তুই হবি শুধু আমার পর্ব-১২

0
1293

#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_বারো

-কি করছো?
-ঘুমাচ্ছি।
-নিচে নামো। আমি বাড়ির সামনে। দেখা করে চলে যাবো। তাই দ্রুত আসো।

অয়ন্তি এবার চোখ খুললো। ঘুম ঘুম ভাব নিমিষে কেটে যায়। এত রাতে আরশান বাড়ির সামনে কি করছে?এই মানুষটা এমন ক্যান? অয়ন্তি গায়ে ওরনা জড়িয়ে হেলে দুলে নিচে নামলো। আরশান গাড়িতে বসে গুনগুনিয়ে গান গাইছিলো। অয়ন্তিকে দেখে ওর গান বন্ধ হয়ে যায়। অয়ন্তির পরনে সাদামাটা থ্রিপিচ। ওরনা ঝুলছে, চুল খুলে ঘাড়ে আর কপালে কয়েক গোছা ঝুলছে। মেয়েটা ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছে? অন্য মেয়ে হলে নিশ্চই গুছিয়ে পরিপাটি হয়ে আসতো। অয়ন্তি গাড়ির সামনে এসে হাই তুলে বলে,
-বলুন।
-এভাবে এসেছো কেন?
-কিভাবে?
-এলোমেলো।
-রাত আড়াইটায় যদি কেউ ফোন দিয়ে দেখার করার তাড়া দেয় তখন এর থেকে বেশি টিপটপ হয়ে আসা সম্ভব না। দ্রুত বলুন, আমি ঘুমাবো। ঘুম আসছে।
-আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে তোমার ঘুম খুব বেড়েছে তাই না?
-হু।
-খেয়েছো?
-হু।
-তুমি কি ঘুমিয়েই পড়েছিলে? রেডিও শোনোনি?
-হু।
-চলো বিয়ে করে ফেলি।
-হু।
-হু?ওকে গাড়িতে উঠে বসো। আজ বিয়েটা সেড়েই ফেলি। একা একা ঘুমাতে ভালো লাগে না আমার। দ্রুত ওঠো। কুইক! কুসুম।

অয়ন্তি পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আরশানের কথাগুলো মস্তিষ্ক ধরতেই লজ্জায় লাল থেকে নীল হয়ে উঠলো ও।আরশান হেসে ফেলল। অয়ন্তি মিনমিনে কন্ঠে বলে,
-আমি যাই?
-সেকি! বিয়ে করবে না?
-উহু!
-করতে হবে। আর মাত্র ছয়দিন। যাই হোক, যা বলতে এলাম। ফালাককে চেনো?
-ফালাক? অভিনেতা ফালাক? নেক্সট মান্থে যার মুভি রিলিজ হবে?আপনাদের গেস্ট নাকি? আসলে আমাকে বলবেন কিন্তু।আমি সেলফি তুলে আপলোড করবো।
-তুমি কি বেঁছে বেঁছে আমাকে বাদ দিয়ে সবার ফ্যান হও?
-মানে?
-ফালাকই সেই যাকে রোজ ভালোবাসে। আর সেদিনের ছবির তিন নাম্বার ছেলেটা। আমার বন্ধুদের বিরাট বড় পাঙখা আমার বউ আর আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। এটা অন্যায় না? আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
-ফালাক? এত বড় অভিনেতা! রোজকে ভালোবাসে ফালাক?
-আবার জিগায়! ব্যাটা পুরো পাগল। দেখলেই বুঝবে।
-কবে আসবে?
-পরশু।
-রোজরা তো নেই।
-ও যখন জেনেছে রোজ নিঁখোজ। তখন রোজকে খুজে সঙ্গে করেই আনবে।
-আপনাদের সব সমস্যা মিটে গেছে? আপনাকে ভুল বুঝেছিল।
-আমাকে না! আমি তো অযুহাত। ওরা নিজেরা নিজেরা ঝামেলা পাঁকিয়েছে।মান-অভিমান,রাগ-অনুরাগে জ্বলে এই অবস্থা। মাঝ থেকে আমি ফেঁসে গেছিলাম। আর আমরা বন্ধুরা অন্যদের মত না, যত রাগই থাকুক না কেন যাস্ট একটা ফোনকল, আর রাগ গলে জল। কেউ এতদিন ঝামেলা মেটানোর ট্রাই করেনি বলে ঝামেলা ঝুলে ছিল। আজ ও নিজে ফোন করেছে, ব্যাস সবকিছু ঠিক হয়ে গেল।
-উনি রেগে নেই?
-তা তো আছে।
-আপনার উপর?
-না। রোজের ওপর। আমাদের বন্ধুত্ব বাকি পাঁচটা বন্ধুত্ব যেমন তেমন না কুসুম। ওরা দুজন শুধু দুজনের ওপরই রাগ করে। সেই রাগের কারন অন্যকেউ হলেও বাইরের মানুষকে দোষী বানায় না। ওদের দুজনের মতামত হচ্ছে ‘উনি’ কেন আমাকে ভুল বুঝবে?আমাকে অবিশ্বাস করবে। ওদের ‘উনি’র চক্করে বাকিরা তলিয়ে যায়।
-উনি’টা কে?
-কে আবার? রোজ রাগলে ফালাককে ‘উনি’ বলে আর ফালাক রাগ হলে রোজকে ‘উনি’ বলে। তোমার আই কিউ দেখছি টোটাল জিরো কুসুম! এত বোকা কেন তুমি?
-আমি বোকা?তো চালাক মেয়ে খোজেন। আমার পিঁছে পড়ে আছেন কেন?
-কারন আমি বোকা নই। (বাঁকা হেসে)
অয়ন্তি গাল ফুলিয়ে তাকালো। আরশান হেসে বলে,
-যাও। আমাকেও ফিরতে হবে। টাটা,
-হু।
-ভালোবাসি কুসুম।
-হু।
-হু?
-ওকে।
-ওকে?
-পরে বলবো।
-কত পরে?তোমার তো মনে টনে পড়ছে না। রোজের মত তোমরও পরে পাল্টি খাওয়ার ইচ্ছে-টিচ্ছে আছে নাকি? সেসব থাকলে তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলো।তুমি যখন একবার এই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছো তখন আমাকে বিয়ে না করলে তুমি তোমার লাইফে স্বামী নামক ব্যক্তিটিকে কখনই পাবে না কুসুম।
-কেন?
-কারন তোমাকে বিয়ে করতে আসবে এমন বুকের পাটা কারোর নেই। থাকলে তা আমি ভে’ঙে গুড়ো গুড়ো করে দেবো। কথাটা মনে থাকে যেন, ঘরে যাও।

আরশান প্রচন্ড রেগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেই অয়ন্তি চোখ বড় বড় করে তাকালো।কি বললো লোকটা?উফ! লোকটা কেমন জানি! অয়ন্তি যেতে যেতে ফালাকের নতুন ছবির গান গুনগুনালো। কাল থেকে বিয়ের শপিং শুরু। কেনাকাটা কি অয়ন্তি একা করবে? আরশান কি যাবেনা? আচ্ছা আরশান কি করে? সায়নের কাছে শুনেছে অনাপি বলতো ওনার ব্যবসা আছে। কিসের ব্যবসা? কখনও সে ব্যাপারে বলে না কেন লোকটা? অনৈতিক কোনোকিছু? কি সাংঘাতিক! ক্রিমিনাল নয় তো? অয়ন্তি কল্পনার সাগরে মশগুল থাকায় সিড়ি বেয়ে যখন উঠছিল তখন তাঁর পাশে দাড়ানো মানুষটিকে দেখতে পারলো না।তাঁর রাগ, তিক্ত কথা আওড়ানো শুনতে পেল না।

______________

লেখিকা-সাইরাহ্ সীরাত।!
______________

ফার্মহাউজের সামনে এসে দাঁড়ালো ফারহান।সিয়ামকে চলে যেতে বলে সে ধীরে ধীরে প্রবেশ করল। টানা পাঁচ বছর পর এখানে আসলো ফারহান। রোজকে পেলে ও রোজকে ঠাটিয়ে দুটো চ’র আগে মা’রবে। তারপর বাকি কথা। কিন্তু রোজ এখানে এসেছে তো? আরশান নিশ্চই এখানেও খুজে গেছে। ফার্মহাউজের পেছনেই ওর বাবা মায়ের কবর। অতিরিক্ত ডিআইজি সাহেব জানতেন রোজের কথা তাই পরিকল্পনা করে এখানেই করবটা দিয়েছিলেন। যেন রোজ নিজের বাবা-মা’কে দেখতে পারে।যেটা ফারহান পরে জানতে পেরেছিলো। রোজের মন খারাপ হলে ও তিনটা মানুষের কাছে যায়, বাবা মা আর ফালাক! ফালাকের অনুপস্থিতিতে রোজ বাবা-মায়ের কাছেই আসবে। ফারহান ফার্মহাউজের ভেতরটা খুজে কবরের দিকে গেল।রোজ দাড়িয়ে আছে বুকের ওপর হাত গুজে। পরনে নীল পাড় সাদা শাড়ি! ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অন্ধকারে ঠিক ভুতের মত লাগছে বজ্জা’তটাকে। ফারহান পেছনে গিয়ে কিছুসময় দাড়িয়ে রোজকে দেখতে থাকলো। তের বছরের রোজ আর আঠারো বছরের রোজের মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ লক্ষ করা যায়।শারীরিক গঠন, পছন্দের ভিন্নতা, ভাবভঙ্গি সবকিছু বদলে গেছে।চাঁদের আলোয় রোজের চেহারার বাম পাশ দেখা যাচ্ছে। গাল বেয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে, চোখের নিচটা অতিমাত্রায় কালো তার মানে চোখের নিচে কালি পড়েছে। ঘুমায়না নাকি? নাক ফুলে আছে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে রাখা। যার দরুন ওর ফর্সা পেট উন্মুক্ত হয়ে আছে। ফারহানের রাগ উঠে গেল। এভাবে এখানে কেউ দাড়ায়? দারোয়ান যদি চলে আসে? ওকে এভাবে দেখে? ফারহানের উপস্থিতি রোজ টের পেয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। পূর্বের ন্যায় সে বা পা হালকা ভেঙে দাড়িয়ে আছে। ফারহান এগিয়ে গেল। জামার হাতা কনুইয়ের ওপর গোটাতে গোটাতে সে যখন রোজের একদম পেছনে গিয়ে দাড়ায় রোজ তখন নড়ে ওঠে। ফারহানের ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা গেল। রোজ জানে ফারহান এসেছে, ফারহানের উপস্থিতি সে আগের মতই টের পায়। তাহলে সেদিনের নাটক করার কি দরকার ছিল? ফারহান রেগে যাচ্ছে দেখার পর জেদ দেখানোর কি দরকার ছিল? ও জানে না? ফারহানের রাগ অনেক। রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না। ফারহান কিছু না বলে রোজের কাছাকাছিই দাড়িয়ে রইল। পিনপতন নিরবতা চারিপাশে। ফারহান রোজের কোমরের আঁচল খুলে দিল। রোজ তবুও সাড়া দিল না। বরং তেজি কন্ঠে বলল,

-দূরে থাকুন।

ফারহান এবার রোজকে টান দিয়ে সামনে ঘোরালো। রোজ বরাবরের মতো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। চোখে লেপ্টে থাকা পানিগুলো রোজ ডান হাতের উল্টোপিঠে মুছে নিয়ে ফারহানকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে এমন সময় ফারহান ওর হাত ধরে বসল।

-চলে যাচ্ছিস কেন? যেতে বলেছি?

রোজ একবার ফারহানের হাতের দিকে আর একবার ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল,

-আপনার কথা শোনার মেয়ে বোধ হয় আমি নই। আমি রোজ হলেও পূর্বের রোজ নই।

-চাঁদ! (কোমল কন্ঠে ডাকল।)

-কে চাঁদ? আমি কারোর চাঁদ না। আমাকে এই নামে ডাকবে না ফালা,, ডাকবেন না ফারহান সাহেব।

-ফারহান? আর আপনি? আমাকে রাগাবি না চাঁদ।

-রাগ? আপনার মত সনামধন্য মানুষকে আমার মতো সাধারণ একজন কিভাবে রাগাতে পারে? আর ‘ফালাক ভাইয়া’ ডাকটা পাঁচবছর আগেই আমার জীবন থেকে মুছে গেছে। আপনাকে তুমি বলে ডাকার মত কোনো সম্পর্ক যেহেতু নেই তাই তুমি বলার অধিকারও মনে হয় নেই আমার। হাত ছাড়ুন! আমাকে যেতে হবে।

-কেন করছিস এমন?

– কি করেছি?

-সেদিন কেন বলিসনি কি হয়েছিল? তুই তো জানিস তোর পাশে আমি কারোর ছাঁয়াও সহ্য করতে পারিনা। সেখানে তুই একজনকে ভালোবাসার কথা বলেছিস, আবার এটা বললি যে তুই আমাকে ভালোবাসিস না। শুধু বন্ধু মনে করিস।

-ঠিকই তো বলেছি।

-ঠিক? তুই আমাকে শুধু বন্ধু মনে করিস?

-না। (থেমে বলল ) আপনি বন্ধু হওয়ারও যোগ্য নন।

-দাদাই বলে আমি সেদিন,

-আপনার জবাবদিহিতা চাইনি আমি। সেদিন কি হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখেছি। এবং সবকিছু বোঝার মত ক্ষমতাও আমার আছে।একটা কথা বলুন তো, ভালোবাসা কাকে বলে? যাকে ভালোবাসা হয় তাকে কি নষ্টা বলা যায়? আপনি আমাকে নষ্টা বলেছেন, প্রস্টিটিউটের সঙ্গে দারুনভাবে তুলনা করেছেন। আমার ছেলে চাই কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন না? আজ বলছি! হ্যাঁ চাই। একটা দুটো না অনেকগুলো চাই। এবার কি করবেন? আমাকে মা’রবেন? কাটবেন? তাছাড়া পারেন’ই বা কি?
-কয়টা চাই?
-অনেকগুলো!
-আবার বল!
-………….
-কি হলো বল। আর একবার বল, তোর জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো।
-আমার জিভ কি আপনার বাপের সম্পত্তি?
-না,আমার বাপের একমাত্র ছেলের সম্পত্তি!আর কিছু?
-হাত ছাড়ুন।
-ছাড়বো না।
-ছাড়বেন না? ওকে ধরে রাখুন! আমার ছেলেদের স্পর্শ ভালো লাগে।বাই দ্যা ওয়ে, আপনার নাকি চলছে?আই মিন হিরোইন মুগ্ধতার সাথে। তাকে এভাবে ছ্যাকা দিতে কষ্ট হবে না?ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, বনে-জঙ্গলে আর কত প্রেমিকা চান?
-হোয়াট রাবিশ? ওরা আমার প্রেমিকা হতে যাবে কেন?ফালতু নিউজ পড়ে, রেডিওতে প্যাকপ্যাক করে অনেক কথা শিখেছিস। আর সেগুলো বলার জন্য আমাকেই পেলি? দেখ চাঁদ, ভালো ভালোয় বলছি বাড়িতে চল। সব যখন মিটে গেছে তখন এভাবে ঘুরবি না তুই।
-মিটে গেছে? কি মিটেছে? আপনি সেদিন আমাকে যে যে ভাবে অপমান করেছেন, যেভাবে গায়ে হাত তুলেছেন। ওসব ভুলে আপনার সঙ্গে যাবো এটা ভাবলেন কি করে মিস্টার মাহতাব!
-লাস্টবার বলছি চাঁদ। বাড়ি চল।
-যাবো না।
-ওকে ফাইন!

রোজকে টেনে রোজের অঁধরে অঁধর ছোঁয়ালো ফারহান। রোজ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারহান যে এমন কিছু আচমকা করে বসবে তা ভাবেনি রোজ। পাঁচ বছরেও মানুষটার এই দিকটায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। আগে বাচ্চা ভেবে গালে চুঁমু দিত, সেটা মানা যেত। কিন্তু এখন? রোজ নড়ে উঠতেই ফারহান শক্ত করে চেপে ধরলো ওকে। বা হাতে আঁচল পেচিয়ে ধরে ডান হাতে কোমর জড়িয়ে ধরলো। রোজের দম বন্ধ হয়ে আসছে। ফারহান অতি হিং’স্রতার সঙ্গে ওর ঠোঁটের বেহাল দশা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।বেয়াদব, অসভ্য, অভদ্র, বেহায়া, নির্লজ্জ, লু’চ্চা শব্দগুলোও ফারহানের জন্য অতি স্বল্প।এমন সাইকো রোজ পৃথিবিতে দুটো দেখেনি। ভালো তো আরশানও বাসে, সেও তাঁর থেকে অনেক ছোট একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কই সে তো কখনও এমন করেনি অয়ন্তির সঙ্গে। ফারহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে হাঁপিয়ে উঠে চেষ্টাটাই ছেড়ে দিল রোজ। এই হাতির মত বিশাল মানুষটার সামনে ও সামান্য একটা বিড়ালছানা। ওনাকে ঠেলে সরানো তো দূরে, সর্বশক্তি দিয়ে ঠেলেও সামান্য নড়ানো সম্ভব না। রোজ একদম শান্ত হয়ে যেতেই ফারহান ওর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলল,
-এবার যাবি নাকি?

রোজ হাটতে শুরু করে। ফারহান মৃদু হেসে পেছন পেছন আসছে। এখনকার মত তো মেয়েটাকে ঠান্ডা করা গেল। কিন্তু পরে? ওদিকে রোজ মনে মনে বলল,
-ঝড় আসার পূর্বে সবকিছু শান্ত হয়ে যায় ফারহান মাহতাব ফালাক। বাক্যটা আপনি জানেন, তাই বাক্যের মর্মার্থ আমাকে বোঝাতে হবে না। মাত্র একঘন্টা, তারপর নিজেই বুঝে যাবেন। রোজকে এত সহজে পাবেন না আপনি। রোজ আপনার হবে না, সে আপনার হতে চায় না।

রোজ হাটতে হাটতে বলে,
-দাদাইকে আমি প্রেমিকের মত ভালো না বাসলেও আমার ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। এতক্ষণে এটা বুঝেছেন নিশ্চই। তাই এসব ফালতু ড্রামা করে কি লাভ? আমি আপনার নসিবে নেই। আপনার হতে আসি নি আমি।আর আমি না চাইলে আপনি আমাকে নিজের করতে পারবেনও না মিস্টার মাহতাব।

-তাহলে কার হবি তুই? নতুন দিওয়ানার নাম ঠিকানা দে আমিও একটু দেখি, সে কেমন? তোকে কিভাবে বশ করেছে।

-ওকে! শুনতে চান যখন তখন বলছি। আমার ওনাকে নিয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই। তার আগে এটা বলুন দাদাইয়ের প্রেমের কথা শুনেছেন? দাদাইয়ের কুসুমের কথা?

-শুধু তোর কথা জানতে চাই, বাড়তি প্যাচাল পাড়বি না। ছেলের নাম কি?

-তাঁর নাম হচ্ছে চমক। রেডিও সেন্টারের আর’জের চমক। সে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। আপনার মত নয় যে যখন তখন ছেড়ে চলে যাবে।আপনার কাছে তো শুধু আপনি নিজে গুরুত্বপূর্ণ, আপনার রাগ,ক্যারিয়ার, ইচ্ছে। রেডিও, আমি, আমার কথা, এগুলো তো ফালতু জিনিস। আপনি সর্বদা উঁচুতে উঠতে চেয়েছিলেন আজ উঠেছেনও। কিন্তু চরম সত্য হচ্ছে আমাকে পেতে হলে আমার মত হতে হবে। ওসব বাদ দিতে হবে। যেটা করা আপনার জন্য অসম্ভব। সো এসব নাটক অন্যকোথাও গিয়ে করুন। আমি চমককে ভালোবাসি, ওকেই বিয়ে করবো। আর ওর হয়েই সারাটা জীবন থাকবো।

কথাগুলো বলে একমুহূর্তও দাড়াতে পারলো না রোজ। ফারহান টেনে ওকে দেওয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
-কি বললি? চমককে ভালোবাসিস? ওকে বিয়ে করবি? ওর হয়ে সারাজীবন থাকবি? তোর মনে হয় গতবারের মত তোকে ছেড়ে দেবো আমি? আমি আর অন্যসব প্রেমিকের মত না চাঁদ। যে শুধু প্রেমিকার কথা ভাববো, অতিতে ভেবে একবার ভুল করেছিলাম। সেই ভুল আর করবো না। তোকে আমি না পেলে কেউ পাবে না। প্রয়োজনে তোকে আগে শেষ করবো পরে নিজেকে আর তার আগে শেষ করবো ওই চমককে। তুই কারোর হতে পারবি না চাঁদ। কারোর না। আমি তোকে কারোর হতে দেবো না। তুই শুধু আমার হবি, বুঝেছিস? #তুই_হবি_শুধু_আমার।

রোজের ঠোঁট কে’টে গেছে। ফারহানের হাতের জোর বাড়ছে।গাল ব্যাথা করছে, সহ্যের সীমা পার হচ্ছে। তাই রোজ শক্ত গলায় বলে,
-সেটা তো সময় বলবে। তবে এটা নিশ্চিত থাকুন যদি নিজেকে বদলাতে না পারেন আমি কখনও আপনার নাগালের মধ্যে আসবো না। আপনার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে রোজ। আর আপনি জানেন যে রোজ যেটা বলে সেটাই করে। রোজার বা চাঁদের মত কেঁদে ভাসায় না। কারোর ভালোবাসা পাবার আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছে রোজের নেই। কারন এই বাজারে রোজকে ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। রোজ যাকে চাইবে তাকেই পাবে। সেজন্যই আপাতত চমককে চায় সে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে