তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট-৪+৫ | বাংলা রোমান্টিক গল্প

0
2362

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_৪
#লেখিকা_সারা_মেহেক

মৌ দের বাসার সামনে গাড়ী আসতেই আয়ান চোখ বড় বড় করে একবার বাসার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।আয়ানের মনে এ ব্যাপারটা খটকা লাগলো যে মৌ দের বাসায় আসার কথা তার কাছ থেকে কেনো লুকালো।এ আবার এমন লুকানোর কি কথা।
এসব ভাবতে ভাবতে নুরুল খান গাড়ী নিয়ে মৌ দের বাসার সামনে এসে থামালেন।এরপর নিজে গাড়ী থেকে নেমে সবাইকে নামতে বললেন।
এদিকে অহনার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
“মৌ দের বাসায় দাওয়াত অথচ সে কিছুই জানে না।মৌ ও বললো না, কিন্তু কেনো??”
অহনা একবার আয়ানের দিকে তাকালো।আয়ানের চেহারায়ও অবাকের ছাপ স্পষ্ট। তবে বেশি না।
নুরুল খান গাড়ী থেকে মিষ্টি,ফলমূল নিয়ে গাড়ী লক করে দিলেন।নিজের কাছ থেকে কিছু জিনিসপত্র আয়ানকে দিলেন।আর সবাইকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে বললেন।
মৌ দের বাসার কলিংবেল বাজাতেই মাহতাব হাসিমুখে দরজা খুলে দিলো।একে একে সবাই ভিতরে এসে ড্রইংরুম এ গিয়ে বসলো।
আয়ান আর মৌ এর বাবা হাসিমুখে সালাম বিনিময় করে টুকটাক গল্প শুরু করে দিলেন।জান্নাতও এসে সবার সাথে সালাম বিনিময় করলো।জান্নাতকে দেখে এনাম হোসেন বললেন,

—“জান্নাত, মৌ কে নিয়ে আসো।আর তোমার শ্বাশুড়ী কোথায়??”

—“আম্মু রান্নাঘরে সব খাবার ঠিক করছে।আর আমি এখনি মৌ কে নিয়ে আসছি।”

আয়ান আর অহনা এতোক্ষন চুপচাপ বসে আশেপাশের সাজসজ্জা দেখছিলো।একদম ছোটো বাচ্চাদের মতো,যারা নতুন বাসায় আসলে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে।এতোক্ষন তো সব মন ভরেই দেখছিলো তারা।কিন্তু এনাম হোসেনের কথায় তারা দু ভাইবোনই অবাক হয়।মৌ কে এভাবে বলে কয়ে তাদের সামনে আনার মানে কি?মৌ আর তারা তো অপরিচিত কেউ না তাহলে এভাবে ডাকার কি মানে হলো।

এদিকে জান্নাত মৌ এর রুমে গিয়ে দেখলো,মৌ ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে বসে নিরবে চোখের জল ফেলছে।তা দেখে জান্নাত অবাক হয়ে যায়।মৌ এর এমন নিশ্চুপ কান্না দেখে সে তাড়াতাড়ি মৌ এর কাছে গিয়ে মৌ এর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাস করলো,

—“কি হলো মৌ এভাবে কাঁদছো কেনো??”

মৌ চোখেরজল নিয়েই অভিমানে সুরে বললো,

—“হাসিখুশি থাকার কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছি না।”

জান্নাত মুচকি হেসে বললো,

—“এখন পাচ্ছো না,কিন্তু আর কিছুক্ষন এর মধ্যেই পেয়ে যাবে।”

—“ভাবি,বলো না….কারা দেখতে এসেছে আমাকে?”

—“গেলেই দেখতে পাবে।তবে হ্যাঁ, একটু হিন্টস দেই।ছেলে তোমার পরিচিত।”

জান্নাতের এই ছোটো হিন্টস মৌ এর মনটা ভালো করতে পারলো না। তবে এ ছোটো হিন্টসটাই মৌ এর মনের এক কোনে বলাবলি করছে,হয়তো এটা রাফি হতে পারে।কিন্তু আবার এ প্রশ্নটাও করছে,আচ্ছা রাফি হবে কি করে?রাফিকে তো এ বাসার কেউ চিনেও না।আবার সে যে রাফিকে চিনে এ ব্যাপারটা বাসার কেউ জানেও না।তাহলে কিভাবে কি।এতো প্রশ্ন করার পরেও মৌ এর মন এখনো একটু আশা নিয়ে আছে হয়তো ছেলেটা রাফি হতে পারে।সে এ আশা নিয়েই উঠে দাঁড়ালো।
মৌ এর উঠে দাঁড়ানো দেখে জান্নাত খুশি মনে মৌ কে নিয়ে ড্রইংরুম এর পথে পা বাড়ালো।

আয়ান এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে দরজার দিকে চোখ পরতেই চমকে উঠলো।মাথায় ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় নীল শাড়ী পরে মৌ মাথা নিচু করে হেঁটে আসছে।মৌ কে এমন রূপে দেখে মনের অজান্তেই কয়েকটা হার্টবিট মিস করলো আয়ান।সে কখনো মৌ কে এভাবে দেখেনি।অদ্ভুত এক ভালো লাগা বয়ে গেলো আয়ানের মনের মধ্যে। কিন্তু এ অনুভুতি থেকে অজানাই রয়ে গেলো সে।হয়তো অন্যকোনো খেয়ালে ডুবে ছিলো আয়ান,তাই তো পাশ থেকে অহনার কথা শুনে খানিকটা চমকে তাকালো সে অহনার দিকে।

অহনা মৌ কে এ রূপে দেখেই কিছুটা জোরে বলে উঠলো,

—“মৌ….তুই এমন সাজে কেনো??”

অহনার এমন কথায় মৌ চমকে সামনে তাকালো।তার এ চমকানো ভাবটা না কমে আয়ানকে দেখে উল্টো ১০গুন বৃদ্ধি পেলো।সে এখানে আয়ানকে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও আশা করেনি।রাফির বদলে আয়ানকে সে এখানে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।রাফির জায়গায় আয়ান না হয়ে অন্য কেউ হলে একটুর জন্যও মেনে নেওয়া যেতো ব্যাপারটা। কিন্তু আয়ানকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
মৌ অবাক চাহনিতে জান্নাতের দিকে তাকালো।জান্নাত মৌ এর এমন চাহনি দেখে মুচকি হেেস বললো,

—“বলেছিলাম না ছেলে পরিচিত?দেখলে তো?”
জান্নাতের এ কথা শোনারপ পরও মৌ তার এ ভাবটা পরিবর্তন করতে পারছে না।
জান্নাত এবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,

—“হেয়ার ইজ ইউর উড বি ওয়াইফ।”
জান্নাতের কথা শুনে আয়ান এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো।চোখ দুটো এমন করে রেখেছে যেনো কিছুক্ষন বাদেই কোটর থেকে বের হয়ে আসবে।এইমাত্র যে কথাটা সে জান্নাতের মুখ থেকে শুনলো,তা কিছুতেই নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না সে।
আয়ান বিস্ফোরিত নয়নে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

—“এসব কি বলছেন ভাবি?? ”

আয়ানের সাথে এবার অহনাও যোগ দিলো।

—“জান্নাত ভাবি,কি বলছো তুমি তা একবার ভেবে দেখেছো? ”

এনাম হোসেন,পপি বেগম,নুরুল খান,সিতারা বেগম আর আয়ানের দাদি সবাই মিলে আয়ান,অহনা আর মৌ এর আশ্চর্য হওয়া ভাব দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

মাহতাব এবার বললো,

—“জ্বি হ্যাঁ।তোমাদের ভাবি যা বলেছে সব ঠিক বলেছে।”

আয়ানের দাদি বললো,

—“মৌ কে আমার নাতবৌ হিসেবে খুব মানাবে তাই না রে আয়ান?”

আয়ান এবার তড়িৎগতিতে উঠে দাঁড়ীয়ে উঁচু আওয়াজে বললো,

—“এসব কি যা তা বলছো তোমরা??বিয়ে তাও আবার মৌ কে!!পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি সবাই?আর বিয়ে হবে আমার অথচ কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি!!”

আয়ানের এমন আচরনে সবাই থতমত খেয়ে যায়।মৌ আর অহনা আগের মতোই আছে।কারন তারা জানে আয়ান এ বিয়ে কিছুতেই মানবে না।
মৌ এখনো ছোটোখাটো একটা শকে আছে।বিয়ের ব্যাপারটা এখনো তার বোধগম্য হচ্ছে না।

আয়ানের এমন আচরনে নুরুল খান খানিকটা রাগী স্বরে বললেন,

—“বড়দের সামনে কি করে কথা বলতে হয় জানো না আয়ান??”

আয়ানের আশেপাশে কারা আছে সেটা আর তার মাথায় নেই।সে আগের মতোই বললো,

—“কোনো মানুষের সাথে এমনটা করলে তার আর আশেপাশের খেয়াল থাকে না।তোমরা কি করে এমনটা করতে পারলে?উইদাউট আমার পার্মিশন আমার বিয়ের ঠিক করে ফেললে!!”
আয়ান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দুহাত দিয়ে নিজের পুরো মুখ মুছে জোরপূর্বক মুখে একটা হাসি এনে বললো,

—“আচ্ছা ওয়েট…..এখনো তো বিয়ে ঠিক হয়নি তাইনা? সো বিয়েটা ক্যান্সেল করলেই তো হয়।কারন মেয়ে ছেলে কেউই বিয়েতে রাজি না।ঠিক বলেছি না মৌ?”বলে আয়ান মৌ এর দিকে তাকালো।মৌ নির্বাক দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ এর এমন তাকানো দেখে আয়ান আবারো বললো,

—“কি হলো কিছু বলছিস না কেনো মৌ?তুইও তো বিয়েতে রাজি না, এম আই রাইট?”

আয়ানের এমন সব আচরনে এনাম হোসেন আর পপি বেগম বেশ অবাক হয়ে আছেন।এদিকে নুরুল খান আর সিতারা বেগম ছেলের এমন আচরনে বেশ ক্ষুব্ধ। নুরুল হোসেন আর না পেরে উঠে গিয়ে আয়ানের সামনে দাঁড়ীয়ে বললেন,

—“ঐদিকে চলো তোমার সাথে কথা আছে আমার।”

আয়ান বললো,

—“কি কথা বলবে আব্বু?মৌ আর আমি কেউই তো এ বিয়েতে রাজি না।”

আয়ানের কথা শুনে এবার তার দাদি উঠে এসে বললেন,

—“তুই সারাজীবন একটা বোকাই থেকে যাবি।এটুকুও জানিস না নাকি হুম?মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। মৌ চুপ হয়ে আছে এটার মানে তো এইই হয় যে ও বিয়েতে রাজি।এটুকু বুঝতে পারছিস না?”

দাদির কথা শুনে আয়ান রাগী দৃষ্টিতে এবার মৌ এর দিকে তাকায়।মৌ তার এ দৃষ্টি দেখেনি।সে তো ডুবে আছে ভাবনার এক অতল সমুদ্রে।এমন সারপ্রাইজ সে পাবে কোনোদিনও ভেবে উঠতে পারেনি।শক থেকে বের হতে পারছে না সে।

আয়ানের বাবা আয়ানকে আর কোনো কথা না বলে টেনে ড্রইংরুম এর বাইরে নিয়ে আসে।সাথে আয়ানের দাদিও আসে।এদিকে সিতারা বেগম ছেলের এমন আচরণে লজ্জিত হয়েছেন বেশ।তাই তিনি বিষয়টাকে সামাল দেওয়ার জন্য মুখে একটা জোরপূর্বক হাসি টেনে বললেন,

—“আসলে আয়ান হুট করে এমন পরিস্থিতিতপ পরেছে তাই এমন ব্যবহার করছে।বিয়ের কথা এমন করে শুনলে যে কেউই এমন ব্যবহার করবে।ওর আচরনের জন্য আপনাদের সবার কাছে মাফ চাইছি।”

পপি বেগম বিনয়ী সুরে বললেন,

—“আরে ভাবি…. মাফ চাওয়ার কি হলো।আমাদেরই ছেলে,একটু ভুলচুক হতেই পারে।আর ভাবি, আপনি কিছু নিচ্ছেন না কেনো….অহনা তুমি বসে আছো কেনো?কিছু খাওয়াদাওয়া করো।”

অহনার কিছু বলার আগেই মৌ শক্ত কণ্ঠে তার মাকে বললো,

—“আম্মু একটু এদিকে আসো।তোমার সাথে কিছু কথা আছে।ভাবি তুমিও আসো।”
মৌ এর কথা শুনে পপি বেগম আর জান্নাত চলে গেলো মৌ এর সাথে।আয়ানকে পাশ কাটিয়ে মৌ তার রুমে নিয়ে আসলো তার আম্মু আর ভাবিকে।

এদিকে আয়ান না পারছে সইতে না পারছে তার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বলতে।আয়ান করুন সুরে নুরুল খানকে বললেন,

—“আব্বু,এটা একদমই ঠিক হচ্ছে না।এভাবে আমার মতের বিরুদ্ধে আমাকে জোর করে বিয়েতপ রাজি করানোর কোনো মানে হয়না।”

নুরুল খান এবার গম্ভীর সুরে বললেন,

—“অবশ্যই মানে হয়।আমি আর মৌ এর বাবা একে অপরকে ওয়াদা করেছি,তোমাদের দুজনের বিয়েটা দিবো।এখন তোমার চাওয়া না চাওয়াতে আমাদের ডিসিশন বদলাবে না।”

—“আব্বু…তোমার একবার কি উচিত হয়নি আমার কাছ থেকে আমার মত নেওয়ার?”

—“এতে মত নেওয়ার কি আছে?মৌ আমাদের সবার চিনা জানা মেয়ে।ওর বিষয়ে ভালো মন্দ সব জানি আমরা।তো শুধু শুধু ঘরের জানাশোনা মেয়ে থাকতে কিসের জন্য আমরা বাইরের মেয়ে খুঁজবো?”

আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ ভঙ্গিতে বললো,

—“আমার কোনো পছন্দ থাকতে পারে এটা মনে হয়নি কোনোদিনও?”

আয়ানের প্রশ্ন শুনে নুরুল খান ভ্রু কুঁচকে বললেন,

—“তুমি কখনো আমাদের সামনে এসব বিষয় নিয়ে টু শব্দও করোনি।কখনো কোনো ইশারায়ও বলোনি যে তোমার পছন্দের কেউ থাকতে পারে।তো যে ছেলে এতো বড় হয়ে যাওয়ার পরও নিজের পছন্দের কথা বলেনি, সে ছেলের নিশ্চয় কোনো পছন্দ নেই।”

—“কিন্তু আব্বু……”
আয়ানকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নুরুল খান বললেন,

—“আর কোনো কথা শুনতে চাই না।মৌ এর সাথে তোমার বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল।আর এটা হয়তো তোমার জানা আছে,মা বাবা ছেলেমেয়ের জন্য সবসময় ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।তুমি আমাদের উপর নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”বলে নুরুল খান আয়ানকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন।আর আয়ান করুন দৃষ্টিতে তার বাবার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রয়েছে।সে যদি জানতো তার পরিবার তাকে এতো বড় বাঁশটা দিবে, তাহলে শুরুতেই সে তার গার্লফ্রেন্ড এর কথা বলো দিতো।আয়ানের অবশ্য তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তেমন বিচলিত হচ্ছে না।সে বিচলিত হচ্ছে তার স্বাধীনতার কথা ভেবে।তার মতে বিয়ে হচ্ছে একটা জেলখানার সমতুল্য।সেখানে থাকে নানা দায়িত্ব,নানা চাপ,নানা জবাবদিহি।আর এসব কারনেই সে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইছে না।
আয়ানের দাদি এতোক্ষন চুপচাপ ছিলেন। এবার তিনি আয়ানকে বললেন,

—“তুই তো মৌ কে চিনিস,তো ওকে বিয়ে করতে দোষ কোথায়?”

—“চিনলেই বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা আছে?”

—“না নেই।তবে আমাদের মনে হয় তুই মৌ কে পছন্দও করিস।”

আয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“কে বললো তোমায় যে আমি মৌ কে পছন্দ করি?”

দাদি এবার মুচকি হেসে বললেন,

—“বুজেছি বুঝেছি।”

আয়ান ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের সুরে বললো,

—“কি বুঝেছো?”

—“এই ই যে তুই মৌ কে শুধু পছন্দ করিস না।পছন্দের চেয়ে বেশিই কিছু করিস।লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতে পারিস না আরকি….”
বলে দাদিও চলে যেতে লাগলেন।এদিকে আয়ান পুরো বেকুব বনে গেলো।সে কি বললো আর তার দাদি কি বুঝলো। এখন নিজের মাথায় নিজেরই কয়েকটা বারি দিতে ইচ্ছা করছে আয়ানের।এমন বেশি বুঝদার পরিবারে জন্ম নিয়ে তার লাইফে যে শুধু বাঁশই খেতে হচ্ছে এটার কষ্ট আর কেউ বুঝলো না।

মৌ এর রুমে তার মা আর ভাবি চুপচাপ দাঁড়ীয়ে আছে।
মৌ কান্নারত অবস্থায়েই বললো,

—“এমন জঘন্য সারপ্রাইজ আমি কখনোও আশা করেনি তোমাদের থেকে।আমার কোনো মূল্যই নেই কি এ পরিবারে?”

পপি বেগম দুঃখী কণ্ঠে বললেন,

—“কে বলেছে কোনো মূল্য নেই?তুই এ পরিবারের একমাত্র মেয়ে।”

মৌ তার মায়ের কথা শুনে অভিমানি কণ্ঠে বললো,

—“একমাত্র মেয়ে বলেই মেয়ের পরামর্শ আর ইচ্ছা ছাড়া তার বিয়ে ঠিক করেছো?একটিবার আমার মনের কথা জানার চেষ্টাও করলে না??”

জান্নাত বললো,

—“মৌ,সবাই জানে আয়ান তোমার জন্য একদম পারফেক্ট।সবদিক দিয়েই ও ভালো।তার উপর আবার পূর্বপরিচিত ও।তো এটা তো সুবিধার কথাই।”

—“সবদিক বিবেচনা করে বিয়ের কথা বলা উচিত ছিলো তোমাদের।আমার কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ আছে নাকি সেটা এটলিস্ট একবার শুনে নেওয়া উচিত ছিলো তোমাদের।”

মেয়ের কথা শুনে পপি বেগমের মরনপ্রায় অবস্থা হয়ে গেলো।তিনি পরলেন বড় এক ধর্মসংকটে।এদিকে মেয়ে অন্য কাউকে পছন্দ করে বসে আছে,আর অন্যদিকে স্বামী বিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়ে আছেন। পপি বেগম দ্বিগবিদিকশূন্য হয়ে পরলেন।তিনিও করেছন এক বোকার মতো কাজ।স্বামীর কথা শুনতে গিয়ে মেয়ের পছন্দ অপছন্দ কিছুই জানলেন না তিনি।এ কি বড় ভুল করে বসলেন তিনি….এখন চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তিনি করুন সুরে মৌ কে বললেন,

—“মা…তুই যাকেই পছন্দ করিস ভুলে যা তাকে।কারন এ বিয়ে থামানো কোনোমতেই সম্ভব না।কারন তোর বাবা আয়ানের বাবাকে ওয়াদা করেছে এ বিয়ের ব্যাপারে।”

এতোক্ষন মৌ শান্ত থাকলেও বিয়ের ব্যাপারে ওয়াদা করার কথাটা শোনার পর মৌ কিছুতেই শান্ত থাকতে পারলো না।এমনটা হয়েছে শুধু যে রাফিকে সে পছন্দ করে সে জন্য নয়।আয়ান আর তার মধ্যে যে সাপ-নেউলের সম্পর্ক আছে সেরকম সম্পর্কে বিয়ে করা মোটেও পসিবল না তার পক্ষে।যেখানে একজন আরেকজনকে সহ্যও করতে পারেনা,সেখানে বিয়ের মতো সম্পর্ক কি করে সম্ভব? এমন সম্পর্কে বিয়ে ভাঙতে যে একটা মাসও সময় লাগবে না সেটা মৌ এর জানা আছে।

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_৫
#লেখিকা_সারা_মেহেক

রুমে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।মৌ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।তার মা আর ভাবি নির্বাক দৃষ্টিতে তাকে দেখে যাচ্ছে।তাদের বলার কিছু নেই।মৌ কে শান্ত্বনা দেবার ভাষা জানা নেই তাদের।এসময়ে মৌ এর মনের মধ্যে দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে, তা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন পপি বেগম আর জান্নাত।হঠাৎ দরজায় নক পরতে পপি বেগম, জান্নাত আর মৌ দরজার দিকে ঘুরে তাকালো।দরজায় অহনা দাঁড়ীয়ে আছে।
—” আসতে পারি কি?”

পপি বেগম ধীর স্বরে বললেন,

—” হুম আসো।এতে জিজ্ঞাস করার কি আছে।”

অহনা একটা বিনয়ী হাসি দিয়ে মৌ এর রুমে ঢুকলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে বললো,

—“আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আমি মৌ এর সাথে একটু একা কথা বলতে পারি?”

জান্নাত ঠোটের কোনে সামান্য হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,

—“অবশ্যই।তোমারই বান্ধবী…..”বলে জান্নাত পপি বেগমকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো

মৌ বিছানায় চুপচাপ বসে আছে।অহনা গিয়ে তার সামনাসামনি বসলো।সে নিজের হাতটা মৌ এর হাতের উপর রেখে বললো,

—“তুইও এ বিয়েতে রাজি না তাইতো?”

মৌ এর চোখের কোনে সামান্য জল জমে আছে।সেটা সে হাত দিয়ে মুছে অহনার দিকে তাকিয়ে বললো,

—“তুই তো সব জানিসই।এ বিয়েতে রাজি হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

অহনা এবার ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

—“আচ্ছা, আমি কিছু প্রশ্ন করবো।সব প্রশ্নের জবাব বুঝে শুনে দিবি ওকে?”

—“ওকে।”

—“তুই রাফি ভাইয়া কে পছন্দ করিস?”

—“হুম করি।”

—“রাফি ভাইয়া তোকে পছন্দ করে??”

এবার মৌ মাথা নিচু করে বললো,

—“সেটা জানি না।”

অহনা আবারো জিজ্ঞাস করলো,

—“তুই রাফি ভাইয়াকে ভালোবাসিস??”
অহনার প্রশ্ন শুনে মৌ অহনার দিকে তাকালো।মৌ ভাবছে এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে।সে কি রাফিকে শুধু পছন্দই করে নাকি ভালোওবাসে সেটা সে জানে না।সে আস্তে করে বললো,

—“জানি না।”

—“আমি বলছি এর সঠিক জবাব।তুই রাফি ভাইয়াকে ভালোবাসিস না।শুধুই পছন্দ করিস।আর এটা নিশ্চয় জানিস ভালোবাসা আর ভালোলাগা কখনোই এক না।যদি তুই রাফি ভাইয়াকে ভালোবাসতি তাহলে সবসময় উনাকে নিজের চোখের সামনে দেখতে চাইতি।যদি তুই রাফি ভাইয়াকে ভালোবাসতি তাহলে সেদিনের সেই এক্সিডেন্টে রাফি ভাইয়া যে আহত হয়েছিলো, সেটা দেখেই তুই চোখের জল ফেলতে ফেলতে হাঁপিয়ে যেতি।উনার চিন্তায় তোর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতো।ইচ্ছা করতো উনার পাশে গিয়ে থাকতে।তোর কি এর মধ্যে একটাও হয়েছিলো?”

মৌ আবারো মাথা নিচু করে জবাব দিলো,

—“না…তবে একটু কষ্ট লেগেছিলো মনের মধ্যে।তবে আমি কান্না করিনি।”

অহনা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

—“রাফি ভাইয়া তোকে লাইক করে নাকি সেটাই জানিস না তো ভালোবাসার কথা কি করে জানবি।”বলে সে কিছুক্ষন চুপ থাকলো।এরপর আবারো বললো,

—“কেউ মুচকি হেসে কথা বললে কখনো এটা ভাবতে নেই যে সে তোকে পছন্দ করে।হয়তো ভদ্রতার খাতিরে এমনটা করছে সে।আবার কেউ তোকে একটু সাহায্য করছে,তোকে একটু সময় বেশি দিচ্ছে, এটার মানে এই নয় যে সে তোকে ভালোবাসে বা পছন্দ করে।হয়তো তার ব্যক্তিত্বই এমন যে সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করে।সবার মনে জায়গা করে নিতে পছন্দ করে।আমার মনে হয় রাফি ভাইয়াও সেরকম মানুষ। ”

মৌ আর অহনার কথার জবাবে কিছু বললো না।
মৌ এর চুপচাপ থাকা দেখে অহনা কিছুটা গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে জিজ্ঞাস করলো,

—“আচ্ছা মৌ…তুই তোর পরিবারকে বেশি ভালোবাসিস না রাফি ভাইয়াকে বেশি লাইক করিস?”

মৌ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

—“এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন!!ওবভিয়েসলি আমি আমার ফ্যামিলিকে ভালোবাসি।”

—“তো তুই আংকেলের ওয়াদার জন্য ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবি না?”

অহনার কথা শুনে মৌ এর মস্তিষ্ক কেমন খালি খালি লাগা শুরু করে দিয়েছে।সে এখন নিজেকে প্রচন্ড একা বোধ করছে।কারন এতোক্ষন সে ভেবেছিলো অহনাও এ বিয়ের বিপক্ষে কিন্তু এখন সে যা শুনলো তাতে তার এ ভাবনাটা বদলে যেতে একটুও সময় নিলো না।সে আহত দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে বললো,

—“অহনা তুইও!!!”

অহনা এবার অপরাধী কণ্ঠে বললো,

—“দেখ মৌ আমাকে ভুল ভাবিস না।আমি যা বলেছি ভেবেচিন্তেই বলেছি।আমি এমনটা কখনোও বলতাম না যদি আব্বু আর আংকেল এ বিয়ের বিষয়ে ওয়াদা না করতো।আর তুই তো রাফি ভাইয়াকে ভালোওবাসিস না।শুধু পছন্দ করিস।আর কতোদিনই বা এভাবে পছন্দ করে যাবি?বিয়ে হলে তুই রাফি ভাইয়াকে একদমই ভুলে যাবি দেখে নিস।”

মৌ করুন সুরে বললো,

—” এ বিয়েটা না করার কারন শুধু যে রাফি ভাইয়াকে পছন্দ করি সেটা না।আয়ান ভাইয়া আর আমার একদমই জমে না।সারাটাদিনই মোটামুটি ঝগড়ার উপরে দিন যায়।”

—“হুম আমি জানি, তোর আর ভাইয়ার মিল নেই বললেই চলে।কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস,এমন ঝগড়াটাও কিন্তু ভালোবাসার সুত্রপাত ঘটায়।”

—“যদি আমাদের ক্ষেত্রে এমনটা না হয়?সারাজীবন যদি শুধু ঝগড়ার উপরই যায় তখন? ”

—“আমার ভাইয়া অনেক ভালো।এটা সবাই জানে।সে তোকে খুব শীঘ্রই ভালোবেসে ফেলবে। দেখে নিস।”

অহনার কথা শুনে মৌ মনে মনেই হেসে ফেললো।আর মনে মনে বললো,
—“তুই জানিস না তোর ভাই কেমন।উনাকে বেশ ভালো করেই চিনি উনি কেমন।”

অহনা বললো,

—“দেখ মৌ…..তুই তো জীবনে কখনো আংকেলকে নিজের পছন্দের কথা বলতে পারবি না সেটা জানা আছে।তো সবার কথামতো ভাইয়াকে বিয়ে করে নে।”

—“সবার কথায় আমার জীবন চলবে না অহনা।এখানে তারা নিজেদের খুশি দেখছে।কেউই আমার ইচ্ছাটা জানলো না।”

—“তুই আবারো ঘুরেফিরে আগের কথায় কেনো ফিরে গেলি?
আমি যতদূর আমার আব্বুকে জানি,আব্বু কখনো এ ওয়াদা ফিরিয়ে নিবে না।আমার আব্বুর মনের সুপ্ত ইচ্ছাও ছিলো তোকে আমাদের বাড়ীর বউ করার।এটা আয়ান ভাইয়া বাদে আমাদের বাসাী সবাই জানে আই থিংক।
আর আংকেলকে তুইই ভালোকরে চিনিস।তবে আমি যতটুকু জানি,আংকেলও কখনো ওয়াদা ফিরিয়ে নিবে না।সো…..শেষমেশ বিয়ে তোকে করতেই হবে।”

মৌ অহনার কথা শুনে করুন দৃষ্টিতে তাকালো।দোদুল্যমান অবস্থায় সে পরে গিয়েছে এখন।আয়ানকে সে সহ্যই করতে পারেনা,সেখানে স্বামী হিসেবে মানা দুষ্কর বটে।আবার আয়ান যে ভদ্র সেটাও না।এর আগে আয়ানের দুটো গার্লফ্রেন্ড ছিলো।কি ভরসা, সেই গার্লফ্রেন্ডদের মতো তাকেও ছেড়ে দিবে।মৌ বিয়েটা করতে চাইছে না,অথচ তার পরিবার তাকে এমন সিচুয়েশনে ফেলে দিয়েছে যে হয় বিয়ে করবে নাহয় মরবে।ম্যারিজ অর ডাই।মৌ একবার ভাবলো আয়ানের গার্লফ্রেন্ডের কথাটা সবার সামনে বলা উচিত। কিন্তু পরে ভাবলো, না।এমনটা করা উচিত না।শুধু শুধু অপরের দোষত্রুটি সবার সামনে তুলে ধরা উচিত না।কিন্তু এ ছাড়া যে তার কাছে আর উপায়ও নেই।এমন এক দোদুল্যমান অবস্থায় পরার পর মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনাকে বললো,

—“ঠিক আছে….আমি বিয়েতে রাজি।কিন্তু আয়ান ভাইয়া?”

মৌ এর কথা শুনে অহনা খুশিতে মৌ কে জড়িয়ে ধরে বললো,

—“ভাইয়াও রাজি।কারন হাজার হোক ভাইয়া আব্বুর কথার অমান্য করবে না। আর দাদিকে ভাইয়া সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।আর সে দাদিও চায় তুই আমাদের বাড়ীর বউ হয়ে আয়।তো দাদির ইচ্ছাকে ভাইয়া কোনোদিনও অমান্য করবে না।”বলে অহনা মৌ কে ছেড়ে দিলো।
মৌ এবার একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে একদম আস্তে আস্তে বললো,

—“কপালে যে আমার কি আছে আল্লাহ জানে।এক প্রকার জোর করেই তো বিয়েতে রাজি হলাম এখন সব আল্লাহর হাতে।”

অহনা ভ্রু কু্ঁচকে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,

—“কিছু বললি তুই?”

—“না না।কিছু বলতে যাবো কেনো।আমার কিছু বলার রাইট আছে নাকি।”

—“এসব কথা বাদ দে।আর শাড়ীটা একটু ঠিক করে নে।আমি তোর ফেসের পার্টটুকু ঠিক করে দিচ্ছি।”

অহনা মৌ কে পুরোপুরি রেডি করে ড্রইংরুম এ নিয়ে আসলো।মৌ কে দেখে উপস্থিত সবাই খুশি হলো।শুধু আয়ান বাদে।সে যে পরিমান রেগে ছিলো, মৌ কে দেখে তার এ রাগের পরিমানটা দ্বিগুন বৃদ্ধি পেলো।সে আশায় ছিলো হয়তো মৌ বিয়েতে রাজি হবে।কারন সে রাফিকে পছন্দ করে।কিন্তু মৌ কে আবারো দেখে তার সে “হয়তো” শব্দটা “যদি এমন হতো” তে পরিনত হলো।রাগে সে দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগলো।
মৌ কে দেখে আয়ানের দাদি হাসিমুখে বললেন,

—“ছেলে মেয়ে যে তাদের পরিবারকে ভালোবাসে এই হলো তার প্রমান।দুজনেই বিয়েতে রাজি আলহামদুলিল্লাহ। তো এবার আংটি বদল করে নিক এরা?”

আয়ান এবার হকচকিয়ে বললো,

—“আজকেই আংটি বদল!!”

জান্নাত মুচকি হেসে বললো,

—“জ্বি হ্যাঁ। আজকেই আংটি বদল হবে।আর নেক্সট শুক্রবারে বিয়ে।”

পরের শুক্রবারে বিয়ের কথা শুনে আয়ান আর মৌ দুজনেই একসাথে বলে উঠলো,

—“কিহ!!”বলে চোখ বড় বড় করে একবার জান্নাতের দিকে তাকালো তো একবার পরস্পরের দিকে তাকালো।
আয়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,

—“এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের কি দরকার!!”

আয়ান আর মৌ এর এমন কান্ড দেখে আর আয়ানের কথা শুনে ড্রইংরুমে ছোটোখাটো একটা হাসির রোল পরে গেলো।
আয়ানের দাদি ঢেউ তুলা সুরে বললো,

—“ওরে আমার নাতি রে……এতো প্রেম করার শখ জেগেছে তোর….বিয়ের পরে চুটিয়ে প্রেম করিস।বিয়ের আগে কোনো প্রেম নয়।ঠিক না?”

দাদির কথায় সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,

—“একদম ঠিক।”

আয়ান তো সবার হাসি দেখে এক লজ্জাকর অবস্থায় পরে গিয়েছিলো।সে কি মিন করে বললো আর সবাই কি ধরে নিলো।
মৌ কে নিয়ে গিয়ে আয়ানের পাশে বসানো হলো।দাদি দুজনের দিকে দুটো আংটি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—“নে… এবার দুজন দুজনকে আংটি পরিয়ে দে।”

মৌ এর মনের মধ্যে থেকে জোরে জোরে অনুভুতিগুলো চিৎকার করে “না” বলছে।তারা আর্তনাদ করে মৌ কে বলছে এ বিয়ে না করতে।নিজের মনের বিরুদ্ধে না যেতে।কিন্তু সে সব শুনেও না শোনার ভান করে চোখ বন্ধ করে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাদির কাছ থেকে আংটিটা নিলো।মনের মধ্যে এখনও চাপা আর্তনাদ বয়ে যাচ্ছে তার। মৌ তার অনুভুতিকে বললো,

—“এমন আর্তনাদ করিস না।বিয়েটা আমাকে করতেই হবে।সে নিজের ইচ্ছাতে হোক আর অনিচ্ছাতেই হোক।বাবা আমাকে তেমন ভালোবাসে না।আমি যদি উনার মতের বিরুদ্ধে যাই বা আমার জন্য যদি তিনি ওয়াদা থেকো দূরে সরে যান তাহলে উনার মনে আমার জন্য যে একটু ভালোবাসা আছে,সেটাও খোয়াতে হবে।আর আমি এটা চাই না।তাই চুপ করে থাক তোরা।আর যা যা হচ্ছে সব মেনে নে।”
মৌ মাথা নিচু করে মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ না বের করে আয়ানকে আংটি পরিয়ে দিলো।মৌ এর আংটি পরানো শেষে আয়ানের দাদি আয়ানের দিকে আংটি এগিয়ে দিলেন।
আয়ান চোখমুখ কুঁচকে দাদির কাছে আংটি নিয়ে মৌ এর দিকে রেগে কটমট করে তাকালো।মৌ আয়ানের এ দৃষ্টি দেখেও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।
আয়ান রেগে মৌ এর হাতটা এবার শক্ত করে ধরে আংটি পরিয়ে দিলো।আয়ানের স্পর্শে মৌ সামান্য ব্যাথা পেলেও কোনো রিয়েক্ট করলো না।
দুজনের আংটি পরানো শেষে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।কিন্তু আয়ান আর মৌ বেরস মুখে বসে রইলো।
আয়ান মৌ এর দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো,

—“মৌমাছি রে…..তোকে আমার কেটে কুঁচি কুঁচি করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।”

মৌ আয়ানের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“আমাকে খেলে তো মরেই যাবেন আয়ান ভাইয়া। মৌমাছি তো বিষাক্ত,সো সে লজিকে তো আমিও বিষাক্ত তাইনা?”

আয়ান মৌ এর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।সে শক্ত মুখে বললো,

—“মৌমাছির না পাখা আছে?তো সেই লজিকে তো তোরও পাখা আছে।তো উড়ে চলে যাইস না কেনো?”

মৌ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

—“আমার এখন উড়তে ইচ্ছা করছে না।কারন আমার মধুর চাকটা আমার পাশেই বসে আছে।তো মধুর চাক ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

আয়ান মৌ এর কথা শুনে এক প্রকার হা হয়ে বসে বসে দেখছে মৌ কে।আর ভাবছে,এ মেয়ে আমার জীবনটা নির্ঘাত ছিন্নভিন্ন করে দিবে।এখনই সে এই সেই লজিকে কথা বলে।বিয়ের পর কি হবে তাহলে!!!!!???????

#চলবে
(অনেকের হয়তো প্রশ্ন জেগেছে মনে, ছেলে মেয়ের অমতে কি করে বিয়ে হয়।আমি বলবো,এমন অনেক উদাহরন আছে।আমার পরিচিত একজনেরও এমন হয়েছে।প্রথমে ঘোর অমত থাকলেও পরে মেনে নিতে বাধ্য হয়)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে