তৃণশয্যা পর্ব-০৪

0
1008

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব{পচা কুমড়ো অপারেশন}

সাপের ভয়ে গাছ দিয়ে পালাতে ধরে গাছে ঝুলে আছে চারুকে দেখতে আসা নিষ্পাপ ছেলেটা।না পারছে নামতে,না পারছে উঠতে।এদিকে বেলকনি থেকে সাপটা তাকিয়ে আছে তার দিকে।মোবাইল বের করে ভিডিও করছে আর হাসাহাসি করছে চারু আর রিমি।একপর্যায়ে ধপাস করে পড়ে যায় ছেলেটা।দৌড়ে বেলকনিতে যায় রিমি আর চারু।ছেলেটা পড়ে গিয়ে যে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ করছে না।সে পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে দৌড়াচ্ছে।রিমি আস্তে করে সাপটা তুলে নিয়ে গিয়ে বাক্সতে ভরে রাখে।এবার চারু গিয়ে বসে পড়ে বিছানার উপর।রিমি খানিকটা দৌড়াতে দৌড়াতে যায় নিচে বসার ঘরে।গিয়ে হাপানোর অভিনয় শুরু করে সে।তাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে তার মা জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কিরে,এভাবে হাপাচ্ছিস কেন? ‘

রিমি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

—‘ মা,দুলাভাইয়া বেলকনি দিয়ে পালিয়ে গেছে।আমরা তাকে এত আটকানোর চেষ্টা করেও পারলাম না।খালি দৌড়াচ্ছে আর সাপ সাপ বলে চেচাচ্ছে।অথচ ঘরে সাপ কেন,সাপের বংশও নেই। ‘

রিমি এই কথা শুনে ছেলেটার বাবা-মা নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে।তারপর ছেলেটার বাবা মাথা নিচু করে বলে,
—‘ আমরা সত্ত্যিই লজ্জিত।ছেলেটা যে এরকম কিছু করবে ভাবিনি।আজ আমরা উঠছি। ‘
এই বলে তারা কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে যায়।রিমি মা আর চারুর বাবা-মা পরস্পরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে।একপর্যায়ে চারুর মা বলে ওঠে,

—‘ চলোতো একটু উপরে যাই দেখি কি হয়েছে? ‘

তার এই কথায় সবাই উঠে দাঁড়ায় উপরে যাওয়ার জন্য।রিমি আগাচ্ছে আর ভাবছে এই মুহুর্তে যদি চারু খুশিতে নাচানাচি করে আর খালা-খালু যদি তা দেখে তাহলে শেষ।রিমি এসব ভাবছে আর এগোচ্ছে।

হঠাৎ চারু সিড়িতে শব্দ শুনতে পায়।তারাতারি দরজায় গিয়ে দেখে দলবেধে উপরে উঠছে সবাই।চারু কি করবে ভেবে পায় না?হুট করে তার মাথায় একটা বুদ্ধির আগমন ঘটে।চারু নিজের জামাটা খানিকটা এলোমেলো করে ফেলে।তারপর মুখ থেকে থুতু বের করে চোখের নিচে লাগিয়ে দেয়।তারপর শুরু করে দেয় কান্না করার একটিং..

সবাই রুমে প্রবেশ করে।সবার শেষে চোখ বন্ধ করে রুমে প্রবেশ করে রিমি।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকার পর চোখ খুলে রিমি।চোখ খুলে এক অবাস্তব দৃশ্য দেখতে পায় যা সে আশা করেনি।চারু কাঁদছে,আর তার পাশে বসে তাকে সান্তনা দিচ্ছে তার মা।রিমি অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকালে চারু রিমিকে উদ্দেশ্য করে চোখ মারে।চকিতে রিমি বুঝে নেয় এটা কি?

৮.
ছেলের বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার দেয় চারুর বাবা।রিমি আর চারু দুজনেই ভরকে যায়।ছেলেটা যদি সব বলে দেয় তাহলে দুজনেই শেষ।কিন্তু সে রকম কিছুই ঘটলো না।উল্টো তারা বলে,
—‘ আবার নাকি কালকে আসবে।এসে সব কিছু পাকা করে যাবে। ‘

এই কথাটা শুনে চারুর বাবা-মায়ের মনে সস্তি আসলেও অসস্তি দেখা দেয় চারুর মনে।তার মনের সঙ্গে রিমির মনেও দেখা দেয় একই রোগ।তৎক্ষণাত সেখান থেকে চলে যায় দুজনেই।রিমি তার রুমে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।চারু ভিতরে প্রবেশ করে খানিকটা জোরেই লাগিয়ে দেয় দরজাটা।তারপর গিয়ে বসে পড়ে রিমির পাশে।দুজনের এর মধ্যে চোখা-চোখি হলে দুজনেই হেসে ফেলে।তারপর পুনরায় গম্ভীর হয়ে চারু বলে,

—‘ একবার ভাগাইলাম আবার নাকি আসবে।এবার কি করবো বুঝতে পারছি না?তোর মাথায় কি কোনো বুদ্ধি আসছে? ‘
রিমি নিরবে মাথা নাড়িয়ে বলে,’নাহ’
এই মুহুর্তে দরজায় ঠক ঠক শব্দ হয়।চারু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।
আদনান চারুকে সড়িয়ে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর ধপ করে শুয়ে পড়ে বিছানাটাতে।রিমি অবাক হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান এবার রিমি আর চারু দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ ছেলেটা নাকি পালিয়ে গেছে? ‘

আদনানের এই কথায় রিমি আর দুজনেই মাথা নাড়ায়।আদনান এবার শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—‘ আমার মনে হচ্ছে তোরা কিছু করেছিস।নাহলে একটা ছেলে এমনি পালাবে? ‘
চারু মুখটা খানিকটা মলিন করে বলে,
—‘ আমরা কি করবো বলো?আমার ভাগ্যই এরকম। ‘

আদনান এবার উঠে চারুর সামনে দাঁড়ায়।তারপর খানিকটা শুষ্ক গলায় বলে,
—‘ মন খারাপ করিস না,কালকে তো আবার আসবে কালকে আমিও থাকবো ছেলেটার সাথে।দেখি কি করে পালায়? ‘

এই বলে আদনান ডেবিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।রিমি আর চারু দুজন দুজনের দিকে তাকায়।তারা কি ইচ্ছা করেই এই বিপদটাকে ডাকিয়ে আনলো নাকি?আদনান যদি ছেলেটার সাথে থাকে তাহলেতো তাদের প্লান খাটবে না।আবার নতুন উদ্যমে ভাবতে থাকে চারু আর রিমি।সেদিনের মতো রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়ে বাসার সবাই।চারু আর রিমি দুজনেই শুয়ে পড়ে।রিমির চোখে ঘুম আসলেও চারুর চোখে আসেনা ঘুম।অনেকক্ষন শুয়ে থাকার পরেও যখন ঘুম আসতেছেনা তখন চারু সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে যাবে।আস্তে করে উঠে ছাদের পথে রওনা হয় চারু।

ছাদে লাইট থাকার সুবাদে এই অন্ধকার রাতে আলোকিত ছাদটা।তবে একদিকে কিছুটা অন্ধকার রয়েছে।চারু ছাদের চারদিকে পায়চারি করতে থাকে।পায়চারী করার সময় চারু দেখতে পায় দোলনাতে ঘুমিয়ে আছে আদনান।বুকের উপরে মোবাইলটা পড়ে আছে।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে চারু আদনানের সামনে গিয়ে তার মোবাইলটা নেওয়ার চেষ্টা করে।হালকা একটু নড়ে ওঠে আদনান।চারু মনে করে আদনান জেগে গেছে তাই ছাদ থেকে ভো দৌড় দিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে।তারপর ঝটপট বিছানায় শুয়ে পড়ে।সাথে সাথে তার চোখে দেখা দেয় ঘুমরাজ।

৯.

সকালবেলা থেকেই বাড়ির সবাই ব্যাস্ত।এখনি ছেলেপক্ষ দেখতে এলো বলে।এদিকে চারুকে সাজানোর ভার পড়েছে রিমির উপরে।তাই চারুকে নিয়েই মেতে আছে রিমি।একপর্যায়ে ছেলেপক্ষ এসে পড়ে বাড়িতে।তাদেরকে ভিতরে নিয়ে আসে আদনান।চারুর বাবা আমজাদ সাহেব তাদের বসতে বলে।তারা বসতে বসতে বলে,আজকে বেশি দেরি করবে না।সব কিছু ঠিকঠাক করেই এখনি চলে যাবে।আদনান গিয়ে বসে পড়ে ছেলেটার পাশে।

কথাবলার একপর্যায়ে ছেলের বাবা বলে,
—‘ তো কালকে তো আপনার মেয়েকে ভালো করে দেখতেই পেলাম না।আজকেও কি দেখতে দিবেন না? ‘

আমজাদ সাহেব মুচকি হেসে বলে,
—‘ অবস্যই দেখবেন।আদনান যাওতো চারুকে নিয়ে আসতে বলো! ‘

এই আদেশ পেয়ে মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে উঠে পড়ে আদনান।রওনা দেয় রিমির রুম লক্ষ করে।সে রুমে প্রবেশ করে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ চারুকে নিয়ে যেতে বলছে। ‘
রিমি আদনানের সাথে কোনো‌ কথা না বলে চারুকে নিয়ে নিচে আসে।নিচে এসে চারুকে বসিয়ে দেয় ছেলেটার পাশে।তারপাশে বসে রিমি।ছেলেটা যে লজ্জা পাচ্ছে তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা কারো।

সব কাজ শেষ হলে তারা সবাই উঠে দাঁড়ায়।এক এক করে বিদায় নিতে শুরু করে।চারু আর রিমি দৌড়ে ছাদে যায়।প্লান অনুযায়ী ছাদে সবকিছু রেডিই আছে।যখন বের হবে শুধু মাত্র কাজটা করা বাকি।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয় ছেলের বাবা-মা আর ছেলে।তারা বের হতেই তাদের মাথা লক্ষ্য করে পচা কুমড়ো ছুড়ে মারে রিমি আর চারু।তারপর টপ করে বসে পড়ে দুজনে।আস্তে আস্তে করে রওনা দেয় নিজেদের রুমে।

এদিকে পচা কুমড়ো মাথায় পড়ায় রেগে বোম হয়ে গেছে ছেলের বাবা-মা।তাদের বাসায় ডেকে এনে এভাবে অপমান করা হচ্ছে।গা দিয়ে দুর্গন্ধ ছুটছে সবার।এমনকি একটা কাকও এসে বসেছে ছেলের বাবার মাথায়….

চলবে..ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে