ঠিক যেনো love story Part-03

0
1349

#ঠিক_যেনো_love_story
#03
#Esrat_jahan_Esha

৬.
পাঁচ থেকে ছয়দিনের মতো চলে গেলো সাফওয়ান হসপিটাল থেকে চলে যাবে অনেক বার রিমলির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারেনি। এখন পায়ে ব্যাথার কষ্টের থেকেও মনের মধ্যে তিব্র যন্ত্রণা যা প্রকাশ করার মত না৷
সামনের মাসেই ধুমধাম করে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো লুনার সাথে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সেটা কখনো খন্ডান যায় না। একদিন রিমলি আমাকে বলেছিলো।
খুব পস্তাবেন আপনি খুব! কোনো একদিন আমার পায়ের কাছেও আপনার স্থান হবে না। আমি কেনো যাদের কে এখন খুব প্রিয়জন মনে করছেন একদিন তাদের কাছেই বোঝা হবেন। আমাকে প্রয়োজনে আজ যেমন ব্যবহার করলেন কোনো একদিন আমাকে প্রয়োজন হলেও পাবেন না পাশে। তখন খুব চাইবেন জানেন তো খুব। এই যে রিমলি কে আজ আপনি আপনার যোগ্য না বলে অপমান করছেন সেই রিমলির সাথে যোগাযোগ করার জন্য ছটফট করবেন।
ঐদিন রিমলি খুব কেঁদেছিল তবে ওর চোখের জল আমার কাছে নিছক ন্যাকামি ছিলো।ওর কান্না দেখে সেদিন এক পৈশাচিক হাসি হেসেছিলাম। রিমলির কথা গুলো আজ সত্যি আমার উপর চড়াও হয়েছে আজ পাঁচ বছর পর সেইটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না সময় মতো ঠিকই পাপের হিসাব দিতে হয়।

সাফওয়ানের বোন রেশমি সাফওয়ান কে ডাক দিতেই সাফওয়ান চমকে উঠে।

— কিরে ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? তোর চোখে পানি কেনো? কোনো দিন তো তোকে কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখিনি।
— কিছুনা তোদের কতো কষ্ট দিচ্ছি। আমাকে নিয়ে তোদের সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করতে হয় খোরাই তো হয়ে গেলাম পা কেটে ফেললে আমি আর হাটঁতে পারব না।

রেশমি ভাইয়ের কষ্ট দেখে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠে একমাত্র ভাই খুব আদরে রেখেছে আজ ভাইয়ের মূখে এমন কথা শুনে রেশমির খুব ইচ্ছে করছে যদি কিডনির মতো পা ট্রান্সফার করা যেতো তাহলে নিজের পা টা দিয়ে ভাইকে সারিয়ে তুলত।

— ভাইয়া মন খারাপ করো না আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।আর হ্যা মন খারাপ করো না আব্বু তোমার জন্য কৃত্রিম পায়ের অর্ডার করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে তুমি আগের মত হাটতে পারবে। মন খারাপ করো না প্লিজ।

এখন সব গুছিয়ে নেও আমরা এখান থেকে অন্য হসপিটালে এডমিট নিবো আর সেখানে তোমার অপারেশন হবে আর কৃত্রিম পা বসানো হবে আব্বু সব ব্যবস্থা করেছে।

— বাবা সব ব্যবস্থা করেছে? বাবা না বলল আমাকে একদম ত্যাগ করে দিবেন। আমার সাথে কখনো যোগাযোগ করবে না।
— সবাইকে কি তোর মত ভাবিস? আর বাবা মা সন্তানের উপর কখনো রেগে থাকতে পারে না। যেদিন বাবা হবি ঐদিন বুঝবি। তুই এক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন বাবা আমার কাছে ফোন দিয়ে তোর কথা জিজ্ঞেস করত। আর এই যে যত খরচ সব আব্বুই বহন করছে। তুই কি ভাবছিস এসব আমার স্বামী দিয়েছে? কখনোই না সব বাবা দিয়েছি।
সাফওয়ান করুন দৃষ্টিতে রেশমির দিকে তাকিয়ে আছে। এতোদিন যাদের জ্বালিয়েছে আজ তারাই ওর পাশে ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে।
সাফওয়ান মনে মনে চিন্তা করছে আচ্ছা রিমলিও কি ফিরে আসবে? ওকে আসতেই হবে আমি জানি ওর আমার প্রতি রাগের পাহাড় জমে গেছে খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে ওর রাগ ভাংগাবো। যেভাবে হোক ওকে আবার ফিরিয়ে আনব৷ আনি জানি ও আমাকে এখনো ভালোবাসে বাকি জিবন বাঁচতে হলে ওকে আমার বড্ড প্রয়োজন। আর কখনো রিমলিকে কষ্ট দিবো না।

৭.
দেখো রিমলি এতো দিন তো হসপিটালে ছিলে কিন্তু এখন রিশাতের বাসায় ট্রিটমেন্ট নেওয়া দরকার।
— ওহহ স্যার তারমানে আমার কাজ শেষ? স্যার এতো তারাতারি শেষ হবে ভাবিতেই পারিনি।
— নাহ রিমলি শেষ না সবে তো শুরু তুমি রিশাতের বাসায় যাবে ওর এখানে কেউ নেই।
— স্যার এগুলো কি বলছেন? আপনার কি এই কথা বলতে একটুও মুখে বাঁধল না? আর কেউ নেই মানে কি? আপনি তো আছেন বন্ধু আপনার বাসায় নিয়ে গেলেই তো পারেন।
— আমার বাসায় নিতে পারলে তোমাকে বলতাম?
— স্যার আমি পারব না। আমার বেশি স্যালারীর দরকার নেই আমি যা পাই তাতেই খুশি। আমি ওনার বাসায় যেতে পারব না এটা সম্ভব না।
— কেনো সম্ভব না?
— স্যার আমি একজন অবিবাহিত মেয়ে। আর একটা মেয়ে এইভাবে অন্যের বাড়িতে থাকতে পারব না। কখনোই না এমন কি চাকরি গেলেও না।
— তোমার এতো ভয় কিসের রোগীর জন্য তুমি এইটুকু করতে পারবে না?
— সরি স্যার আমি পারব না আপনি অন্য কাউকে ঠিক করুন।
বলেই রিমলি সোজা হাটা শুরু করে। পিছন থেকে ডাক্তার সুনীল রিমলিকে ডেকে বলে মিস রিমলি আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য। আর আমি যা বলব তোমাকে শুনতে হবে। নাহলে তোমার অন্য রকম ক্ষতি করে দিবো।
— মানে স্যার?
— এতো মানে তোমার বুঝতে হবে না। তোমাকে যা বলছি তুমি তাই করবে রিশাতের জন্য না রুহামার জন্য তুমি যাবে যতদিন না রিশাতের হাত ঠিক হবে ততদিন রুহামার দায়িত্ব তোমার আর তুমি একলা মেয়ে নিজের ইজ্জতের ভয় পাচ্ছো তো যাও তোমার সেই ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব আমি নিলাম। ঐখানে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না আমি সব দায়ভার নিলাম। আর শোনো সোজা আংগুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল কিন্তু বাকা করতেই হবে।
— আচ্ছা স্যার আমাকে একদিনের ছুটি দিবেন? আমি সবটা ভেবে আপনাকে জানাব৷

ডাক্তার সুনিল কি যেনো ভেবে বলে আচ্ছা ঠিক আছে ভাবো তবে তোমাকে যেতে হবে এটা ফাইনাল আর সেটা কাল। আজ তুমি যেতে পারো এখন থেকে তোমার ছুটি শুরু হলো।
রিমলি ডাক্তার শুনিলের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে নিজের বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে।

কি করেছি আমি যার জন্য পদে পদে আমাকে এমন পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমি তো শুধু একটু সুন্দর আর স্বসম্মানে বাঁচতে চেয়েছি। তাও কেনো আমার অতীত আমার বর্তমান সব আমার সামনে সাপের মতো দাড়িয়েছে।

যতই সাফওয়ানকে আমি ইগ্নোর করি কিন্তু সত্যি তো এটাই আমি আজও ওকে ভালোবাসি। চেয়েছিলাম কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখব কিন্তু না তাও হচ্ছে না নতুন একটা পরিক্ষা আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। কেনো আমাকেই স্যারের বেছে নিতে হলো?

এদিকে রুহামা এদিক ওদিক বার বার তাকাচ্ছে অনেকক্ষণ হয়ে গেলে মামুনির কোনো দেখা নেই৷ রুহামা রিশাতকে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা বাবাই মামুনি কোথায়?

— আমি তো জানি না মা। আমি কল দিয়ে দেখছি।
রিশাত রিমলিকে ফোন দিলে ফোন সুইচ অফ পায়। একটু চিন্তায় পড়ে যায় হটাৎ ফোন অফ কেনো?
আচ্ছা সুনীল কে একটা ফোন দিয়ে দেখি৷

কিন্তু সুনীল কে ফোন দেওয়ার আগে সুনীল রিশাতের কেবিনে আসে।

—ওহহ দোস্ত তোকেই ফোন দিতে নিয়েছিলাম।
— কেনো কাউকে খুঁজছ?
—মানে? রিমলির ফোন অফ রুহামা ওকে খুজছে।
— মানে কিছুই না। রিমলি একদিনের ছুটি নিয়েছে। কাল সকালে আসবে ও। আর তোর সাথে তোর বাসায় যাবে তুই সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত রুহামার ও দেখাশুনা করবে।
— রাজি হয়েছে?
— নাহ প্রথমে রাজি হয়নি তবে পরে রাজি করতে বাধ্য করেছি। শোন তোর রুহামার জন্য ভাবতে হবে না তুই নিজের ভাবনা ভাব।
— নিজের আর কি ভাবব। আমার মেয়ে খুশি এতেই আমি খুশি।
— বিয়ে কি করবি না?
— দেখ বিয়ের কথা বাদ দে। পরীকে আমি অনেক ভালোবাসি তুই তো জানো আর ওর জায়গা কাউকে দিতে পারব না। আর বর্তমান মেয়েরা অন্যের মেয়ে মানুষ করতে চায় না। নিজের সুখের জন্য নিজের মেয়ের ক্ষতি হতে দিবো না। আমার মেয়ের বাবা মা আমি।
— ওকে তোর যা ইচ্ছে।
— আমি এখন যাই আমার রোগী দেখতে হবে। আর একটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আজকের জন্য তোর কাছে থাকবে।
— ওকে।

—সুনীল স্যার আপনি কি আমাকে ডেকে ছিলেন?
— হ্যা মিসেস রেবা আপনাকে ডেকেছিলাম রিমলির জন্যে।
— রিমলির জন্য কেনো স্যার ও কি কিছু করেছে?
— নাহ করেনি তবে আপনি তো রিমলির সাথেই থাকেন। ওকে রাতে একটু বুঝাবেন ওকে আমি যা বলেছি ও যেনো রাজি হয় অত্যন্ত এতিম মেয়েটার কথা ভেবে।
— ওকে স্যার আমি বাসায় গিয়ে বুঝিয়ে বলব।
— ওকে তাহলে এখন আসুন এর জন্যই আপনাকে ডেকেছিলাম।
— ওকে স্যার।

রিমলি সকালে হসপিটাল এসে প্রথমে ডাক্তার সুনীলের রুমে যায়,,,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে