তোকে চাই❤(সিজন-২)পর্ব:২৩+২৪+২৫+২৬

0
4333

তোকে চাই❤(সিজন-২)পর্ব:২৩+২৪+২৫+২৬
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 23
.
.
?
.
চিত্রার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম।হঠাৎ গিটারের টুনে ফিরে তাকালাম।স্টেজের দিকে উঁকি দিয়ে দেখি শুভ্র ভাইয়ার হাতে গিটার।।ফোনটা কেটে স্টেজের একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম… সোনালী সুতোর কাজ করা কালো পাঞ্জাবী পড়েছেন উনি…হাতাগুলো কনুই পর্যন্ত গুটানো।।সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে।।হাতে সবসময়ের মতো ব্র্যান্ডেড ঘড়ি আর ব্রেসলেট।।ফর্সা শরীরে কি মারাত্মক লাগছে এই কালো রং।।ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে সেই দুষ্টামীভরা হাসি।।ইশশশ!!উনি ফ্রেন্ডদের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়েই গেয়ে উঠলেন-
.
বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…(আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)
চলতে গিয়ে মনে হয় দূরত্ব কিছু নয়
তোমারই কাছেই ফিরে আসি (মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে)
.
উনি এতোটুকু গাইতেই চারপাশ থেকে ছেলেরা চেঁচিয়ে উঠলো।।সবার মুখে এক কথা-” দিস ইজ ফর ভাবি!!” “দিস ইজ ফর ভাবি”” সাহেল ভাইয়া তো রীতিমতো টেবিলের উপর উঠে শিষ বাজাচ্ছেন।।
ওদের অবস্থায় আমি লজ্জায় লাল।।শুভ্র ভাইয়াও হেসে চলেছেন ওদের কথায়।।হাসিমুখে আবারও গিটার বাজিয়ে গেয়ে উঠলেন উনি…
.
তুমি,,তুমি,,তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বলো না কেউ কি প্রেম হিনা কখনো বাচে??
তুমি,,তুমি,,তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা কখনো বাচে??
বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…(উনি লাজুক হেসে আমার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ঘুরিয়ে নিলেন।)
.
মেঘের খামে আজ তোমার নামে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিও,,তুমি মিলিয়ে নিও খুব যতনে তা লিখেছিলাম।।
মেঘের খামে আজ তোমার নামে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিও,,তুমি মিলিয়ে নিও খুব যতনে তা লিখেছিলাম।।
.
এটুকু গাওয়ার সাথে সাথেই একটা পিচ্চি মেয়ে দৌড়ে এসে একটা টিস্যু পেপার আর একটা গোলাপ ধরিয়ে দিলো আমার হাতে।।টিস্যু পেপারে লাল কালিতে লেখা-
.
“❤এই?এতো লজ্জা পেয়ো না প্লিজ।।মরে যাবো,, একদম খুন হয়ে যাবো।।তোমার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখতে একদম রসগোল্লার মতো লাগে।।ইশশ..ভুল করে খেয়ে ফেলবো তো।।এই ভুলটা কিন্তু আমি করবোই…আজ নয় কাল।।সো সাবধান!!❤”
.
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই… মুচকি হেসে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়েই গেয়ে উঠলেন উনি-
.
ওওওও চাই পেতে আরো মন পেয়েও এতো কাছে
বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতো কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে
ভুলক্রুটি আবেগী খুনসুটি সারাক্ষণ তোমায় ছুঁয়ে রাখে
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতো কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে
ভুলক্রুটি আবেগী খুনসুটি সারাক্ষণ তোমায় ছুঁয়ে রাখে….
.
উনি গান গেয়ে নেমে গেলেন স্টেজ থেকে।।আমি লজ্জায় কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছি এক কোনে।।ইশশ কি লজ্জা।।আমার মধ্যেও যে লজ্জা নামক জিনিসটা এতো ভরপুর ভাবে আছে জানায় ছিলো না।।কি অসভ্য ছেলে….একটা গান দিয়েই লজ্জার সাগরে ঢুবিয়ে দিলো আমায়??এখন উনার সামনে কি করে যাবো?ছেলেরা সবাই যে ব্যাপারটা জানে তা ওদের ভাবি ডাকেই স্পষ্ট।।কি লজ্জা…
.
#চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 24
.
.
?
.
টানা তিনটা ক্লাস করে টায়ার্ড হয়ে চিত্রাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আর ক্লাস করা যাবে না…কিছুতেই না।।চিত্রাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে-চোখে পানি দিলাম।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে খুবই অদ্ভুত একটা বিষয় দেখলাম। চিত্রা লেডিস ওয়াশরুমের পাশের কোণাটায় দাঁড়িয়ে আছে।সাথে একটা ছেলেও ছিলো যে আমায় দেখেই নিজেকে আড়াল করে নিলো।।অদ্ভুত!! চিত্রার কি কোনো ছেলের সাথে রিলেশন চলে??চললেও আমাকে বলেনি কেন??এসব ভাবছি আর হাঁটছি।চিত্রা ক্যান্টিনে গেছে কোল্ডড্রিংক্স আনতে।।হঠাৎ পাশের মেয়েদের ফিসফিস কথায় দাঁড়িয়ে পড়লাম।।কান খাড়া করে যা শুনলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।।
.
এই জানিস?আইআর ডিপার্টমেন্টের চিত্রার সাথে আমাদের ক্রাশ বয়ের রিলেশন চলে।
.
কিহ?আমাদের ক্রাশ বয়..মানে শুভ্র ভাই??কেমনে কি?আর তুই কিভাবে জানলি?
.
আরে..আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।ওখানে ওয়াশরুমের কোনায় দাঁড়িয়ে উনারা রোমান্স করছিলেন।।শুভ্র ভাইয়া তো ফ্লার্টিং করার মতো ছেলে না।নিশ্চয় সিরিয়াস।
.
তুই সিউর??(অবাক হয়ে)
.
অবশ্যই!! এই দেখ লুকিয়ে পিকও তুলেছি।
.
কথাটা শুনেই দ্রুত ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।। গলা শুকিয়ে আসছিলো আমার।।মাথাটা ভো ভো করছে।তবু যথেষ্ট শক্তি নিয়েই বলে উঠলাম-
.
এক্সকিউজ মি আপু?কিছু না মনে করলে পিকটা কি আমি দেখতে পারি?প্লিজ?
.
হ্যা অবশ্যই…এইতো দেখো…
.
ফোনটা হাতে নিয়েই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
যা দেখছি তা কি সত্যি?দেয়ালের সাথে ঠেকে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা।।শুভ্র একহাত দেয়ালে আরেকহাত চিত্রার কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।।এর বেশি কিছু দেখার বা বোঝার প্রয়োজন কি আছে?নেই?কিচ্ছু দেখার প্রয়োজন নেই।।কাঁপা হাতে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়েই হাঁটা দিলাম।।তখনই চিত্রা এলো….সরাসরিই জিগ্যেস করলাম ওকে….
.
ওই আপুর কাছে তোর আর শুভ্র ভাইয়ার পিক দেখলাম।।সো মাচ ক্লোজ পিক।
.
কি বলিস?(অবাক হয়ে)
.
হুম..ওয়াসরুমের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছিস।
.
ওহহো..সেটা?দেখ মেয়েরা কি ফাজিল!!এদের যন্ত্রনায় দেখি চিপায় চুপায়ও শান্তি নাই।আরে শোন….
.
আমি আর দাঁড়ালাম না।ওদের রোমান্সের বর্ননা শুনার শক্তি এটলিস্ট আমার নেই।।দুদিন আগে হলেও সম্ভব ছিলো কিন্তু এই দুদিনে অনেক কিছুই বদলে গেছে…আমি উনাকে আমার ভালোবাসার অনুভূতি গুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলেছিলাম।।যা এখন ভেঙে টুকরো।চিত্রাকেই যদি ভালোবাসেন তাহলে আমার সাথে এতোকিছু কেন??রিভেঞ্জ?? প্রথম দিনের চড়টার রিভেঞ্জ নিলেন হয়তো।।কি ভয়ানক প্রতিশোধ!! সবাই এতোটা নিষ্ঠুর!! মনটা কুঁকড়ে যাচ্ছে ঘৃণায়।চরম ঘৃণা…যে ঘৃণায় একটা মানুষ পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যেতে পারে তেমন ঘৃণা।এতোটা আমার সাথে না করলেও পারতেন উনি।।শুধু শুধু আমার ঘৃণার খাতায় নাম উঠালেন উনি।।ঘৃণা করতে না জানা মেয়েটাকে ঘৃণা করতে শেখালেন।।তার চরম মূল্য দিতে হবে উনাকে…ভয়ানক মূল্য!!! এসব ভাবতে ভাবতেই সামনে শুভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।।হাসিমুখে আমায় কয়েকবার ডাকলো…. কিন্তু উনার ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো রুচি আপাতত আমার নেই…বিন্দু মাত্র নেই।।হঠাৎ করেই আমার হাত চেপে ধরলেন উনি।। এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না আমি।।ঘুরে দাঁড়িয়েই উনার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।।উনি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে…..উনার বিস্ময়কে আরো বাড়িয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম-
.
সমস্যা কি আপনার?কতোবার বলবো হাত ধরবেন না আমার….ভার্সিটির সিনিয়র বলে যা ইচ্ছে তাই করবেন নাকি?আপনি ভার্সিটির সব মেয়েদের চোখে হিরো হতে পারেন বাট আমার চোখে না।।so stay away from me….এসব লুচুগিরি নিজের প্রেমিকাকে দেখান আমাকে নয়।।
.
কথাটা বলেই হাতটা ঝারি দিয়ে ছাঁড়িয়ে আবারও হাঁটা দিলাম।।বুকটা ভারি লাগছে খুব।। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।।কিন্তু কাঁদবো না আমি,, কেনো কাঁদবো??কার জন্য কাঁদবো??এটা আমার ভুল ছিলো যে আমি উনার আচরণগুলোকে আমার প্রতি পজিটিভ ভেবেছিলাম….উনি তো নিজের মুখে বলে নি৷। তাহলে ওই চিরকুট কেন??নিজের বোকামীর জন্য কারো খেলার অংশ হয়ে গেলাম আমি।।আর মারাত্মকভাবে হেরেও গেলাম।।বাসায় এসেই রুমের দরজা দিয়েছি।।কিচ্ছু আস্ত রাখবো না আমি…সব ভেঙে গুড়িয়ে দিবো আজ।।আমার মনটা যেভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ঠিক তেমনেই চুরমার হবে সবকিছু।।টেবিলের বই,,আলমারির কাপড়,,বিছানার চাদড়,কম্বল,কোশন সব কিছু ছুড়াছুঁড়ি করেও মন ভরলো না আমার।রাগ কমছে না কিছুতেই।।খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার…সবাইকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।।ফুলের বাজ…একুরিয়াম সব ভেঙে একাকার।কিন্তু রাগ কমছে না।।এই ভয়ানক রাগ জ্বালিয়ে শেষ করছে আমায়।।দরজায় ধাক্কার শব্দ…কিন্তু সেদিকে আমার নজর কই??আমার নজর তো টেবিলের কোনে পড়ে থাকা ওই ব্লেটটার দিকে।।ব্লেটটা হাতে নিয়েই আঁচড় কাটতে লাগলাম হাতে।।নাহ্… মৃত্যুর আশায় নয়…রাগ কমানোর আশায়।স্বার্থপর চোখের জল তো আসছে না তাই রক্তের সাথেই ধুয়ে যাক সব রাগ।।একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলো ভাইয়া।।অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।এসবও আমার দ্বারা সম্ভব??ভাইয়া যেনো বরফের মতো দাঁড়িয়ে আছে।।আপু এসে হাত বেঁধে দিলো আমার।।বাবা-মা কিছু বললো না।।বলার মতো খুঁজেই পেলো না কিছু।।মা-বাবা রুম থেকে বের হতে নিতেই বলে উঠলাম আমি-
.
মা?এই রুমের ভেতরের কথাগুলো যেনো তোমার ভাইয়ের বাড়ি পর্যন্ত না পৌঁছায়।যদি কারো থ্রুো ওরা ব্যাপারটা জানতে পারে তাহলে খুব ভালো করে জানো আমি কি কি করতে পারি।
.
আমার এমন শক্ত কথায় আম্মু বিস্মিত।।কি অদ্ভূত!! আজ আমার সব কথাতেই সবাই বিস্মিত হচ্ছে।।আমার কথায় কি বিস্ময়ের কোনো মেডিসিন মেশানো আছে??
.
?
.
দুদিন যাবৎ ভার্সিটি আসছিস না।।কেন আসছিস না?শুভ্র ভাইয়া খুঁজ করছিলো… তোর কি কিছু হয়েছে??
.
হ্যা হয়েছে…দুইটা মেয়ে হয়েছে।।আরেকটা ছেলে হবে…প্রক্রিয়া চলছে…আর কোনো প্রশ্ন??
.
কি বলছিস এসব??
.
সিম্পল বাংলায় তো বললাম।।সাধু ভাষায় তো কিছু বলি নি।
.
তোর কি মন খারাপ রোদ?
.
নাহ…মন খারাপ হবে কেন??কখনো না…রোদের মন খারাপ হয় না কখনো গট ইট??(চিৎকার করে)
.
ওকে ওকে…চেঁচাচ্ছিস কেন?
.
চেচিয়ে আমি বুঝাতে চাচ্ছি আমি বিরক্ত।।এইযে তুই ফোন দিয়েছিস তাতে আমি বিরক্ত।।এই যে একটু আগে শুভ্র ভাইয়ের কথা বললি তাতেও আমি চরম রকম বিরক্ত।।
.
তোর কি শুভ্র ভাইয়ার সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে?ঝগড়া টগড়া কিছু?
.
ওই?শুভ্র কি আমার জামাই??নাকি আমার দশ বাচ্চার বাপ?? ওই ব্যাটার সাথে আমার কিসের ঝামেলা হবে??সব আজগুবি আলাপ আমার সাথে করতে আসবি না।।ফোন রাখ।আর শুন.…আগামী ২ দিন তুই আমার বাসার ত্রিশ সীমানার মধ্যেও আসবি না…কজ আমি আপাতত তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে অফ করে দিলাম।তখনই দরজায় কড়া নড়লো।।বিরক্তির সাথে বলে উঠলাম-
.
কে??
.
সাথে সাথেই ওপাশ থেকে আপু বলে উঠলো…
.
শুভ্র এসেছে।।তোর সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে নাকি।।দরজা খোল।
.
আপু?আমি কোনো প্রেসিডেন্ট নই যে আমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকবে।।আমি সাধারণ একটি মেয়ে।।সাধারণ ভাবেই বলছি…তোমার বর্তমান মামাতো ভাই আর হবু দেবরকে বলো উনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনার ইচ্ছা বা আকাঙ্খা আমার নেই।।সো জাস্ট লিভ।।
.
.
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মুড়ি চিবোচ্ছি…আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।ঠিক তখনই আবারও দরজায় টোকা পড়লো।ওপাশ থেকে আপু তৈরি হতে বললো।। শপিং এ যাবে।।আমি মানা করেও লাভ হলো না।।তাই বাধ্য হয়েই কালো রঙের একটা জামা নিলাম পড়বো বলে….কি মনে করে জামা রেখে নীল শাড়ি জড়ালাম গায়ে।।আজ সাজবো…মন ভরে সাজবো।।এভাবে নিজেকে ঘরে আটকে রাখার মতে ট্রেজেডি তো হয় নি আমার।।নীল শাড়ি,,নীল চুরি,,কপালে কালো টিপ….চুলগুলো হাত খোঁপা করে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।।সোফায় অভ্র আর শুভ্র ভাইয়া বসে আছেন।আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই উনাদের সাথে বসলাম।।শুভ্র ভাইয়া তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে আমায় গিলে খাচ্ছেন।।এভাবে তাকিয়ে থাকার হলো, আজব!! অভ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় দশ মিনিট পর উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম….উনি এখনও আগের মতো আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।।যেনো পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কিছু নেই।। গাড়িতে উঠতে যাওয়ার সময় শুভ্র ঘোষনা করলো আজ গাড়ি নয় রিক্সায় যাবেন তারা।।আপু আর অভ্র ভাইয়া খুব খুশি…বিকেলের নরম আলোই প্রেয়সীর সাথে রিক্সায় চলা মানেই রোমাঞ্চকর বিষয়।কিন্তু আমার জন্য তা বিরক্তির ।। কারণ আমার পাশের মানুষটি আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।। রিকশায় পাশাপাশি বসে আছি….মাঝে আরেকজন বসতে পারবে অনায়াসে !!প্রায় দশমিনিট পর উনি বলে উঠলেন-
.
এদিকে চেপে বসো পড়ে যাবে তো রোদ….
.
কেনো?যেনো শরীর স্পর্শ করতে সুবিধা হয় তাই??
.
রোদদ!!
.
কি? রোদ কি?সত্যি বলছি বলে গায়ে লাগছে বুঝি?
.
রোদ প্লিজ স্টপ।।তুমি ভালো করে জানো আমি ওই টাইপের ছেলে নই।
.
হ্যা আমি জানি আপনি কোন টাইপের ছেলে।।সাচ আ রিভেঞ্জার,,যে রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য কাউকে ভেঙে টুকরো করতেও ভাবে না।।এই যে আমি আপনার পাশে বসে আছি।।জানেন কেমন ফিলিংস হচ্ছে আমার??ঘৃণা লাগছে…প্রচন্ড পরিমান ঘৃনা।।আই জাস্ট হেইট ইউ।।আপনার সাথে কোনোভাবে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে ভাবতেই গা গুলাচ্ছে আমার।।
.
আমার কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো উনার।।এক ঝটকায় আমার কোমর চেপে ধরলেন উনি।।আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি ক্রমাগত কিন্তু পারছি টা কই??উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন-
.
এত্তো ঘৃনা?? এতো ঘৃনা কি আমার প্রাপ্য?কেনো করছো এমন?কি করেছি আমি?কোন দোষে এমনভাবে পুড়াচ্ছো আমায়?উফফফ…আর সহ্য হচ্ছে না আমার।।দুদিন পরপর তোমার এসব পাগলামো তে আমি অতিষ্ঠ।।তুমি বাচ্চা নও বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে….তবু তুমি অবুঝ…আমার যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে সেটা তুমি বুঝো না।।আমার যে মরে যেতে ইচ্ছে করে সেটা তুমি বুঝো না।আর তুমি যা বুঝো সেটা দুনিয়ার আর কেউ বুঝে না।। একটু বুঝতে চেষ্টা করো না কেন তুমি??দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে চাও?তাহলে একবারেই মেরে ফেলো না…এতো বনিতা করছো কেন??
.
#চলবে…
.
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 25
.
.
?
.
ছাড়ুন আমায়!!আমাকে টাচ করার সাহস কি করে হয় আপনার??আর এসব ফালতু কথা আমাকে না বলে আপনার লাইফ লাইনকে বলুন কাজে লাগবে।।আপনার এই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়া নিয়ে আমার কোনই মাথা ব্যাথা নেই।।ট্রাস্ট মি!! আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে।।প্লিজ ছাড়ুন আমায়…আপনার প্রতিটি স্পর্শ কে ঘৃণা করি আমি।।।আই জাস্ট হেইট ইউ(চেঁচিয়ে)
.
ঘৃণা!! ঘৃণা!!ঘৃণা!! কিসের এতো ঘৃণা তোমার??কি করেছি আমি??টেল মি ডেমেড।(আরো জোড়ে চেপে ধরে)
.
ছাড়ুন আমায়…(চিৎকার করে) কিসের অধিকারে জবাবদিহিতা চান আপনি??আমি আপনার বউ??নাকি জিএফ??কোনটায় নই।।সো জাস্ট স্টপ দিস কাইন্ড অফ ড্রামা।এই মামা?(রিকশাচালক কে উদ্দেশ্য করে) রিকশা থামান!!!
.
কেন??রিক্সা কেন থামাবে??
.
কারণ আমি নামবো।।আপনার মতো থার্ডক্লাস কোনো পার্সোনের সাথে একসাথে বসতে আমার গা গুলায়।।এই মামা??থামাতে বলছি না??থামাবেন নাকি চেঁচিয়ে মানুষ জমিয়ে মার খাওয়াবো??সবাইকে বলবো আপনি এই লোকটার সাথে মিলে আমায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।।কি চেঁচাবো???(প্রচন্ড রাগে)
.
প্রচন্ড রাগে থরথর করে কাঁপছে আমার শরীর।।সব সহ্য হয় আমার কিন্তু কোনো ছলনাময়ী কখনো নয়।।রিকশা থামানোর সাথে সাথে নেমে হাঁটা দিলাম।।শুভ্র ভাইয়া নিচু হয়ে মাথার চুল মুঠো করে বসে আছেন চুপচাপ।।আমি হাঁটছি আর ভাবছি…এই লোকটা পিছু ছাঁড়ছে না কেনো আমার?মন ভাঙার ছিলো ভেঙেছে আর কি চায় সে??এই রাগ….এই জেদ আমি কাকে দেখাবো?সবার ধারনা হবে আমি ওভার রিয়েক্ট করছি।।আরে…এই কথা বলার আগে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের কোমড় জড়িয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখার সাহসটা জোগাড় করো।।যেকোনো পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েই তা পারবে না…. যা পারবে তা হলো বড় বড় কথা বলা।।সাচ আ ইডিয়টস।।আমার ভাবনার প্রহরকে ছিন্ন করে কেউ হুট করেই কোলে তোলে নিলো আমায়।।হঠাৎ ঘটা ব্যাপারটায় আমি চমকে গেলেও শুভ্রর মুখটা দেখেই চমক টা রাগে পরিণত হলো মুহূর্তেই।।ছুটাছুটি করেও লাভ হলো না।উনার ওজন যেখানে ৮০ কেজি আমার মাত্র ৪৫।। উনার সাথে পেরে উঠার কথাও না।।কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠলাম আমি।।উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিক্সায় বসে পড়লেন।।এই মুহূর্তে শরীর নাড়ানোর ক্ষমতাও আমার নেই।।উনার বুকের সাথে মিশে আছে আমার মাথা।।উনার হার্টবিটের শব্দ আমার কানে স্পষ্ট।।কি তুমুল গতিতে ছুটছে…একসময় এই শব্দটা আমাকে নেশা ধরাতো কিন্তু এই মুহূর্তে…. সেটা নিতান্তই বিরক্তির বিষয়।।অন্যকারো ভালোবাসার মানুষের বুকের শব্দ আমি শুনবো কেন??যে অধিকার আমার নেই সেই অধিকারের অধিকারী হতে চাই না আমি।।
.
?
.
সারাটা বিকেল আর সন্ধ্যাটা শপিং করে কেটেছে…. সাথে বেড়েছে বিরক্তি।।বাসায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো বড্ড নিষ্ঠুর ভাবে।।ইশশ…কি পাষান! রাতের নিস্তব্ধতাকে কতটা নিষ্ঠুরতার সাথে ছিন্নভিন্ন করে দিলো মুহূর্তেই।।ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে… ফোনের স্ক্রিনে চিত্রার হাসিমাখামুখ ভাসছে সাথে ভাসছে বাংলা অক্ষরে লেখা তার নাম “চিত্রা”।। আমার ফোনে একমাত্র ওর নামটাই বাংলা ফন্টে লেখা।।তার কারণটা অবশ্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।।ওর নামটাতে একটা উপন্যাস উপন্যাস গন্ধ আছে বলেই মনে হয় আমার…. উপন্যাসের নায়িকাদের মতো নাম…আর ভাগ্যের পরিহাসে আমার গল্পটাকে ছিন্নভিন্ন করে সেখানেও নিজের নামটা লাল কালিতে লিখে নিয়েছে সে গভীরভাবে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা তুললাম…
.
হ্যালো?
.
হ্যালো রোদ?
.
হুম….
.
কাল ভার্সিটি আসছিস তো??কাল তো রিইউনিয়ন…. দারুন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।।জানিস?এখানে “শেয়ার ইউর লাভ সেশন” নামে একটা সেকশন এড করা হয়েছে এবার।।সবাই তার লাভ এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করবে।।জাস্ট অসাম একটা বিষয়।।আসবি তো??
.
দেখি..
.
দেখাদেখি কিসের??এখানে তো দেখাদেখির কিছু নেই।।তুই আসবি ব্যস…শুধু আসবি যে তা না একদম শাড়ি পড়ে আসবি।
.
বললাম তো দেখি…এখনও সিউর হতে পারছি না।
.
রোদ?এটা আমাদের জন্য খুবই ইম্পোর্টেন্ট।।৫০ বছরের সব ব্যাচের ভাইয়া-আপুরা আসবে।।তাদের মধ্যে অনেকেই সাকসেসফুল।।ওদের সাথে পরিচয় থাকলে আমাদের ক্যারিয়ারে এফেক্ট পড়বে।।they can give us a great change…
.
চিত্রা?তুই এই মুহূর্তে ফোন রাখবি।।তোর এই হিসেব নিকাশটা আমার সাথে না করে ক্যালকোলেটরের সাথে কর…. সেটা বেশি এফেক্টিব হবে।।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।।এই চিত্রাটা অলওয়েজ রং টাইমে কল করবে।।আর আমাকে বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে দিবে।।ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম…. রাস্তার সোডিয়ামের আলোর কিছু অংশ আমার বারান্দায় হানা দিয়েছে….আকাশের চাঁদটা মেঘের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে বারবার।।আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম।।একজোড়া কাপল হাতেহাত রেখে হেঁটে চলেছে।।মেয়েটির হাতে আইসক্রিম,, মাথাটা পাশের মানুষটার কাঁধে।।এই মুহূর্তে এই মেয়েটিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী বলেই বোধ হচ্ছে।।মানুষ তার জীবনের যেকোনো একটা পর্যায়ে গিয়ে এমন একটা ভুল করে যার জন্য তাকে পস্তাতে হয়,,,কষ্ট সহ্য করতে হয়,,ব্যথা সহ্য করতে হয়।।কখনো তা হয় মিষ্টি ব্যথা কখনো বা…… আমার ক্ষেত্রে ব্যাথাটা বড্ড তীক্ষ্ণ।। প্রথম যৌবনের প্রথম ভালোবাসা….প্রথম আঘাত…..প্রথম পরাজয় খুবই কষ্টের হয়।।যে কষ্টটা এই মুহূর্তে আমার প্রতিটা পেশীতে বয়ে চলেছে….অদ্ভুত একটা ভাইরাসের মতো।।
.
?
.
গোলাপী রঙের শাড়ি…ম্যাচিং ব্লাউজ।।কপালে ছোট্ট কালো টিপ।।হালকা গোলাপী লিপস্টিকের সাথে চোখে কড়া করে কাজল এঁটে।।লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।।ভার্সিটিটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে আজ।।গেইটে পা রাখতেই চিত্রাকে দেখতে পেলাম।।মুখে হাসি যেন ধরছেই না তার।।বেগুনী রঙের শাড়িতে বড্ড মিষ্টি লাগছে ওকে।।””রূপবতী কন্যা তার কেশবরন চুল”” এই মেয়েকে দেখে ছেলেরা তো প্রেমে পড়তে বাধ্য।।চিত্রার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র ভাইয়া।।উনি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।উনার চোখে যেন হাজারো আকুতি।।এতো সুন্দরী প্রেমিকা পাশে থাকতেও উনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন বুঝতে পারছি না।।উনিও গোলাপী আর সাদার সংমিশ্রণে পাঞ্জাবি পড়েছেন।।বেশ লাগছে…কিন্তু আজ উনাকে খুঁটিয়ে দেখার সাহস যোগাতে পারলাম না।।খুব দ্রুতই চোখ সরিয়ে নিলাম…অন্যের জিনিস বলে কথা!!!আমাকে দেখেই চিত্রা দৌড়ে এলো…চশমা ঠিক করতে করতে কথার ঝুলি নিয়ে বসলো সে।।আমি ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছি…তখনই কোথা থেকে সাহেল ভাইয়া এসে হাজির…
.
এই সানশাইন??খুব মিষ্টি লাগছে তোমায়।।
.
ধন্যবাদ ভাইয়া…(মুচকি হেসে)
.
মাই প্লেজার মেম….ব্রেকফাস্ট করেছো?
.
এক্চু…
.
তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে করো নি।।আমিও করি নি…চলো একসাথে ব্রেকফাস্ট সেড়ে আসি।। অনেক কাজ…(শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে) এই শুভ্র?অনুষ্ঠান শুরু কর..এখন আপাতত আমার কোনো কাজ নেই এবার একটা খাওয়া দিবো…প্লিজ আর কোনো কাজের কথা বলিস না।।এই সাইশাইন চলো….!!
.
শুভ্র ভাইয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।হয়তো উনি চাচ্ছেন না, আমি সাহেল ভাইয়ার সাথে যাই।।উনার চাওয়া দিয়ে আমার কি কাজ??আমি হাসিমুখে সাহেল ভাইয়ার সাথে হাঁটা দিলাম…আমাদের খাবার আসার আগেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।।সাহেল ভাইয়া আমাকে এরেঞ্জমেন্টের হেন তেন বুঝাচ্ছিলেন…. তখনই এনাউন্সমেন্ট হলো…
.
গাইস…এখন আমাদের প্রিয় শুভ্র ভাইয়াকে রিকুয়েষ্ট করছি তার লাভ এক্সপেরিয়েন্স সম্পর্কে বলার জন্য….ভাইয়া?আপনার লাইফে কি ভালোবাসা এসেছিলো??যদি এসে থাকে তো কে সে লাকি মেয়ে??
.
হ্যা…আছে এমন একজন..
.
ওয়াও…এটা ভার্সিটির মেয়েদের জন্য বেড নিউজ।।তবুও তারা ভগ্নহৃদয় নিয়ে আপনার লাভ এক্সপেরিয়েন্স শুনতে চায়।।গাইস ডু ইউ ওয়ান্ট টু লিসেন???
.
ইয়েসসসসসস??(সবাই)
.
তো ভাইয়া?আপনার ভালোবাসা বলে কথা নিশ্চয় এক্সট্রাঅর্ডিনারি হবেন তিনি….
.
আমায় যদি জিগ্যেস করা হয় হোয়াই আই লাভ হার??তাহলে বলবো কোনো রিজন নেই।।ওকে ভালোবাসার কোনো রিজন আমার কাছে নেই।।অজানা কোনো কারণে ভালোবাসি তাকে….আর খুবই অদ্ভুত বিষয় কি জানেন??সেও অজানা কোনো কারণে ঘৃণা করে আমায়।।যেখানে আমি ওর সাথে কথা না বলতে পারলে আমার শ্বাস আটকে আসে সেখানে আমার কথা শুনে বিরক্তিতে ওর শ্বাস আটকে আসে।।যেখানে তার হালকা ছোঁয়া আমার শরীরে শিহরণ জাগায় সেখানে আমার ছোঁয়ায় ওর ঘৃণা আসে….অদ্ভুত এক ভালোবাসা আমার….তবুও দিন শেষে ওকে একটাবার দেখার জন্য মরে যেতে ইচ্ছে করে।।কিন্তু সে বুঝে না…বড্ড অবুঝ সে!!এই অবুঝ মেয়েটিকেই চাই আমার…দিনশেষে চোখে চোখ রেখে বলতে চাই…”তোকে চাই” শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি শুধু তোকেই চাই।।
.
ওয়ান সাইডেড লাভ??
.
মে বি…(মুচকি হেসে)
.
আপনাকে কেউ ঘৃণা কি করে করতে পারে??ব্যাপারটায় আমরা সবাই সারপ্রাইজড….এনিওয়ে উনি কি এখানে আছেন??
.
হুমম…সে এখানেই কোথাও আছে….
.
ভাইয়া তাহলে উনাকে ডেডিকেট করেই একটা গান যদি গাইতেন।।আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে আপনার গানের দেওয়ানাও কিন্তু এখানে অনেক।।প্লিজজ ভাইয়া…জাস্ট ওয়ান সং…
.
আজ নয়….
.
প্লিজজ ভাইয়া…প্লিজ।।ফর আওয়ার গেস্ট…
.
ওকে…
.
ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে তালির জোয়ার উঠলো।।আমি ততক্ষণে মঞ্চের খানিকটা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছি….উনি মুচকি হেসে গিটারটা হাতে তুলে নিলেন।।হালকা হাতে সুর তুললেন গিটারে…তারপর চোখদুটো বন্ধ করে গেয়ে উঠলেন-
.
না রে নারে,, নারে নারে না রে নারে নারে না রে
নারে নারে না….
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
বুঝে না সে বুঝে না.
সে তো আজও বুঝে না.
কাঁদে মনের কথা..প্রেম কি শুধু ব্যথা
উত্তর আজো মেলে না,,মেলে না,, মেলে না,,,মেলে না
বুঝে না সে বুঝে না।।
.
এ বুকে এতো প্রেম তার চোখে ঘৃণা..
চায় না শুনতে সে এ বুকের কান্না
আমি চোখের বালি,, কি করে তাকে বলি
এ বুকে কি বেদনা…
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
কাঁদে মনের কথা..প্রেম কি শুধু ব্যথা
উত্তর আজো মেলে না,,মেলে না,, মেলে না,,,মেলে না
বুঝেনা সে বুঝেনা..
.
রুরু রু রুরু রু রুরু রু
পৃথিবী একদিকে,একদিকে আমি
আজ আমার রক্তে মিশে গেছো তুমি
নাইবা হলো দেখা দেখবো একা একা
স্বপ্নের এই সীমানা….
.
দু’চোখ জ্বালা করছে আমার।।হয়তো চোখ থেকে বৃষ্টি ঝরতে চাইছে।।কিন্তু কেন??যার উত্তর শুধুই জানি না।।আবেগ দিয়ে গাওয়া হয়তো একেই বলে।।প্রতিটি লাইন উনার কন্ঠে জীবন্ত হয়ে উঠেছে যেনো।।গান গাওয়া শেষ করে মুচকি হেসে গিটারটা পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়েই নেমে গেলেন স্টেজ থেকে।।চোখদুটো টলমল করছিলো উনার যেনো এখনই ঝরে পড়বে দু’ফোটা জল।।কি ভয়ানক গোলকধাঁধায় ফেঁসে গেছি আমি।।উনার গাওয়া গান আর তার আগে বলা প্রতিটি কথা যে ছিলো আমাকেই উদ্দেশ্য করে।।উনি যদি সত্যি আমায় ভাললবাসেন তাহলে চিত্রার সাথে ওসব কেন??হুয়াই?
.
#চলবে….
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 26
.
.
?
.
এএএই তুই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??আর এই বালতি ভরা পানিই বা কেনো??
.
তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। না পেঁচিয়ে স্ট্রেট আন্সার দিবি।।আর পেঁচাইলেই এই পানি তোর মাথায় ঢালবো।।বুঝতে পারছিস?
.
ককি এমন প্রশ্ন করবি?(অবাক হয়ে)
.
প্রথম প্রশ্ন…শুভ্র ভাইয়ের সাথে তোর রিলেশন চলে?
.
কিহহ??পাগল নাকি।।উনার সাথে আমার রিলেশন কেন চলবে। আরে উনি তো তোকে পছন্দ করেন।
.
তাহলে তোর কোমরে হাত রেখে রোমান্সের মানে কি?(রাগী গলায়)
.
রোমান্স?কি বলছিস তুই?কিসের রোমান্স??(অবাক হয়ে)
.
ঠাডিয়ে দিবো একটা।ওয়াশরুমের দরজার চিপাই দাঁড়িয়ে তোরা কি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করছিলি নাকি??(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
আরে… ওটা তো ভাইয়ার পা স্লিপ করেছিলো তাই।তুই যখন ওয়াশরুমে ঢুকলি তখনই ভাইয়া এলো।।উনি কিছু একটা বলতে এসেছিলেন আমায়।কিন্তু কিছু বলে উঠার আগেই পা টা স্লিপ কেটে একদম আমার উপরে এসে পড়লেন।।উনি যদি আমার উপরে পড়তেন তাহলে আমার মাথাটা একদম দেয়ালে লেগে যেতো।।অনেক কষ্টে একহাতে দেয়াল ধরে নিজেকে আটকে নিয়েছেন উনি।।আর অন্যহাতে আমার কোমর ধরেছেন যেনো আমি দেয়ালে ধাক্কা না খাই।।এটুকুই…(মুখ গোমরা করে)
.
এইটুকুই?
.
হুম এইটুকুই…
.
চিত্রা এটুকু বলার সাথে সাথেই বালতির পানিটুকু ঢেলে দিলাম ওর মাথায়।চিত্রা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….
.
এটা কি হলো?আমি তো প্রশ্নের উত্তর দিলামই তাহলে পানি কেন?
.
লেইট করে দিয়েছিস তাই।।তোর কোনো ধারনা আছে এই তিনটা দিন কিভাবে কেটেছে আমার??তিনদিন মানে বুঝিস তুই??তিনদিন মানে হলো ৭২ টা ঘন্টা….তারমানে কতো জানিস?৪৩২০ মিনিট….মাই গড…
.
চিত্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে…. কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই বললেই চলে।। আমি তো ভাবছি শুভ্র ভাইয়াকে নিয়ে।ইশশ…না জেনে উনাকে কতো কথা শুনিয়ে দিলাম।।এবার উনাকে সরি বলবো কিভাবে?সামনে যেতেই তো আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।।
.
?
.
রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর উঠে লাফালাফি করছি।আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাইছি… “উফফ মেরি দিলমে থুরি খালি ছি জাগা থি…উফফ তোনে আকে বিন কিরায়ে এ জাগা লি।।কোচ কেহবি না ছাকি…..” শুভ্র ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে শুধু এবং শুধুই আমাকে ভালোবাসে…. ইশশ কি সুখ।।হঠাৎই জানালা ভেদ করে একটা কাগজ এসে লাগলো গায়ে।।আমার রুমটা দু’তলায়।নিচ থেকে কেউ দোতালার জানালা দিয়ে কি করে কাগজ ছুড়ঁতে পারে বুঝতে পারছিলাম না।।কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে কাগজটির দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসলাম।।কাগজটা হাতে নিয়ে মোচরানো কাগজটা সোজা করে দেখলাম…কিছু একটা লেখা আছে তাতে….
.

এই মিষ্টি হাসি,
,
এতো রাগ কেনো তোমার?এতো জেদ?এই ছোট্ট একটা শরীরে এতো জোড় কিভাবে?? তোমার হাতের চড়টা বেশ শক্ত ছিলো সাথে মিষ্টিও ছিলো।।জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের হাতে চড় খেয়েছি আর সেই মেয়েটা হলে তুমি।।তোমার হাতের চড়টা গালে পড়ার পর মনে হয়েছিলো আরেকটা চড় যদি পড়তো আমার গালে তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হতো না।।কারো হাত এতোটা নরম কি করে হয় বলো তো?আচ্ছা তুমি কি তিন বেলা তুলো খাও?কালকে তোমার শরীরের ওই গোলাপী শাড়িটা যে কি মারাত্মক সুন্দর ছিলো তা কি তুমি জানো?তোমার সাথে বেশ মানিয়েছিলো রংটা সাথে তোমার গালে ছিলো রাগের ওই গোলাপী আভা।।ইচ্ছে তো করছিলো….থাক বলি না লজ্জা পাবে তুৃমি।।কথাগুলো তোলা থাকুক…কোনো একদিন আমার সামনে বসিয়ে এই লজ্জামাখা কথাগুলো শুনাবো তোমায় আর তুমি লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকাবে আমার বুকে….আর আমি প্রাণ ভরে দেখবো।।সেদিন তোমার চোখে ভালোবাসাটা দেখতে চাই শ্যামলতা,,ঘৃণাটা নয়।তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণাটা যে আমায় মৃত্যু যন্ত্রণা দেয় প্রতিটি মুহূর্তে। তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রোদপাখি…. নীল শাড়ি..হাতে নীল চুরি,, চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে বাতাসে চুল উড়িয়ে দাঁড়াবে কি ছাঁদের কোনে?জানি দাঁড়াবে না…তবু অপেক্ষা করে চলেছি দিনরাত।।তোমার পায়ে নিজ হাতে আলতা লাগানোর খুব শখ আমার….একদিন সুযোগ দিও প্লিজ!!শুধু একটিবার…ভালোবাসা মাখা চোখে তাকিও….তোমার সেই চাহনীতেই তো আমি কুপোকাত…..
.
তোমার একরাশ ঘৃণা?
.
চিঠির উপর দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।।মনটা বলে উঠলো নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসি ভালোবাসি।।ঝটপট উঠে আলমারি থেকে নীল শাড়ি বের করেই জড়িয়ে নিলাম শরীরে….. হাত ভরে চুরি আর চোখে কাজল লাগিয়ে অগোছালো চুল গুলো খুলে দিয়েই দৌড়ে চলে গেলাম ছাঁদে।।ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি,দৃষ্টি রাস্তার দিকে….কোথায় তিনি?উনি কি চলে গেছেন?কথাটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার।।ঠিক তখনই পেছন থেকে আপু বলে উঠলো-
.
কাউকে খুঁজচ্ছিস?
.
ন..নাহ তো…কাকে খুঁজবো??
.
তাহলে এভাবে ছটফট করছিস কেন?কাঁদছিস?
.
আরে না…বাতাসে বালি উড়ে চোখে পড়েছে।তাই হয়তো…এনিওয়ে তুমি এখানে?কিছু বলবে?
.
হুম….মা আমাদের তৈরি হতে বললো।মামুদের ওখানে যাবো।বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে আজ।(লাজুক চাহনিতে)
.
আপুর কথাটা শুনেই মনটা খুশি হয়ে গেলো।।নিশ্চয় ওখানে গিয়ে ওনাকে খুঁজে পাবো।ইশশ…কথাটা ভেবেই আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই এক দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।।আনন্দে সাড়া বাড়ি নেচে বেড়াতে ইচ্ছে করছে আমার।।
.
?
.
বাড়িতে ঢুকে মামু আর মামানির সাথে দায়সারা কথা বলেই চারদিকে চোখ ঘুরাতে লাগলাম।কিন্তু মহাশয়ের দেখা মিললে তো।।কাউকে কিছু জিগ্যেসও করতে পারছি না।।না জানি কি ভাববে সবাই।।কিছুক্ষণ বসে থেকে মুখ কাঁচুমাচু করে উঠে গেলাম।।ধীর পায়ে দু’তলায় উঠেই উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলাম চারপাশে যদি দেখা পাই।।হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত টেনে দেয়ালে চেপে ধরে ঠিক আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়লো।।এমন একটা কাজ শু?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে