তাসের ঘর পর্ব-০৭

0
711

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৭

মিসেস গোপঃ দিদি আপনি কি সত্যিই রিপনদাকে ডিবোর্স দিয়ে দেবেন?
দোলাঃ এছাড়া কি কোনো পথ খোলা রেখেছে?
মিসেস গোপঃ কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলি, স্বামী হলো বটগাছের মতো।যতদিন আছে তার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া যায়।বটগাছের একটা ডাল ভেঙে গেলে,পাতা ঝড়ে গেলেও আশ্রয় দিতে সক্ষম।কিন্তু যদি গাছটাই উপড়ে ফেলা হয় তখন আর আশ্রয় পাওয়া যায় না।বাইরের কুনজরের শিকার হতে হয়।
রিপনদা যেমনই হোক আপনার হাসবেন্ড ছিলেন।উনি ঘরে যাই করুক না কেন বাইরে থেকে আপনাকে রক্ষা করেছেন।আপনাকে কারো কুনজরের শিকার হতে দেন নি।যখন সেই বটবৃক্ষ থাকবে না তখন আপনাকে বাইরের কুনজর থেকেও রক্ষা করার মতো কেউ থাকবেন না।বলবেন বাবা-ভাই আছে।কিন্তু কতদিন?আপনার বাবা কতদিন থাকবেন আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্য?উনারও তো বয়স হয়েছে।আর আপনার ভাইয়ের যখন বিয়ে হবে তখন উনি কি আপনাকে সবসময় প্রটেক্ট করতে পারবেন?একজন স্বামী যেভাবে তার স্ত্রীকে প্রটেক্ট করেন ভাই সেভাবে হাজার চেষ্টা করেও পারে না।এক্সেপশন ছাড়া।সাপোস ধরেন আপনার ভাইয়ের স্ত্রী আপনার সাথে এক বাড়িতে থাকতে না চান তখন?আপনার ভাই কি নিজের সংসার ফেলে আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্য থাকবেন?
দোলাঃ আপনার কথা ঠিক দিদি।ভাই হয়তো সবসময় প্রটেক্ট করতে পারবেনা।হয়তো একদিন বিরক্ত হবে ডিবোর্সী বোন আর ভাগ্নের সাথে থাকতে থাকতে।বিয়ের আগে মেয়েদের পরিবারে এক স্থান থাকে আর বিয়ের পর এক।সে যদি বিধবা/ডিবোর্সী হয় তাহলে তো..সে আর নাই বললাম।বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মেয়েদের ১মাস বেশি থাকলেও সম্মান থাকে না।কিন্তু রিপনের সঙ্গে কিভাবে থাকব?রিপন রক্ষক ছিল ঠিকই কিন্তু যদি সেই রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায় তখন?রিপন যেকোনো সময় আমাকে খুনও করে দিতে পারে।আমি অসুস্থ ছিলাম তাও ও আজ দুবার আমাকে মেরেছে।একবার বেল্ট দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করেছে আরেকবার গলা টিপে ধরেছে।আপনারা সঠিক সময়ে না আসলে হয়তো আমাকে আজই…আমি সংসার ভেঙে চলে যাওয়ার জন্য বিয়ে করি নি দিদি।স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকার জন্য বিয়েটা করেছিলাম।আমারও কিছু স্বপ্ন আশা ছিল।রিপন সব ভেঙে দিয়েছে।অনেক তো চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।ও কখনোই আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি।বিয়ের আগে থেকেই একজন বিবাহিত মহিলার সাথে..ও আমাকে কেন বিয়ে করেছে জানি না।সুখে সংসার করবে বলে যে নয় সেটা বলতে পারি।এখন ও যেকোনোভাবে আমাকে ওর জীবন থেকে সরাতে চায়।মেরে ফেলে হলেও।কিন্তু আমাকে যে মরলে হবে না।আমাকে বাঁচতে হবে আমার দীপের জন্য।আমার কিছু হয়ে গেলে দীপের কি হবে?
মিসেস গোপঃ সব তো ঠিক আছে কিন্তু…
পূজাঃ এই কিন্তুটাই থাকা উচিত নয়।সরি আমার হয়তো আপনাদের বড়দের মাঝে কথা বলা উচিত নয় তবুও বলতে হচ্ছে।আপনার সব কথাই ঠিক।রিপন আংকেল হয়তো আন্টিকে বাইরে থেকে রক্ষা করেছেন।একজন বিবাহিত মহিলার উপর সহজে কেউ নজর দেয় না।কিন্তু একজন ডিবোর্সী মহিলার উপর সবারই নজর থাকে।তাছাড়া অনেকেই সেকেন্ডে সেকেন্ডে কথা শুনায়।আন্টি হয়তো খেয়ে পরে ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন কিন্তু সুরক্ষাটা পাবেন না।কিন্তু এতে দোষটা কার?এই সমাজের।প্রতিটা পরিবারের।প্রতিটা মেয়েকে যদি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার সাথে সাথে আত্মরক্ষাটাও শিখানো হতো তাহলে তাদের হয়তো এই সমাজে কোনো ধর্ষিতা থাকতো না,না থাকতো কোনো ধর্ষক।কিন্তু এখানে তো মেয়েদের পড়ালেখার ব্যাপারেই নাক কুঁচকানো হয়।সুরক্ষা তো অনেক দূর।খুব কম মেয়েই স্বাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম তারা কেবলই যারা বিভিন্ন ফোর্সে কাজ করে।
সে যাই হোক।ছোট মুখে বড় কথা হলেও এটাই বলব সংসার একে জনে হয় না।দুজনকে সমানভাবে সংসার ধরে রাখতে হয়।জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা কিংবা সংসার হয় না।এখন যদি জোর করে রিপন আংকেল আর আন্টির সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে হয়তো আমরা আন্টিকেই হারাবো।যে পুরুষ নিজের সন্তানের কথা ভাবে না সে নিজের স্ত্রীকে মেরে ফেলতেও দুবার ভাববে না।
মিসেস দেঃ পূজা কিন্তু ভুল বলছে না।রিপনের মতো মানুষের সাথে থাকার চেয়ে সারাজীবন একা থাকাই বেটার।
তখন দোলার বড়ভাই দিহান এলো।
দিহানঃ আমি আমার বোনকে ওই রিপনের সাথে আর এক মুহূর্তও থাকতে দেবো না।
দোলাঃ দাভাই তুই?
দিহানঃ মা বাসা যাওয়ার পর থেকে মন খারাপ করে বসে ছিল।অনেক চাপাচাপির পর জানতে পারি আজ সকালে রিপন তোকে..বাবা বলেছেন তোকে এই মূহুর্তেই আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে।আর একমুহূর্তও এখানে না।
দিহান দোলা আর দীপকে নিয়ে চলে গেল।
🍁
অনিকঃ রিপনবাবু আজ আবার দোলাদেবীকে মেরেছেন?
রাত্রী বিরক্ত হলো।সবার মুখে কেবল দোলা।এতো দোলা দোলা করার কি আছে?
রাত্রীঃ আমি কি করে জানব?আমি কি ওদের বাসায় গেছি নাকি?
অনিকঃ একটু আগেই তো খুশি ছিলে এখন বিরক্ত হচ্ছো কেন হঠাৎ?
রাত্রীঃ 😬
অনিকঃ বিল্ডিংয়ের সবাই তো গেল রিপনকে বুঝাতে তুমি গেলে না কেন?এভাবে বউকে মারা কি ঠিক?
রাত্রীঃ আমি কেন যাবো?আমি এতো দোলার হয়ে সাফাই গাইতে পারব না।নিশ্চয়ই ও কিছু করেছে তাই রিপনও মেরেছে।ব্যটা ছেলে একটু রাগ তো থাকবেই।দোলার রিপনের কথা শুনা উচিত।
অনিকঃ তাই বলে বউকে মারবে?
রাত্রীঃ কেন বউ বলে পার পাবে কেন?স্বামীর অধিকার বউকে মারা।
অনিকঃ তাহলে আমিও তোমাকে মারি?
রাত্রী অবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকাল।অনিক হুহা করে হেসে দিল।
অনিকঃ মজা করছিলাম।আমি কি আমার লক্ষ্মী বউটাকে হাতে মারব?সে যাই হোক।তোমার উচিত ছিল ওদের সঙ্গে যাওয়া।যতই হোক বউ পিটানো তো ঠিক না।তুমি রিপনকে বলো এভাবে বউ পিটিয়ে ব্যাটাগিরি না দেখাতে।
শুনেছি রিপনের এক্সটা মেরিটাল এফ্যায়ার চলছে।তাই এভাবে দোলাদেবীর উপর অত্যাচার করে।যে মহিলা অন্যের সংসার ভাঙ্গতে চায় সে কখনোই সুখে সংসার করতে পারে না।একচুয়েলি সে কখনো একটা হ্যাপি ফ্যামিলি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।দিনশেষে সেই মহিলাই একা থেকে যায়।দোলারা না।
অনিক আর কিছু না বলে চলে গেল।রাত্রী অনিকের যাওয়ার দিকে কেমন করে তাকিয়ে রইল।
🍁
আজ আইনীভাবে দোলা আর রিপন আলাদা হবে।কোর্টের ডেট পরেছে।
জর্জ সাহেব দোলা আর রিপনকে একসাথে ডেকেঃ আপনারা কি শিওর ডিবোর্সটা নিতে চান?নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করতে চান না?
দোলা একবার রিপনের দিকে তাকাল।তারপরঃ না আই ওয়ান্ট ডিবোর্স।
রিপনঃ এন্ড আই অলসো।আই কান্ট টলারেট দিস ওউমেন।
জর্জঃ বাচ্চাটার দায়িত্ব কে নেবে?
রিপনঃ দোলা যেহেতু মা তাই দীপের দায়িত্ব ওই পাক।(গা-ছাড়া ভাব নিয়ে)
জর্জঃ আপনার কি দীপের দায়িত্ব নিতে সমস্যা আছে?
দোলাঃ না।আমি প্রস্তুত।
জর্জঃ তাহলে দীপ দোলাদেবীর কাছেই থাকবে।তবে দীপের খাওয়া-পরার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে মিস্টার রিপন।আপনার আপত্তি আছে?
রিপনঃ অসম্ভব!আমি কেন দীপের খাওয়া-পরার দায়িত্ব নেব।দীপ দোলার কাছে থাকলে দোলাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
জর্জঃ দীপ কিন্তু আপনার সন্তান।নিজের সন্তানের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন?আপনাকে শুধু দীপের না দোলাদেবীরও খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিয়ে হবে।আপনি যখন ডিবোর্স চাইছেন তখন ক্ষতিপূরণ তো দিতে হবে।
দোলাঃ আমার কিচ্ছু চাই না।দীপ আর নিজের দায়িত্ব আমি নিজেই নিতে সক্ষম।বাট আই ওয়ান্ট জাস্টিস।
রিপন অবাক হয়ে দোলার দিকে তাকাল।দোলা নির্ভিক।
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে