তৈমাত্রিক পর্ব-০১

0
2055

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ০১

আজ আমার প্রেমিকের সাথে আমার বোনের বিয়ে। আমার সেই বোনের বিয়ে যাকে আমি নিজের থেকেও কয়েক গুণ বেশি ভালোবাসি। হয়তো তার সামনে আমার নিজের ইচ্ছে গুলো খুবই তুচ্ছ তাই এতো বড়ো একটা সিন্ধান্ত আমি নিজেই নিয়েছি। আমার প্রেমিক আয়ুশ নামক ছেলেটি যে এখন আমার বোনের বর, তাকে যে আমি কম ভালোবাসি বা আমার জন্য তার ভালোবাসায় যে কমতি ছিলো তা কিন্তু না। তবে না চাইতেও সে এখন আমার প্রাক্তন। তার সাথে আমার কোন ব্রেকাপ হয়নি, হয়নি কোন বিচ্ছেদ। তবুও ইচ্ছেকৃত ভাবেই সম্পর্ক টাকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিতে আমি। আমাকে এখানে স্বার্থপরের মতো কাজ করতে হয়েছে আমার। যার ভাগ্যে নিজের নাম লিখতে চেয়েছিলাম তার ভাগ্যে নিজের বোনের নাম তুলে দিতে হলো আমায়। আমি কখনোই চাই নি যে আমাদের সম্পর্ক টা এমন একটা মোড়ে ঘুরুক। কিন্তু আমরা যা কখনো কোনোদিন কল্পনা পর্যন্ত করি না পরর্বতীতে আমাদের জীবনে ঠিক তাই হয়। এই সব কিছুর মাঝে আমি কিছু উপাধিও পেয়েছি যেমন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক। আর হ্যাঁ আমি যা করেছি তার জন্য এই খেতাব গুলো পাওয়া অনেক টাই স্বাভাবিক। খুব সুন্দর মানিয়েছে আমার বোন এবং তার বর কে। নিজের বুকের ওপর আকাশ সমান কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখের কোণে নিছক এক চিলতে হাসি রেখে এই সবকিছুই দেখে যেতে হচ্ছে আমাকে। কারণ কষ্ট গুলো যে একান্তই আমার, শুধুই আমার।

এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবছিলাম ঠিক তখনই আমার বোনের জোর চিল্লিয়ে ডাক আসে।

তনু;; এইই মেহরু তুই ওখানে কি করিস রে, জলদি এদিকে আয়।

আমাকে স্টেজের ওপরে ডাকলে আমি হেসে হাতের ইশারায় তনু কে মানা করে দিই। কারণ সেখানে আমার অনেক পূর্বপরিচিত ব্যাক্তি টি বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বা অধিকার দুটোই আমি হারিয়ে ফেলেছি। নিজেকে এখন বড্ড অপরাধী লাগে। আমি এখনো সেই আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি। আর তা দেখে তনু তেড়ে এলো আমার দিকে। এসেই আমার হাত ধরে টানতে লাগলো।

তনু;; মানে কি মেহরু এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, আরে আমার বিয়ে তোর বোনের বিয়ে। কোথায় সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখবি তা না। এভাবে এক জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস।

মেহরাম;; আরে না মানে থাকি না এখানেই। সবাই তো আছিই।

তনু;; একদম না আমার সাথে স্টেজে থাকবি তুই। আফটার অল তোর জন্যই তো আমার বিয়ে টা হচ্ছে।

তনুর এই কথা টা শুনেই আমার বুকের মাঝে কেমন এক মোচড় দিয়ে উঠলো।

তনু;; আরে চল, চল তো তুই। (আমার হাত ধরে টেনে)

আমি লাগাতার তনু কে মানা করেই যাচ্ছি। কিন্তু সে আমার কথা শুনার পাত্রি না। তাই আমাকে এক প্রকার টেনেই সে নিয়ে গেলো। স্টেজে যেতেই আয়ুশের সাথে আমার একদম চোখাচোখি হয়ে গেলো। আমার সাধ্যি নেই সেই চোখে তাকিয়ে থাকার তাই দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললাম। কেন যেন মনে হলো যে আয়ুশ আমার এই অবস্থা দেখে হাসছে। আমি সোজা মাথা নুইয়ে তনুর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। ততক্ষনাৎ একজন ক্যামেরাম্যান এগিয়ে এলো হাতে বড়ো একটা ক্যামেরা নিয়ে। শুরু হলো ছবি তোলা। এগুলো আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর লাগছে। আমি অনেকবার তনু কে বলেছিও যে আমি চলে যাই এখান থেকে আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু তনু আমাকে কোনমতেই এখান থেকে যেতে দিচ্ছে না। এবার তনু হঠাৎ বলে ওঠে…

তনু;; মেহরু তুই এদিকে আয়।

এই বলেই তনু আমাকে নিয়ে তাদের মাঝে দাড় করিয়ে দিলো। অর্থাৎ তনু আর আয়ুশের মাঝে। এবার আমি তনুর দিকে তীর্যক নয়নে তাকাই। তনু আমার দিকে একগাল হেসে তাকায়। কিন্তু এবার আর আমি পারছি না। আমার ঠিক ডান পাশেই আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে। সত্যি বলতে এখন আমার নিজেকে তাদের মাঝের কাটা মনে হচ্ছে কাটা। আমার চোখের কার্নিশে জল জমতে শুরু করে দিয়েছে এখন। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব দমিয়ে রাখছি। আমি তাদের মাঝে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনই ক্যামেরাম্যান বলে ওঠে “ম্যাম প্লিজ মাথা তুলে হাসুন”। আমি সবার অগোচরে চোখের পানি টুকু মুছে সামনের দিকে তাকালাম। মুখে কৃত্রিম হাসির রেশ টেনে নিলাম। আমার পাগলি বোন টা বড়ো এক হাসি দিয়ে তার গাল আমার গালের সাথে লাগিয়ে নিলো। এখন যেন আমি প্রকৃতপক্ষেই হেসে দিলাম। আমার বাম হাতটা তনুর মাথার পাশে ধরে নিলাম। তার মাথার সাথে আমি আমার মাথা টা ঠেকিয়ে দিলাম। সত্যি এবার হাসছি আমি। আর ক্যামেরাম্যান ছোট্ট একটা ক্লিক করে আমাদের তিনজনকে একই ফ্রেমে বন্দি করে দিলো। আমি একটা বারের জন্যও আয়ুশের দিকে তাকায় নি। ছবি তোলার সাথে সাথে আমি সেখান থেকে এসে পরি। তনু আটকানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি একটু তাড়া দেখিয়ে এসে পরেছি। চলে গেলাম বাড়ির অন্য এক জায়গায়। মূলত এটা বাড়ির পেছন রাস্তা। এখানে হাতে গোনা দু-একটা মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই বাড়ির ভেতরে। আমি বাইরে এসেই জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে লাগলাম। যেন অনেক রাস্তা দৌড়িয়ে এসেছি। পাশেই দেখতে পেলাম পানির বোতল তা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম। সেখানে খানিকক্ষন থেকে আবার বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালাম। সবকিছু দেখতে লাগলাম আমি। এটা বিয়ে বাড়ি। চারিদিকে মানুষের কত্তো আনাগোনা। সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত। যেন ছুটে চলেছে। সবার মুখেই হাসির শেষ নেই। একটা জমজমাট ভাব। ভাবতেই আমার হাসি পাচ্ছে যে যেই বিয়েবাড়ি টা আমার হওয়ার কথা ছিলো তা এখন আমার বোনের।

[ওহহ, বলাই হলো না। আমি মেহরাম আফরিন আর আমার বোন তনু আশফিয়া। আর এখন যে বর সেজে আছে সে আয়ুশ আহমেদ। তার আর আমারও একদিন ভালোবাসার ছোট্ট এক দালানকোঠা ছিলো। কিন্তু তা বাধ্য হয়ে ভাংতে হয়েছে। আয়ুশ অনেক ভালো আর বড়ো পরিবার থেকে বিলং করে। দেখতে শুনতে অনেক ভালো। আমাদের যৌথ পরিবার। মূলত আমি আমার বাবা-মা এই তিনজনই। তার ওপর আমার চাচা-চাচি, তনু আর তার একটা ছোট ভাই আছে। আমার দিদুন আছে। দাদুভাইকে আমি কখনো দেখি নি। তনু আমার চাচাতো বোন। কিন্তু কখনো মনেই করিনি। আমি সবসময় বলি যে আমরা তিন ভাই বোন আমি তনু আর আকাশ মানে তনুর ভাই। তনু আর আমার মাঝেও তেমন তফাৎ নেই। মাত্র দুই-তিন মাসের। আমরা সমবয়সী। তনু আমার জান, আমি আমার জীবনে সবথেকে বেশি দুইজন কেই ভালোবাসি। এক আমার মা আর দুই তনু। একই ক্লাসেও পরি আমরা। অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে। তবে তনুর আর আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো বাইরের শহরের পড়ার। আর ভাগ্যক্রমে আমাদের দুইজনেরই ঢাকার একই কলেজে চান্স হয়। আর সেখান থেকেই সবকিছুর শুরু হয়।]

.
.

আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর সেখান থেকেই দেখতে পেলাম তনু আর আয়ুশকে। তনুর মুখের ঝলকানো হাসি টাই বলে দিচ্ছে যে সে কি পরিমাণ খুশি আজ। তনু অয়ুশকে অনেক ভালোবাসে। আর নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে হলে বুঝি এমন খুশিই হয়। যে খুশি আমার ভাগ্যে কখনোই ছিলো না। আয়ুশের মুখেও হাসি চিকচিক করছে। আমি ঠিক বুঝলাম না যে আয়ুশের এই হাসি মিথ্যে না সত্যিকারের। আমি ধীর পায়ে আবার বিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালাম। বুকের ভেতরে একশ এক হাতুড়ি পেটাচ্ছে আমার। সব কিছু দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে আমার। গলা দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে তাদের দেখছি। কতোই না খুশি লাগছে তাদের। আমি মন ভরে তাদের দেখছি। আর এরই মাঝে কখন যে আমার অবাধ্য চোখ দুটো ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে আমি তা জানি না। হুট করেই আবার আমার ডাক আসে। দ্রুত চোখ দুটো মুখে ফেলে পেছনে তাকালাম। দেখি আমার চাচি দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখেই হেসে দিলাম। আমি গিয়ে চাচিকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

মেহরাম;; আরে চাচি তুমি এখানে কি করছো, আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। কোথায় সেখানে গিয়ে মেয়ের সাথে থাকবে। এখানে কি করো তুমি?

আতিয়া (আমার চাচি);; মেহরাম (আমাকে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে দিলো)

মেহরাম;; বলো চাচি।

আতিয়া;; মা তুই খুশি তো তোর বোনের এই বিয়েতে?

চাচির এই কথায় যেন আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না। কি যেন মনে করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম চাচিকে। চোখের পানি গুলো তো লুকাতে হবে তাই না। এগুলো যে বড়ো বেইমান।

মেহরাম;; অনেক অনেক বেশি খুশি চাচি, অনেকটাই বেশি। (জড়িয়ে ধরে আস্তে করে নিজের চোখের পানি টা মুছে ফেললাম)

কয়েক সেকেন্ড পর চাচিকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালাম।

মেহরাম;; চাচি আমার খুশির কথা ছাড়ো তুমি একটা বার তনুর দিকে তাকিয়েছো।

চাচিকে নিয়ে সামনে স্টেজের দিকে তাকালাম।

মেহরাম;; তনুর মুখের হাসি টা দেখো। একদম ফুটছে।

আতিয়া;; হ্যাঁ রে মা।

মেহরাম;; এতো খুশি হওয়ার পরও তুমি বলছো আমি খুশি কিনা। এটা কোন কথা (চাচির দিকে ঘুড়ে)

চাচি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে চলে গেলেন। চলে যেতেই আমি আমার চারিপাশে একবার চোখ বুলালাম। চারিদিকে খুশির সীমা নেই কিন্তু আমার মনে যে ঝড় বয়ে চলেছে তা থামার নাম নেই। আমি একবার তনু আর আয়ুশের দিকে তাকালাম। বেশ মানিয়েছে দুজনকে। আমি আয়ুশকে বেহায়ার মতো আরেকবার মন ভরে দেখে নিলাম। কেননা আর তো তাকে দেখার অধিকার নেই আমার। অনেক বেশি সুন্দর লাগছে আয়ুশকে বর বেশে। আমি তাকিয়ে ছিলাম তখন হুট করে আয়ুশও আমার দিকে তাকায়। আমি জলদি করে হেটে নিজের রুমে চলে যাই। ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিচে বসে পরি। কান্নাও যেন এখন আর আসছে না। ভেতরে থেকে শুধু বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়ছি। সেভাবেই বসে থাকলাম। বাইরে থেকে গান বাজনার, সবার চিল্লাপাল্লার তীব্র শব্দ কানে ভেসে আসছে। এভাবে ঘরের ভেতরে যে কতোক্ষণ ছিলাম জানি না।

.
.

বেশ সময় পর আমার দরজাতে কারো টোকা পরে। আমি বুঝতে পারলাম যে হয়তো বাইরে আমাকে খুঁজে না পেয়ে এখানে এসেছে। চোখের পানি গুলো খুব নিখুঁতভাবে মুছে মুখে হাসি আনলাম। যেন কিছুই হয়নি। গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। খুলেই দেখি আকাশ।

আকাশ;; মেহরু আপু তুমি এখানে কি করো আরে চলো। তনু আপুর তো বিদায় এখন। তনু আপু তোমাকে খুঁজছে।

মেহরাম;; বিদায় মানে, চল দেখি।

আকাশের কথা শুনে আমার আত্মা ধক করে উঠে। মানে তনুর বিদায়, এখন সে আমাকে রেখে চলে যাবে। বাড়িতে একা হয়ে যাবো আমি। ভাবতেই কলিজা শুকিয়ে আসছে আমার। তাই দ্রুত আকাশের হাত ধরে বাইরে এসে পরলাম। এসেই দেখি বাইরে অনেক মানুষ। তনু চাচি আর আমার আম্মুর হাত ধরে কাদছে। সে সবার মাঝখানে। তার কিছুদূরেই আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে। আমি ধীর পায়ে তনুর কাছে গেলাম। আমাকে দেখতে পেরেই তনু ভীড় ঠেলে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অঝর ধারায় কেদে দিলো।

তনু;; মেহরু আমি যাচ্ছি রে। আমি চলে যাচ্ছি।

এই টুকু বলেই আর কিছু বললো না তনু। সে কাদছে অনেক। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে থাকলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি আমার পরিবারের সবার চোখেই পানি। বাবা আর চাচ্চু কোন মতে নিজেদের সামলাচ্ছে। দিদুন কে আম্মু ধরে রেখেছে নয়তো শরীর খারাপ করবে অনেক। আমি কেন যেন এগুলো সহ্য করতে পারলাম না। তাই মাথা তুলে তাকিয়ে তনু কে ভালোভাবে দাড় করালাম নিজের সামনে।

মেহরাম;; আচ্ছা এটা কি হচ্ছে হ্যাঁ। তনু এটাই কি কথা ছিলো তোর আর আমার হুমম। বলেছিলাম না যে বিয়েতে কোন কান্নাকাটি কিছুই হবে না। তোর বিয়ে সবথেকে আলাদা হবে। আর কতো কষ্ট করে মেকাপ করেছিস, সেজেছিস বল কাদলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে না। তখন তো তোকে একদম পেত্নির মতো লাগবে। আর তোর জামাই ভাগবে। আর কাল তো রেসিপশন পাগলি দেখা তো হবেই বল।

আমার এই কথা শুনেই তনু ফিক করে হেসে দেয় কাদার মাঝেই। আমার হাতে আলতো ভাবে দু- একটা চড় দিয়ে বলে ওঠে…

তনু;; হারামি তুই খুব খারাপ, কাদার সময় যে করেই হোক আমাকে হাসাবিই।

মেহরাম;; আমার বোন কে যে কাদাবে তাকে মেরে ফেলবো আমি। এবার একটু হাস পেত্নি (তনুর গালে ধরে)

তনুও হেসে দিলো। সাথে সবাই। সবার সাথে কথা বার্তা বলে এবার সময় এলো তনুর চলে যাওয়ার। গাড়িতে উঠবে তনু। তখনই তনু আমাকে ‘মেহরু’ বলে ডাক দেয়। আমি এবার এগিয়ে গিয়ে তনুকে আর কিছু বলি না সোজা আয়ুশের কাছে চলে যাই। তার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলি…

মেহরাম;; আমার বোনকে সবসময় হাসি খুশি রাখবেন। তার চোখ দিকে যেন কখনোই অশ্রুবিন্দু না ঝরে। আর আপনার জন্য তো কখনোই না।

আয়ুশ;; নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি তনুকে এতো হ্যাপি রাখবো যে সে আপনার কথা ভুলেই যাবে। (কড়া গলায়)

আমি সাথে সাথে আয়ুশের কাছ থেকে সরে আসি। আর এটাই ছিলো আয়ুশের সাথে আমার শেষ কথা। তনু আর আয়ুশ গাড়িতে ওঠে চলে যায়। সবাই ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরেও চলে যায়। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে থাকি বাইরে। যতক্ষণ না তাদের গাড়ি চোখের আড়াল হয় ততক্ষণ আমি সেদিকে তাকিয়েই ছিলাম। একধ্যানে তাকিয়েই আছি আমি তাদের যাওয়ার পানে। তখন আমি আমার হাতের কারো টান অনুভব করি। তাকিয়ে দেখি আকাশ কাদো কাদো হয়ে আছে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। তারপর ভেতরে চলে যাই।

বাইরের সবাইকে বলে আমি আমার ঘরে চলে যাই। ভারি কাপড় ছেড়ে একটা সাদা সালোয়ার সুট পরে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার ওপর ধপ করে নিজের ক্লান্ত শরীর টাকে এলিয়ে দিলাম। আমি সত্যি অনেক ক্লান্ত মানসিক ভাবেও। বাইরে হঠাৎ বিকট বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ আসে। আমি আমার রুমের জানালা টা খুলে দেই। ফট করে এক দমকা বাতাস আমার মুখে-গায়ে আছড়ে পরে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আলতো করে চোখ মেলে বাইরে তাকাই। আকাশ অনেকটা মেঘলা। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর এরই মাঝে ঝিরঝির করে বৃষ্টি নেমে এলো। আমি ইচ্ছে করেই রুমের লাইট অফ করে দিলাম। জানালা টা খুলে দিয়ে তার পাশে বসলাম। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে আমার আধার ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠছে। টুপটাপ করে চোখ বেয়ে নোনাজল পরছে। তাদের মুছে ফেলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। ঝরুক না কিছু অশ্রু। এই অসময়ের বৃষ্টি যেন আমার কষ্ট টাকে আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বেশ বুঝলাম যে আজ আমার রাতের ঘুম হারাম। বাইরে শূন্যে তাকিয়ে আছি, আর চোখে কান্নার ধারা। এতো কিছু হয়ে যাবে ভাবিনি আমি। সময়ের চাকা ঘুড়িয়ে আমাকে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তার ধারণাই কনোদিন ছিলো না আমার। ডুব দিলাম আবার সেই পুরনো অতীতে আমি।

.
.

🍂চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে