তবু মনে রেখো পর্ব-২২

0
550

তবু মনে রেখো (২২ পর্ব)
.
প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখে চেয়ারম্যান সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। জনতাকে ক্ষু*ব্ধ মনে হচ্ছে। ভেবেছিলেন প্রভাব খাঁটিয়ে এমন কিছু করবেন যেন পুত্র খুশি হয়ে যায়৷ দ্বিতীয় বিয়ের কারণে পারিবারিকভাবে ভীষণ ঝামেলায় আছেন। ছেলে বাড়িতে আসা ছেড়েই দিয়েছিল। কারও সঙ্গে এতদিন যোগাযোগটা পর্যন্ত রাখেনি৷ এখন না পারতে বন্ধুদের সাহায্যের জন্য এসেছে। কিছু একটা করতে পারলে খুশি হতো। বাবার প্রতি হারানো সম্মান ফিরে আসতো। ক্ষু*ব্ধ জনতাকে ঠান্ডা করতে হবে। পরিবেশ অনুকূলে আনতে হবে। তিনি ডান হাত তুলে দাঁড়ালেন।

– ‘কথা বলবেন না৷ সবাই দয়া করে চুপ থাকুন।’

মাঠে খানিকটা নীরবতা নেমে এলো। তিনি হাসলেন। হাসতে হাসতে বললেন,

– ‘সত্যি কথা বলতে যখন ছেলেটা আমার কাছে এসেছে আমিও রাগ করেছি। প্রেম পিরিত নিয়ে কিসের আবার বিচার-আচার। আর মেয়ে পালিয়ে নিতে আসলে ধরা পড়লে তো কিছু মা*ইর খাইবোই।’

সবাই বললো,

– ‘হ, মারবো না তো খাতির করবোনি।’

– ‘কিন্তু আমরা হচ্ছি মুরব্বি। এখানে যারা আছে সবাইই সম্মানি মানুষ। তারা সবারই বাচ্চা-কাচ্চা আছে। এই ছেলেদের বয়সই ভুল করার। আমার কাছে যখন আসছে তাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিলাম। এরপর তার মা ফোনে কথা বললেন। তখন সবকিছু শুনে আমার দিলটা একটু নরম হয়ে গেল। যদি ছেলেটা আ*ত্মহ*ত্যা করে তাইলে তো সমস্যা। আমি প্রেম পিরিত বইলা তাড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু তার কাছে তো জীবন মরনের বিষয়। কত মানুষই তো প্রেমের জন্য জীবন দেয়। দেয় কি-না কন?’

জনতা সমস্বরে বললো,

– ‘হ্যাঁ তা দেয়।’

– ‘তো ছেলের মা বললো ছেলেটা আজ কয়মাস থাইকা গৃহবন্দী, খাওয়া-দাওয়া বাদ। একবার হাত কে*টেছে৷ আ*ত্মহ*ত্যা করতে চাইছে বহুবার। এখন এই ছেলে নিয়ে কি করবো কন। এদিকে একা একা আপনাদের গ্রামে চলে যেতে চায়। অন্যদিকে ছেলেরে মে*রে ফেলার হুমকি দেয়। আমি কি করবো। তাই এলাকার মুরব্বিদের কাছে পাঠাইছি। ছেলেটারে একবার তার প্রেমিকার মুখ থেকে কিছু শোনার সুযোগ করে দিন। মেয়ে যদি বলে আমি তাকে চাই না। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে একটা সান্ত্বনা পাইল আরকি। এই হইছে মায়ের ইচ্ছা। এখন আপনারাই বলুন কি করার। ছেলেটা তো আমাদের কাছেই এসেছে। তাছাড়া দেখুন তার নিজের মোবাইলটাও কে*ড়ে নেয়া হইছে। মা*রধ*র করা হইছে। এলাকায় প্রচার করা হইছে প্রেমিক সোনা-মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে। অথচ সে নিজেই এতদূর থেকে এসেছে মেয়ের জন্যই। আমরা তাড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু ছেলেটার যদি কিছু হয় একটা মায়ের কোল খালি হইল৷ এসেছে যেহেতু একটা কিছু বিবেচনা তো করাই লাগে৷’

সবাই নীরব হয়ে গেল। মাঝখান থেকে একজন বললো,

– ‘ছেলেটার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। তার ক্ষ*তিপূরণ দিয়ে বিদায় করা হোক।’

আরেকজন বললো,

– ‘আমরা তো শুনলাম ওই ছেলে সবকিছু নিয়ে পালিয়েছে। এরপর মেয়েটার বিয়ে ভেঙে গেল৷ শেষে হায়দার সাহেবের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হইছে। এখন আবার দেখি হু*মকি ধা*মকিতেও উনার নাম৷ এগুলোও তো বুঝা দরকার। একজন ভালো মানুষকে চো*র বানিয়ে নিজের ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন উনি।’

হায়দার সাহেবের গোষ্ঠীর লোকজন তর্ক-বিতর্ক শুরু করলো। কয়েকজন তেড়ে গেল ওই লোকটির দিকে। মাঝখানে পড়ে এলাকার লোকজন সামলে নিল তাদের। কিন্তু একজন ক্ষু*ব্ধ মুরব্বি দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যানকে বললেন,

– ‘আপনি কি বলতে চান? একটা বিবাহিত মেয়েরে দিয়ে এখন প্রেমিকের লগে কথা বলাতে হবে? এগুলো কি মগের মুল্লুক নি? তাইলে তো এখন পোলাপান প্রেম করলে মা-বাপ ডেকে এনে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। আপনি কি এসবের প্রশ্রয় দিতে শুরু করছেন না-কি?’

আরেকজন দাঁড়িয়ে বললো,

– ‘শুনেছি এই পোলা চেয়ারম্যানের আত্মীয়। উনার বাড়িতে খুব খাতিরযত্নও করা হচ্ছে। তাই মনে হয় সামান্য বিষয় নিয়ে এলাকা গরম করে বিচার বসানো হইছে।’

মুহূর্তেই চেয়ারম্যানের মেজাজ গরম হয়ে গেল। তিনি সামনের টেবিলে চাপড় দিয়ে বললেন,

– ‘আমার আত্মীয় মানে, আঙুল আমার দিকে উঠলো কেন? তোমরা মগের মুল্লুক পাইছো না-কি একটা ছেলেরা মা*রধ*র করবে৷ মেয়ে জো*রে বিয়ে দেবে৷ দেশে কি আইনকানুন নাই না-কি।’

সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যানের লোকেরাও হৈ-হুল্লোড় শুরু করলো। মুহূর্তেই শুরু হয়ে গেল মা*রামা*রি। এলাকার মানুষ থাকায় সেটা র*ক্তার*ক্তি দিকে যাওয়ার আগেই দুই দলকে দুই দিকে ঠেলে নেয়া হলো। চেয়ারম্যান সহ চিল্লাচিল্লি করতে করতে সবাই বের হয়ে গেল মাঠ থেকে। ইলহামের ভীষণ লজ্জা লাগছে৷ তার কারণে এতবড় একটা ঝামেলা হয়ে গেল। এখন সে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে মুখ দেখাবে কি করে? রায়হান আর তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘এরকম কিছু হবে ভাবিনি আমি। আমার জন্য তারা একটা ঝামেলায় জড়িয়ে গেলেন।’

তাসনিম কিছু বললো না। রায়হান খানিক পর বললো,

– ‘ভুল হইছে এরকম করে। সোজা আঙুলে ঘি উঠে না এই কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বাঁকা পথে হাঁটাই উচিত ছিল।’

ইলহাম ওর হাত ধরে ফেললো। টেনে দাঁড় করালো শিরিষ গাছের নিচে।

– ‘না রায়হান ভাই, আমার কারণে এলাকায় এরকম ঝামেলা হোক আমি চাই না। তুমি অনেক হেল্প করেছো। এখন ঝামেলাটা প্লিজ বাড়তে দিয়ো না।’

রায়হান হাত ছাড়িয়ে বললো,

– ‘সে চিন্তা করো না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর তুমি এসেছে যেহেতু শেষ দেখে যাও।’

– ‘তুমি পারলে শুধু আমার সঙ্গে পুষ্পিতার যোগাযোগ করিয়ে দাও। আর কোনো ঝামেলার দরকার নেই।’

– ‘আচ্ছা বাড়িতে যাই, দেখা যাক কি করা যায়।’

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে তাদের জোহরের আজান পড়ে গেল। তিনজন গোসল করে এলো। খাবার খেতে ডাকা হলো। চেয়ারম্যানের সঙ্গে খেতে বসেছে। রায়হান ইতস্তত করে বললো,

– ‘বাবা সে এরকম আর ঝামেলা করতে চায় না।’

চেয়ারম্যান তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

– ‘ঝামেলা ছাড়া কি কিছু হয় দুনিয়ায়?’

– ‘কোনোভাবে ওই মেয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হলেই হতো।’

– ‘তাহলে আমি দেখছি ব্যাপারটা।’

রায়হান আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘আব্বা মজিদা খানের বাড়িতে কাজ করে।’

– ‘তাই না-কি?’

– ‘হ্যাঁ, কিন্তু ও কি আমাদের কথামতো কাজ করবো।’

– ‘ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী শুনবো। তুমি খেয়ে ওকে গিয়ে নিয়ে আসো।’

– ‘আচ্ছা আব্বা।’

খাওয়ার পর্ব শেষে রায়হান ওদেত পুবের ঘরে রেখে বাইরে চলে গেল। তাসনিম বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। ইলহাম ইতস্তত করে বললো,

– ‘আমার কেমন যেন খারাপ লাগছে। ওদেরকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম।’

তাসনিম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,

– ‘কি আর করার। এসেছি যখন দেখি কি হয়। তাছাড়া যোগাযোগ করিয়ে দিলে ওদেরকে আর লাগবে না।’

ইলহাম আর কিছু বললো না। মোবাইল টিপতে টিপতে ড্রাইভে গেল। পুষ্পিতার সেখানে অসংখ্য ছবি। একের পর এক ছবি দেখছে। একটা ছবিতে এসে থামলো। ছবিটি বাথরুমে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্পিতা। সাদা ফিনফিনে পাতলা ড্রেস ভিজে লেপটে আছে গায়ের সঙ্গে। পেছনে আয়নাও ওর প্রতিচ্ছবি। পালটে নিল ইলহাম। এমন কত ছবি তাদের আদান-প্রদান হয়েছে৷ জিমে গিয়ে আয়নায় তার খালি গায়ের ছবি তুলে প্রায়ই দিতে হতো পুষ্পিতাকে৷ এই এক বায়না ছিল ওর। কিছুদিন পর পরই অস্থির করে ফেলতো। এখন কি ওর ইচ্ছে করে না দেখতে? রোজই কে কি করছে প্রতিটি মুহূর্তের খবর একে অন্যকে বলতো। কোনো গান ভালো লাগলে লিঙ্ক শেয়ার। কোনো মুভি কিংবা বই ভালো লাগলে ফোনে পুরো কাহিনিই মুখে মুখে বলে ফেলতো পুষ্পিতা। কত চঞ্চল ছিল। প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিল। ফোনের ওপাশের প্রেম। তবুও ইলহামের মনে হতো তার বিয়ে করা স্ত্রী। সে যেন একজন বিবাহিত ছেলে। এমনই গভীর ছিল সম্পর্ক। এই সবই কি মিথ্যে? আচ্ছা সে যে পুষ্পিতাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করছে। তাদের গ্রামে এসে অন্যের বাড়িতে পড়ে আছে, পুষ্পিতা কি এখনও জানতে পারেনি? যতদূর জেনেছে ওর শ্বশুরবাড়ি তো এলাকাতেই। তবুও কি সে কিছুই জানে না। ও না দূর থেকেই তার শরীরের গন্ধ পায় বলতো৷ প্রায় রাতেই বলতো আচ্ছা ইলহাম এখন তুমি কি পরে আছো৷ তোমার বালিশ বিছানার কালার কি। রুমে বাতি জ্বালানো না-কি নিভিয়ে রেখেছো। ইলহাম হাসতে হাসতে সবই বলার পর একদিন জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু এগুলো কেন জিজ্ঞেস করো?
পুষ্পিতা কি মিষ্টি করে বলেছিল, ‘জনাব ঘুমানোর আগে এগুলো জিজ্ঞেস করে আমি তোমার রুমটা কল্পনায় আনি। তোমাকে তখন আমি দেখতে পাই। বুকে আলগোছে মাথাটা রাখি। সত্যি সত্যি তখন তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধও পাই।’
ইলহাম হেঁসে ফেলতো ওর পাগলামো দেখে। পাশাপাশি ভালো লাগায় মনটাও ভরে যেত। আজ সে এত কাছাকাছি চলে এসেছে, একই এলাকায় তাদের বসবাস, তবুও সেই পুষ্পিতা কি জানতেই পারছে না? তার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। স্কুলের মাঠে যখন সবার মাঝখানে বসেছিল৷ বারবার চারদিকে তাকিয়েছে। কেন যেন মনে হয়েছিল হঠাৎ পুষ্পিতা চলে আসবে। এই এলাকায়ই তো আছে তার পুষ্পিতা। সে এসছে জানার পরও কিভাবে ঘরে থাকবে। কিন্তু পুষ্পিতা এলো না। ইলহাম বালিশে মুখ গুঁজে দিল। কেঁপে কেঁপে উঠলো তার শরীর। তাসনিম বুঝতে পেরে উঠে এলো, পিঠে হাত রেখে বললো,

– ‘আরে ধু*র পা*গল, মেয়েদের মতো কান্নাকাটি শুরু করেছিস কেন? উঠ তো, আয় বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করি। আমাকে দেখ, আমি তো স্বাভাবিক আছি। নিজেকে শক্ত কর৷ মেয়েদের মতো করছিস কেন।’

ইলহাম উঠে চোখ মুছে নিল। লাল টকটকে চোখ৷ সিগারেট ধরালো একটা। তারপর একেবারে স্বাভাবিক গলায় বললো,

– ‘হ্যাঁ চল, বাইরে যাই।’

দীর্ঘ সময় দু’জন হাঁটাহাঁটি করলো গ্রামের রাস্তায়। দূর থেকে দেখতে পেল রায়হান আসছে। পেছনে মজিদা। তাসনিম বললো,

– ‘বাড়িতে চলে যাবি? মেয়েটা আসছে তো।’

– ‘সমস্যা নেই এখন তো এলাকার সবাইই জানে।’

– ‘হ্যাঁ তা ঠিক।’

মজিদা কাছাকাছি এসে ইলহামকে দেখে বললো,

– ‘আপনারে সকালে দেইখাই আমি চিনছি। আপনি ওইদিন আমারে পুষ্পিতা আপার কথা জিগাইছিলেন না?’

– ‘হ্যাঁ, আমিই ছিলাম।’

– ‘সব শুনছি, আপনে না-কি সোনা আর টাকা নিয়ে পালিয়ে যান নাই। হায়দার সাবের হাত আছিল।’

ইলহাম আর কিছুই বললো না। রায়হান তাড়া দিয়ে বললো,

– ‘চলে আয় মজিদা। আব্বা অপেক্ষা করছে।’

মজিদা ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। ইলহাম আর তাসনিমও সঙ্গে হাঁটছে। চেয়ারম্যান সাহেব ঘরের বারান্দায় বসা। খালি গা। রতন শরীর টিপে দিচ্ছে৷ মজিদা যেতেই বললেন,

– ‘রতন যা তো, এখানে বেঞ্চ নিয়ে আয়।’

রতন বেঞ্চ নিয়ে এলো। চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে চারজনই বসলো। তিনি খানিকক্ষণ চোখবুজে থেকে বললেন,

– ‘তোমার বাবা তো গাঁ*জা খায়। থানা থেকে গাঁ*জাখো*রদের লিস্ট দিতে বলে জানোই।’

মজিদা সঙ্গে সঙ্গে বললে,

– ‘চেয়ারম্যান সাব বহুত চেষ্টা করি ছাড়ানো যায় না। তারপরও এখন কম খায়। ছেড়ে দিব আপনি নাম দিয়েন না।’

খ্যাকখ্যাক করে হাসলেন তিনি। তারপর বললেন,

– ‘নাম দিব না৷ তোমরা তো আমার আপন লোকই। আর আরেকটা কথা। তোমার জামাই যে তোমারে ছাইড়া আরেকটা বিয়ে করলো এটার কি করলা।’

– ‘কি করবো কন চেয়ারম্যান সাব। এক ন*ষ্টা কা*লনা*গিনীর লগ পাইছে।’

– ‘তো হইছেটা কি? তোমার বাচ্চাও একটা আছে৷ এমনি এমনি ছেড়ে দিবা কেন? আমি আছি না। তুমি জামাইর সংসারই করবা। আমিই ব্যবস্থা করে দিব।’

মজিদা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চেয়ারম্যান আরও খানিকক্ষণ চোখবুজে থেকে বললেন,

– ‘একটা কাজ করবা মজিদা। এই যে পোলা দেখছো, ওর সাথে বিরাট অন্যায় হইছে। তোমার সহযোগিতা প্রয়োজন। তুমি করবে না?’

– ‘কি কন চাচা, অবশ্যই করবো। আপনি চাইলে অবশ্যই করবো৷ কি করতে হইব কন।’

– ‘শুনো, আজ থেকে সকল সরকারি ভাতায় মজিদা নাম থাকবো। আর কাজটা করে দিলে তোমারে নগদ টাকাও দিব।’

– ‘কি করতে হইব চাচা?’

– ‘রায়হান সব বলবো তোমারে৷ ওর সঙ্গে যাও। কেউ যেন কিছু জানতে না পারে।’

রায়হান তাকে নিয়ে পুবের ঘরের বারান্দায় গেল।

– ‘মজিদা পুষ্পিতার কাছে গিয়ে কি তুমি ইলহামের নাম্বার দিয়ে বলতে পারবে এই নাম্বারে একবার কল দিতে।’

– ‘তারা তো এইখানে নাই। টাউনে থাকে।’

তিনজন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। ইলহাম তখন বললো,

– ‘ওর নাম্বার কি আপনার কাছে নেই?’

– ‘উনার আগের মোবাইল খান চাচা পানিতে ফেলে দিছে। নতুন মোবাইল নাম্বার আমার কাছে নাই।’

তাসনিম খানিক ভেবে বললো,

– ‘আপনি কি কোনভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না? বা চাইলে নাম্বার আনতে পারবেন না?’

– ‘আমি তো পড়ালেখা জানি না। চাচার মোবাইলে নাম্বার আছে বের করমু কিভাবে।’

তাসনিম ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘ওর নাম তো পুষ্পিতা এই নামেই নাম্বার সেভ থাকবে।’

– ‘হ্যাঁ।’

তাসনিম পুনরায় মজিদাকে বললো,

– ‘আপনি ওই বাড়িতে কি রাতে যান? আমি লুকিয়ে গেলে কি বাইরে এসে মোবাইল দিতে পারবেন?’

– ‘আমার মেয়ে ওর নানির কাছে থাকে। আমি খান সাবের বাড়িতেই বেশিরভাগ থাকি। কিন্তু এখন চাচা একলা তাই আর থাকি না।’

ইলহাম বাঁধা দিয়ে বললো,

– ‘এভাবে গিয়ে হবে না। মোবাইলে লক থাকতে পারে।’

রায়হান মজিদাকে বললো,

– ‘চাচা একলা মানে চাচি কি ওদের সাথে টাউনে?’

– ‘হ উনি কয়দিন আগে বাসায় গেছে।’

– ‘চাচির নাম্বার কি আছে তোমার কাছে?’

– ‘হ আছে। উনি তো ডেইলি কল দেয়।’

– ‘তাহলে উনার নাম্বারে কল দিয়ে পুষ্পিতার কাছে দিতে বলতে পারবে না?’

– ‘একটা কারণ তো বলন লাগবো।’

– ‘তুমি চিন্তা করো কি কারণ দেখানো যায়।’

মজিদা অনেক্ষণ ভেবে বললো,

– ‘আমার মোবাইলে কোনো সমস্যা হইলে আপার কাছে নিয়ে যাইতাম। চাচি এইটা জানে।’

ইলহাম পাশ থেকে বললো,

– ‘তাহলে তো হলো, আপনি কল দিয়ে ভালোমন্দ কথা বলে বলবেন, আন্টি পুষ্পিতা আপুর কাছে ফোনটা দেন। তখন কি দরকার বলবেন না। উনি যদি বলেন কেন? তখন বলবেন আমার মোবাইলটায় একটা সমস্যা আপুরে জিজ্ঞেস করমু।’

– ‘তারপর আপুরে কি কইমু?’

– ‘তুমি আস্তে আস্তে বলবে আপু তোমার জন্য একটা গোপন সংবাদ। ইলহাম নামে একজনের খবর। আমার নাম্বারে একবার কল দিয়ো।’

– ‘কিন্তু আপু তো জানে উনি সবকিছু নিয়ে পলাইছে। সে কি উনার কথা শুনে কল দিব?’

তাসনিম পাশ থেকে বললো,

– ‘কল অবশ্যই দিব। বিষয়টা কি জানার আগ্রহ থেকে অবশ্যই কল দিব।’

– ‘তাহলে আন্টিকে কল দেই এখন?’

– ‘দাও, মোবাইল লাউডস্পিকারে দিয়ো।’

মজিদা খানিক ভেবে ইলহামকে বললো,

– ‘আপনার নাম্বার থাইকা কল দেই।’

তিনজন অবাক হয়ে বললো,

– ‘তা কেন?’

– ‘দেন দেখেন কি করি।’

ইলহাম রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান খানিক ভেবে বললো,

– ‘দাও, দেখি কি করে৷ ওরা আবার নাটক ভালো পারে।’

ইলহাম তার ফোন এগিয়ে দিল। মজিদা তার মোবাইল থেকে নাম্বার দেখিয়ে বললো। নাম্বার তুলে কল দিয়ে দেন। ইলহাম নাম্বার তুলতে গিয়ে হাত কাঁপছিল। মজিদা নিজের মোবাইল অফ করে দিল। ইলহাম কল দিল। মজিদা হাত থেকে মোবাইল নিয়ে কানে লাগিয়ে আছে। উত্তেজনায় ইলহামের শরীর ঘেমে গেছে৷ বুক দুরুদুরু করছে৷ ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। মজিদা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

– ‘হ্যালো আন্টি আমি মজিদা।’

– ‘কিরে কি হয়েছে? এইটা কার নাম্বার থাইকা কল দিছস।’

মজিদা এবার স্পষ্ট করে কেঁদে ফেললো।

– ‘আরে কি হয়েছে, কাঁদছিস কেন?’

– ‘আল্লাহ কি হইছে জানেন না তো আন্টি৷ এখন আরেকজনের মোবাইল দিয়া কল দিছি। আমার মোবাইলটা হঠাৎ কি কইরা অফ হইল আর অন হইতেছে না৷ নয়া মোবাইল এখন আমার কি হইব।’

– ‘পাগল না-কি? মোবাইল নষ্ট হইলে এভাবে কাঁদে কেউ?’

– ‘আন্টি এখন আমি কি করমু। মোবাইল অন হইতেছে না কেন?’

– ‘আমি কি কইমু, আমি কি মোবাইল ঠিক করি না-কি?’

– ‘আপাও বাড়িতে নাই। আমি বুঝতে পারতেছি না কিভাবে ঠিক হইব। আপার কাছে একটু মোবাইলটা দেন আন্টি।’

সাবিনা বেগম বিরক্ত গলায় পুষ্পিতাকে ডেকে মোবাইল দিলেন। ওপাশ থেকে পুষ্পিতার গলা শোনা গেল। সঙ্গে সঙ্গে মজিদা গলা নামিয়ে বললো,

– ‘আপা আপনি কি একা আছেন?’

– ‘হ্যাঁ কেন কি হইছে?’

– ‘আপা আপনার জন্য একটা গোপন সংবাদ আছে।’

– ‘কি গোপন সংবাদ নাটক না করে বল।’

ইলহাম আর উত্তেজনা সামলে রাখতে পারলো না। টান দিয়ে মোবাইল তার কাছে নিয়ে নিল। তারপর কানে লাগিয়ে রাখলো খানিকক্ষণ। তার বুক কাঁপছে৷ কথা যেন বের হচ্ছে না। ওপাশ থেকে পুষ্পিতা তাড়া দিয়ে বললো,

– ‘মজিদা নাটক না করে বল কি বলবি। না হলে ফোন রাখ।’

সঙ্গে সঙ্গে সে বললো,

– ‘পুষ্পিতা আমি ইলহাম।’

__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে