ঠিক যেনো love story Part-08

0
1295

#ঠিক_যেনো_love_story
#08
#Esrat_jahan_Esha
১৫.
রিমলি ওর মায়ের কথা ভাবছে এভাবে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে? আমি তো কখনো মা হতে পারব না। একবার যদি ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারতাম তাহলে বিয়েটা ভেংগে দিতে পারতাম৷ কিন্তু আমার মায়ের জন্য তো সেটা কখনো সম্ভব হবে না উনি যা বলেন সেটাই করেন।
বাবা কে কি বলব বাবা সে নিজেই অসহায় ভেবেছি এবার নিজের মতো করে বাচঁব কিন্তু সেটাও হলো না।

— রিমলি কি ভাবছ কোনো সমস্যা?
— ন না স্যার কোনো সমস্যা না।
— তোমাকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
— না আসলে মানে আসলে স্যার।
—- কোনো সংকোচ রেখো না তুমি আমার কাছে বলতে পারো। রিশাত মনে মনে চিন্তা করে সাফওয়ানের সাথে সম্পর্ক ঠিক করার কথা বলবে রিমলি নাকি সাফওয়ান ওকে কোনো ভয় দেখিয়েছে।
—না মানে আসলে স্যার আমার মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন সামনের মাসের আট তারিখ পাঁচ তারিখ ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে বলেছেন।আপনার তো ৩ তারিখ হাতের ব্যান্ডিজ খুলে ফেলবে হাত ঠিক হয়ে যাবে। তার পরের দিন আমি বাড়িতে চলে যাবো।
— ওহহ আচ্ছা। তুমি কি বিয়েতে রাজি?
— আজ হোক কাল বিয়ে তো করতেই হবে আর আমার মা সে যা বলেন তাই করতে হবে না হলে সব প্রেশার আব্বুর উপর দিবে।
— ছেলে কি করে?
— পুলিশ।
— ওহহ! অভিনন্দন! দাওয়াত দিবে না?

রিমলি মুখে জোর পূর্বক হাসি এনে বলে হ্যা স্যার অবশ্যই যাবেন। আপনি গেলে খুব খুশি হবো।
— আমি তোমাকে বিয়ে উপলক্ষে একটা গিফট পাঠাবো আমার মনে হয় যাওয়া হবে না।

(জানতাম আপনি যাবেন না শুধু ঢং করেন গরীবের বাড়ি কি হাতির পা পরে)
— কি বিরবির করছ?
রিমলি জিভ কেটে বলে না স্যার কিছুনা। আমি রুহামার ঘরে গেলাম।

রিশাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মন খারাপ করে বসে পড়ে কিন্তু এই মন খারাপের কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না তবে মনে হচ্ছে মনে খুব হাহাকার কাজ করছে। আচ্ছা রিমলি বিয়েটা না করলেই তো,,,, না এগুলো কি ভাবছি ওর তো ভবিষ্যৎ আছে ওর সংসার হবে দোয়া রাখি ওর সুন্দর একটা জিবন হোক মেয়েটা অনেক কষ্ট আর প্রতিকূলতার মাঝে বড় হয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে রিশাত মুচকি একটা হাসি দেয়।
,,,,,

সাফওয়ান আজও প্লান করে রিমলির জন্য গোলাপ পাঠাবে যেই ভাবা সেই কাজ রিমন কে দিয়ে আজকেও ৩০টি গোলাপ আর একটা চিরকুট পাঠায়। রিমন আজকেও দরজায় বেল দিয়ে ফুল আর চিরকুট রেখে যায়।
রিমলি দরজা খুলে ফুল গুলো দেখে রাগে কটমট করছে। কি পেয়েছে শয়তানটা লজ্জা শরম বলতে কি ওর কিছু নাই? এতো অপমান করার পরও আবার আজকে ফুল পাঠিয়েছে এই ফুল আমি ঘরেই তুলব না।
ফুল গুলো ফেলে দিবে এর মধ্যে রুহামার চোখে পড়ে রুহামা ফুল গুলো দেখে সাথে সাথে রিমলির হাত থেকে নিয়ে বলে আজকেও ফুল। আচ্ছা মামুনি এই ফুল প্রতিদিন কে পাঠায়?
— জানিনা। ফুল গুলো আমাকে দেও ফেলে দিবো।
— নাহ এগুলো দিয়ে আমি খেলব। কাউকে দিবো না।
রিমলি ভাবে ফেলে কি করব তারচেয়ে রুহামা খেলুক এখন ফুল নিয়ে গেলে আবার কান্নাকাটি শুরু করবে। ফুল গুলো ছিড়ে ছিড়ে সারা ঘর তুমি নষ্ট করো এগুলো আমাকে আবার পরিস্কার করতে হয়৷
— যাও মামুনি আমি সব পরিস্কার করব।
— এহহহ আসছে আমার কাজ করনী,
—দেখে নিও আমি তোমার থেকে ভালোভাবে ঝাড়ু দিবো। তুমি যেইভাবে দেও।
— হুমম সবকিছুতে আমাকে কপি করা তাই না।

রিশাত রুহামার হাতে ফুল দেখে জিজ্ঞেস করে এগুলো আজকেও কি তোমার প্রাক্তন পাঠিয়েছে?
— হুমম স্যার। কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
— কালকে একটা চিরকুট পেয়েছিলাম৷
( ওহহ তাহলে কালকে আমার চিরকুট টা রুহামা না আপনি ছেড়ে টুকরো টুকরো করেছেন কিন্তু কেনো)
— কি বিরবির করছ আবার?
— না মানে স্যার চিরকুট টা আপনি ছিড়ে ছিলেন?
রিশাত রিমলির এমন প্রশ্ন শুনে একটু বিব্রত হয়। আসলেই তো রাতে আমি চিরকুট টা ছিড়ে ফেলে ছিলাম কিন্তু কেনো এমনটা করছিলাম আমি তো নিজেও জানি না।
না মানে আসলে।
— আচ্ছা স্যার বাদ দেন ঐ চিরকুট নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই৷ আচ্ছা স্যার রুহামা দেখতে কার মতো হয়েছে আপনার মতো নাকি পরী ম্যাডামের মতো?
— চেহারার গঠন কিছুটা আমার মতো কিন্তু গায়ের রং তোমার পরী মেডামের মতো লাল ফর্সা।
— ওহহ৷ তবে স্যার যাই যা বলেন কালোর মধ্যে কিন্তু আপনার চেহারার গঠন খুবই সুন্দর। আমার কাছে আপনার চেহারাটা ভালো লাগে।

রিশাত কাশি দিয়েএকটু নড়েচড়ে দাড়ায় হয়েছে হয়েছে রান্না করবে না?
— হ্যা স্যার এখনি যাবো।
— ওকে চলো তুমি রান্না করবে আমি আর রুহামা পাশে বসে তোমাকে সঙ্গ দিবো তাহলো তোমার কাজ করতে ভালো লাগবে। আমার একা একা শুয়ে থাকতে বোরিং লাগে।
— ওকে স্যার চলুন।

১৬.
থানায় বসে রোহান রিমলির ছবি দেখছে এমন সময় রোহানের ফ্রেন্ড অনি জিজ্ঞেস করে কিরে তোর নাকি আবার বিয়ে ঠিক হয়েছে তা ভাবিকে দেখাবি না?
— হুমম এই দেখ কেমন?
— ছবি দেখে মনে হচ্ছে নার্স?
— হ্যা একটা বেসরকারি হসপিটালে জব করে। দেখতেও মোটামুটি ভালো।
— হুমম ছবিতে তো ভালোই মনে হচ্ছে তবে তুই কি সামনা সামনি দেখেছিস?
— নাহ দেখেনি দেখতে শুনতে ভালো শুনেছি। জব করে এটাই বেশি পছন্দ।
—ওহহ তাহলে তুই জব দেখে পছন্দ করেছিস?
— হুমম।
—কিন্তু তোকে একটা কথা না বললেই নয় চরিত্র টা একটু পাল্টা নাহলে আলিশা ভাবির মতো নতুন ভাবিও চলে যাবে।
—আরে ব্রো চিল নেও চিল চরিত্র নিয়ে কথা বলিস না কয়দিন একটু ফুর্তি করি।
— মানে কি রোহান তোর একটুও লজ্জা করে না নিজের প্রতি ঘৃনা আসে না? এগুলো কি ঠিক? তুই সব মেয়েদের সাথেই রিলেশনে যাও দুদিন পর আবার ছেড়ে দেও এমন একটা অবস্থা হবে যে তোর পাশে কেউ থাকবে না। তারপর এই ঘুষ নেও এটা কি ঠিক? বার্ধক্য বয়সে যখন পৌছাবি তখন নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী লাগবে কাউকে পাশে পাবি না আল্লাহর তরফ থেকে নেমে আসবে অভিশাপ।
— আরে ভাই থাম তো লেকচার দিস না। কিছু হবে না দেখ আলিশা চলে গেছে তাতে কি আলিশার চেয়ে ভালো কেউ জিবনে আসতে চলেছে। জিবন একটাই সেটা উপভোগ করছি।
—এই ভাবে উপভোগ এখন একটু ভালো হ রে ভাই। এসব ভালো না এই আনন্দ ফুর্তি একদিন ধুলোর সাথে মিশে যাবে কবরে শুধু নেক আমল টুকু যাবে। বাদ দে এগুলো পরকালের চিন্তা কর একটু।

হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াকে মহব্বত করল সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। আর যে ব্যক্তি পরকালকে মহব্বত করল সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর চিরস্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দাও। (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত)

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তোমরা জেনে রেখ, এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক, চাকচিক্য, সৌন্দর্য, তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক আত্মশ্লাঘা এবং ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর দৃষ্টান্ত বারিধারার ন্যায় যার দ্বারা উৎপাদিত শাক-সবজি কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা পরিপক্ক হয় এবং তুমি তাকে হলুদবর্ণ দেখতে পাও, যা অবশেষে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং সন্তুষ্টি। এই পার্থিব জীবন সাময়িক ছলনাময়ী ভোগ-বস্তু ব্যতিরেকে কিছু নয়।’ (সুরা আল হাদিদ, আয়াত: ২০)।

অথচ আজ আমরা পার্থিব জীবনের জন্যই যখন যা ইচ্ছে তা করে যাচ্ছি।

পার্থিব জীবন প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হজরত রাসুল (সা.)-এর খিদমতে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষেরাও আমাকে ভালবাসবে।

তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়া ত্যাগ কর, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষের কাছে যা আছে, তার প্রতি লালসা করো না, তবে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে। (মেশকাত, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

আমরা যদি আল্লাহতায়ালার ইবাদত ভুলে দুনিয়ার লোভ-লালসায় মজে থাকি তবে কি করে আমরা পরকালের শান্তি ভোগ করবো?

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন- একজন মুমিনের জন্য ইহকাল কয়েদখানা ও অবিশ্বাসীর জন্য জান্নাত। (মুসলিম)

মুমিন ব্যক্তির কাছে এই দুনিয়াটা বন্দিখানার ন্যায়, কারণ সে কোন কাজ করার আগে ভেবে নেয় এতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা। তাই সে সব সময় সঠিক পথে চলার চেষ্টা এবং আল্লাহর ইবাদতে মত্ত থেকে পরকালের সুখময় জীবন কামনা করে।

আর দুনিয়ার পাপীষ্ঠ লোকেরা পাপ কাজ করার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারা মনেই করে না পরকালের কথা, যার ফলে তারা যত প্রকার খারাবি আছে সবই করে যায় নির্ভয়ে।

এরা খারাপ কাজ করেই ক্ষ্যান্ত হয়না বরং তারা পৃথিবীকে সারা জীবনের আবাসস্থল ভেবে এই পৃথিবীর মোহে আকৃষ্ট থাকে।

দুনিয়াদাররা আল্লাহতায়ালাকে ভয় করবে তো দূরের কথা, আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে নিয়েও তামাশায় মেতেছে। তাদের কাছে পার্থিব জগতটাই সব, পরকাল নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই।
অথচ তারা একবারের জন্যও ভাবে না যে, বিশ্বময় মহামারি করোনার কাছে সম্পদশালী দেশও আজ নিরূপায়। তাদের অর্থের দম্ভ আর বাহ্যিকতার আজ কোনই মূল্য নেই।

তাই আমরা যদি এই ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের মায়া ত্যাগ করে, একবার পরকালের চিন্তা করে কাজ করি তাহলে হয়তো নিজে এবং আমাদের পরিবারগুলোকে পরকালের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করতে পারব।
কেননা এ দুনিয়া হচ্ছে পরকালের সঞ্চয় জমানোর স্থান। আমরা যত ভালো কাজ করবো পরকালে আমাদের পাল্লা ততই ভারী হবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, দুনিয়া পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। আর পরকাল সামনে চলে আসছে। (মানুষের অন্তরে) এ দু’টির প্রতিটিরই রয়েছে প্রবল আসক্তি।

সুতরাং তোমরা পরকালের প্রতি আসক্ত হও। দুনিয়ায় আসক্ত হইও না। কারণ এখন (দুনিয়া) আমলের সময়; কিন্তু (কোনো) হিসাব নেই। আর আগামীকাল (পরকাল) হবে হিসাবের; সেখানে আমল করার (কোনো) সুযোগ নেই। (বোখারি)

তাই , পার্থিব ভোগবিলাসে মত্ত না হয়ে পরকালের কথা স্মরণ করে যাবতীয় মন্দ কাজ পরিহার করি আর সৎপথে জীবন যাপন করার চেষ্টা করি।

— তোর লেকচার শেষ হলে এখান থেকে দূর হ। বন্ধু বন্ধুর মতো থাক তুই তোর নিজের চিন্তা কর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আট তারিখ আমার বিয়ে পারলে খেতে আসিস। আর যদি বিয়ে খেতে আসতে বিবেকে বাঁধা দেয় তাহলে আসিস না।বলেই রোহান অনির কাছ থেকে উঠে যায়।

অনি হা করে তাকিয়ে আছে কেমন শক্ত এতো বুঝালাম তাও বুঝল না। ভুল বুঝে চলে গেলো।

,,,,,
সাফওয়ানের কথা মতো রিমন প্রতিদিন ফুল দিয়ে যেতো। রিশাত কয়েক দিনে প্রচুর বিরক্ত রিশাত নিচে গিয়ে দারোয়ান কে বলে আসে যদি কেউ গেলাপ নিয়ে ভিতরে আসার চেষ্টা করে তাকে যেনো কোনো ভাবেই ভিতরে ঢুকতে না দেওয়া হয়।
দারওয়ান রিশাতের কথা মতো রিমনকে আর বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি।

রিমন সাফওয়ান কে বলে আসে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি হয়ত দারোয়ান কে মানা করে দিয়েছে।
— আচ্ছা তোকে আর যেতে হবে না। আর কয়টা দিন তো রিমলির সাথে সামনাসামনি আমি নিজে গিয়ে কথা বলব।

এদিকে রিশাত মনে মনে খুব খুশি ২ দিন ধরে ফুল আসে না। রিশাত রিমলিকে পরিক্ষা করার জন্য রিমলিকে ডেকে প্রশ্ন করে আচ্ছা রিমলি এখন তো দেখছি আর কেউ ফুল পাঠাচ্ছে না কিছু হয়েছে? নাকি ভালোবাসা কমে গেছে?

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে