তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট-৮

0
2292

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_৮
writer:#সারা_মেহেক

আয়ান তোয়ালে নিয়ে বারান্দায় রেখে রুমে চলে আসলো।বিছানার দিকে তাকাতেই তার চক্ষু চড়াকগাছ। মৌ বিছানার মাঝ বরাবর হাত পা ছড়িয়ে আরামসে শুয়ে পরেছে।তার এমন শোবার ধরণ দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে সে একা একা ঘুমানোর প্ল্যানিং করছে।আয়ান এ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তেড়ে গিয়ে বিছানার কাছে দাঁড়ালো। কোমড়ে দু হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে সে মৌ কে বললো,

—“এটা কোন ধরনের শোয়া??”

মৌ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

—“দিজ ইজ কল্ড, ‘দা স্টাইল অফ মৌ’স স্লিপিং। ”

—“তোকে এতো ইংলিশ ঝাড়তে কে বলেছে?”

—“আমার নিষ্পাপ মন বলেছে। ”

মৌ এর প্রতিটা কথা আয়ানের শরীরে রাগের পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।এই মৌ নামক মেয়েটা যে তার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়ে ফেলবে তা সে আজকে হারে হারে টের পাচ্ছে।একটা দিনও হয়নি তারা একসাথে,তাইই এমন অবস্থা।আয়ান ভেবে পাচ্ছে না,সারাটা জীবন মৌ এর সাথে কি করে কাটাবে?

আয়ান এবার ধমকের সুরে বললো,

—“ঠিকভাবে শুয়ে পর বলছি।যাহ ঐ কোণায় সরে যা।”

মৌ ভ্রু কুঁচকে শোয়া থেকে উঠে বললো,

—“এহ…শখ কতো।আমি এভাবেই শুবো।আর আপনি কোন দুঃখে এখানে শুতে যাবেন?”

আয়ান অবাক হয়ে বললো,

—-” আমার বিছানা এটা। আমি এখানে শুবো না তো কোথায় শুবো!!”

—-“কেনো সোফায় শুবেন।”

আয়ান চোখ বড় বড় করে বললো,

—-“আমি আর সোফায়!!ইম্পসিবল। নিজের বেড থাকতে আমি সোফায় কিছুতেই তো শুবো না।”বলে আয়ান বিছানায় গিয়ে যেই না শুতে যাবে তখনই মৌ এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

—“কতো বড় অসভ্য আপনি!!ছিঃ!আমার সাথে একই বেডে শুবেন!কি করে ভাবতে পারলেন এটা আপনি?আমার ইজ্জত সম্মান খোয়াতে চাই না আমি।”

মৌ এর কথায় আয়ান বললো,

—“আমি তো এখানেই শুবো।তুই কি করতে পারিস করে নে।” বলে সে জোর করে মৌ এর পাশে বসে যেই না শুতে যাবে তখনই মৌ তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।ফ্লোরে পরার সাথে সাথেই ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে আয়ান।ব্যাথা সে খুব সামান্যই পেয়েছ।অথচ মুখ দিয়ে এমন আওয়াজ বের করলো যে মৌ শুনে ভাবে সে খুব ব্যাথা পেয়েছে।
আয়ান পরে যাওয়ার সাথে সাথে মৌ বিছানা থেকে নেমে এসে আয়ানের সামনে দাঁড়ালো।আয়ান তখনও ফ্লোরেই বসে আছে।
মৌ বাঁকা হেসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে কষ্ট পাওয়ার ভান করে বললো,

—-“ইশ….অনেক ব্যাথা পেয়েছেন তাইনা?”

আয়ান খানিকটা রাগী চোখে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,

—“জল্লাদ একটা…ফেলে দিয়ে বলছিস আবার যে ব্যাথা পেয়েছি নাকি হুম?তো পরে গেলে মানুষ ব্যাথা না পেয়ে কি আনন্দ পায়?”

মৌ এবার সামান্য হেসে ভাব নিয়ে বললো,

—“খামোখা আমার সাথে লাগতে এলেন।আপনি যদি জোর করে বেডে না ঘুমাতে চাইতেন, তাহলে আপনাকে এভাবে ফেলে দেওয়া লাগতো না।”

আয়ান দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

—“তুই যে এমন এটা জানতাম না।তোর মতো ত্যাড়া,জল্লাদ,ফাজিল,বেয়াদপ মেয়ে এ জাহানে আর দ্বিতীয়টা নেই।মাত্র কয়েকটা ঘন্টায় আমার মাথায় গরম করে দিয়েছিস।”

আয়ানের কথা গুলো শুনে মৌ এমন রিয়েক্ট করলো যেনো এসব তাকে তারিফ করেই বলা হয়েছে।সে মনে মনে বললো,

—“এমন জ্বালানো জ্বালাবো আপনাকে যে আপনি নিজেই আমাকে আপনার জীবন থেকে বের করে দিবেন।এক্ষেত্রে আব্বু আমাকে কিছুই বলবে না।উল্টো তিনি ভেবে নিবেন যে আমাকে ভুল হাতেই তিনি তুলে দিয়েছেন।”

মৌ আয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

—“বাই বাই মিস্টার মিরর….আজকে এখানেই ঘুমান।তবে আমার পরামর্শ হলো সোফায় গিয়ে শুয়ে পরুন।শীত পরছে তো, ফ্লোরে ঘুমালে ঠান্ডা লেগে যাবে।আমি তো গেলাম শান্তির ঘুম ঘুমাতে।”বলে সে পিছনের দিকে ফিরে চলে যেতে লাগলো।
আয়ান তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে এক ঝটকায় মৌ কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।মৌ টাল সামলাতে না পেরে আয়ানের বুকের উপর গিয়ে পরলো।এতে আয়ানসহ মৌ কয়েক ধাপ পিছিয়ে এলো।
কয়েক সেকেন্ডের জন্যই রুমে একদম নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো।কারোর মুখ দিয়ে টু শব্দটুকুও বের হচ্ছে না।দুজনেই না চাইতেও এক বিড়ম্বনায় পরে গিয়েছে।মৌ কোনোদিনও আয়ানের এতো কাছে আসেনি।কখনো হাতটাও ধরেনি, সেখানে এভাবে কাছে আসাটা একদমই আশা করেনি মৌ।এমন বাজে একটা পরিস্থিতিতে পরে তার হৃদপিন্ডটা প্রচন্ড জোরে ড্রাম বাজাচ্ছে।শ্বাস নিতেও কেমন এক কষ্ট হচ্ছে তার।হঠাৎ করেই দম বন্ধকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন মৌ আয়ানের বুকের ধুকপুকানিটাও শুনতে পেলো।তার কানটা আয়ানের বুকের একদম কাছে রয়েছে।এই প্রথম সে কারোর হার্টবিট এতো কাছ থেকে শুনতে পেলো।হাজারো অস্বস্তির মাঝেও এ শব্দটা যেনো মধুর এক শব্দ হয়ে কানে বারি খাচ্ছে।কোনো এক অজানা কারনে তার হঠাৎ করেই ইচ্ছা করছে আয়ানের বুকের মধ্যে চলা এ সুমধুর ধ্বনিটা শুনে যেতে।
আয়ান একটা গভীর শ্বাস টেনে নিয়ে মৌ এর চুলের মাতাল করা ঘ্রাণটা নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো।সে জানে এটা মৌ এর শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ।তবুও এর মধ্যে আলাদা একটা মাতাল করা ঘ্রাণ লুকিয়ে আছে।যেটা উপভোগ করছে সে।আয়ান যখন মৌ এর এক হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলো তখন থেকেই মৌ এর হাতটা এখনো অব্দি ছাড়েনি।তার অবচেতন মনটা বলছে,মৌ কে কোথাও যেতে না দিতে।এভাবে করে মৌ কে আজীবন নিজের বুকে মাথা রাখতে দিলেও সে ক্লান্ত হবেনা।উল্টো ভালোলাগা কাজ করবে।সেই ভালোলাগাটা একদিন ভালোবাসায় পরিনত হবে।আর সে ভালোবাসাটা হবে শুধুই তার প্রেয়সীকে ঘিরে।শুধুই মৌ কে ঘিরে।
আয়ান অজান্তেই মৌ এর হাতটা ছেড়ে মৌ এর পিঠে স্লাইড করতে করতে হাতটা মাথায় এনে রাখলো।
হঠাৎ এমন স্পর্শে মৌ শিওরে উঠলো।তার শরীরে যেনো একটা তড়িৎ বয়ে গেলো।আচমকা এমন ছোঁয়ায় মৌ আয়ানকে দ্রুত ছেড়ে দিয়ে সামান্য পিছিয়ে এলো।
মৌ পিছিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আয়ানেরও যেনো হুঁশ ফিরে আসলো।এতোক্ষনে সে বুঝতে পারলো কি এক লজ্জাজনক কাজ করেছে সে।দুজনেই এমন পরিস্থিতিতে পরে মাথা নিচু করে রইলো।দুজনের মধ্যেই ব্যাপক অস্থিরতা আর অস্বস্তিজনক অনুভুতি কাজ করছে।আয়ান নিজেকে নিজেই একটা গালি দিলো এমন বেকুবি কাজের জন্য।কি দরকার ছিলো তার এমনটা করার??কেনো সে কে ওমন করে টানতে গেলো।আচ্ছা এমনটা নাহয় করলোই।কিন্তু মৌ কে বুকের কাছে পেয়ে ওসব ভাবার কি দরকার ছিলো!!
মৌ আর পারছে না এ সিচুয়েশনে থাকতে।আবার এখান থেকে যে চলে যাবে তারও উপায় নেই।কারন এখান থেকে চলে যাওয়া মানে তার লজ্জা পাওয়ার অনুভুতিটা আয়ানের কাছে পৌঁছে দেওয়া।তাই সে আর কোনো উপায় না পেয়ে হুট করে আয়ানের মাথার চুল জোরে টেনে ধরে।আয়ান মৌ এর হুটহাট এমন কাজে তব্দা খেয়ে গেলো।সে বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ানের এমন চাহনি দেখেও না দেখার ভান করে মৌ বললো,

—“বজ্জাত,ফাজিল ছেলে।আমাকে ব্যাথা দিলেন কেনো??”

আয়ান আরেক দফা অবাক হয়ে বললো,

—“আমি কখন ব্যাথা দিলাম?”

মৌ এবার আর আয়ানের প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাচ্ছে না।তখন পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য হুট করে ব্যাথা পাওয়ার কথাটা বলে ফেলে সে।কিন্তু এখন এ প্রশ্নের কি জবাব দিবে তা সে বুঝতে পারছে না।কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে সে আমতা আমতা করে বললো,

—“ঐ ঐ যে…যখন আপনি বেডে আমার পাশে শুতে গিয়েছিলেন তখন।”

—“তখন আবার ব্যাথা দিলাম কোথায়??”

—“হ্ হাতে ব্যাথা দিয়েছেন।”

আয়ান এখনো ঠিক মনে করে উঠতে পারছে না যে সে ঠিক কখন মৌ কে আঘাত দিলো।সে অসহায় হয়ে বললো,

—“আমার তো মনেই পরছে না তোকে আমি ঠিক কখন হাতে ব্যাথা দিলাম।”

মৌ এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে ভাবলো,এ বিষয়টা নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করা ঠিক হবে না। সে পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য বাহানা বানিয়েছিলো।কিন্তু এখন প্রশ্ন উত্তরের চিপায় পরে ব্যাপারটা গভীরে চলে যাচ্ছে।তাই সে আর না পেরে বিছানার দিকে চলে যেতে যেতে বললো,

—“এতো সওয়াল জওয়াব কেনে করছেন উফ।।ব্যাথা দিয়েছেন ঠিক আছে।এবার আপনিও ব্যাপারটা ভুলে যান,আমিও ভুলে যাই।
আর হ্যাঁ,উইদাউট মেকিং এনি নয়েস,আপনি সোফায় ঘুমিয়ে পরুন।”বলে মৌ বিছানায় শুয়ে পরলো।
এদিকে আয়ানের রাগটাও আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।সে রেগে বললো,

—“বড্ড বাড়বাড়ি করছিস মৌমাছি।তোর এমন জ্বালানোর স্বভাব আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ”

মৌ বিড়বিড় করে বললো,

—“আমিও তো এটাই চাইছি।”

—” আমি আবারো বলছি ঠিকঠাকমতো শুয়ে পর।”

—“আমি আপনার সাথে শুবো না এটাই ফাইনাল।”

আয়ান আর মৌ এর কথার তোয়াক্কা না করে বিছানায় এসে কম্বল টেনে শুয়ে পরলো।আর অভিব্যক্তহীন চেহারায় বললো,

—“এতোই প্রবলেম থাকলে তুই সোফায় শুয়ে পর।তোর সাথে শুতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না এখন।যতো সমস্যা তোরই হচ্ছে।তাই তুইই সোফায় গিয়ে শুয়ে পর।”

আয়ানের কাজ আর কথা দুটোই মৌ কে অবাক করে দিলো।সে এখন ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না যে সে কি করবে।সোফায় শুয়া তার পক্ষে সম্ভব না।কারন এদিক থেকে ওদিক হলেই যে সে পরে যাবে, এটা সে জানে।আবার আয়ানের সাথে একই বিছানায় শুয়া তার পক্ষে সম্ভব না।হাজারো ভাবনা চিন্তা করে অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো বিছানাতেই শুবে।কারন এছাড়া আর উপায়ও নেই।তাই অগত্যা তাকে এ পথটাই বেছে নিতে হলো।সে রাগী গলায় বললো,

—“আচ্ছা,আপনি এখানে শোবেন এখানে ঠিক আছে।আমিও শুবো এখানে তাও ঠিক আছে।বাট আপনি আমার থেকে নিরাপদ দূরুত্ব বজায় রাখবেন।”

আয়ান এতোক্ষনে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলো।মৌ এর কথা শুনে সে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,

—“আমি ঠিকঠাক ভাবেই শুই।তাই তোকে টেনশন করতে হবে না।”

আয়ানের বলা কথাটা মৌ এর মনে ধরলো না।তাই সে বললো,

—“আপনি ঐ কোনায় ঘুমাবেন।আর আমি এই কোনায়।তাহলে তেমন চিন্তা থাকবে না।”

আয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে কোনার দিকে সরে যেতে যেতে বললো,

—“বড্ড বিরক্তি করিস তুই।শান্তি নামক শব্দটা তোর মধ্যে যে বিন্দুমাত্র নেই তা আর অজানা রইলো না আমার।”

মৌ আর কিছু না বলে চুপচাপ কোনায় শুয়ে পরলো।

মাঝরাতে কারোর প্রচন্ড কাঁপুনির আওয়াজ ঘুম ভাঙলো আয়ানের।দাঁতের কিটকিট আওয়াজটা আর গাঢ়তর হলো তার কানে যখন তার ঘুম ভেঙে গেলো একদম।সে পাশ ফিরে দেখলো ঘুমন্ত অবস্থায় মৌ শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে।গায়ে তার কম্বল নেই।কারন কম্বলটা একটু ছোটো হওয়ায় দুজন দুকোনায় শোয়ায় টানাটানির ফলে মৌ এর গা থেকে কম্বল সরে যায়।
মৌ এর কাঁপুনি দেখে আয়ান একটু এগিয়ে এসে কম্বলের একপাশ মৌ এর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকাল সকাল মৌ এর চেঁচানিতে শান্তির ঘুমটা ভেঙে গেলো আয়ানের।আধো আধে চোখে সে দেখলো মৌ তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

#চলবে
(রিচেইক করেনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে