তোমার আকাশে হব প্রজাপতি পর্ব ২৮+২৯ অন্তিম

0
1995

তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২৮+২৯ অন্তিম
Writer Tanishq Sheikh

সানা ফজর নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হতেই, রক্তিম চোখ আর পান্ডুর মুখে ইমাকে ছাঁদ থেকে নামতে দেখে বিস্মিত হয়।
” ভাবি তুমি সারারাত জেগেছিলে?
” হুমম”
জবাব দিয়ে ইমা ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসে ঢকঢক করে দু’গ্লাস পানি খেয়ে নিল।সানার বিস্মিত চেহারা লক্ষ্য করে বললো,
“অহন ভাই ভালো আছে সানাপু। খুব শীঘ্রই সু’খবর আসবে তোমার জন্য। আমার ভাই যা বলে তা করে বুঝেছ।তুমি না করলে তোমাকে তুলে নিয়ে যাবে। সাহস না পেলে আমি সাহস দেব।তবুও ভাবি বানিয়েই ছাড়ব।”
” ভাবি ওসব কথা বাদ দাও।সত্যি বলো তো? সারারাত কেঁদেছ খুব তাই না? তাইতো চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে।”
” আরে কি বলো তুমি? আমার কিসের এতো দুঃখ আমি কাঁদব।আসলে কি হয়েছে জানো!অনেকদিন পর আকাশে তারা দেখে গুনতে ইচ্ছা করল।সারারাত গুনলাম কিন্তু সব বেহিসাবি কাউন্ট হয়ে গেল বুঝেছ।মন টাই খারাপ সেজন্য। ” ইমা হতাশ মুখে টেবিলে মাথা রাখল।সানা ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“একটু ঘুমাবে চলো।ভয়ানক দেখাচ্ছে তোমাকে এই অবস্থায়।”
“আমার ঘুম আসবে না সানাপু। কিছুতেই আসবে না।তোমার ভাইয়ের আদরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আমার ঘুম।তার আদর ছাড়া কিছুতেই ঘুম আসবে না।” ইমা মুখ তুলে চাইল না।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে শানের আদর আজ সে প্রচন্ড মিস করেছে এবং এখনও করছে।ইচ্ছা করছে ছুটে গিয়ে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে শানের সর্ব শরীরে। কিন্তু কেন যেন পারছে না।
” ভাবি,তুমি ভাইয়ের রুমে যাও তাহলে।ভাই কিছুই বলবে না দেখো। গিয়ে চুপচাপ ঘুম দাও।পাশে শুলে ঠিক ঘুম হবে।”
” হবে না সানাপু।আমার ঘুম আমি জানি।তাছাড়া তোমার ভাইয়ের সামনে গেলে এখন কেমন জড়তা অনুভব করি।আমার কি মনে হয় জানো সানাপু?”
” কি”
” তোমার ভাই আমাকে যখন বড় আদর করবে আমি মনে হয় ফিল করতে পারব না কিছু।সব গোলমেলে হয়ে গেছে আমার।আমার অনুভূতির কানেকশনে ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে মনে হচ্ছে।”ইমা এবার সত্যি কেঁদে ফেললো শব্দ করে।সানার কোমর জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। সানা কিছু বলতে গিয়েও বলে না। ইমা বেশকিছু ক্ষন কেঁদে উঠে দাঁড়ায়।
“এখন মাথাটা হালকা লাগছে। আমি নামাজ টা পড়ে আসি। তুমি একটু কষ্ট করে এক কাপ রঙ চা করে দেবে আমাকে?”
” ঠিক আছে।” সানার জবাব পাওয়ামাত্রই ইমা সানার রুমে গিয়ে নামাজ সেড়ে নেয়।
সকালের নাস্তা খাওয়ার পরপরই ফারহা এসে হাজির।আজ সে খুব সেজেগুজে এসেছে।এসেই শানকে খুঁজতে লাগল।সেটা দেখে রুবিনা খুব ঝাড়া ঝাড়ল।ফারহা না শোনার ভান ধরে চুপচাপ দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।রুবিনা সহ সবাই আজও রাগে মুখ ঝামটা দিয়ে যার যার কাজে গেল।ইমা চা টা মুখে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। গলা জ্বলছে খুব। সকাল থেকে খালি পেটে এ পর্যন্ত ৫/৭ কাপ চা খেয়েছে সে।শরীর বেশি ভালো লাগছে না তার উপর গরম চা গলায় ঢেলেছে বলে গলা জ্বলছে, জিহ্বাটা অসাড় অসাড় লাগছে। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না তবুও এসে দাঁড়াল ফারহার পাশে।
” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।ডানা থাকলে সত্যি কারের পরীই লাগত।ইমার প্রশংসায় ফারহার মুখটা অহংকারে উঁচু হয়ে গেল।তা দেখে ইমা মাথা কাঁত করে নেশাচ্ছন্ন চোখে বললো,
” তুমি এতো সুন্দর তবুও শান তোমাকে সহ্য করতে পারে না কেন? শুনেছি ঘৃণাও করে নাকি।আমি হলে তো তোমাকে সব সময়ই ড্রেসলেস সামনে বসিয়ে দেখতাম আর আদর করতাম।চিজই একটা তুমি।আজ আফসোস হচ্ছে লেজবো না হতে পেরে।ইশশ!”ইমার চোখ মুখের ভাব দেখে ভয় লাগে ফারহার।তার উপর এসব কথা শুনে তো ফারহা হতবাক বনে যায়।ঢোক গিলে বলে,
” ছি!তোমার মুখের ভাষা কি? নোংরা কথা কেন বলো হুমম।”
“ছি বলিস! এতো সাহস তোর। সস্তা ছেরি আমার ভাষা নোংরা আর তুই যে নিজেই নোংরা।কয়টা লাগে তোর হ্যাঁ! আগের টার মজা শেষ? আমারটার পেছন কেন লাগছিস বল? তোর কলিজা ছিঁড়ে শেয়াল কুকুরকে খাওয়ালেও আমার মনের কষ্ট দূর হবে না রে?কাল থেকে ভাবছি! তোকে কিভাবে মারব সেই চিন্তায় সারারাত ঘুমাতেও পারি নি।”ইমা আচমকা ফারহার চুল এতোজোরে টেনে ধরেছে ফারহা ছাড়াতেও পারছে না।ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে ফারহা।ফারহার চেচাঁমেচিতে সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।ইমাকে কোনোভাবেই ছাড়ানো যাচ্ছে না।সে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি, লাথি মেরেই যাচ্ছে। সানা ছুটে গিয়ে ভাইকে ডেকে আনে।শান ইমাকে টেনে ছাড়াতেই ইমা শানের উপর গর্জে ওঠে,
” ছাড়েন আমাকে। আজ ওকে মেরেই ফেলব।আচ্ছা আপনার তো অনেক পাওয়ার।একে মেরে ফেললে লাশ ঘুম করতে পারবেন না? পারবেন না আমাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করতে? বলেন!”
” ইমা জাস্ট শাট আপ।কি শুরু করেছ তুমি?”
” আপনাকে বলিনি যা আমার তা শুধুই আমার।অন্য জিনিস হলে হালকা পিটানি দিয়ে মাফ করে দিতাম কিন্তু আপনার দিকে নজর দিসে?আপনার দিকে কেউ নজর দিলে তার নজর আমি উপড়ে ফেলে দেব।ইমা ফারহার দিকে তেড়ে যায়,
“তোর শরীর একশ টুকরো করে সাতচারা খেলব আর হাড্ডি দিয়ে ডাংগুলি খেলব দাঁড়া!”
” ইমা শান্ত হও।প্লিজ শান্ত হও।” শান ইমাকে টেনে বুকে উপর ইমার মাথাটা চেঁপে ধরে।তবুও ইমাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। ফারহার মাথা ভনভন করছে ইমার ভায়োলেন্ট রুপ দেখে।বার বার ঢোক গিলছে।দু’কদম পিছাতেই আবার ইমা থাবা দিয়ে ধরে।এবার ছুটে গিয়ে বেসিনের সামনে পড়ে থাকা কেচি টা নিয়ে আসে।শান কপালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ইমা কারো তোয়াক্কা না করে ফারহার চুলগুলো ঘেচাং ঘেচ করে কাটতে থাকে।ফারহা কিছু বলতে গেলে গলার চামড়ায় টান দেওয়ার হুমকি দেয়। কিছুটা কেটেও দেয় গলার চামড়া।রুবিনা সহ বাকিরা ভয়ে একপাশে দাড়িয়ে থাকে।রুবিনা ফিসফিস করে সানাকে বলে,
” এ তো পুরা ফুলন দেবি রে সানা।মুখ দেখে স্বপ্নেও ভাবি নি এই মেয়ে এতো বিপদজনক হতে পারে?”
” আমিও খালা।”সানা কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকায়।
শান ইমার হাত টেনে ফারহাকে ধাক্কা দেয় চলে যাওয়ার জন্য। ফারহার রাগে মুখ লাল করে শানকে বলে,
” কি ধুরন্দর বউ পেয়েছ শান!আমাকে বলে তোমার সাথে ফিক্স করে দেব আমার স্বামীকে।সব ছেড়ে চলে যাব।আমার সাথে নাকি তোমাকে মানায় আরও কত কি?দু’মুখো সাপ একটা!কি সুন্দর স্বামী দেওয়া কথা বলে আমার সব শেষ করে দিল।”ফারহা কান্না কান্না ভাব করে কাটা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে জোরেই কেঁদে ওঠে।
” স্বামী নিবি? আমার স্বামী নিবি? ছুঁয়েই দেখ না হারামজাদি কাফন ছাড়া দাফন করে ফেলব তোকে।দু’মুখো কেন তোর জন্য দরকার পড়লে রাবনের মতো দশমুখো হব।”ইমার হাত টেনে ধরে শান নিজের দিকে আনে।রাগে মুখ শক্ত করে বলে,
” ওকে বলেছ আমাকে দিয়ে দেবে? বলেছ ও যা বললো?”
” হ্যাঁ বলেছি।এখন কি করবেন চলে যাবেন ওর কাছে? গিয়ে দেখান তো?”ইমা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে শানের উপর।
” চুপ! একদম চুপ।পেয়েছ কি তোমরা আমাকে হ্যাঁ! যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমাকে মেনে নিতে হবে? আমারই শালা ভুল হয়েছে।আব্বু মরার সাথে সাথে মরে যেতাম সেটাই ভালো ছিল।তাহলে এসব নাটক দেখতে হতো না।সমস্যা নাই সেদিন মরি নি আজ মরে এসব প্যারা থেকে মুক্ত হব।তুমিই যখন আমার কষ্ট বুঝলে না তখন বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না।একদমই হয় না।করো মারামারি ওর সাথে। দেখাও মানবিকতা যতো খুশি।শুধু কষ্টটাই আমার জন্য বরাদ্দ রেখো হুমম।শান ইমার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।ইমা রাগে কাঁপতে থাকে।ফারহার নাকে কান্নার আওয়াজ শুনে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আবার ফারহার চুল পেছন থেকে টেনে ধরে।
” তোর জন্য সব হলো। হ্যাঁ তোর জন্য। কেন এসেছিস তুই? তোকে আজ আমি সত্যি মেরে ফেলব।ইমা কেঁচি টা নিয়ে ফারহার হাতের শিরা বরাবর টান মারে।মুখেও একটা পোঁচ দেয়।ফারহা ভয়ে আর্তচিৎকার করে ছটফট করতে থাকে।কিন্তু ইমার সাথে পেরে ওঠে না।ইমার শরীরে অসুর ভর করেছে আজ।ফারহাকে মেরেই তবে শান্ত হবে সে।হঠাৎ শানের রুমের ভেতর থেকে টুল পড়ার শব্দে ইমা থ মেরে যায়।ফারহার দিকে তাকিয়ে বলে,
” তুই এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি। একচুল নড়বি তো একশর জায়গায় ২শ টুকরো করবো।”ইমা দৌড়ে শানের দরজায় হাত পা দিয়ে আঘাত করতে থাকে।রুবিনা, সানা সহ বাকিরাও শান! শান বলে কাঁদতে থাকে।ফারহা নিজের জান বাঁচিয়ে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।আর জীবনে সে এমুখো হবে না বলে পণ করে সে।ইমা দরজায় সর্ব শক্তি দিয়ে আঘাত করতে করতে বসে কাঁদতে থাকে
” শান প্লিজ বের হয়ে আসুন।আপনার কিছু হলে আমি বাঁচব না বিশ্বাস করুন।আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি শান।খুব!”
ইমার নত মাথা উঁচু হল দরজা খোলার শব্দ পেয়ে।শানকে সুস্থ স্বাভাবিক দাঁড়ানো দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে ইমা।রুবিনা সহ বাকিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে শানকে ঠিকঠাক দেখে।
শান ইমার থুতনি ধরে দাঁড় করিয়ে বলে,
“কেন ছেড়ে যাবে না? সব লিখে নিয়ে মুক্ত হবেনা?” ইমা মাথা নাড়িয়ে শানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলে শান সরে দাঁড়ায়।
” না একদম না! শানের বাঁধা উপেক্ষা করে ইমা শানের টিশার্ট খামচে টেনে জড়িয়ে ধরে শানকে।
” সরে দেখান তো আরেকবার! মেরে ফেলব না আপনাকে।”
” খুব সাহস বেড়েছে দেখছি আমার ব্রাইডের!আমাকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে।ভয় পাও না আমাকে হুমম।”শানের ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।
” না পাই না ভয়।একটু ও পাই না।”শানের বুকের শার্ট খামচে ধরে মুখ তুলে চোখ ছোট করে বলে ইমা।শান তৎক্ষনাৎ দরজা লাগিয়ে ইমাকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়।
” আচ্ছা! দেখি তুমি ভয় কি করে না পাও।আজ তোমাকে তো আমি,,
” কি হুমম!
” একদম খেয়ে ফেলব।হু!হা!হা!
“দেখি কে কাকে খায়?ইমা শানের গলা জড়িয়ে ধরে গলায় দেয় জোরে এক কামড়।
” আহ! এটা কি করলে ইমা? ব্যথা পেয়েছি তো!
” আমার কি!আমি তো খুব কামড়াবো আজ আপনাকে।আপনাকে শাস্তি দেব।কঠিন শাস্তি”
“ডেঞ্জারাস বউ তো তুমি?আমার কি হবে আল্লাহ!আমি তো শেষ।কোয়ি মুঝে বাঁচাও”

তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২৯( অন্তিম পর্ব)
Writer Tanishq Sheikh

আজ অহন সানার বিয়ে।বড় মিঞার কথামতো বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা ইমাদের গ্রামেই করা হচ্ছে। বোনের বিয়েতে কোনোরকমের কমতি রাখছে না শান শৌখিন।সদ্য বিবাহিত রিফাত এলিনা জুটি হানিমুন বাকি রেখেই সানার বিয়ে এটেন্ড করতে ছুটে এসেছে।খান বাড়ির সবাই এখন মিঞা বাড়িতে।উৎসবের আমেজে পুরো গাঁয়ের পরিবেশ রমরমা।গোসলের আগে অহনের গায়ে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। পাড়ার ভাবি, নানী- দাদীরা এসেছে গায়ে হলুদ দিতে।সাদা সেন্টু গেঞ্জি আর চেক লুঙ্গি পড়ে হলুদ মেখে বসে আছে অহন।চোখ দুটো তার সানার দর্শনে তৃষ্ণার্ত।ভাইয়ের চোখের চাহনী বুঝে ইমা হেসে ওঠে। অহনের গালে বেশখানিক হলুদ লাগিয়ে বলে,
” আরেকটু সবুর কর।তারপর তোর বউ, ইহকাল আল্লাহ যদি চাই পরকালেও তোর ছায়া হয়ে থাকবে। মুখটা হাসি হাসি কর নয়ত সবাই তোকে বউ পাগল বলে আখ্যা দেবে।মিঞা বাড়ির ছেলে শেষমেশ বউ পাগল! ভাবা যায় বল?”
” খুব পাকা হয়েছিস তাই না? ভাইয়ের সাথে মজা হচ্ছে হুমম!ডাকব শান ভাইকে?”
” আহ! ছাড় না চুল।তোর শান ভাইয়ের ভয় আমাকে দেখাস না।উল্টো তাকে আমার ভয় দেখাবি বুঝলি?”
” আচ্ছা!অহন মুচকি হেসে বলে” দেখেছেন ভাই ইমা কি বলছে?”ইমা বিস্ফোরিত চোখে পেছন ফিরতেই অহন হো! হো! হো! করে হেসে ওঠে।
ইমা ভাইয়ের দুষ্টুমি বুঝতে পেরে রাগে নাক ফুলিয়ে আরও খানিক হলুদবাটা অহনের মুখে লেপ্টে দিয়ে প্রস্থান করে।অহনের হাসি যেন তাতে থামতেই চাই না।
অহনের গায়ে হলুদ শেষ হলে সবাই সানার গায়ে হলুদ দেয়।গান,নাচ আর পাড়ার বউ -ঝিদের আমোদে প্রমোদে গায়ে হলুদ দারুন ভাবে হয়ে যায়।হলুদ উপলক্ষে ইমা,এলিনা,শিখা,ইরা হলুদ শাড়ি পড়েছে।সব শেষ হলে বাড়ির বউ ঝিরা পাশের পুকুরে গোসল সেড়ে নেয়।শান ডেকোরেটিংএর কাজ শেষ করে সবে ঘরে ঢুকবে তখনই হাসির শব্দে থেমে যায়।পাশ ফিরে তাকিয়ে এক চিলতে দুষ্টু হাসি দিয়ে নিজেকে দরজার আড়ালে লুকিয়ে ফেলে।
” আচ্ছা শোন ইমা! তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে নে।বিয়ের মেলা কাজ পড়ে আছে।সানার তো তুই আর আমিই সব।”
” ও তুমি চিন্তা করো না।আমি আছি তো সব প্যারা খতম।”ইরা একগাল হেঁসে ইমাকে বিদায় দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।ইমা সদ্য গোসল করা শরীরে দ্রুত নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।দরজার কাছে আসতেই কেউ হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আচমকা টান পড়ায় ইমা ঘাবড়ে যায়।ভয়ে দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস পড়তে থাকে।মুখ তুলে চোখ ছোট করে তাকিয়ে মানুষটার বুকে ইচ্ছা মতো কিল ঘুষি মারে।
” আপনাকে না বলেছি এভাবে টান দেবেন না ভয় লাগে।”
” আমার তো ভালো লাগে।” ইমাকে জড়িয়ে ধরে শাড়ি সরিয়ে উন্মুক্ত উদরে খুব জোরে চেঁপে ধরে, নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ইমার শরীর শিরশির করে ওঠে।ছুটার জন্য ধস্তাধস্তি করেও পেরে ওঠে না।ঠোঁট উল্টে বলে,
” সরেন কাপড় পাল্টাবো।নয়ত ঠান্ডা লেগে যাবে তখন তো বলবেন ইমা তুমি কেয়ারলেস ব্লা ব্লা।”
“তুমি বড্ড আনরোমান্টিক বউ।কখন কি বলতে হয় কিছুই জানো না।ক্ষ্যাত একটা।
” এত বড় কথা।ছাড়েন! ছাড়েন!
“উফ! চুপচাপ থাকো।ফিলিংসের হালুয়া করে দিয়ে ছাড়েন! ছাড়েন।বললেই কি ছাড়ব নাকি?আনরোমান্টিক বউ!”
” আপনি খুব রোমান্টিক তাই না?”
” প্রমাণ চাও?”ইমার টোল পড়া গালে চুমু দিতেই ইমা চোখ বড় করে বলে,
“এই না! না!
” আরে হ্যাঁ! হ্যাঁ!
শান একচোখ টিপে পাঁজাকোলে তুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছে ইমা।আড়চোখে শানকে দেখে নিচ্ছে মাঝে মাঝে।শান মনমরা হয়ে মুখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে।ইমা আঁচল টা ঠিক করে শানের শিওরে গিয়ে বসলো।
” সানার জন্য খারাপ লাগছে? “ইমার কথার জবাব না দিয়ে শান ইমার কোলে মুখ লুকিয়ে ফেললো।ইমা শানের মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনার সুরে বলে,
” মন শক্ত করুন।আমি এসেছি সানা যাবে।পৃথিবীর নিয়মই এমন।বড় মা বলে মেয়েজাত ঘরের রাখার জিনিস না।পরের বাড়িই নাকি তাদের আসল ঘর।যুগ পাল্টে গেলেও সামাজিক নিয়ম পাল্টায় না শান।প্রতিটি মেয়েই এক একটি প্রজাপতি। তাদের রয়েছে নির্দিষ্ট গন্ডি।এবং এই বেঁধে দেওয়া গন্ডিতেই তাদের উড়তে হয়।এর বাইরে গেলে জীবন কঠিন হয়ে যায়।আমার গন্ডি যেমন আপনার আকাশ সানার গন্ডিও তেমনি অহন ভাইয়ের হৃদয় আকাশ।আমি হয়েছি আপনার আকাশের প্রজাপতি। সানাকেও তো তাই হতে হবে তাই না?”
” অনেক কষ্ট দেখেছে আমার সানা ইমা।আমার বোনটাকে ভালো রাখবে তো অহন?ওকে এখন কাছ ছাড়া করতে ভীষণ ভয় হয় আমার।”
” আল্লাহ ভরসা।সুখ দুঃখ তার দান।দুঃখ দিয়েছেন বলে কি সুখ দেবেন না এমন ভাবতে নেই।ধৈর্য ধরুন আর দুয়া করুন সব ঠিক হবে।সানা ইনশাআল্লাহ সুখী হবে।”
” তুমি বলছ?”
” হুম আমি বলছি!”
” আচ্ছা ইমা সব প্রজাপতিরই কি নিরাপদ আকাশ হয়?”
” না! হয় না।কিছু প্রজাপতি কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।এদের মুক্তি কেবল মৃত্যুতেই হয়।ভাগ্যের উপর কারও হাত থাকে না।”
” সকল প্রশংসা ঐ সৃষ্টিকর্তার যিনি তোমাকে আমার করে পাঠিয়েছেন।আল্লাহ তাআ’লার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তিনি আমাকে তেমন ভাগ্য দেন নি।আমি সুখী মানুষ আলহামদুলিল্লাহ। ”
” আপনি না অসহ্য! এতো আবেগ কেন উফ।আপনাকে আবেগী মানায় না।”
” তাহলে কি মানায় হুমম”
শান মৃদু হেসে চোখ মুছে, ইমার বিরক্ত হওয়া মুখটা নিচে নামিয়ে ঠোঁট জোড়া নিজের করে নেয় শান।
অহন বরবেশে চুপচাপ বসে আছে ঘরে।একটু পর তার বিয়ে।সেই কাঙ্খিত নারীটির সাথে।মাথায় নানা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো সানাকে কেমন লাগছে দেখতে সেটা?অহনের মুখ লাল হয়ে যায় অজানা লজ্জায়।
” খেয়েছিস অহন?”
অহন সোজা দাড়িয়ে পড়ে বড় আব্বা ও নিজের পিতাকে রুমে দেখে।সালাম করে নিচু মাথায় দাড়িয়ে থাকে।
” বস!
বড় আব্বার কথামতো অহন চুপচাপ বসে পড়ে।ইমন ছেলের মাথায়, গায়ে হাত বুলিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলে বলে,
” মাফ করে দিস রে বাপ।রাগের মাথায় কত কি বলেছি তোকে।হাত ও তুলেছি তোর গায়ে।”
” আব্বা কি বলছ এসব! তুমি আমার জন্মদাতা আমাকে মারার, শাসন করার হক তোমার আছে। ক্ষমা চেয়ে আমাকে পাপী বানিয়ো না আব্বা।”
ইমন খুশির অশ্রু মুছে ছেলের কপালে চুমু দেয়।বড় মিঞা একটা দলিল বের করে অহনকে দেয়।অহন সেটা খুলে দেখে জমির দলিল।
” বড় আব্বা, এটা কেন?”
” কাবিনের দেনমোহর।আমাদের ক্যাশ নাই আব্বা। এই জমিটা বউমার নামে করে দিয়েছি।”
” কিন্তু ”
” ইসলামের নিয়ম আব্বা,বউকে স্পর্শ করার আগে দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়।তুমি তো বেকার কিন্তু তোমার পৈতৃক সম্পত্তির তো অভাব নাই। সব তো তোমারই।”
” বড় আব্বা, আপনি কি এখনও আমার উপর রেগে আছেন?”
” না আব্বা! তুমি আর আম্মাজান আমার চোখের উপর থেকে মিথ্যার আবরন সরিয়ে দিছ।আমি এ বিয়েতে খুশি। মন থেকেই খুশি।আজ বুক চওড়া হয় তোমার আর ইমার বড় আব্বা হতে পেরে। জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায় না, মনুষ্যত্ব দেখিয়ে হতে হয়।যা হোক! বউমাকে নিয়ে তুমি এ বাড়িতেই থাকবা।সম্মানের সাথে থাকবা।”অহন বড় আব্বাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়।আজ সে পেরেছে সব নিজের করতে।কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সেটা হোক দুঃখ বা সুখ।পরিস্থিতির চাপে পড়ে যে নতি স্বীকার করে। অন্ধকারে পা বাড়ায় সে হলো পরাজিত। জয়ী তো সে যে সব বাঁধা টপকে নিজের সুখ ছিনিয়ে আনে।সাচ্ছন্দ্যের জীবন তৈরি করতে সক্ষম হয়।সেদিন ফাঁসিতে ঝুলে যদি মরে যেত তবে কি হতো? ভাবতেই গা শিওরে ওঠে অহনের।যথার্থই বলা হয় ধৈর্যশীলরা কখনও নিরাশ হয় না।

বিয়ের সকল কার্যাদি শেষ।ক্রমশ লোক সমাগম কমতে লাগল।অতি নিকট আত্মীয় ছাড়া সবাই চলে গেছে।অহনের ঘরটা রজনীগন্ধা ও গোলাপের মালায় সাজানো হচ্ছে। ইমা নিজে হাতে সব সাজাচ্ছিল।হঠাৎ কোথা থেকে শান এসে দরজা হালকা টেনে ইমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।ইমা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
” কি হলো?”
” ভাল্লাগছে না বউ।”
” কেন শুনি?”
” জানি না।”
” খেয়েছেন কিছু?”
” উহু!”
” আপনাকে নিয়ে করবো টা কি বলেন তো? বাচ্চাদের মতো শুরু করেছেন। খাওয়ালে খান নয়তো না।চলুন খাবেন।”
” ইচ্ছা করছে না।”
” কি ইচ্ছা করছে শুনি?”
” আমার বউটা এতোসুন্দর করে সেজেছে তাই আদর করতে ইচ্ছা করছে।”
” জানতাম! মতলব সুবিধার না।রুমে যান তো, কাজ করতে দিন।”
শান ইমার কথা পাত্তা না দিয়ে ইমার সাথে খুনশুটিতে মেতে ওঠে।ইমা পুরোঘর ছুটছে শানও ইমাকে ধরার চেষ্টায় পিছু নিল।
” ভালো হচ্ছে না কিন্তু ”
” তাই হুমম।”
” শান ধ্যাৎ “শান ইমাকে ধরে বলে বিজয়ীর হাসি হেসে বলে,
” এবার কই পালাবে তুমি?”
” মা!”শান দূরে সরে ঘাড় ঘুরে দরজায় তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।ঠোঁট টিপে হেসে দৌড়ে পালানোর জন্য প্রস্তুত ইমাকে আবার ধরে ফেলে।ইমার সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অসাবধানতা বশতঃ দুজনে খাটের উপর ধাম করে পড়ে।খাট ভাঙার শব্দ শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে এসে দেখে ফুলশয্যার খাট ভেঙে শান কোমড়ের ব্যথায় কাতরাচ্ছে আর ইমা তা দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।বাড়ির মুরুব্বি মহিলার মুখ টিপে হেসে চলে যায়।অহন সানার দিকে তাকিয়ে হাসতেই সানা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়।অহন সবার অলক্ষ্যে সানার হাতের আঙুলে আঙুল জড়িয়ে শক্ত করে হাতটা ধরে দাড়িয়ে থাকে।পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে আজ অহনের।এলিনা ইমাকে ধরে উঠাতেই ইরা ধমক দেয়
” বেকুবের মতো হাসছিস যে?
” তাহলে কি করবো? তোর ভাসুর যেমন কর্ম তেমন ফল পেলে।ইমা আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।শানকে টেনে তুলতে গেলে পারে না।হাসির কারনে শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। শৌখিন, রিফাত বাইরে থেকে এসে টেনে তোলে শানকে।অহনও সাহায্য করে।তিনজন মিলে শানকে পাশের রুমের খাটে শুয়ে দেয়।
” আপনার রোমাঞ্চের ঝড়ে আমার ভাইয়ের বাসর তছনছ হয়ে গেল।কার বিয়ের খাট আর কে ভাঙল? “ইমা জোরে হাসতে গিয়েও ইরার ভয়ে মুখ টিপে হাসল।তা দেখে শান ইমার হাত মুচরে ধরতেই ইমা সরি! সরি! বলে। ইমার হাত ছেড়ে চোখ পাকিয়ে তাকায়।উঠে বসতে গিয়ে ব্যথায় আহ! করে ওঠে শান।সেটা দেখে ইমা আবার ফিক করে হেসে দেয়।শান ইমার গলা পেঁচিয়ে ধরেও ইমার হাসি বন্ধ করতে পারে না। ইরা,এলিনা,সানা এদের কান্ড কারখানায় মিটিমিটি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।রিফাত, শৌখিন নতুন খাট এনে আবার ফুলশয্যা সাজাল।ইমা দরজায় দাড়িয়ে সব দেখছে আর হাসছে শানের দিকে মুখ করে।শান লজ্জায় মুখ ছোট করে আধোভাবে বিছানায় শুয়ে আছে।
রাত গভীর। চারপাশে ঝিঁঝি পোকার গুনগুন।সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সবার চোখে ঘুম নেমে এসেছে।বাসর ঘরে সানা অহন মুখোমুখি বসে আছে।মুখে কোনো কথা নেই।শুধু আধো আধো দৃষ্টিতে ব্যক্ত হচ্ছে মনের সকল অব্যক্ত কথা।লজ্জার জড়তা কাটিয়ে রাতের স্নিগ্ধ আলোয় সানাকে বুকে নিয়ে অহন ভাসল সুখের সাগরে।
আকাশের গোল চাঁদটাকে দেখে শান বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।কোমরের ব্যথাটা এখনও টনটন করে জেগে উঠছে হঠাৎ হঠাৎ।উঠে বসতেই ব্যথায় কাতরে উঠল।ইমা ঘুম জড়ানো চোখে সেদিকে তাকিয়ে উঠে বসল।শানকে ধরে বসিয়ে শানের বুকে মাথা রাখল।শান এক হাতে ইমাকে জড়িয়ে দূর আকাশের চাঁদকে নয় নিজের বুকের উপরে মাথা রাখা চাঁদকে অপলক দেখছে।
” খুব কষ্ট হচ্ছে? “ইমা শানের বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বলে।
“হচ্ছিল এখন কম হচ্ছে।”
“কেন? ”
” তুমি বুকে মাথা রেখেছ যে তাই।অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে ইমা।”
” আর আপনার চেয়ে বেশি আমি ভালোবাসি মি.শান নিহান খান।”
ইমা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে শানের গালে চুমু দিয়ে লজ্জায় মুখ লুকায় শানের বুকে।
“ইমা!
” হুমম।”
” আই লাভ ইউ।”
” মতলব কি হুমম?এসব লাভ টাব বলে কাজ হবে না।আজ চুপচাপ ঘুমান।”
” তাহলে অন্য কাওকে বলি গিয়ে,,,”
” একদম ঠ্যাং ভেঙে দেব।পৃথিবীতে আমি ছাড়া আপনি কারো নন।কারো না।আপনার সব কিছু শুধুই আমার।”
” ইমা আই লাভ ইউ বউ।”
” উফ! কি জ্বালা।আসেন বুকে আসেন।আই লাভ ইউ মোর দ্যান ইওর লাভ ইউ।”
শানের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে,শানের মাথাটা বুকে জড়িয়ে ভালোবাসা আর নতুন সুখ স্বপ্নে বিভোর হলো ইমা।এক নতুন গল্পের সূচনা হলো।যে গল্পের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকবে শুধুই ভালোবাসা।

??সমাপ্ত??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে