তোকে চাই❤পর্ব:৩৪+৩৫+৩৬

0
4464

তোকে চাই❤পর্ব:৩৪+৩৫+৩৬
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:34


মা আমার অফিস আছে আমি আসছি,,,,রোদ তুমিও চলো,,

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালেন উনি,,,সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েও পিছন ফিরে বলে উঠলেন,,,”খালমনি তুমি আমার বউ আর আমার ফ্যামিলি থেকে দূরে থেকো,,, তোমার জন্য উইথআউট রিজন আমার ফ্যামিলি মেম্বার কষ্ট পাবে তা আমি মেনে নিবো না,,,আর হ্যা,,মনে রেখো বউমনি কিন্তু আমার বোনের থেকে কোনো অংশে কম না।।”আমি উনার যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।এই মানুষটির ক্যারেক্টার এখনো আমি বুঝে উঠতে পারি নি।।।এখানে বসে থাকা সবার মনে উনার জন্য হয়তো সম্মানবোধটা হাজার গুন বেড়ে গেছে আর আমার মনে উনার জন্য ভালোবাসাটা।।প্রচন্ডরকম ভালোবাসি এই লোকটিকে,,

বিছানায় পা গুটিয়ে বসে উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,আর উনি ঘরময় ঘুরে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছেন,,কখনো চুল তো কখনো টাই ঠিক করছেন,,,ঘড়ি পড়ছেন,,,ফাইল গুছাচ্ছেন,,,আমি সবসময়ই উনার প্রতিটি মুভমেন্টে প্রেমে পড়ে যায়।।আচ্ছা,,উনি কি জানেন??আমি যে মিনিটে দশবার করে উনার উপর ক্রাশ খাই।।মাঝে মাঝে মনে হয়,, এই ছেলেটাকে জুস বানিয়ে খেয়েই নিই,,শান্তি লাগলেও লাগতে পারে।।হঠাৎই উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে বলে উঠলেন,,,

হোয়াট হ্যাপেন্ট রোদ??এভাবে তাকিয়ে আছো কেন??

আই লাভ ইউ

আমি এমন কিছু বলবো তা হয়তো উনি কোনো কালেই ভাবেন নি।।অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই আমার দিকে তাকালেন,,,কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না,,

আপনি এত্তো কিউট কেন?(ঠোঁট উল্টিয়ে)

এবার আর উনি দাঁড়ালেন না,,,চরম অস্বস্তিটা কাটিয়ে উঠতে না পেরে “অফিসে লেট হচ্ছে” বাহানা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।আমাকে যে সাথে নিবেন সেটাও ভুলে গেলেন।।।তো কি আর করা,,কোনো রকম ব্যাগটা নিয়ে আমিও ছুটলাম তার পিছু পিছু,,,

কি ব্যাপার??আমাকে রেখে চলে যাচ্ছেন কেনো??(হাঁপাতে হাঁপাতে)

ওহ,,ভুলে গিয়েছিলাম,, গাড়িতে উঠো।।

উনি একমানে গাড়ি চালাচ্ছেন,,,হঠাৎই কি মনে করে গাড়ি থামিয়ে দিলেন,,,

কি ব্যাপার??থামালেন কেনো?(ভ্রু কুঁচকে)

যাবো না,, অফিস যাবো না আজ।।

আপনি না গেলে নাই,,আমাকে তো এটলিস্ট কোচিং এ দিয়ে আসুন লেট হচ্ছে,,,

তুমি তো আরো যাবে না,,

হোয়াট??কিন্তু কেনো??আমার আজ কোচিং এ এক্সাম আছে,,,,সারারাত পড়ছি কাল,,এক্সাম তো আমি দিবোই।।আপনি ড্রপ না করলে আমি একাই চলে যাবো,,,

কথাটা বলে গাড়ির দরজা খুলতে যাবো তখনই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন,,,

এই পিচ্চি,,এই আমার কথা মাঝে মাঝে শুনে নিলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে??এতো জেদি কেন তুমি??যাবে না মানে যাবে না।।বেশি কথা বললে কানের নিচে দিবো দুটো,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

এহহহহ,,,জানতাম,,আই নিউ ইট।।সব ছেলেরা এক টাইপ হয়,,,খালামনির সামনে হিরো সেজে এখন একা পেয়ে আমাকে মারতে চাইছেন,,(মুখ গোমরা করে)

আমার কথায়,উনি হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে রাগী গলায় বলে উঠলেন,,,

আমার বউ,,আমি ইচ্ছে হলে মারবো,,ইচ্ছে হলে আদর করবো,,তোমার সমস্যা কি??

জীবনে আদর করছেন?? মারতেই শুধু পারেন।।ওই হিসেবে আমিও আপনার সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি,,আমার হাজবেন্ড বলে কথা।।আদর টা না হয় আমিই করে দিই,,,(চোখ টিপে)

কথাটা বলেই উনার চমচমের মতো গালটাতে একটা টাইট কিস করে দিলাম,,,উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন,,,,রাগী চোখে কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলেন।।।কোনো রিয়েকশন না দিয়েই আবারো গাড়ি ড্রাইভ করায় মন দিলেন,,,উনার কপাল কুচঁকে আছে,, মনে হচ্ছে বেশ টেনশনে আছেন,,

আচ্ছা?আমারা হঠাৎ ফিরে যাচ্ছি কেন??কোনো সমস্যা??(ভ্রু কুচঁকে)

খুব বড় সমস্যা,,তুমি যদি সত্যি হারিয়ে যাও আমার থেকে??নীলি কি বুঝাতে চাইলো আমায়??তোমার বিপদ?? না,,বিন্দুমাত্র রিস্ক নিতে চাই না আমি আমার পিচ্চিটাকে নিয়ে,,,(ভ্রু কুচঁকে,,বিরবির করে)

কি বিরবির করছেন??জোড়ে বলুন না,,,কি হারিয়ে যাবে??(কৌতূহলী চোখে)

রোদ??কিছুদিন তুমি কোচিং যাবে না,,,কোচিং এর লেকচার শিট আর কোশ্চেন পেপার বাসায় এনে দিবো,,বাসায় বসেই পড়াশোনা করবে,,,

কিন্তু কেনো??

এত্তো প্রশ্ন করবে না রোদ,,যা বলছি তাই করবে ব্যাস(বিরক্তি নিয়ে)

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে উনি টাই খুলছেন,,আর আমি সন্দেহ ভরা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,আমি কোচিংএ কেন যাবো না,,,কি চলছে উনার মাথায়??ভাবতে ভাবতেই উনার হাতের তিলটার উপর চোখ পড়লো,,,তিলটা উনার হাতের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে,,,কি আলতো হাতেই না টাইটা খুলছেন,, টাইও বুঝি যেকোনো টাইম তার প্রেমে পড়ে যাবে,,,আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,,আয়নার ভেতর দিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালেন,, কি হয়েছে??

আ,,আমি টাই বাঁধতে পারি না,,,

তো??তোমাকে টাই বাঁধতে শিখতে কে বলেছে??

না,,আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন সো আমার টাই বাঁধতে পারাটা উচিত তাই না??

তোমাকে কে বললো আমি শাড়ি পড়াতে পারি??(ভ্রু কুঁচকে)

পারেন না??(অবাক হয়ে)

অবিয়েসলি নট,,,এসব ফালতু জিনিসের জন্য আমার টাইম নেই। অযথা শাড়ি পড়া শিখতে যাবো কেন??

কিহ,,ছেলে হয়ে আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন না??

কেন??ছেলে হওয়ার পেছনে শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে নাকি??যে ছেলে হতে হলে শাড়ি পড়া শিখতে হবে??

না তা নয়,,,সব ছেলেরাই,,আই মিন মোস্ট অফ দ্যা বয়েজ,,বউয়ের সাথে রোমান্স করবে বলে লুঙ্গি পড়া শেখার আগে শাড়ি পড়া শিখে,,,

আমি ওই মোস্ট অফ দ্যা,বয়েজ এর মধ্যে পড়ি না।।।তাছাড়া রোমান্স করতে হলে শাড়ি খুলে করবো,,পড়িয়ে করতে যাবো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)

ছিহ,,আপনি এমন চিপ টাইপ কথা বলছেন কেন??

যা সত্য তাই বললাম,,এখানে “ছিহ” এর কি দেখলে??

আমি আর কিছু বললাম না,,কে জানে আবার কি বলে বসে???হঠাৎই উনি কাগজে মোড়ানো বড়োসড়ো কিছু একটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন,,যা ধরে রাখতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্চে আমাকে,,,,ভ্রু কুচকে অবাক চোখে বলে উঠলাম,,,

এটা কি??

হ্যাপি বার্থডে,,

কিহ,,আজ কতো তারিখ??

জুলাইয়ের ১ তারিখ,,,

বাট আমার জন্মদিন তো জুনের ১ তারিখ,,,

তো??১ তারিখেই তো নাকি???

তাতে কি??মান্থ আলাদা,,

আচ্ছা,,তুমি হ্যাপি বার্থমান্থ বলো,,নাকি হ্যাপি বার্থডে বলো??(ভ্রু নাচিয়ে)

বার্থডে অবিয়েসলি,,

তাহলে মান্থে কনসেনট্রেট না করে ডে-তে কনসেন্ট্রেট করো,,,

সত্যি তো উনার কথায় লজিক আছে,,,শুধু শুধু মান্থে কনসেনট্রেট করে কি লাভ??কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাতের জিনিসটার উপর চোখ পড়লো,, কাগজটা সরিয়ে,,ভেতরের জিনিসটা দেখেই অবাক হতে বাধ্য হলাম।।এটাকে আমাদের দু’জনের কেন্ডেট পিকও বলা যায়।।ছবিটা বিয়ের আগের,,রুমু আপুর বিয়েতে,,,উনি দাঁত কেলিয়ে হেসে আমার লম্বা বেনী ধরে টানছেন,,আর আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে,,,ভ্রু কুচঁকে,, ঠোঁট উল্টিয়ে উনার দিকে ঘাড় বেকিয়ে তাকিয়ে আছি।।পিকটা এত্তো কিউট হয়ছে বলার বাইরে,,কিন্তু এই পিকটা কখন তোলা হয়েছে??

এই পিক কখন তুলছেন??(অবাক চোখে)

আমি না নীলি তুলেছিলো,,,রুমু ভাবির বিয়েতে,, নীলির ফটোগ্রাফির শখ ছিলো,,ছবিটা ওর কাছে বেশ কিউট লাগতো,,ছবিটা আসলেই অনেক কিউট,,,আর তোমার কিউট ফেস,,,

#চলবে,,,

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
# part: 35


আর তোমার কিউট ফেসটা দেখলেই গাল দুটো টেনে লাল করে দিতে ইচ্ছে করে।(গাল টেনে)

কথাটা বলেই আমার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে বেডের উপর দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন,,,”নাও,,পার্ফেক্ট।”

আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি??

হুম বলো,,(বিছানা থেকে নামতে নামতে)

সাহেল ভাইয়া যে আমার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো,,আপনার রাগ লাগে নি??এতো কুল ছিলেন যে??

আমার কথা শুনে উনি মুচকি হেসে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন,,,আলতো হাতে নাক টেনে দিয়ে বলে উঠলেন,,

কি করবো বলো?সুন্দরী বউ থাকলে এসব প্যারা তো সামলাতেই হবে,,,কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না,,,

কি?(ভ্রু কুঁচকে)

সাহেল তোমার প্রেমে কিভাবে পড়লো??তোমার মধ্যে তো প্রেমে পড়ার মতো কিছু নেই,,

হোয়াট,,,আপনি আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করছেন??কি মনে করেন আপনি নিজেকে হুম হুম??(রাগী গলায়)

আরে আন্ডারেস্টিমেট কেন করবো??যা সত্যি তাই,,সব মেয়েকে দেখে তো আর প্রেমে পড়া যায় না,,,কিছু স্পেসিফিক মেয়ের উপর ছেলেরা প্রেমে পড়ে,,,লাইক,,যে মেয়েদের দেখলে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,উফফ সো হট,,,সেক্সি,,,ওসব মেয়েদের উপর প্রেম প্রেম ভাবটা ঝাঁকিয়ে বসে,,,বাট তুমি তো ওমন না,,,

ছিহ,,,কথার কি ছিড়ি,,,তো আমি কেমন শুনি??(রাগী গলায়)

তুমি টোটালি রসগোল্লা টাইপ,,,এই টাইপের মেয়েদের দেখলে প্রেম না,, আদর আদর ভাব আসে।।কিছু বাচ্চা আছে না?যাদের দেখলেই গাল টেনে বলতে ইচ্ছে করে,,বাবু আইসক্রিম খাবে??তুমি ঠিক ওই টাইপ,,,(দাঁত কেলিয়ে)

আপনি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করছেন?(ভ্রু কুঁচকে)

এই যে,, এই লুকটা,,এই যে এখন তুমি ভ্রু কুঁচকে,, ঠোঁট উল্টে,,মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছো।।আর তোমার এই গুলুমুলু গালের পাশ দিয়ে কিছু চুল এসে পড়েছে,,,কতোটা কিউট লাগছে জানো??দেখলেই ইচ্ছে করে,,গাল দুটো টেনে দিয়ে,,একদম কামড়ে খেয়ে ফেলি,,,,

কিহ??কি বললেন??(অবাক হয়ে)

আব,,আব,,,ওয়াশ,,ওয়াশরুম,,ফ্রেশ হয়ে আসি,,বাইরে থেকে আসছি তো শরীর কামড়াচ্ছে,,

কথাটা বলেই উনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন,,,আমার তো হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা,,বেচারা নিজে বলে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন,,হিহিহিহি।।। উনি ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম,,,আমার এক সমস্যা একবার হাসি শুরু হলে কিছুতেই থামতে চায় না।।।উনি ভ্রু কুঁচকে রাগী গলায় বলে উঠলেন,,

কি সমস্যা??হাসছো কেন??

নাহ এমনি,,,,আমিও তো বাইরে থেকে আসলাম,,,আপনার শরীর কামড়াচ্ছে আর আমার কাতুকুতু লাগছে।।।

বলেই একপত্তন হেসে নিলাম আর উনি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।

দুপুর ২ টা,,, মামানি আর আপু খাবার টেবিল সাজাচ্ছে,,,আমি দিদার সাথে বসে দুষ্টামো করছি,,,দাদুভাই নাকি হেব্বি রোমান্টিক ছিলো,,,দিদা এখনো দাদুভাইকে আগের মতোই ফিল করে,,,মামানির জন্মের কিছুদিন পরই দাদু মারা গেছে তবু দিদার ভালোবাসা এক বিন্দু কমে নি।।একেই হয়তো বলে ভালোবাসা।।একটু পরেই গজগজ করে হাজির হলেন ঘষেটি বেগম,,,আই মিন আমাদের খালামনি।।আমাকে বসে থাকতে দেখেই যেনো তার পিত্তি জ্বলে গেলো,,,কিছু বলতে গিয়েও শুভ্রকে নামতে দেখে থেমে গেলেন,,মহিলার পেটের আজ ভাত হজম হবে কি না কে জানে??খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুভ্রর পেছনে লাগলাম,,,আমার এক কথা আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে নয়তো আমি একাই চলে যাবো,,,ব্যস।।।শেষমেষ বাধ্য হয়ে উনি রাজিও হয়ে গেলেন,,,পার্কের পাকা রাস্তা ধরে দুজন পাশাপাশি হাঁটছি।।।আমার মেজাজ ফুরফুরে থাকার কথা বাট আমি চরম বিরক্ত।।বেশকিছু মেয়ে বার বার ঘুরে ঘুরে উনার দিকে তাকাচ্ছে আর ফিসফাস করছে।।।উনার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই,,,তিনি তো আছেন আমার পায়ের নিচে কোন ইট পড়ছে কিনা,,কোন কাঁটা পড়ছে কিনা সেটা নিয়ে।।বিরক্তিকর।। কি দরকার ছিলো এতো ড্যাশিং সেজে আসার??আবার নেকামো হচ্ছে,,,ইচ্ছে করছে,,,এই সিল্কি গোছালো চুলগুলো এলোমেলো করে দিই,,,হুহ।।আর মেয়েগুলোও কি বেহায়া রে বাবা,,,অন্যের জামাইয়ের দিকে নজর দিস,,চোখ ফুটো হয়ে যাবে।।।এজন্যই বাবাকে বলেছিলাম,,,সুন্দর ছেলে বিয়ে করবো না,,,বাট আব্বু সেই সাদা বিলাই দেখেই বিয়েটা দিয়ে দিলেন।।।উনি আইসক্রিম আনতে গেলেন আর আমি চুপচাপ পার্কের এক বেঞ্চে বসে আছি,,শুভ্র আমাকে সাথে নিতে চেয়েছিলো,, আমিই মানা করে দিয়েছি,,সেখানেও নিশ্চয় মেয়েরা “হা ” করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকবে তা আমার সহ্য হবে না।।তারচেয়ে আমি এখানেই ঠিক আছি।।প্রায় বিশ মিনিট হয়ে গেলো উনার খবর নেই,,এতোক্ষণ লাগে নাকি??আবার কোনো মেয়ে আমার বরকে নিয়ে পালালো না তো??খুবই চিন্তার বিষয়,,,তাই আমিও হাঁটা দিলাম,, দেখি আমার লাল টুকটুকে বর কার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আছেন।।কিছুদূর গিয়েই উনাকে দেখতে পেলাম,,,কারো সাথে কথা বলছেন।। আরেকটু কাছাকাছি যেতেই বুঝলাম লোকটা আর কেউ না সাহেল ভাইয়া,,,আমি আর এগুলাম না,,,একটু সরে এসে দাঁড়ালাম যেনো আমাকে দেখতে না পান।।উনার সামনে যাওয়াটা এখন আমার জন্য বেশ লজ্জার।।উনাদের কথাগুলো বেশ সহজেই আমার কানে আসছে,,,

শেষ বাজিটায় তুইই জিতে গেলি শুভ্র,,,মনে আছে?ছোটোবেলা আমাদের দুজনের একটা খেলনায় পছন্দ হতো অলওয়েজ,,,সবাই বলতো আমরা বউও সেই একই পছন্দ করবো নির্ঘাত,,দেখ তাই হলো।।

এটা কোনো বাজি না সাহেল,,আর না রোদ কোনো খেলনা।।।ও আমার স্ত্রী,, সেটা তোর উপস্থিতির আগেও ছিলো,,এখনো আছে,, আর ভবিষ্যতেও থাকবে।।তুই ভুল মেয়েকে চুজ করেছিস।।

হুমমম,,,সেই,,জীবনে আমরা যা চুজ করি,,সবই হয়তো দামী নয়তো অন্যকারো।।রোদ তো দুটোই দামিও আবার অন্যকারোও।।কিন্তু কি জানিস??মনকে বোঝানো শক্ত,,,শী ইজ মাই ফার্স্ট লাভ।।প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম,,,উইথআউট নোয়িং হার আইডেন্টি।। একটা মেয়ে রাস্তায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে,,সোডিয়ামের আলোয় বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটা কি মায়াবীই না লাগছিলো।।ইসসস আই ওয়াজ স্টাক।।বাট ওইযে নিয়তি।।

আমার সামনে আমার বউয়ের এমন মধু মাখানো বনর্না দিস না দোস্ত রাগ লাগে।।।

হাহাহাহা,,,তাও তো ও তোর রে,,,ইসস আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে,, নীলিমা বেঁচে থাকলে ভালো হতো এট লিস্ট আমি রোদকে তো পেতাম,,,আই মেডলি লাভ উইথ হার।।

সাহেল ওকে ভুলে যা,,,সেটাই তোর জন্য ভালো হবে,,,,

আমি বাধ্য,,জানিস,,আমি রোদকে তোর থেকে কেড়ে হলেও নিজের করে নিতাম যদি রোদ তোকে ভালো না বাসতো।।ও তোকে ভালোবাসে,,এটা আমার জন্য বড় বাঁধা,,আর যায় হোক ভালোবাসা জোড় করে হয় না।।।আর ভালোবাসার মানুষটিকে কাঁদতে দেখতে পারার এভিলিটি রাখতেও বুকের পাটা লাগে,,আমার তা নেই।।নেভার মাইন্ড হ্যাপি থাক,,,আমার জন্যও হয়তো কেউ আছে,, রোদকে ভুলিয়ে দিতে ঠিক চলে আসবে,,,(মুচকি হেসে)

আই অলসো থিংক সো,,,আচ্ছা বাই রে,,রোদ একা আছে।।

ওহ ওকে,,যা বাই,,আমি কিন্তু রিভেন্জ নিবো,, দেখিস তোর ছেলে নির্ঘাত আমার মেয়ের প্রেমে পড়বে,,তখন আমি ভিলেন হবো,,,হাহাহাহা এতো সহজে ছাড়ছি না।।।

সাহেল ভাইয়ার কথায় উনাদের সাথে আমারও হাসি পেয়ে গেলো,,,আমিও দোয়া করি,,কেউ একজন আসুক উনার জীবনে,,,তারপর না হয় আমার ছেলের কথা চিন্তা করে দেখা যাবে।।।


রাত প্রায় ১১ টা বাজে,,আমার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে আপুর কাছে যেতে,,কতোদিন রাত জেগে গল্প করা হয় না।।মাঝরাতে উঠে বসে আপুকে ডেকে তুলে বলা হয় না,,,”এই আপু,, ঘুমাইছো??চলো গল্প করি।।”আপুও সদ্য ঘুম ভাঙা গলায় বিরক্তি দমন করে বলতো,,,”রোদ প্লিজ ঘুমাতে দে”।।আমি আবারো বলে উঠতাম,,,”আমার পেটে গল্প কিলবিল করছে,,তুমি কতোদিন পর আসো চলো গল্প করি।”ছোট বোনের মন ভাঙার মতো মন আপুর না থাকায় ঘুম ঘুম চোখে বলতো,,”আচ্ছা বলে যা,,আমি শুনছি।” আজও আপুকে বেশ বিরক্ত করতে ইচ্ছে করছে।।ইচ্ছে যখন করছে তো বসে থেকে লাভ কি??পা টিপে টিপে চলে গেলাম আপুর রুমে,,,ঢুকেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম,,,ভাইয়া আর আপুর রোমান্স টাইম চলছিলো,,এতো রাতে রোমান্স চলাটায় স্বাভাবিক,,,বরং আমার এখানে আসাটা অস্বাভাবিক,,,, সবাই তো আর শুভ্র না যে রাত দুপুরে বই আর খাবার নিয়ে টর্চার করতে চলে আসবে,,অবশ্যই রোমান্স করবে।।।

উহুম উহুম,,,কি গো ভাইয়া রোমান্স চলে??

আমার কন্ঠ শোনে বিদ্যুৎ বেগে ভাইয়া আপুর কোল থেকে উঠে গেলে,,,বেচারা একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে বাট আমার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে।।কোনো রকম মাথা চুলকে বলে উঠলেন,,,”আরে রোদ??আসো আসো।”

আপনি না বললেও আসতাম,,,(দাঁত কেলিয়ে)

ভাইয়াও মুচকি হেসে বিছানায় বসে পড়লেন,,,আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,”জানিস তোকে খুব মিস করছিলাম,,কতোদিন একসাথে থাকি না।।”

আমিও,,তোর এতো গল্পগুলো পেটে কিভাবে রেখেছিস??ফেটে যায় না পেট??(পেটে গুঁতো দিয়ে)চল,,আজ তোর সব গল্প শুনবো,,,

সত্যি??(খুশি হয়ে)

হুমম,,,

তাহলে ভাইয়া??আপনি আপনার ভাইয়ের কাছে চলে যান,,আমি আমার বোনের কাছে ঘুমাবো,,,(দাঁত কেলিয়ে)

মানে কি??(করুন গলায়)

ভাইয়া,,,দেখুন আমি কিন্তু আপনার একমাত্র ফুপাতো বোন,,আরেকজন তো বউ হয়ে গেছে,,,আবার একমাত্র শালী,,,একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ,,আপনার হবু বাচ্চার একমাত্র খালামনি এবং একমাত্র কাকিমনি,,,,আমি এত্তো স্পেশাল একটা মানুষ আর আপনি আমার জন্য এটুকু করতে পারবেন না???(মুখ গোমড়া করে)

ভাইয়া পড়েছেন ফেসাদে,,হ্যা আমার কথা ১০০%ঠিক,,কিন্তু বউ ছাড়া যে উনার ঘুম হবে না এটাই ঠিক।।কি বলবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না,,ঠিক তখনই দরজা থেকে আমার গুণোধর স্বামী বলে উঠলেন,,,

সেটাই তো,,,বউ মনি?? আমি তোমার একমাত্র মামাতো ভাই,,,অন্যজন তো তোমার বর হয়ে গেছে,,আবার একমাত্র দেবর,,একমাত্র ছোট বোনের একমাত্র জামাই,,,তোমার হবু বাবুর একমাত্র খালুমশাই এমনকি একনাত্র চাচ্চু,,,,সো আমার ব্যাপারটাও দেখো,,আমিও কম স্পেশাল না,,,,(বিছানায় বসতে বসতে)

আপনার কি চায়??(ভ্রু কুঁচকে)

কি আর চাই??বউ চাই,,,বউমনি আমার বউটাকে দিয়ে দেও,, নিয়ে চলে যাই,,,আমার জন্য এটুকু তো করতেই পারো,,,

হ্যা সেই ভালো,,,তুই তোর বউ নিয়ে যা,,আমি বরং আমার বউ,,,

আপনি চুপ করেন দুলাভাই,,,আমি কোথাও যাচ্ছি না,,,আমি আপুর সাথেই ঘুমাবো ব্যস(সোজা হয়ে বসে)

ওকে তাহলে আমিও এখানেই ঘুমাবো,,,,

হোয়াট???পাগল হয়ছেন আপনি??(অবাক হয়ে)

কেন??এখানে আমার বউ,, ভাবি,,বোন সবই আছে,, সো এখানে থাকার পুরো অধিকার আমার আছে,,,,(আমার গাঁ ঘেষে বসে)

তাহলে আমিও এখানে থাকবো,,,এখানে আমার বউ,,বোন,,শালী,,ভাইয়ের বউ,,ভাই সবই আছে,,সো আমার তো থাকার অধিকার বেশি বেশি আছে,,,(আপুর গা ঘেঁসে বসে)

অল দ্যা বেস্ট ভাইয়া,,,(দাঁত কেলিয়ে)

থেংকিউ,,

এদের পাগলামোতে হাসবো না কাঁদবো উফফপ,,আপুও দেখি মুখ টিপে হাসছে,,হোয়াট দ্যা হেল,,,

আপনি যাবেন এখান থেকে??(রাগী গলায়)

হুম যাবো তো,,,

তো যান না,,,বসে আছেন কেন???(চিৎকার করে)

ওকে,,,

বলেই উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলেন,,,”আরে আরে,,,আমি কেনো??”।।”তুমি কারন আমি গেলে তোমাকেও যেতে হবে,,,বিয়ে কি তোমার বোনের সাথে ঘুমানোর জন্য করেছি নাকি??”

দেখুন এটা একদম ঠিক না,,নামান বলছি,,,

নামাবো,,একদম বিছানায়,,,

আপনি আসলেই খারাপ,,,থাকবো না,,,কালই আব্বুর কাছে চলে যাবো,,(মুখ ফুলিয়ে)

বলেছি না,,,একবছর বাপের বাড়ির নাম মুখে নিবা না,,,

শুধু মুখে না,,,সশরীরে সেখানে চলে যাবো,,,মামুকে বলে চলে যাবো,,,দেখি আপনি কিভাবে আটকান,,,

কথাটা বলা শেষ করার সাথে সাথে উনি আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে গলায় কামড় দিয়ে দিলেন,,,তাও একটা না তিন তিনটি,,,

আউচ,,,আআআআআআআআহহহ,,,, আপনি রাক্ষস নাকি??কামড়াচ্ছেন কেন???(রাগী গলায়)

এবার যাও বাপের বাড়ি,,,ঘর থেকেই বের হতে পারবে না,,পুরো গলায় কামরের দাগ,,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)

আমি মামুকে বলে দিবো,,,(মুখ ফুলিয়ে)

কি বলবা??যে তোমার ছেলে রাতে আমায় কামড় দিয়েছে,,,হা হা হা,,,বাবাকে বলতে পারবে সিউর??(চোখ টিপে)

আপনি আসলেই অসভ্য,,,জানেন কতোটা পুরাচ্ছে???(কান্না করে দিয়ে)

আরে,,,এটুকুর জন্য কান্না করা লাগে??ছিচঁকাদুনে,,,

আমি ছিঁচকাঁদুনে?? বেশ তো,,দেখাচ্ছি মজা,,আপনার কি মনে হয়,,,আমি ঘরে বসে থাকবো আর আপনি দাঁত কেলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন তা আমি হতে দিবো???নো নেভার,,,

কথাটা বলেই উনার কলার টেনে,,,একটা কামড় বসিয়ে দিলাম উনার ঠোঁটে,,,এখন বুঝো,,?

#চলবে
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:36


তুই কি জানিস তোর একটি কথা শোনার জন্য এখন আমি সারাটাদিন ছটফট করি,,,,তোর মুখে হাসি ফোটানোর লোভে আজ আমি কতোটা লোভী।মাঝরাতের অবাধ্য অশ্রুটার সাথে তুই মিশে আছিস কতো নীরবে।বুকের চিন চিনে ব্যাথাটাও কতো নির্মমভাবে মনে করিয়ে দেয় তোর কথা।।কিন্তু,,,, তুই??কখনো অবসরেও কি ভাবিস আমার কথা?তোর জন্য স্বার্থপর এই আমার ঠোঁটের ব্যালকনির হাসিটা কি তোকে ভাবায়?উত্তরটা আমি জানি।।পরিচিত উত্তরের হাতছানি যে কতো নির্মম,,, কতো নিষ্ঠুর!! ঘুম ভাঙা চোখে সোনালি আলোয় তোকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো বড্ড অসহায়,,,,

মন খারাপ??

ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম,,,পেছন থেকে উনার কন্ঠ কানে আসায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই বলে উঠলাম,,,,,,,

নাহ তো,,মন খারাপ না,,,কিন্তু মনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে দিন দিন।।।(মুচকি হেসে)

মানে???(ভ্রু কুঁচকে)

নাথিং,,,

এতো রাতে একা দাঁড়িয়ে আছো যে??

রাতের আকাশ দেখছিলাম,,একটা আকাশের কতো রূপ,,কতো রং।।আমাদের জীবনটাও আকাশের মতো কখনো সাদা,,কখনো নীল আবার কখনো ঘন কালো,,,

হুমম,,,তো আজ হঠাৎ এতো কাব্যিক কথাবার্তা??দাঁড়িয়ে শুনছিলাম,,,তোমার বলা প্রথম কথাগুলো,,,

বিনা অনুমতিতে শুনছিলেন??এবার পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত আপনাকে,,,(মুচকি হেসে)

তাই??দোষ যখন করেছি,, পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে,,,তো বলুন ম্যাডাম,,কি পানিশমেন্ট দিতে চান,,,?

শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর,,(আকাশের দিকে তাকিয়ে)

কি প্রশ্ন??

জাস্ট ইমাজিন যদি নীলিমা আপু কোনো ভাবে আবার আপনার লাইফে বেক করেন তো কি করবেন??(ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে)

উনি শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন,,উনাকে চুপ থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,,”নিশ্চয় আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিবেন??দেওয়ারই কথা প্রয়োজন যে ফুরিয়ে যাবে।”

উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,,সে দৃষ্টি কি বলতে চাইছে আমি জানি না,,,,আজ আমি নিজের উপর বড্ড বিরক্ত,,উনার চোখের ভাষা বোঝার সদিচ্ছা তিল পরিমান নেই আজ,,,আমার চোখ দুটো রাতের আকাশ দেখতে ব্যস্ত,,,,”যদি কখনো প্রয়োজনটা ফুরিয়ে যায়,,, বলবেন আমায়।।ভয় নেই,,পরগাছার মতো লেপ্টে থাকবো না,,,পা বাড়াবো অজানার পথে”…

তুমি আমায় এতোটা,স্বার্থপর ভাবো রোদ??

নাহ,,আমি নিজেকে প্রয়োজনহীন ভাবি ব্যস,,

রোদ?নীলির যদি ফিরে আসার ১% চান্সও থাকতো তবু আমি তোমায় বিয়ে করতাম না,,,তখন আমার কাছে বাহানা থাকতো,,হয়তো সে ফিরে আসবে।।।কিন্তু নীলি আসবে না।।আর যদি তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো আমি কি চাই??তাহলে বলবো,,আমি এখন আর চাই না ও ফিরে আসুক।।।না,,এর মানে এই নয় যে ভালোবাসা কমে গেছে,,তা নয়।।কিন্তু বাস্তবতা আবেগের কাছে হেরে যায় বারবার,,,নীলি ফিরে এলে না তুমি সুখী হতে পারবে না আমি,,,না নীলি।।।তিনটি বিক্ষিপ্ত জীবন নিয়ে আমাদের মরে মরে বাঁচতে হবে,,,,ভালোবাসার মানুষকে কষ্টে দেখতে পারার জন্যও অসীম সাহস আর ধৈর্য লাগে,,যা এখন আর অবশিষ্ট নেই,,,,তাই আমি তোমাদের দুজনের কারো চোখেই জল দেখতে পারবো না।।।তোমরা দুজনই আমার জীবনের অংশ,,,অস্তিত্বে মিশে আছো।।নীলি আমার প্রতিটি অনুভূতিতে মিশে আছে আর তুমি আমার প্রতিটি নিশ্বাসে।।। নীলিকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি আমি,,,কিন্তু তোমাকে ছাড়া নতুন করে বাঁচতে শিখা আমার পক্ষে সম্ভব না,,,সেটা নীলি আমার পাশে থাকলেও না।।।তোমাকে আমার চাই রোদ,,,প্রতিটি মুহূর্তে চাই,,,কোনো কারণ ছাড়াই চাই।।।

আমি উনার কথা শুনছি,,মন দিয়েই শুনছি।।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিত।।চিন্তাশক্তিটা কাজে লাগছে না,,,সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে,,,,হঠাৎই একটা ঠান্ডা হাতের পরশ পেলাম যে হাতটা আমাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে,,,কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ,,,,আমি শুধু নির্বাক দ্রষ্টার মতো দাঁড়িয়ে আছি,,,

দুদিন যাবৎ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘুরছি,,,,জুলাই মাসের চরম গরমে ব্যাপারটা খুবই বিরক্তকর।।প্রথম প্রথম সবার হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলেও এখন সব স্বাভাবিক।।।সবার কাছে এক উত্তর” ঠান্ডা লাগছে তাই ওড়না পেঁচিয়েছি।।”যদিও আমার ধারনা তারা আমার কথাটি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে নি,,,,তবু প্রশ্নের কবল থেকে বেঁচেছি সেটাই অনেক।।।শুভ্র প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বেরুয়নি,,, যা একটু বেরিয়েছে তা মামানি ঠিক সামলে নিয়েছে,,,সবার মধ্যে শুধুমাত্র মামানিই পুরো ব্যাপারটা জানে,,,সেদিন সকালে হঠাৎই মামানি রুমে ঢুকে যায়,,,আর আমাদের এই অবস্থা দেখে চরম অবাক হয়ে প্রথম যে কথাটি বলে তা হলো,,,”তোরা কি বেবি প্ল্যান করছিস?” উনার কথায় যে আমরা অস্বস্তির কোন পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিলাম শুধু আমরা জানি।।শাশুড়ীর মুখে কি এসব মানায় বলুন??কিন্তু আমার শাশুড়ী মা সেসবের ধারে কাছে নেই,,,তার কথা সোজাসাপ্টা,,,, “আরে,,লজ্জার কি আছে??মা কে বলবি না তে কাকে বলবি??” মামানির এই কথায় শুভ্র কতটুকু লজ্জা পেয়েছিলেন জানি না,,তবে কাশতে কাশতে যে যক্ষা রোগীর পদবীটা ছিনিয়ে নিতে চাইছিলেন,, সে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম,,

#চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে