তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-০৯

0
954

#তুমি নামক যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃহৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ৯

সেদিনের পর কেটে গেছে আরও দুটো বছর।স্রোত ভাইয়ার চট্টগ্রাম আসার পরিমানটাও বেড়ে গেছে।তবে তাকে এড়িয়ে চলার প্রবনতা বেড়ে গেছে।তিনি যখনই আসতেন খবর পেতাম।আমি মামা বাড়ি চলে যেতাম।তিনিও দুএকবার কৌশল করে এসেছিলেন তবে আমি নিজেকে যথেষ্ট আড়াল রাখার চেষ্টা করতাম।তাকে তুমুলভাবে এড়িয়ে চলতাম।

এমনই একদিন তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। আমি খবরটা জানতাম না।তাই বাড়িতেই ছিলাম।ওইদিন বাড়িতে কেউ ছিল না।আমি আর দিদুন ছিলাম।আব্বু আম্মু গেছিল মামা বাড়ি। জরুরি প্রয়োজনে সাথে ছিল পিচ্চু(আমার ভাই ইমন)।যেহেতু বাড়িতে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না।কলিং বেল পাওয়ায় ভেবেছিলাম আমার বন্ধু মারিয়া এসেছে।আম্মুই বলেছিল একা লাগলে ওকে ডেকে নিতে।দিদুন ঘরে ছিলেন।আর আমি কিচেনে।ওর জন্য নাস্তা রেডি করছিলাম।যেহেতু ওর আসার সময় হয়ে গেছে তাই উল্লাসে ছুটে গেলাম দরজা খুলতে। কিন্তু দরজার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে আমি হতচকিত, হতবিহ্বল হয়ে গেলাম।স্রোত ভাইয়া স্বয়ং আমার সামনে দাড়িয়ে। চোখ মুখের অবস্থা করুন,মলিন।চোখমুখ কেমন গর্তে চলে গেছে।চুলগুলো এলোমেলো। চোখজোড়া লালচে হয়ে আছে।মনে হয় সারারাত ঘুমোয় নি।দরজা খোলার পর আমাকে দেখে এক করুন চাহনি নিক্ষেপ করলো।তার ওই করুন চাহনিতে কেমন অস্থির লাগছিলো আমার।বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো।কেন জানি না তবে তাকে এড়িয়ে চললেও তার কোন কষ্ট সহ্য হয় না আমার।দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম।কোন কথা না বলে সরে এলাম দরজার কাছ থেকে। তিনি ভেতরে ঢুকলেন।আমি ওড়নাটা নিয়েই ছুট লাগাচ্ছিলাম নিজের ঘরের উদ্দেশ্য তবে আটকে দিলেন।হাত শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছেন।থমকে গেল পা।অস্বাভাবিকভাবে হাত পা কাপতে লাগলো।বুকের ভিতর ভয়ংকর শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে প্রানটা বেরিয়ে যাবে।এতদিন তিনি আমার সাথে কথা বলতে চাইলেও কখনো এরকম ভাবে স্পর্শ করেন নি।তার স্পর্শে আঘাত পেলাম।বেশ শক্ত করে ধরে আছে হাতখানা।আমি ভয়ে দুটো ঢোক গিলে পেছনে ফিরলাম।উনি হাত টেনে তার সামনে দাড় করালেন।ভরাট গম্ভীর অথচ কত যন্ত্রণা মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

— কি এমন করেছি আমি যে তুই এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলিস? এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে থাকিস! নিজেকে কেন আড়াল করিস আমার থেকে বল!

— আ্ আমি কিছু করিনি।হাত ছেড়ে দিন ভাইয়া আমি ঘরে যাব।

— যাবি না! কোথাও যাবি না! আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর যাবি।বল কেন? কেন এমন করছিস তুই?
অপরাধ কি আমার? কোন দোষের শাস্তি দিচ্ছিস তুই আমাকে!

— ছ্ ছাড়ুণ ভাইয়া।

বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।উনি আমায় আরো কাছে টেনে নিলেন।হাতের বাধন শক্ত করলেন।উনার করুন চাহনি আমার উপর নিবদ্ধ করে প্রগাঢ় কন্ঠে শুধালেন,

— ছেড়ে দিব!কি করে ছেড়ে দিব!পারছিনা আমি!

— আমার হাত ছাড়ুন ভাইয়া।ল্ লাগছে আমার!

কথাটা বলতেই ছেড়ে দিলেন আমার হাত।ফুপিয়ে কাঁদছি আমি।উনি আমার দুগাল ধরতে যাচ্ছিলেন।তখনই একটা পরিচিত এক কন্ঠস্বর কানে ভেসে এলো।তিনি মাথা উপরে তুললেন।আমি মাথা নিচদিক দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।তার কন্ঠ শুনেই ছুটে উপরে চলে গেলাম।নিজ ঘরে গিয়ে দরজা দিয়ে দিলাম।আটকে নিলাম নিজেকে বদ্ধ ঘরে।

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলাম।হাতের দিকে চেয়ে দেখলাম।জায়গাটা কেমন নিলচে হয়ে গেছে।ব্যাথা করছে।অভিযোগ হলো তার প্রতি।কেন এভাবে আঘাত করেন উনি আমায়।যখনই তার সামনে থাকি আঘাত করেন।আমাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কি পান উনি।অভিমান হলো।অভিমানের মাত্রাটা হুরহুর করে বেড়ে গেল।আজকের করা কার্যকলাপে।মন ভারি হলো! ভিষন দুঃখ হলো।আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম।কখনো যাবো না তার সামনে।ভুল করেও না।কিন্তু তখনও হানা ছিল না আমার এই সামান্য আঘাতের যন্ত্রনা তার যন্ত্রনার কাছে কিছুই না যা আমি তাকে দিয়েছি।রাগ হলো নিজের প্রতি।কেন বুঝলাম না তাকে! তার অনুভুতিকে! কেন তাকে সুযোগ দিলাম না! কেন আড়াল করলাম নিজেকে! তাকে এত অবহেলা অবমাননা করলাম! হয়তো আমাকে দেয়া আঘাতের জন্য তিনি নিজেও তার দ্বিগুন আঘাত পেয়েছেন।বুক চিরে কান্নার বেরিয়ে আসতে চাইছে।আটকালাম না তাদের কাঁদতে দিলাম।চোখের বর্ষন হতে দিলাম।সবকিছু ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিলাম।কান্নার মাধ্যমে কষ্ট কমানোর চেষ্টা করলাম।তবে আদৌ কি এই কষ্ট কম হবে।হবে না! তাকে দেয়া এই তুমুল যন্ত্রনার রেশ কাটাতে অনেক সময় লাগবে আমার।এসব ভাবনা আর কান্নার মাঝেই চোখ লেগে এল।সারারাত অঝোড় বর্ষনের পর চোখ বুজে এল।কখন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম জানা নেই।

.
কড়া রোদের তীক্ষ্ণ আচড় চোখের উপর পরতেই।বিরক্তে কপালে ভাজ পরলো।কুচকানো চোখমুখ নিয়েই বিরক্তিতে থিতিয়ে গেল মন।মেঝেতে বসে বেড়ের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম।বিরক্তি ভাবটা কাটিয়ে চোখ খুললাম।কাল ভোরের দিকে ঘুমিয়েছি বলে হয়তো এত দেরি হলো।রাতের কথা মনে পরতেই মনটা বিষন্ন হলো।তবে আজ তার এই #আমি_ নামক_যন্ত্রনার শেষ দিন।আজকের পর থেকে আর কখনোই তাকে কোনো কষ্ট দেব না।তার থেকে নিজেকে আড়াল করবো না।তাকে নিজের সাথে বেধে নেব।ভাবনার অবসান ঘটিয়ে ঘরির দিকে চোখ রাখতেই দেখলাম সকাল নয়টা বাজে। অনেক বেলা হয়েছে কিন্তু কেউ আমাকে ডাকলো না কেন?উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখলাম বড় আম্মু আর আম্মু কিচেনে কাজ করছে।আম্মু বারবার বলছে ” আপা আমি করে নিব তুমি যাও কিন্তু বড় আম্মু শুনছে না উনি সবজি কাটতে ব্যস্ত।বাড়িটা হালকা মনে হলো।জনমানব নেই।আমার দুচোখ বেহায়া নির্লজ্জের মত শুধুমাত্র একজনকেই খুজে বেড়াচ্ছে।তাই আমি নিচে নেমে একটা আপেল নিয়ে কিচেনের দিকে গিয়ে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম।

— আচ্ছা আম্মু বাড়িটা এমন ফাকা ফাকা লাগছে কেন? সবাই কোথায়?

— সবাই চলে গেছে।কেন তুই জানতি না আজ সবাই চলে যাবে।তারপরও এমন মরার মত ঘুমোলি।তিশা তো তোকে ডাকতেও দিলো না।বললো,

— কাল নাকি অনেক রাত করে গল্প করে ঘুমিয়েছিস দুটোয় তাই।ওরাও বললো পরে কথা বলে নেবে।দেরি হচ্ছিলো তাই বেরিয়ে গেছে সবাই।

–ওহ! আচ্ছাতিশা আপুকে দেখলাম না। দিদুন ও নেই।কোথায় সবাই?

— তিশা তো ঘরে মা।আর তোর দিদুনও ঘরে।

আমি আমতা আমতা করছি।আসলে যার কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছি।তার কথা জিজ্ঞেস করবো কিভাবে? বড় আম্মু কি ভাববে! আর আম্মুই বা ব্যাপারটা কিভাবে নেবে?অস্থিরতা ঘীরে ধরেছে আমায়।নিচে তো কোথাও উনাকে দেখলাম না।আচ্ছা উনার ঘরে আছে।আমাকে উসখুস করতে দেখে বড় আম্মু জিজ্ঞেস করলো,

— কিরে কিছু বলবি?
অপ্রস্তুত হলাম আমি।কি বলবো বুঝতে পারলাম না।তাই বললাম,

–ও ওই তো বড় আম্মু বলছিলাম কি যে, আচ্ছা বড় আম্মু আজ কি তুমি রান্না করবে?

— হ্যাঁ।তুই কি খাবি বল।

— ঠিকাছে তাহলে ভুনা খিচুড়ি কর।তোমার হাতের ভুনা খিচুড়ি উইথ কষা মাংস। উফফ! কি জোশ যে হয় বলে বোঝানো যাবে না।

— আচ্ছা করছি।

সেখান থেকে এক প্রকার হড়বড়িয়ে চলে এলাম।গেলাম স্রোত ভাইয়ার রুমের দিকে। দিদুনের ঘরের পাশের ঘরটায় তার।এবাড়িতে সবার জন্য আলাদা ঘর আছে।দিদুনের ঘর পেরিয়ে যাওযার সময় দেখলাম দিদুন শুয়ে আছে।এই অবেলায় বুড়ি ঘুমিয়ে আছে কেন? মনে প্রশ্ন জাগলেও আজ সেটাকে গুরুত্ব দিলাম না। ঘরের দরজার কাছে আসতেই বুকে দ্রিম দ্রিম শব্দ হতে শুরু করলো।হার্টবিট এত দ্রুত ছুটছে বোঝানো দায়।আমি বড়বড় দুটো নিশ্বাস নিলাম। নিজের ভিতর একটু সাহস সঞ্চয় করলাম।তারপর পা টিপে টিপে ঘরের দরজাটা একটু ফাক করে দেখলাম ঘরে কেউ নেই।ভ্রুযগল কুঞ্চন হলো।তারপর পুরো দরজাটা পুরোটা খুললাম।নাহ কেউ নেই।ভিতরে গেলাম।তারপর সবজায়গায় খুঁজেও পেলাম না।কোথায় গেল মানুষটা।হাওয়া হয়ে গেল।কাকে জিজ্ঞেস করবো।হ্যাঁ, দিদুন! দিদুনকে জিজ্ঞেস করতে হবে।কিন্তু পরমুহুর্তে মনে পরলো দিদুন তো ঘুমোচ্ছে। এখন যদি ঘুম ভাঙি তো বুড়ি খেপে যাবে আমার উপর।তারউপর আবার হঠাৎ করে স্রোত ভাইয়ার খোঁজ করায় যদি জেরা কনে পুরো বাড়ি মাথায় তোলে তখন। নাহ! তাকে বিরক্ত করা মানে বিপদ! মহাবিপদ যাকে বলে!তবে আর কি করবো? তাকে জিজ্ঞেস করবো! তিশা আপু! হ্যাঁ, তিশা আপুকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিজ্ঞেস করা যেতেই পারে।একছুটে পৌছে গেলাম তিশা আপুর ঘরে।ঘরে গিয়ে দেখি আপু ঘরে নেই।বারান্দায় কারো ছায়া দেখে সেখানে গেলাম।গিয়ে দেখলাম আপু উদাসীন হয়ে রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আনমনে।দৃষ্টি বাইরের প্রকৃতিতে নিবদ্ধ। তবে মনে প্রশান্তি নেই।ভারাক্রান্ত মনে বিষন্নতা ঘীরে রেখেছে।আমি গিয়ে পিছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরলাম।উনার ধ্যান ভাঙলো।নড়েচড়ে উঠলো।অন্যদিন আমাকে দেখলে যেমন একগাল হাসতো।আজ সেই হাসিটা নেই।বুঝলাম ভিষন মন খারাপ আপুর।আষাঢ়ের কালো মেঘের ন্যায় ছেয়ে আছে শীতল মুখখানা।বললাম,

–কি হয়েছে আপু? মন খারাপ তোমার?

— হুম!

ছোট প্রতিত্তুর।আমি মৃদু হেসে বললাম,

— কারন কি জানতে পারি?

— একটা কথা বলবি সত্যি করে।

— কি কথা আপু বলনা।তার জন্য আবার জিজ্ঞেস করতে হয়।আর আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো ভাবলে কি করে?

মৃদু হাসলো আপু।তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত এক কথা বলে ফেললো যার উত্তর আমার কাছে নেই।আদৌ কি নেই নাকি বুঝতে পারছি না জানি না।

— ভালোবাসিস কাউকে?

অনাকাঙ্ক্ষিত এমন প্রশ্নে যে কারো থমকে যাবার কথা আমিও থমকে গেলাম।ভাবনায় ডুবে গেলাম।আচ্ছা সত্যি কি আমি কাউকে ভালোবাসি! নাতো আপুর সেদিনের বলা বক্তব্যের মত অনুভূতি কখনো হইনি আমার। তবে স্রোত ভাইয়ার কষ্ট হলে যে কস্ট আমি অনুভব করি।সেটা কি তবে! আচ্ছা সেটাই কি ভালোবাসা! তবে কি স্রোত ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে! আমিও কি বাসি! যদি নাই বাসি তাহলে তার কান্নায় কাল রাতে এত কষ্ট কেন হলো।কেন তার দুবছরের প্রনয় যন্ত্রনার কাছে আমার শারীরিক আর মানসিক আঘাতকে তুচ্ছ মনে হল।কেন ভুলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে সবকিছু।কেন তাকে আগলে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে?কেন তার স্রোতের মোহনায় গা ভাসাতে ইচ্ছে হচ্ছে?কেন? কেন? কেন?
এত কেনর উত্তর কি একটাই! তিনি তার না বলা অনুভূতি ব্যক্ত করার মাধ্যমে অপ্রকাশিত রেখেই তার ভালোবাসা আমাকে জাহির করেছে আর আমিও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তার ভালোবাসার জোয়ারে গা ভাসাতে চাইছি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আপু আমার কাধে হাত রেখে বললো,

— কি ভাবছিস কথা!
আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম বললাম,

— ক্ কই? কিছু নাতো! কিছু না! এমনি!
আপু আবারো সামনের খোলা আকাশে দৃষ্টি রেখে বললো,

— বললি না যে।

— কি বলবো?

— কাউকে ভালোবাসিস!

আপু কাকে ভালোবাসার কথা জিজ্ঞেস করছে।স্রোত ভাইয়ের প্রতি আমার অনুভূতি তাকে জানানো ঠিক হবে।নাহ! না! ছিঃ কি করে বলবো আমি।সম্ভব না! একেবারেই না।
তাই চুপ করেই রইলাম।

— কই কিছু বল।

এবার আমতা আমতা করে বললাম,

— ন্ না!

— ওহ।

তারপর বেশ অনেকক্ষণ চুপ ছিলাম।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।স্রোত ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করবো! না থাক আপুর মন ভালো নেই।কি ভাবতে কি ভাববে।তাই মুচকি হেসে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,

— নাস্তা করেছো আপু?

— হুম।তুই করেছিস?

— নাহ!

— তাহলে করে নে।
আবারো সেই মলিনতা। আপুকে কখনো এভাবে দেখেনি।হাসিখুশি একটা মেয়ে আজকে কি হলো তার? বুঝতে পারছি না।কিছু না বলেই মন খারাপ করে চলে এলাম।আসার সময় দেখলাম পিচ্চু বাগানে খেলছে।আমাদের এখানকার ওর সমবয়সী কয়েকটা বাচ্চা ছেলের সাথে।ওকে দেখো আসার আলো জেগে উঠলো।ছুটে গেলাম ওর কাছে বললাম,

— পিচ্চু তোর মহারাজ কইরে?

— কোন মহারাজ?

— যার মাথায় চড়ে বসে থাকিস তুই?

— কার মাথায় চড়ে বসে থাকি?

আমার করা প্রশ্নে ওর ফিরতি প্রশ্ন মেজাজটা খিটখিটে করে দিল।দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

— স্রোত ভাইয়া কই?

— ওহ! তুই স্রোত ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করছিলি? তাই বল।এত ঢং করার কি আছে।

— কিহহহ!আমি ঢং করি।

— হ্যাঁ, করিসই তো। একটু বেশিই ঢং করিস।

— দেখ পিচ্চু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। উল্টো পাল্টা কথা একদম বলবি না।

— তুই বলতে পারলে আমি কেন পারবো না।

— এই বেয়াদব ছেলে আমি না তোর বড় তুই তুই করে বলছিস। আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস।

— তুই আগে আমাকে পিচ্চু বলা বন্ধ কর।তাহলে আমিও আর তুই করে বলবোনা।

— কেন পিচ্চু ডাকে কি আছে?

— আমি কি পিচ্চি যে পিচ্চু বলে ডাকবি।

— হ্যাঁ, তুই তো বুড়ো বুড়ো বলেই ডাকবো।হয়েছে শান্তি!

— না হয়নি।

— আবার কি হলো?

— আগে আমাকে পিচ্চু বলা বন্ধ কর আর আমাকে দশটা ইয়া বড় বড় ডেইরি মিল্ক কিনে দে আর বিশটা আইসক্রিম কিনে দে তারপর বলবো।( আমার বিচ্ছু ভাইটা আমারে এইভাবে ব্ল্যাকমেইল করে☹️।কিছু বলতেও পারি না।হুমকি দেয়। স্ক্রিক্রেট ফাস করার)

— কিহহহ! এত কিছু।পারবো না।

— না পারলে আমিও বলবো না। এমনিতেও খুব কম চাইছি আমি।তুই তো আরো অনেক কিছু চুরি করেছিস আমার।সেই তুলনায় এগুলো কিচ্ছু না।

বিরক্তিতে রি রি করে ওঠা মেজাজ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

— আচ্ছা দেব।এবার বল কোথায়?

— ভাইয়া তো চলে গেছে।

— কবে? কখন? কোথায়?

— আস্তে আস্তে এত কথা এক সাথে জিজ্ঞেস করলে কেমনে বলমু?

— একটা একটা করে বল।

— ভাইয়া বাড়ি চলে গেছে।কি এক জরুরি কাজ আছে তাই।

শুনেই মনটা বিষন্নতায় ডুব দিল।সেই অথৈ জলের উত্তাল স্রোতে ভেসে চললো।কান্না পেল খুব।কোনমতে কান্না আটকে ঘরে এসে দরজা দিতেই টুপটাপ করে পরতে শুরু করলো নোনা পানি।এত নিষ্ঠুর মানুষ হয়।আমাকে একবার বললোও না।দেখা করা তো দুরের কথা। কালকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে আমার অনুভূতি না জেনেই চলে গেল।অভিমান হলো খুব।বুকের ভিতরটা জ্বলছে খুব।পুড়ছে তার নামের উত্তাপে।যন্ত্রণায় ছটফট করছে।ভিষন চিৎকার করে আর্তনাত করছে।আচ্ছা কাছের মানুষ থেকে প্রাপ্ত অবহেলা আর এড়িয়ে চলা বুঝি এতটাই কষ্টদায়ক হয়।যন্ত্রনাদায়ক হয়।তবে তিনিও কি এতটাই কষ্ট পেয়েছেন।যন্ত্রনার অনলে এভাবেই পুড়েছেন! ছটফট করেছেন! আমি একদিনে সহ্য করতে পারছি না।তিনি দুবছর কি করে সহ্য করেছেন।ভাবতেই বুকফাটা আর্তনাত বেরিয়ে এলো।দুহাটুতে মুখ গুজে নোনা জলের স্রোতে ভেসে যেতে লাগলাম।তার ভালোবাসার স্রোতে গা ভাসানোর আগে তার #তুমি_নামক_যন্ত্রনার স্রোতে চোখের জলে ভেসে যাচ্ছি আমি।

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে