তুমি রবে ৫৩

0
1609
তুমি রবে ৫৩ . কানে এক জোড়া ছোট্ট টপ কানের দুল, ঠোঁটে হালকা রঙা লিপস্টিক আর চোখে লাইনারের চিকন টান। ব্যাস সাজটা কমপ্লিট করে মাহি চুলগুলো ছেড়ে দিলো। সাজ শেষে আয়নার মাঝে নিশ্চুপ মাহি কতক্ষণ নিজেকে দেখে নিজের বিবেককে বলল, – “তোমার ভাবনাগুলো বড্ড যুক্তিহীন মাহি। আজ তুমি যার জন্য নিজেকে সাজালে সে তোমার প্রার্থনা করে চাওয়া সেই মানুষটি। সে তোমার স্বামী। তাকে তুমি দূরে রেখে বড্ড বেশি অন্যায় করছো, পাপ করছো।” তীব্র যন্ত্রণার একটি শ্বাস ফেলল মাহি। সে মুহূর্তে আশফিকে নিয়ে এত নোংরা ভাবনাগুলো সে কী করে ভাবতে পারল? এক মাত্র আশফিই সেই পুরুষ, যে পুরুষের গাঢ় চাহনিতে সে কখনো পাপ খুঁজে পায়নি। ওই চাহনিতে তাকিয়ে বারবার বেহায়ার মতো হারিয়েছে সে। পাপী যদি কেউ এখানে হয়ে থাকে, তবে সে নিজে। শেষ মুহূর্তে শরীরে গোলাপের সুগন্ধি মেখে সে উঠে দাঁড়াল। কিন্তু আবারও সেই একই ভয়। মাহি প্রচন্ড মুষড়ে পড়ছে। চোখদুটো চেপে বন্ধ করে সে দাঁড়িয়ে রইল। ভাবতে চায় না সে, আশফিকে মন্দ ভাবতে চায় না সে একেবারেই। কিন্তু তার দোষ কোথায়? কেন বারবার সেই দিনগুলোর দৃশ্য তার মস্তিষ্কে ঘুরছে ফিরছে? বারবার মনে পড়ছে তাকে দেওয়া সেই অপবাদগুলো। এ মুহূর্তে আরও একটি কথা তার কানে বাজছে বারবার। আশফি কেন তাকে রাতের রানি বলল? রাতের রানি কারা হয়ে থাকে তা কি সে জানে না? বউ আর সেই রাতের রানির মাঝে কতখানি ব্যবধান তা নিশ্চয় আশফি খুব ভালোভাবে জানে! তবে নিজের বউকে এমন দুটি শব্দে সম্বোধন করার অর্থ কী? সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পানিটুকু শেষ করে নিজেকে টেনশান ফ্রি রাখার চেষ্টা করল মাহি। হঠাৎ এত কেন ভয় লাগছে তার, এর কোনো বিশেষ কারণ সে খুঁজে পেলো না। তবে তার ভয় লাগাটাও যে একদম বিনা কারণে তা সে বুঝতে পারছে। অডিও প্লেয়ারে চালু করল গতকাল রাতের সেই গানটি, ‘You call me senorita.” গানটা চালু করেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল আবার। মনে করতে থাকল আশফির সব থেকে আকর্ষণীয় হাসিগুলোর মুহূর্ত, মনে করতে থাকল মানুষটির সেই নিগূঢ় চাউনির মাঝে তাকে আটকে ফেলে আরও নিগূঢ়ভাবে তাকে কাছে টেনে নেওয়ার মুহূর্তগুলো। . আশফি দরজাটা খুলে ভেতরে এসে শুভ্র বর্ণের রাতের পোশাকে পরিহিতা তার বউকে প্রথম দর্শনে দেখেই এক অদ্ভুত হাসি হাসলো নীরবে। মাহি বুঝতেও পারল না তার উপস্থিতি। আশফি ধীর পায়ে হেঁটে এসে মাহির পেছনে দাঁড়িয়ে রইল। এবার মাহি স্পষ্টভাবে আশফির নিঃশ্বাসের শব্দ পেলো। বুঝতে পারল, খুবই কাছে সেই মানুষটি। আশফি গানের ভলিউমটা আর একটুখানি বাড়িয়ে দিলো। মাহি চোখদুটো খুলল না তখনো। আশফি তার কাছে এসে তার সেই গাঢ় চাউনিতে মাহিকে দেখল মৃদু হাস্যে। মাহির বাহুদ্বয় ধরে তার চুলগুলোর মাঝে নাক ডুবিয়ে রাখল কিছু সময়। কাঁধের কাছ থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে তার কাঁধ আর গলার পাশটাতে নাক ডুবিয়ে তার শরীরের সুগন্ধিও টেনে নিতে থাকল। মাহি তখন মৃদুস্বরে বলল,
– “আমার ভয়টা একদমই বেমানান।” কথাটা আশফির কানে গেলেও তার মগ্নতা দূর হলো না। যতটুকু দূরত্ব ছিল তাদের দুজনের মাঝে, ততটুকুও দূরত্ব আর রাখল না আশফি। মাহিকে টেনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো সে। অন্তরের মাঝে কাঁপুনি ক্রমশ বাড়তেই আছে মাহির। দু হাতের বন্ধনে মাহির কটিদেশ জড়িয়ে ধরল আশফি। আশফির ওষ্ঠজোড়ার স্পর্শ পাওয়ার অপেক্ষাতে মাহি। তবু সে বলল সেই আগের সুরে, – “আমি কেন সহজ হতে পারছি না আশফি?” আশফি নীরব। তার বুকের ওপরের লম্বা ফালির বাঁধনটুকু সে এক টানে খুলে দিলো। ওপরের কোটির অংশটুকু কাঁধ থেকে নামিয়ে সেখানে খুবই আলতো করে চুমু খেল। মাহি আবারও বলল, – “আমি বোধহয় অন্যায় করছি আপনার সঙ্গে। কিন্তু আমি…! আশফি? আপনি তো বলেছিলেন আমার ইচ্ছার মূল্যায়ন থাকবে আপনার কাছে।” এবারও কোনো জবাব দিলো না সে। মাহির জামার ওপরের কোটি অংশটুকু তার গা থেকে খুলে নিয়ে তা ফেলে দিলো নিচে। মাহি তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল এবার। প্রচন্ড অসহায় মাহির চাহনি। কিন্তু আশফির ওষ্ঠে তখনো ঈষৎ হাসিটুকু লেপ্টে আছে। আশফি তার হাতটা বাড়াল মাহির দিকে। তার হাতে মাহি হাতটা রাখতেই আশফি তাকে বিছানায় বসিয়ে মাহির খুব কাছে এসে বসলো। এরপর সেন্টার টেবিলের এক কোণে রাখা একটি ছোট্ট বক্স হাতে নিয়ে তার মধ্য থেকে হোয়াইট গোল্ডের ছোট পেন্ডেল সমেত একটি হার বের করল। মাহি নীরব তখন আশফির দিকে চেয়ে। বিনাবাক্যে হারটা মাহির গলাতে পরিয়ে তার দিকে তাকাল গভীর দৃষ্টিতে। কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো তার কানের পিঠে গুঁজে তারপর তাকে বলল, – “আমার সামনে এমন একটি মানুষ, যাকে যতবারই আমি কাছে পেয়েছি ততবারই আমি বেহায়া হতে বাধ্য হয়েছি। নিজের দখল নিজে হারিয়েছি বারবার। অত্যন্ত কষ্টদায়ক নিজেকে দূরে রাখা এই মানুষটার থেকে।” কথাগুলো বলেই সে আচমকা এক তপ্ত চুমু খেয়ে বসলো মাহির ওষ্ঠে। এমন আকস্মিক ঘটনার মুখোমুখি মাহি এর আগেও কয়েকবার হয়েছে। তাই অবাক হলো না সে। কতক্ষণ সময় পর আশফি তাকে ছেড়ে বেশ অশান্তভাবে আর মৃদুকণ্ঠে মাহির গালটা স্পর্শ করে বলল, – “সব থেকে যন্ত্রণাকর কী জানো? সব থেকে দামি মানুষটার বিশ্বাস না পাওয়া।” আশফি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, – “সেই সময়টা একদিন আসবে মাহি। যেদিন স্বেচ্ছায় এই বেশে তুমি নিজে আসতে চাইবে আমার কাছে; আমি অপেক্ষাতে রইলাম সেই সময়টার জন্য।” রুমে মৃদু আলো জ্বেলে দিলো সে আবার। বিছানাতে এসে মাহিকে ডেকে বলল, – “এখানে এসো।” মাহি এক ডাকেই আশফির কাছে এসে বসলো। আশফি বালিশদুটো ঠিক করে একটিতে শুয়ে পড়ে মাহিকে শোয়ার জন্য ইশারা করল। মাহিও বিনা দ্বিধাতে আশফির পাশে এসে শুয়ে পড়ল। চাদরটা টেনে নিয়ে আশফি বলল, – “বেশি শীত করলে ঢুকে পড়তে পারো। পারমিশন আছে।” উল্টো পাশ ফিরে আশফি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। মাহির এ মুহূর্তে ইচ্ছে করছে ছুটে দূরে কোথাও গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য একা থাকতে। আশফি ইচ্ছা করলেই আজ তার কাছে আসতে পারত। সে তো খুব নার্ভাস হয়ে পড়ছিল বলেই কথাগুলো বলেছিল। সেই নাভার্সনেসটা কাটিয়ে দেওয়া কি তার দায়িত্ব ছিল না? সে কি বাঁধা দিতো তাকে? প্রশ্নগুলো অনবরত জ্বালাতে থাকল মাহিকে। প্রশ্নের একটি উত্তর বারবার মাহিকে জানাল, হয়তোবা বাঁধা দিতো সে আশফিকে। এত কেন জড়তা তার মাঝে? কবে সে এই জড়তা থেকে মুক্তি পাবে? এই জড়তা থেকে মুক্ত করার জন্য সব থেকে বেশি সহায়তা প্রয়োজন তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার। খু্বই প্রয়োজন তার সহায়তা। আশফি বুঝতে পারছে মাহির নির্ঘুম অবস্থা। এবং এই নির্ঘুম অবস্থার কারণও আশফি ধরতে পারছে। সে জিজ্ঞেস করল মাহিকে, – “ফলাফল কী দাঁড়াল?” মাহি আশফির আচমকা প্রশ্নে চকিতে তাকাল তার দিকে। অনেকটা রাগ নিয়ে সে বলল, – “সাহায্য প্রয়োজন আমার।” – “চাওয়ার থেকে বেশি কিছুই পাবে। সমস্যা নেই, ঘুমাও। আমি একজন হাজবেন্ড, কোনো বয়ফ্রেন্ড নই যে নিজের রাইট ছেড়ে দেবো।” ……………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin ৫৩ পর্বটা ইচ্ছা করেই ছোট করে লিখলাম। কারণ ৫৩ পর্বের বাকি অংশ আনব একটু বড় করে। এর আগের একটি পর্বের বাকি অংশের পরিবর্তে ভুলবশত পরবর্তী পর্ব লিখে দিয়েছিলাম। আর শুধরাইনি সেটা। তবে ৫৩ পর্বের বাকি অংশ পাবেন। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে