তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৪

0
1516

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব_4
#Suraiya_Aayat

ওরা সবাই খেতে বসেছে ৷ আরিশ নিচে নেমে এসেছে,সানা ডাকতে গিয়েছিল ৷ আরিশ আর আরু মুখোমুখি বসেছে, আরূ আরিশের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আর নিজের মনে মনে বিড়বিড় করে চলেছে আর আরিশকে হাজারো কথা শোনাচ্ছে ৷

__”আরিস আব্বু তুই কেন বেকার সকলের থেকে আলাদা থাকিস বলতো!তুই এখানে থাকিস না বলে তোর মা কত মন খারাপ করে জানিস !”

আরিশ হাসিমুখে বলল,,,,,,
__” একচুয়ালি আন্টি যখন সময় হবে আমি নিশ্চয়ই আমার ফ্যামিলির সঙ্গে থাকবে তবে এখন জীবনটাকে নিজের মত করে কাটাতে চাইছি তাই আর কি ! এখনো তো জীবনের অনেকটা সময় বাকি আছে ,তাই সময় ও আছে ৷ পরেরটা না হয় পরে ভাবা যাবে ৷”

অনিকা খান খাবারের প্লেট গুলো সাজাতে সাজাতে বললেন,,,,,
__” আমিও চাই ও আমাদের সঙ্গে থাকুক তবে নিজের সুখ আর আনন্দটাকে বিসর্জন দিয়ে নয় ৷ ও যেটাতেই হ্যাপি থাকবে বলে মনে করে সেটা তেই থাকুক ৷

__”আম্মু আব্বু বাড়ি আসবি কখন?”

__”তোর আব্বু আজকে তাড়াতাড়ি আসবে যতই হোক নিজের ছেলে বাড়ি এসেছে বলে কথা ৷ তোর আব্বু তো মাঝে মাঝেই আমাকে না নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে চলে যায় আমাকে নিয়েও যায় না ৷”

__”তাতে মন খারাপ করার কি আছে , তুমি আর সানা তো যেতে পারো ৷”

সানা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,,
__” আমি কি ঠিক শুনছি ভাইয়া মানে তুই আমাকে বলছিস, আগে তো কখনো বলিসনি ৷”

__”আগে বলিনি মানে তুই যে যাবিনা তার তো কোনো মানে নেই তাই না ! স্টুপিড একটা ৷”

__” হাহ😏 ৷”

__”আচ্ছা অনেক কথা হলো এবার তাড়াতাড়ি খাবারটা সার্ভ করি নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ৷”

অনিকা খান চৌকো পরটা টা আরুর প্লেটে তুলে দিতেই আরু তো খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেল ৷ পরোটাটা আরিশের প্লেটে দিতে গেলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,,,
__” হোয়াট ইজ দিস , কি এটা ?আর আমাকে দিসো কেন?”

__” আরে এটা হল চৌকো পরোটা, আরূশির খুব পছন্দের , তুইও খা তোর ও খুব ভালো লাগবে ৷”

__” সকলের পছন্দ আর আমার পছন্দ যে সমান হবে সেটা সব সময় ম্যাটার করে না ৷”আরূর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ৷

__” আরূ ও আরিশকে খোঁচা মেরে বলল,,,,,
__” সবার সব ভালোকিছু কি আর সহ্য হয়? হাহ ৷”

আরিশ আর আরূশির সাথে কোন রকম কোন তর্কে যেতে চাইছে না , এগুলো ও একদম পছন্দ করে না তার জন্য আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিজেই নিজের খাবারটা বেড়ে খাওয়া শুরু করে দিল ৷

আরিশের কান্ড দেখে আরূ রেগে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো ৷ ও ভেবেছিল আরিশ ওর কথার বিপরীতে আর একটাও কথা বললে ওর সঙ্গে তুমূল ঝগড়া করবে কিন্তু সেটা আর হল কই…..!
|
|
|
বিকালবেলা সানা আর আরূ দুজনেই ছাদে এসেছে ৷ সানা এক বাটি মুড়ি ঝাল ঝাল করে মাখিয়ে এনেছে আর 2 কাপ কফি করে এনেছে , দারুন জমবে বিকেলের আড্ডাটা ৷

আরু ছাদের ধার দিয়ে হাঁটছে হঠাৎ চোখ গেল নিচে থাকা আরিশের দিকে ৷ সেখানে আরিশ ওর পোষা কুকুরটাকে পেডিগ্রি খাওয়াচ্ছে অত্যন্ত যত্নসহকারে ৷
আরূ একপলক তা দেখে মুখ ভাঙচি দিয়ে সানার কাছে চলে এলো ৷

সানার কাছে বসতেই সানা বলে উঠলো,,,,,
__” একটা কথা বলবো তোকে?”

__”হ্যাঁ বল ৷”

__”তুই সব সময় ভাইয়ের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে যাস কেন বলতো! ভাইয়া খানিকটা শান্ত মেজাজের , সহজে রেগে যায় না তবে একবার মেজাজ গরম হয়ে গেলে ওর কাছে কেউ যাওয়ার সাহস পাই না কেউ আর, ওর ফ্রেন্ডরাও কন্ট্রোল করতে পারে না কেউ ৷ ভাইয়া তোকে এখনো কিছু বলেনি এটাই আমি অবাক হচ্ছি ৷”

আরূ মুখ ভাঙছি দিয়ে বলল,,,,,
__” আমারো না ওনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না আর না লাগে ঝগড়া করতে, আমি ওনাকে সহ্্য করতৈ পারি না ৷ তবে উনাকে আমি টাইট দিয়েই ছাড়বো ৷”

_,”ভুলেও সে কথা ভাবিস না তাহলে জোরো র একদিনের ফ্রি খাবার হয়ে যাবি তুই. ৷”

আরো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,,
__”জোরো টা আবার কে?”

ওই যে তুই ওখানে দেখলি যে ভাইয়া একটা কুকুরকে পেডিগ্রি খাওয়াচ্ছে সেই কুকুরটা হলো জোরো , ভাইয়া ওকে ইউ কে থেকে এনেছে , ও যখন ইউকে গিয়েছিল ট্রিপে তখন ই এনেছিল ৷”

জোরোর. খাবার হওয়ার কথাটা শুনে আরূ একটু ভয় পেয়ে গেল তাই ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বলল,,,,
__” ছারনা, বাদদে ওসব , আর তাছাড়া তুই এখন উনার কথা কেন টেনে নিয়ে আসছিস বলতো !”

__”আচ্ছা, বাদ দে….”
|
|
|
আরুর আজকে আরিশের বাড়িতে থাকার কোন ইচ্ছা ছিল না শুধুমাত্র ওর মা আর আর অনিকা আন্টির জোরাজুরিতেই থেকেছে ৷ ওনারা দুজনেই স্কুল থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড সেই কারণে বিয়েটা দুজনে কাছাকাছি করেছে যাতে প্রত্যেক সপ্তাহে সপ্তাহে দুজনে দেখা করতে যেতে পারে ,আর যোগাযোগটাও বজায় থাকে৷
উনারা 2 ফ্রেন্ড প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে শপিং এ জান আর খাওয়া-দাওয়াও করেন এই জিনিসটা মিস হয় না কখনো ৷ উনাদের দুজনের সম্পর্ক দেখে আরুর চোখদুটো জুড়িয়ে যায়…

আজকে সানার সাথেই ঘুমাবে আরূ সেই কারণেই রুমের দিকে যাচ্ছিল , আরিসের রুমটা পার করেই সানার রুমে যেতে হয় ৷
অন্ধকারের মধ্যে আরূর সাদা রঙের প্লাজোটা জ্বলজ্বল করছে ৷ ক্রাশকে পটাতে গিয়ে সব সাদা রঙের ড্রেস নিয়ে এসেছে তাই সেগুলো পরা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছে না আরু ৷ সানার ড্রেস পরার উপায় নেই কারণ সানা ওর থেকে অনেকটাই লম্বা তাই ওর ড্রেসগুলো পরলে সব মাটিতে ছড়াছড়ি যাবে, তাই কষ্ট করে একদিনে হলেও সাদা রঙের পোশাকটাই পরতে হয়েছে ওকে ৷

আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে আসছে আরু ৷ ও প্রচন্ড ভূতের ভয় পায় , এতদিন ধরে ভুতের কথা শুনেছে তবে আজ অব্দি দেখেনি কখনো ,যদি কখনো দেখতো তাহলে হয়তো উল্টে পড়ে থাকত ৷

আরিসের রুমের সামনে দিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ করে গিটারের টুংটাং আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই পাদুটো যেন সামনের দিকে আর এগোলো না ৷
ওখানেই থ হয়ে দাড়িয়ে আছে আরু ৷ গিটারের ছন্দময় সুরের সঙ্গে গলার আওয়াজটাও এত সুন্দর ভাবে মিশে গেছে যে না চাইতেও যে কেউ সেখানে স্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য ৷

__” তুম কিউ চালে আতে হো ৷
হার রোজ মেরি খাবো মে,
চুপকে সে আভি যাও ,
একদিন মেরি বাহো মে ৷
তেরেহি স্বপ্নে আন্ধেরো মে উজালো মে
কোয়ি নাশা হে তেরি আখোকি পেয়ালো মে
তু মেরে খাবো মে , জাবাবো মে ,সাওয়ালো মে
হার দিন যো রাতো মে মিলাতা হু খায়ালো মে
কেয়া মুঝে পেয়ার হে,,,,,,
কেসা ঘুমার হে ৷ ”

গানের সুরের তালের সাথে এতক্ষণ নিজেকে হারিয়ে ফেলেছির আরু তবে হঠাৎ গানটা থেমে যেতেই সেই গানের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো আরু ৷
নিজের মনে মনে বিড় বিড় করে বললো,,,,,
__” কি হল থেমে গেল কেন?”

তখন ভিতর থেকে আরিশ এর কন্ঠটা শুনতে পেল তবে তা অত্যন্ত উত্তেজিত কণ্ঠে , হয়তো কোন ব্যাপার নিয়ে একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে….

___”তুই চিন্তা করিস না , আমি এক্ষুনি আসছি কিছু হবে না আন্টির ৷”

__”,,,,,,,,,,,,”

__”তুই কাঁদছিস কেন, একদম কাঁদবিনা আমি আছি তো , এক্ষুনি আসছি ৷ আমার পৌছাতে আধঘন্টা মত লাগবে কোন চিন্তা করবিনা একদম….”

তাড়াতাড়ি করে আরিশ হন্তদন্ত হয়ে কোনরকম রুম থেকে নিজের ওয়ালেট আর মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল , আর আরু তা বুঝতে পেরে আরিশের ঘরের দরজার পাশে থাকা পর্দার কাছে লুকিয়ে গেছে…..

আরিশ সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওর আম্মুর রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই ওর আম্মু বেরিয়ে আসতেই কিছু একটা বলল আর তার পর হনহন অরে বেরিয়ে গেল ৷ সেটা আরু উপর থেকে দেখছে ৷

__”হঠাৎ কি এমন হল যে এভাবে এত রাতে বেরিয়ে গেলেন, হয়তো গার্লফ্রেন্ড কোন বিপদে পড়েছে তাই হেল্প করতে গেছে ৷ আমার তাতে কি বলে রুমে চলে গেল , তারপর শান্তির একটা ঘুম দেওয়ার জন্য শুয়ে পড়লো ”

তাড়াতাড়ি করে বাইকটা নিয়ে কোন রকম ভাবে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ আনিকা খান হতাশা নিয়ে ফিরে গেলেন ঘরে……

আফজাল সাহেব: কি হয়েছে এত রাত্রে আরিশ তোমাকে ডাকল?

__”আসলে প্রান্তের মায়ের অবস্থা খুব খারাপ ইমিডিয়েট অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে হয়তো বাঁচবেন না সেইজন্য আরিশ তাড়াতাড়ি গেল , যাওয়ার আগে বলল দু লাখ টাকার যেন বিকাশ করে দেয়, ওর কাছে আপাতত এতো টাকা নেই….”

আমি এখুনি বিকাশ করে দিচ্ছি, এই প্রথম আমার ছেলে আমার কাছ থেকে কিছু চাইলো আর তাছাড়া প্রান্তর মাকে বাঁচানোটা আগে দরকার ৷
আরিশকে তো আমি এর আগে কতবার বলেছি নিজের হাত খরচা টা যেন আমার কাছ থেকেই নেই তবে কখনো তো আমার কাছ থেকে একটা টাকাও নেইনি, শুধু বলে,,,,
__” যেদিন আমি তোমাদেরকে দিতে পারবো সেদিন তোমাদের কাছ থেকে আমিও নেব তার আগে নয় ,আগে নেওয়ার যোগ্যতাটুকু হোক ৷”

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ ওর পাশে রয়েছে সাহিল , প্রান্ত আর তূর্য, চারজনের মুখেই চিন্তার ছাপ ৷ প্রান্ত কখন থেকে কান্না করেই চলেছে , একমাত্র ওর মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই ওর, ওর বাবা মদ খেয়ে বাড়ি এসে অত্যাচার করতেন তাই আলাদা হয়ে গেছে ওর মাকে নিয়ে ৷

ওর মায়ের অবস্থা খারাপ বুঝতেই প্রান্ত তাড়াতাড়ি ওর মাকে হসপিটালে ভর্তি করেছে তবে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না বলে ডাক্তাররা অপারেশন করতে রাজি হননি ,তখন আরিশ ইমিডিয়েট 50000 টাকা পেমেন্ট করেছে, আর পরে আরো দিচ্ছে আপাতত ওর কাছে নেই তা শুনে ডাক্তাররা রাজি চাইনি , তবুও অনেক জোর করে অপারেশন থিয়েটারে পাঠিয়েছে আরিশ ৷

অপারেশন চলছে হঠাৎ ফোনে মেসেজের আওয়াজ হতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই একরাশ হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে ,তাড়াতাড়ি কাছাকাছি বিকাশে গিয়ে টাকা তুলে নিল ,যদিওবা এত রাতে এতকিছু সব খুব মুশকিল ৷

টাকাটা নিয়ে প্রান্তের পাশে বসে টাকাটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল ৷ এতগুলো টাকা হঠাৎ একসাথে পেয়ে প্রান্ত আরিশকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল৷ সব সময় ওর এবং ওদের সবার বিপদে আরিশ ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে, কখনও দ্বিধাবোধ করেনি ৷
আজকে ওর মায়ের এত বড় অপারেশনের জন্য এত টাকা দিচ্ছে তার ঋণ কিভাবে প্রান্ত শোধ করবে তা প্রান্ত ও নিজেই জানে না ৷

__”তোর এ ঋণ আমি এ জীবনে কিভাবে শোধ করবো আমি তা নিজেও জানিনা ৷”

আরিশ মেজাজ নিয়ে বললল:
__” টাকার অভাবে কি নিজের মাকে মেরে ফেলবি ৷”
আণ্টি কি শুধু তোর একার,আমাদের কেউ নয়! তাই এখন এসব আর না বলে তাড়াতাড়ি করে টাকাটা পেমেন্ট করে আয় ৷”
প্রান্ত আর এক মুহূর্তও দেরি করল না, টাকাটা অপারেশন থিয়েটারে জমা করে দিয়ে আসল….

চেয়ারে মাথাটা ঠেকিয়ে চোখটা বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছে আরিশ ৷ অপারেশন সাকসেসফুল , প্রান্তর মা এখন ভালো আছেন তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি…..
তূর্য ,সাহেল দেখা করতে গেছে ৷ আরিশ দূর থেকেই একপলক দেখেছে ৷
|
|
আরু ঘুমিয়ে আছে , আর স্বপ্নের মধ্যেও যেনো গিটারের আওয়াজ টা বারবার ওর কানে ভেসে আসছে ৷ আরিসের গানটা একটা নেশা ধরিয়ে দিয়েছে ওকে, তা কি কেবল অন্য কিছু দিয়ে যাবে নাকি পুনরায় আরিশের একটা গান শুনে তাতে আবার আসক্ত হবে এগুলোই মাথায় আসছে বারবার ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে