।নেশায় ডুবে মরবি।
সেদিন বুঝবি মেয়ে নেশা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

আদি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
—–হুটটট….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে