ডুমুরের ফুল ১৩.

0
2001

ডুমুরের ফুল ১৩.

জাদিদ বাসায় ফিরে গোসল করে নিলো।
ব্যাগ গোছাতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রেডি করতে রাত ১ টা বেজে গেলো জাদিদের। বিছানায় যাওয়ার আগে ইচ্ছে হলো হেমলতার সাথে কথা বলার কিন্তু সম্ভব না। হেম অনেক অসুস্থ। এতো রাতে জেগে নেই। সুস্থ অবস্থাতেই তো ঘুমিয়ে কুমির হয়ে থাকে আর তো অসুস্থ। একা একাই হেসে ফেললো। শেষ মেষ জাদিদ নামের সিরিয়াস ছেলেটাও বোকা না অতি মাত্রার বোকা মেয়েটার প্রেমে পড়লো। জুবায়ের জানলে মহাবিপদ ঘটাবে। হেমকে তো ও ফ্রেন্ড হিসেবেই আমার পাশে পছন্দ করেনা আরতো প্রেমিকা!
আমার পছন্দ হলেই হলো, শান্তি পেলেই হলো।
জাদিদ স্থির করলো, বিষয়টা কাউকে জানানো যাবেনা। হেমকে জ্বালিয়ে মারবে। যতো মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে সব হেমের পিছু লাগবে। বোকা মেয়েটা দেখা গেলো কেঁদে কেটে বায়তুল আমান এলাকা বন্যায় ভাসিয়ে দিলো।
মোবাইলের গ্যালারির ক্যামেরার ফোল্ডারে হেমলতার বেশ কয়েকটা ছবি আছে, আজকেই হাসপাতালে তুলেছে।
প্রথম স্মৃতি প্রথম প্রেমের! অদ্ভুত সুন্দর লাগছে হেমকে। চোখ মুখ যদিও শুকনা লাগছে কিন্তু হাসিটায় আত্মতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। অর্থাৎ হেম তাকেও খুব পছন্দ করে আর সম্পর্ক টা নিয়ে ও খুব আনন্দিত।
এতো সহজে কোনো মেয়ে কীভাবে মেনে নিতে পারে?
দরজায় টোকা পড়াতে জাদিদ ফোন লকড করে দরজা খুলে দিলো। জাদিদের বাবার হাতে ট্রে। ট্রে – তে দু কাপ কফি নিয়ে ঘরে ঢুকে বিছানার উপর আসন পেতে বসলেন।
জাদিদ চওড়া হাসি দিয়ে বললো
– এখনো ঘুমাও নাই?
– ভাবলাম ছেলের সাথে কফি খেতে খেতে একটু সিরিয়াস টাইপ গল্প করা যাক।
জাদিদ ট্রে থেকে কফির মগ হাতে নিয়ে বললো
– তো শুরু করা যাক?
– অবশ্যই। তোমার টার্গেট কী? মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং নাকি অনার্স কোনো পাব্লিক ইউনিভার্সিটি থেকে?
– ঢাবি।
– মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কী দোষ করলো?
কফিতে বেশ লম্বা চুমুক দিয়ে জাদিদ বললো
– আমার মাইক্রোবায়োলজি এর উপর ইন্টারেস্ট আছে। সাব্জেকটার প্রতি একটা আকর্ষণ ফিল করি। আর বাবা এইজন্যই তো……
– জাদিদ তোমাকে আমি চিন্তার স্বাধীনতা দিলাম। তুমি যা চাও সেটাই করতে দিচ্ছি তবে একটা শর্ত আছে?
কফির মগ বিছানার উপর রেখে দিয়ে বললো
– বলো কী শর্ত?
– যাই করো না কেনো তোমার ক্যারিয়ার যেন আমার কাছে প্রাউড ফিল করার মতো হয়।
– আমি শর্ত মেনে নিলাম। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
– আরেকটা বিষয় খুব গোপনীয়। তোমার দাদী আমার বিয়ে ঠিক করেছেন। আগামীকাল সন্ধ্যায় নাকি কনে পক্ষ আসবে কনেকে সহ। মানে বুঝতেই পারছো।
– তুমি কীভাবে জানলে?
– বাড়ির দারোয়ান বলেছে। দারোয়ানকে দিয়েই তো গোপনে গোপনে সব কাজ করানো হচ্ছে।
জাদিদের বিষয়টা বেশ মজার লাগছে। বাবা কীভাবে যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। মনে হচ্ছে দেয়ালেরও কান আছে।
– এখন কী করবা?
– আমি আগামীকাল সকালেই পালাবো। তুই ঘুমের ভান ধরে ঘরে থাকবি। মা কিছু জিজ্ঞেস করলে, গ্রেট এক্টর হয়ে দেখাবি। পারবি তো?
বাবা যখন খুব মজার মুডে থাকে তখন তুই করে সম্বোধন করে।
জাদিদ বাবার হাত ধরে বললো
– অবশ্যই পারবো।

ইমরান মোল্লা তাড়াতাড়ি করে ট্রে আর কফির মগ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। জাদিদ দরজা আটকে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
জাদিদের মনে হলো, তার রাতে আর ঘুম আসবেনা। দেখা যাক সত্যি হয় কিনা?

মনোজ সাহেব হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে বিরক্ত হলেন। বাসায় প্রতি সপ্তাহে দুইদিন অন্ততপক্ষে রেবেকার গ্রাম থেকে লোকজন আসবে। তাও যদি একটু সৌজন্য বোধ এদের থাকে।
এদিকে হেম অসুস্থ অন্যদিকে বাসায় আবার সেই রেবেকার দূর সম্পর্কের বা গ্রাম আত্মীয় হাজির।
রেবেকা বেশ চড়া গলায় বললো
– বাসায় মেহমান আর তুমি এতো দেরি কেনো করলে?
রেবেকা জানে, হেমলতা হাসপাতালে ভর্তি। তারপরও প্রশ্নটা করেছেন ঝগড়া লাগানোর জন্য।
– আমার মেয়ে অসুস্থ। তার পাশে কি আমি থাকবো না?
– থাকবে কিন্তু আমার আত্নীয় স্বজনরা কি অবহেলা পাবে নাকি?
– আরে সপ্তাহে দুবার করে তারা আসা যাওয়া করে। আরামে খায় দায়, ঘুমায়। এখানে অবহেলা কোথা থেকে আসলো?
– আস্তে কথা বলো। শুনলে……
– তুমিই তো চ্যাচাচ্ছো। আমি তো চুপই ছিলাম।
মনোজ সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে বেডরুমে ঢুকলেন।
বিয়েটা করাই ঠিক হয়নি। মা মরা মেয়েকে নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিলেই পারতো সে। বিছানার উপর ছোটো মেয়েটা শোয়া ছেড়ে উঠে মনোজ সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে বললো
– বাবা, চকলেট আনো নাই?
মনোজ সাহেব মুখে হাসি এনে মেয়েকে কোলে নিয়ে বললেন
– বাবা কখনো ভুলে যায়?
প্যান্টের পকেট থেকে চকলেট বের করে ছোটো মেয়ের হাতে নিয়ে বললেন
– আমার ছোট্ট পরীটা এখন বিছানায় যাবে। বাবা এখন ফ্রেশ হবে তাই না?
ছোটো মেয়ে এলিজা বাবার কোল থেকে নেমে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

হেমলতার ঘুম আসছে না। কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা!। জাদিদকে ফোন দিতেও সংকোচ হচ্ছে।
মিম্মাকে সে কীভাবে জানাবে? মিম্মা বিষয়টি কীভাবে নিবে কে জানে?
সম্পর্কে জড়ানোটা কি ঠিক হলো? এখন ভেবেও তো কিছু করার নেই। হ্যাঁ তো বলেই দিয়েছে।
না করবেও বা কীভাবে? জাদিদকেও তোর ওর খুব ভালো লাগে।
ছেলেটা ওকে কতোটা প্রাধান্য দেয়, কতোটা কেয়ার করে। এসব মিথ্যা হতেই পারেনা।
কপালে হাত দিয়ে চুমুর স্থানটাতে স্পর্শ করে একাই হেসে ফেললো হেম। ছেলেটা হুটহাট করে এমন সব কাজ করে বসে না!
হেমলতা হাতের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই ভাবছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই জাদিদ ওর হাতের মধ্যে হাত দুটো নিয়ে বসে ছিলো। সহজ স্বাভাবিকভাবে গল্প করছিলো। কিন্তু এখন সে অনেক দূরে। আগামীকাল আরো দূরে চলে যাবে।
ঠিক কতোটা দূরে কে জানে……

চলবে…..

© Maria Kabir

” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে