তুমি চাইলে যেতে পারো পর্ব-০৭+০৮

0
758

গল্প:-#তুমি চাইলে যেতে পারো (পর্ব:-০৭+০৮)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

সকালে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে এমন সময় আল এসেছে নাস্তা করতে সবাই আলকে দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেছে। আজ ছয় মাসের মধ্যে এই প্রথমবার সবার সাথে নাস্তা করতে বসেছে। কেউ কোনো কথা বলছে না সবার নাস্তা শেষ হয়ছে তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- বাবা আমার শ্বশুর বাড়ীর সবাই একটা শর্ত দিয়েছে। ওনারা বলেছে আল যদি আনো’কে সাহানার কাছে দিয়ে দেয় তাহলে আমাকে ওনাদের বাড়ীতে নিয়ে যাবে। তোমরা আল ইসলামকে বলো আনো’কে সাহানার কাছে দিয়ে দিতে। আল চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না তখন আলের মা বলে।
মা:- আল ঝিনুক কি বলেছে তুই শুনেছিস? ঠিক তখনি আল রেগে যায় আর বলে।
আল:- তোমরা আমার জীবনটাকে নষ্ট করেও শান্তি পাওনি এখন এসেছো আমার মেয়ের জীবনটাকে নষ্ট করতে। দেখো মা এরপর যদি বাড়ীর কেউ এমন ধরনের কথাবার্তা বলে তাহলে আমি ভুলে যাবো তোমরা কেউ আমার কিছু হও।
আরিফ:- আল তুই কিন্তু অতিরিক্ত করতেছিস? তুই চাস না ঝিনুক তাঁর শ্বশুর বাড়ীতে ফিরে যাক। ঝিনুকের স্বামীর সাথে সংসার করুক।
আল:- হ্যা চাই তবে তাঁর জন্য আমার মেয়েকে কেনো আমি অন্যের হাতে তুলে দিবো।
দাদী:- আবার তোরা শুরু করেছিস? এবার থাম অনেক হয়ছে আনো যদি সত্যি আলের মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে আমরা কেনো ওকে দিয়ে দিবো। আল যদি আনোকে নিজের কাছে রাখতে চাই তাহলে আমরা ওকে দিয়ে দিবো কেনো? আর ঝিনুক আমি তোর জামাইয়ের সাথে কথা বলবো। এসব বিষয় নিয়ে সংসারে অশান্তি না করাটা ভালো। সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে আল নিজের মত করে বেড়িয়ে গেছে। সিমি আনো’কে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে গেছে।
সিমি:- আচ্ছা মামুনি তুমি যে বলেছো তোমাকে ছেড়ে সবাই চলে যায়। কে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে?
আনো:- আম্মু আর বাবাই দুজনে আমাকে ছেড়ে চলে যাই। ওনারা সারাদিন আমাকে একা রেখে চলে যায়। তবে বাবাই বলেছে তুমি নাকী আমাকে রেখে কোথাও যাবে না। সবসময় আমার সাথে খেলা করবে আমাকে অনেক বেশী আদর করবে। সত্যি তুমি আমার সাথে খেলা করবে?
সিমি:- হ্যা খেলা করবো তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো আর মজার মজার চকলেট আইসক্রীম কিনে দিবো। কিন্তু তুমি যদি আমাকে রেখে চলে যাও তখন কি হবে!
আনো:- সত্যি তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না?
সিমি:- এই আমার মাথা ছুঁয়ে বলতেছি তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না। এবার তুমি বলো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না?
আনো:- ঠিক আছে আমিও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না বলেই সিমির গালে চুমু দিয়ে দিছে। সিমিও আনোকে জড়িয়ে ধরে বড় একটা নিশ্বাঃস ছেড়েছে। আনোর সাথে আরো ভালো করে মিশতে হবে তবে ওকে কিছু চকলেট কিনে দিতে হবে কিন্তু আমার কাছে তো কোনো টাকা নেই। আলের কাছ থেকে চাইবো নাহ থাক আবার কি না কি মনে করবে। এক কাজ করি মালার থেকে চেয়ে দেখি পাওয়া যায় কিনা।
সিমি:- আচ্চা মামুনি তুমি বসো আমি আসতেছি।
আনো:- তুমি না একটু আগে বলেছো আমাকে রেখে কোথাও যাবে না আর এখুনি চলে যাচ্ছো। আমি জানতাম তুমিও আম্মুর মত করে আমাকে রেখে চলে যাবে আর আসবে অনেকক্ষণ পড়ে।
সিমি:- তুমি দেখো আমি এই যাবো এই চলে আসবো আমি তোমার আম্মুর মত হবো না। বলেই সিমি বেড়িয়ে গেছে। নিচে এসে দেখে ঝিনুক আর একটা ছেলে কথা বলছে। সিমি কিছু না বলে মালার রুমের সামনে গেছে। দরজায় টুকা দিয়েছে কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ভেতরে ঢুকেছে দেখে মালা কান্না করছে তখনি সিমি বলে। মালা কি হয়ছে কান্না করছো কেনো? সিমিকে দেখে মালা চোখ মুছে বলে।
মালা:- ভাবি আপনি কিছু না বলে হঠাৎ করে আমার রুমে এসেছেন কেনো?
সিমি:- আমি দরজায় টুকা দিয়েছি কোনো সারাশব্দ না পেয়ে ভেতরে এসে দেখি তুমি কান্না করছো। মালা কিছু হয়ছে?
মালা:- নাহ তেমন কিছু হয়নি কেনো এসেছেন সেইটা বলেন!
সিমি:- আসলে আমাকে কি পাঁচশত টাকা হাওলাদ দিতে পারবে। আমি তো এই বাড়ীতে নতুন আর তাছাড়া তোমার ভাইয়ার কাছে এখনো টাকা চাওয়ার মত সাহোস হয়নি। যদি তোমার কাছে থাকে তাহলে আমাকে দাও আমি তোমাকে পড়ে দিয়ে দিবো।
মালা:- দাঁড়ান দিচ্চি। মালে গিয়ে ওর ব্যাগ থেকে একশ টাকার নোট চারটা এনে বলে। নেন ভাবি আমার কাছে আর টাকা নেই।
সিমি:- এতেই হবে। সিমি টাকা নিয়ে বেড়িয়ে আসছে তখনি মালা আবার কান্না করতে আরম্ভ করছে। সিমি এখন কিছু বলেনি কারণ আনোকে বলে এসেছে সে যাবে আর আসবে। সিমি উপরে যাচ্ছে তখনি ঝিনুক ডাক দিয়ে বলে।
ঝিনুক:- এই মেয়ে শুনো।
সিমি:- আপু আমাকে ডাকছেন?
ঝিনুক:- হ্যা তোমাকেই একটু এদিকে এসো। সিমি কাছে যেতেই ঝিনুক সিমির হাত ধরে বলে। আমি জানি আল তোমাকে কেনো হঠাৎ করে বিয়ে করে আনছে। তোমার কাছে আমার অনুরুদ আনোর সাথে তুমি খারাপ আচরণ করবে যাতে করে আনো এই বাড়ীতে থাকতে না চাই প্লিজ।
সিমি:- আপু আপনি এসব কি বলছেন? আমি কেনো এতটুকু বাচ্চা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে যাবো!
ঝিনুক:- তুমি যদি আনোর সাথে ভালো ব্যবহার করো তাহলে সে তোমার কাছে থেকে যেতে চাইবে। আর আদলতে সাহানা হেরে যাবে। সাহানা হেরে গেলে আমাকেও ফিরুজ ডির্ভোস দিয়ে দিবে। তোমার বড় বোন হিসাবে আমি তোমার পায়ে ধরে বলি তুমি প্লিজ আনোর সাথে সবসময় খারাপ আচরণ করো। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আল তোমাকে যে টাকা দিবে তাঁর চাইতে বেশী টাকা আমি দিবো। তখনি আলের দাদী এসে পড়ে আর ঝিনুক হাতটা ছেড়ে দেয়। সিমি কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কেমন মেয়ে ওনি ছোট একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে এই কথা বলেই ঘরে চলে আসে। আনো মন খারাপ করে বসে আছে তখনি সিমি কাছে গিয়ে বলে।
সিমি:- আমার রাজকন্যার মন খারাপ হয়ছে!
আনো:- তুমি তো দেখছি আম্মুর মতই দুই মিনিটের কথা বলে সারাদিন পার করে দাও। যাও তোমার সাথে কোনো কথা নেই বলে আনো চলে যাচ্ছে তখনি সিমি ওকে ধরে কোলে নিয়ে বলে।
সিমি:- আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না। সবসময় আমার সাথেই রাখবো।
আনো:- আচ্ছা আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো?
সিমি:- তোমার যা ডাকতে ভালো লাগে তাই বলে ডেকো কেমন?
আনো:- মামুনি বলে ডাকলে তোমার কোনো সমস্যা হবে? তখনি সিমি আনোকে জড়িয়ে ধরে বলে।
সিমি:- নাহ কোনো সমস্যা হবে না। তখনি লতা এসে বলে।
লতা:- ভাবি আল ভাইয়া আপনার সাথে কথা বলবে নেন মোবাইলটা ধরেন। সিমি মনে মনে বলে আমার সাথে কি কথা বলবে তখন বলে।
সিমি:- দাও। মোবাইল হাতে নিয়ে হ্যালো বলেছে তখনি আল বলে।
আল:- আনো’কে লতার কাছে দিয়ে তুমি এখুনি গাড়ীতে গিয়ে বসো। ড্রাইভার তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। বাড়ীতে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো কথা বলবে না সোজা চলে আসবে। আমি ড্রাইভারকে সব বলে দিয়েছি টুট টুট করে ফোন কেটে দিয়েছে।
সিমি:- লতা নাও মোবাইলটা আর আনো’কে তুমি একটু দেখে রেখো বলেই নিচে গেছে। নিচে সবাই বসে কথা বলছে সিমি কাওকে কিছু না বলে বেড়িয়ে আসছে তখনি আলের মা বলে।
মা:- এই মেয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো? সিমি কছুই না বলে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখে ড্রাইভার গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রহিছ:- ভাবি আসুন বলে দরজাটা খুলে দিয়েছে। সিমি গাড়ীতে বসেছে ড্রাইভার গাড়ী চালাচ্ছে সিমি বসে বসে ভাবছে। হঠাৎ করে আমাকে যেতে বলেছে কেনো? আজ সাপ্তাহ খানেক পড়ে বাহিরের আলো দেখতেছি সবকিছু কেমন কেমন লাগছে। ঘন্টা খানেক পড়ে গাড়ীটা থামিয়ে রহিছ মিয়া বলে।
রহিছ:- ভাবি আপনি ভেতরে যান আমি গাড়ীটা পার্কিং করতেছি।
সিমি:- ঠিক আছে। গাড়ী থেকে নেমে সিমি দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়েছে তখনি আল এসেছে।
আল:- সিমি এসো আমার সাথে। সিমি আলের সাথে ভেতরে যেতেই দেখে সেই উকিলটা যে ওদের বিয়ে পড়িয়েছে। সিমি আল দুজনে বসেছে তখন উকিল বলে।
উকিল:- দেখুন এইটা যেহেতু মেয়ের মা মামলা করেছে সেহেতু আদালত মায়ের পক্ষে রায় দেওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আপনার যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে মেয়েকে আপনার কাছে রাখতে পারবেন। তানা হলে এসব রায় বেশীর ভাগ মায়েদের পক্ষে যায়।
সিমি:- যদি মেয়ে আমাদের কাছে থাকতে রাজি হয় তাহলে কি কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিবে?
উকিল:- দেখুন এমনটা একদম কম হয়। আর তাছাড়া মেয়েকে জিজ্ঞেস করবে কিনা সেইটাও দেখার বিষয়। মেয়ের বয়স একদম কম তবে যদি মেয়েকে জিজ্ঞেস করে আর মেয়ে যদি আপনাদের কাছে থাকতে রাজি হয় তাহলে কোর্ট চিন্তা ভাবনা করে দেখবে।
আল:- আদালতে না গিয়ে অন্য কোনো উপায় আছে কি আপনার জানামতে?
উকিল:- মেয়ের মায়ের সাথে চুক্তিপত্র করতে পারেন। যদি মেয়ের মা নিজে মামলা তোলে নেই তাহলে কোনো কিছু করতে হবে না। এখন কি মেয়ের মা রাজি হবে?
আল:- নাহ রাজি হবে না।
উকিল:- এখনো আপনাদের হাতে চারদিন সময় আছে এই চারদিনে যদি কোনো ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে তো সবকিছু থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
আল:- ধন্যবাদ আপনাকে এখন তাহলে আমরা যাই।
উকিল:- তবে মিষ্টার আল আপনার মেয়ে যদি আদালতে বলে আপনার কাছে থাকবে তাহলে কিন্তু আদালত সবকিছু রেখে আপনার মেয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে। আপনি দেখেন এই চারদিনে মেয়েকে ম্যানেজ করতে পারেন কি না।
আল:- ধন্যবাদ উপদেশ দেওয়ার কারণে। সিমি আর আনোকে নিয়ে বেড়িয়ে এসে গাড়ীতে বসেছে। সিমি উকিল কি বলেছো শুনছো তো?
সিমি:- সেটা আমার থেকে আপনি ভালো করে শুনেন। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো কিন্তু আপনি কি করছেন হাঁ?
আল:- মানে?
সিমি:- মানে আপনি কতটুকু সময় দিচ্ছেন আনোকে! আনোর অভিযোগ আছে আপনি ওকে একা রেখে চলে যান। আপনার উচিত আনোর সাথে বেশী করে সময় কাটানো। আনোর সাথে দুষ্টমি করা ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।
আল:- আমি সময় দিতে পারবো না বলেই তোমাকে এনেছি। আজ থেকে তুমি আনোকে সবসময় সাথে রাখবে। যদি আনো আমার কাছে থাকতে রাজি না হয় তাহলে এতে তোমার নিজের ক্ষতি হবে।
সিমি:- আর কি ক্ষতি করবেন? যা করার তা তো করে দিয়েছেন আরও ক্ষতি করার বাকী আছে?
আল:- এখনো তো কোনো ক্ষতি করিনি আরও অনেক বড় ক্ষতি করার বাকী আছে। তুমি কি মনে করেছো আমি তোমার সম্পর্কে কিছু না জেনে বিয়ে করেছি! আমি তোমার সম্পর্কে সব খবর নিয়ে ফেলেছি আর তোমার দূর্বল জায়গাটা খুঁজে পেয়েছি। যদি আমার মেয়েকে আমি না পায় তাহলে তুমিও জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলবে। এখন তোমার কাছে একটা রাস্থা আমার মেয়েকে আমার কাছে এনে দিতে হবে।
সিমি:- ছিঃ আপনি এতটা জঘণ্য হতে পারলেন?
আল:- এর থেকে বেশী জঘন্য হতে পারি সবে তো কিছুই করিনি তবে করবো যদি তুমি ব্যর্থ হও।
সিমি:- প্লিজ আপনার পায়ে পড়ি আপনি এমন কিছুই করবেন না।
আল:- তুমি যদি চাও আমি কিছু না করি তাহলে কাজে লেগে পড়ো। রহিছ মিয়া গাড়ী থামাও। গাড়ীটা থামছে আল নেমে গেছে। ওকে নিয়ে বাড়ীতে যাও বলেই আল চলে গেছে আর সিমিকে নিয়ে ড্রাইভার বাড়ীতে এসেছে। সিমি বাড়ীতে ঢুকতেই ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- এই সিমি শুনো! সিমি না শুনে সোজা লতার কাছে গিয়ে আনো’কে সাথে নিয়ে উপরে চলে গেছে। ঝিনুক রেগে মেগে আগুন হয়ে গেছে।
ভাবি:- দেখলে ঝিনুক মেয়েটা কত বড় সাহোস!
ঝিনুক:- আমি যদি আমার স্বামীর ঘর করতে না পারি তাহলে এই মেয়েকেও আমিও ঘর ছাড়া করে ছাড়বো তুমি দেখে নিও ভাবি।
ভাবি:- কি করেরে করবে তোমার ভাই কি আর তোমার কথা শুনে?
ঝিনুক:- শুনবে শুনবে সময় হলে শুনবে বলেই চলে গেছে। সিমি আনোর সাথে অনেক গল্প করছে আর সময় দিতে আরম্ভ করছে। দেখতে দেখতে আজ আদালতে মামলার শুনানি। আলের পরিবার আর সাহানার পরিবারের সবাই এসেছে আদালতে। আনো সাহানাকে দেখেই বলে।
আনো:- মামুনি আমাকে একটু নিচে নামিয়ে দাও।
সিমি:- না মামুনি নিচে নামা যাবে না। তখনি আনো জোঁড়ে সিমির হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। সিমি চিৎকার দিয়ে আনোকে নিচে নামিয়ে দেয় আর আনো দৌড়ে সাহানার কাছে চলে যায়। আনোর এমন ব্যবহারে সিমি আল দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদালতের কার্জক্রম শুরু হবার আগেই আনো চলে গেছে তাহলে তো আদালতে আনো বলবেই ওর মায়ের কাছে থাকবে। তখনি উকিল এসে বলে।
উকিল:- মেয়েকে সবকিছু বুঝিয়ে সুজিয়ে আনছেন তো? আমরা কিন্তু ওকে জিজ্ঞেস করবো ও কার কাছে থাকবে? আল সিমি কিছুই বলছে না তখন উকিল বলে। আচ্ছা মেয়েটা কোথায়? তখনি আল আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে।
আল:- ঐ ওর মায়ের কোলে। আর সাহানা মুচকি হেসে আনো’কে কোলে করে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করেছে তখন উকিল বলে।
উকিল:- আপনার মেয়েকে তো দেখছি এখুনি ওর মায়ের কাছে চলে গেছে। যদি এই মেয়েকে আদালতে জিজ্ঞেস করে কার কাছে থাকবে তাহলে নিশ্চিৎ বলবে ওর মায়ের কাছে থাকবে। এখন কি করবেন? তখনি সিমি বলে।
সিমি:- তাও একবার জিজ্ঞেস করবেন আমার মন বলছে আমার কাছেই থাকবে।
উকিল:- ঠিক আছে তাই হবে। সবাই আদালতের ভেতরে প্রবেশ করেছি। চুপচাপ বসে আছি কিছুকক্ষণ পর জজ সাহেবা এসেছেন। ওনি আজকের মত আদালতের কার্জক্রম শুরু করেছে। দুই পক্ষের উকিল অনেক যুক্তিতর্ক করে প্রমাণ পেশ করেছে। আমার নামে নানা অপবাদ দিয়েছে যা আমি কোনো দিন করিনি আর আমি সাহানার নামে উকিলের কাছে তেমন কিছুই বলিনি দিন শেষে সে আমার বাচ্চার মা তো তাই। তবে সব সহ্য না করতে পেরে উকিলকে সব বলে দেয় আর উকিল সুযোগ বুঝে একের পর এক পেশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে জজ সাহেবা নিজেই বলে।
জজ:- মেয়েটাকে একবার জিজ্ঞেস করি সে কার কাছে থাকতে পছন্দ করে। তখন আনো’কে জজ সাহেবা জিজ্ঞেস করে মা তুমি বাবা না মা কাকে বেশী ভালোবাসো? আনো একবার আমার দিকে আরেকবার সাহানার দিকে তাকিয়ে বলে।
আনো:- আমি দুজনকে ভালোবাসি।
জজ:- তুমি এনাদের মধ্যে কার কাছে বেশী পছন্দ করো। আনো তাকিয়ে আছে আমাদের দুজনের দিকে আমি মনে মনে বলছি যেনো আমার নামটা বলে। ঠিক তখনি আনো বলে।

চলবে….

গল্প:-#তুমি_চাইলে_যেতে_পারো পর্ব:-(০৮)
লিখা:-AL Mohammad Sourav

জজ সাহেবা আনোকে জিজ্ঞেস করছে মা তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো তোমার বাবাকে না মাকে! আনো সুন্দর করে উত্তর দিয়েছে আমি দুজনকে ভালোবাসি। জজ সাহেবা কিছুটা চুপচাপ থেকে আবার জিজ্ঞেস করে ওদের মধ্যে তুমি কার কাছে থাকতে বেশী পছন্দ করো! কার সাথে থাকলে তোমার বেশী ভালো লাগে তোমার বাবার কাছে না তোমার আম্মুর কাছে! তখন আনো আমার দিকে আর সাহানার দিকে তাকিয়ে বলে আমি মামুনির কাছে থাকতে বেশী পছন্দ করি। মামুনি আমাকে সবার চেয়ে বেশী আদর করে। আনোর এই কথা শুনে সাহানা সহ ওর বাড়ীর সবাই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে। আমি মাথাটা নিচু করে রাখছি বুকের হার্টবির্ট বেড়ে গেছে। ঠিক তখনি আনো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে আমি ঐ মামুনির সাথে থাকবো আমি ওনাকে কথা দিয়েছি ওনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। সাথে সাথে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে তখনি জজ সাহেবা বলে। তুমি যার কাছে বেশী থাকতে পছন্দ করো তার কাছে যাও। আনো একটা দৌড় দিয়েই সিমির কাছে চলে এসে বলে। আমি এই মামুনির কাছে বেশী থাকে পছন্দ করি। আর ওনি আমার সাথে খেলা করে চকলেট কিনে দেয় আমাকে সবার চেয়ে বেশী আদর করে। আমি সিমির দিকে তাকিয়ে দেখি সিমির চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ছে। তখনি জজ সাহেবা বলে আপনি এই বাচ্চার কি হোন। তখনি উকিল বলে।
উকিল:- ওনার নাম সিমি রহমান আল ইসলামের বর্তমান স্ত্রী। আনোকে ওনি নিজের মেয়ের মত আগলে রাখছে আর খুব যত্নবান আনোর প্রতি। আপনি আনোকে ওর কাছে থাকার অনুমতি দিন। সাহানার উকিল কিছু বলতে ছিলো তখনি জজ সাহেবা থামিয়ে দিয়ে বলে।
জজ সাহেবা:- বাচ্চটা যেহেতু মিসেস আলের কাছে থাকতে পছন্দ করে তাহলে বর্তমানে বাচ্চাটাকে মিসেস আলের উপর দ্বায়িত্ব দেওয়া হলো। আজ থেকে বাচ্চাটার সব দ্বায়িত্ব থাকবে মিষ্টার আল ইসলাম আর ওনার বর্তমান স্ত্রী সিমি রহমানের উপরে। বাচ্চাটাকে সব স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে বড় করবেন আপনাদের প্রতি এইটা আদালতের নির্দেশ। এই বলে আদালতের কার্জক্রম শেষ করে দিয়ে ওনি উঠে চলে গেছে। সিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে আনো সিমির কোলের উপরে। তখনি সাহানা এসে বলে।
সাহানা:- আমি দরকার হলে উচ্চ আদালতে যাবো তখনি দাদী বলে উঠে।
দাদী:- দেখো সাহানা আমি এতদিন কিছু বলিনি কারণ আমি মনে করেছি সব দোষ আল ইসলামের কিন্তু আজ বুঝতে পারছি সব দোষ তোমার। এরপর যদি তুমি আর কোনো রকম বাড়াবাড়ি করো তাহলে এর পরিনাম কিন্তু খুব খারাপ হবে।
হায়দার সাহেব:- আপনার শুধু এইটাই চিন্তা করেছেন আর কোনো কিছু চিন্তা করেন নাই। আপনার নাতনী ঝিনুকের কি হবে! আমি আজকেই ফিরুজদের বাড়ীতে যাবো আর বলবো ঝিনুককে ডির্ভোস দিয়ে দিতে।
দাদী:- ডির্ভোস দিলে আমরা আমাদের নাতনীকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। তাও আপনাদের মত লোকেদের সাথে সম্পর্ক রাখার কোনো ইচ্ছে নেই। সবাই বাড়ীতে চলো তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- দাদী তুমি আমার ব্যপারে বলার কে? তোমার জন্য আজ আল এত কিছু করার সাহোস পাচ্ছে? তুমি তোমার নাতীর জীবন সুন্দর করতে গিয়ে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে।
বাবা:- হ্যা মা ঝিনুকের কথাটা একবার আমাদের সবার চিন্তা করা দরকার ছিলো।
দাদী:- আগে বাড়ীতে চল তখন ঠান্ডা মাথায় বসে সিদ্ধান্ত নিবো।
আল:- তোমরা বাড়ীতে যাও আমার কিছু কাজ আছে বলে আল চলে গেছে। সিমি সহ সবাই বাড়ীতে এসেছে। সোফায় বসে বসে সবাই বলতেছে যাক এবার যদি ঝিনুকের শ্বশুর বাড়ীর সাথে সম্পর্কটা ভালো হয় তাহলে সংসারে কিছুটা শান্তি ফিরে আসবে।
মা:- সাহানার বাবার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ওনারা ঝিনুকের ডির্ভোস করিয়ে ছাড়বে।
বাবা:- জামাইয়ের সাথে কথা বলবো ওকে বুঝালে ব্যপারটা বুঝতে পারবে। আর তাছাড়া ফিরুজ ঝিনুককে অনেক ভালোবাসে মনে হয় না ডির্ভোস দিবে। সবাই নানান ভাবে নানা রকম কথা বলছে তখন সিমি উপরে গেছে আনোকে নিয়ে।
আনো:- মামুনি আমি কিন্তু কথা রেখেছি এবার কিন্তু তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। সিমি চুপচাপ বসে আছে কি বলবে আনোকে। সিমি মুখে হাসি এনে বলে।
সিমি:- আমিও তো কথা রেখেছি। তোমাকে ছেড়ে তো কোথাও যায়না। আর সবসময় তোমার কাছে থাকি। তোমার সাথে খেলা করি তাইনা বলো?
আনো:- হ্যা মামুনি উম্মা বলে সিমির গালে চুমু দিয়ে দিছে। দুজনে দুষ্টমি করতে করতে সময় পার করে দিয়েছে।

রাত দশটা বাজে তখন আল বাড়ীতে এসেছে হাতে কিছু শপিং ব্যাগ নিয়ে। আলের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে তখন ওর ভাবি বলে।
ভাবি:- আল কার জন্য শপিং করে নিয়ে এলে? আল কোনো কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে গেছে।
ঝিনুক:- ভাবি কষ্ট পেওনা কিছুদিন যেতে দাও তারপর দেখবে কেমন ঝড় আসে। এবারের ঝড়ে আল আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
ভাবি:- হ্যা তা তুমি ঠিক বলেছো আমিও দেখবো কেমন করে সংসার করে বলে দুজনে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেছে।

আল ঘরে ঢুকে দেখে সিমি আর আনো ঘুমাচ্ছে। আল তার হাতের শপিং ব্যাগ গুলি ওর আলমারীতে তালা দিয়ে রেখে ওয়াশরুমে গেছে। কিছুকক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বেড় হয়ে দেখে আনো আর সিমি দুজনে গল্প করছে। আল কিছু বলবে এর মাঝে সিমি বলে।
সিমি:- আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি এবার আপনি কিন্তু আপনার কথা রাখবেন আল একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলে।
আল:- আমি কোনো কিছু ভুলিনা আর সেইটা তো একেবারে ভুলিনা যেইটা আমি নিজে কথা দেয়। এখন খিদা লাগছে খাবো আর তোমার যদি খেতে ইচ্ছে হয় তাহলে এসো। আল বেড়িয়ে গেছে সিমিও ওর সাথে খাবার টেবিলে গেছে। আজ বাড়ীর সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। যার যার মত করে খাবার শেষ করে সোফায় বসেছে। আল সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতেছিলো তখনি দাদী বলে।
দাদী:- আল একটা কথা জানার ছিলো।
আল:- আবার কি কথা!
দাদী:- তোর নতুন বৌয়ের শুধু নামটা জানি কিন্তু আর কোনো কিছুই তো জানি না। ওর বংশগত পরিচয় কি? কোথায় বাড়ী? নাকী কোনো অনাথ আশ্রম থেকে বড় হয়েছে এসব কিছুই জানি না। এখন আমাদের সবাইকে বল সিমির পরিচয়টা?
আল:- ওর পরিচয় জেনে তোমরা কি করবে? আমি ওকে বিয়ে করেছি আমার সাথে সংসার করবে। ওর পরিচয় জানাটা সবচেয়ে বেশী জুরুরী আমার আর আমি যেহেতু সবকিছু জানি এতেই চলবে। সিমি আসো আমার সাথে বলেই চলে যেতেছিলো তখনি ওর বড় বোন বলে।
ঝিনুক:- আল আমাদের তো এইটুকু জানা অধিকার আছে ওর বাবা মার নাম কি? নাকী সে অনাথ আশ্রম থেকে বড় হয়ছে আর তোর টাকা পয়সা দেখে তোর মত বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করে এক কাপড়ে বাড়ীতে চলে এসেছে।
বাবা:- হ্যা আল এবার তো বল সিমির পরিচয় কি?
আল:- সময় হলে সব জানতে পারবে। ওর পরিচয় কি ওর বাড়ী কোথায় কি? সব জানতে পারবে। এখন আমি ওর সম্পর্কে কিছুই বলতে চাচ্ছি না। সিমি আসো আমার সাথে বলে আল সিমির হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেছে তখনি সিমি তাঁর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।
সিমি:- আমি আর এক মূহুর্তের জন্যও এই বাড়ীতে থাকবো না। আমার এই বন্ধ ঘর একদম ভালো লাগছে না। প্লিজ আপনি আমাকে যেতে দিন। আপনি যেই কাজের জন্য এনেছেন সেই কাজটা তো হয়ে গেছে তাহলে কেনো আমাকে আটকিয়ে রাখছেন?
আল:- তোমাকে আটকিয়ে রাখার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে মুক্ত করে দিবো। তখন তুমি চাইলে যেতে পারবে আমি তোমাকে কোনো রকম বাধা দিবো না। আজ এমনিতে অনেক পরিশ্রম গেছে তোমার উপর দিয় তুমি শুয়ে পড়ো।
সিমি:- তা আপনার সময়টা কবে হবে তা তো জানতে পারি?
আল:- হবে হবে খুব তাঁড়াতাড়ি তবে তুমি যত চুপচাপ থাকবে ততটায় তাঁড়াতাড়ি আমার থেকে দূরে যেতে পারবে। আমি আজ এই রুমে থাকবো তুমি চাইলে আনোর ঐ পাশে শুয়ে পড়তে পারো। তবে ভয় নেই আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমার প্রতি তোমার যদিও বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই তাও বলি আমি কোনো ক্ষতি করবো না বলেই আল খাটের উপরে শুয়ে পড়ছে।
সিমি:- আপনি আর কি ক্ষতি করবেন ক্ষতি যা করার তা তো করে ফেলছেন। আল কোনো সারাশব্দ করছেনা। সিমি অনেকটা রেগে গিয়ে বারান্দায় চলে গেছে। চেয়ারে বসে আছে কিছুকক্ষণ পর মশা গান শুনাতে আরম্ভ করেছে। সিমি বিরক্ত হয়ে রুমে এসে আনোর পাশে শুয়ে পড়েছে। তখনি আল বলে।
আল:- মশার গান শুনা শেষ হয়ে গেছে?
সিমি:- আপনি এখনো ঘুমান নাই! আল আর কোনো কথা বলেনি। সিমি কিছুটা রেগে ওল্টো দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আল রুমে নেই। আল আজ সকালে বেড়িয়ে গেছে। সিমি আনোকে সাথে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে মালা বসে আছে। মালাকে দেখে সিমির মনে পড়ছে ঐদিন যে কান্না করেছে সেই কথাটা। সিমি মালার কাছে গেছে মালা উঠে যেতে ছিলো তখনি সিমি বলে।
সিমি:- মালা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মালা:- দেখুন ভাবি আপনি আনোর মন জয় করেছেন বলে আমার মন জয় করে নিবেন তা কিন্তু ভুলেও চিন্তা করবেন না। আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা।
সিমি:- আমি তোমার বড় বোনের মত তুমি চাইলে আমার কাছে বলতে পারো আমি কথা দিচ্ছি তোমার সমস্যা সমাধান করবো।
মালা:- কোনো সমস্যা থাকলে তো বলবো!
সিমি:- তাহলে তুমি কান্না করছিলে কেনো? তখন মালা চুপ করে গেছে আর তখনি সিমি বলে। দেখো আমি একটা মেয়ে আর আমি বুঝতে পারি অন্য একটা মেয়ে কেনো একা একা কান্না করে। তখনি মালা সিমিকে জড়িয়ে ধরে আর বলে।
মালা:- ভাবি আবিরকে অনেক ভালোবাসি। আবিরের বাড়ী থেকে ওকে বিয়ের জন্য চাপ দিতেছে। আমাকে আবির বার বার বলতেছে আমাদের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্থাব নিয়ে কবে আসবে। আমি বারণ করে দিতেছি বর্তমানে আমাদের বাড়ীর যে অবস্থা এই অবস্থা যদি আবিরের বাবা মা দেখে তাহলে নির্ঘাত ওনারা আবিরকে এই বাড়ীতে বিয়ে করাবে না। এখন আমি কি করবো বলেন ভাবি? সিমি কিছুটা চুপচাপ থেকে বলে।
সিমি:- তুমি সামনে শুক্রবার আবিরের পরিবারকে আসতে বলো আমি সবকিছু ম্যানেজ করবো।
মালা:- কিন্তু ভাবি বাড়ীর সবাইকে ম্যানেজ করবে কি ভাবে?
সিমি:- সেইটা আমার দ্বায়িত্ব তুমি শুধু আবিরকে বলো শুক্রবারে ওর বাবা মাকে নিয়ে আসতে।
মালা:- ভাবি তুমি আমাকে বাচালে। তখনি ঝিনুক এসেছে আর সিমি মালা দুজনে চুপচাপ হয়ে গেছে।
ঝিনুক:- মালা তোর তো দেখছি কোনো কথা মনে থাকে না। তোকে কতবার বলেছি এই মেয়ের সাথে বেশী কথা বলবি না তাও কেনো বার বার এত কথা বলিশ?
মালা:- দেখ আপু এইটা আমার ব্যপার কার সাথে কথা বলবো আর বলবো না। এই কথা বলে মালা চলে গেছে।
ঝিনুক:- এই মেয়ে তুমি কি কোনো তাবিজ টাবিজ করতে জানো নাকী! প্রথমে আলের মাথাটা নষ্ট করেছে এরপর আনোর আর এখন মালাকেও তোমার বশে নিয়ে গেছো?
সিমি:- তাবিজ করতে জানি না তবে আমি মানুষের মন বুঝতে পারি যার জন্য খুব তাঁড়াতাড়ি আমাকে সবাই আপন করে নেয়। এই কথা বলে সিমি আনোকে নিয়ে রুমে চলে গেছে। সিমি চিন্তা করতে লাগলো কি ভাবে সবাইকে রাজি করায় তখনি সিমির একটা প্ল্যান মাথায় এসেছে। হ্যা এই প্ল্যান মতে কাজ করতে হবে বলে সিমি আনোকে লতার কাছে দিয়ে ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে একটু বাহিরে যায় সিমি তাঁর প্ল্যান মতে কাজ করে বাড়ীতে ফিরে আসে। যখনি বাড়ীতে ঢুকছে তখনি ঝিনুক আর ভাবি দুজনে বলতেছে আজ চান্দু গেছে। সিমি কিছু না বলে রুমে গেছে তখনি চেয়ে দেখে আল বসে আছে। আলকে এমন সময় দেখে সিমি অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। তখনি আল সিমির কাছে এসে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে বলে।
আল:- যাও তুমি তাঁড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তোমাকে নিয়ে বেরুবো।
সিমি:- কোথায় যাবেন?
আল:- গেলে বুঝতে পারবে। আর কথা কম বলে চলো আমার সাথে। সিমি কোনো কথা বলেনি শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গেছে। ভেতরে ঢুকে ব্যাগটার ভিতর থেকে নেবিব্লু চুড়িদারের সাথে ম্যাচিং চুড়ি এক সেট জিনিস। আরে ওনি আমার পছন্দের কালার জানলো কি করে! তখন সিমি মনে মনে ভাবে আমার শরীরে চুড়িদার লাগবে তো আগে ট্রায়াল দিয়ে দেখি। প্রথমে চুড়ি গুলি নিয়ে হাতে দিতেই সুন্দর করে হাতে ঢুকে গেছে সিমির মনটা খুশি হয়ে গেছে। যাক যেহেতু চুড়ি লাগছে সেহেতু বাকী সব লাগবে। সিমি ফ্রেশ হয়ে সবকিছু পড়ে একদম সেজে গুজে বেড়িয়ে দেখে আল আনোর জুতার ফিতা বানতেছে।
সিমি:- আমি রেডি চলেন কোথায় যাবেন? তখনি আল সিমির দিকে চেয়েছে। সিমিকে সত্যি এই কালার কাপড়ের সাথে দারুন মানিয়েছে। আল চেয়ে আছে সিমি লজ্জা পাচ্ছে তখনি আনো বলে।
আনো:- মামুনি তুমি এত সুন্দর করে সাজগুজ করে বেড় হয়েও না। মানুষ তোমাকে নজর লাগিয়ে দিবে। তখন সিমি কিছু বলতে ছিলো তাঁর আগেই আল বলে।
আল:- আনো মা তোমার মামুনিকে একদম কালো পেচার মত লাগছে। একদম সুন্দর লাগছে না। তোমার মামুনিকে বলো এই চুড়িদার খুলে অন্য গুলি পড়ে যেতে।
আনো:- বাবাই তুমি মিথ্যা বলছো মামুনিকে এই কাপড়ে সুন্দর লাগছে।
সিমি:- মামুনি তোমার বাবাইকে বলে দাও সুন্দর লাগুক আর না লাগুক আমি এই ভাবে বেরুবো। যদি ইচ্ছে হয় তাহলে নিয়ে যাবে আর নয় তো একা একা যেতে বলো।
আল:- তোমাকে সুন্দর লাগলে কি আর না লাগলে কি? কিছুদিন পড়ে তো চলেই যেতে হবে। চলো এখন আমার সাথে। আনোকে কোলে নিয়ে দুজনে নিচে গেছে তখনি আলের মা বলে।
মা:- আল এই সন্ধা বেলা তোরা কোথাও যাচ্ছিস?
আল:- তেমন কোথাও না বলেই বেড়িয়ে গেছে। আল নিজেই গাড়ী চালাবে বলে ড্রাইভার কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিছে। সিমি আর আনো দুজনে পেছনে বসেছে। আল ড্রাইভিং করছে সিমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর মনে হচ্ছে এই রাস্থা গুলি খুব চেনা চেনা লাগছে। গাড়ীটা যত যাচ্ছে ততই সিমির বুকের হার্টবির্ট বারতেছে। তখনি সিমি বলে উঠে।
সিমি:- এই আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
আল:- গেলেই দেখতে পারবে এখন চুপচাপ বসে থাকো। সিমি আর কোনো কথা বলেনি আল গাড়ীটা চালাচ্ছে আর মিট মিট হাসতেছে। সিমি রাগি চোখে তাকিয়ে আছে এর মধ্যে গন্তব্যস্থান পৌছে গেছে। গাড়ীটা থামিয়ে বলি সিমি নামো তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
সিমি:- আপনার সাথে দেখা হবার পর থেকে প্রতিটা দিন প্রতিটা সময় আমি সারপ্রাইজ হয়ে যায়।
আল:- তবে এবার সারপ্রাইজটা একটু অন্যরকম বলে দুজনে গাড়ী থেকে নেমেছে। সিমি তাকিয়ে সত্যি সত্যি সারপ্রাইজ হয়ে গেছে সিমির চোখে অশ্রু জমে গেছে তখনি আল বলে। ভিতরে চলো আরো অনেক কিছু দেখার বাকী আছে এখানে দাঁড়িয়ে কান্না করতে হবে না। তখনি আল সিমির হাতটা ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে