তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব-৩৪ এবং শেষ পর্ব

0
2005

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩৪(শেষ পার্ট)

নদীর এমন কথা শুনে বর্ষণ হাসতে হাসতে বলে সেটা আর মনে করিয়ে দিতে হবেনা। অবশ্যই তোমার জন স্পেশাল গিফট আছে। আর একটা নয় দু দুটো গিফট পাবে তুমি।

সাগর বর্ষণের কথা শুনে একটু অভিমানি কন্ঠে বলে হুম যতো হেল্প তো শালীকাই করেছে বন্ধু তো কিছু করেনি!

ওদের এমন কথা শুনে বর্ষণ বলে হুম সব কিছু তোরাই করেছিস। আমি এই মাত্র এন্ট্রি নিলাম।
বর্ষণের কথা শুনে রাফসান, ঈশিতা আর নদী হাসতে থাকে, আর বর্ষা কিছু না বুঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সাগর কোমরে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

বর্ষণের রুম থেকে বের হয়ে রাফসান রোহিতকে ফোন করে।রোহিত- ঋতু নিপুর সাথে গিয়েছে। সেখানে সবুজকে কি কি বিপদে ফেলেছে সেটা শুনতেই ফোন দিয়েছে। রাফসান রোহিতের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে চলে আসে। রাফসানের পিছে পিছে সবাই নিচে চলে আসে।

সবাই রুম থেকে বের হওয়ার পরে বর্ষা বেড থেকে নামতে যাবে, একচুুয়েলি এতো ভারি গহনা শাড়ি নিয়ে অসস্থিতে আছে বর্ষা। তাই চেঞ্জ করতে হবে, তখনই বর্ষণ ওকে কোলে তুলে নেয়। বর্ষণকে এভাবে কোলে নিতে দেখে বর্ষা বলে কি করছো কি নামাও। একটু কড়া গলায় বর্ষা বলে, কোলে করে এ বাসায় আনতে বলেছিলাম কিন্তু সবসময় কোলে নিয়ে ঘুরতে বলিনি নামিয়ে দাও আমায়।

বর্ষার এমন কথা শুনে বর্ষণ বলে বাব্বাহ মাত্র কয়েক ঘন্টায় এতোটা পরিবর্তন! গুড গুড!
বর্ষণের কথায় বর্ষা আর কোন জবাব দিলোনা। বর্ষণ তার পরীকে নিয়ে গিয়ে বেলকনিতে বসায়।

বর্ষা তো বেলকনিতে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। আবছা আলোতেও পুরো বেলকনিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বেলকনিটা। একপাশে ফুলের টব রাখা আছে সারি সারি।সেখানে বর্ষণ আর বর্ষার পছন্দের সব ফুলের গাছ। ফুলের সুন্দর ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারপাশটা।ফুল দিয়ে পুরো ব্যালকনি সাজানো হয়েছে। টাইসের উপর বড় করে লাভ শেপ করে ফুল দিয়ে সাজানো। মাঝে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা ” শ্রাবণের মেঘ”।

বর্ষা তো এসব দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।
বর্ষণ, বর্ষার হাতে সেই ডায়েরি টা তুলে দেয়। যেটার প্রতিটি পাতা তার পরীকে নি লেখা। যার প্রতিটা শব্দে আছে ভালোবাসার ছোঁয়া। তার মেঘুপাখির পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগা মন্দ লাগা সব কিছুই লেখা আছে এখানে!

বর্ষণ ডায়েরি টা বর্ষার হাতে দিয়ে বলে, এটা যদি আগেই খুলে দেখতিস তাহলে, শাফিন কখনোই এসব করার সাহস পেতোনা।

ডায়েরির কয়েকটা পাতা পড়েই বর্ষার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ধ্যান ভাঙে বর্ষার।
সে বর্ষণকে উদ্দেশ্য করে বলে তু তুমি এটা কোথায় পেলে! এটা তো তোমার পাওয়ার কথা নয়!

বর্ষণ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালোোবাসি তোকে বুঝেছিস তুই! ভালোবাসি তোকে! তুই কি করিস কোথায় যাস সব কিছু আমার জানা। কথাটা বলেই সোজা হয়ে দাঁড়ায় বর্ষণ।
চব্বিশ ঘণ্টা তুই আমার এখানে থাকিস(বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে কথাটা বলে বর্ষণ)। সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমার পরীটাকে আমি দেখে আসছি। তার প্রতিটা কথা প্রতিটা পদক্ষেপ আমার জানা।

প্রথম দিন ভার্সিটি থেকে আসার পরে তোর থেকে তোর ফোন টা নিয়েছিলাম মনে আছে তোর?
সেদিন তোর ফোন নিয়ে তেমন কিছু করিনি জাস্ট নদীর কন্টাক্ট নম্বর টা নিয়েছিলাম আর তোর আইডি পাসওয়ার্ড টা নিয়েছিলাম।

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তোর আইডি চেক দিতাম আমি। তবে হ্যা তুই কারো সাথে কথা বলিস কি না সেটা দেখার জন্য নয়। তোকে কেউ বাজে কথা বলে কি না। অযথা কেউ নক করে কি না সেটা জানার জন্য।
কারণ আমার কলিজাকে কেউ ডিস্টার্ব করুক সেটা আমি কখনোই চাইনি।

আর নদীর থেকে তোর সারাদিনের খোঁজ খবর নিতাম। নবীনবরণের বিষয়টাও নদীই আমায় বলেছিল।সে জন্যই সকল কাজ গুছিয়ে দুদিন আগেই দেশে ফিরে এসেছিলাম।
আমার পরীকে আমি অন্যের সাথে সহ্য করতে পারি না। আমার বুকে খুব কষ্ট হয়, কলিজায় লাগে।

আবার শাফিনকে নিয়ে যে তোকে বকাঝকা করেছিলাম ভুল বুঝেছিলাম সে ভুলটাও নদীই ভেঙে দিয়েছিল।বলেছিল যাকে ভালোবাসেন তাকে এতোটুকুও বিশ্বাস করতে পারলেন না!
নদীই হলো আমাদের সেই শুভাকাঙ্ক্ষী।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা হা হয়ে যায়।বর্ষণকে বললো কই পেতনী টা তো কখনো এসব বলেনি আমায়! অবশ্য আমার সন্দেহ হয়েছিল ওর ওপর। আমরা কোথায় যাই কি করি সেটা ও জানতো কি করে।

বর্ষণঃ হুম, ম্যাম সেটা আপনার বর ই জানাতো। বলেই এক চোখ টিপে দুষ্টু একটা হাসি দেয়। বর্ষণ হাত বাড়িয়ে দেয় বর্ষার দিকে বর্ষা হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।

একটা লাল গোলাপ নিয়ে বর্ষার খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলে পরীকে সবসময় ফুলেতেই মানায়।

হঠাৎ বর্ষণ বর্ষার সামনে এক হাঁটু মুড়ে বসে বর্ষার হাতটা টেনে আঙুলে একটা রিং পরিয়ে দেয়। ওভাবেই বসে বর্ষণ বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ভালোবাসাকে কিভাবে বর্ণনা করা যায় আমি জানিনা। কবি সাহিত্যিক হয়তো তাদের কাব্যিক ছন্দে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে ভালোবাসার।
কিন্তু আমি এতো কিছু বুঝিনা, বুঝতে চাইও না। আমি শুধু জানি আমার ভালোবাসা মানে হলো তুই। আমার চারপাশ ঘিরে শুধু তুই, আমার মনের রাজ্য জুড়ে শুধু তোর আনাগোনা, সেখানে শুধু তোরই রাজত্ব।আর তোর চারপাশটা ঘিরে শুধু আমার অস্তিত্ব, তোর মনে শুধু আমারই রাজত্ব।

বর্ষা বর্ষণের হাত ধরতেই বর্ষণ উঠে দাঁড়ায়। বর্ষণ উঠে বর্ষার কোমর জরিয়ে ধরে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আচমকা এমন হওয়ায় বর্ষা চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।বর্ষণ বর্ষার এতোটাই কাছে চলে এসেছে যে বর্ষণের গরম নিশ্বাস পরছে বর্ষার চোখমুখে।

বর্ষণ ধিরে ধিরে মুখটা বর্ষার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,তোকে বড্ড ভালোবাসি রে কলিজা।#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা তোকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও আমি থাকতে পারবো না। আমি তোর জন্য নয় নিজের জন্যই তোকে চাই। শ্রাবণের আকাশে এই মেঘটাকে খুব প্রয়োজন। জানপাখি,একবার বলনা তুই শুধু আমার ভালোবাসা।

বর্ষা এতোক্ষণ ধরে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কারণ বর্ষণের কথাগুলো তাকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। একটা মানুষ কি করে একজনকে এতোটা ভালোবাসতে পারে তা বর্ষার অজানা। বর্ষার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। এটা দুঃখের কান্না নয়, আনন্দের অশ্রু।বর্ষণের গাল ভেজা অনুভব করতেই বর্ষণ বর্ষার কানের পাশ থেকে মুখ সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকাতেই বর্ষা বর্ষণের দুই গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিজের দিকে ঝুকিয়ে বর্ষণের কপালের সাথে নিজের কপাল এক করে দিয়ে বলে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি।আমি চাই আমার পাগলটা সবসময় এমন করেই আমায় ভালোবাসুক। সবসময় আমায় আগলে রাখুক আমার পাশে থাকুক।

বর্ষার কথায় বর্ষণ যেন আকাশের চাঁদটাকে হাতে পেলো।খুশিতে বর্ষার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে। বর্ষাও দুহাতে জরিয়ে ধরে তার ভালোবাসার মানুষটাকে।

মাঝরাত রুমে যেতে হবে। বর্ষাকে নিয়ে রুমে যাবে তার আগেই বর্ষা বলে আমার একটা কথা আছে।
বর্ষণ বলে, বলো কি বলতে চাও।

বর্ষাঃ যতোদিন তৃতীয় কেউ না আসে ততোদিন ধরে প্রতিদিন তুমি আমায় কোলে নিয়ে বেলকনিতে আসবে আবার কোলে নিয়ে বেডরুমে যাবে।
বর্ষার বলতে দেরি বর্ষণের বর্ষাকে কোলে তুলতে দেরি হয়নি।বর্ষা তো অবাক হয়ে বর্ষণের গলা জরিয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ চোখ দিয়ে ইশারা করে বর্ষাকে বাইরে তাকেতে বলে। বর্ষা বাইরে তাকাতেই হা হয়ে গেল।
বাইরে রংবেরঙের আতশবাজির ঝলক।তার মাঝে বড় বড় করে লেখা ভেসে ওঠে..
Congratulations

লেখাটা মুছে যেতেই আবার ভেসে ওঠে..
May your married life be happy 💕

সবশেষে ভেসে ওঠে
Happy Ending

_______সমাপ্ত_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে