তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট-১৩ | ভালোবাসার গল্প

0
2160

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_১৩
Writer:#সারা_মেহেক

মৌ রুমে বসে কাঁদছে।অঝোর ধারায় তার চোখের পানি বয়ে যাচ্ছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না।যখন রুমের সামনে সে ছিলো, সে শুনেছিলো,তানভীর আয়ানকে বলছে,

—” আয়ান,তুই এটা জানার পরও মৌ কে কি করে বিয়ে করলি?তুই তো জানিস আমি মৌ কে পছন্দ করি।আমি তো তোকে বাইক কেনার টাকাটাও দিতে চাইছিলাম। কিছুদিন অপেক্ষাই করতি।কিন্তু তাই বলে মৌ কে যে বিয়ে করে ফেলবি এটা ভাবেনি আমি।”

—“দেখো তানভীর ভাই,আমাদের বিয়েটা পুরোপুরি পরিবারের মতে হয়েছে।এখানে আমার বা মৌ এর মত ছিলো না।তো সেক্ষেত্রে বিয়েতে মানা করারও কোনো সুযোগ ছিলো না।”

—“সেদিন রেসে আমি জিতলাম,তারপরেও তোকে বাইকটা দিতে চাইলাম।আর তুই আমাকে মৌ দিতে পারলি না?দিতে পারলি না তো পারলিই না আবার বিয়েও করে ফেললি!!এতোদিন আমি আশা নিয়ে ছিলাম।কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম তাতে সব আশা শেষ হয়ে গেলো।”

—“তুমি ওকে ভুল যাও তানভীর ভাই।ওসব একটা বেটের মতো ছিলো।তুমি রেসে জিতেছিলে ভালো কথা।বাট মৌ কে এখন আমি দিতে পারবো না।ও আমার ওয়াইফ।”

—“আমি যে মৌ কে খুব পছন্দ করি…..আর তোকে আমি টাকাও দিবো বাইক কেনার।তুই প্লিজ মৌ কে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে দিয়ে দে।আর বিয়ে তো তোদের মতের বিরুদ্ধে হয়েছে।সো ডিভোর্স এর ব্যাপারটা সবাই ইজিলি মেনে নিবে।”

—“তুমি……”আর কিছু বলার আগেই মৌ রুমে এসে আয়ানের গালে থাপ্পড়টা মারে।এক্ষেত্রে তানভীরের ভুলটা বেশি ছিলো।কিন্তু মৌ এর রাগ হয়েছিলো আয়ানের উপর।বলে না,যাকে বেশি ভালোবাসা যায়,তার উপরই বেশি রাগ করা যায়।মৌ এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আয়ানের একটু ভুল কাজেই সে রেগে গিয়েছে।সে মনে মনে নিজেকে শক্ত করে বলেছে যে সে আয়ানের সাথে কথা বলবে না।একটুও না।

ছাদে বসে মুখটা ভার করে আছে আয়ান।পাশে তার অহনা দাঁড়ীয়ে। দুজনেই চুপচাপ।আয়ান শুধু ভাবছে কি করে মৌ এর রাগ গলানো যায়।এমতাবস্থায় আবার ছাদে এসে হাজির হলো তানভীর।তাকে দেখেই অহনা রাগে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আয়ান কোনো রিয়েক্ট না করে চুপচাপ আগের মতোই দাঁড়ীয়ে রইলো।
তানভীর অহনা আর আয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে অপরাধীর সুরে বললো,

—“আমার ভুল হয়েছে হয়তো।”

অহনা রাগে মুখ ফিরে বললো,

—“হয়তো মানে!!অবশ্যই আপনার ভুল হয়েছে তানভীর ভাই।আর শুধু যে আপনার ভুল হয়েছে তা নয়,ভাইয়ারও ভুল হয়েছে।”
আয়ান অহনার কথা শুনে এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়।তানভীর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
অহনা গলা ঝেড়ে বললো,

—“ভুলটা দুজনেরই আছে।তবে আমি মনে করি,এক্ষেত্রে ভুলটা তানভীর ভাই,আপনার বেশি।আমার ভাই বলে আমি ভাইয়াকে বেশি দোষ দিচ্ছি না, এমনটা নয়।দেখুন তানভীর ভাই,আপনি সোজাসুজি মৌ কে গিয়ে প্রপোজ করতে পারতেন।শুধু শুধু ভাইয়াকে বাইকের লোভ দেখিয়ে এমনটা করা উচিত হয়নি।এটা একটা লেনদেনের মতো হয়ে গেলো না?আপনি ভাইয়াকে বাইক দিবেন।তার বদলে ভাইয়া মৌ কে আপনার সাথে রিলেশনে রাজি করাবে!!বাইকটা না হয় একটা পণ্য,যা লেনদেন করা যায়।বাট মৌ!!সে তো মানুষ।ওকে বাইকরে সাথে লেনদেন করছেন?এটা মোটেও উচিত হয়নি।”

অহনার বলা প্রতিটা কথা একদম ঠিক মনে হলো আয়ান আর তানভীরের।ভুলটা যে তাদের দ্বারা হয়েছে তা তারা আগেই বুঝেছে।তাদের এটা করা একদমই উচিত হয়নি,একটা বাইকের সাথে একটা মানুষের লেনদেন করা এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না।

অহনা আবারো বললো,

—“ভাইয়া…আমি গিয়ে তোদের রুমের দরজায় নক করবো।আমার কণ্ঠস্বর শুনে মৌ শিওর দরজা খুলে দিবে।তখনই তুই আর তানভীর ভাই,রুমে গিয়ে মৌ কে সবটা ক্লিয়ার করে বলবি।জানি, ও প্রথমে শুনতে চাইবে না।কিন্তু জোর করে হলেও ওকে শুনতে হবে।”

অহনার কথায় রাজি হয়ে গেলো আয়ান আর তানভীর।
অহনা এবার আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রুমের দিকে গেলো।একটা শুকনো ঢোক গিলে সে রুমের দরজায় নক করলো।আর সাথে সাথে বললো,

—“মৌ…আমি।দরজাটা খোল।কিছু কথা আছে।”

ভিতর থেকে মৌ চোখেরজল মুছে দরজা খুললো।তার দরজা খোলার সাথে সাথে অহনা হাসিমুখে রুমে ঢুকে গেলো।তার পিছু পিছু আয়ান আর তানভীরও রুমে ঢুকলো।অহনাকে দেখে মৌ খুশি হলেও, আয়ান আর তানভীরকে দেখে তার রাগ লাগলো।সে রাগী গলায় অহনাকে বললো,

—“তোর পিছে যে এই দুইজন আছে,জানলে জীবনেও দরজা খুলতাম না।”

অহনা নিচু স্বরে বললো,

—“মৌ,পুরো কথাগুলো একবার শুনে নে।পুরো ব্যাপারটা না বুঝে রিয়েক্ট করা উচিত না।”

মৌ রেগে বললো,

—“কি শুনবো হুম?শুনবো টা কি?”বলে সে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবারো বললো,

—“থাপ্পড়টা আয়ানকে না মেরে আপনাকে মারা উচিত ছিলো।কতো বড় সাহস আপনার!!বিবাহিত একটা মেয়েকে তার হাজবেন্ডের কাছে চাইছেন টাকার লোভ দেখিয়ে!!মানুষ হিসেবে যে আপনি কেমন তা আপনার কথাগুলো দ্বারাই বুঝা হয়ে গিয়েছে।আমার এখন আফসোস হচ্ছে তখন চড়টা আপনাকে মারলাম না কেনো।অবশ্য ভালোবাসার মানুষের একটু ভুলও রাগিয়ে দিতে সক্ষম।এজন্য আমি হয়তো আয়ানকে চড়টা মেরেছিলাম।”
মৌ এর কথাগুলো শুনে তানভীর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।আর আয়ান,তার তো মনে এখন খুশি ধরছে না।সে এই ভেবে খুশি হলো যে মৌ তখন রাগের মাথায় উল্টোপাল্টা কিছু বলেছিলো।আর এখন সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে।আয়ানের চোখমুখ খুশিতে চকচক করতে লাগলো।তা দেখে মৌ রেগে বললো,

—“আপনি এতো খুশি হচ্ছেন কোন দুঃখে?আপনাকে কি আমি একবারো বলেছি যে আমি আপনাকে মাফ করেছি?”

মৌ এর কথায় আয়ানের মুখটা সাথে সাথে চুপসে গেলো।
মৌ এর এখন আর কান্না পাচ্ছে না।বরং রাগে তা শরীর রি রি করতে লাগলো।তার মন বলছে,তানভীরকে ইচ্ছামতো চড়াতে।শান্তি না পেলে আয়ানকেও কয়েকটা ইচ্ছামতো চড় দিবে সে।
তানভীরের মাথা নিচু করা দেখে মৌ রেগে বললো,

—“এখন লজ্জায় মাথা নিচু করছেন?? যখন আয়ানের কাছে আমাকে টাকার বিনিময়ে চেয়েছিলেন তখন লজ্জা করেনি??”

তানভীর মাথা নিচু অবস্থায়ই আস্তে করে বললো,

—“আসলে তখন রাগের বশে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলাম।তখন আয়ানের প্রতি আমার খুব রাগ উঠেছিলো।”

—” রাগের বশে মুখের বুলি ঠিক রাখতে জানেন না?কাকে কি বলতে হয় এটুকুও জানেন না??আর কি কারনেই বা আমাকে চাইছেন?আর কিসের বাইক, কিসের কি?”

আয়ান তখন শুকনো একটা কাশি দিয়ে বললো,

—“এর জন্য তোকে পুরো কথা শুনতে হবে।”

মৌ সরু চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“তো বলুন।আর হ্যাঁ প্রতিটা কাহিনি ঠিকঠাক বলবেন একদম।”

—“ওকে।”বলে আয়ান তার আর তানভীরের মাঝে হওয়া রেস,ডিল সবকিছুর কথা বললো।
পুরো কথা শুনে মৌ একদম থ হয়ে গেলো।সে চিন্তাও করেনি এতোটা গভীরে কথা আছে।তার সবচেয়ে বেশি রাগ লাগছে দুজনের লোভ দেখে।একজন তার সাথে রিলেশনের লোভ দেখিয়েছে।আর অন্যজন বাইকের প্রতি লোভ দেখিয়েছে।
মৌ রাগে এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—“আপনাদের না কিছুই বলা উচিত না।আপনাদেরকে নিয়ে সোজা নর্দমার পানিতে চুবানো উচিত।তখন একদম পাই পাই করে সব লোভ পালাতো।মানে…..যাস্ট আনবিলিভএবল।আপনাদের দুজনের মাথায় কি সামান্য চিন্তা ভাবনাও আসেনি?আমাকে একটা বাইকের সাথে মিলাচ্ছেন?আমাকে রাজি করাতে পারলে আয়ান বাইক পাবে!!বাহ বাহ।খুব ভালো লেনদেন করতে পারেন দেখছি।আমি কি তাহলে দেনাপাওনার বস্তু?কাউকে বলা হলো আমাকে এ মেয়েটা এনে দে আমি তোকে টাকা দেবো।এটা নিকৃষ্ট মানের একটা লেনদেন।আমাকে রিলেশনে রাজি করাতে পারলে আমার বদলে একটা বাইক পাবে। গুড গুড।ভেরি মাচ গুড।”

তানভীর এবার মাথা উঁচু করে বললো,

—“তুমি এমন রিয়েক্ট কেনো করছো?আমি তো তোমার সাথে রাত কাটাতে চাইনি।শুধু রিলেশন করতে চেয়েছি।আর আয়ানের বাইকটা পছন্দ ছিলো বলে এর বদলে আমি ওকে বাইকটা দিতে চেয়েছি।দ্যাটস ইট।”

মৌ তানভীরের কথা শুনে নিজের রাগটা আর কন্ট্রোল করতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে তানভীরের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—“এটা পাওয়ার জন্যই এসব কথা বললেন তাই তো?আমারও এই চড়টা আপনাকে দিতে খুব ইচ্ছা করছিলো।
আচ্ছা তখন নাহয় রাত কাটানোর কথা বলেননি,কিন্তু আজকে যে আপনি আমাকে চাইলেন আয়ানের কাছে,বাইকের টাকা দেওয়ার বদলে,সেটা কি রাত কাটানোর সমতুল্য না?কি করে বিবাহিত একটা মেয়েকে আপনি এভাবে চাইতে পারলেন?বিবেকে বাঁধেনি একবারো?”

—“আমি যে তোমাকে পছন্দ করি মৌ।”

—“কিসের পছন্দ হুম?এমন পছন্দ হলে কোনো মেয়েই চাইবে না তাকে কেউ পছন্দ করুক।পছন্দের জন্য আমাকে পেতে চাইছেন,তাও আবার আমার স্বামীকে টাকা দিয়ে!আর আমার মধ্যে এতো কিসের কি আছে যে বিয়ের পরও আমাকে আপনার চাই?আমি দেখতে বিশ্বসুন্দরী?আমার কি সেই নায়িকাদের মতো চালচলন,চেহারা,হাবভাব হুম?বলুন?আপনি তো পারতেন আমার আর আয়ানের বিয়েটা মেনে নিতে।কেনো?এমন কি কোনো ছেলে নেই যে তার পছন্দের মানুষকে অন্যের হতে দেখেছে?নেই কি এমন?আছে আছে।এমন অনেক আছে।তারা কি তাদের পছন্দের মানুষ ছাড়া বেঁচে নেই?আপনি কি আমাকে ভুলে যেতে পারতেন না?পারতেন।চেষ্টা করলেই পারতেন। কারন আমি তো আপনার ভালোবাসা নই যে আমাকে সহজে ভুলা যাবে না।বাট আপনি এতো সহজ পথ না নিয়ে শুধু শুধু পুরোনো কথা তুলে আনলেন।আমাকে টাকার বদলে চাইলেন!এসব কাজের দ্বারা আপনি শুধু আপনার নিকৃষ্ট মনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।”বলে মৌ জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো মাথা নিচু করে।এই সুযোগে অহনা তানভীরকে নিয়ে রুমের বাইরে বের হয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো।
মৌ এর এমন রাগ দেখে আয়ান শুকনো একটা ঢোক গিললো।সে বুঝতে পারছে না এই বন্ধ রুমে তার কি পরিনতি হবে।মৌ কি বলবে আর কি-ই বা রিয়েক্ট করবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে