তুই আমারই থাকবি part-24

0
1817

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan ?
#Part_24
!
‘এভাবেই কেটে গেলো আরো পাঁচদিন। আজ সকালে একটু আগে আম্মু ফোন করেছিল,বাসায় যেতে বলেছে আমাকে। কী জানি আপুর কী দরকারি কাজ করে দিতে হবে!

অবশ্য আপুর আর কি ইম্পর্টেন্ট কাজ থাকবে! ভার্সিটির সিনিয়রদের কাছ থেকে র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে একগাদা এসাইনমেন্ট নিয়ে আসবে।আর সেই কার্যগুলো আমাকে সমাধান করতে হবে,নইলে সারাক্ষণ আমায় জ্বালিয়ে খাবে!এমনিতে ভার্সিটিতে গেলে বোকাসোকা নিমাই সেজে থাকে।আর বাসায় হিটলারি বুদ্ধি প্রয়োগ করবে……হিটলারও বড় আপুর বুদ্ধির কাছে হার মানতে বাধ্য…..!

যাইহোক, বাসায় যাবার জন্য ব্যাগপত্র গোছাচ্ছি।মানানিকে বলে দিয়েছি যে,অনেকদিন থাকবো!মামানিও পারমিশন দিয়ে দিয়েছে আর বলেছে যে,আমার যতদিন ইচ্ছে ততদিন থাকতে পারি। নো চাপ….

খুশিমনে রেডি হলাম।কিন্তু প্রবলেম হলো আমাকে দিয়ে আসবে কে?আরহাম ভাইয়ার এককথা,ভাইয়া আমাকে দিয়ে আসবে!

কিন্ত গুন্ডা আবরার?সেকী আর কারো কথা মানে?গো ধরে বসে আছে যে, উনিই আমায় দিয়ে আসবেন।আমি অবশ্য উনার মতলব বুঝতে পেরেছি।উনার মতলব হলো,উনাকে ছাড়া যে আমি যাচ্ছি সেটা উনার সহ্য হচ্ছে না।আসলে উনাকে তো যেতে বলা হয়নি…আর উনি মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না, তাই রেগে উনি মিস্টার ফায়ার থেকে দাবানল হয়ে গিয়েছেন!

এ নিয়ে উনার সাথে আমার ছোটখাটো কথা কাটাকাটিও হয়েছে।বাট আমি এখন উনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা।তাই আম আরহাম ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,ভাইয়া চলো!আমি তোমার সাথে যাবো!

-এ কথা শোনার পর উনার মুখ হা হয়ে গেলো। কিছু না বলে গরম চোখে আমার দিকে তাকালেন।ওই চোখের ভাষা ছিলো,কাজটা ভালো করলে না!দেখে নেবো!

-আমিও ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে উনার দিয়ে তাকিয়ে চোখ মারলাম।মনেমনে বললাম,যা রে!তুই থাকিস ডালে ডালে আমি তার পাতায় পাতায়!মজা কীভাবে দেখাতে হয়,সেটা এবার খুশবু শেখাবে তোকে!আমার পেটে ঘুমিয়েছিস এতদিন,এখন গিয়ে জুতায় মুখ দিয়ে ঘুমিয়ে থাক!

-আরহাম ভাইয়া বলে উঠলো, চলো!বলেই তাড়াহুড়ো করতে লাগলেন।মামানি হাতে তৈরী পিৎজা, ভুনাখিচুড়ি, আর কিছু পিঠা দিয়ে দিচ্ছিলেন।কিন্তু আরহাম ভাইয়ার তাড়াহুড়োতে সব ভুলভাল ব্যাগে ঢুকাতে লাগলো!

আমি বুঝলাম না,ভাইয়া এত তাড়া দিচ্ছে কেন?আমাদের বাসায় যাওয়ার রিজনটা কী উনার?আর হঠাৎ করেই বা উনি আমায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কেন?ভাবসাবে তো অন্যকিছু মনে হচ্ছে!গায়ে কড়া পারফিউম, চোখে সানগ্লাস, কালো শার্ট-প্যান্ট ইন করা আর পায়ে কালো লুপার!গায়ের রং ফর্সা দেখতে গুন্ডা আবরারের সাথে মিল থাকলেও উনার চুলগুলো কালো! ‘

ভাবনার খাতা বন্ধ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম ভাইয়ার সাথে!আর আমার গুন্ডা মিয়া মুখ গোমড়া করে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছেন।উনিও শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিলেন বাট উনার প্ল্যানে একগ্লাস পানি ঢেলে এই মহাযুদ্ধে আরহাম ভাইয়া জিতলেন।

যাইহোক, আরহাম ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করলেন।আমি আর ভাইয়া প্রচুর হাসাহাসি করছি আবরার গুন্ডাকে নিয়ে! টপিক হলো গুন্ডাটার ছোটবেলা নিয়ে!

আরহাম ভাইয়া মজা করে উনার ভাইয়ের কথা বলছেন আর আমি হেসে কুটিকুটি হচ্ছি!ভাইয়া বললো,

-আরহাম একবার উইক এন্ডে ছুটি কাটাতে গিয়ে এক ব্রিটিশ মেয়েকে থাপ্পড় দিয়ে নাকি অজ্ঞান করে ফেলেছিলো!রাগে তিন তিনটা থাপ্পড় এতই জোরে মেরেছিলো যে,মেয়ের ফর্সা গালে নাকি স্থায়ীভাবে উনার হাতের দাগ বসে গিয়েছিল!এ নিয়ে নাকি উনাকে জরিমানাও গুনতে হয়েছিলো। মেয়েটির দোষ ছিল শুধু, উনার হাত ধরায়!

-চিন্তা করো! কেমন ডেঞ্জেরাস ছেলে।ভার্জিনিটি নিয়ে যে এত বড় গলা করতো এখন কোথায় গেলো সেই মহান বীরপুরুষের ভার্জিনিটি?



এভাবেই কথা বলতে বলতে, হাসতে হাসতে পৌঁছে গেলাম চৌরাস্তার মোড়ে!হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়লো আরেক গাড়ি!আরহাম ভাইয়া মিটিমিটি করে তাকালেন।আমিও উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে বাইরে তাকাতেই চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেলো…….





আমাদের গাড়ির সামনে কুচকুচে কালো মার্সিডিজ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিখ্যাত ইংরেজ মডেল এবং আমার কুখ্যাত জামাই মিস্টার আবরার আগুন চৌধুরী উরফে দাবানল চৌধুরী! উনি এমনই স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছেন যে,রাস্তায় দাঁড়ানো মেয়েরা একটা করে ছবি তুলে নিচ্ছেন।কলেজরত মেয়েরা মুখ হা করে তাকিয়েই আছে……জীবনে এমন ইংরেজ পোলা মনে হয় দেখেনি।আমি এসব দেখে খুব মজা পেলাম!!

যাইহোক,উনি গাড়ির দরজা খুলে হ্যাঁচকা টানে আমাকে বাইরে নিয়ে আসলেন।যাতে করে আমি গাড়ির দরজাই খাই এক বারি!রেগেমেগে উনাকে বললাম,এই গুন্ডার গুন্ডা!রাস্তায় আর মেয়ে পাসনি?আমার সাথে গুন্ডাগিরি করতে আসছিস?এটা কিন্তু চৌরাস্তার মোড়,মানুষজনের অভাব নাই!

-উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,তো?

-তো?তো আমি এখন সবাইকে ডেকে বলবো যে,আপনি একটা গুন্ডা!আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন!

-সবাই তোমার কথা বিশ্বাস করবেই বা কেন?

-করবে করবে!সবাই আপনাকে দেখেই বুঝবে আপনি খাঁটি বিদেশী! আর এসব খাঁটি বিদেশীরা কেমন মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁক করে সেটা এদেশের মানুষজন ভালো ভাবেই বুঝে!

-তো কীভাবে বুঝে? ইংলিশ মুভি দেখে?

-এজন্য ইংলিশ মুভি দেখার দরকার নেই,বাংলা সিনেমা দেখলেই বুঝে!

-ওহহ….বেইবী!তুমি পকপক আবারও শুরু করেছ?তুমি যখন এতকিছুই জানো তাহলে তো মেইন জিনিসটাও জানো!

-আমি সন্দেহী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,মেইন জিনিস? সেটা আবার কী?

-উনি ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে বললেন, ওই! ইংরেজ বলো আর যা ই বলো,ওরা যে,রাস্তায় সবার সামনে প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খায় সেটাও জানো নিশ্চয়ই!

-আমি বেক্কলের মতো উনার দিকে তাকালাম। ব্যাটা যে এতবড় বেলাজ,বেহায়া সেটা আজ আবারও প্রুফ হলো! শেইম অন ইউ খুশবু…. শেইম অন ইউ!নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে!

-উনিও যেন মহান কর্তব্য পালন করছে আমার প্রতি, এমন একটা ভাব নিয়ে বিশ্বজয়ীর হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রেখে বললেন,কাম অন বেইবী!করবো নাকি লিপ..কিস…..?

আমার মাথার উপর দিয়ে যেন টর্নেডো বয়ে গেলো। উনি জোরে বলাতে আশেপাশে যাতায়াতরত চার-পাঁচজন বয়স্ক মুরুব্বি লোক ফিরে তাকালেন!আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

নিজেকে এই মূহুর্তে এলিয়েন মনে হচ্ছে।এক্ষুনি যদি একটা ইউএফএ যান মাটিতে নেমে আসতো তাহলে শিউর আমি একলাফে ঢুকে যেতাম।এতই লজ্জা করছে নিজের প্রতি, আর উনার প্রতি রাগ লাগছে…..


আমাকে এই অস্বস্তিকর মূহুর্ত থেকে বাঁচাতেই যেন গাড়ি থেকে নেমে এলো আরহাম ভাইয়া।উনার কথা ভাইয়া গাড়িতে বসে থাকায় শুনতে পাননি।ভাইয়াকে আসতে দেখে মুরুব্বি লোক গুলো ধীরেধীরে চলে গেলো।

ভাইয়া এসেই বললো, ফাজলামো পেয়েছিস আবরার?তোর কান্ডগুলো আমি এতক্ষণ বসে বসে দেখছিলাম!!এভাবে মাঝরাস্তায় কেউ এভাবে ওভারটেক করে?

-তুমি আমার বউ নিয়ে যাচ্ছিলে কেন?

-লিসেন,তোর বউটা আমার বোন হয়।আর আমার বোনকে আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে নিয়ে যাবো। তোর এতে বাধা দেওয়ায় রাইট নেই!

-উনি রেগে বললেন, আছে!

আরহাম ভাইয়াও ছাড়ার পাত্র নয়।তিনিও বললেন, নেই!

-নেই!

-আছে!

এভাবে কথা কাটাকাটি করতে লাগলেন দুই ভাই।একপর্যায়ে……… ‘

(এখন কিছু পাবলিক বলবে…..মেয়েটা পাগল হয়ে গিয়েছে।কিসব ছাইপাঁশ লিখেছে এসব?মোটেও সুন্দর হয়নি!আমিও বলি গল্প দেওয়ার ইচ্ছে আমার মোটেও ছিলো না।কিন্তু অনেকেই বলেছে বলে দিয়েছি।মাথা আমার এতই আউলিয়ে গিয়েছে যে গল্পের থিম হ্যাং মেরে আছে।কিছুই মাথায় নেই…..)

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে