তোমাতে বিভোর পর্ব-১১

0
1168

#তোমাতে_বিভোর
#পর্ব_১১
#Sapna_Farin

–আহানের আচমকা এমন ব্যবহার দেখে।অধরা বেশ ঘাবড়ে গিয়ে।আহানের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা সবার সামনে এবং কোন রিয়েক্ট করতে পারছেনা এখানে।সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আহান অধরার হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।রুদ্রের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।তার তাচ্ছিল্যেময় হাসির রেখার মাঝখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।সে অধরার জীবনে নিজের এবং রুদ্রের জায়গার ব্যবধান বোঝাচ্ছে।সে বোঝাতে চাচ্ছে রুদ্র তুমি যতো কিছু করো না কেন?দিন শেষে অধরা আমার।আমার সাথে তার বিয়ে সামনে।কিছুদিন পড়ে সে আমার মিসেস হতে চলেছে।তারপর তোমার জায়গা অধরার জীবন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে মি. রুদ্র?

–প্রতিশোধের আগুনে আহান জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছে।
তার বিবেক বুদ্ধি যেনো হারিয়ে গেছে।সে শুধু চাচ্ছে রুদ্রের ফ্যামিলির ধ্বংস।তারজন্য সবকিছু করতে সে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।সে শুধু নিজের প্লেন অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।সবকিছু মিলে আহানের নিজেকে জয়ী মনে হচ্ছে এবং রুদ্র কে পরাজীত।এসব দেখে আহানের বেশ ভালো লাগছে।সে বুঝতে পারছে তার প্লেন অনুযায়ী সে সাফল্যের দিকে যাচ্ছে।এভাবে সবকিছু মিটে গেলে সে খুব ভালো করে।নিজের প্রতিশোধ নিতে পারবে।

–আহান এবং অধরার অবস্থা দেখে।রুদ্রর ভিতরে জ্বলে পুড়ে শেষ।আহানের সাথে অধরা কে সহ্য করতে পারছেনা মূহুর্তের জন্য।তার ইচ্ছে করছে গুসি মেরে আহানের চেহারাটা বিগড়ে দিয়ে।হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসতে অধরা কে।কিন্তু সকলের সামনে কিছু বলতে পারছেনা সে।নিজের রাগ ক্ষোভ যেন নিজের মধ্যে কন্টোল করছে।তবু যেন ভেতর থেকে রাগ ক্ষোভ গুলো বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।তখন সে নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু অধরার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে আহানের ব্যবহার দেখে এতো শকড হয়ে যায়।যে তার কোন দিকের খেয়াল হচ্ছেনা।শুধু আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।অধরার এমন অবস্থা দেখে রুদ্রের ইচ্ছে করছে।অধরা কে আস্তো গিলে খেতে।তবু সবার সামনে রিয়েক্ট করতে না পেরে।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে এবং সময় গুনে যাচ্ছে সময় হলে সব হিসাব নিকাশ করবে।

–এসব দেখে তিশা এবং রুশা ভেবাচেকা খেয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তারা যেন সবকিছুর সাক্ষী হচ্ছে।কি থেকে কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।
অধরা এমন মূহুর্তে আহানের কাছে থেকে এমন ব্যবহার আশা করেনি।এসব কিছু তার কল্পনার বাহিরে ছিলো।সবকিছু যেন মূহুর্তে হয়ে গেলো।সবকিছু কেমন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।সবার সামনে অধরা রিয়েক্ট করতে পারছেনা।তখন নিজের উপর তার রাগ হচ্ছে।তখন সে রাগে কটমট করে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলে।

–“অধরা তোর আসলে মাথা মোটা।তোর জন্য এমন হয়েছে।সবকিছু না ভেবে হুট করে কে তোকে এমন সীধান্ত নিতে বলেছিল।যার সামান্য হাত ধরা তোর পছন্দ হচ্ছে না।তার সাথে সারাজীবন সংসার করবি কি করে।এবার ঠেলা সামলা।দেখ তোর জন্য সামনে আরো কি অপেক্ষা করছে।”

–অধরা কথা গুলো বিড়বিড় করে বলতে।সে বাস্তবে ফিরে আসে।তখন সে ভাবতে থাকে।

–“আহান ভাইয়ার সাথে আমার শপিংয়ে যাবার কথা বলা ভুল হয়েছে।তার মন রাখতে গিয়ে এখন অবস্থা সামাল দিতে আমার হিমসিম খেতে হচ্ছে।কিসের জন্য যে যেতে চাচ্ছিলাম?অদ্ভুত লোক একটা শপিংয়ে যেতে চেয়েছি বলে।সবার সামনে এসে এভাবে হাত ধরতে হবে!নিজেকে কি মনে করে সিনেমার হিরো।এভাবে হুট করে এসে হাত ধরে বলে।অধরা চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা কে তুমি হ্যাঁ আমার উপর এতো অধিকার দেখাচ্ছো।বিয়েটা কি হয়ে গেছে।যে এখন থেকে অধিকার দেখানো শুরু করেছো।বিয়ের পড়ে এসব অধিকার দেখাতে এসো আহান ভাইয়া।”

–অধরার নীরবতা দেখে আহান আলতো করে অধরার বাহুডোরে ধরে তাকে ঝাকিয়ে বলে।

–“অধরা কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে কি দেখো।এখন রোমান্স করার সময় কি?সেসব করার জন্য বাকি জীবন পড়ে আছে।চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

–আহানের কথা শুনে অধরার ধ্যান ভাঙে।আহানের কথা শুনে তার লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল।আহানের উপরে রাগ হচ্ছিলো!নিজের মনে এতো কিছু ভেবে নেবার জন্য।আহান কথা গুলো বলে অধরার কে টেনে নিজের সাথে নিয়ে যায়।আহানের এসব আদ্যিক্ষেতা দেখে রুদ্র ইচ্ছে করছে।নিজের রাগ ক্ষোভ গুলো এখনি প্রকাশ করে দিতে।কিন্তু সে পারছেনা কারণ এখন কোন প্রমাণ ছাড়া।সে আহানের বিরুদ্ধ কোন কিছু করতে পারবেনা।তারজন্য স্তব্ধ হয়ে অধরার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছে।

–তখন রুদ্রের বাবা মি. রায়মান সাহেব সিড়ি দিয়ে নেমে রুদ্র,তিশা,রুশা কে উদ্দেশ্যে করে বলে।

–“চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।ঐ দিকে সবকিছু রেডি আছে।কিছুক্ষণ আগে আমার বন্ধু অয়নের সাথে ফোনে কথা হলো।শুধু আমাদের যাবার অপেক্ষা।”

–তার কথা শুনে তিশা এবং রুশা বলো।

–“আচ্ছা”

–কথা গুলো বলে মি. রায়মান সাহেব দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে যায়।তার পিছু যায় তিশা এবং রুশা।কিন্তু রুদ্র স্তব্ধ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।কোন কথা যেন তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।মি. রায়মান সাহেব বেড়িয়ে যাবার সময় পিছু ফিরে রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে।সে থেমে গিয়ে রুদ্র কে উদ্দেশ্যে করে করা কন্ঠে বলে।

–“রুদ্র তুমি যাবেনা?এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন।চলো তাড়াতাড়ি।”

–মি. রায়মান সাহেবের ধমকে শুনে সে বাস্তবে ফিরে আসে।তখন সে বলে।

–“জ্বি আব্বু চলো।”

–তখম মি. রায়মান সাহেব রাগে কটমট করে বেড়িয়ে যায়।রুদ্র,তিশা,রুশা তার পিছনে যায়।

–মি.রায়মান সাহেব বাহিরে এসে বলে।

–“শোন রুদ্র,তুমি তিশা রুশা কে নিয়ে অন্য গাড়িতে আসো।আমার গাড়ি ফ্লো করে।আমি ড্রাইভার কে নিয়ে যাচ্ছি সোজা সেখান থেকে অফিসে চলে যাবো।”

–তার বাবার কথা শুনে রুদ্র বলে।

–“জ্বি আব্বু।

–মি. রায়মান সাহেব নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।সে গাড়ি ফ্লো করে রুদ্র যাচ্ছে।রুদ্র ড্রাইভিং সীটে বসে ড্রাইভ করছে।তিশা এবং রুশা ব্যাক সিটে বসে আছে।রুশা বকবক করে যাচ্ছে।সেসব শুনে যাচ্ছে তিশা।তখন মাঝেমধ্যে রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তিশা।রুদ্র লুকিং গ্লাসে তিশার এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে।বেশ ব্রিবত বোধ করে।সে বুঝতে পারছেনা তিশা কেন তার দিকে এমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছে!

–“তারমানে অধরা কি তিশাকে সবকিছু বলে দিয়েছে।”

–বিষয়টি ভাবতে রুদ্র লজ্জায় শেষ।সে লুকিং গ্লাস থেকে নিজের চোখ সড়িয়ে নিয়ে।ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।তিশা রুদ্রের বিষয়টা খেয়াল করে নিজের চোখ সড়িয়ে নিলো।

–রুশা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে।

–“জীবন খুব অসাধারণ।যদি তুমি সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারো।যদি তুমি সবকিছু ভুলে নিজেকে নিয়ে ভালো থাকতে পারো।যদি তুমি জীবনে কি হারিয়েছো।তার হিসাব রেখে জীবনে কি পেয়েছো সেসব নিয়ে ভালো থাকতে পারো।তখন দেখবে পৃথিবীর সব রঙ তোমার জীবনে এসে তোমার জীবন আলোকিত করে দিবে।তোমাকে দেখাবে নতুন কোন পথের আলো।যে পথে তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবে।অদ্ভুত জীবন অদ্ভুত সব রহস্য।এতো অভিমান অভিযোগ থাকলে কি ভালো থাকা যায়।”

–কথা গুলো ভাবতে রুশার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

–রুশা সময়ের সাথে নিজেকে সামলে নিয়েছে।সে বুঝতে পেরেছে কাজিনের হবু বরের জন্য এমন ফিলিংস থাকা ঠিক না।সময়ের সাথে তার আহানের প্রতি ফিলিংস গুলো কেমন ধূসর হয়ে গেছে।সে আহান কে স্বপ্নের মতো মনে করে।যেমন স্বপ্ন ভেঙে গেলে সবকিছু শেষ তেমন।এখন সে ঘোর কাটিয়ে। নিজেকে মুভ অন করে নিয়েছে।এসবের মাঝখানে নিজেকে নিয়ে অনেক ভালো আছে।
_______________________

–“ছোট ম্যাডাম উঠেন তাড়াতাড়ি বড় সাহেব ডাকছে।কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।আপনার তো ঘুম ভাঙছে না।ছোট ম্যাডাম উঠেন না।”

–কারো ডাক শুনে আভার ঘুম ভেঙে যায়।তখন সে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।

–“কি হয়েছে লতা এতো সকালে আমাকে ডেকে যাচ্ছো কেন?আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।”

–কথা গুলো বলে আভা আড়মোড়া হয়ে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।তখন লতা ভেবাচেকা খেয়ে বলে।

–“এমন করেনা ছোট ম্যাডাম।বড় সাহেব ডাকছে তাড়াতাড়ি উঠেন।অনেক জুরুরি কথা বলবে আপনার সাথে।দয়া করা চোখ খুলেন ছোট ম্যাডাম।এখন বড় সাহেবের কাছে গেলে আমাকে অনেক কথা শুনতে হবে।গত পনের মিনিট ধরে আপনাকে জাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।কিন্তু আপনার ঘুম ভাঙছে না কি করবো?এসব আজেবাজে জিনিস কেন খেতে হবে আপনার।এসব খেয়ে পার্টি করে অনেক রাতে বাড়িতে ফিরেছিলেন।বড় স্যার কালকে আপনার ফেরার অপেক্ষায় বসে ছিলো।আপনার সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু আপনি কালকে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।”

–কথা গুলো বলে লতা,দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“তাড়াতাড়ি উঠেন ছোট ম্যাডাম মেহমান মনে হয় এসে পড়লো।আজকে মনে হয় শেষ রক্ষা হবেনা।”

–মেহমান শব্দটা শুনে আভা আড়মোড়া হয়ে বলে।

–“কিসের মেহমান লতা?মেহমান আসবে আমার কি!”

–তার কথা শুনে লতা বলে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে