তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
1509

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৩ (এক্সট্রা)

প্রায় দুই ঘন্টা সাওয়ারের নিচে থেকে সব ঝাপসা হয়ে গেছে মেঘলার কোনো মতো ড্রেসটা পালটে দরজা খুলে বাইরে আসতেই শরীর আর সায় দিলো না নিচেই ঢুলে পরে গেলো৷
প্রায় তিন ঘন্টা হতে চললো মেঘলার দরজা খোলার খবর নেই এইবার হায়াতের মনে ভয় ঝেকে বসেছে মেঘলা আবার কিছু করে ফেললো না তো?
এসব ভেবে দরজা ভাংতে লাগে৷
দরজা ভেঙে রুমে এসেই দেখে মেঘলা নিচে পরে আছে, সামনে গিয়ে হাত ধরতেই দেখে হাত পা পুরো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে চোখ মুখ ফোলা৷
হায়াত বসে না থেকে মেঘলাকে উঠিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷

প্রায় আধ ঘন্টা পর হসপিটালে এসে পৌছায়, ঐশীকে ফোন করে দিয়েছিলো ঐশীও এসেছে৷
মেঘলার বাবা ব্যাবসার প্রয়োজনে বাংলাদেশ গেছে তাই আর ফোন করে নি৷
প্রায়ই সে বাইরেই থাকে নিজের মেয়ে কে ভালো করে সময়ই দেয় না, হায়াত এই চারটা মাস নিজের আপন বোনের মতো আগলে রেখেছে৷
আজ বোনের এই অবস্থা দেখে নিজেই অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে, মেঘলাকে এডমিট করা হয়েছে অনেকক্ষন ভেজার কারনে শরীর নিসক্তি হয়ে গেছে অনেকটা দুর্বল মেঘলা তাই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে৷

রাত ১২টা,,,,,,
হঠাৎ কেউ মেঘলার কেবিনে প্রবেশ করে,
এই ঘ্রান যে মেঘলার চিরো চেনা৷ ব্যাক্তিটি কখনো মেঘলার গালে কখনো কপালে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে৷
গত চার মাসে এইরকম স্বপ্ন অনেকবার দেখেছে তাই চোখ মেলতে ভয় হচ্ছে যদি আবারো স্বপ্ন হয় তাহলে তো তার প্রিয় মানুষটা কে দেখবে না৷

চোখ বন্ধ রেখে মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আর বলে,
— “প্লিজ শোভন ভাইয়া কোথাও যেও না,
আমি যে তোমায় ছাড়া ভালো নেই৷ ”

বলেই ডুকরে কেঁদে উত্তেজিত হয়ে বসে পরে৷
হঠাৎ কারো ঝাকোনিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে হায়াত চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে৷
মেঘলা এবার আরো উত্তেজিত হয়ে যায় তার আশে পাশে যাকে আশা করেছিলো তাকে দেখতে না পেয়ে৷
মেঘলাকে এমন উত্তেজিত হতে কখনোই দেখেনি হায়াত৷
এমন করতে দেখে খুব ভয়ে পেয়ে যায়৷ মেঘলা উত্তেজিত হয়ে হায়াত কে বলে,
— “ভাইয়া শোভন কোথায়?
ও তো এসে ছিলো তাই না?
হ্যাঁ আমি জানি এসেছিলো ও আমায় ছুয়ে ছিলো, ও রাগ করে আছে না আমার উপর? প্লিজ ডাকো ভাইয়া শোভন কে৷ প্লিজ ডাকো৷ ”

হায়াত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
— “শোভন আসেনি৷
শোভন আসবে কি করে?
শোভন তো বাংলাদেশে আছে ও তোকে ভুলে গেছে ৷
তাছাড়া আমি ছিলাম এখানে সেই বিকেল থেকে আমি আর ঐশী এখানেই বসে আছি শোভন আসবে কি করে? ”

হায়াতের কথা শুনে মেঘলা আরো উত্তেজিত হয়ে পরে যার কারনে হাতের ক্যানোলা টান লেগে রক্ত বের হতে থাকে৷
হায়াত দিসে না পেয়ে “চুপ” বলে ধমক দেয় মেঘলা চুপ হয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরে৷

বোন কে এমন করতে দেখে হায়াতের ও অনেক কষ্ট হচ্ছে এক হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে “সরি” বলে আবার ঠিক মতো শুইয়ে দেয়৷

________________

তিনটা দিন কেটে গেছে মেঘলা এখন পুরো পুরি সুস্থ৷
একদিন আগেই মেঘলাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু মেঘলা আর আগের মতো নেই বেশিরভাগ সময় চুপ চাপ থাকে৷
মেনে নিয়েছে সত্যি হয়তো শোভন ওকে ভুলে গেছে, কিন্তু শোভনের প্রতি ওর ভালোবাসা একটুও কমেনি বরং আরো বেরেছে৷
হায়াত এসে দেখে মেঘলা রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে৷
হায়াত জানে তার বোনটা কি ভাবছে,
হায়াত মেঘলার সামনে গিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— “মেঘু কলেজে যাবি?”

— “হুম”
মেঘলা ছোট উত্তর দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ টা নিয়ে হায়াতের সামনে দাঁড়িয়ে “চলো” বলে রুম থেকে প্রস্থান করে৷


কলেজে আসতেই মেঘলা গাড়ি থেকে নেমে ক্লাসে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,
মাঠের সামনে আসতেই কিছু ছেলে পথ আটকে দাঁড়ায়৷

মেঘলা রেগে বলে,
— ” why are you standing in front? (সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?)

— “ও বেবি কুল কুল তুমি তো ব্যাঙ্গলি রাইট?”

— “হুম কেন?”

বাকা হেসে বলে,
— “তাহলে তো ফ্রেন্ড হতেই পারি? ”

বলেই হাতটা বাড়ায়৷ মেঘলা কিছু বলছে না ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটি আবার বলে,

— ” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
খারাপ মতলব থাকলে ডিরেক্ট এখান থেকে বেডে নিয়ে যেতাম (বলেই চোখ টিপ মারে)
ভালো দেখেই বন্ধুত্ত করতে এসেছি৷ ”
বলেই জোর করে মেঘলার হাত ধরে৷

মেঘলা রেগে কিছু বলবে এর আগেই একটা ছেলে মেঘলার স্কার্ফ ধরে টান দেয়৷
তখনি পিছন থেকে কেউ এসে লাথি মারে ছেলেটিকে৷
মেঘলা উৎসুক হয়ে হাজারো আসা নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে হায়াত৷
হায়াত মেঘলাকে ইশারা দিকে ক্লাসে যেতে বলে মেঘলা মন খারাপ করে ক্লাসের উদ্দেশ্য পা ফালায়৷
আনমনে হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে হাটছে মেঘলা৷
চার তালায় আসতেই হঠাৎ কেউ হেচকা টান দিয়ে অন্ধকার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে মেঘলার হাত চেপে ধরে৷
ব্যক্তিটি এতোই কাছে যে মেঘলা ব্যক্তিটির শ্বাস প্রশ্বাস হার্ট বিট গুনতে পারবে৷
কিন্তু কে?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে