তুমি রবে ২৩

0
1884
তুমি রবে ২৩ . . বাঙলোর পেছনে বাগান কিনারাতে বেশ আয়েশ করে বসে গরম পানি(মদ্য) সেবন করছে আশফি। আর তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আছে দিশান, রায়হান আর রায়হানের বন্ধু সানি। সানিও আশফিকে ভার্সিটি থাকাকালীন খুব ভালোভাবেই চিনতো। সেই সূত্রেই আশফি তাদের সামনে বিনা সংকোচে ড্রিঙ্কসের গ্লাস হাতে নিয়ে গল্পে মেতে আছে। তবে তাকে আদৌ গল্প বলা চলে কিনা সন্দেহ। গায়ের স্যুটটা সে কোথায় খুলে রেখেছে তার হদিস সে জানে না। না, তার মানে এই নয় যে সে এখন ঘোর মাতাল। সে এখন যে অবস্থাতে আছে তাকে বলে হুঁশ মাতাল। মানে সে হঁশে থেকেই মাতাল। সানিকে তখন থেকে এক নজরে চেয়ে থাকতে দেখে আশফি গ্লাসটা কাচের টি টেবিলের ওপর রাখল। হাতদু্টোর তালু একত্র করে থুঁতনিতে বাঁধিয়ে সে তাকাল সানির দিকে। সানি অপ্রস্তুতকর চেহারা করে আমতা সুরে বলল, – “স্যরি ভাইয়া৷ আসলে আমি এভাবে আপনাকে কখনোই দেখিনি তো।” আশফি গভীর চিন্তামুখ করে দিশানকে প্রশ্ন করল, – “পুরুষ মানুষের চরিত্র দোষ কখন হয় বল তো দিশান?” দিশান মাত্রই গ্লাসটা মুখের সামনে তুলেছিল। ভাইয়ের এই উদ্ভট শ্রেণীর প্রশ্ন মুখে সে এর পূর্বে কখনো পড়েনি। তার মানে মামলা সত্যিই এবার মারাত্বক। – “ঠিক বুঝলাম না ভাই।” – “বললাম যে…আচ্ছা সরাসরিই বলি। ছেলে মানুষ ক্যাডিশ হয় কখন?” আশফির যে নেশা ধরেনি তা নিশ্চিত সবাই। কিন্তু তার মাথা যে সে সময়ের পর থেকে হ্যাঙ করে গেছে সেটাও নিশ্চিত দিশান। আর সমস্যাটা হলো রায়হান আর সানির এ ব্যাপারের আগা হতে গোড়া বা গোড়া হতে আগা সবই তাদের গোল আকৃতির মাথার ওপর দিয়ে রকেট গতিতে যাচ্ছে। দিশানকে নীরব থাকতে দেখে আশফি কিছুই বলল না। কারণ সে মূলত উত্তর পাওয়ার আশায় প্রশ্নটা করেনি। সে নিজেই তার প্রশ্নের উত্তর ব্যাখ্যা করতে শুরু করল। – “লুসিড ব্ল্যাক কালার সিল্ক শাড়ির নিচ থেকে মেদশূন্য সাদা পেট ওপেন রাখা আর সেই সঙ্গে বেলিবাটনের থিকনেসও ওয়াও শকিং হট!” কথাগুলো বলার সময় হাতের পাঁচ আঙুল ছড়িয়ে তা আবার মুঠো করে নাক মুখ কুঁচকালো আশফি। এদিকে রায়হান আর সানি অনেকটা হা করে কথা গেলার মতো করে তাকিয়ে আছে আশফির দিকে। দিশান চেয়ারে হেলান দিয়ে মিটমিট করে হাসছে ভাইয়ের কথা শুনে। সে এবার যা বলল তাতে ছোট তিন ভাইয়ের লজ্জার দোপেয়াজা করে ফেলল সে। – “এদিকে শাড়ির আঁচল মাটি ছুঁই ছুঁই কিন্তু কোমর দুই থেকে তিন ইঞ্চি ডিসক্লোজ।” এ কথা বলার সময়ও সে নিজের কোমরে ইশারা করে অভিনয়ের ভঙ্গিতে বলল। – “ওদিকে হাফ স্লিভ ব্লাউজ পরে পিঠের মাঝের বড় তিলটা কত সুন্দর করে বের করে রাখা হয়েছে। মানে ছেলে মানুষকে আসক্ত করা ইনডিরেক্টলি। ফার্স্ট টাইম কোন দিকে নজর পড়া উচিত তোদের মনে হয়? মেদশূন্য ওই বেলি না কি চমৎকার আকৃতির ওই থিক বেলিবাটন? না কি ওই গ্লোসি কোটি? না, আমার তো অ্যাট ফার্স্ট তার ক্লাসি ফিগারের দিকে নজর দেওয়া উচিত।” রায়হান চিন্তিত মুখ করে চাপাস্বরে দিশানকে প্রশ্ন করল, – “ভাইয়া আমার বউয়ের কথা বলছে না তো? মানে ও একটু বেশিই আপডেট কিনা।” – “আরে না না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমার ভাইও প্রচুর আপডেট। কিন্তু সে তোমার বউয়ের কথা বলছে না। এখানে সে কোনো রূপসীর কথাই বলছে না শুধু একজন ছাড়া। আর তাকে ছাড়া আমার ভাই বাকি কারো দিকে নজর দেবেও না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।” – “তাহলে কার কথা বলছে?” ঢক ঢক করে গ্লাসের পানীয়টুকু শেষ করে দিলো আশফি। সে উঠে দাঁড়াতেই দিশান প্রশ্ন করল, – “কোথায় যাও ভাইয়া?” – “ওয়াশরুম।” রায়হান বলল, – “ভাইয়া চলুন আমি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।” – “বসো বসো। আমি চিনে নেব।” দিশান ভাইয়ের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, – “তোমার কি বমি পাচ্ছে ভাইয়া?” – “জঘন্য জিনিস চোখে ভাসছে। গা গুলিয়ে আসছে। আমি একটু ওয়াশরুমে যাই। তুই বস।”
ঘটনার প্রসঙ্গ সকলের কাছে খুব বেশি বড় নয় কিন্তু আশফির কাছে ছোটও নয়। প্রায় ষোলটা মাস পর সেই মেয়েটির সঙ্গে তার আজ দেখা যার জন্য প্রায় সাতটা মাস এক নতুন যুগের দেবদাসে রূপ নিতে গিয়েছিল সে। যার কল্পনা মাথা থেকে আউট করতে তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। কিন্ত কে জানতো! সেই মেয়েটাই এক আলাদা রূপে আচমকা তার সামনে এসে নেভানো আগুন আরও তিনগুণ বেশি করে জ্বালিয়ে দেবে? তার ধারণা ছিল আজ থেকে এক বছর চার মাস পূর্বে তার জীবনে কিছু ভিন্ন মুহূর্ত আর অন্তরে কিছু ভিন্ন অনুভূতির ক্ষণ এসেছিল। যার স্থায়ীত্ব ছিল ক্ষণিকের জন্য। সময় বিশেষে এক সময় তা আবার চলেও যাবে। আর তাই-ই হয়েছিল। আজ নতুন করে সেই অনুভূতিই এক ভয়ানক দাবানল হয়ে ঘিরে ধরছে তাকে। যা সে কোনোক্রমেই নেভাতে পারছে না। কয়েক হাত দূরত্বে ভারী আর ব্রাইডাল সাজে সজ্জিত নববধূ। তার পাশেই অফ হোয়াইট গাউনে ঐন্দ্রী। পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে বেশ ভালো সম্পর্ক তাদের মাঝে। তাদের থেকে কিছুটা দূরত্বে আর একজন অতিথি। যার পরনে ছিল কালো রঙের বেশ দামি একটি জামদানি শাড়ি। কিন্তু সমস্যাটা ছিলই ওই শাড়িতে। ঐন্দ্রি দূর থেকেই তাকে ‘মাহি’ বলে ডেকে ওঠে। নামটি স্পষ্টভাবে আশফির কানে বেজে ওঠে। ডাকটা অনুসরণ করে আশফি যখন আফরা অর্থ্যাৎ রায়হানের বউ আর ঐন্দ্রীর দিকে তাকায় তখন সে ধাক্কা খেয়ে বসে ফিনফিনে কাপড়ের ওই শাড়ি পরা মাহিকে দেখে। ধাক্কা খাওয়ার এক মাত্র কারণ, ষোল মাস পূর্বের মাহি আর আজকের সন্ধ্যার এই জমকালো আয়োজনের পার্টিতে মাহির মাঝে রাত দিন তফাৎ। চুলগুলো আগের চেয়েও অধিক লম্বা করেছে যা সে বাম্প করে এসেছে। বাঁহাতে সাদা পাথরের ঝকঝকে দুটো চুরি। আর ডান হাতে একটি ব্রেসলেট। কানেও ম্যাচিং করে সাদা পাথরের সুন্দর কানের দুল পরা। চোখের পাতায় আইলাইনারের চিকন টান, ঠোঁটে লাইটেস্ট রেড কালার লিপস্টিক। মোটামোটি চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো সজ্জা ছিল তার। রায়হান গলা ছেঁড়ে কিছুটা মৃদু হাসি ঠোঁটে রেখে আফরাকে ডেকে আসতে বলল তাদের কাছে। ঐন্দ্রী আশফিকে দেখে প্রচন্ড উচ্ছ্বাস ভরা মুখে মাহিকে নিয়ে আফরার সঙ্গে এগিয়ে আসে ওদের কাছে। কত মিনিটের মতো আশফির নজর গেঁথে ছিল মাহির ওপর তা অজানা। তবে মাহি তার মুখোমুখি হতেই সে তার স্বভাবের ব্যতিক্রম হলো না আর। রায়হান আশফির সঙ্গে আফরার পরিচয় করানোর পরই দিশান মাহিকে দেখে বলে ওঠে, – “আমি কি আমার কোনো পূর্ব পরিচিত বন্ধুর মুখোমুখি এখন?” মাহি হেসে ফেলল দিশানের কথাতে। এবার সে কোনো দ্বিধা ছাড়া হাত মেলাল দিশানের সঙ্গে। রায়হান সৌজন্য হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল দিশানকে, – “আপুটার পরিচয় কী ভাইয়া?” ঐন্দ্রী তখন বলল, – “আপনি চিনবেন না ভাইয়া। আপনার নানু চিনবে। ও আপনার নানুর বন্ধুর নাতনি। আর আমার বন্ধু।” দিশান তারপর বলল, – “আর আমারও। এবং খুবই ভালো বন্ধু।” মাহি সৌজন্যের হাসি হেসে পরিচিত হলো রায়হানের সঙ্গে। আশফি তখন তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে ছিল। ভেবেছিল এতদিন পর দেখা হলেও মাহি পারবে না তার সঙ্গে কথা না বলে থাকতে। সে চেয়েছিল মাহি তাকে একটাবার জিজ্ঞেস করুক, – “কেমন আছেন আপনি?” কিন্তু সে অপেক্ষায় বেশ কয়েক মুহূর্ত পার হয়ে গেল কিন্তু মাহি সে প্রশ্ন করা তো দূরে থাক আশফির দিকে ফিরেও তাকায়নি। তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে অবজ্ঞা করে বিনা সংকোচে কথা বলে গেল সে বাকিদের সঙ্গে। অপমানের সন্তাপে আশফি চলে যায় তখন সে স্থান ছেড়ে। দূর থেকেই সে লক্ষ্য করতে থাকে মাহিকে। পার্টিতে নিমন্ত্রিত প্রায় বেশিরভাগ যুবকদের নজর মাহির দিকে। তার পা থেকে শাড়ির কুঁচিও যেন তার গুণে নিচ্ছে। আশফির মেজাজ তুঙ্গে। সময় মানুষকে এতবেশি বদলে দেয় তা আজ আশফি নিজ চোখে মাহিকে না দেখলে বিশ্বাস করতো না। অবশ্য সে কোনোভাবেই আবার মাহিকে দোষীও করছে না। এমন সব আয়োজনে নিজেকে ক্লাসি না রাখলে কখনোই এই সব স্থানে ওঠা বসা করে স্বাভাবিক অনুভব করা যায় না। কিন্ত তার জন্য শরীরের অংশ কের ওপেন থাকবে? আর সেই সব অংশে কেন বাকি পুরুষদের নজর আটকাবে? রায়হানের কয়েকজন বন্ধু ঢলে পড়ার মতো করে মাহির সঙ্গে তাদের গল্প করতে দেখে। এর মাঝে কয়েকবার চোখাচোখিও হয় তাদের। কিন্ত মাহির আচরণ ছিল ভাবশূন্য। যেন আশফি ছিল তার অপরিচিত। রায়হানকে ডেকে সে বাঙলোর পিছে গিয়ে বসে ড্রিঙ্কস আবদার করে। কয়েক পেগ পেটে পড়ার পর থেকে তার মেজাজ যেন ধীরে ধীরে আরও বেশি বিশ্রী হয়ে যায়। চোখের পর্দায় সে দেখতে থাকে ওই ছেলেগুলো কীভাবে মাহিন শরীরের খোলা অংশগুলো চোখের দৃষ্টিতেই গিলে খাচ্ছিল। আর তার চেহারার বর্ণনা নতুন করে আর নাই বা ভাবা হলো। . . ওয়াশরুমে এসে সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নাতে নিজেকে দেখছে আশফি। ঠিক কতটা বেমানান সে ওই সব পুরুষদের কাছে যাদের সঙ্গে ঢলাঢলি করে মাহি গল্প করছিল? তার জানামতে সে এমন একজন পুরুষ যাকে না জানিয়ে যাওয়া নারীর সংখ্যা নগন্য। মাথা ঝিম ধরে আসছে, পেট পাকিয়ে আসছে কিন্তু বমি সে কোনোভাবেই করতে পারছে না। এদিকে ওয়াশরুমের দরজায় এসে এক একজন নক করে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করে বিদায় নিচ্ছে তারা। সবশেষে একজন নারীকণ্ঠ শুনে আশফি ওয়াশরুমের দরজা খুলে দিলো। তবে তার দিকে না তাকিয়েই সে বলল, – “আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছি। তাই আমাকে বের হতে না বলে নিজের কাজ নিজে করে বিদায় নিন।” মাহি কপাল কুচকে আশফির পাশে এসে দাঁড়াল। পানি ছেড়ে সে হাত ধুঁতে ব্যস্ত হলো আশফিকে অগ্রাহ্য করেই। আশফি আয়নার গায়ে হাত ঠেঁকিয়ে তখনো নিজেকে দেখতে ব্যস্ত। কিন্তু চোখের আড়নজর যে মাহিকে খুব দ্রুত দেখে নিয়েছে। খু্ব আলতো করে সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মাহির দিকে। আশফির দিকে নজর যেতেই মাহি দ্রুত নিজের দৃষ্টি প্রস্থান করে। কিন্তু এভাবে যদি একজন পুরুষ কোনো দ্বিধা ছাড়া এক নজরে তাকিয়ে থাকে তবে কতক্ষণ আর তার দিকে না তাকিয়ে থাকা যায়? মাহি তার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল, – “কী?” আশফি সে প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিলো, – “দরজাটা বন্ধ করি?” মাহি চোখ মুখ কুঁচকিয়ে তাকাল ওর দিকে। – “কেন?” – “ওয়েট।” আশফি দরজাটা বন্ধ করে এসে দাঁড়াল মাহির সামনে। – “একটু আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি বমি করব।” আদেশের সুরেই বলল আশফি। মাহি খানিকটা বিস্ময়ে বলল, – “আমি কেন দাঁড়াব তার জন্য?” আশফি শার্টের হাতা কনুইয়ে গুছিয়ে আনতে আনতে জবাব দিলো, – “হেল্প করবেন।” – “বমি করতে?” – “কী আজব! বমি করতেও হেল্প করা যায় না কি? না থাক, আমি নিজেই বমি করতে পারব। বমি করা শেষ হলে আপনার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মুখটা মুছে দেবেন।” মাহি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল, – “আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে আপনার মুখ মুছে দেবো?” – “জি।” – “কেন ন্যাপকিন নেই?” আশফি এবার মাহির মুখোমুখি হলো। এবং খুব কাছে এসে দাঁড়াল ওর। তারপর কয়েক মুহূর্ত মাহির পেটের দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা হড়বড় করে বমি করে দিলো মাহির শাড়ির ওপর। যদিও মাহি তখনই দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ায়। তাও শাড়িটা রক্ষা পেল না। শাড়ির নিচের দিকে অনেকটা মেখে যায়। শুধু চিৎকার করাই বাকি ছিল মাহির। চেঁচিয়ে সে ওকে বলল, – “কী করলেন এটা আপনি? সিঙ্ক থাকতে আপনি নিচে তাও আবার আমার শাড়ির ওপর বমি করলেন? কেন?” আশফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাহির শাড়ির আঁচলটা টেনে মুখটা পরিষ্কার করে নিলো। মাহি নাক মুখ কুঁচকে আঁচলটা টেনে নিলো ওর থেকে। ঘেন্নাটা ঠিক আশফির বমিতে হলো না মাহির, হলো আশফির বেয়াদবি আচরণে। এবার সে আরও জোরে চেঁচিয়ে বলল, – “এই আপনি কী করলেন? কী করলেন আপনি? ওখানে এত ন্যাপকিন থাকতে আপনি আমার শাড়িতে….ছিঃ! কী জন্য করলেন এমনটা?” – “রিভেঞ্জ। এক বছর চার মাস আগের রিভেঞ্জ। আর এভাবে গলা নষ্ট না করে শাড়িটা চেঞ্জ করে নিন যান।” – “চেঞ্জ করব মানে? আমি কি এক্সট্রা শাড়ি ব্যাগে নিয়ে ঘুরি যে শাড়ি নষ্ট হলে আর একটা বের করে পরব?” আশফি কোমরে এক হাত রেখে আর দেয়ালে আর এক হাতে ভর করে দাঁড়িয়ে বলল, – “ব্যাগে বিদেশি কর্সেট নিয়ে ঘুরতে পারেন আর এক্সট্রা শাড়ি নিয়ে ঘোরেন না কেন?” মাহি রাগে যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দাঁত কিড়মিড় করে সে জবাব দিলো, – “ওটা দিয়া আমাকে দিয়েছিল সেদিন। কারণ ওর খালামণি অস্ট্রেলিয়া থেকে ওকে এনে দিয়েছিল অনেক তাই।” – “ও আচ্ছা। তো যাই হোক, আপনি চাইলে আমি আফরা বা ঐন্দ্রীকে হেল্প করতে বলতে পারি। আপাতত আফরার থেকে একটা শাড়ি নিয়ে পরে নিন। হ্যাঁ অবশ্যই ভালো কিছু পরবেন। এমনিতেই যা দেখিয়েছেনে তাতেই বমি অবধি। এরপর অন্যকিছু দেখলে….” – “কী বলছেন এসব! আপনি কাজটা মোটেও ভালো করেননি। আল্লাহ জানে আপনার কী ক্ষতি করেছি আমি। আপনি সবসময় আমাকে সমস্যার মুখে ফেলেন।” আশফিকে পাশ কাটিয়ে মাহি ন্যাপকিন দিয়ে শাড়ির নিচে মুছতে থাকল। এরপর পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে আশফি তখন সরু চোখে তাকিয়ে মাহিকে বলল, – “আপনাকে বললাম শাড়িটা চেঞ্জ করতে। তা না করে আপনি আবার এটা পরিষ্কার করছেন কেন?” – “কারণ আমি অন্য কারো থেকে কিছু চাইতে পারি না।” – “আচ্ছা।” আশফি পকেট থেকে ফোন বের করে তার গাড়ির ড্রাইভারকে ফোন করে বলল কাছের কোনো দোকানে গিয়ে বেশ দামি একটা শাড়ি কিনে আনতে। আর তা যেন সে আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে দিয়ে যায়। বিস্ময়ে মাহির চোখদুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল যেন। আশফি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে মাহিকে বলল, – “শাড়িটা না আসা অবধি আপনি এখানেই থাকুন। সমস্যা নেই, আমিও আছি। বোর হওয়ার কিছু নেই। গল্প করতে থাকি আমরা।” মাহি ন্যাপকিনটা হাত থেকে ফেলে আশফিকে ধমকে বলল, – “আপনি কি পাগল? আমি শাড়ি চেয়েছি আপনার কাছে? আর সেই শাড়ি না আসা অবধি আমি ওয়াশরুমে বসে থাকব?” – “হ্যাঁ থাকবেন।” – “আদেশ করছেন না কি?” – “তাই তো করলাম বোধহয়।” নিজের আচরণে আশফির এতটুকু আফসোস নেই দেখে মাহির রাগের পরিমাণ আরও বেড়ে গেল। দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তর আশফি এক হাত দিয়ে দরজা চেপে ধরল। – “মানে সমস্যা কী আপনার? এমন কেন করছেন আপনি?” – “বললামই তো। আপনি শাড়ি চেঞ্জ না করা অবধি যেতে পারবেন না।” আশফির হাতটা মাহি দরজা থেকে ঝারি দিয়ে নামিয়ে বলল, – “কে আপনি যে আপনার কথা মতো আমি শাড়ি চেঞ্জ করব? আমি এই শাড়িতেই থাকব। মাত্র ঘন্টাখানিক আছি এখানে। তাই শাড়ি চেঞ্জ করার কোনো প্রয়োজনই নেই আমার।” আশফি খুব স্বাভাবিক কণ্ঠেই মাহিকে বলল, – “আছে অবশ্যই আছে। এই যে শাড়ির নিচে যেটা পরেছেন তা যে আপনার কোমরে গেঁথে পড়েছে তা আপনার কাছে দাঁড়ালে খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি আমি। এমনটা অন্য কেউও দেখতে পাবে নিশ্চয়। তারপর আপনি আঁচল দিয়ে পিঠটা ঢেকে রাখলেও আপনার পিঠের…” মাহি চিল্লিয়ে বলল, – “থামবেন আপনি? আপনার মতো নোংরা দৃষ্টিতে যে অন্য কেউও দেখবে এমনটা কী করে ভাবলেন? সবাইকে কেন নিজের মতো ভাবেন? আমি এই শাড়িতেই থাকব। আপনার চোখে ক্ষুধা থাকলেও বাকিদের চোখে নেই। কারণ সবাই আশফি মাহবুব নয়।” কথাগুলো বলার পর মাহি ম্তব্ধ হয়ে গেল নিজেই। কারণ কথাগুলো যে সত্য নয় তা সে নিজেও জানে। কিন্ত ক্রোধ মানুষকে কখন কী করে ফেলে তা সে মুহূর্তে সেই মানুষটিরও ভাবনার বাহিরে থাকে। তবে আশফি এমন মানুষ নয় যে সে কথাগুলে হজম করে চুপচাপ রয়ে যাবে। হিংস্র পশুর মতো সে তেড়ে এলো মাহির কাছে। আর তারপর মাহির শাড়ির কুঁচি এক টানে খুলে ফেলে কোমরের কাছের অংশ দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে দিলো। এরপর ভয়ংকর রাগী চেহারায় চেঁচিয়ে মাহিকে বলল, – “আমার দৃষ্টি নোংরা! তাহলে ওদের দৃষ্টি তীব্র দুর্গন্ধ। এই শাড়িতেই ঘুরে বেড়ানোর খুব ইচ্ছা তাই না? খুব শখ শরীরের আকৃতি, পরিধি দেখানোর!” ……………………………….. (চলবে) – Israt Jahan Sobrin কপি করা থেকে বিরত থাকবেন প্লিজ। আর ভুলসমূহ ক্ষমা চোখে দেখার অনুরোধ রইল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে