ডাকপিয়নের ছুটি নেই পর্ব-১৭+১৮

0
343

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____১৭

মনে আষাঢ় নিয়ে ব্যালকনিতে পা ছড়িয়ে বসে আছে ইশা। প্রকৃতি সব ভালো কেন একসাথে সহ্য করতে পারেনা? এটা ওর প্রশ্ন। সবার সাথে কতটা হাসিমজায় কাটলো দুটো দিন। কিন্তু এই আবার দুঃখ বেদনার সূচনা ঘটলো। তুর্জর সাথে বড্ড কঠিন ব্যাবহার করেছে শ্রাবণ। থেকে থেকে ঐ সময় টুকুতেই ডুবে যাচ্ছে ও। ওকে ফিরে পাওয়ার আকুতি মিনতি এখনও কানে ভাসছে ওর।

তুর্জ ইশার প্রতি বড্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কথা বোঝে ইশা। কিন্তু, তুর্জ এতোটাও ভালো মানুষ নয়, যতটা হওয়া উচিৎ। সে দেখায় এক, করে এক, বলে এক। কে জানে, কি লুকিয়ে রাখে অন্তরে অন্তরে। বড্ড রহস্য ময় চরিত্র লোকটার।

ভাবতে ভাবতেই ভানার ঘোর কাটে ফোনের শব্দে। ফোন বাজছে, কথাটা মস্তিষ্ক বুঝতেই অন্তরটা কেঁপে উঠলো ইশার। আবারও তুর্জ নয়তো? আতংক মনে ফোনটা তুললো। তবে বেশ সময় লাগিয়ে। তবে না, তুর্জ না।

নামিরার কল এসেছে। ইশা হাফ ছেড়ে বাঁচল একরকম। ফোনটা চটজলদি রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে মন খারাপের ভারি গলায় কথা বলে নামিরা।

“ভুলে টুলে গেলি নাকি আমাকে?;

ইশা মুখ বাঁকালো। নামিরাকে ও গোনায় ধরলো না যেন, এমন ভাব দেখিয়ে বলল,

“তোকে ভুলতে গিয়ে আবার মনে করার সময় আছে নাকি?;

” সেই তো, এখন তো আমি পর হয়ে গেছি!;

“গেছিসই তো। যাক বাবা, নিজে যে বুঝেছিস সেই তো ঢের। নয়তো তোর ঐ গবেট মাথাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে কাম সারা হয়ে যেতো আমার।;

ওপাশ থেকে নিশ্চুপ হয়ে গেলো নামিরা। দিগুণ মন খারাপ করে বলল,

“আমাকে বাসা থেকে বড্ড প্রেশার দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য! প্লিজ, আমাকে উদ্ধার কর।;

“কেন? ঘরের চালডাল কি একটু বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে নাকিরে? বুঝতে পারছিনা তো!;

“জানিনা।;

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইশা। ভাবতে লাগলো সাতপাঁচ। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসাতে একটু উদগ্রীব হয়ে উঠলো। চটপটে গলায় বলল,

“একটা বুদ্ধি পেয়েছি। কয়টা দিন পালিয়ে যা কোথাও। আন্টি আর মামার মাথা থেকে এই বিয়ের ভূত যতদিন না নামে।;

নামিরা হতাশ গলায় জবাব দিলো,

“ধুর! আমার এমন কেউ আছে নাকি? কার সাথে পালাবো?;

ইশা দাঁত কেলিয়ে হাসলো। নামিরার কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,

“আমি আছিনা? আমার সাথে পালাবি!;

নামিরা আরও হতাশ হলো। বলল,

“তুই তোর পাগলামির কথা রেখে সিরিয়াস কথা বল। আমি এখন কি করবো?;

“যা বললাম তাই। সব ব্যাগপত্র গুছিয়ে নে। আজ রাতেই পালাবি তুই। মিশন আমার বাসা।

“তোর বাসা?; একটু দমে গেলো নামিরা।

” ইয়েস, ম্যাডাম। জাস্ট কয়টা দিন তোর মায়ের থেকে দূরে থাকলেই দেখবি, বিয়ের ভূত অটোমেটিক তাদের মাথা থেকে নেমে গেছে।;

“তুই সিওর জান?;

“হান্ড্রেড পারসেন্ট সিওর। কখন বের হতে পারবি বল আমি তোর বাসার নীচে অপেক্ষা করবো।;

“না, তোকে আসতে হবেনা। আমি একাই পারবো।;

“ঠিকাছে। জলদি এসে পড়।;

“হু।;

ফোন কাটলো নামিরা। ইশার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। কিছু কিছু সম্পর্ক বড্ড অদ্ভুত হয় তাইনা? এই যেমন মা-বাবা,ভাই-বোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড। ইশা ভাবে, বেস্ট ফ্রেন্ড সম্পর্ক গুলি পৃথিবীতে আছেই শুধু মন ভালো করার খাতিরে। একটু মন খারাপ হলেই যেটা মা কিংবা ঘরের লোককে বলা যায়না, সেটা বেস্ট ফ্রেন্ডকে অনায়াসে বলে ফেলা যায়। আর ওমনি ওই সিরিয়াস কথা কিংবা মন খারাপের ব্যাপারটা কনভার্ট হয়ে মজার কথায় রূপান্তরিত হয়। আবার বড় বড় জটিল সমস্যা গুলো এক নিমিষে সমাধান হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ নামিরার সমস্যাটাই ধরা যায়।

___________

খান বাড়িতে গমগম পরিবেশ। খান সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছেন ড্রয়িং রুমে। পাশে তার বিবি। আর তাদের দু’পাশ থেকে বসেছে বাসার বাকি সদস্যরা। এক গম্ভীর আলোচনা চলছে আধঘন্টা যাবত। খান সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কোনটা ঠিক হবে আর কোনটা ভুল। তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তুর্জর মা-বাবা, এবং তুর্জ নিজেও একাধিক বার কল করে তাদের কাছে মাফ চেয়েছে। তাদের বক্তব্য তারা ইশাকে চায়, তাদের আর কোনো চাওয়া নেই। তুর্জ রাগের মাথায় একটা অন্যায় করে ফেলেছে, যেটা আসলেই ক্ষমার অযোগ্য! তবে, এটাও সত্যি সে ইশাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবেনা। ইশাকে সে মন দিয়ে ফেলেছে। প্রতিটা দিন গুমরে গুমরে ম*র*ছে ইশাকে হারানোর য*ন্ত্র*ণায়। কান্নাকাটিও করছে তুর্জ। সবটাই একটু একটু করে বুঝিয়ে বললেন তুর্জর মা রূপা বেগম।

ইশাকে ডেকে পাঠালেন খান সাহেব। তিনি ইশার মুখ থেকেই শুনতে চান ইশার কি মত? যদি ইশা তুর্জকে মাফ করতে পারে তবে তিনি তুর্জকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন। যদি ইশা না করে তবে, না-ই।

“ইশানি, তুর্জকে কি তুমি ক্ষমা করতে চাও? তোমার মন কি বলে?;

নানাজানের প্রশ্নে ইশা ভাবনায় তলিয়ে গেলো। এমন নয় যে তুর্জ শুধু খান সাহেবের কাছেই ওর জন্য আকুতি মিনতি করেছে, কিংবা কেঁদেছে! তুর্জ ওর কাছেই একই ভাবে কেঁদে কেটে ভাসিয়েছে। তার শুধু একটাই কথা, সে ক্ষমা চায়।

সবার দৃষ্টি ইশার উপর। তিতির এসে ইশার হাত ধরে দাঁড়ালো। মনে সাহস দিয়ে বলল,

“ভয় পাস না। তোর মন যা বলে সেটাই কর।;

ইশা মায়ের দিকে তাকালো। মরিয়ম বিবি মেয়েকে চোখের ইশারা আস্বস্ত করলেন। এরপর ইশা বড় মামির দিকে তাকালেন। আফিয়া বেগম অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন ইশার দিকে। যেন সে চায়না, তুর্জর মতো ছেলেরা মাফ পাক। এটাই তাদের সারাজীবনের শাস্তি হোক। ইশা বেশিক্ষণ দেখতে পারলোনা বড় মামির পানে। খান সাহেবও চান তুর্জকে ক্ষমা করতে। বেশ বুঝতে পারছে ইশা। ইশা এবার শ্রাবণের পানে তাকালো। গম্ভীর রাগি মুখটা নীচু করে রেখেছে শ্রাবণ। মুখটা ঠিক করে দেখতেও পারছেনা ইশা। বুক ভরে দীর্ঘশ্বাস এলো ওর। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নানাজানের পানে তাকালো। বলল,

“এতো করে যখন বলছে, তবে ক্ষমা করে দাও নানাজান। ভুল তো মানুষেরই হয়।;

বুকের ভেতরটায় যেন কেউ পা*ষাণের মতো ছুরি বসিয়ে দিলো শ্রাবণের। র*ক্তক্ষরণ শুরু হলো তৎক্ষনাৎ। আচমকা দাঁড়িয়ে গেলো শ্রাবণ। ইশা চকিতে শ্রাবণের পানে তাকাতেই সামনে থেকে বলে উঠলেন খান সাহেব,

“যাক। আমার নাতনি যখন ক্ষমা করতে রাজি তখন আমাদেরও আর কোনো আপত্তি নেই। বিয়ের কথা আগাতে পারি তাহলে,কি বলো সকলে?;

ইশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো নানাজানের শেষোক্ত উক্তিতে। সে তো কেবল ক্ষমা করার কথা বলেছে, বিয়ে তো সে করতে চায়না।

শ্রাবণ তাচ্ছিল্য মিশ্রিত হাসলো। যা দেখে ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো ইশার। হাহাকার আরম্ভ হলো অন্তরের অন্তস্তলে। তীব্র চিৎকারে বাড়ি মাথা তুলে জানাতে ইচ্ছে করলো, সে এই বিয়ে করতে চায়না।

সবার কথার মাঝে প্রস্থান করলো শ্রাবণ। শ্রাবণের যাওয়ার পানে আহত নয়নে তাকিয়ে আছে ইশা। শ্রাবণ বড্ড কষ্ট পেয়েছে তার এই জবাবে। আবারও কষ্ট দিলো মানুষটাকে।

হাতের কাছে যে কয়টা শার্ট পেলো সব একসাথে করে ব্যাগের মধ্যে ভরছে শ্রাবণ। মাথার মধ্যে টগবগিয়ে র*ক্ত ঝড়ছে। আর এক মুহুর্তে এই বাড়িতে থাকলে হয়তো প্রলয়ঙ্কারী কান্ড ঘটিয়ে বসবে। সে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছেনা এই রাগের সামনে। সে কেন বারবার ভুলে যায়, ইশা তাকে চায়না ওর জীবনে! কেন ভুলে যায়?

“ক্ কোথায় যাচ্ছো তুমি? এগুলো কেন গোছাচ্ছো? কি হলো জবাব দাও। কোথায় যাচ্ছো তুমি?;

দৌড়ে এসে শ্রাবণের ঘরে ঢুকলো ইশা। শ্রাবণ এদিক সেদিক থেকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তুলে নিয়ে ব্যাগে ভরছে। ইশাও ঘুরছে তার পায়ে পায়ে। গলার স্বরে মনে হচ্ছে কাঁদছে সে।

“শ্রাবণ ভাই একটু দাঁড়াও। একদন্ড দাঁড়িয়ে আমার কথাটা একটু শোনো প্লিজ?;

শ্রাবণ আপন মনে আছে। তার রুমে সে ছাড়া আদৌও কেউ আছে কিনা, তার হাবভাবে একদম বোঝার উপায় নেই।

“প্লিজ শ্রাবণ ভাই, আমার কথাটা একটু শোনো? আমি জানতাম না নানাজান তুর্জকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছে! নানাজান তুর্জর সাথেই যে আমাকে বিয়ে দিতে চায় কিংবা সে যে আমার ক্ষমা করার অপেক্ষায় ছিলো আমি কিভাবে বুঝবো? বলো আমাকে? আমি কিভাবে বুঝবো? আমি তো শুধু তুর্জকে ক্ষমা..;

হাত উঠিয়ে দিলো ইশাকে থামিয়ে দিলো শ্রাবণ। র*ক্তিম চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে রা*গি গলায় বলল,

“তুর্জ তোকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। সো? ইনজয় ইওর লাইফ।;

ইশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। শ্রাবণের হাত দুটো ধরে অসহায় গলায় বলল,

“আমার চাইনা এই ভালোবাসা। আমি ওকে বিয়ে করতে…;

“চাস। তুই ওকেই বিয়ে করতে চাস। আর তাইতো, এতকিছুর পরেও মানবদরদীর মতো এক কথাও ওকে ক্ষমা করে দিলি।;

“তুমি আমাকে ভুল…;

“জাস্ট শাটআপ ইশা! আর একটা কথা বললে কিন্তু আমার হাত উঠে যাবে। আর আমি চাইনা, তুর্জর মতো এভাবে নিজের পুরুষত্ব জাহির করতে।;

বলেই আবার নিজের ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো শ্রাবণ। ইশা আবারও ছুটে গেলো শ্রাবণের কাছে। পেছন থেকে শ্রাবণের হাত টেনে ধরে কান্না জড়ানো গলায় বলল,

“তোমার যা খুশি তুমি করো! আ্ আমি কিছু বলবনা।;

“হাত ছাড়!;

শান্ত গলায় বলল শ্রাবণ। ইশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“না আমি ছাড়বোনা। তুমি আগে বলো, তুমি কোথায় চললে এতো রাতে? ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাবে?;

শ্রাবণ জবাব দিলো না। এক ঝাটকায় ইশার হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিয়ে ব্যাগের চেইন লাগিয়ে কাঁধে তুললো ব্যাগটা। ইশা ধাক্কা খেয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো। শ্রাবণ হাঁটা ধরেও আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। ইশার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,

“বারবার বোকার মতো তোর কাছে ছুটে আসি বলে, এই না যে আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো! আলবাত পারবো। আর এই পারাটাকেই আমার সারাজীবন ধরে রাখতে চাই! আমি আর তোর মুখ দেখতে চাইনা।;

ইশা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো! ছুটে এসে শক্ত করে ধরলো শ্রাবণকে। কাঁদতে কাঁদতে আকুতি জানিয়ে বলল,

“আমি সইতে পারবোনা এই পীড়া! তুমি এতোটা পা*ষাণ হয়োনা শ্রাবণ ভাই। আমি যে ম*রে যাবো তোমার বিরহে!;

তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠলো শ্রাবণ। ইশাকে দূরে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে। দু’কদম পিছিয়ে তাচ্ছিল্যের গলাতেই বলল,

“নারী বড় রহস্যময়ী!;

কাঁদছে ইশা। কি করে আটকাবে সে মানুষটাকে। তার বলা কথাগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে যে সে সত্যি সত্যি ম*রে যাবে!

“তুর্জ তোকে অনেক সুখে রাখবে!;

“চাইনা আমার এই সুখ।;

“তুই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছিস ইশা। আমাকেও আমার ডিসিশন নিতে দে।;

ইশা আকস্মিক পা জড়িয়ে ধরলো শ্রাবণের। শ্রাবণ হকচকিয়ে গেলো। ইশা তার পা’দুটো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,

“তুমি এটা করতে পারোনা শ্রাবণ ভাই!;

“পা ছাড়!;

“আমি ছাড়বোনা। তুমি আমাকে এই বিরহ য*ন্ত্র*ণায় এমন করে একা ফেলে যেতে পারোনা! আমি তোমাকে যেতে দিবোনা।;

“ইশা পা ছাড়, আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকবোনা। পা ছাড়!;

শ্রাবণ বজ্র কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো। ইশা আঁতকে উঠে পা ছেড়ে দিলো শ্রাবণের। শ্রাবণ আর এক দন্ডও দাঁড়ালো না। হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেলো।

#চলবে
#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____১৮.

অক্টোবরের শেষ। শীতের বাতাস এখনই নাকে ঠেকে। নরম রোদের মৃদু আলো আর শীলত হাওয়া। সবটাই মন ভালো করে দেওয়ার আস্ত কিছু উপকরণ। কিন্তু এতেও মন ভালো হয়না কারোর কারোর। মনে করিয়ে দেয় ব্যর্থতার কথা। মনে করিয়ে দেয় কি পেতে গিয়েও যেন হারাতে হয়েছে নিজের বোকামির জন্য। ইশাও ঠিক তাই। নিজের বোকামির ফলে আবারও কতটা দূরত্ব হয়ে গেছে শ্রাবণের থেকে। শ্রাবণ কুমিল্লা চলে গিয়েছে আজ তিনদিন। তিনদিনে না কারোর সাথে যোগাযোগ করেছে আর না যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম রেখেছে। তার ফোন বন্ধ সেদিন থেকেই। রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা ফোন হাতে নিয়ে শুধু শ্রাবণের নাম্বারে ডায়াল করে গেছে ইশা। তবে ওপাশ থেকে শুধু একটাই জবাব, ‘আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি এই মুহুর্তে বন্ধ আছে অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন, ধন্যবাদ। অতিষ্ঠ হয়ে ফোনটাকে অসংখ্য বার ছুঁড়ে ফেলেছে ইশা। শ্রাবণের কন্ঠ শোনার জায়গায় অসংখ্য বার এই মহিলার গলা শোনাতে সে ধৈর্য্য হারা হয়ে পড়েছে। তারপরও যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি।

আজ ভোর ভোর ক্লাস পড়াতে ৫দিনের বন্ধ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটেছে নামিরাকে নিয়ে। নামিরাও এসে ওর কাছে উঠেছে আজ তিনদিন। শ্রাবণ আর ইশার ব্যাপারে সবটাই সে জানে। তবে এই জানার কোনো মূল্য নেই। কারন, এই সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বিশেষ সমাধান দিতে পারছেনা ইশাকে।

“কিরে, কোন দুনিয়ায় ডুবে আছিস?;

কলম দিয়ে খোঁচা মে/রে ইশাকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনলো নামিরা। ইশা চমকে ওঠে আশেপাশে তাকিয়ে সশব্দে বলে উঠলো,

“ইয়েস প্রেজেন্ট স্যার!;

ইকোনমিকস ক্লাস চলছে। ইকোনোমিকসের টিচার পারভেজ সাহেব মোটা চশমার উপর থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন ইশার পানে। নামিরা কপাল চেপে ধরলো। আশেপাশের স্টুডেন্টরা কেউ কেউ মুখ টিপে হেসে দিলো। পারভেজ সাহেব ইশার প্রতি ক্ষীপ্র হয়ে বললেন,

“কিসের প্রেজেন্ট?;

ইশা বোকার ন্যায় কতক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা চুলকে নামিরার পানে তাকালো। তবে এতেই যেন তার কাছে সব ক্লিয়ার হলো। সঙ্গে সঙ্গে জিভ কেটে পূণরায় মাথা চুলকাতে চুলকাতে স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,

“স সরি স্যার।;

পারভেজ সাহেব আর মনোযোগ দিলেননা এদিকে। তিনি পূণরায় পড়ানো শুরু করলেন। ইশা নামিরার দিকে পূণরায় ফিরে ওর পিঠে ধুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

“কেস খাওয়ালি কেন?;

নামিরার পিঠ বেঁকে গেলো। চোখমুখ কুঁচকে অসহায় গলায় বলল,

“স্যার ম্যাথ করাচ্ছে, ইক্যুয়েশন জিজ্ঞেস করছে সবার কাছে!;

নামিরার অসহায়ত্বের ছাপ এবার ইশার চোখে মুখে ফুটে উঠলো। পূণরায় স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলো পারভেজ সাহেব এক এক করে ওদের সারিতেই এগিয়ে আসছেন। শুঁকনো গলায় ঢোক গিললো ইশা। নামিরাকে খোঁচাতে খোঁচাতে বলল,

“আ্ আমি আজ বাঁচব না রে নামু! এই ইকোনমিকস এর ইক্যুয়েশন পড়তে পড়তে কোনদিন দেখবি শহীদ হয়ে গেছি!;

“আরে এতো প্যারা নিসনা। এটা দেখ। এটাই মনে হয়।;

বলতে বলতে খাতাটা এগিয়ে দিলো নামিরা। ইশা ঢোক গিলে বলল,

“তোর মনে হওয়া দিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবোনা! থাক তুই, আমি গেলাম।;

বলেই উঠে পেছনের দরজা দিয়ে স্যারের চোখের আড়ালে পালিয়ে গেলো ইশা। নামিরা ইশার কান্ড দেখে আতংকে একাকার হয়ে গেলো। পারভেজ স্যারের চোখ বড় পাকা। তার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যাওয়া চারটি খানি কথা নয়। কিন্তু ইশা বেরিয়ে গিয়েছে। ভ*য়ে বুকে পাথর চাপা পড়লো নামিরার। ইশাকে ঠিক মতো বেরিয়ে যেতে দেখে একটু হলেও স্বস্তি পেলো বেচারি।

ইশা এক দৌড়ে এসে ক্যান্টিনে থামলো। হাঁপাতে হাঁপাতে একটা চেয়ার টেনে বসে গলা উঁচিয়ে পানি চাইলো রাসেলের কাছে। রাসেল এই ক্যান্টিনে কাজ করে প্রায় ১০বছর। স্বল্প বেতনের, অধিক খাটুনি হলেও এই ক্যান্টিনের জব সে কিছুতেই ছাড়তে পারেনা। আলাদা এক মায়া জন্মে গেছে তার গোটা ক্যাম্পাসটা জুড়ে। প্রতিটা স্টুডেন্টের সাথে তার আলাদাই এক সখ্যতা। যদিও দেয়ালে বড়বড় করে লেখা রয়েছে, ‘সেল্ফ সার্ভিস’ তারপরও সে সবার জন্য নিজের হাতে খাবার নিয়ে আসে। নিজের হাতে সার্ভ করে। মুলত এটাই তার ভালোবাসা প্রকাশের আসল মাধ্যম। একদম পেছনের মাথা থেকে একটা পরিচিত গলা পেয়ে এক বোতল পানি নিয়ে চলে যায় রাসেল। ইশা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। রাসেল গিয়ে ওর সামনো দাঁড়িয়ে পানিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ইশানি আপা, পানি লন।;

ইশা মুখ তুলে তাকায়। রাসেলকে দেখে মৃদু হেসে পানির বোতলটা নিয়ে বলল,

“বড্ড গলা শুঁকিয়ে গেছে রাসেল ভাই।;

“দৌড় দিয়া আইলেন মনে হইলো!;

ইশা পানি খেতে খেতে চোখ বড়বড় করে তাকালো রাসেলের পানে। অতঃপর এক নিঃশ্বাসে অর্ধেক পানি সাবাড় করে বলল,

“উফফ, আর বলোনা! পারভেজ স্যারের ইকোনমিকস ইক্যুয়েশন একদিন আমার দফারফা করে ছাড়বে।;

“ওমা কি কন! শ্রাবণ ভাই কিন্তু পারভেজ স্যারের পছন্দের ছাত্র আছিলো। হেয় তো সারাদিন পারভেজ স্যারের এই সব ইক্ ইক.. কি জানি কয়! যাই হোউক, হেইয়া নিয়াই থাকতো। পারভেজ স্যারেও অনেক খুশি হয়া যাইতো হের উপর।;

শ্রাবণের কথা শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো ইশার। তবে সেটা নিয়ে বিশেষ না ভেবে রাসেলের উদ্দেশ্যে বলল,

“শ্রাবণ ভাই তো শ্রাবন ভাই-ই। তাকে নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার নেই।;

” হ তা ঠিকই। তা আপনে কিছু খাইবেন? সিঙারা দিমু?;

“না গো। নামুকে একা ফেলে এসেছি বাঘের গুহায়। আর এখন যদি ওকে ছাড়া সিঙারাও খেয়ে ফেলি, তবে আমার গর্দান নেবে ও।;

ইশার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো রাসেল। মাথা দুলিয়ে বলল,

“আইচ্ছা, তাইলে নামিরা আপা আসুক।;

“হ্যাঁ, আসুক।;

চলে গেলো রাসেল। ইশা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ফোনটা বের করে হাতে নিলো। একহাতে বাকি পানি টুুকু খেতে খেতে অন্যহাতে শ্রাবণের নাম্বারটা ডায়াল করলো। কিছু না ভেবে কল লাগিয়ে দিলো। কয়েক সেকেন্ড পার হতেই সেই ভদ্র মহিলা বলে উঠলো,

“The number you dialled is currently unreachable!; ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশা।

ক্যান্টিন এখন পুরোই খালি। ক্লাস টাইমে হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া ক্যান্টিনে তেমন লোক সমাগম দেখা যায়না। এরকম একটা সময়েরই সুযোগ খুঁজছিলো তুর্জ। আশেপাশে ভালো করে পরখ করে তবেই ঢুকলো ক্যান্টিনে। ইশার সাথে সামনাসামনি কথা বলবে বলে সেই সকাল থেকে ক্যাম্পাসের মাঠে অপেক্ষা করছে সে। আর এখন প্রায় দুপুর। এতক্ষণ ওয়েট করেও ইশার সাথে দেখা হওয়ার আশাটা একদম শূন্য ছিলো। তবে ভাগ্য তার সহায় হলো। হঠাৎই দূর থেকে দেখতে পেলো ইশাকে। ক্লাস থেকে বের হয়ে দৌড়ে যাচ্ছে ক্যান্টিনের দিকে। সে আর দেরী করলোনা। ইশার সাথে জনমানবহীন জায়গায় কথা বলতে চায় সে। তাই ক্যান্টিনের বাইরেও অপেক্ষা করলো খানিকটা সময়। অবশেষে অপেক্ষার পালা মিটলো। ক্যান্টিন পুরো ফাঁকা হয়ে যেতেই ক্যান্টিনে প্রবেশ করলো সে।

“ভাই, সিগারেট দিমু?;

টংয়ের দোকানে একটা বেঞ্চে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে শ্রাবণ। ব্যাচে জুনিয়র চারটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তার দু’পাশে। তার মধ্যে একটা ছেলে বলল কথাটা। শ্রাবণ গম্ভীর গলায় বলল,

“ল একটা।;

ছেলেটা উৎসাহিত হয়ে দোকানীর থেকে ভালো দামের একটা সিগারেট নিলো। সিগারেটটা শ্রাবণের মুখে তুলে দিয়ে ম্যাচের কাঠি তুলে আগুনও ধরিয়ে দিলো। শ্রাবণ কপালে ভাজ ফেলে দু-তিন টান দিয়ে সিগারেটটা নামিয়ে নিলো। ভেতরের কষ্ট গুলোকে ধোঁয়ার সাহায্যে উড়িয়ে দিতে দিতে বলল,

“ইশার ক্লাস কখন শেষ হবে? আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারবোনা। বিকেলে একটা মিটিং আছে। ওকে এক পলক দেখেই বাসে উঠবো।;

“ভাই, সেই কুমিল্লা থেইক্কা চার-পাঁচ ঘন্টা জার্নি কইরা আহেন আবার যান! তাও বাড়িত যাননা। এমনে হইলে কি হইবো কন?;

“ওকে না দেখে থাকতে পারিনা। কি করবো বল?;

ব্যাথাতুর কন্ঠস্বর শ্রাবণের। কাউকে বুঝতে দিবেনা সেই বাহানায় কথাটা বলেই আবার সিগারেটে টান দেয়। ওরা চারজনে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তন্ময় নামের ছেলেটা একটু ক্ষেপাটে ধরনের। রেগেমেগে বলে উঠলো,

“ভাই রাহেন তো এই ফ্যামিলি পারাম্পারা। ভাবিরে লইয়া চইলা যান। তারপর বিয়া কইরা লন। তাইলেই তো হয়। ঝামেলা মিটমাট।;

তন্ময়ের কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো শ্রাবণ। পরপর দু’বার সিগারেটে টান দিয়ে বলল,

“সেই তো চায়না আমার সাথে থাকতে। অন্যকে কি বলি?;

“না ভাই, এডা হইতে পারেনা। ভাবি আপনারে অনেক চায়। আপনে তো জানেন, মেয়েদের মন বোঝা এতো সোজা না।;

“হু, আসলেই! মেয়েদের মন বোঝা আসলেই সোজা না।;

বড্ড বিধ্বস্ত লাগছে শ্রাবণকে। শুঁকিয়ে যাওয়া মুখ, সিগারেটে পোড়া ঠোঁট আর এলোমেলো চুল। পড়নের সাদা শার্টটার এক হাত ঝুলে আছে তো অন্যহাত সুন্দর করে ফোল্ড করা। গলার টাইটা এখনও ঝুলছে। রাতের মিটিংটা শেষ করে বাসে উঠে যায়। পাগলের মতো হন্নে হয়ে ছুটে আসে ঢাকা। সেই ভোর থেকে এখনও অব্দি ইশার ভার্সিটির বাইরে টংয়ের দোকানে বসে আছে। তাকে এক পলক দেখবে বলে।

“ভাই, ভাবি আইতাছে! ওমা ঐডা আবার কেডা?;

রফিক নামের ছেলেটা প্রথম বাক্যটা বড় উৎসাহের সাথে বললেও পরের বাক্যটা আওড়াতে আওড়াতে বিস্ময়ে ঢাকা পড়লো তার গলার স্বর। শ্রাবণ চটজলদি তার হাতের সিগারেটটা ফেলে দাঁড়িয়ে গেলো। তবে পূণরায় তাকে বসে পড়তে হলো ইশা আর তুর্জকে হাত ধরাধরি করে আসতে দেখে। ভেতরটা যেন ঝ*লসে যেতে লাগলো শ্রাবণের। মন ভা*ঙার শব্দ নেই, তবে পীড়া তো আছে! মন ভে*ঙে যাচ্ছে তার। বড় করুণ ভাবে মন ভে*ঙে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য তো বারবার ছুটে আসেনা সে।

তুর্জ একটা রিক্সা ডাকলো। ইশা এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে তুর্জর দেখানো রিক্সায় উঠে গেলো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তুর্জও উঠে বসলো ইশার পাশে। তুর্জ কিছু বলছে ইশাকে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ইশার মাথাটা তার কাঁধে রাখলো। ইশা কোনো বাঁধা দিচ্ছেনা। তুর্জ ইশার কোমর জড়িয়ে ধরলো আপত্তিকর ভাবে। ইশার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা। তুর্জ রিকসাওয়ালাকে বলে রিক্সার হুড লাগিয়ে দিলো। অতঃপর রিক্সা চলতে শুরু করলো।

এই পুরো দৃশ্যটা শ্রাবণের চোখের সামনেই ঘটলো। কিন্তু সে নির্বিকার। তন্ময়, রফিক, শাফিন আর হৃদয় রাগে ফোঁস ফোঁস শব্দ করছে। শ্রাবণকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে যেমন অবাক হচ্ছে, ওদিকে ঐ বাইরের ছেলেটাকে ইশার সঙ্গে এতো ক্লোজ হতে দেখে সহ্য করতে পারছেনা একদম।

“ভাই, আপনে চুপ থাকবেন? কিছু কইতাছেন না কেন?;

তেড়ে যেতে লাগলো ওরা চারজন। শ্রাবণ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলল,

“দাঁড়া! যেতে দে ওদের।;

“কিন্তু ভাই..;

“বললাম তো যেতে দে।;

রাগান্বিত গলায় চেঁচিয়ে উঠল শ্রাবণ। ওরা চারজন শ্রাবণের রাগ দেখে চুপসে গেলো। রিক্সা ততক্ষণে ওদের দৃষ্টির অগোচরে বিলুপ্ত হয়েছে। শ্রাবণ আবারও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওদের উপর ক্ষিপ্র হয়ে লাভ নেই। তাই পূণরায় শান্ত গলায় বলল,

“ও ইশার হবু স্বামী। ওর সম্পুর্ন অধিকার আছে ইশার উপর। আর ইশাও রাজি এই বিয়েতে।;

“ভাই, কি বলতাছেন?;

আহত হলো ওদের মন। কথাটা বলে উঠলো হৃদয়। শ্রাবণ মাথা নাড়ে। একটা ঢোক গিলে কিছুক্ষন চুপ থেকে পূণরায় বলে,

“আমার জন্য বাসের টিকিট কিনে নিয়ে আয় যা। ওকে দেখতে এসেছিলাম, দেখা শেষ। এবার ফিরতে হবে।;

শ্রাবণের মনের কঠিন অবস্থা বোঝার সাধ্য হয়তো কারোর নেই, তবে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে ওরা। এতেই যেন ওদের ভেতরটা জ্ব*লছে। না জানি শ্রাবণের ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে।

শাফিন আর তন্ময় প্রস্তুত হলো টিকিট আনতে যাওয়ার। রফিক আর হৃদয়কে শ্রাবণকে দেখতে বলে তারা বের হতেই আবার দাঁড়িয়ে পড়লো নামিরাকে দেখে। নামিরা দৌড়ে এসে দাঁড়ালো মাঝরাস্তায়। আশেপাশে চাতক পাখির মতো দৃষ্টি ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলো কিছু। শাফিন আর তন্ময় সন্দিহান নয়নে তাকালো। শ্রাবণকে ডেকে বলে উঠলো,

“ভাই, ঐডা তো ভাবির বান্ধবী না?;

শ্রাবণ মুখ উঁচিয়ে তাকালো। নামিরাকে দেখে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

“হু।;

“দেইখা মনে হইতাছে কাউরে খুঁজতাছে। ডাক দিমু?;

“দরকার নেই। তোরা যে কাজে যাচ্ছিলিস, যা।;

শ্রাবণের বারন শুনে ওরা আর কথা বাড়ায় না। চলে যেতে উদ্যোত হয়। ঠিক তখনই ওদিক থেকে ডাক পড়ে নামিরার।

“শাফিন, তন্ময়?;

নামিরার ডাক শুনে এবার শ্রাবণও একটু বিচলিত হয়। শাফিন আর তন্ময় পূণরায় শ্রাবণের উদ্দেশ্যে বলে,

“ভাই, আমগোই তো ডাকতাছে।;

“কোনো বিপদ হইলো না তো?;

শ্রাবণও সেটাই ভাবছে। বলল,

“যা তো। দেখে আয়।;

শাফিন আর তন্ময় দৌড়ে যায় নামিরার কাছে। নামিরা ওদের পেয়ে অসহায় গলায় বলে,

“তোমরা ইশাকে চিনো তো?;

তন্ময় বড় আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলো,

“হ ভাবিরে আবার চিনমুনা… থুরি, ইশা আপুরে তো চিনি।;

কথাটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলেও সামাল দিলো পরক্ষণেই। নামিরা প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম। কান্না জড়ানো গলায় বলল,

“ত্ তোমরা ইশাকে এক্ষনি কারোর সাথে যেতে দেখেছো?;

কথাটা শুনে দু’জনের মাঝে বো/মা ফাটলো যেন। একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটু রাগান্বিত হয়ে বলল,

“হ দেখছি! শ্রাবণ ভাই বলল, ওটা নাকি ইশা আপুর হবু স্বামী।;

নামিরার চোখের এক রাজ্যের বিস্ময় নেমে এলো।

“শ্রাবণ ভাই? শ্রাবন ভাইকে কোথায় পেলে তোমরা?;

অবিশ্বাস্য গলায় প্রশ্ন করলো নামিরা। শাফিন টংয়ের দোকানের দিকে ইশারা করে বলল,

“ঐ যে, ঐদিকে ভাই।;

নামিরা আর এক সেকেন্ড দেরী করলোনা। পা*গলের মতো ছুটলো সেদিকে। নামিরার চোখমুখে আতংক। শ্রাবণকে দূর থেকেই দেখতে পেয়ে কেঁদে দিলো। এক দৌড়ে শ্রাবণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কান্না জড়ানো গলায় বলে উঠলো,

“ভাইয়া, ইশার বড় বি*পদ! ইশাকে বাঁচান!;

নামিরার কথায় শ্রাবণের কপাল চওড়া হয়ে গেলো।

“বিপদ মানে? কি হয়েছে!;

“তুর্জ ইশাকে কোথায় যেন নিয়ে গেছে!;

শ্রাবণের চওড়া কপাল কুঁচকে গেলো। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে অভিমানি গলায় বলল,

“হ্যাঁ দেখলাম তো, দু’জনে হাত ধরাধরি করে বের হলো। রিক্সায় উঠেও তুর্জ কাঁধে ঢলে পড়েছে ইশা। সবটাই দেখেছি।;

“ভাইয়া সেদিন আপনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইশা নানাজানের সাথে কথা বলে। নানাজানকে ইশা বুঝিয়ে বলে সে তুর্জকে বিয়ে করতে চায়না। নানাজান ওর কথায় আর আপত্তি করেনা। সেদিন থেকেই তুর্জদের সাথে ওর সব সর্ম্পক চুকে যায়। সেখানে আজ.. আজ ইশা হঠাৎ তুর্জর সাথে এভাবে কোথায় যাবে আপনিই বলুন? আমার তো কিছু ঠিক মনে হচ্ছে না।;

শ্রাবণের মাথায় যেন আকাশ ভে*ঙে পড়ে। বি*স্ফো*রিত নয়নে নামিরার পানে তাকিয়ে বলে,

“মানে?;

“হ্যাঁ ভাইয়া। আমার মনে হচ্ছে, আমাদের সবার চোখের আড়ালে কোনো অ*ঘটন ঘটতে চলেছে। প্লিজ আপনি কিছু একটা করুন। প্লিজ!;

“তন্ময়, গাড়ি বের কর!;

নামিরার কথার জবাব না দিয়ে শ্রাবণ বজ্র কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল কথাটা। ওরা সবাই বাইক বের করলো যার যার। শ্রাবণ বাইক নিয়ে নামিরাকে উঠতে বলল তার সাথে। আরও দুটো বাইকে রফিক-তন্ময়, শাফিন আর হৃদয় উঠে পড়লো। শ্রাবণ বাইক স্টার্ট দিলো, যেদিকে ইশাদের রিক্সাটা গেলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে