তিনি এবং ও ! ৩৩

0
1961
তিনি এবং ও ! ৩৩
তিনি এবং ও ! ৩৩

তিনি এবং ও !

৩৩.

ভাষাই মানুষের পরিচয় – একটা কথা আছে জানেন তো?
নিদ্রের উত্তরের অপেক্ষা না করে সুফি সাহেব বললেন
– অফিসের মধ্যে এরকম ঝামেলা শুরু হবে আমরা ভাবিনি।মেয়েকে তো ইখলাস সাহেব কোনোরকম বুঝিয়ে অফিস থেকে বের করলেন কিন্তু কর্মচারীরা তাকে আড় চোখে…. মানে বুঝোই তো।
আমাদের সাথে যারা লেনদনে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যেও ব্যাপার টা ছড়িয়ে গেলো। নিষিদ্ধ পল্লীর যে,ওই মেয়ে এটা জানতে কর্মচারীদের সমস্যা হয়নি। কারণ, সবাই তো আর সাধু না।
ইখলাস সাহেবকে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে। কেউ ঠাট্টাতামাসা করে বলেছে আবার কেউ ঘৃণাবশত হয়ে বলেছে।
নিদ্র বলল
– অদ্রির কানে যায়নি?
– অদ্রিকে অফিসের কেউই কোনোদিন দেখেনি, আমি ছাড়া। সুফি সাহেব জানতেন, সত্য কোনোদিন গোপন থাকেনা।এই কারণেই তিনি অদ্রিকে আড়ালে রেখেছিলেন। শেষ বয়সের ভরসা হিসেবে।
– আপনি কেনো অদ্রিকে বলেননি?
– বলার কোনো উপায় আমি পাইনি। সেদিনই তিনি ওই মেয়ের কাছে যান। কী হয়েছিলো আমি জানি না।
ইখলাস সাহেব প্রায় ১ সপ্তাহ অফিসে আসেননি। বাসায় ছিলেননা।
অদ্রির সাথেও আমার যোগাযোগ নেই।নিষিদ্ধ পল্লীতে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, সেই সুন্দরী মেয়ে আত্মহনন করেছেন।
– সে কবে সুইসাইড করেছিলো?
– ইখলাস সাহেবের সুইসাইড করার ৩ দিন আগে। এই হলো ভালবাসা!
– ভালবাসা হলে সে যতোই নোংরা জায়গার মানুষ হোক না কেনো তাকেই জীবনসঙ্গী করতেন।
– দুই নৌকায় পা দিলে যা হয়।
– না। এটা মানায় না। কর্মফল ভোগ করতেই হবে।
– তবে আজব ব্যাপার হচ্ছে সুইসাইড করার আগের দিন তিনি তার সব সম্পত্তি অদ্রিকে দিয়ে যান। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছিলেন মনে হয়।
– আমার একটা বিষয়ে বেশ খাপছাড়া লাগছে। অদ্রি সত্যিই কিছুই জানতো না?
– আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি ততটুকুন তোমাকে বলেছি।
– ব্যবসার কী হলো?
– অদ্রি তার অংশটুকু বিক্রি করে দিয়েছে আমিও তার ১ মাস পর বিক্রি করে দিয়ে এক অজপাড়া গায়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
মনের মধ্যে অনুশোচনা বোধটা কোনোভাবেই যাচ্ছিলো না। রাতে আমি ঘুমাতে পারতাম না। হুট করেই অদ্রি বাড়িঘর বিক্রি করে উধাও হয়ে গেলো।অনেক খুঁজেছি ওকে। প্রত্যেক মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে বিশ্বাস করার।সন্তান যতোই ভুল করুক না কেনো মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে স্নেহে আগলে রাখা। এতে সন্তান প্রথমে ভুল করলেও পরবর্তীতে যেন তা না করে। অদ্রি প্রথমে তার মা – বাবার কাছেই গিয়েছিলো কিন্তু তারা তাকে গ্রহণ করেনি। তাদের কাছে মেয়ের বর ফেরেশতা আর মেয়ে শয়তান। মেয়ের ক্যারেক্টার এর কারণেই নাকি তার ফেরেশতা জামাই আত্মহত্যা করেছেন। গলায়দড়ি দেয়ার আগে অদ্রির মা – বাবার সাথে তার কথা হয়।অদ্রির মা – বাবা কে বলেছে- আমার সাথে নাকি অদ্রির খুব প্রেম চলছে। আমাদের নাকি বিয়ে যেন তারা দিয়ে দেয়।
জানেন নিদ্র, মিথ্যা কে আমি খুব ভয় পাই।
– অদ্রির মা, বাবাকে যে তিনি ফোন করেছিলেন সেটা জানলেন কীভাবে? পুলিশ ইনভেস্টিগেশন?
– পুলিশ? এলাকার পুলিশ তার আশেপাশের এলাকার পুলিশ তাকে ভালো ভাবেই চিনতেন। এলাকার দারোগা তাকে কতোবার যে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে ধরেছেন। টাকার জোড়ে বেঁচেছেন। আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তার মৃত্যু গলায়দড়ি দিয়েই। গলায় গভীর দাগ ছিলো।
ওনার এই কাণ্ডের পর আমাকে আর অদ্রিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমাদের মাঝে সম্পর্ক আছে এই কারণে আমরা ইখলাস সাহেব মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি – এই মর্মে অদ্রির বাবা কেস করেছিলেন।
– আমার প্রমাণের অভাব ছিলো কিন্তু টাকার অভাব ছিলোনা।কেস থেকে রেহাই পাই কিন্তু অনুশোচনা থেকে পাইনি আজও।
উপর দিয়ে দেখাই সুখী একজন মানুষ আমি। কিন্তু আমার ভেতর যে ঝড় চলছে আজও সেটা কেউই দেখেনি। আর দেখতেও দিবোনা।
মাঝেমধ্যে ভাবি, আমি কেনো ইখলাস সাহেবের কথা শুনে অদ্রির সাথে মেলামেশা শুরু করেছিলাম? না করলেই তো আমাকে অনুশোচনার আগুনে জ্বলতে হতোনা। পরে ভাবি, আমি না হয় বেঁচে যেতাম কিন্তুকিন্তু……
– কী?
– অন্য কাউকে দিয়ে অদ্রির বড় কোনো ক্ষতি করতে পারতেন। আমি তো তাকে বন্ধু, ছোটোবোনের চোখে দেখেছি। ওই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছি কিন্তু ব্যর্থ।
– আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
– সেটা আপনার ইচ্ছা। আমার জানা যতটুকু ছিলো বলেছি।
– ওই বুড়িকে কোথায় পাবো?কেসের সাক্ষী হিসেবে তো ওনাকে…….
– ইখলাস সাহেবের মৃত্যুর দেড় মাস আগেই তিনি ওই বাসা ছেড়ে চলে যান।
– তার বাড়ির ঠিকানা?
– তিনি ইখলাস সাহেবের ফুফু ছিলেন। আপন কিনা সেটা অদ্রি ভালো জানে।
আর কিছু জানার আছে?
– আপাতত নেই। আগে সমীকরণ মিলিয়ে নেই।আমি কাল খুব ভোরে চলে যাবো।
– তাই ভালো মৌরি থেকে পালানো উচিৎ।
ওরকম অসুস্থ মেয়েকে আমি কারো ঘাড়ে চাপাতে চাইনা।

অদ্রি তার ঘরে হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে। আজকেই তাকে শেষ ছক কেটে ফেলতে হবে।
আর বেশি সময় নেয়া ঠিক হবেনা।

চলবে……..

#Maria_kabir