তোমাতে বিভোর পর্ব-১৩

0
1168

#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_১৩
#Sapna_Farin

–“যার প্রেমেতে বিভোর আভা।যার ভালোবাসায় মাতাল।যার মাঝখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।সে যেন মুহূর্তের মাঝখানে আভার স্বপ্ন গুলো সত্যি করে দিচ্ছে।এতো ভালোবাসা কোথায় রাখবো বলোনা প্রিয়?তোমাতে বিভোর হলো আভা তোমাতে শেষ।অবশেষে অপেক্ষা গুলো পেরিয়ে দূর দূরান্ত থেকে আসছো তুমি আমার কাছে,আমার স্বপ্নের রাজকুমার।সারাজীবনের জন্য নিজের মায়া জালে আমাকে জড়িয়ে নিতে।এভাবে পাশে থেকো ভালোবেসে আগলে রেখো আমাকে।এবার যেন মিটবে দূরত্ব।ভালোবাসা উঁকি দিবে মনের মাঝখানে।শুধু তোমার সামান্য অপেক্ষা।”

–কথা গুলো বলতে আভা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–“উফ আহানার ভাবনার মাঝখানে বিভোর হয়ে।সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছিলাম।আমাকে তো রেডি হতে হবে।যারজন্য মনের মাঝখানে এতো ভাবনা।তারজন্য আজকে অসাধারণ ভাবে তৈরি হয়ে তাকে চমকে দিবো।পুরো বাঙালি সাজে সাজাবো নিজেকে।আমাকে দেখে তার চোখ আটকে যাবে আমার মাঝে।মনের মাঝখানে দোলা দিবে ভালোবাসার ছোঁয়া।”

–কথা গুলো বলে আভা লজ্জায় লাল হয়ে ছুটে ওয়াশ রুমে চলে যায়।

–কিছুক্ষণ পড়ে সে শাওয়ার নিয়ে বেড় হয়ে।নিজেকে তৈরি করছে এবং মনের আনন্দে গুন গুন করে গান গাচ্ছে।আজকে যেন তার মনের ভেতর ভালোবাসার রঙ লেগেছে।ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছে হৃদয়ের মাঝখানে।
___________________

–আহান এবং অধরা শপিংমলে শপিং করছে।অধরা স্তব্ধ হয়ে আহানের সাথে তালমিলিয়ে যাচ্ছে।অধরা কে কিছু জিজ্ঞেস করলে,সে শুধু হ্যাঁ এবং না বলে উত্তর দিচ্ছে।আহান নিজের মতো কেনাকাটা করে যাচ্ছে।

–অধরা আহানের সাথে শপিংমলে এসে কেমন বিব্রত বোধ করছে।তার এখানে ভালো লাগছে না!আহানের সাথে এসে।কেমন বিরক্তিকর লাগছে তার সময় গুলো কে।মনে হচ্ছে সময় গুলো কেমন থেমে আছে।সময় গুলো কেমন কাটছে না।এসবের মাঝে
অধরার ধম বন্ধ হয়ে আসছে।কিন্তু আহান কে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা।নিজের মধ্যে নিজে রেগেমেগে আগুল জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।তখন নিজের জড়তা কাটিয়ে বলে।

–“আহান ভাইয়া আরো কতো শপিং করবেন?অনেক দেরি হবে কি আপনার!আমার ভালো লাগছেনা এখানে দয়া করে তাড়াতাড়ি করেন।বাসায় যাবো।”

–অধরার কথা শুনে আহান উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“কেন কি হয়েছে তোমার?অধরা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে!আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার তুমি ঠিক আছো।”

–কথা গুলো বলে আহান অধরা কে স্পর্শ করতে গেলে।অধরা তাকে থামিয়ে দিয়ে।আহানের কাছে থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে।আহানের আদ্যিক্ষেতা দেখে ভেবাচেকা খেয়ে বলে।

–“আহান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এতো উত্তেজিত হতে হবেনা।আমি ঠিক আছি।আমার এখানে বোরিং লাগছিলো তারজন্য বললাম।”

–অধরার কথা গুলো শুনে আহান শব্দ করে হেসে উঠে,বলে।

–“বোকা মেয়ে কোথাকার!আমাকে আগে বলবে তো।আমাদের কেনাকাটা তো প্রায় শেষ।চলো বাহিরে রেস্টুরেন্টে খেয়ে তারপর মুভি দেখতে যায়।তোমার মুড ভালো হয়ে যাবে।কি বলো তুমি?”

–আহানের কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।সে তার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে।

–“লুচ্চা বেটা একটা সুযোগ খুঁজে যাচ্ছে।তার আদ্যিক্ষেতা দেখলে মরে যায়।শপিংয়ে নিয়ে এসে মন ভরছে না।এখন রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে হবে এবং মুভি দেখতে যেতে হবে।কিছু মুখ ফুটে বলতে পারছিনা।কি করবো?কোথায় এসে ফেসে গেলাম।এখন আমার কি হবে।ইচ্ছে করছে মন খুলে কেঁদে যেতে।আমার ভুল হয়েছে লুচ্চা লোকটার সাথে আসা।”

–অধরার নীরবতা দেখে আহান ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে।

–“কি হয়েছে আমার প্রিয়তমার এতো কি ভেবে যাচ্ছো?”

–আহানের কথা শুনে অধরা বরফ হয়ে গেলো।তখন সে ফিসফিস করে বলে।

–“লুচ্চা বেটাটা আজকাল বেশি উড়তেছে মনে হয়।তার মনের মধ্যে যে কি চলছে কে জানে।সব হয়েছে ঐ রুদ্র ভাইয়া তোমার জন্য!রুদ্র ভাইয়া তোমার সাথে আমার এতো কিসের শত্রুতা?কোন জন্মের প্রতিশোধ নিতে আসছো হ্যাঁ।ইচ্ছে করছে রুদ্র ভাইয়া তোমাকে শেষ করে দিতে।তুমিতো বোকাসোকা দেখতে,কিন্তু ভেতরে লুচ্চা বেটা মানে আহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।লোকটা কে আমার সুবিধার মনে হয় না।মনে হয় ভিতরে কোন ঝামেলা আছে।কেন যেন আমার সন্দেহ হয় জানিনা।আচ্ছা হুলোবেড়াল তোমাকে সামনে পেলে খুন করে ফেলতাম এখন।তোমার জন্য এসব সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে।তখন হুট করে সবার সামনে এসে হাত ধরলো।এখন শপিং করে মন ভরছে না।এখন আমার সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে এবং মুভি দেখতে যাবে।আমার সাথে রোমান্টিক কথা বলে যাচ্ছে প্রিয়তমা।ভাবা যায় বোকাসোকা চেহারার পিছনে এতো রুপ লুকিয়ে আছে!”

–অধরার অবস্থা দেখে আহান ভ্রু কুচকে অধরার দিকে তাকিয়ে বলে।

–“কি হয়েছে তোমার বলোতো তুমি ঠিক আছো জান।”

–আহানের কথা শুনে অধরার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–“আহান ভাইয়া অধরা ঠিক আছে।আপনার আজকে কি হয়েছে বলেন তো?মনের মধ্যে এতো লাড্ডু কেন ফুটছে?এতো রোমান্টিক কেন হচ্ছেন।”

–অধরার কথা শুনে আহান মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।

–“এখানে দাঁড়িয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে প্রিয়তমা।শপিং তো প্রায় শেষ।চলো কোন রেস্টুরেন্টে বসে খেতে খেতে কথা হবে।”

–তার কথা শুনে অধরা কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–“আচ্ছা।”

–“ঠিক আছে চলো অধরা।”

–“হুম।”

–কথা গুলো বলে,আহান বেড়িয়ে যাচ্ছিলো।তখন অধরা তাকে পিছু ডেকে বলে।

–“আহান ভাইয়া সবার জন্যতো শপিং করলেন।কিন্তু রুদ্র ভাইয়ার জন্য।তারজন্য কিছু নিবেন না?”

–অধরার কথা শুনে আহান ভেবাচেকা খেয়ে যায়।তারমধ্য অধরার মুখে রুদ্রের নাম শুনে সে ভিতরে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।যে রাগে কটমট করছে।তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে।

–“আমার শত্রুর জন্য আমার শপিং করতে হবে ভাবা যায় অধরা!তোমার জন্য এতো কিছু করে যাচ্ছি। সেটা তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছোনা।তোমার জন্য নিজের ভালোবাসা আভা কে ত্যাগ দিলাম।তারপর প্রতিশোধর আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি।এখানে তুমি রুদ্র কে নিয়ে পড়ে আছো।সারাক্ষণ এতো রুদ্র রুদ্র কেন করতে হবে তোমাকে?রুদ্রের মাঝখানে কেন এতো ডুবে থাকতে হবে।তোমাকে তবু সহ্য করে যাচ্ছি অধরা।কি করবো বলো তুমিতো আমার সবকিছু।তোমার জন্য তো তোমাদের বাড়িতে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছি।নিজের প্রতিশোধ গুলো নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছি।তারজন্য তোমার সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছি।বিয়ের পড়ে রুদ্রের নাম নিজের মুখে আনবে না।”

–কথা গুলো বলতে আহান নিজেকে সামলে নিয়ে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।

–“অধরা তুমি কেন এতো চিন্তা করছো?রুদ্র আমার বন্ধু।সে আমার জীবনে তোমাকে এনে দিয়েছে।আমাদের বিয়েতে তাকে শপিং করে দেবোনা ভাবলে কি করে!চলো তোমার পছন্দ মতো রুদ্রের জন্য শপিং করবে।”

–আহানের কথা শুনে অধরা ভেবাচেকা খেয়ে। আহানের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে।

–“আমার পছন্দের মানে?”

–অধরার কথা শুনে আহান,মুখে হাসির রেখা টেনে বলে।

–“হ্যাঁ তোমার পছন্দে,তুমি তো রুদ্রের কাজিন!তুমি তার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে,আমার থেকে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?চলো তাড়াতাড়ি।”

–“হুম।”

–অধরা আহানের সাথে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে।

–“আহান ভাইয়া আমাকে এবং রুদ্র ভাইয়া কে নিয়ে। কিছু কি বোঝাতে চাচ্ছে?তার কথার আগাগোড়া কিছু বুঝতে পারলাম না।কে জানে তার মনের মধ্যে কি চলছে।বিয়ের দিন যতো সামনে আসছে তার ব্যবহার কেমন পাল্টে যাচ্ছে।বিষয় গুলো আমার ঠিক লাগছে না।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে আহান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে।”

–কিছুক্ষণ পড়ে আহান শপিং শেষ করে অধরা কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

–আহান ড্রাইভিং করে যাচ্ছে অধরা তার পাশের সীটে বসে আছে।আহানের মুখে জয়ের হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।কিন্তু অধরার নীরবতা,তখন অধরা ভাবতে থাকে।

–“সময়ের সাথে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সামনে আহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে।”

–কথা গুলো ভাবতে অধরার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।তার অজান্তে চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।তখন সে নিজের চোখের অশ্রু আড়াল করে।গাড়ির জানালার বাহির দিয়ে তাকিয়ে,বাহিরের ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
____________________

–রুদ্র ড্রাইভিং করা যাচ্ছে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।অধরার জন্য বুকের ভেতরটা কেমন ছটফট করছে।অজানা কোন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে বুকের ভেতর।তখন সে ভাবতে থাকে।

–“অধরা ঠিক আছো তো?ঐ মুখোশ রুপি আহানের সাথে কেন যেতে হবে তার।নিজেকে কি মনে করে সে।অনেক বড় হয়ে গেছে নিজের ইচ্ছে মতো চলবে।আহানের জন্য এতো টান কিসের তার,এতো কিসের আদ্যিক্ষেতা এসব দেখলে আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।”

–কথা গুলো ভাবতে রুদ্রের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে।তখন তার মনের মধ্যে জমানো রাগ ক্ষোভ নিয়ে।মূহুর্তের মাঝে বিড়বিড় করে বলে।

–“অধরার কথা কেন এতো ভেবে যাচ্ছি?কে অধরা!তার যা ইচ্ছে করুক আমার কি।সে এখন প্রাপ্ত বয়স্ক,নিজের ভালো নিজে বুঝতে পারে।তার ব্যাক্তিগত জীবন কেন দখল দিতে যাবো।”

–কথা গুলো বলে রুদ্র ফুল স্পীডে গাড়ি স্টার দিতে।ব্যাক সীট থেকে তিশা এবং রুশা ঘাবড়ে যায়।

–তখন তিশা উউত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।

–“রুদ্র ভাইয়া দেখে শুনে ড্রাইভিং করেন।এভাবে ড্রাইভিং করলে বেশি সময় লাগবে না উপরে যেতে।”

–তিশার কথা শুনে রুদ্র নিজেকে কন্টোল করে।গাড়ির স্পীড কমিয়ে দেয়।
__________________

–কিছুক্ষণ পড়ে রুদ্রদের গাড়ি এসে থামে,একটি বিশাল বাড়ির গেটের সামনে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে