তুমিময় আসক্তি পর্ব-৯+১০

0
1112

#তুমিময়_আসক্তি
#Writer_Mahfuza_Akter
#পর্ব____০৯+১০

-পাষাণী! তুমি বড্ড খারাপ!! আমার মতো একটা মানুষের চোখ দিয়ে তুমি কতো বার যে পানি ঝরিয়েছ, ভাবতেও পারবে না! তোমার চোখে নিজেকে অপরিচিত হিসেবে দেখতে, তোমার মুখে বারবার ‘আপনি’ সম্বোধন, এসব যে আমায় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে! কেনো বোঝো না তুমি?

হঠাৎ করেই ঘোর কেটে গেল। বাস্তবতায় ফিরে আসতেই ফট করে চোখ মেলে তাকালাম। নির্জনের চোখ দিয়ে এখনো নিঃশব্দে পানি পড়ছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে ওনার থেকে এক হাত দূরে সরে বসলাম। নির্জন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। থমথমে গলায় বললাম,

-যাই বলুন না কেন? সত্য তো এটাই যে, আপনি আমায় ঠকিয়েছেন! ধোঁকা দিয়েছেন। দোষটা আমারই! আমিই বোকার মতো আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।

-তুমি এখনো একই কথা বলছো!

-হ্যাঁ, বলছি। আর বলবোও! আপনি আমার বিশ্বাস ভেঙেছেন। আমার অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন, ইভেন, এখনো খেলছেন। আপনার মতো একটা জঘন্য মানুষকে নিয়ে আমি আর আবেগে ভাসতে চাই না। আজ থেকে আপনাকে শুধুই ঘৃণা করি আমি। এর থেকে বেশি কিছু এক্সপেক্ট করবেন না!

কঠিন স্বরে বললাম কথাগুলো। নির্জন আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কাঁদছেন না, কিন্তু চোখে মুখে এক রাশ বিষন্নতা! আমার কথা গুলো হজম করতে হয়তো বারবার হোঁচট খাচ্ছেন। অস্ফুটস্বরে বললেন,

-ত্ তুমি আমাকে ঘ্ ঘৃণা ক্ করো? আরেক বার বলো তো!!

নির্জনের কন্ঠ রোধ হয়ে আসছে বারবার। বুক ফেটে কান্না আসছে আমার। দাঁতে দাঁত চেপে সেটা আঁটকে রাখলাম। রাগী স্বরে অনেকটা চিৎকার করেই বললাম,

-হ্যাঁ! হ্যাঁ! ঘৃণা করি আপনাকে। এছাড়া আর কিছু কি ডিজার্ভ করেন আপনি?

নির্জন হাসলেন। ওনার দিকে অবাক চোখে তাকালাম। এখানে হাসির কী খুঁজে পেলেন উনি? নিঃশব্দে হেসেই বললেন,

-একদম ঠিক বলেছো তুমি। আমি শুধু ঘৃণারই যোগ্য! কিন্তু তুমি এই কথাটা বলতে গিয়ে এভাবে কেঁদে ভাসাচ্ছ কেন?

হকচকিয়ে গেলাম। আমি কাঁদছি? কখন? চোখের পানি আঁটকে রাখতে কি শেষমেশ ব্যর্থ হয়েই গেলাম? নির্জন আমার সিক্ত গাল থেকে এক আঙুল দিয়ে অশ্রু কণা নিয়ে বললেন,

-আমি তো তোমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছি! তাই আমার কথা তোমার বিশ্বাস না-ও হতে পারে। কিন্তু নিজের চোখকে তো বিশ্বাস করো! নিজেই দেখে নাও তুমি কাঁদছিলে কি-না।

কথাগুলো যে নির্জন বিদ্রুপ করে বলছেন, সেটা আর বুঝতে বাকি নেই! মুখ ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিলাম। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

-আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।

নির্জন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। পকেটে দুই হাত গুঁজে মলিন হেসে বললেন,

-অভিয়েসলি বাধ্য তুমি! বাট ইউ নৌ হোয়াট? আমি তোমার কাছ থেকে কোনো আন্সার শোনার আশায় কোয়েশ্শেনটা করিনি। ইট ওয়াজ জাস্ট আ রিমাইন্ডার ফর ইউ। মনে করিয়ে দিলাম, তোমার অস্তিত্ব জুড়ে ঠিক কতোটা অংশ এই আফ্রান জোহায়ের নির্জন দখল করে রেখেছে। তুমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না।

-মানলাম, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু আপনার লাইফে কি আদৌ আমি একজিস্ট করি? আপনার মনে কি আমার জন্য কোনো জায়গা আছে? হয়তো আছে! হয়তো নেই! যদি থেকেও থাকে, তবে আমি হয়তো আপনার লাইফের দ্বিতীয় নারীই হবো।

নির্জন আবারো হাসলেন। কিন্তু এই হাসিতে যেন কোনো প্রাণ নেই! কোনো উচ্ছলতা নেই! গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে এই হাসিটা। চোখ সরিয়ে নিতেই উনি বললেন,

-যে বুঝতে চায় না, তাকে বোঝানো যায় না, গুঞ্জন। তবে এটা ঠিক যে, তুমি আমার লাইফের দ্বিতীয় নারী।

তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। উনি সবটাই স্বীকার করছেন। বিয়ে, স্ত্রী, সব। তবুও আমাকে নিজের সাথে কেন জড়াতে চাইছেন? তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

-আমি কারো জীবনে অন্যতম হয়ে বাঁচতে চাই না। একমাত্র ও প্রধান হয়ে বাঁচতে চাই। আপনার মতো মানুষের সাথে জীবন বাঁধতে পারবো না আমি আর না বাঁধতে চাই! আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

নির্জন দৃষ্টি মুহূর্তেই রূঢ় হয়ে গেল। চোয়াল শক্ত করে তাকালেন আমার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশ গলায় বললেন,

-বিয়ে নিয়ে ফারদার কোনো কথা তুললে আমার জঘন্যতম রূপটা তোমাকে দেখাতে বাধ্য হবো, গুঞ্জন। আমায় তুমি সারাজীবন ঘৃণা করো, কষ্ট দাও; কিচ্ছু বলবো না। কিন্তু বিয়ে তুমি আমাকেই করছো! আফরাহ্ সেহরীশের নামটা শুধু এই নির্জনের নামের সাথেই জুড়বে। বাই হুক অর বাই ক্রুক।

নির্জন পা ঘুরিয়ে চলে যেতে লাগলেন। ভেজা কন্ঠে বলে উঠলাম,

-যার মুখটাই দেখতে ইচ্ছে করে না, তাকে সারাজীবন সহ্য কী করে করবো? বিয়েটা তো আপনি নিজের স্বার্থের জন্য করবেন! হয়তো আমি আটকাতে পারবো না! কিন্তু মাঝখান থেকে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।

নির্জন পা থামিয়ে দিলেন। উল্টো ঘুরেই কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন। আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছি। কিন্তু উনি এদিকে ফিরছেনই না। হঠাৎ ভাঙা গলায় বললেন,

-পরীক্ষাটা মনযোগ দিয়ে দাও। তোমাকে বলেছি না, তোমাকে সেলফিশ হতে হবে! আমার মুখ দেখতে হবে না তোমার কখনো। না বিয়ের আগে আর না বিয়ের পর! শুধু বিয়ের দিন একবার দেখতে হবে। এজ ইট’স আ কম্পালশন, উই উইল নিড টু মেইনটেইন দ্যাট। এক মুহুর্তের জন্য একটু কষ্ট করে সহ্য করে নিও না হয়!

আহত দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকালাম। উনার কন্ঠের কাতরতা যেন আমার ভেতরটা ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে! কোনো দিক থেকেই সমীকরণ মেলানোয় সক্ষম হচ্ছি না।

নির্জন শার্টের হাতায় চোখ ঘষে বললেন,

-আমি প্রতারক, আমায় ঘৃণা করো, আমার মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না, সহ্য করতে পারো না, আর, আর; হোয়াটেভার!! এসব কথার জ্বালাটা হয়তো তুমি কোনোদিন বুঝবে না! কেননা আসল সত্যিটা তোমায় মুখ ফুটে বলতে পারবো না আমি আর না তুমি কখনো জানতে পারবে!! আমি চাই-ও না। বিশ্বাস করো, আমি চাই না তুমি সবটা জানো। জানলে আজকের দিনটার জন্য অনেক আফসোস হবে তোমার! সহ্য করতে পারবে না তুমি!!

নির্জন চলে গেলেন। এতোক্ষণ আঁটকে রাখা অশ্রু গুলো এখন ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
আসল সত্যি বলতে কী বুঝালেন তিনি? ভাগ্য এ কোন গোলকধাঁধায় দাঁড় করালো আমায়? তাহলে কি আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে?

.

গভীর মনযোগ সহকারে বইয়ের ভেতর ডুবে আছি। পরীক্ষা চলছে, তাই পড়া ছাড়া আর কোনো চিন্তা মাথায় আনছি না এখন। নির্জনের সাথে এ কয়েকদিনে একবারও কথা হয়নি! দেখাও হয়নি। কোনো খোঁজ খবর নেননি উনি আমার। হয়তো উনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়! বিয়ের আগে ও পরে কখনোই দেখা দিবেন না। কিন্তু একবার ফোন দিয়ে কথা তো বলতে পারেন!

ফোনটার দিকে বারবার তাকাচ্ছি আর দ্বিধাদ্বন্দের বেড়াজালে ইতস্তত করছি। মনটা ইদানীং অনেক বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রতিই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।

-গুঞ্জন তোর পার্সেল এসেছে!

মায়ের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, ওনার হাতে এটা মাঝারি সাইজের গিফট বক্স। ভ্রু কুঁচকে বললাম,

-কে পাঠিয়েছে এটা?

-জানি না। নাম ঠিকানা কিছুই লেখা নেই। শুধু তোর নাম আর ঠিকানা লেখা।

-আচ্ছা, রেখে যাও। পড়া শেষ করে সময় পেলে দেখবো। যত্তসব!

মা চলে যাচ্ছিলেন। আমি আবার ডাক দিলাম,

-মা, শোনো।

মা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি কোনোরকম ভনিতা না করেই বললাম,

-মা, নির্জনের কোনো খবর জানো?

মায়ের চোখ দুটো মুহূর্তেই ধারালো হয়ে গেল। ক্রোধান্বিত স্বরে বললেন,

-সেটা জেনে তুই কী করবি? সবসময় আমরা যেটা দেখি ও শুনি, সেটা মর্মার্থ সাধারণ হয় না। অনেক কিছুই ব্যতিক্রমী ধরনের হয়। তুই সেসব বুঝবি না! সবসময় সবকিছু যুক্তি দিয়ে মেলাতে চেষ্টা করিস। এটাই তোর ভুল।

ভাষণ শেষ করে মা গটগট করে চলে গেলেন। এতো গুলো কথা কলতে পারলেন, অথচ নির্জনের ব্যাপারে একটা শব্দ পর্যন্ত বললেন না। বিরক্তি নিয়ে একটা কল দিয়েই বসলাম। দু বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে এলো,

-আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন, তা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। অনুগ্রহ করে, কিছুক্ষণ পর কল করুন। ধন্যবাদ।

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিলাম। আমার কল কেটে দিলো! আমার সাথে কথা বলতে চান না নির্জন! আমায় ইগনোর করছেন। তাহলে বিয়ে না করলেই তো হয়! কান্নারা এসে ভীড় করলো মুহুর্তেই। নির্জনের সামান্য অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতাও আমার নেই। কিন্তু নির্জন? তার কি এতে কোনো যায়-আসে? জীবনটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কে জানে?

নিজেকে বহু কষ্টে সামলে নিলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে গিফট বক্সটা হাতে নিলাম। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেও কোনো নাম খুঁজে পেলাম না। কে পাঠিয়েছে এটা? র‌্যাপিং পেপারটা খুলে ভেতরে একটা খাম আর একটা অ্যালবাম পেলাম। আগে খামটা খুললাম। ভেতর থেকে একটা চিঠির মতো তিন ভাঁজের কাগজ বেরিয়ে এলো। সেটা খুলতেই দেখলাম গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

“সময় থাকতে সাবধান হও। তুমি ঠকছো, প্রতারিত হচ্ছো! তবুও বিশ্বাস করে যাচ্ছো। মানুষ এতোটা বোকা হয় কীভাবে? তোমার অন্ধবিশ্বাস ভাঙার জন্য প্রমাণ পাঠিয়ে দিলাম।

-তোমার শুভানুধ্যায়ী ”

লেখা গুলো সব মাথা থেকে কয়েকশো হাত উপর দিয়ে গেল। এসব কথার মানে কী? নির্জনের ব্যাপারে কি কিছু ইঙ্গিত দিলো? কাঁপা কাঁপা হাতে অ্যালবামটার প্রথম পেইজ উল্টাতেই বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের ন্যায় কেঁপে উঠলাম। এটা তো নির্জন! একটা মেয়ের গালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার অবয়ব ব্লার করা, তাই একদমই চেনা যাচ্ছে না। শুধু দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটা একটা মেয়ে। আর ছবিটা যে এডিট করা না, সেটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। অন্যান্য পেইজ উল্টিয়ে দেখলাম, পুরো অ্যালবাম জুড়েই নির্জন আর ঐ মেয়েটার ছবি। এটাই তাহলে নির্জনের স্ত্রী।

চোখের পানি গুলো ক্রমাগত ছবিগুলোর ওপর পড়েই চলেছে। শুনেই সহ্য করতে পারিনি! আর এখন স্বচক্ষে দেখছি। এসব কে পাঠিয়েছে? জানি না! তবে চিঠিতে লেখা প্রতিটা শব্দ এখন সত্য বলে মনে হচ্ছে। মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। ওড়না মুচড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না।

.

ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম আমি আর সারা। আজ পরীক্ষা শেষ হলো। প্রায় এক মাস যাবৎ নির্জনের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সেদিন নিজের চোখে সবটা দেখার পর আর নির্জনের সাথে যোগাযোগের কোনো চেষ্টাই করিনি আমি। শুধু এটাই ভেবেছি! যে করেই হোক, কবুল বলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করে যাবো। জানি, সক্ষম হবো না। তবুও শেষ চেষ্টা করবোই।

-কী এতো ভাবিস? বল তো! নির্জন ভাইয়াকে নিয়ে কেন ডুবে থাকিস সারাক্ষণ?

সারার বিরক্তি মিশ্রিত মুখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললাম,

-ভুল ভাবছিস তুই? আমি কাউকে নিয়ে কিছু ভাবছি না।

সারা আমায় এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

-অনেক বদলে গেছিস রে তুই, ইয়ার! আগের গুঞ্জন আর এখনকার গুঞ্জনের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

সারা হাত নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,

-কোনো ব্যবধান নেই। তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য ভুল-ভাল বকছিস!

সারার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলাম। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই পা উল্টে পড়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা আমার ডান খাবলে ধরে ফেললো। একটুর জন্য পড়া থেকে বেঁচে গেলেও এখনো আমি পুরোপুরি সেফ না। চোখ খিঁচে ঝুলে আছি। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালাম। আমার সামনেই একটা ছেলে আমার ডান হাত এখনো ধরে রেখেছে।

ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। কোনো দিন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। চোখে কালো সানগ্লাস, লাল টি-শার্টের ওপর কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স আর পায়ে স্নিকার্স। চশমা পরে থাকলেও ছেলেটা যে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে, সেটা বুঝতে বাকি নেই। কড়া গলায় কিছু বলতে যাবো, তার আগেই সে আমার হাত ধরে বেশ জোরেশোরে এক টান দিলো। আমি হুমড়ি খেয়ে ছেলেটার বুকে পড়ার আগেই বুকের দুই পাশে দুই হাত রেখে ভর দিয়ে দাড়ালাম।

-বাহ্, ভালোই সেন্স রেখে স্টেপ ফেলো তুমি! আই মিন, তোমার ব্রেইনটা এজ ইউজুয়াল মানুষদের মতো না। সব সময় সচল থাকে।

ছেলেটা ভ্রু উঁচিয়ে কথাটা বলতেই তার থেকে এক হাত দূরে ছিটকে সরে গেলাম। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

-সিনেমার মতো সিন ক্রিয়েট না করে নিজের কাজে যান। এমনিতেই ধাক্কা দিয়েছেন বলে কিছু বলিনি! তার ওপর এমন বিহেভিয়ার!!

ছেলেটা চোখ থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে একটা অমায়িক হাসি দিলো। সারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ছেলেটা আমার দিকে হালকা ঝুঁকতেই পিছিয়ে গেলাম। সে হাসতে হাসতেই বললো,

-তোমার রাগী ফেসটা না জাস্ট ফেবিউলাস!! আ’ম ব্যাডলি অ্যাডিক্টেড অন………

ছেলেটার কথা শেষ হওয়ার আগেই কারো হুংকার কানে ভেসে এলো,

-জাস্ট স্টপ দিস ননসেন্স। ড্যাম ইট!!!

শিউরে উঠে পাশ ফিরে তাকাতেই চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। কতো দিন, কতো ঘন্টা, কতো মিনিট, কতো সেকেন্ড পর দেখছি তাকে!!! প্রতিটা মুহূর্তকে এক একটা যুগ বলে মনে হচ্ছিল আমার। ব্লু শার্ট, ব্ল্যাক স্যুট ; একদম ফরমাল গেটআপে মিস্টার আফ্রান জোহায়ের নির্জন।

নির্জন রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে এসে আমার ডান হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের বাঁ হাতের আঙুলগুলো ঢুকিয়ে আঁকড়ে ধরলেন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। কিন্তু উনি একবারো আমার দিকে তাকালেন না। বরং ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললেন,

-ডোন্ট ডেয়ার টু ক্রস ইয়র লিমিট। নির্জন কিছু বলছে না তার মানে এই না যে, নির্জন কিছুই বলবে না। একশান শুরু করে দিলে সেটা বুঝে ওঠার সুযোগও পাবি না! মাইন্ড ইট।

নির্জন আর এক মুহূর্তও দেরি করলেন না। হাত টেনে দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন আমায়। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আরো জোরে চেপে ধরলেন। পেছন ঘুরে ছেলেটার দিকে তাকালাম। সারা ছেলেটার হাতে থাকা ঘড়ি থেকে ওড়না ছাড়াচ্ছে। কে এই ছেলে?

#চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে