তোমায় পাবো বলে পর্ব-০৬

0
1177

#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আমি কিন্তু বলি নি। দরজায় লাথ মেরে কেউ দৌঁদৌদৌড়ে পালিয়েছে! আই গেইস মেইন কালপ্রিট নিজের পাতা জালে নিজেই পা দিয়েছে!”

আমি জানি, আমি ধরা পড়ে গেছি। তবু ও চাঁপার জোরে আমাকে তর্কে বহাল থাকতে হবে। এই স্বার্থপর লোকটার কাছে কিঞ্চিৎ পরিমান হার মানতে আমি রাজি নই। প্রয়োজনে অযথা রাগ দেখিয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াবো, তবু ও এই লোকের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে আমি অপারগ নই। ফুসফুসে দম সঞ্চার করে আমি বেশ স্বাভাবিক গলায় পরশ ভাইকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,

“কালপ্রিট যে দৌঁড়ে পালায় নি তার কোনো প্রমান আছে আপনার কাছে? দরজায় লাথ মেরে কেউ নিশ্চয়ই হেঁটে হেঁটে জায়গা পরিত্যাগ করবে না? অবশ্যই দৌঁড়ে পালাবে। কি আশ্চর্য? মাথায় ঘিলু নেই আপনার? আপনি অন্য কাউকে জিগ্যেস করে দেখুন না, যে কোনো কেউ ঠিক এ কথাটাই বলবে, কালপ্রিট দৌঁড়ে পালিয়েছে!”

পরশ ভাই হেলানো অবস্থা থেকে গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে আমার মুখের দিকে এগিয়ে এলেন। অতঃপর ক্রুব্ধ কন্ঠে বললেন,,

“আমি যদি বলি, কালপ্রিট নিজেই নিজের পক্ষে সাফাই দিচ্ছে। তখন তুমি কি বলবে? এবার ও নিশ্চয়ই অস্বীকার করবে?”

আমি রাগান্বিত কন্ঠে বললাম,,

“সেইম ভুলটা আপনি আবারো করছেন। আমি কারো পক্ষে সাফাই দিচ্ছি না ওকে?”

পরশ ভাই আচমকা ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে গলা খাঁকিয়ে বললেন,,

“প্রুভ আছে কিন্তু আমার কাছে!”

হকচকিয়ে উঠলাম আমি। শুকনো ঢোক গিলার সাহসটা ও পর্যন্ত কুলাতে পারছি না। গলা রীতিমতো শুকনো লাকড়ীতে পরিনত হয়েছে। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আমি জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,,

“কি প্রুভ?”

পরশ ভাই আমার বাঁ কানটায় স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“তোমার বাঁ কানের দুলটা কোথায়?”

তড়িঘড়ি করে আমি বাঁ কানে হাত দিয়ে দুলটার অনুপস্থিতি টের পেলাম। এই দুল জোড়া আমার ভীষন প্রিয় এবং পছন্দের। আব্বু আমার ১৫ তম জন্মদিনে এই সুঁই সুতো দুল জোড়া আমায় গিফট করেছিলেন। সেই থেকে দুল জোড়া এখনো আমি কানে পড়ে আসছি। এতো বছর পর হঠাৎ একটা কানের দুল হারিয়ে যাবে তা কি মেনে নেওয়া আদৌ সম্ভব হবে? উত্তেজিত কন্ঠে আমি অস্থির দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললাম,,

“এমা, আমার দুল কোথায়?”

পরশ ভাই পৈশাচিক হাসি দিয়ে অকস্মাৎ আমার চোখের কাছে বাঁ কানের মিসিং দুলটা ডানে বায়ে দুলিয়ে বললেন,,

“এই দুলটাই তুমি খুঁজছ না তো?”

দুলটা ফিরে পাওয়ার খুশিতে আত্নহারা আমি প্রায়। প্রফুল্ল হাসিতে আমি দুলটার দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম,,

“হ্যাঁ। এই তো সেই দুল। কোথায় পেলেন দুলটা?”

পরশ ভাই দুলটা হঠাৎ মুঠো বন্ধি করে তড়িৎ গতিতে দুলটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ক্রুর হেসে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

“ঐ যে প্রুভ। এটাই ছিলো কালপ্রিটের ছেড়ে আসা প্রুভ!”

জিভ কেটে আমি মুখটা কাচুমাচু করে পরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এবার আর রক্ষে নেই আমার। হাজার তর্ক করে ও ঐ পরশের সাথে পেরে উঠা যাবে না। মনে হচ্ছে এবার সত্যি সত্যিই আমি নিজের পাতা জালে নিজেই পা দিয়েছি। আমার অদ্ভুত ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান দেখে হিমেশ ঐদিকে হেসে কুটিকুটি। রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার। কোথায় এসে আমায় একটু সাহস দিবে, সাপোর্ট করবে তা না। এই লোক দাঁত বের করে কেবল হাসতেই ব্যস্ত। পরশ ভাই বেশ তৎপর ভঙ্গিতে টেবিলের উপর দুহাত বেঁধে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

“এজন্যই বলি- “মেয়ে মানুষের বুদ্ধি থাকে হাঁটুতে! ঘিলুতে না!”

কথার পিঠে কথা আওড়ানোর কোনো জায়গাই রাখে নি এই লোক। তবু ও তর্কের খাতিরে বিপুল রেগে বললাম,,

“তাহলে বলব- “মানব দেহের গঠন সম্পর্কে আপনার কোনো ধারনাই নেই। বুদ্ধি ঘিলুতেই থাকে, হাঁটুতে নয়। এ ক্ষেএে মেয়ে মানুষ, ছেলে মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্যই নেই।”

পরশ ভাই বোধ হয় এবার ভীষন ক্ষেপে গেছেন। তাই তো চোয়াল শক্ত করে ক্ষিপ্র কন্ঠে বললেন,,

“মুখে মুখে তর্ক আমার পছন্দ না। ইউ নো হোয়াট?”

আমি ভাবশূন্য ভঙ্গিতে বললাম,,

“তর্ক করলাম কোথায়? লজিক্যালি বললাম!”

বজ্জাত পরশ আক্রমনাত্নক হওয়ার পূর্বেই আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম,,

“হোয়াট এভার। দুলটা কোথায়? দুলটা দিন।”

পরশ ভাই এক রোঁখা ভাব নিয়ে বললেন,,

“পাবে না দুল। মুখে মুখে তর্ক করার ফল এটা!”

হাত বাড়িয়ে আমি অধৈর্য্য গলায় বললাম,,

“এই মানে কি? দুলটা দিন বলছি!”

পরশ ভাই গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললেন,,

“কিছু অর্ডার করেছ?”

আমি অভিমানী কন্ঠে বললাম,,

“করেছি। তবে আমি খাবো না। কিচ্ছু খাবো না। যতক্ষন পর্যন্ত না আমি দুল পাবো, কিচ্ছু খাবো না বলছি!”

“সিউর খাবে না?”

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,,

“হ্যাঁ সিউর।”

ইতোমধ্যেই ওয়েটার খাবার নিয়ে হাজির হলেন। স্যুপ, নুডলস, স্যান্ডউইচ সব এক পিস করে। টেবিলে ওয়েটার ডিশ গুলো সাজাতেই পরশ ভাই ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“আমাদের জন্য অর্ডার করো নি?”

আমি ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,,

“আপনারা ও যে আমার পিছু পিছু খেতে আসবেন আমি জানতাম নাকি?”

পরশ ভাই উগ্র কন্ঠে প্রতিত্তুর করার পূর্বেই হিমেশ শান্ত গলায় বললাম,,

“আচ্ছা হয়েছে তো। এতো কথা বাড়ানোর কি আছে? আরো দুটো প্যাকেজ অর্ডার করলেই তো হয়!”

হিমেশ ওয়েটারকে উদ্দেশ্য করে আরো দুটো প্যাকেজ অর্ডার করার পূর্বেই পরশ ভাই হিমেশকে থামিয়ে ওয়েটারকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“ইউ হ্যাভ টু গো নাও ভাইয়া। আমাদের কিছু লাগবে না!”

হিমেশ ভড়কে উঠে বললেন,,

“মানে?”

“পরে বলছি।”

পরশ ভাই জোরপূর্বক হাসি টেনে ওয়েটারকে পুনরায় বললেন,,

“আপনি যান!”

ওয়েটার ম্লান হেসে প্রস্থান নিলেন। পরশ ভাই আমার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কি যেনো বলেছিলে? দুল না পেলে খাবে না। তাই তো?”

অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে ও আমি আমতা আমতা করে বললাম,,

“হু হু হুম, তাই।”

বাঁকা হেসে পরশ ভাই মুহূর্তের মধ্যে আমার সামনে থেকে খাবারের ডিশ গুলো সরিয়ে তিন তিনটে ডিশই হিমেশ এবং নিজের সম্মুখে রাখলেন। এক চামচ নুডলস মুখে তুলে পরশ ভাই হিমেশের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বললেন,,

“টয়া খাবে না৷ এই তিনটে ডিশে আই থিংক আমাদের হয়ে যাবে৷ প্লিজ, স্টার্ট কর!”

হিমেশ অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি হতবাক, হতভম্ব, হতবিহ্বল। প্রকান্ড চোখ জোড়ায় ঘোর আশ্চর্য সমেত আমি পরশ ভাইয়ার দিকে চেয়ে আছি। মানুষটা যে এতোটা বদ এবং পাষন্ড প্রকৃতির হবে তা আমার কল্পনা শক্তির ও উর্ধ্বে ছিলো। আচ্ছা? মানুষটা কি অভিমান ও বুঝেন না? প্রেমিকার অভিমান না বুঝলে কি আদৌ প্রকৃত প্রেমিক হওয়া যায়? তবে যে উনি বললেন, উনি আমায় ভালোবাসেন? মজা করেছিলেন নাকি সত্যিই ছিলো?

ক্ষুধা মন্দায় আমার পেট চোঁ চোঁ করছিলো। পরশ ভাই এবং হিমেশ নিজেদের মতো করে খেয়ে চলছেন। পরশ ভাই তো মাঝে মাঝে আমার দিকে চেয়ে খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠছেন। খাবারের স্মেলে ক্ষুধার্থ ভাবটা যেনো আরো তড়তড় করে বাড়ছিলো। ঢোক গিলে খাবারের স্বাদ নেওয়া ছাড়া আপাতত কিছু করার নেই। নিজের প্রতিই এখন নিজের রাগ হচ্ছে। কেনো অহেতুক রাগ দেখাতে গেলাম? পরাজয় না হয় স্বীকার করেই নিতাম। অন্তত ক্ষুধার জ্বালায় তো আর এভাবে তাড়পাতে হতো না। মাথা নিচু করে পেটে হাত রেখে আমি চেতনা হারানোর অপেক্ষায় প্রয়াত প্রায়। ইতোমধ্যেই পরশ ভাইয়ার শান্ত কন্ঠস্বর আমার কর্নকুহরে খুব মিহি ভাবে প্রতিধ্বনিত হলো। আমায় উদ্দেশ্য করে উনি ইতস্ততবোধ করে বলছেন,,

“দেখি হা করো। হার মানতে হবে না তোমার। এবার না হয় তোমাকে জিতিয়ে দিলাম। তবে নেক্সট টাইম আমার সাথে কোনো মিথ্যাচার বা তর্ক করার কিঞ্চিৎ সাহস ও প্রকাশ করবে না।”

ঝটপটে ভঙ্গিতে আমি মাথা তুলে কোমল দৃষ্টিতে পরশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সঙ্গে সঙ্গেই পরশ ভাই আমার মুখে চামচ সমেত নুডলস পুড়ে দিলেন। মুখ বুজে নুডলসটা চিবুতেই পরশ ভাই অর্ধ শেষ করা নুডলসের বাটি টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন,,

“খেয়ে নাও পুরোটা। প্রয়োজনে আরো অর্ডার করছি।”

নুডলস চিবুতে চিবুতে আমি আমি আধো গলায় বললাম,,

“হবে না এইটুকুতে। আরো এক প্লেট অর্ডার করুন।”

ওয়েটারকে ডেকে পরশ ভাই আরো এক প্লেট নুডলস অর্ডার করে দিলেন। হাফ প্লেট+এক প্লেট নুডলস খেয়ে মনে হলো যেনো আমি নিজের চেতনা শক্তি ফিরে পেলাম। ঘূর্নায়মান মাথাটা স্থির হয়ে আসতেই আমি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে পরশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“বাড়ি যাবো। চলুন!”

পরশ ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠে শার্টের হাতা গুটিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“বিলটা পে করে আসছি। রুম+খাবারের।”

পরশ ভাই প্রস্থান নিলেন। হিমেশের মুখোমুখি একা বসতে খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছে আমার। কেনো জানি না লোকটার চোখে চোখ মেলাতে ও আমার ভীষন কুন্ঠা বোধ হয়৷ রাগ, জেদ দুটোর সংমিশ্রনেই নতজানু হয়ে থাকতে হয়। এতোটা সংকোচ বোধের মধ্যেই হিমেশ গলা খাঁকিয়ে অপরাধ সূচক কন্ঠে বললেন,,

“স্যরি!”

নিরুত্তর আমি। প্রতিত্তুর করার প্রয়োজন মনে করছি না। ইচ্ছে করছে একশন টু রিয়েকশান করতে। দু গালে ঠাটিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দিতে। সন্তপর্ণে রাগটাকে সামলানোর চেষ্টায় আমি প্রয়াত প্রায়। মৌনতা টের পেতেই হিমেশ পুনরায় বললেন,,

“আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। হয়তো এই অন্যায়ের ক্ষমা ও হয় না। তবু ও বলব প্লিজ ফরগিভ মি। রাগ, জেদে কন্ট্রোল ছিলো না আমার। প্রতিশোধপরায়নতা জঘন্যভাবে চেঁপে বসেছিলো মস্তিষ্কে। আই হোপ সো, তুমি বুঝবে!”

“কিছু বুঝতে চাই না আমি। ক্ষতি যা হওয়ার আমার হয়েছে। সমাজে লাঞ্চিত আমি হয়েছি। পরিবারের দিকে আঙ্গুলটা ও আমাদেরই উঠেছে। আপনার কি? আপনি তো ব্যাস বিয়ে ভেঙ্গে, প্রতিশোধ নিয়েই খালাস! বাকি যা ক্ষতি হওয়ার আমাদের হয়েছে! সেই ক্ষতিটা আপনি বুঝবেন কিভাবে? নিজের সাথে এমন বিরূপ কিছু হলেই তো বুঝবেন।”

হিমেশ বসা থেকে উঠে প্যান্টের পকেটে দু হাত গুজে রহস্যাত্নক হাসি দিয়ে বললেন,,

“ক্ষতি থেকে যদি ভালো কিছু হয়। তাহলে ক্ষতিই তো ভালো!”

আমার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলেন হিমেশ। ক্ষতি থেকে ঠিক কোন ভালোর কথা উনি বুঝাতে চাইলেন, বেশ ভালো ভাবেই আঁচ করতে পেরেছি আমি। ঐ বজ্জাত, পাষন্ড পরশকে তো আমি এই জন্মে ও বিয়ে করব না। না কখনো ভালোবাসতে পারব। কথায় কথায় যে রেগে যায়, মুখের উপর কারো একটা কথা ও যে সহ্য করতে পারে না, জেনে শুনে যে মানুষকে ঠকাতে ও দ্বিধাবোধ করে না, না জেনে বুঝেই যে অন্যের সাথে হিংস্রাত্নক আচরন করে, তার সাথে আর যাই হউক, ঘর বাঁধার কোনো প্রশ্নই আসে না!

,
,

ঘড়িতে রাত ১১ঃ১৫ মিনিট বাজছে। এই রাত-দুপুরে আমার অবস্থান পরশ ভাইয়ার ওয়াশরুমে! দুপুর দুটোর মধ্যেই আমরা ঢাকায় পরশ ভাইয়ার বাড়ি ফিরে এসেছিলাম৷ বাস জার্নি আমার এই জন্মে সহ্য হয় না। বমি করার ধাঁত আছে আমার। পাশের সিটে পরশ ভাই বসেছিলেন৷ ব্যাস আর কি? লোকটাকে বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছি আমি! সেই শাস্তি স্বরূপ নোংরা শার্টটা অপরাগ হয়ে আমাকেই কেঁচে কুঁচে ওয়াশ করতে হচ্ছে। ভাগ্য ভালো লোকটা আমার গাঁয়ে হাত তুলে বসেন নি৷ আমি তো বাসে প্রায় প্রস্তুত ছিলাম উনার কঠিন হাতের চড়, থাপ্পড় হজম করতে। আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে লোকটা ভালোই সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন আমায়। বমির বিশ্রি গন্ধে সামান্যতম নাক ও সিঁটকান নি। তবে যে এই লোকের রাগ দলা পেঁকে থাকে আঁতে আঁতে, তা আমি ভুলতে বসেছিলাম প্রায়! ঠিক জমানো শাস্তিস্বরূপ উনার এই নোংরা শার্টটা আমাকে দিয়ে ওয়াশ করিয়ে নিচ্ছেন!

বেশ সময় নিয়ে শার্টটা ওয়াশ করে আমি নিংড়ানো শার্টটা নিয়ে ওয়াশরুম থেকে প্রস্থান নিতেই পরশ ভাই ওয়ারশরুমের দরজায় কঠোর মুখভঙ্গি নিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“পার্মিশান দিয়েছিলাম? ওয়াশরুম থেকে বের হতে? নোংরা প্যান্টটা কে ধুঁবে? আমি?”

আশ্চর্যিত আঁখি পল্লবে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“প্যান্টটা ও আমাকে ধুঁতে হবে?”

“তো কে ধুঁবে? নোংরা করেছিলো কে প্যান্টটা?”

“আমি তো ইচ্ছে বশত কিছু করি নি। আর আপনি কেনোই বা ঐসময় সিমপ্যাথি দেখাতে এসেছিলেন? আমি বলেছিলাম? আপনাকে সিমপ্যাথি দেখাতে?”

পরশ ভাই রাগান্বিত ভাবমুর্তি নিয়ে তটস্থ কন্ঠে আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন,,

“কথায় আছে না? চোরের মায়ের বড় গলা? তুমি হলে সেই চোরের মা!”

প্রবাদটা ঠিক হজম হলো না আমার। বিপুল হারে রেগে আমি তেজর্শিনী কন্ঠে বললাম,,

“আর ঠিক কি কি শুনতে হবে আমাকে? আপনাদের বাড়িতে থেকে আর কতোটা অপমানিত হতে হবে আমাকে? চলেই তো যাচ্ছিলাম আজ। কেনো আপনার মা আমাকে আটকালেন? কেনো আপনার বোন রা আমার পথ আগলে দাঁড়ালেন?”

পরশ ভাই তড়িৎ বেগে আমার হাত থেকে নিংড়ানো শার্টটা ছিনিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে আমায় বললেন,,

“কাল তোমায় কেউ আটকাবে না ওকে? ফর দ্যা গড সেইক এসব উস্কানিমূলক কথা বার্তা ভুলে ও আমায় বলবে না। মাথায় রক্ত উঠে যায় আমার! রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তখন, বুঝলে?”

#চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে