তোমায় আমি দেখেছিলেম বলে পর্ব-০৪

0
811

#তোমায় আমি দেখেছিলেম বলে
মৌলী আখন্দ
পর্ব-৪

এলিনা ভেবেছিল পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রেগে যাবে রাইয়ান। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সে কিছুই বলল না।
বরং অপরাধী মুখ করে ঘুরতে লাগল।
“স্যরি এলি, এত্ত টায়ার্ড ছিলাম সাইট ভিজিট করে…“
মাথা চুলকাতে লাগল রাইয়ান। আচমকা এলিনার অন্যরকম ভালো লাগতে শুরু করল। রাইয়ানের পছন্দ অতিরিক্ত কড়া কফি।
সেই কফি এতদিন তেতো লাগত এলিনার কাছে। এখন সেই কফিও মিষ্টি লাগতে শুরু করল।
একই সাথে প্রবল ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। সে কি তাহলে রাইয়ানের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে?
খুব আহামরি কোনো নাস্তা না। জেলি ব্রেড সাথে কড়া কফি।
ওরা খাচ্ছিল মাটিতে ম্যাট্রেসের ওপরে বসে। এলিনা তাড়াতাড়ি বড় বড় চুমুকে কফি গিলে ব্রেড হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল।
কৈফিয়তের সুরে বলল, “সময় নেই, দেরি হয়ে গেছে!”
মাথা ঝাঁকাল রাইয়ান। নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চলো, তোমাকে পৌঁছে দিই!”
“না না, তুমি আরাম করে নাস্তা কর। তোমার তো সময় আছে!”
এলিনার শত প্রতিবাদের মুখেও মানল না রাইয়ান। অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে তৈরি হতে শুরু করল।
রাইয়ান নামিয়ে দিলে ঠিক অফিসের সামনে কখনোই নামে না এলি। এক গলি আগেই নেমে গিয়ে পায়ে হেঁটে অফিসে ঢোকে।
আজকেও তাই করল। সময়ের আগেই চলে এসেছে সে।
এলিনা যে রুমটায় বসে, ছোট ছোট কিউবিকলে আরো তিনজন বসে সেই রুমে।
কেউই এখনো এসে পৌঁছায়নি। নিজের ডেস্কে বসে হাত বিছিয়ে দিয়ে হাতের ওপরে থুতনি ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে ভাবতে শুরু করল।
পারিবারিক বন্ধনের ব্যাপারে বরাবরই একটা ভীতি কাজ করত ওর মধ্যে। অনাথাশ্রমে বড় হলেও এলিনা আসলে অতীতহীন নয়।
এলিনার বাবা ছিল পরনারীতে আসক্ত। তাকে ফেরানোর চেষ্টা করে এক পর্যায়ে বোধ হয় হাঁপিয়ে উঠেছিল তার মাও।
এলিনাকে খুব ছোট রেখে বয়ফ্রেণ্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল সে। সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল ওর ব্যাবসায়ী বাবার সঞ্চিত টাকাপয়সার প্রায় সবটাই।
শোকের ধকলটা সহ্য করতে পারেনি এলিনার বাবা। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সাথে রাখা লাইসেন্স করা পিস্তলটা কপালে ঠেকিয়ে নিজেই স্বাক্ষর করেছিল নিজের মৃত্যুর পরোয়ানায়।
আর তারপর, এলিনার আত্মীয় স্বজনেরা সংখ্যায় নিতান্ত কম না হলেও প্রায় কপর্দকশূন্য একজনের অনাথ বাচ্চার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি কেউই। কেউ একজন দয়া করে অনাথাশ্রমে রেখে এসেছিল বলে রক্ষা।
এলিনা অনাথাশ্রমের সেই সব অল্প সংখ্যক বাচ্চাদের মধ্যে একজন যারা নিজেদের মায়ের নাম আর বাবার নাম জানে, জেনেও অনাথাশ্রমে থাকে। এইসবই এলিনা জানতে পেরেছিল অনেক পরে, বড় হয়ে।
একটা বয়স পর্যন্ত এলিনা বিশ্বাস করত মা তাকে নিতে আসবে। বয়ঃসন্ধিতে এসে এই ভুল ধারণা ভেঙে যায় তার।
আর তারপর থেকেই এলিনা ঠিক করে রেখেছিল এইসব ভালোবাসা, বিয়ে, সংসারের ফাঁদে পড়বে না। কিন্তু রাইয়ান…
হি ওয়াজ সামথিং ডিফরেন্ট। সে এলিনাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
এলিনার জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে ধীরে ধীরে লোক ঢুকছে অফিস কম্পাউণ্ডে। আস্তে আস্তে বাড়ছে লোক সমাগম।
দরজা ফাঁক করে ভেতরে ঢুকল সিমি, এলিনার কলিগ। এই রুমেই বসে।
“গুড মর্নিং”, সম্ভাষণ করল সিমি।
“মর্নিং”, সংক্ষেপে প্রত্যুত্তর করল এলি। তারপর নিজেকে জোর করে টেনে নামিয়ে আনল ভাবনার ভুবন থেকে বাস্তবের জগতে।
রাইয়ানের সাথে খুব বেশি ইমোশনালি ইনভলভড হওয়া যাবে না। বাঁধ দিতে হবে নিজের মনকে।
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে