তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি পর্ব-৬

0
2203

#তোমাতেই সীমাবদ্ধ আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৬)

পরেরদিন,,

আনিশা সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে কলেজে গেলো।আজ অবশ্য আনিশার কলেজ যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না মায়ের কথাতেই রাজি হওয়া।

আনিশা কলেজ শেষ করে কলেজের কাছেই এক রেস্টুরেন্টে গেলো।ইয়াশের অপেক্ষা করতে লাগলো।

আজ ইশয়াশের সাথে আনিশার দেখা হয়নি।ওর ক্লাস ছিলো না।

ইয়াশের জন্য কফি শপে ওয়েট করছে আনিশা।আনিশার মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন কারন ৫:২৩ বাজে ইয়য়াশের খোজ নাই।

অবশেষে ৫:৩০ এ ইয়াশ আসে।

“সরি একটু লেট হয়ে গেলো।”

“ওহ একটু।পুরো ৩০মিনিট লেট আপনি।”

“😐”

“আপনার ওয়েট করতে করতে ঘুম পেয়ে গেছে।”

“কুম্ভকর্ণ। ”

“কি?!”

“কিছুনা।”

“শুনুন যা বলছিলাম।”

“হুম।”

“আমি এই বিয়ে করতে চাইনা।”

“আমিও চাইনা।”.

” আপনি তো চাইবেনই না।কতো সুন্দর সুন্দর ললনা আছে কলেজে ওদোর সাথে লাইন মারবেন।”

“নাউজুবিল্লাহ। ”

“ঢং করবেন না। আমি জানি সব টা হুম।”

“জীবনে ঘুমের থেকে বেশি ভালো কাউকে বাসিনি।”

“ওমাহ।”

“🥱”

“এমন করার কিছু হয়নি।আপনি আপনার বাড়িতে বলুন বিয়ে ক্যান্সেল করতে।”

“আমি পারবো না।”

“আজব বলেন না।”

“না। আম্মু আমাকে খেয়ে ফেলবে।তুমি বলো।”

“আরেহ্ বাহ।আপনি তো ভালোই হ্যা।নিজে মায়ের ভয়ে বলতে পারবেন না।এদিকে আমাকে বলতে বলছেন।”

“তোমারো সেম কাহিনী?”

“হুম।”

“তো এখন?”

“পালাবো।”

“কিহ্!কার সাথে?”

“আপনার সাথে।”

“মানে কি?আমি পালাবো কেনো?”

“পালাবেন আমার সাথে।আর সবাই ভাব্বে অন্য কারোর সাথে পালিয়েছেন তাতে আমাদের বিয়ে ক্যান্সেল।”

“তোমার সাথে কেন পাাবো?”

“অন্য কেউ আছে পালানোর?”

“আব না তো।” (ঘাবরে গুয়ে)

“তো প্লান অনুযায়ী কাজ শুরু ওকে।”

“ওকে।”

___________________________________
১৫দিন পর,,,

আজ
গায়ে হলুদ ইয়াশ আনিশার।
আনিশার ফোনে কলের উপর কল আসছে ধরার নাম নেই।
কারন আনিশা ঘুরে ব্যাস্ত।আনিশার আম্মু রুমে এসে দেখে ফোন বাজছে।

“আনু মা উঠো দেখো তোমার ফোন বাজছে।”

আনিশার হুস নেই।

“আনু।”

“হ্যা আম্মু।”

“ফোন বাজছে।”

“ওহ হ্যা হ্যা।”

আনিশা ফোন রিসিভ করল।আনিশার আম্মু ফুলের ডালা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।ফুলগুলো সব আনিশার রুমে রাখা হয়েছে।

আনিশা দরজা লক করে কথা বলা শুরু করে।

“হ্যালো।”

“কি কখন থেকে কল করছি।”

“ঘুমাচ্ছিলাম।”

“বাহ।আমি আছি চিন্তায় আর মহা রানী ঘুমায়।”

“খোঁটা দিলেন?”

“নাহ।”

“আচ্ছা।তো শুনুন আমি গায়ে হলুদের পর আপনি বাসার বাহিরে ওয়েট করবেন আমি আসবো।”

“ওকে।কি কি করা লাগবে এই জীবনে কে জানে।”

“কিছু বললেন?”

“নাহ্”

আনিশা কল কেটে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলো।
তারপর গার্ডেনে গেলো।সেখানেই গায়ে হলুদ হবে।

বেশ মজা করেই হায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে হলো।
আনিশা গোসল করে হলুদ লং গাউন পরে নিলো।তারপর একটা ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে সবার চোখ এরিয়ে বাসা থেকে বের হলো।

সন্ধ্যা ৭:২৫,,

বাইক পিছনে বসে আছে আনিশা। ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে ইয়াশ। ওদের পিছনে ২ টা গাড়ি।একটায় আনিশার বাবা মা অন্যটায় ইয়াশের।

“জোড়ে চালান স্যার ধরা পড়লে যদি দেখে একে অপরের সাথে পালাচ্ছি তাহলে কি হবে ভাবতে পারছেন?”

“সেটা তোমার প্লান করার আগে ভাবা উচিত ছিলো।”

“আপনিও তো না করেন নি।”

“আমার দোষ!”

“হুহ।”

তখনই পিছন থেকে চিল্লিয়ে আনিশার বাবা বলে উঠলো,,

“মা দাড়াও।আমাদের কথা শুনো সব রেডি কাল বিয়ে আজ এভাবে পালাবে সমাজে মুখ দেখাবো কি করে।”

তার পিছনের গাড়ি থেকে ইয়াশের মা বলছে,,

“ইয়াশের বাচ্চা তুই আমার সামনে আয় চর মে/রে দাত ফেলে দিবো।তুই কোন চুরেলের সাথে পালাচ্ছিস।আমার কতো সুন্দর বউমা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। রাত পার হলে তোদের বিয়ে।”

ফ্যামিলির কথা শুনে ইয়াশ আনিশা একে অপরের দিকে তাকালো।

“স্যার ওরা যদি জানে আমরা একে অপরের সাথে পালাচ্ছি তখন?”

“তোমার জন্য জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেলো। এমনি কুফা বলিনা।”

“কিহ্!”

“চুপ।”

ইয়াশের ধমকে আনিশা চুপ হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর,,

“শিট।”

“কি হলে স্যার?”

“পেট্রোল শেষ হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ”

“কি!এখন কি হবে?”

“গণধোলাই খাবো।”

“আমি খাবো না।আপনি খেলে খেতে পারেন।আমার কিউট কিউট হাত পা।”

“আরে মেরি মা চুপ।”

“হুহ।”

একটু পরেই বাইক থেমে গেলো।গাড়ি দু’টো প্রায় কাছে চলে এসেছে।

“স্যার কি করব?”

“পালাও।”

আনিশার হাত ধরে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো ইয়াশ।দৌড়াতে দৌড়াতে দু’জন একটু দূরে একটি বাড়ি দেখতে পেলো।

ওরা গিয়ে সেই বাড়িতে নক করল।
বেশ কিছুক্ষণ পর এক মাঝ বয়সী মহিলা বেরিয়ে এলো।

“কে আপনারা?”

ইয়াশ বলল,,

“আমি ইয়াশ ও আনিশা।আমাদের গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে আজকের জন্য থাকতে পারি?”

“আপনারা কি স্বামী স্ত্রী? ”

ভিতরের ঘর থেকে মাঝ বয়সী এক লোক শ্রশ্নটি করতে করতে বেরিয়ে এলো।
ইয়াশ উত্তর দেওয়ার আগেই আনিশা বলল,,

“না আমরা আনম্যারিড। ”

তখন মহিলাটি বলল,,

“না না তাহলে থাকতে দিতে পারবো না।”

ইয়সশ মহিলাটিকে বুঝাতে বুঝাতে বলল,,

“দেখুন যাস্ট ২ ঘন্টা থাকতে দিন তারপর আমি আমার ফ্রেন্ডকে কল করছি ও গাড়ি নিয়ে আসবে।”

লোকটি তখন বলল,,

“তোমাদের সম্পর্কটা কি?”

আনিশা বলল,,

“হবু জামাই বউ।”

লোকটির মুখ হা হয়ে গেলো।বলল,,

“বিয়ে থেকে পালাচ্ছো?”

“মিরার বাবা আমার সুবিধার লাগছে না পুলিশকে কল করো।” (মহিলাটি।)

ইয়াশ লোকটির হাত ধরে বলল,,

“না এমনটা করবেন না।ওর বাবা আমাদের বিয়ে মানবে না বলে পালিয়ে এসেছি। এখন পুলিশ কল করলে ওকে হারিয়ে ফেলবো।”

ইয়াশের কথা শুনে লোকটির মায়া হলো।ওদের ভিতরে যেতে দিলো।

“তোমরা কোনো চিন্তা করো না।একবার বিয়ে করে ফেলো পরিবারের লোকজন মানতে বাধ্য। ” (লোকটি)

“হুম আঙ্কেল করবো বিয়ে।”

“করবো কি আমি আছি না।আর একদম লুকিয়ে এমন করে থাকার দরকর নেই।এসো আমার সাথে।”

“কোথায়?”

“চলো গেলেই দেখতে পাবে।”

“ওকে।”

ইয়াশ কথা বলে আনিশার দিকে তাকালো।আনিশা ফিসফিস করে ইয়াশের কানে কানে বলল,,

“কোথায় নিয়ে যাবে?আমি যাবো না স্যার।আম্মু বাবারা এতোক্ষণে চলে গেছে চলুন ফিরে যাই।”

“এটা আগে বললে এতো কিছু হতো না।”

“সরি স্যার ”

“ফেসে গেছি।এখন ভালোয় ভালোয় এখন থেকে বের হলে বাচিঁ। সোজা বাসায় যাবো।আর সবাইকে সরি বলবো।”

“হুম স্যার ”

লোকটি ইয়াশ আর আনিশা কে নিয়ে কাজি অফিস গেলো।
সেখানে গিয়ে ইয়াশ আর আনিশার মুখ হা হয়ে গেছে।
লোকটি ওদের নিয়ে ভিতরে গেলো ইয়াশ আনিশা দু’জন চুপ। কিছু বললেই পুলিশে কল করবে এই লোক।আরও ফেসে যাবে ওরা।

লেকটি ইয়াশ আনিশার উদ্দেশ্যে বলল,,

“রেদোয়ান আমার ছোট কালের বন্ধু।তাই ওকে এই সময়েও পাওয়া গেলো।নে দোস্ত তারাতাড়ি বিয়ে পড়া।”

কাজি লেকটি বিয়ে পড়াতে শুরু করল।
বিয়ে হয়ে গেলো দু’জনের।

বিয়ে শেষ হতেই লোকটি বলল,,

“চলো এবার তোমাদের বাড়িতে। দেখি কে কি বলে।”

“না আঙ্কেল। তা লাগবে না আমরা নিজেরা যাবো।”(ইয়াশ)

“তাও আমি যাচ্ছি যদি ঝামেলা হয়।”

“না আঙ্কেল। থাক আপনাকে কতো কথা শুনতে হবে।”

অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ইয়াশ আর আনিশা লোকটার আশাটা আটকালো।লোকটি বলল ওদের বাসার সামনের ওদের নামিয়ে দিয়ে যাবে।

কি করার আর ওরা রাজি হলো।লেকটি বাসার সামনে ওদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

আনিশা ইয়াশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।অপ/রা/ধী/র মতো মুখ করে বাড়ির বেল বাজালো।

চলবে…!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে