তৃণশয্যা পর্ব-০২

0
1188

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#২য়_পর্ব

চারু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটা চারুর পিঠে একটা মাইর দেয়।তারপর গালটা টেনে দিয়ে বলে,
—‘ তারমানে তুই আমার সেই পিচ্চি খালাতো বোন ‘
চারু বুঝতে পারছে না ছেলেটা কি বলছে?অচেনা একটা ছেলে তাকে খালাতো বোন বলে দাবি তুলছে।ছেলেটা এবার চারুর হাত ধরে বলে,
—‘ চল আমার সাথে। ‘
এই বলে সে চারুকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।চারু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারেনা।অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে।এক পর্যায়ে চারু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করা বাদ দিয়ে দেয়।জানে চেষ্টা করেও ফল হবে না।প্রায় ৬মিনিটের মতো হাটার পর তারা এসে পৌঁছায় একটা বাসার সামনে।ছেলেটা এবার চারুর হাত ছেড়ে দিয়ে দরজায় মারতে শুরু করে।সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে চারুর খালাতো বোন রিমি।রিমি চারুকে দেখেই জড়িয়ে ধরে।ভিতর থেকে রিমির মা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ কেরে রিমি? ‘

রিমি খানিকটা চিল্লিয়ে উত্তর দেয়,’ চারু ‘
রিমি চারুর পাজামার দিকে তাকিয়ে ভরকে যায়।সে তারাতারি চারুকে ভিতরে নিয়ে যায়।চারুকে নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।তারপর সে নিজেই চারুর ব্যাগ থেকে একটা পাজামা বের করে চারুকে দিতে দিতে বলে,

—‘ আগে পাজামা চেঞ্জ করে আয় ‘

চারুও আর কোনো কথা না বলে ব্যাগ থেকে আরেকটা জামা বের করে পাজা‌মা সমেত জামা নিয়ে ওপাসরুমে প্রবেশ করে।লক্ষ্য শাওয়ার নিয়ে পরিষ্কার হয়ে বের হওয়া।
প্রায় ২০মিনিটের মতো শাওয়ার নেওয়ার পর বের হয় চারু।সে বের হয়ে দেখে রিমি বিছানায় বসে আছে।চারু গিয়ে রিমির পাশে বসে পড়ে।রিমি কিছু বলে ওঠার আগেই চারু তাকে বলে,

—‘ আমি জানি তুই কি ভাবছিস?যে জিনিসটা তোর শুরু হয়েছে ১৩বছর বয়সে সেটা আমার শুরু হয়েছে ১৬বছর বয়সে।তাইনা? ‘

রিমি চারু কথায় মাথা নাড়িয়ে বলে,
—‘ হুম,সাধারণত ১০-১৪বছরের মধ্যে শুরু হয় কিন্তু তোর ১৬কেন? ‘

চারু এবার তার মাথাটা নিচে করে বলে,
—‘ প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম।তারপর ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার বলে,আমি অতিরিক্ত চিকন হওয়ার কারনে আমার এই অবস্তা।আর আমার প্রথম হয়েছে ৩মাস আগে।এটা ছিল ৩য়।বুঝছিস। ‘

রিমি এবার হাসি মুখে বলে,

—‘ আচ্ছা এখন এসব বাদ দে।শোন কলেজ তো ১মাসের ছুটি।এবার ছুটিটা আমরা জমিয়ে কাটাবো।ভাইয়াও আজকে ফিরে আসলো।এবারের ছুটিটা অনেক মজায় মজায় কাটবে মনে হয়।কি বলিস তুই? ‘

চারু উত্তর দেওয়ার আগেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়।রিমি তারাতারি উঠে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে চারুর খালামনি আর তার গুনধর ছেলে।তাদের দেখে চারু উঠে দাঁড়ায়।চারুর খালা এসে চারুকে বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসেন।তারপর শুরু করে দেন হাউ ডু ইউ ডু।একপর্যায়ের হাউ ডু ইউ ডুর পালা শেষ হলে তিনি ডিনারের জন্য আসতে বলে সেই স্থান ত্যাগ করেন।এতক্ষন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল ছেলেটা আর রিমি।রিমি এবার তার ভাইকে বলে,

—‘ আদনান ভাইয়া,কালকে আমরা বেড়াতে যাব। ‘

চারু বুঝতে পারে তার গুনধর খালাতো ভাইয়ের নাম আদনান।আদনান একবার চারুর দিকে আরেকবার রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই তোদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের সাথে ঘুরতে বের হওয়ার। ‘
এই বলে মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি কেটে সেই স্থান ত্যাগ করে আদনান।রিমি আর চারু তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।

৪.

চারুকে নিয়ে ডিনার টেবিলে হাজির হয় রিমি।চারু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় তাদের আগে থেকেই সেখানে বসে আসে আদনান ও তার মা।চারু গিয়ে আদনানের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ে।রিমি বসে পরে চারুর পাশের চেয়ারটায়।রিমির মা সবাই ভাত দিতে শুরু করে।চারু তার খালামনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ খালামনি,খালু বাসায় নাই? ‘

তার খালা মনি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

—‘ তোর খালু কয়েকদিনের জন্য ঢাকা গেছে। ‘

তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে।খাওয়ার শেষপর্যায়ে চারু অনুভব করে কেউ তার পায়ের মধ্যে সজোড়ে লাথি মেরেছে।সে বহু কষ্টে মুখ দিয়ে শব্দ করা হতে বিরত রাখে নিজেকে।তারপর তার কড়া চোখ দিয়ে টেবিলের প্রত্যেকটা ব্যাক্তির দিকে তাকায় চারু।সবার মনোযোগই নিজ নিজ প্লেটের দিকে।চারু বুঝতে পারেনা কে এই অকাজটা করলো?
সেদিনের মতো ডিনার শেষ করে চারু।পানি খেয়ে রিমির ঘরকে উদ্দেশ্য করে হাটতে শুরু করে।তার আগেই রিমি নিজের ঘরে চলে গেছে।

চারু রিমির ঘরে যাওয়ার সময় মাঝে একটা সুন্দর ঘর লক্ষ্য করে।কৌতুহল বশত ভিতরে প্রবেশ করে চারু।ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের চারদিকটা দেখতে শুরু করে চারু।তার চোখ আটকে যায় বিছানার উপরে থাকার মোবাইলটার দিকে।চারু ভয় নিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়।তারপর কোণের বাটনটাতে চাপ দিয়ে মোবাইলটা অন করে।

মোবাইলটা অন করে ওয়ালপেপারটা দেখে চিল্লিয়ে ওঠে চারু।সাথে সাথে রুমের ভিতরে আগমন ঘটে আদনানের।বিছানার উপর চারুকে মোবাইল হাতে দেখে তারাতারি এসে চারুর হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয় সে।তারপর খানিকটা কড়া গলায় বলে,

—‘ তুই আমার রুমে কেন?এসেছিস এসেছিস আবার মোবাইলেও হাত দিয়েছিস।তোর সাহস তো কম নয়! ‘

চারু ঘৃণিত চোখে তাকায় আদনানের দিকে।তারপর আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আপনি এত বেহায়া আমি জানতাম না।ছি. ছি.।আপনি কিভাবে এত বেয়াদপ হইলেন।আপনার বাবা-মা দুইজনেই ভালো কিন্তু ছেলেটা নাম্বার ওয়ান বেয়াদপ।ছি. পাশে দুইটা মেয়ে নিয়ে কিভাবে ছবি তুলছে… ‘

চারু আর কিছু বলার আগেই আদনান চারুর মুখটা টিপে ধরে।তারপর খানিকটা রেগে বলে,

—‘ খুব কথা বলস তুই।আমি বেয়াদপ।আরো দেখবি এরকম ছবি।এই দেখ.. ‘

এইবলে মোবাইলের লক খুলে গর্বের সহিত আরো ছবি দেখাতে শুরু করে আদনান।এসব ছবি দেখে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় চারু।আদনান এবার চারুকে দার করায়।তারপর এক রহস্যময়ী গলায় বলে,

—‘ আমি তোর মতো সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকি না।পড়তে পড়তে নিজের শরিরটাকে তো ডান্ডানাচুনি বানিয়ে ফেলেছিস।আমার কাছে লাইফ মানে চিল।তোর মতো বই‌ নিয়ে পড়ে থাকা নয়।আরো দেখবি নাকি পিক গুলা। ‘

চারু আর কোনো কথা না বলে তৎক্ষণাৎ আদনানের রুম ত্যাগ করে।চারু খুব রেগে গেছে।এই ছেলের সাহস কম নয় তাকে কিনা বলে ডান্ডানাচুনি।এর প্রতিশোধ সে নিবেই।এরকম আরো নানা কথা বিরবির করতে করতে রিমির রুমে প্রবেশ করে চারু।দেখে রিমি ঘুমিয়ে পড়েছে।চারুও গিয়ে শুয়ে পড়ে রিমির পাশে।ঘুমিয়ে পড়ে সেদিনের মতো।

৫.

রাত ২ কি ৩টার সময় এক আজব চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে চারু আর রিমি দুজনেরই।দুজনে তারাহুরো করে দরজা খুলে বের হয়।বের হয়েই বুঝতে পারে কতবড় ভুল করে ফেলেছে।এই গভীর রাতে তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছে একদল ডাকাত।দুজন ডাকাত এসে রিমি আর চারুর গলায় ছুরি ধরে…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে