তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-১৫

0
1401

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১৫

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সৌরভ ও প্রিয়তা দুজন রুমে চলে এলো।প্রায় সব মেহমানরাই চলে গেছেন।রয়ে গেছেন শুধু প্রিয়তার পরিবার ও জুইয়ের পরিবারের সদস্যরা।সৌরভ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে কাপড় চোপড় পাল্টে এলো।প্রিয়তা তার গহনাদি সব খুলছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বসে।সৌরভ এসে প্রিয়তাকে হেল্প করতে লাগলো,কারণ প্রিয়তা একা এসব খুলতে পারবে না।

সব ছোটানো সব শেষ করে প্রিয়তা ওয়াশরুমে গেল মেক-আপ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে।সৌরভ বারান্দায় তার বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলতে গেছে।প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে এসে সৌরভকে রুমে না পেয়ে বারান্দায় গেল।সৌরভ ইজিচেয়ারে বসে দোলে দোলে কথা বলছে।প্রিয়তা চুপচাপ গিয়ে সৌরভের কোলের উপর বসে পড়লো।সৌরভ একহাতে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তার কোমড়।প্রিয়তা সৌরভের বুকে মাথা রেখে তার বুকে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর সৌরভ ফোন কাটলো।প্রিয়তা তখনও সৌরভের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।সৌরভ প্রিয়তার মাথায় চুমু খেয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।সৌরভ আদুরে কন্ঠে প্রিয়তাকে ডাকলো;

সৌরভ:-প্রিয়,

প্রিয়তা:-হুম!

সৌরভ:-কালকে রাত থেকে পড়তে বসবে কেমন?

প্রিয়তা সৌরভের বুক থেকে মাথা তুলে করুন কন্ঠে বললো;

প্রিয়তা:-এত পড়াশোনা করে কী হবে বলুন তো?আমার তো এখন বিয়ে হয়ে গেছে।এখন আমার সংসার করার সময়।ছেড়ে দিই পড়াশোনা প্লিজ!আমার একটুও ভাল্লাগে না পড়তে।

সৌরভ:-এটা কোনো কথা হলো প্রিয়?পড়াশোনা করতে তো কারোরই ভালো লাগে না,তারমানে কী সবাই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে বলো?পড়াশোনা আমারও ভালো লাগতো না,তারপরও পড়েছি।কানাডাতে একা একা পড়েছি,চিরপরিচিত বেস্ট ফ্রেন্ড কেউ ছিলো না,আম্মু,আব্বু কেউ সাথে ছিলো না,তারপরও পড়াশোনা কমপ্লিট করে দেশে ফিরেছি।দেখাে প্রিয়,মেয়েদের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সবাই এমন চান্স পায় না।কিন্তু তুমি লাকি এজন্য পেয়েছো।ঠিক আছে তোমার বাইরে চাকরি করতে হবে না।কিন্তু পড়াটা তো এটলিস্ট কন্টিনিউ রাখাে!

প্রিয়তা চুপ করে সৌরভের এডভাইস শুনে যাচ্ছে।কিছু বলছে না।সৌরভ আবারও বলে উঠে;

সৌরভ:-আমি যা বলছি তা তোমার ভালোর জন্যই বলছি বাবু,কে কখন কোন পরিস্থিতিতে পড়বে তা সে জানে না,আল্লাহ না করুক কখনো যদি কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ো তুমি তখন কী করবে?এমনও হতে পারে আমি তখন থাকবো না,

প্রিয়তা আঁতকে উঠল সৌরভের শেষের কথা শুনে।হড়বড় করে বুক থেকে মাথা তুলে দ্রুত সৌরভের মুখ চেপে ধরলো।ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-আল্লাহর দোহাই লাগে এমন কথা বলবেন না।আপনি যতোটুকু চান আমি ততোটুকু পড়ালেখা করবো।ট্রাস্ট মি,একটুও বিরক্ত হবো না।কালকে থেকে পড়তে বসবো আপনার কথামতো।একটুও নড়চড় হবে না কথার।তাও এমনকিছু বলবেন না যেটা শুনলে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আমি কোনোকিছুর বিনিময়েই আপনাকে হারাতে পারবো না।আপনার কিছু হওয়ার আগে আল্লাহ যেন আমাকে নিয়ে নেয়।

সৌরভ প্রিয়তার দুই গালে হাত রেখে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো।প্রিয়তা যে সৌরভের বলা কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে তা বুঝতে পেরেছে সৌরভ।প্রিয়তার চোখ থেকে মুক্তোর দানার মতো যে দুফোঁটা অশ্রু ঝরেছে তা সযত্নে মুছে দিয়ে ফিসফিস করে বললো;

সৌরভ:-এই কাজল রাঙা চোখ জোড়ায় যে অশ্রু মানায় না বউ!ডোন্ট বি সিরিয়াস,জাস্ট ফিল দিস মোমেন্ট।ওকে?

প্রিয়তা হালকা মাথা ঝাকালো।সৌরভ মুচকি হেসে প্রিয়তার কাঁপা ঠোঁটে ঠোঁট মেলায়।তাদের বাসার পর দুই বাসা বাদে ছোটখাটো একটা খোলা জায়গায় বেশ কতজন ছেলেরা মিলে ব্যাডমিন্টন খেলছে।সাথে স্পিকারে গানও বাজাচ্ছে ওরা।ওখান থেকে গানের সাউন্ড শুনতে পাচ্ছে সৌরভ ও প্রিয়তা।গানটাও যেন তাদের ডেডিকেট করে বাজানো হচ্ছে।

হার দোয়া মে শামিল
তেরা পেয়ার হে,
বিন তেরে লামহা বি
দুশওয়ার হে!
ধারকানো কো তুজছে
হি দারকার হে,
তুঝছে হি রাহাত হে
তুঝছে হে চাহাত হে!
তুঝো মিলি,ইকদিন মুঝে
মে কাহি হগায়া লাপাতা,
ও জানে যা,দোনো জাহা
মেরি বাহোমে আ
আবি জা,আ,আ
বেবি আই লাভ ইউ,,

সৌরভ প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে রুমের ভেতর চলে গেল।প্রিয়তাকে বিছানার ওপর শুইয়ে রেখে বারান্দার দরজা ও রুমের দরজা লক করে লাইট নিভিয়ে বিছানার ওপর এসে দু পা তুলে বসলো।বাহিরের করিডরের আলো আবছা ভাবে রুমে প্রবেশ করছে।সেই আলোয় প্রিয়তা ও সৌরভ দুজন দুজনার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সৌরভ প্রিয়তার গালে গলায় আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে কন্ঠে মাদকতা এনে বললো;

সৌরভ:-বিয়ে করা প্রিয়তমা স্ত্রীকে হালাল ভাবে স্পর্শ করতে চাইছি।পারমিশন পাবো কী?

সৌরভ কথাটা বলে শেষ করতে পারলো না তার আগেই প্রিয়তা সৌরভকে টান দিয়ে নিজের ওপর নিয়ে গেলো।তারপর দুজনের ওপর কম্বল টেনে দিয়ে প্রিয়তা নিজে থেকেই সৌরভের গালে গলায় চুমু খেতে লাগে।সৌরভের কানের লতিতে আলতো ভাবে কামড় দিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-আমাকে স্পর্শ করতে আপনার কোনো পারমিশনের প্রয়োজন নেই।আমি পুরোটাই আপনার,তাই যখন ইচ্ছা তখনই আমাকে স্পর্শ করতে পারেন আপনি।বুঝেছেন?

সৌরভ ঠোঁট এলিয়ে হেসে বললো;

সৌরভ:-হুম বুঝলাম।এবং এখন শুধুই ভালোবাসা বিনিময় চলবে মাই ডিয়ার ওয়াইফি।গেট রেডি ফর মাই লাভ টর্চার।

দুষ্টু হেসে সৌরভ ডুব দিলো প্রিয়তার মধ্যে।দুজনেই অথৈ ভালোবাসার গভীরে হাবুডুবু খাচ্ছে।আজ দুজন দুজনাতে মত্ত হয়ে গেছে পুরোপুরি রূপে।ভালোবাসাময় একটি আদুরে রাতের সূচনা করলো ওরা।

❤️

পরদিন,,
সকালে সৌরভের আগে প্রিয়তার ঘুম ভেঙে গেছে।সৌরভ তখনও ঘুমোচ্ছে প্রিয়তার বুকের ওপর মাথা রেখে।প্রিয়তা সৌরভের মাথায় চুমু খেয়ে তাকে বুকের ওপর থেকে নামিয়ে ওর বালিশের ওপর শোয়ালো।অতঃপর পাতলা একটা ওড়না শরীরে জড়িয়ে ওয়ার্ড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে।

গোসল শেষ করে বেরিয়ে দেখতে পেল সৌরভ ঘুম থেকে ওঠে গেছে।সৌরভ প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে প্রাণখোলা চমৎকার একটা হাসি দিলো।প্রিয়তা চুল মুছতে মুছতে সৌরভের কাছে গিয়ে সৌরভের এলোমেলো চুল হাত দিয়ে আরও এলোমেলো করে দিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-গুডমর্নিং জামাই,,যান গিয়ে গোসল করে আসুন।আমি রুম গুছিয়ে নিচে যাচ্ছি।

সৌরভ:ওকে বাবু।

সৌরভের কাপড় বের করে দিতেই সৌরভ চলে গেল গোসল সারতে।প্রিয়তা বিছানা গোছালো।রুম ঝাড়ু দিলো।ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে গহনাগুলো সরিয়ে বক্সের ভেতর রাখলো।আরও টুকটাক কিছু কাজ করে চলে গেল নিচে।

সৌরভ আসতেই দুজন মিলে নাশতা করে নিলো একসাথে।আজকে প্রিয়তার আব্বু আম্মু ও ভাই চলে যাবেন ওনাদের বাসায়।সাথে প্রিয়তা ও সৌরভও যাবে।

দুপুরের খাবার খেয়ে ওরা তৈরি হয়ে প্রিয়তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।সৌরভ প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে।সৌরভের বাইকে করে দুজন ও বাসায় যাচ্ছে।

বাসায় পৌঁছে প্রিয়তা ও সৌরভ কিছুক্ষণ রেস্ট নিলো প্রিয়তার বেডরুমে।মিসেস প্রমি তো জামাই আপ্যায়নের জন্য হরেক রকমের রান্না বান্না করছেন আসার পর থেকেই।মি.মুজাফফর তো ব্যাগভর্তি বাজার করে নিয়ে এসেছেন।মুসকান কাজে বেরিয়েছে।

বিকালে প্রিয়তা সৌরভকে মসজিদে পাঠিয়ে নিজেও আসরের নামাজ আদায় করে নিলো।সৌরভ আসার পর দুজন মিলে কিছুক্ষণ রোমান্স করে তারপর সন্ধ্যায় সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে নাশতা করলো।

❤️

রাতের খাবার খেয়ে দুজন রুমে চলে এসেছে।সকলেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন।প্রিয়তাও তাই।ওরও আজ ভীষণ ঘুম পেয়েছে।হামি দিতে দিতে শহীদ হয়ে যাচ্ছে বেচারি।সৌরভ প্রিয়তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো।আরাম পেয়ে প্রিয়তা ততক্ষণে ঘুমের দেশে পগারপার।সৌরভ প্রিয়তার কপালে আলতো ভাবে চুমু খেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ঘুমিয়ে গেল।যে-ই তাদেরকে একসাথে দেখছে সে-ই বলছে মাশাআল্লাহ দুজনকে একসাথে ভীষণ মানিয়েছে।খুবই কিউট একজোড়া কাপল।

শ্বশুর বাড়িতে মোট ২ দিন থাকলো সৌরভ।এই দুটো দিন সে খুব ভালো করে টের পেয়েছে যে জামাই আদর ঠিক কী জিনিস!এরকম আপ্যায়ন সৌরভ আশা করে নি।ওনারা একটু বেশিই খাতিরযত্নে ব্যস্ত ছিলেন।বিদায়ের সময় প্রিয়তা এতবেশি কান্না না করলেও,কষ্টে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি পড়েছে তার।মুসকান আর সৌরভ অবশ্য সামলে নিয়েছে ওকে।

দুজন বাসায় চলে এসেছে।আসার সময় প্রিয়তা বই খাতা সব সাথে করে নিয়ে এসেছে।আজকে থেকে পড়া শুরু করতে হবে।বিয়ে শাদির প্যারায় পড়ে হুদাই একমাস কেটে গেছে।এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা।তাই এই ক’মাসে একটু ভালো করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।

আর কয়েকদিন পর থেকে সৌরভেরও অফিসে জয়েন করতে হবে।দুজনেরই ব্যস্ততায় সময় কাটবে।

এভাবেই দুজনের টোনাটুনির সংসার চলতে থাকে।চুঁইয়ে চুঁইয়ে যেন সময় যেতে লাগে তার আপন গতিতে।ফেব্রুয়ারীর একতারিখে সৌরভ তার অফিসে জয়েন হয়েছে।সৌরভ সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে যায়,এবং বাসায় আসে রাত ৮ টায়।প্রিয়তাকে একজন মেয়ে টিউটর রেখে দিয়েছেন মিসেস মিনা যে দুপুরের দিকে বাসায় এসে তাকে পড়িয়ে দিয়ে যায়।

প্রিয়তা সারাদিন শুধু পড়াশোনাতেই ব্যস্ত থাকে।রাতে পড়তে ভালো লাগলেও রুটিন চেঞ্জ করে ফেলেছে সে।কারণ সারাদিন কাজ করে রাতে বাসায় ফিরে সৌরভ।তখন যদি পড়তে বসে সে তাহলে সৌরভকে একটুও সময় দিতে পারবে না।তাই এমন ব্যবস্থা।দিনে সকল পড়া তৈরি করে রাতে সৌরভের সাথে সময় কাটায়।সৌরভের সারা দিনের শ্রান্তি চলে যায় প্রিয়তাকে একবার দেখলেই।এই মেয়েটা যে তার চোখের মণি।একবার না দেখলে মনটা খালি ছটফট করে।

প্রিয়তা বাপের বাড়িতে যেমন নবাব ছিলো,শ্বশুর বাড়িতেও সে তেমন নবাবই আছে।কেউ তাকে কোনো কাজ করতে বলে না।মিসেস মিনা ও মিসেস শিলা তো মাঝে মধ্যে তাকে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দেন।আগে যেমন সবার আদরের ছিলো,এখনও তেমনই আছে সে।জায়েরা সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকে।কারও মধ্যে কোনো ধরনের মনোমালিন্যের ছিটেফোঁটাও নেই।সুখের সংসার গঠনে তাদের সবার ভূমিকা রয়েছে।

প্রিয়তা সৌরভের সান্নিধ্যে থেকে থেকে পুরোপুরি নামাজী হয়ে গেছে।সাথে পর্দাশীনতা তো রয়েছেই।দুজনের মধ্যে অনেক ভালো একটা বন্ডিং আছে।কেউ কারও মনের কথা না বলতেই অপরজন বুঝে যায়।প্রিয়তা হাজার দুষ্টামি করলেও সৌরভের সামনে সে ভীষণ বাধ্যগত একটি মেয়ে।সৌরভ যা বলে তাই শুনে।সৌরভ আর প্রিয়তার ভালোবাসা এ ক’দিনে অনেক গুণ মজবুত হয়েছে।কেউ কাউকে ছাড়া বুঝে না।প্রতিটি রাত কাটে দুজনের আদর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।

দেখতে দেখতে এপ্রিল মাস চলে এসেছে।প্রিয়তা ধুমসে পড়াশোনা করছে।ভাই মুসকান ও অনেক খেয়াল রাখছে তার।সৌরভ অফিসে নতুন তাই বেশিদিনের ছুটি নিতে পারে নি।মাত্র দুদিনের জন্য ছুটি মঞ্জুর করেছে বস।এজন্য প্রথম দিন সৌরভ প্রিয়তাকে নিয়ে তার কলেজ হলে,যেখানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেখানে নিয়ে এসেছে।রাতে প্রিয়তা যখন পড়তে ব্যস্ত ছিলো তখন সৌরভ তাকে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিয়েছে,ইমপোর্টেন্ট পড়া দেখিয়ে দিয়েছে।প্রিয়তাকে নিজে দুধ ডিম,স্যান্ডউইচ এসব রান্নাঘর থেকে এনে দিয়েছে খাওয়ার জন্য।যত্নের অন্ত নেই তার।

সৌরভ প্রিয়তাকে পরীক্ষার হলে পড়ার জন্য কয়েকটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছে।নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য মোটিভেট করেছে।পানির বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বেস্ট অব লাক বলেছে।প্রিয়তা স্বপ্নীল চোখে সৌরভের দিকে তাকালো।তার মতো ভাগ্যবতী মেয়ে দুনিয়ায় ক’জন আছে সে তা জানে না।এত এত ভালোবাসা ও কেয়ার করে তার সৌরজগত তাকে যে সে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে,অভিব্যক্তি দেখানোর জন্য কিছু খুঁজে পায় না।প্রিয়তা মুচকি হেসে সৌরভকে ফ্লাই কিস ছুঁড়ে দিয়ে হলের ভেতর চলে যায়।সৌরভ বাইকের ওপর ঠায় বসে থেকে অপেক্ষা করে তার প্রিয়তমার।

পরীক্ষা শেষে বের হয় প্রিয়তা।পরীক্ষার প্রশ্ন তার জন্য সহজ হয়ে এসেছে।আশানুরূপ ভালো হয়েছে তার পরীক্ষা।সৌরভকে আগের জায়গায় বসে থাকতে দেখে অবাক হয় সে।মানুষটা একটু রেস্ট করারও সময় পায় না কাজের চাপে অথচ তার জন্য কেমন দাঁড়িয়ে আছে ক্লান্তিহীন ভাবে।প্রিয়তার চোখে পানি চলে আসে।দ্রুত গিয়ে সৌরভের হাত ধরে সে।জিজ্ঞেস করে;

প্রিয়তা:-আপনি বাসায় যান নি মনে হয়!এতসময় ধরে কী এখানেই বসে ছিলেন?

সৌরভ:-আমার বউটা হলে খেটে পরীক্ষা দিবে আর আমি বাসায় গিয়ে আরাম করবো তা কী করে হয় বলো?মাত্র দুটো দিন ছুটি পেয়েছি।এই দুটো দিন অন্তত আমার বউকে সময় দিই।পরে তো মুসকান তোমায় নিয়ে আসা যাওয়া করবে,আমি সময় পাবো না।

প্রিয়তা সৌরভের দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

প্রিয়তা:-কিছু খান নি এখনো মনে হয়?মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে।

সৌরভ:-বাসায় গিয়ে দুজন একসাথে খাবো বুঝছো!এখন বলো তোমার পরীক্ষা কেমন হলো?কমন পড়েছে তো সব?

প্রিয়তা হাসিমুখে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-হ্যা পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে।সবগুলোই কমন পড়েছে প্রায়।একটাও ছাড়ি নি।যতটা দেয়ার কথা ততোটাই লিখেছি।

সৌরভ:-গুড গার্ল।এখন বাইকে ওঠে বসো।বাসায় যাই।

প্রিয়তা সায় জানিয়ে বাইকে ওঠে বসলে সৌরভ সেটা স্টার্ট করলো।সারা রাস্তা দুজনে গল্প করে করে এসেছে।

বাসায় এসে দুজনে একসাথে খাবার খেলো।নামাজ পড়লো।দুজনে কিছুক্ষণ প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করলো।রাতে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো প্রিয়তা।সৌরভ তাকে হেল্প করছে।

যে দুদিন সৌরভের ছুটি ছিলো সেই দুদিন সে-ই প্রিয়তাকে কলেজ নিয়ে আসা যাওয়া করেছে।ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুসকান প্রিয়তার দায়িত্ব নিয়েছে আগের মতো।

এভাবেই খুব ভালো ভাবে প্রতিটি পরীক্ষা দিলো প্রিয়তা।প্রতিটি পরীক্ষাই আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে।পরীক্ষা শেষে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল বেড়াতে।একসপ্তাহের মতো ঘোরাফেরা করার পর সবাই বাসায় ফিরে আসে।

পরীক্ষা শেষে ফ্রী হলেও সৌরভ প্রিয়তাকে ফ্রী থাকতে দেয় নি।তাকে IELTS কোর্সে ভর্তি করে দিয়েছে সৌরভ,যাতে ইংরেজিতে তার স্কিলটা মজবুত হয়।এদিকে বাসায় রাতে কম্পিউটারের যাবতীয় ব্যবহার সব শেখায় তাকে সৌরভ।এভাবেই দুজনের দিনগুলো খুব সুন্দর ভাবে কাটতে লাগলো।দুজন দুজনকে এত ভালো বুঝে যে মনে হয় তাদের দুটো শরীর ঠিকই কিন্তু একটাই আত্মা।ভালোবাসায় ভরপুর দুজনের মধ্যকার সম্পর্কটা।তাদের ভালোবাসা পরিবারে সবার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক উদাহরণ।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে