ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-১৫+১৬

0
2319

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

সাইকার চোখ রাঙানি দেখে সবার আগে হিমেল নামলো।তারপর শিহাব আর আরাফ নামলো।ওরা নামতেই সাইকা সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল,’ওতো রাতে ছাদে বসে কি করছিলো তোমরা?’

‘কিছু না জান তারা গুনছিলাম।’হিমেল বলদের মতো দাঁত বের করে বলল।

‘তুমি তো কিছু বইলো’ই না।তোমারে শায়েস্তা ঘরে গিয়ে করতাছি আমি।যেই নিজের মতো দেখতে দুই বান্দর পাইছে সেই শয়তানি শুরু হইছে।এখন যদি আম্মায় আসতো তাইলে কি হইতো!আক্কলে,আন্দাজ কিচ্ছু নাই।’

হিমেলকে বাঁচানোর জন্য শিহাব বলল,’দুলাভাই চলেন ঘুমাইতে যাই।অনেক রাত হয়ে গেছে।’

‘হুম চল সবাই চল।’আরাফও শিহাবের কথায় তাল দিলো।

তারপর আরাফ আর শিহাব চলে যেতে লাগলো।ওদের পিছনে পিছনে হিমেলও যেতে নিলে সাইকা বলল,’এই তুমি পশ্চিমেট ঘরটায় যাও।আমি আসছি।’

সাইকার কথা শুনে হিমেল অসহায় মুখ করে একবার সাইকার দিকে আরেকবার আরাফ আর শিহাবের দিকে তাকালো।ওরা হিমেলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেষ্ট অফ লাক বলে চলে গেলো।ওরা যেতেই সাইকা মধুকে বলল,’তুই ঘুমাতে যা।’
তারপর মধু ঘরে চলে গেলো আর সাইকা পশ্চিম দিকের গেস্টরুমে চলে গেলো।

মধুর রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি যে কোনো ভূত-টুত কিছু না শুধুশুধু ভয় পাচ্ছিলো।নিজেকে নিজে বিড়বিড় করে গালি দিতেদিতে বলল,’এই বালের ভূত ধরার জন্য রাত দুইটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম।ছিহঃ’
নিজের ওপর নিজের রাগ মিটাতে মিটাতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলো মধু।
————–
‘এই মধু ওঠ তাড়াতাড়ি।দিনের নয়টা বাজে।’
সাইকার কথা শুনে মধু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো।তারপর জড়ানো কন্ঠে বলল,’আরেকটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো।’

‘আচ্ছা নাস্তা করে আবার একটু শুয়ে থাকিস কিন্তু আগে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে।’

মধু আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে কলপাড়ে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই দেখলো সাইকা নাস্তা নিয়ে বসে আছে।মধুকে দেখে বলল,’নে খেতে বস।আমি একটু দেখে আসি ওর কিছু লাগবে কি না।’
এটা বলেই সাইকা বেরিয়ে গেলো।সাইকা বেরিয়ে যাবার পর মধু ভেজে মুখটা মুছে খেতে বসলো।একটু খাওয়ার পরই আইরিন রহমান এলেন।ওনাকে দেখেই মধুর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।উনি চুপচাপ মধুর পাশে বসে বললেন,’তাড়াতাড়ি খেয়ে ব্যাগের ভেতর রাখা জাম রঙের শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নিবি।’

আইরিন রহমানের কথা শুনে মধু একপলক ওনার দিকে তাকালো আর যা বোঝার বুঝে গেলো।আবার পাত্র দেখাদেখি খেলা।মধু গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার খেতে লাগলো।আর আইরিন রহমান উঠে চলে গেলেন।মধু খাওয়া শেষ করে ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে পরে নিলো।

হঠাৎ সাইকা ঘরে আসতেই দেখলো মধু তৈরি হচ্ছে।সাইকা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি রে কোথাও যাবি নাকি?’

‘না আপু,আম্মু বলছে রেডি হয়ে থাকতে।’

‘সেটাই তো কেনো রেডি হবি?’

মধু কথাটা ভেতরে চেপে বলল,’জানি না তো।’

‘আচ্ছা দাড়া আমি দেখছি।’
সাইকা বেরিয়ে গেলো মধুর মায়ের সাথে দেখা করতে।

মধু রেডি হয়ে বসে আছে।একটু পরেই সাইকা এসে মধুর পাশে বসে উত্তেজনা নিয়ে বলল,’জানিস তোর মা কি প্ল্যান করছে?’

মধু সবজানে তবুও না জানার ভান ধরে বলল,’কি?’

‘তোরে একটু পর দেখতে আসবো।পছন্দ হইলে আজকেই নাকি বিয়া।’

সাইকার কথা শুনে এবার মধুর টনক নড়লো।আজকেই বিয়ে হয়ে গেলে সব শেষ।মধু কাঁদোকাঁদো মুখ নিয়ে বলল,’কি করবো আমি এখন আপু?’

‘আচ্ছা চিন্তা করিস না।বিয়ে হবে না।চুপচাপ বসে থাক।’
বলেই সাইকা উঠে চলে গেলো।এতো সহজে কি শান্ত হওয়া যায়!মধুর ভেতরে তোলপাড় চলছে!একটু পরই আইরিন রহমান এসে বললেন,’চল।আর ওদের সামনে কোনোরকম নাটক করবি না।’

মধু মায়ের পিছনে পিছনে চলে গেলো।বাইরের ঘরে একটা দুইটা পুরুষ আর একটা মহিলা বসে আছে।একটু কমবয়সী ছেলেটাই মনে হয় পাত্র।মধু আড়চোখে একবার সবাইকে দেখে নিলো।তারপর মায়ের নির্দেশমতো তাদের সামনে বসলো।এরমধ্যেই ওইখানে সাইকাও উপস্থিত হলো।সাইকা উপরে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে সুযোগ খুঁজছে কিছু না একটা করে ভাগাতে হবে।পাত্রপক্ষ মধুকে একের পর এক প্রশ্ন করছে আর ও উত্তর দিচ্ছে।ভেতর থেকে সাইকাকে ছোট মামি ডাক দিলো শরবত নেওয়ার জন্য।সাইকা ভেতরে গিয়ে শরবতের ট্রে টা নিয়ে হিমেলকে কল দিলো।

‘হ্যাঁ,কই তুমি?আনছো?’

‘হ্যাঁ,আরাফের ঘরে এনে রাখছি।’

‘আচ্ছা।’
সাইকা ফোন রেখে আরাফের ঘরে গিয়ে দেখলো শিহাব,আরাফ,হিমেল তিনজনই বসে আছে।সাইকাকে দেখে হিমেল বলল,’এগুলো দিয়ে কি করবে?’

‘বাইরের ঘরের দরজার সামনে পাঁচ মিনিট পর উকি দিও তাইলেই বুঝতে পারবা।’

সাইকা টেবিলের ওপর থেকে কিছু একটা শরবতে মিশিয়ে নিয়ে গেলো।তারপর শরবতের ট্রে ওদের সামনে রাখলো।আইরিন রহমান ওদের আন্তরিক ভাবে বলল,’আপনারা শরবত নিন না!”

সবাই শরবত নেওয়ার পর।সাইকা ঠোঁট টিপে একটু হাসলো।মধু সাইকার হাসি দেখে ইশারায় বলল,’হাসো কেনো?’

সাইকা একটু দুষ্টু হাসি দিলো।এবার মধু বুঝলো নিশ্চিত কোনো না কোনো ঘাপলা করেছে ও।তো নাস্তা খাওয়া শেষে।পাত্রের বাবা মধুর মাকে বলল,’বেয়াইন সাহেব মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।বিয়েটা আজকেই হোক।শুভ কাজে দেরি করা উচিত না।’

পাত্রের বাবার কথা শুনে মধুর বুকের ভেতর চিপ দিয়ে উঠলো।চোখ ছলছলিয়ে উঠলো।হঠাৎ পাত্রের মা বলল,’আপনাদের ওয়াশরুমটা কই?’

সাইকা বলল,’আন্টি আপনি আমার সাথে আসুন।’
মহিলাকে সাইকা নিয়ে গেলো।ফিরে আসতেই পাত্রের বাবা বলল,’আর কোনো ওয়াশরুম আছে আপনাদের?’

সাইকা ছোট মামির এটাচ ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো পাত্রের বাবাকে।এবার আসতেই পাত্র বলল,’পেট মোচড়াচ্ছে,ওয়াশরুমে যেতে হবে।’

সাইকা চিন্তিত মুখে বলল,’আর কোনো ওয়াশরুম খালি নেই।আপনার একটু বসতে হবে।’
ছেলে দাঁতমুখ খিঁচে বসে আছে।কিন্তু ওর বাপ মা এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না।বেচারা না পেরে উঠে দাড়ালো।আর তখনোই সর্বনাশটা ঘটলো।বেচারার আর কন্ট্রোল হলো না!!প্যান্টের মধ্যেই কাজ সেরে ফেলেছে।এই অবস্থা দেখে আইরিন রহমান তাড়াতাড়ি ওই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মধুও দ্রুত বের হয়ে গেলো।দুর্গন্ধে অবস্থা খারাপ!ছেলের চেহারা দিকে তাকানো যাচ্ছে না মনে হচ্ছে এখনি কান্না করে দিবে।হয়তো ভেতরে ভতরে বলছে ‘ছাইড়া দে মা,কাইন্দা বাঁচি।’

ছেলের বাবা মা দশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে আসলো।এদিকে ছেলের যা শর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে।তারপর কোনোমতে আইরিন রহমানের থেকে বিদায় নিয়ে যে সি এন জি দিয়ে এসেছে ওটা দিয়েই চলে গেছে।

এদিকে মধু আর সাইকা ওদের ঘরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।আর ওইদিকে হিমেল,শিহাব আর আরাফেরও একই অবস্থা।হাসতে হাসতেই সাইকা বলল,’দেখিস ওরা নিজেই মানা করে দিবে।’

‘তা তো দিবেই।তুমি যা করছো।’

তারপর আবার দুইবোন হাসতে লাগলো।
—————–
মধুর বড়খালা অনেক করে বলল এতো তাড়াতাড়ি যেতে না।কিন্তু মধুর মা আজই চলে যাবে।আজ সকালেই যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু পাত্রপক্ষ আসবে সেইজন্য যায় নি।একটু আগে ছেলের বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে বলেছে ওনারা মানা করে দিয়েছে।তাই আর থেকে কি লাভ।আজকে রাতের নয়টার বাসেই ফিরবে ওরা।মধুর মন খারাপ হচ্ছে খুব।সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।সাইকার ও মন খারাপ তবে মধুকে স্বান্তনার স্বরে বলল,’আরে পাগলি আমাদের আবার দেখা হবে।’

যাওয়ার আগে আরাফ মধুর হাতে একট প্যাকেট দিয়ে বলল,’এই নে।একসেট বেশি করেই কিনেছিলাম।’
মধু ছলছল চোখে আরাফের দিকে তাকালো।আরাফ হাসি মুখে বলল,’ভালো থাকিস।আবার তো আসবিই।মন খারাপ করিস না।’

তারপর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা রওনা দিলো।বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আরাফ ওদের এগিয়ে দিলো।

বাসে তিনটা সীট নেওয়া হয়েছে।দুইটা পাশাপাশি আর একটা দুই সীট পর।পাশাপাশি দুইটা সীটে আইরিন রহমান আর মিলি বসলো।আর দুইসীট পরের সীটে মধু বসলো।পাশের সীটে কে মধু জানে না।বাস ছাড়তে আরো পনেরো মিনিট বাকি আছে।মধু বাইরে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ পাশের সীটে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফিরে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে বসেছে।মধু তেমন গ্রাহ্য না দিয়ে আবার বাইরে তাকালো।হঠাৎ ইয়াদের গলা শুনে মধু চমকে তাকিয়ে দেখলো তাদের সীটের পাশের সারির পাশাপাশি সীটে ইয়াদ বসে আছে।ওদের চোখাচোখি হতেই দু’জনেই অবাক হয়ে গেলো।এবার মধু লজ্জা পেয়ে আবার বাইরে তাকালো।কিন্তু এখন কি আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় বারবার চোখগুলো যেনো ইয়াদের দিকেই যায়।মধু নিজেকে কিছুতেই শাসন করতে পারছে না।কিন্তু একটা জিনিসে মধু অবাক হয়েছে যখনই ও ইয়াদের দিকে তাকায় তখনই দেখে ইয়াদও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
এভাবেই লুকোচুরি চলছে।বাস ছেড়ে দিয়েছে অনেক্ক্ষণ হলো।মধু চোখ বন্ধ করে আছে।চোখ খুলে পাশে তাকাতেই চোখ গুলো বড়োবড়ো হয়ে গেছে।ওর পাশের সীটেই ইয়াদ বসে আছে।আর ওই ছেলেটা ইয়াদের সীটে বসে ঘুমাচ্ছে।ইয়াদ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,’কেমন আছো?’

‘ভালো আপনি?’

‘সবসময়ই ভালো থাকি।তো আজই ব্যাক করছো?’

‘হুম।তোমার আম্মু,বোন ওরা কই?’

‘দুই সীট সামনে।পাশাপাশি আর সীট পাওয়া যায় নাই তাই আলাদা এই সীট টা নিতে হলো।’

‘ও’
এমনই টুকটাক দুজনের মাঝে কথা হলো।তারপর ইয়াদ কনে ইয়ারফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সীটে হেলান দিয়ে রইলো।মধুও চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখলো।হঠাৎ ইয়াদ বলল,’তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো!’

মধু মন খারাপ করে বলল,’আমার তো ফোন নেই।’

‘ওহ!আইডি আছে?’

‘না খুলিনি।’

‘আচ্ছা কালকে সকাল নয়টায় পুকুর পাড়ের সামনে দেখা করতে পারবে?’

‘কেনো?’মধুর জবাবে কৌতুহল।

‘দরকার আছে বলেই বলেছি।’

‘আচ্ছা আসবো।’
এরমধ্যেই আইরিন রহমানকে নিজের সীট ছেড়ে আসতে দেখে মধু মুহুর্তেই বাইরের দিকে তাকালো।আর ইয়াদ সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে রইলো।আইরিন রহমান এসে মধুকে বলল,’তুই মিলির সাথে গিয়ে বস।’

মধু কিছু না বলে মিলির কাছে গিয়ে বসলো।আর মধুর মা ইয়াদের পাশে বসে পড়লো।এরপর আর কোনো কথা হয় নি ওদের মাঝে।যখন ওরা বাসায় পৌঁছালো তখন রাত একটা।
নিজেদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় মধুর মায়ের জন্য শেষ কথাবার্তা টুক হয় নি।

তবে মধুর কেনো যেনো অজানা একটা ভালো লাগে শরীরে ভর করেছে।দেখা যাক কাল সকাল দশটায় কেনো ডাকা হয়েছে মধুকে।

বাসায় পৌঁছে ধড়াম করে শুয়ে পড়লো মধু।ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু করছে।
————–
সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মধু পুকুর পাড়ের সামনে অপেক্ষা করেও ইয়াদের নামগন্ধও পেলো না।বিরক্ত হয়ে যখনই হাটা শুরু করবে তখনই ইয়াদ ডাক দিলো।

‘মধু’

মধু পেছনে তাকাতেই দেখলো ইয়াদ আসছে।মধু দাড়ালো সেখানে।দেখা যাক কি বলে সে।ইয়াদ ওর সামনে এসে বলল,’সরি ফর লেট।’

এটা বলেই একটা গোলাপ ফুল বের করে মধুর হাতে দিয়ে বলল,’নাও আমাকে প্রপোজ করো।’

মধু ইয়াদের কথা শুনে বেক্কল হয়ে গেলো।মানে কি!হঠাৎ প্রপোজ করতে যাবে কেনো!মধু বলল,’মানে!বুঝলাম না।’

‘বাংলা ভাষাতেই বললাম।তুমি এখন এই গোলাপ দিয়ে আমাকে প্রপোজ করবা।আর আমি একসেপ্ট করবো।’

‘কেনো?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

‘কারণ তুমি আমাকে পছন্দ করো।’

‘আমি আপনাকে বলছি?’

‘সব কথা বলতে হয় না।’

‘আচ্ছা তাহলে প্রপোজও করার দরকার কি যেহেতু বুঝতেই পারছেন।’

‘দরকার আছে।আমারে জীবনেও কোনো মেয়ে প্রপোজ করে নাই।আমার অনেকদিনের ইচ্ছা কোনো মেয়ে আমাকে প্রপোজ করবে।এই ইচ্ছাটা তুমিই পূরণ করে দাও প্রিয়তমা।’ইয়াদ অনুরোধের সুরে বলল।

ইয়াদের মুখে প্রিয়তমা শুনে মধুর মনে হলো ভালোবাসা কি তাহলে আমাকে ধরা দিলো!দ্বিধাহীন ভাবে মধু ইয়াদকে ‘ভালোবাসি’ বলেই দিলো।এতো সহজে যে ভালোবাসা তাকে ধরা দিবে মধু ভাবতেও পারে নি।
ভালোবাসার প্রকাশ শেষে ইয়াদ মধুকে একটা ফোন দিয়ে বলল,’এটা রাখো।সিম,আইডি সব কিছু আছে।বাসায় গিয়ে আইডির পাসওয়ার্ড পাল্টে দিও।’

মধু কৌতুহলী হয়ে বলল,’ফোন দিয়ে কি করবো?’

‘গাধা,ফোন না থাকলে পিরিত করবা কি দিয়া?’

চলবে…..

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat

‘যদি আম্মু দেখে ফেলে?’মধু ভীতু গলায় বলল।

‘যথাসম্ভব লুকায় রাখবা।আর নিশির সামনে এমন ভাব করবা যেনো তুমি আমাকে একদম দেখতে পারো না।ও জানতে পারলে একদম আগুন লাগিয়ে দিবে।’ইয়াদ সতর্ক গলায় বলল।

মধু ইয়াদের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো।এটা সাবধানে রাখতে হবে।ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,’কলেজে যাবে এখন?’

‘হ্যাঁ।আপনি?’

‘আমি আড্ডা মারতে যাবো।’

‘আপনার পড়াশোনা নাই।ভার্সিটিতে যান না কেনো?সারাদিন বাদাইম্মার মতো ঘুরলে পড়বেন কখন?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।

‘ভার্সিটির পোলাপান পড়ে না।শুধু পরীক্ষা আসলে কোমড়ে গামছা বেধে নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দিতে যায়।’ইয়াদ মৃদু হেঁসে বলল।

‘ইশ!আমি কবে ভার্সিটিতে উঠবো।’মধু আফসোসের সুরে বলল।

‘আগে ইন্টার পরীক্ষা দাও।তারপর ভর্তি পরীক্ষা এরপর চান্স পেলেই ভার্সিটিতে উঠতে পারবা।’

‘আমার পড়ালেখার যা অবস্থা মনে হয় ফেল করবো।’মধু চিন্তিত গলায় বলল।

‘তো পড়াশোনা ঠিকমতো করো না কেনো?কোচিং কোথায় করো?’

মধু উদাসভাবে উত্তর দিলো,’ছেড়ে দিয়েছি।’

‘কেনো?’ইয়াদ ভ্রু কুচকে বলল।

‘আম্মু খোঁটা দেয় সেইজন্য।’

‘আচ্ছা তুমি কোন স্যারদের কাছে পড়তে নাম বলো।’

‘শুভ স্যার আর মুকুল স্যার।’

‘ওনাদের নাম্বার দাও তো।’

মধু নাম্বারগুলো ইয়াদকে দিলো।ইয়াদ নাম্বার পেয়ে হালকা হেসে বলল,’আরে ওরা তো আমার ফ্রেন্ড।চলো আমি ওদের বলে দিচ্ছি।আর কোনোরকম পড়াশোনায় ফাঁকি দিবা না।সামনে টেস্ট!খারাপ করলে খবর আছে একবারে!”

মধু ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।মনেমনে ভিষণ খুশী লাগছে।ইয়াদ আর মধু প্রথমে শুভ স্যারের কাছে গেলো তারপর মুকুল স্যারের কাছে গেলো।দুইটা কোচিং আবার সেটা করে মধুকে কলেজে দিয়ে ইয়াদ রাসেল দের বাড়িতে চলে গেলো।

মধু কলেজে এসেই আরিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।আরিয়া অবাক হয়ে বলল,’কি রে আজকে এতো খুশী কেনো?’

মধু আরিয়াকে সব বলার পর আরিয়া বলল,’কংগ্রাচুলেশন।কিন্তু দেখিস ধরা পরিস না।আর ওই নিশি নাকি হিসি ওইটার থেকে বেঁচে থাকবি।’

‘হুম এই কথাগুলো উনিও বলছে।’

‘আচ্ছা তাহলে কি টিউশনিগুলা করবি না?’

‘করমু তো।সকালে করায় কলেজে আসমু তারপর কলেজ ছুটির পর স্যারদের কাছে পইড়া বাসায় যামু।’

‘হুম এটাই ভালো হবে।তোর হাত খরচটা চলবে।’

‘হুম।’
তারপর আরিয়া আর মধু স্যার না আসা পর্যন্ত টুকটাক কথা বলল।
—————
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মধু আর আরিয়া একসাথে আসছিলো।কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কেউ ওদের পিছনে আসছে।কিছুদিন আগেও এমন হয়েছিলো।কে সে যে এমন ফলো করে।আরিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,’মধু এতোদিন তো তুই ছিলি না আমি একা একা আসছি।প্রতিদিন মনে হতো কেউ পেছনে পেছনে আসে।’

‘কি বলিস!আমার ভয় করতেছে।দৌড় দিবো নাকি?’মধুও ফিসফিসিয়ে জবাব দিলো।

‘আরে না।একটা প্ল্যান বানাতে হবে।কে পিছনে আসে ব্যাপারটা জানতেই হবে।’

‘কি করবি সেটা বল?’

‘জানি না।আজকে ভেবে কালকে জানাবো।’

‘আচ্ছা।
এরপর মধু আর আরিয়া দ্রুত পায়ে হেটে বাসায় চলে গেলো।

মধু বাসায় এসেই দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে অন করলো।তারপর ইয়াদকে একটা কল দিয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে আবার ব্যাগে রেখে ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে,খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে এসে দরজা আবার দরজা বন্ধ করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ইয়াদ তিনবার কল দিয়েছে।মধু ব্যাক করতে যাবে তার আগেই ইয়াদ আবার দিলো।মধু রিসিভ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।রুমে বসে কথা বললে বাইরে থেকে কেউ শুনতে পেলে খবর আছে।রিসিভ করতেই ইয়াদ বলল,’বাসায় পৌছেছো?’

‘হ্যাঁ কিছুক্ষণ হলো।’

‘আচ্ছা শোনো কোনো একটা বাহানা দিয়ে তোমার শ্বশুড়বাড়িতে আসো।’

‘এখন!না না মা জিগ্যেস করলে কি বলবো?’

‘বলবা ইরিনের কাছে তোমার খাতা আছে তাই যেতে হবে।’

‘তারপর খাতা কই থেকে আনবো?আম্মু হাতে খাতা না দেখলে সন্দেহ করবো।’

‘আরে সমস্যা নাই।ইরিন রে বলবা ওর রসায়ন খাতাটা তোমাকে দিতে।তাইলে ই ল্যাটা চুকে যায়।’

‘এখন না আনালেই পারতেন!কালকেই তো দেখা হতো।আপনার জন্য এতগুলো মিথ্যা বলতে হবে।’

‘বলবা।আমি তোমার দশটা না পাঁচটা একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড।আমার জন্য বলবা না তো কার জন্য বলবা?তাড়াতাড়ি আসো।’

‘আচ্ছা আসতেছি।’
মধু ফোনটা রেখে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মাথায় ওড়না টেনে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে ইয়াদের দেওয়া বাহানা আইরিন রহমানকে বলে বেরিয়ে পড়লো শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।

ওদের ঘরের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই ইয়াদ দরজা খুললো যেনো মধুরই অপেক্ষা করছিলো।মধুকে দেখে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে ইরিনকে ডেকে বলল,’ইরিন তোর বান্ধবী আসছে।’

ইয়াদের কাহিনি দেখে মধু মুখ টিপে হাসলো।এরমধ্যেই ইরিন চলে এলো।ইরিন এসেই মধুকে ঘরে নিয়ে এলো।নিজের ঘরে এসে মধুকে বসতে দিয়ে বলল,’তো কেমন খেলে বিয়েশাদি?’

‘ভালোই।’

মধুর কথাশুনে ইরিন দুঃখ পাওয়ার ভান করে বলল,’হ্যাঁ তোমারই দিন।বিয়ে খেতে পারছো।কিন্তু আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতে কেউ বিয়ে করছে না।এই যে আমার দুইটা দামড়া দামড়া ভাই একটাও বিয়ে করছে না।’

ইরিনের কথা শেষ হতেই পেছন থেকে ইয়াদ বলল,’তোকে তাড়িয়ে পরে আমরা বিয়ে করবো।’

ইরিন ইয়াদের পিঠে দুম করে দুইটা কিল দিয়ে বলল,’আমি জীবনেও যাবো না।মরে ভূত হয়ে তোমার বউকে ভয় দেখাবো।’

ইরিনের কথা শুনে ইয়াদ আর মধু দুজনেই হেসে দিলো।ওদের হাসি ঠাট্টার মাঝেই ইয়াদের মা খিচুড়ি এনে বলল,’এই নাও খেয়ে বলো তো কেমন হইছে।’

‘আন্টি আমি তো খেয়েছি একটু আগে।’

‘হ্যাঁ তো কি হইছে আবার খাবা।’ইয়াদ বলল।

ইয়াদের কথায় ইরিন আর ওর মা দুজনেই সমর্থন করলো।হঠাৎই কলিং বেল বাজায় মধুর মা গেলো দরজা খুলতে।আর এদিকে মধু যতোবারই ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই ইয়াদ ওকে চোখ মারছে।
একটু পরই ইয়াদের মা এসে ইয়াদকে বলল,’পাঁচতলার ভাবি মিষ্টি পাঠাইছে।ওনার মেয়ে আসছে।তুই আয় তো!”

ইয়াদের মায়ের কথাশুনে ইয়াদ আর মধু দুজনেই দুজনের দিকে চমকে তাকালো।পাঁচতলায় তো নিশিরা থাকে।তারমানে নিশিরা মিষ্টি পাঠিয়েছে।ইয়াদ মধুর দিকে এক পলক তাকিয়ে বসার ঘরে আসতেই দেখে নিশি পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।ইয়াদ আর ওর মা মুখোমুখি সোফায় বসলো।ইয়াদের মা সৌজন্যমূলক হেসে বলল,’কি উপলক্ষে মিষ্টি দিলে?’

‘আন্টি আমার খালাতো বোনের মেয়ো হইছে সেইজন্য।’

‘ও আচ্ছা।তুমি একটু বসো।’
এটা বলে ইয়াদের মা উঠে চলে যেতেই ইয়াদ বলল,’লজ্জা নাই তোমার এতো বলার পরও আমার বাসায় আসছো কেনো?’

‘আমি তোমার কাছে আসি নাই।আমি আন্টির কাছে আসছি।’নিশি কাটাকাটা জবাব দিলো।

ইয়াদ রাগে উঠে চলে গেলো নিজের ঘরে।আর নিশি একটা বাঁকা হাসি দিলো।বস্তুত এই মিষ্টি নিশি নিজেই কিনে এনেছে।শুধু ইয়াদ দের বাসায় আসার জন্য।ইয়াদ চলে যাওয়ার পর ইয়াদের মা এসে নিশিকে খিচুড়ি দিলো।নিশি অল্প একটু খেয়ে তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো।ইয়াদ মধু এই যাত্রায় বেঁচে গেলো মধুর জুতা নিশি খেয়াল করে নি।নিশি যাওয়া পাঁচ মিনিট পর মধুও চলে গেলো।যাওয়ার আগে সবার অগচোরে ইয়াদের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে চলে গেলো।ইয়াদ যখন ওইরুমে গিয়েছিলো আর ইরিন ফোনে কথা বলছিলো তখনই মধু লুকিয়ে এই চিরকুট টা লিখেছিলো।

মধু যাওয়ার পর ইয়াদ নিজের ঘরে এসে চিরকুট টা খুললো।তাতে লেখা আছে

“”খবরদার আপনি মিষ্টি খাবেন না।
আমার মনে হয় নিশি আপনারে তাবিজ করার জন্য মিষ্টি দিছে।
ভুলেও কিন্তু ওগুলো খাবেন না।ওইসব তাবিজে কিন্তু কুত্তার ঘু আর ছাগলের ঘু থাকে।””

মধুর চিরকুট পড়ে ইয়াদ হাসতে হাসতে বসেই পড়লো।
————-
ইয়াদ সকালে ঘুম থেকে উঠে মধুকে মেসেজ করলো বের হওয়ার জন্য।মধু নামাজ পড়ে মেসেজটা দেখেই হিজাব বেধে বেরিয়ে পড়লো।পুকুর পাড়ের সামনে আসতেই দেখলো ইয়াদ জগিং স্যুট পরে কানে হেডফোন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মধু সামনে এসে বলল,’কালকে আপনি মিষ্টি কি খেয়েছিলেন?’

‘নাহ! খাইনি।’

‘ভালোই করেছেন।বলাতো যায় না কি কি মিশিয়েছে।’

ইয়াদ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মধু বলল,’আপনি এতো ছ্যাচড়া কেনো?খালি আমার পিছনে ঘোরেন।আপনারে যাতে আমার পিছনে ঘুরতে না দেখি।’

মধুর এমন উদ্ভটমার্কা কথায় ইয়াদ টাস্কি খেলো।হঠাৎ করে কি হলো যে এগুলো বলছে।ইয়াদ ডানপাশে চোখ দিতেই দেখলো নিশি ওদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।এবার ইয়াদ বুঝে গেলো।মনেমনে নিশির গোষ্ঠী উদ্ধার করে মধুকে বলল,’হ্যাঁ তো কি করবে?একশোবার ঘুরবো।’

এটা জোরেজোরে নিশিকে শুনিয়ে বলল।মধুও রাগের ভান করে বলল,’ফালতু ছেলে।’
এটা বলেই অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ইয়াদ সামনের দিকে দৌড়ানো শুরু করলো।নিশি রাগে মাটিতে একটা লাথি মেরে মনেমনে বলল,’মনে করছো কিছু বুঝি না আমি তাই না!তোমাদের প্রেম বের করতেছি দাড়াও।’

মনে মনে এগুলো বলে নিশি বাড়ির দিকে চলে গেলো।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে