তুমি গহীন অনুভব পর্ব-২+৩

0
631

#তুমি_গহীন_অনুভব
২+৩
#পর্ব_২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

নতুন সকাল সবার জীবনে নতুন কিছু বয়ে আনে। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই চোখ খুললো ইরজা পাশে তাকাতেই দেখতে পেল ফুয়াদ ওর মাথার কাছে বসে আছে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে ঘুমিয়ে আছে। সাইডে একটা বাটিতে জলপট্টির কাপড় দেখে বুঝতে পারল রাতে বোধহয় ওর জ্বর এসেছিল। এখন জ্বর নেই সবকিছু ভালোই লাগছে। ও নিজেই উঠে বসলো ওর নড়াচড়ায় ফুয়াদ উঠে গেল আর বলল,,

“মিস ইরজা উঠে পড়েছেন আমাকে ডাকবেন তো!দেখি আপনার জ্বর আছে কিনা রাতে অনেক জ্বর এসেছিল আপনার। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আজরিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । তাই ওর দিকেই তাকিয়ে রইলো। আজরিন ইশারা করে দেখালো ওয়াশরুমে যাবে নামাজ পরবে। এটা দেখে ফুয়াদ ওকে সাহায্য করলো আজ কোলে তুলতে গেলেও আজরিন হাত দিয়ে বারন করলো শুধু হাঁটতে সাহায্য করতে বলল। আজরিন ফুয়াদের সাহায্য আস্তে আস্তে করে ওয়াশরুমে গেল ।ওযু করে এলো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“আপনি একটু বসুন আমিও ওযু করে আসি একসাথে নামাজ পরবো।আপনি চেয়ারে বসে করবেন আর আমি নিচে।

আজরিন মাথা কাত করলো । ফুয়াদ আসতেই ওরা দুজনে একসাথে নামাজ পড়ে নিল। তারপর আজরিন ইশারা করলো বেলকনিতে যাবে। ফুয়াদ ওকে বেলকনিতে নিয়ে গেল। তখন ফুয়াদ বলল,,

“এখন কেমন লাগছে মিস ইরজা? পায়ের অবস্থা কেমন?

আজরিন আইজানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আর মাথা কাত করে দেখালো ভালো। তা দেখে আইজান মুচকি হেসে বলল,,

“কফি খাবেন?

আজরিন মানা করলো। ফুয়াদ বুঝতে পারলো আজরিনের মন খারাপ ও রুমে এসে কাউকে ফোন করে আজরিনের দিকে এগিয়ে দিল। আজরিন ফোনটা কানে নিল আর মুহুর্তেই ওর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। ফুয়াদ মুগ্ধ চোখে আজরিনের হাসি দেখলো। আজরিনের খুব ইচ্ছে করছে কথা বলতে ও কষ্ট হলেও একদম অল্প আওয়াজ এ বলল,,

“আমি ঠিক আছি তুমি ব্যস্ত হয়ো না। এদিকে সব ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি কোন ভালো কিছু ঘটবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে আছেন।

ওপাশ থেকে কি বললো তা এপাশ থেকে ফুয়াদ শুনতে পেল না। তবে তার শুভ্রপরী যখন হেসেছে আর কথা বলেছে তাতেই তার শান্তি। আজরিন ফোন রেখে দিল তখন ফুয়াদ বলল,,

“মিস ইরজা আপনি কথা বলতে পারছেন আমি তো বিশ্বাস -ই করতে পারছি না। ডাক্তার তো বলেছিল আপনি কয়েকদিন কথাই বলতে পারবেন না।আপনি জানেন আপনার কথা আমি কতো মিস করছিলাম।

ফুয়াদের বাচ্চামো দেখে আজরিন হাসলো। আর আস্তে করে বলল,,

“ডাক্তার তো বলেছিল আমি ইচ্ছে করলে তাড়াতাড়িই কথা বলতে পারবো জড়তা অনেকটাই কমে গেছে তবে এখানে তার কথা বলার জন্যই তাড়াতাড়ি কথা বলতে পারলাম আমার মনে হচ্ছিল এখন যদি আমি তাকে না থামাই তাহলে তার প্যানিক অ্যাটাক করবে। আচ্ছা যাই হোক ভালোই হলো কথা বলতে পারছি নাহলে আর বোবা শুনতে হবে না। এই খুশিতে এক কাপ কফি খাওয়া যাক। আপনি কিন্তু কফিটা দারুন বানান।

“আপনি এমন কেন বলুন তো তবে আমার মনে হয় আজ কষ্ট করে না কথা বলাই বেটার হবে।কাল থেকে শুরু করুন। আর আমি কফি আনছি গরম কফি খেলে গলাটা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

তখন আজরিন বলল,,

“বারে আজ কতো গুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনার আমি সাথে থাকবো না বুঝি। তাছাড়া আমি চাইনা এখন কেউ আমার বিষয়ে জানুক‌। নতুন গল্প বানাতে হবে।”

“আমি গল্প বানাতে হবে না যা সত্যি তাই বলবো ভেবে নিয়েছি আমি একজন সি আইডি অফিসার আমি জানি কোন জিনিস টা কোন সময় করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আপনার কথা বলা বন্ধ রাখুন আমাদের বাড়িতে যে সবাই আমার মায়ের মতো ভালো তা কিন্তু নয় এখানে কিছু খারাপ মানুষ ও আছে আমি চাই না আজ ঝামেলা করতে। কাল থেকে আপনি কথা বলবেন আজ যা বলার আমি বলবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আপনি বসুন আমি কফি আনছি!

ফুয়াদ নিচে চলে গেল ও নিচে গিয়ে দেখতে পেল ওর মা কিচেনে বাকিরা কেউ বোধহয় এখনো উঠেনি। ও গিয়ে বলল,,

“আরে মা তুমি এতো সকালে কিচেনে?

তখন আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“নামাজ পড়ে মনে হলো একটু চা খাই তাই এলাম তা তুই এখানে কি করছিস। আর মেয়েটা এখন কেমন আছে?

“ওহ আচ্ছা হুম ও এখন ভালো আছে। এখন সরো কফি বানাই!

“তুই বোস আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

“না মা ও আমার হাতে কফি খেতে চেয়েছে।”

এ কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,,

“মেয়েটা কফিও খায়! না মানে,,

“আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো গ্ৰামের মেয়ে হয়েও কফি খাবে ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না তাই না। আরে গ্ৰামে থাকে বলে কি তাদের কফি খাওয়া বারন নাকি।”

“আমি তা মিন করিনি।

“হুম তুমি কফি খাবে বানাবো?

“আমি তো চা খেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ছেলে যখন কফি বানাবে তাহলে কফিই খাই।”

ফুয়াদ মুচকি হেসে তিন মগ কফি বানালো। আর মুচকি হেসে আয়েশা চৌধুরী এর দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল। তারপর দুই মগ কফি খেয়ে উপরে চলে যেতে নিল। তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“তোরা কি নাস্তা নিচে এসে করবি নাকি রুমে পাঠিয়ে দিব।”

“হুম নিচে এসে করবো নাহলে চৌধুরী বাড়ির কিছু রক্ত আবার বলবে বিয়ে করেই বউ নিয়ে ঘর আঁটকে বসে আছি। নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে মেয়ে।

“তুই আর ভালো হলি না। তা মেয়েটা নিচে আসতে পারবে তো?

“না পারলে কোলে নিয়ে আসবো বুঝলে।”

বলেই ফুয়াদ রুমে চলে গেল। আজরিনের দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল। আজরিন মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দিল। আজরিন খেয়ে বলল,,

“আপনি কফিটা ভালোই বানান। আজকের কফিটাও ভালো হয়েছে।”

“ধন্যবাদ মিস বিউটিফুল!”

“বিউটিফুল?”

“আজরিন অর্থ কি বলুন তো?

“সুন্দর!”

“সুন্দর ইংরেজি কি?”

“বিউটিফুল!’

“তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো বলুন তো আমি কিন্তু আপনার আরেকটা নামেই ডাকলাম।”

“আপনি পারেন ও বটে। আচ্ছা আপনার পরিবার কি আমাকে মেনে নেবে।

“”না মানলে মানিয়ে নিবেন। আর আমি জানি আপনি পারবেন।”

“আপনি আজ অফিস যাবেন না।

“হুম যাবো তারপর তো স্যারের সম্পর্কে কিছু তথ্য জমা দিতে হবে। সবকিছু ক্লিন শিট বের করতে হবে যাতে এই খবরটা বাইরে না বের হয়। অবশ্য আমি আগেই সব ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তাই কেউ কিছু জানতে পারে নি তাই সমস্যা হবে না ।”

এগুলো শুনে আজরিনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও কিছু বললো না প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“জীবনে অপত্যাশিতভাবে অনেক কিছুই ঘটে। তবে আপনি চিন্তা করবেন না সবকিছুর হিসাব দিতে হবে তাদের। সবাইকে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতে হবে।”

আজরিনের আর ভালো লাগছে না। ও আস্তে আস্তে রুমের ভেতরে চলে গেল ফুয়াদ অবশ্য সাহায্য করলো। আর বিছানায় আধশুয়া হয়ে রইলো। তখন ওদের রুমে নক পড়লো।ফায়জা এসেছে,

“ভাইয়া আসবো?

“হ্যা আয়!

ফায়জা এসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছো?

আজরিন আস্তে আস্তে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আরেব্বাস ভাইয়া কাল বলছিল তুমি দুদিন কথা বলতে পারবে না কিন্তু তুমি তো আজ থেকেই কথা বলতে পারছো। আমি হলাম তোমার একমাত্র আপন ননদ আরেকটা ননদ ও আছে তোমার আমাদের কাকাতো বোন তিশা আপু ।ভাবি তুমি মাইন্ড করো না আমি আসলে কাছের মানুষদের আপনি করে বলতে পারি না। আর তুমি ও আমাকে প্লিজ তুমি করে বলো আপনি করে বলো না। আমার লজ্জা লাগে এমনিতেও তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমার বড়।

তখন ফুয়াদ বলল,,

“এসেই ট্রেনের মতো কথা চালু করে দিলি তো। এই জন্যই কাল আসতে তোকে বারন করেছিলাম। ইরজা ও হচ্ছে আমার বোন ফায়জা এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কিন্তু ভাব ধরে বাংলাদেশ পাশ করেছে।

“ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি সবসময় আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করো এটা মোটেও ঠিক নয়।

“যা সত্যি তাই বললাম।

“আমি কিন্তু ভাবির কাছে বিচার দিব।

“তো করনা আমি ফুয়াদ আইজান চৌধুরী আমি কাউকে দেখে ভয় পাই না বুঝলি।

“ভাবি তুমি প্লিজ কিছু বলো!”

এতক্ষণ আজরিন অবাক চোখে ফুয়াদ কে দেখছিল। এগুলো দেখে ওর পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে চোখে পানি চিকচিক করছে। ফায়জার কথা শুনে আজরিন আস্তে আস্তে করে বলল,,

“মিস্টার আইজান বাচ্চাদের মতো কি শুরু করেছেন। এটা কিন্তু ফুয়াদ আইজান চৌধুরীর সাথে যায় না। এরকম ছোট বাচ্চার সাথে ঝগড়া করছেন।”

ফুয়াদ আজরিনের দিকে তাকিয়ে আবার ফায়জার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এখন তোর সাথে ঝগড়া করার মুড নেই তাই আর করলাম না। তা আরেকজন কই নাকি কাল সময়মতো আসিনি বলে রাগ করে আছে।

“হুম রাগ করে আছে।

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“আমি রাগ করে নেই ভাইয়া। নতুন ভাবি যে পেয়ে গেছি।

তখন পেছনে তাকিয়ে দেখলো তিশা এসেছে। তখন ফুয়াদ বলল,,

“সরি বোনু কাল ওভাবে, আসলে একজায়গায় আটকে পড়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।

“তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে না ভাইয়া আমি জানি। আর ভাবি আমি হলাম তোমার ননদ তিশা। ভাবি কেমন আছো তুমি?

আজরিন মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আমি তোমার জামাইয়ের ছোট তাই আপনি বলতে হবে না। তুমি করেই বলো। আচ্ছা ভাবির কি হয়েছিল ভাইয়া যে কথা বলতে পারছিল না।

“আসলে ওর গালে আর গলায় ব্যাথা ছিল তাই কথা বলতে পারছিল না। এখন ব্যাথা কমে গেছে তাই আস্তে আস্তে কথা বলতে পারছে।

“গলা ব্যাথা কিভাবে হলো?

“ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল।

“ওহ আচ্ছা!”

ওরা কিছুক্ষণ কথা বললো তারপর চলে গেল। এতক্ষণ আজরিন সবকিছু দেখছিল কোন কথা বলে নি। আজরিন বুঝতে পারল ফুয়াদের সাথে ওদের সম্পর্ক ভালো। যেমনটা ওদের মাঝে ছিল।

চৌধুরী বাড়ির সকলে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। সবাই নামলেও আজরিন আর ফুয়াদ আইজান এখনো নামেনি। কিছুক্ষণ পর আইজান আজরিন কে ধরে ধরে নিচে আসলো সকলে উৎসুক জনতার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজরিন দাঁড়িয়ে আছে তখন আয়েশা চৌধুরী বলল,,

“মা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো আর ফুয়াদ তুই দাড়িয়ে আছিস কেন তুই ওকে নিয়ে বোস।”

তখন ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা বসো এমনিতেও মেয়েটা অসুস্থ।”

এ কথা শুনে সকলে ইশতিয়াক চৌধুরীর দিকে তাকালো।উনি কি মেয়েটাকে মেনে নিয়েছে। ওরা বসলো আয়েশা চৌধুরী সকল কে খাবার দিল। আজরিন অল্প অল্প করে খাচ্ছে। সকলে খাচ্ছে আর আজরিন কে দেখছে। মেয়েটা সুন্দরী বলা চলে সুন্দর করে মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে এসেছে। মেয়েটার মুখ দেখলে যে কেউ মায়ায় পড়ে যাবে।

( ফুয়াদের বাবারা দুই ভাই তাদের এক বোন আছে। বাবা ইশতিয়াক চৌধুরী মা আয়েশা চৌধুরী বোন ফায়জা চৌধুরী। চাচা ইসহাক চৌধুরী তার স্ত্রী তমা চৌধুরী তাদের এক ছেলে এক মেয়ে ছেলে তুহিন চৌধুরী সে বাবা চাচাদের সাথে বিজনেস করে তার স্ত্রী স্বপ্না চৌধুরী তাদের দু বছরের ছেলে আছে নাম তৌকির। মেয়ে তিশা তার কয়েকদিন পর বিয়ে হবে। ফুপু মায়মুনা চৌধুরীর তার মেয়েই মলি সে চাইতো তার ননদ কে ফুয়াদের সাথে বিয়ে দিতে ।)

সবার খাওয়া শেষ হলে ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“তো আমরা কি এখন জানতে পারি তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো?

তখন ফুয়াদ বলল,,

“আসলে আমি ইরজাকে পছন্দ করতাম তাই বিয়ে করেছি।”

“এটা কোন কারন হতে পারে না। যদি পছন্দ-ই করতে তাহলে আমাদের জানাতে পারতে আমরা কথা বলতাম ওর পরিবারের সাথে।

“আপনি তো গ্ৰামকে পছন্দ করেন না তাই বলিনি।

এ কথা শুনে শুনে সবাই ফুয়াদের দিকে তাকালো। তখন ফুয়াদ বলল,,

“ওর ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমরা যাই ।

“মেয়েটার বাবা কি করে? নাম কি? সেগুলো তো জানাই হলো না।

তখন আজরিন আস্তে আস্তে বলল,,

“আমার বাবার নাম আজাহার মির্জা। আপনি নামটা বোধহয় শুনেছেন !

এ কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে আজরিনের দিকে তাকালো এই মেয়েটা কথা বলতে পারছিল না কাল অথচ আজ বলছে । ইশতিয়াক চৌধুরী উঠে এসে চমকে গেলেন নাম শুনে তিনি ধীর পায়ে আজরিনের সামনে এসে বলল,,,

“মধুপুর তোমার গ্ৰাম তাই না।

“হুম।

“আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। “ফুয়াদ তুমি এখন ওকে ওপরে নিয়ে যাও। আর খেয়াল রাখবে আজরিনের যেন কোন অসুবিধা না হয়। বাকিরা যে যার কাছে যাও। আর হ্যা আজরিন আমাদের বাড়ির বউ এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।ও এ চৌধুরী বাড়ির বউ তাই তার কোন অসম্মান হয় এরকম কোন কাজ করবে না।

বলেই ইশতিয়াক চৌধুরী রুমে চলে যেতে লাগলেন সাথে আয়েশা চৌধুরী ও।তার চোখ দুটো ভিজে উঠছে। বাকিরা ইশতিয়াক চৌধুরী এর এরকম ব্যবহার বুঝতে পারল না। বাবার নাম শুনে আজরিন কে মেনে নিল। আজরিন ওনার অবস্থা বুঝতে পারলো। ফুয়াদ ও হয়তো একটু আন্দাজ করতে পারছে। ‘আংকেল শুনুন! এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী থেমে গেলে আজরিন আস্তে আস্তে তার কাছে গেল সাথে ফুয়াদ ও আজরিন আস্তে আস্তে বলল যাতে কেউ না শুনে,,

“বাবা আপনার জন্য একটা চিঠি রেখে গিয়েছেন তিনি একবার হলেও আপনাকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পান নি।

কথা বলার সময় আজরিনের গলা ধরে আসছিল। আজরিনের কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,,

“রেখে গিয়েছেন মানে টা কি? আজাহার কোথায় গিয়েছে।

তখন ফুয়াদ ও আস্তে আস্তে বলল,,

“স্যার সাত দিন আগে মারা গেছেন বাবা।”

এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী এক হাত পিছিয়ে গেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না সে পৃথিবীতে নেই। আয়েশা চৌধুরী ইশতিয়াক চৌধুরী কে ধরলেন। বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। ওদের কাছে সব রহস্যময় লাগছে ইশতিয়াক চৌধুরী রুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পেছনে আয়েশা চৌধুরী ও আছে। তিনি আয়েশা চৌধুরী কে বললেন,,

“আমি পারি নি আয়েশা আমি আমার কথা রাখতে পারি নি। মেয়েটা কে দেখো প্রথম দিনই বোবা আর গ্ৰামের মেয়ে বলেছি অথচ মেয়েটা আজকে কিছুই বললো না শুধু বাবার কথা জানিয়ে গেল । আয়েশা আজরিনের মা ওকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গেছে তুমি ওকে মায়ের মতো আগলে রেখো।

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“হুম রাখবো! আজাহার ভাইয়ের মেয়ে ও কিন্তু আজাহার ভাই তো একজন আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ওদের সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে আমার মনে হচ্ছে। ফুয়াদ আজরিন দুজনেই কিছু লুকাচ্ছে।
____________________

ফুয়াদরা ওপরে ওঠার সময় মলি দেখিয়ে দেখিয়ে তার ননদ কে বলল,,

“বুঝলি তো নিধি সবার পেটে ঘি হজম হয় না। এই জন্যই বোধহয় ঐ জিনিস টা আস্তে আস্তে কষ্ট হলেও খেয়ে যায় যাতে লোকে বুঝতে না পারে সে কোথা থেকে উঠে এসেছে। আমরা তো জানি গ্ৰামের মেয়েরা এসব ভালো খাবার চোখেও দেখেনি। তাই তো দেখে লোভ সামলাতে পারে নি জোর করে হলেও খেয়ে গেছে।

একথা শুনে আজরিন থেমে গেল সে বুঝতে পেরেছে তাকেই মিন করে কথাগুলো বলেছে। ফুয়াদ আজরিনের দিকে তাকালো আজরিনের অবস্থা বুঝতে পেরে আজরিনের হাত ধরে কানে কানে বলল,,

“এখানে মন খারাপ করার কোন দরকার নেই মিস । অন্যের কথায় নিজেকে ছোট ভাববেন না আর আপনি যা নন সেটা নিয়ে তো একদমই নয়। আসলে এর মাথার স্ক্র একটু ঢিলা আছে।আপনি হলেন আমার রাজ্যের রানী তাই রানীর মতো থাকবেন কে কি বলল তাতে কান দিবেন না। আসলে মানুষ টা কখন কি করে বা বলে সেটা নিজেই জানে না।গাধা কোথাকার!

এ কথা শুনে আজরিনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। অন্য কোন মেয়ে হলে অপমানে এখানে থাকতো না। তখন আজরিন মলির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার হেসে দাঁড়িয়ে আছে তাই ও বলল,,

“মাশাআল্লাহ আপু আপনার হাসিটা তো অনেক সুন্দর। আপনার মনটা যদি আপনার হাসির মতো সুন্দর হতো তাহলে আরো বেশি ভালো লাগতো।”

এ কথা শুনে ফুয়াদ ফায়জা আর তিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল। তবে মলির মুখটা চুপসে গেল সে ভাবেই নি এত সুন্দর করে কেউ তাকে অপমান করতে পারবে। ফুয়াদ জানতো তার শুভ্রপরী এরকম কিছুই বলবে তাই ও কিছু বলে নি। তখন ফুয়াদ বলল,,

“হেই মলি আমার বউয়ের সাথে লাগতে আসলে তোকে আগে থেকে প্ল্যান করে আসতে হবে। সো বি কেয়ারফুল।”

একথা শুনে মলি রাগে অপমানে ওখান থেকে চলে গেল। বড়রা আগেই চলে গেছে। মলির হাজবেন্ড খুব খুশি হয়েছে এ কাজে। আজরিন আস্তে আস্তে ওপরে উঠতে নিল তখন ফুয়াদ ওকে কোলে তুলে নিল আর হাঁটা ধরে বলল,,

“অনেক হেঁটেছেন আজ আর হাঁটতে হবে না।আপনার কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি।”

“সবার সামনে এরকম করলে সবাই কি ভাববে নামান এমনিতেও সবাই আমাদের ভালো চোখে দেখছেন না।”

“আমার বউ আমি কোলে নিয়েছি আপনার কি তাতে?

“হুট করে বেশি হয়ে যাচ্ছে না!”

“এখন মনে হচ্ছে আপনার মুখটা বন্ধ থাকলেই ভালো থাকতো মিস।”

কথা বলতে বলতে ওরা রুমে এসে পড়েছে। ও রুমে এসে ওকে নামিয়ে দিল। আর বলল,,

“বাহ আপনি এই ছয়দিন কথা বলতে পারেন নি আজ কথা বলতে পারলেন কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে না।”

“হুম এখন কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে না।”

আজরিন এর হুট করে মন খারাপ হয়ে গেল। আর বলল,,

“আংকেল কে চিঠিটা দিয়ে আসুন! আমার ব্যাগের প্রথম পকেটে আছে।”

একথা শুনে ফুয়াদ বুঝতে পারলো আজরিনের মন খারাপ। সদ্য সাত দিন হয়েছে সে তার বাবাকে হাড়িয়েছে যাকে নিজের থেকেও ভালোবাসাতো আজরিন। কাল পর্যন্ত মেয়েটা নিষ্প্রাণ ছিল। আজ একটু স্বাভাবিক হচ্ছে নাহলে এই ছয়দিন কেমন ছিল সেটা ও জানে ঘুমের মাঝে হাঁসফাঁস করতো। ওদের বিয়েটাও হয়েছে তিনদিন হলো । এতকিছুর চাপ একসাথে পড়েছে ও চায়না আর কোন কষ্ট দিতে।ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“অফিস যাওয়ার সময় দিয়ে যাব। আজ তো আপনার জন্য শপিং ও করতে হবে। আপনি ঠিক থাকলে আপনাকে নিয়েই যেতে পারতাম কিন্তু এটা পসিবল না। আমি বিকেলেই ফিরে আসবো। ততক্ষনে আপনি রুম থেকে বের হবে না। আমি মাকে আর ফায়জাকে বলে যাব। ”

“আমাকে নিয়ে আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনি অফিস যান আর হ্যা ল্যাপটপ টা দিয়ে যান আমার কিছু কাজ আছে। এতদিনে ওগুলো ভুলে বসে ছিলাম আপনার তাড়াতাড়ি একটা মিশনে যেতে হবে মনে হচ্ছে।”

“মানে?”

“বাবার কাছে কিছু তথ্য ছিল ওগুলো তো আপনাকে দেওয়াই হয়নি আমি পাঠিয়ে দিব আপনাকে নাহলে রাতে এসে দেখে নিয়েন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফুয়াদ রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল যাওয়ার সময় ইশতিয়াক চৌধুরী কে চিঠি দিয়ে গেল আর আয়েশা চৌধুরী আর ফায়জাকে আজরিনের খেয়াল রাখতে বলে গেল।

~চলবে

#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“স্যার আমি কিছু শুনতে চাই না আপনাকে এই কেসটার দায়িত্ব আমাকে দিতেই হবে।

আইজানের কথা শুনে সি আইডি হেড অফিসার বললেন,,

“তুমি কেসটার দায়িত্ব নিতে চাইছো সেটা ঠিক আছে কিন্তু ব্যাপারটা একটু বেশি রিস্ক হয়ে যাবে। আমি জানি তোমার টিম যথেষ্ঠ ভালো কিন্তু এতে ইরজার ও তোমার জীবনের রিস্ক বেরে যাবে।

( এরপর থেকে আজরিন কে ইরজা ও ফুয়াদ কে আইজান বলে সবসময় সম্বোধন করা হবে। এটা নিয়ে কেউ কনফিউজড থাকবেন না।)

“স্যার ইরজাকে কেউ চিনে না। তাছাড়া ও সবসময় পর্দা মেইনটেইন করেই চলাফেরা করে এত বড় একজন মানুষ তবুও তাকে কেউ চেহারার জন্য চিনে না। তার নাম ও কাজের জন্যই তাকে চিনে। যদিও গ্ৰামের ব্যাপারটা আলাদা।বাকি রইল আমার কথা তাহলে বলবো দেশের জন্য যদি জীবন দিতে পারি এর থেকে আর ভালো কি হতে পারে।”

“তোমার কথা শুনে খুশি হলাম কিন্তু তুমি এত সিওর হয়ে কিভাবে বলছো যে ইরজা কে কেউ চিনে না। ভুলে যেওনা যখন আজাহার এর ওপর অ্যাটাক করা হয় তখন ইরজা ওখানেই ছিল আর আহত ও হয়েছিল।”

“সেটা ঠিক আছে তবুও আমি চাই সবকিছু আমিই করতে তবে এখানে কিছু মানুষ সবার অগোচরে আমাকে সাহায্য করবে। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ।”

“হুম তাহলে আজ উঠি বাড়িতে যেতে হবে আর স্যার কিছুদিনের জন্য ছুটিও নিতে হতে পারে আপনি কিন্তু না করবেন না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা।

“ধন্যবাদ স্যার আসি আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই আইজান অফিস থেকে বেরিয়ে গেল আর খুশিও হলো কেসটার সে নিতে পেরেছে বলে। না ও আর ওর শুভ্রপরীকে কষ্ট পেতে দিবে না। ও শপিং মলে গিয়ে ইরজার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিল।
________________

এদিকে ইরজা একা রুমে বসে আছে কেমন যেন লাগছে ল্যাপটপে কিছু কাজ করেই রেখে দিয়েছে ওর আর ভালো লাগছে না।সব অসহ্যকর লাগছে। এই বাড়ির সব মানুষকেই ও চিনে কিন্তু কাউকে বলছে না ও এদের সম্পর্কে অবগত। ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে হুট করে মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো ইরজা। তাকিয়ে দেখলো আয়েশা চৌধুরী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ওকে তাকাতে দেখে বললেন,,

“আমি বোধহয় ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম তোমার?”

“না না আন্টি তেমন ব্যাপার না আমি তো ঘুমাই -ই নি। শুধু চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ”

“আরে বোকা মেয়ে আন্টি বলছো কেন? তুমি আমার ছেলের বউ আমি তোমার শাশুড়িমা আমাকে মা বলো।”

মা শুনেই ইরজার চোখ ছলছল করে উঠলো কারন মায়ের সান্যিদ্ধ ও কখনো পায়নি। আয়েশা চৌধুরী ইরজার মনোভাব বুঝতে পেরে বলল,,

“কি হলো বলবে না মা?”

“বলবো মা!

“এই তো গুড গার্ল!

_________________

দুপুর বেলা খাবার টেবিলে ইরজাকে না দেখে ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“ইরজা কোথায়?”

এ কথা শুনে মলি বলল,,

“মামা তোমার কি মনে হয় না তুমি মেয়েটাকে একটু বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছো। ”

“আমার বাড়ির বউ আমি প্রশ্রয় দিব কি দিব না সেটা তোমার ভাবতে হবে না। তুমি তোমার সংসার এ মনোযোগী হও আমার সংসার আমার পরিবার সামলে নেবে। আর আয়েশা তুমি ইরজাকে নিয়ে এসো।”

এ কথা শুনে মলি অপমানবোধ করলো কিছু বললো না।কারন রাগ দেখিয়ে কিছু করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তখন ফায়জা বলল,,

“মা তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি ভাবিকে!”

ফায়জা গিয়ে ইরজাকে নিয়ে এলো। ইরজা আসতেই ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“বসো মা আমাদের সাথে খাবার খাও!”

তখন ইরজা বলল,,

“উনি বাড়ি ফিরছে রাস্তায় আছে উনি আসুক তারপর একসাথে খাবো তাছাড়া মা ও তো এখন খাচ্ছেন না আমরা নাহয় একসাথে পরে খাবো!আপনারা খান”

এ কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী ইরজার দিকে তাকালেন আজ পর্যন্ত তার কথা কেউ ভাবেই নি। সবাই ইরজার আচরনে মুগ্ধ নাহলে এত তাড়াতাড়ি কেউ শাশুড়ির খাওয়া নিয়ে ভাবে। তমা চৌধুরী তার পুত্রবধু স্বপ্নার দিকে তাকালো তার পুত্রবধূ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল।তা দেখে তিনি মুচকি হাসলো । না এই বাড়ির বউগুলো সত্যি ভালো স্বপ্নাও তার শাশুড়ি মায়ের সাথে খায়। আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“তোমার তো দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তুমি চলো সোফায় বসো!”

আয়েশা চৌধুরী ইরজাকে সোফায় বসিয়ে দিল। দশ মিনিট পরে আইজান এলো সবাইকে দেখে ইরজাকে বলল,,

“ইরজা বিকেলে তৈরি হয়ে থেকো তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো! আর আমি আজ তোমার যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি।

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“আরে ও তো এখনো খায় নি তোর জন্য অপেক্ষা করছে। তুই ফ্রেশ হয়ে আয় বাকি কথা পড়ে হবে।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে ওকে খেতে দাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি!”

আইজান ফ্রেশ হয়ে এলো । আর এসেই ইরজার পাশে বসে পরলো। সবার খাওয়া হয়ে গেছে এখন চৌধুরী বাড়ির বউরা বসেছে। বাকিরা গিয়ে সোফায় বসেছে। সবাই খাওয়া শুরু করলো আইজান ইরজাকে দেখে দেখে খাওয়াচ্ছে। তা দেখে ফায়জা বলল,,

“দেখো তিশা আপু আমার খারুছ ভাই বিয়ের পর বদলে গেছে। বউকে কি সুন্দর দেখে খাওয়াচ্ছে। আল্লাহ এরকম একটা জামাই আমাকেও পায়িয়ে দিও যে আমাকে খুব কেয়ার করবে একদম ভাইয়ার মতো। আমিন এই তিশা আপু আমিন বলো।”

ফায়জার কথা শুনে তিশা হেসে ফেলল আর বলল,,

“আমিন বললে কি হবে শুনি?

“আরে তুমি জানো না বুঝি বেশি মানুষ আমিন বললে দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়।”

“ওকে যা তোর জন্য আমিন বলে দিলাম। আমিন!”

তখন পাশ থেকে মলি মনে মনে বলল,,

“এই মেয়েটাকে নিয়ে সবার বাড়াবাড়ি বিরক্ত লাগছে ওকে সমস্যা নেই আমিও সুযোগ বুঝে সব করবো। আমাকে অপমান করার শাস্তি পেতেই হবে মেয়ে তৈরি থেকো!”

খাওয়া শেষে আইজান ইরজাকে নিয়ে রুমে চলে গেল। বিকেলে প্যাকেট গুলো খুলে ইরজা তো অবাক হয়ে বলল,,

“এতো শপিং! কি করেছেন আপনি! আপনি তো আমার জন্য পুরো বছরের শপিং করেছেন!”

“আপনার লাগবে মিস ইরজা তাই এনেছি। আপনার তো কাজ থাকতে পারে হুটহাট কতো জায়গায় যেতে হতে পারে তাই।”

“ওহ আচ্ছা কিন্তু মিস্টার আইজান বিয়ের পর কেউ মিস থাকে নাকি ?”

“আপনাকে কমফোর্ট জোন দেওয়ার জন্য মিস বলি আপনি যখন বললেন তাহলে এখন থেকে মিসেস বলবো। ”

“সবার সামনে তুমি বলে সম্মধোন করেন কিন্তু একা পেলে আপনি বলেন এটা কিন্তু আজরিনা জ্যামির পাঠকমহল মেনে নিচ্ছে না।”

“তাই নাকি তাহলে তো সবসময় তুমি বলেই সম্বোধন করতে হবে।”

‘আমাদের সম্পর্ক যেমন-ই হোক বোঝাপড়াটা খুব স্ট্রং রাখতে হবে বুঝলেন।”

“হুম সেটা আমাদের আগে থেকেই আছে এখন আপনি রেডি হন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।”

এ কথা শুনে ইরজা হাসলো আর বলল,,

“ডাক্তার কি বলবে কি ওষুধ দেবে সেটা আমি জানি। আমি কে আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন।”

“আসলে কি বলো তো তোমাকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাবো তাই বললাম সবাইকে বলবো নাকি আমি আমার বউকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাবো।”

“ফুচকা লাইক সিরিয়াসলি।”

“না আসলে আমরা যাবো প্রকৃতি দেখতে তাছাড়া আইরিন আসবে তোমার সাথে দেখা করতে তাই।”

আইরিনের নাম শুনে ইরজার মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে গেল। আর বলল,,

“ওর কি দরকার আমার সাথে দেখা করার ওকে আসতে বারন করুন আরো কিছুদিন যাক তারপর দেখা করবো।”

“তোমাকে না দেখলে ওর শান্তি হচ্ছে না।”

“আরো কয়েকদিন ধৈর্য্য ধারণ করতে বলুন সবকিছু তাড়াতাড়ি ঠিক না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”

“আমাদের ওপর যে অ্যাটাক করেছিল তার কি খবর?”

“তাকে ধরেছি তবে ওর বসের নাম জানতে পারি নি।”

“ওহ আচ্ছা আপনাকে একটা ট্রিক্স বলে দিই সেটা অ্যাপ্লাই করুন দেখবেন তাড়াতাড়ি নাম বলে দিবে।”

“ওকে!”

ইরজা আইজানকে বলল সব শুনে আইজান ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তা দেখে ইরজা বলল,,

“কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

“আপনার না মানে তোমার মাথায় কি বুদ্ধি তবে আমি ভাবছি এর সাথে আরো কিছু এড করবো তাহলে বিষয়টি আরো ভালো হবে। এইরকম ভাবে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায়। আমার মাথাতেই আসেনি।”

“আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় আমার বাবাকে মেরেছে ও ওকে কি করে ছেড়ে দেই সবার কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাউকে ছাড়বো না।”

“একদম ঠিক বলেছো আমরা কাউকে ছাড়বো না। সবাইকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি দেব।”

ইরজার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। তা দেখে আইজান ওর চোখ থেকে পানি মুছে বলল,,,

“যা হওয়ার হয়ে গেছে তুমি একদম কাঁদবে না। এখন তো কাঁদবে তারা যারা তোমার জীবন থেকে তোমার সুখ কেড়ে নিয়েছে। তোমার হাজবেন্ড সবাইকে কঠিন শাস্তি দিবে কাউকে ছাড়বে না। পারলে তোমার সামনে দিবে।”

ইরজা আইজানকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“কেন এররকম হলো আইজান কি ক্ষতি করেছিল আমার বাবা, আমি, আমার ভাইরা যার জন্য আমাদের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল। যখন আমি ঘুমাই তখন বাবার রক্তাক্ত মুখটা ভেসে ওঠে আমি চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার গলাটায় ওরা আঘাত করে যার জন্য আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আইজান আমি চেয়েছিলাম চিৎকার করে খুব কাঁদতে কিন্তু ওরা আমায় কাঁদতে দেয়নি আইজান।”

“হুস একদম কাঁদবে না তুমি জানো না তোমার কান্না দেখলে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। নিজেকে শক্ত করো ইরজা তুমি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ে নও। তুমি তোমার বাবার আদর্শ সন্তান তুমি ভুলে গেলে তোমার বাবা তোমাকে কি বলেছিল তাকে ভেবে না কান্না করতে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে তাহলে তুমি একদম দূর্বল নও আমি আছি তোমার সাথে। ”

ইরজা আইজানকে জরিয়ে ধরে কান্না করলো। একসময় কান্না বন্ধ হয়ে গেল। তখন আইজান বলল,,

“হুম অনেক হয়েছে চলো এবার ফুসকা খেতে যাই। খোলা প্রকৃতির কাছে গেলে তোমার মনটাও ভালো হয়ে যাবে। তোমার জন্য তাড়াতাড়ি অফিস থেকে এলাম তুমি কিন্তু আমার ছুটি ওয়েস্ট করতে চাইছো।”

ইরজা আইজানকে ছেড়ে দিয়ে বলল,,

“আমি শুধু ফুচকা খাবো না সাথে হাওয়ার মিঠাই ও খাবো।”

“তোমার জন্য আমার জান হাজির আর এই হাওয়ার মিঠাই তো দূর।”

ইরজা কিছু বললো না মুচকি হেসে আস্তে আস্তে ওয়াশ রুমে গেল তৈরি হতে। কিছুক্ষণ পর ইরজা কফি কালার বোরকা পড়ে বের হলো আর হিজাব নিকাব পড়লো। তা দেখে আইজান ও কফি কালার শার্ট পড়লো। দুজনেই ম্যাচিং। আইজান ইরজার হাত ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আইজান ইরজাকে নিয়ে ওর মাকে বলে বেরিয়ে পরলো। আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে তমা চৌধুরী কে বলল,,

“ওদের দুজনকে দারুন মানিয়েছে তাইনা।”

“হুম তবে আমার মনে হয় মেয়েটাকে যেমন দেখতে লাগে মেয়েটা তেমন নয়। অনেক টা রহস্যময়।”

এ কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী মুচকি হাসলো কিছু বললো না। এদিকে ওরা ফার্মেসী থেকে ইরজার জন্য ওষুধ কিনলো। তারপর ফুসকা আর হাওয়াই মিঠাই খেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ইশতিয়াক চৌধুরী সবাইকে বসার রূমে আসতে বললেন এমন কি ইরজা আর আইজান কেও। ওরা আসতেই ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“আমি আইজান ইরজার জন্য একটা অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছি । ওদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে সেটা তো আমরা জানি না। যদিও বিয়েটা হয়ে গেছে তার জন্য আমি একটা রিসিপশন পার্টি রাখতে চাচ্ছি।

এ কথা শুনে আইজান বলল,,

“তার কোন দরকার নেই বাবা। আমি বা ইরজা কেউ চাইনা অনুষ্ঠান করতে ।”

“ইরজা এ বাড়ির বউ ওকে তো সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে তাই না।”

“কয়েকদিন পর তো তিশার বিয়ে সবাই নাহয় তখন আমার বউকে চিনে নেবে ওসব সামাজিক অনুষ্ঠান করতে হবে না।”

“কিন্তু,,

“বাবা আমরা যখন চাইছি না তাহলে !

“ওকে তোমরা যা ভালো বুঝো!”

______________

অন্ধকার রুমে একটু আলো জ্বলছে তার সামনেই একটা চেয়ার পাতা সেখানে আয়েশ করে আইজান বসে আছে । সামনের মানুষ টা ভয়ে আইজানের দিকে তাকিয়ে আছে এতদিনে কম টর্চার করেনি লোকটাকে।আইজান শান্ত ভঙ্গিতে লোকটা কে বলল,,

“মির্জা পরিবারের ওপর কে অ্যাটাক করতে বলেছিল বল!

“স্যার আমি সত্যিই জানি না আমি তাকে দেখেনি কোনদিন!”

“ওহ তাই নাকি জানিস না তাকে দেখিস নি কিন্তু তার নামটা তো বলবি।”

“আমি জানিনা স্যার!”

“তোকে যাই বলি না কেন তুই খালি বলোস জানি না তাহলে কি জানিস তুই।”

“সত্যি স্যার আমি জানি না।”

“ওহ আচ্ছা তাই নাকি। এখন দেখবো তুই জানিস নাকি জানিস না। কাওসার (একজন সি আইডি অফিসার) ওকে নিয়ে যাও আর ভালো করে গোসল করাও ও কতো দিন যাবৎ গোসল করে না। হাতে পায়ে ময়লা রক্ত ওকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না।”

কাওসার লোকটাকে নিয়ে একটু দূরে থাকা চেয়ারে বসালো কারন তার শরীরে শক্তি আর অবশিষ্ট নেই মার খেয়ে সব শেষ। কাওসার লোকটাকে চেয়ারে বসিয়ে ছেলেটার হাত পা বেঁধে দিল তা দেখে লোকটা টা বলল,,

“এই তোমরা আমাকে বাধছো কেন? আমি তো বললাম আমি কিছু জানি না।”

“রিল্যাক্স মিস্টার আপনাকে এখন গোসল করাবো তারপর আবার জিজ্ঞেস করবো গোসল করানোর সময় আপনি যদি চেয়ার থেকে পড়ে যান তাই বেঁধে দিলাম।সমস্যা নেই আপনি শান্তিতে গোসল করুন।”

কাওসার দুরে থেকে একটা পাইপ দিয়ে লোকটার গায়ে পানি দিতে লাগলো। প্রথম দুই মিনিট তো ভালোই লাগলো । তখন পাশ থেকে একটা লোক গুলো জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারতে লাগলো এক প্যাকেট করে তারপর থেকেই লোকটা চিৎকার মারতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,,

“এই তোমরা থামো আমার শরীর আর এই ফুটন্ত পানি নিতে পারছে না। আমার সারা শরীর পুরে যাচ্ছে। তোমরা থামো আমি সহ্য করতে পারছি না।”

তখন আইজান চিৎকার করে বলল,,

“এখনো কি তুই বলবি তুই কিছু জানিস না। এখনো সময় আছে বল নাহলে এই ফুটন্ত গরম পানি আর মশলা দিয়ে তোর শরীর সিদ্ধ করবো আমি। বল কে পাঠিয়ে ছিল তোকে?

“বলছি বলছি তোমরা থামো প্লিজ!”

কাওসার পাইপের সুইচ অফ করে দিল। লোকটার গা থেকে ধোঁয়া উঠছে তেমন গরম চা থেকে উঠে।তখন লোকটি বলল,,

“ওর নাম শাওন ছিল আমি আর কিছু জানি না।”

“সত্যি তো!”

“এরপর কেউ আর মিথ্যা বলবে না।”

“ওকে কোথায় পাওয়া যাবে!”

“বিদেশে গেছে সেইদিন রাতেই যাতে কেউ তাকে ধরতে না পারে। তবে আমার মনে হয় এই শাওনের ওপরেও কেউ একজন আছে।”

“শাওনের কোন ছবি আছে তোর কাছে?”

“না নাই!”

“শাওনের বিবরণ দিতে পারবি কেমন দেখতে!”

“হ্যা পারবো।”

‘ওকে তাহলে কাওসার ওকে দিয়ে একটা স্কেস বানাও তারপর আমাকে জানাও।”

“ঠিক আছে স্যার।”

বলেই আইজান রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আসলে ইরজা বলেছিল ফুটন্ত গরম পানির বৃষ্টি তে গোসল করাতে অনেক কিছু সহ্য করতে পারলেও এই রক্তাক্ত অবস্থায় গরম পানি কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু এখানে আইজান আবার একটা লোককে দিয়ে মরিচের গুঁড়া দিচ্ছিল এর থেকে কষ্টের আর কি থাকতে পারে। লোকটা যাতে না মারা যায় এই জন্যই তৎক্ষণাৎ লোকটাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো হলো।

______________________

১৫ দিন পর,,

দেখতে দেখতে ইরজা চৌধুরী বাড়িতে এসেছে ১৬ দিন হয়ে গেছে। এ কয়েকদিনে ইরজা সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। এখন ইরজা পুরোপুরি সুস্থ। মলি আর তার মা তারপরের দিনই চলে গেছে। আজ বিকেলে ইশতিয়াক চৌধুরী এসেছেন ইরজার কাছে। ইজরা রুমে কিছু একটা করছিল তখন ইশতিয়াক চৌধুরী দরজায় নক করলেন আর বললেন,,

“আসবো?”

হুট করে ওনার আগমনে ইরজা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ও তাড়াতাড়ি মাথায় ওরনা দিয়ে বলল,,

“হুম আংকেল আসুন!”

“এখনো আংকেল বলবে?”

“আসলে !”

“তোমাকে কিছু বলতে হবে না।”

“দাড়িয়ে আছেন কেন বসুন!”

“না তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল চলো বাগানে যাই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি চা নিয়ে আসছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

বলে ইশতিয়াক চৌধুরী চলে গেলেন। ইজরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে গেল তারপর দু কাপ চা নিয়ে বাগানে চলে গেল। ইজরা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বেতের চেয়ারে বসে বলল,,

“কি বলবেন বড়বাবা!”

বড়বাবা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরী চমকে ইজরার দিকে তাকালো। আর বলল,,

“বড়বাবা?”

“বাবা তো আপনাকে ঐ নামেই ডাকতে বলতো ছোটবেলায় যদিও ছোট বেলায় আপনাকে কাছে পাইনি। আপনি নাকি বলেছেন বড়বাবা বলতে।”

“এত কিছুর পরও তোমার বাবা আমার সম্পর্কে এগুলো বলেছে। তুমি কি আইজানের সাথে দেখা হওয়ার আগেই আমাকে চিনতে।”

“হুম চিনতাম!”

“আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। যে জিনিস টা আমি অহংকারে ভুলে গিয়েছিলাম সেটা আল্লাহ তায়ালা ঠিক মিলিয়ে দিলেন। আমি আর তোমার বাবা ছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি আর আজাহার মিলে ঠিক করেছিলাম তোমাদের বিয়ে দেব। তোমার নামটাও আমি দিয়েছিলাম আইজানের সাথে মিলিয়ে আজরিন। তোমার যখন দুই বছর তখন ব্যবসার জন্য আমি চলে আসি ঢাকায় এই যে আমার সবকিছু দেখছো সব তোমার বাবার জন্যই। ও যদি আমায় মনোবল না দিত তাহলে আমি এখানে এসে পৌঁছাতে পারতাম না। সরি মা আমাদের ক্ষমা করে দিও যে তোমাদের খোঁজ খবর নিই নি।

একথা শুনে আজরিন মুচকি হেসে বলল,,

“আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক ছিল এটা আমি জানি যদিও আপনাদের দেখি নি। আমার বাবা কখনো আপনি ভুল করেছেন এটা ভাবেনি তাই ক্ষমার কোন কারন নেই। কিন্তু আপনি যখন গ্ৰামে ছিলেন তখন আপনি ছিলেন আমার বাবার বন্ধু। কিন্তু আপনি যখন শহরে পা রেখে উন্নতি করলেন তখন আপনি হয়ে গেলেন বড় বিজনেস ম্যান। ঐ গ্ৰামের বন্ধুর সাথে এই বিজনেস ম্যানের দূরত্ব অনেক বুঝলেন তো বড়বাবা।

আপনার এখন অনেক বন্ধু থাকলেও আমার বাবার সবসময় কাছের বন্ধু ছিলেন আপনি। আপনার জায়গা টা আমার বাবা কাউকে দেয় নি। এটা শুনে আপনি মনে করবেন না তার কোন বন্ধু হয় নি। তারও অনেক বন্ধু হয়েছে।

এ কথা শুনে ইশতিয়াক চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলো। প্রথম প্রথম কাজের চাপে যোগাযোগ করতে পারে নি তারপর সে যে টাকার মোহে পড়ে তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে নি। সে তার কথা রাখেনি সেই মানুষ টা সবসময় তার পাশে ছিল সেই মানুষটাকেই তার সুখের দিনে পাশে রাখেনি। ইশতিয়াক চৌধুরী নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“আজাহার মারা গেল কিভাবে?”

ইরজা কিছু বললো না চুপ করে রইল। তা দেখে ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“কি হলো মা তোমার এই বাবাকে বলবে না!”

“আমি এখন আপনাকে বলতে চাইছি না কিন্তু এটা বলতে পারি আমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

“তোমাদের বিয়েটা কি আজাহার সামনে থেকে করিয়েছিল?”

“না বাবার মৃত্যুর তিনদিন পর বিয়ে করেছিলাম। তবে বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে দেখা করা ও আমাদের বিয়েটা হওয়া। ঐ তিনদিন আমি বেশি অসুস্থ ছিলাম আর ওখান থেকে চলে আসতে হতো তাই তিনদিন পর একটু সুস্থ হলে আমরা বিয়ে করি আর এখানে আসি। ”

“ওহ আচ্ছা তোমার ভাইরা এখন কোথায়?”

“সবাই এখন সবার কাজে আছে।”

“তাদের কে আসতে বলো ? নিশ্চয়ই ওরা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।

“হুম বড় হয়ে গেছে। সঠিক সময় এলে এসে পরবে।”

ইজরা কথা ঘুরানোর জন্য বলল,,

“সেসব বাদ দিন বাবা আপনাকে চিঠিতে কি লিখেছেন?

এ কথা শুনে তিনি একটু হকচকিয়ে গেল আর বলল,,

“সেটা আমার আর আমার বন্ধুর সিক্রেট। যা হওয়ার হয়ে গেছে পুরোনো কিছু ভাবতে হবে না। তবে এটা মনে রেখো তোমার বাবা নেই এটা কখনো ভাববে না। আমি তোমার বাবা আমায় বাবা বলে ডাকবে কেমন আর তুমি করে বলবে।আর হ্যা আজাহার এর কাছে যেভাবে আবদার করতে সেরকম আমার কাছেও করবে। এটাও ঐ চিঠির সাথে এড ছিল বুঝতে পারলে।”

কথাগুলো শুনে ইরজার চোখ ছলছল করে উঠলো কারন তার বাবা ছিল তার বেস্ট ফ্রেন্ড।ইজরা মুচকি হেসে বলল,,

“ওকে বাবা তাহলে চলো এখন আমরা আইসক্রিম খেতে যাবো।”

ইশতিয়াক চৌধুরী উঠে বললেন ,,

“এই হলো আমার মেয়ের মতো কথা। তো চলো যাওয়া যাক”

ওদের দুজনকে বাগানে আসতে দেখে আয়েশা চৌধুরী আর ফায়জাও আসে পিছনে যদিও ওদের মধ্যে কি কথা হয়েছে শুনতে পায় নি। ওদের উঠে আসতে দেখে ফায়জা বলল,,

“বাবা তোমরা কোথায় যাচ্ছো?”

“আইসক্রিম খেতে তুমি যাবে? গেলে চলো!

“কি! তুমি আর আইসক্রিম!”

“আমার মেয়ে খেতে চেয়েছে তাই আমিও খাবো!”

“মেয়ে! মেয়েটা কে আবার?”

“এই যে দেখছো ইরজাকে এটাই বুঝলে!”

“ওহ আচ্ছা!”

তখন ইরজা বলল,,

“বাবা তার থেকে তুমি বরং কাউকে দিয়ে আইসক্রিম বাড়ি নিয়ে এসো আমরা সবাই খেতে পারবো। ”

“এটা ভালো বুদ্ধি!”
_________________

রাত ১২ টায় আইজান বাড়ি ফিরে রুমে এসে দেখলো ইরজা এখনো জেগে আছে তা দেখে আইজান বলল,,

“কি হলো তুমি ঘুমাও নি?”

“ঘুম আসছে না। আপনি খেয়ে এসেছেন নাকি খাবেন?”

“সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করেছিলাম রাতে খাওয়া হয় নি।”

‘আচ্ছা তাহলে চলুন খেতে বসবেন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার গরম করছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আইজান ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল দেখলো ইরজা খাবার বেরে বসে আছে। ও গিয়ে টেবিলে বসে বলল,,

“তুমি খেয়েছো?”

“সত্যি বলবো না মিথ্যা!”

“আমি তো জানি মিসেস ফুয়াদ আইজান চৌধুরী মিথ্যা কথা বলে না।”

“ওকে আমিও সন্ধ্যায় নাস্তা করেছিলাম তারপর আর খাওয়া হয় নি।”

“ওকে তাহলে তোমার মিস্টার তোমায় খায়িয়ে দিবে। আমি জানি আমার মিসেস আমার জন্য না খেয়ে বসেছিল।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

আইজান ইরজা কে খায়িয়ে দিল ইরজাও বিনা বাক্যে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে আইজান বলল,,

“তা মিসেস ঘুম পাচ্ছে নাকি?”

“কেন?”

“নাহলে বউকে নিয়ে একটু চন্দ্রবিলাস করতাম আর কি!”

“ওহ আচ্ছা! তাহলে চলুন যাই চন্দ্রবিলাস করতে।”

আইজান আর ইরজা ছাদে চলে গেল । তারপর চাঁদের মুখ করে বসে পড়লো। আইজান ইরজাকে একহাত জরিয়ে ধরে বসলো। আর ইরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আচ্ছা তুমি এখানে কয়টা চাঁদ দেখতে পাচ্ছো?”

“চাঁদ কয়টা আছে পৃথিবীতে মিস্টার!”

“আহ হা বলো না কয়টা চাঁদ দেখতে পাচ্ছো?”

“আমি তো একটাই দেখতে পাচ্ছি!”

“কিন্তু আমি তো দুইটা দেখতে পাচ্ছি!”

“কোথায় দেখছেন শুনি!”

“সব প্রেমিক পুরুষের একান্ত ব্যক্তিগত চাঁদ থাকে সেটা শুধু প্রেমিক পুরুষরাই জানে! এখানে দুটো চাঁদ দেখতে পাচ্ছি একটা হলো ঐ যে আকাশে আরেকটা হলো আমার পাশে বুঝতে পারলে।”

এ কথা শুনে ইরজা লজ্জা পেল। তা দেখে আইজান বলল,,

“বাহ লজ্জা পেলে তো তোমায় দারুন লাগে!আমার ব্যক্তিগত চাঁদ”

একথা শুনে ইরজা যেন আরো বেশি লজ্জা পেল আর লজ্জা পেয়ে ঐ প্রেমিক পুরুষের বুকে ঠাই নিল। তা দেখে আইজান হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ পর ইরজা বলল,,

“চলুন আমার ঘুম পাচ্ছে!”

“এত তাড়াতাড়ি ঘুম এসে পরলো আচ্ছা চলো যাই।”

আইজান ইরজার হাত ধরে বলল,,

“তোমার আর আমার সম্পর্ক এত সহজ কেন বলোতো শুভ্রপরী”

ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“কারন আমাদের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার ও আলাদা একটা গল্প আছে।”

~চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে