ঝগড়াটে_ভালোবাসা _পর্ব_১

0
6937

ঝগড়াটে_ভালোবাসা
_পর্ব_১
Written by Avantika Anh
শুভ : শুন আমি তোকে বিয়ে করবো ।
আমি : আমি তোকে বিয়েই করবো না ।
শুভ : আমি তোকেই আমার বউ বানায় আমার পা টিপাবো তোকে দিয়ে ।
আমি : আমি বিয়ে করবো না
শুভ : করবি না ?
আমি : না
.
শুভ আমার হাতে কামড় বসিয়ে দিলো আর আমি কাঁদতে কাঁদতে চলে আসলাম বাইরের ঘরে ।
.
আমি : খালামনিইইইই
খালা : কি ?
আমি : শুভ ভাইয়া আমাকে কামড়াইছে ।
খালা : কেনো রে শুভ? (শুভ এর কান ধরে)
আমি : আমি বলছি আমি ওকে বিয়ে করবো না তাই ।
.
আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসা শুরু করে দিলো ।
খালা : কি রে এতো টুকু বয়সে বিয়ের প্লান । আগে বড় হ
শুভ : কিন্তু আমি আনহা কেই বিয়ে করবো
আমি : আমি করবো না
.
বলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম । এই কথা টি হয়েছিলো ১৫ বছর আগে । আমার বয়স ছিলো ৫ বছর আর শুভ ভাইয়ার ৮ বছর ।
.
সেই সময় টা হয়তো মজা ভেবেই সবাই উড়িয়ে দিয়েছিলো নাকি সত্যি জানা ছিলো না । সেই বছর রোড এক্সিডেন্টে আমার মা মারা যায় । বছর দুই এক পর যা হবার সৎ মা আসে । খারাপ ব্যবহার করে নি কিন্তু ওতো ভালো ব্যবহারও তার কাছে পাই নি । আম্মুরা দুই বোন ছিলো । তারপর খালু হয়ে যায় আব্বুর মতো আর খালামনি আম্মু । তাদের ভালোবাসায় কমতি পেতাম না । কিন্তু আব্বুর প্রতি এক ঘৃণা জন্ম নিলো । খুব বেশি একটা কথা হতো না ।
.
আমি আজ মামনির (খালা) বাড়ি গেলাম ।
.
আমি : আমি এসে গেছি ।
মামনি : বস বস
আমি : খালু কই?
মামনি : তোর জন্য দই আনতে গেছে ।
আমি : কি দরকার ?
মামনি : চুপ থাক তো । পড়া কেমন হচ্ছে ?
আমি : ভালোই বাট একটু প্রব্লেম হচ্ছে প্রাইভেট পড়বো মে বি ।
মামনি : শুভ আছে না ও ই পড়াবে ।
আমি : কিন্তু‌
মামনি : কোনো কিন্তু না রাতে আমি ওকে বলে দিবো ।
পরের দিন….
ঘুমাচ্ছিলাম । আমার উপর পানি ফেললো ।
চোখ খুলে দেখি শুভ ভাইয়া ।
আমি : শয়তান , ইঁদুর , বিলাই এটা কি করলি?
শুভ : আর কতো ঘুমাবি মটু হচ্ছিস তো ।
আমি : বললেই হলো
শুভ : হ এতো মোটা হইলে তো তোর বর তোরে তুলতেই পারবে না
আমি : তুই নিজের বউ এর কথা ভাব ভাগ এখান থেকে ।
শুভ : উঠে পড় আজ থেকে আমার কাছে পড়বি । পড়া না পারলে পিডানি খাবি ।
আমি : পিটা খালি তোরে আমি ছাড়ুম না
শুভ : ওলে ওলে যা রেডি হ
আমি : রেডি হয়ে কই যাবো ?
শুভ : বিয়ে করতে
আমি : কি
শুভ : সকাল সকাল মানুষ কই যায় ? কলেজ , স্কুল , ভার্সিটি বা অফিস ।
আমি : আমার কলেজ তো অফ আছে ।
শুভ : আমার ভার্সিটি তো খোলা । চল ঘুরতে যাবি ।
আমি : তোর সাথে যাবোই না রাক্ষস
শুভ : যাবি তুই তোর ঘাড় যাবে । এখনি রেডি হ নইলে কাতুকুতু
আমি : না
শুভ : দাড়া রে ।
আমি : না
.
বইলা দৌড় । শুভ ভাইয়ার ভরসা নাই কখন যে কি কইরা ফেলে ।
.
রেডি হয়ে…
আমি আসতে আসতে নামতেছি । পিছন থেইকা
শুভ : বাছাধন আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাইতে পারবে না ।
.
.
হঠাৎ পিছন থেকে এমন কথা শুইনা আমি পড়ে যেতে ধরলাম । কিন্তু কে জানি হাত টা ধরে ফেললো ।
.
শুভ ভাইয়া হাত ধরেছিলো । টেনে তুললো ।
শুভ : বাহ আজকাল তো পড়তে পড়তে চলিস
আমি : তোর জন্য তো
শুভ : মটু হচ্ছিস যে তাই
আমি : হুহ হই নি
শুভ : হচ্ছিস । খাওয়া কমা ।
আমি : মামনি দেখো তো আমাকে মটু বলছে
মামনি : ওই শুভ মার খাবি
শুভ : না আমি ভার্সিটি যাবো আনহা কে নিয়ে
মামনি : হুম যা ঘুরিয়ে আন ।
শুভ : হুম ।
.
কোনো উপায় নাই যেতেই হবে । খাবার টেবিলে ।
শুভ : বসে আছিস কাজ করিস না কেন ? যা আমার জন্য পানি আন ।
আমি : তোকে আমি দেখে নিবো । ( আস্তে বললাম কেউ শুনলো না )
.

পানি আনলাম কিন্তু লবণ দিয়ে ।
.
শুভ পানি খেয়ে কাশি দিতে লাগলো
মামনি : কি হইলো
শুভ : না কিছু না ( একটু লুক দিয়া আমার দিকে তাকাইলো । কারণ সে জানে এটা আমার ছাড়া আর কারো কাজ না )
মামনি : খা
.
খাওয়া শেষে আমি আর শুভ ভাইয়া বের হলাম ।
শুভ : চল বাইকে যাই ।
আমি : না অটো নে
শুভ : আরে ন্যাকামি করিস কেন ? তোর বফ দেখবে না ।
আমি : বফ নাই আমার
শুভ : জানি তো (আস্তে )
আমি : কি
শুভ : চুপচাপ চল
আমি : হুহ
.
চুপচাপ বসলাম । একটু হলেও ওরে আমি ভয় পাই তাই বসলাম ।
.
ভার্সিটি তে….
সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমি এলিয়েন । কিছু মানুষ তো আমাদের কাপল ভাবতেছে ।
.
কিছু মানুষ আসলো ।
একজন : কি রে ভাবি নাকি ?
শুভ : আরে না খালাতো বোন
একজন : তো ভাবি হতে কতক্ষণ ?
.
আমি রেগে শুভ ভাইয়ার দিকে তাকালাম । সে বুঝতে পেরে ।
শুভ : ওই মজা করিস না ডাইনি টা রেগে যাবে ।
এক আপু : আরে রাগবে কেনো ? আপি তুমি মাইন্ড করো না এরা এমনি ফাজিল ।
আমি : না ব্যাপার না ।
শুভ : দোস্ত চল আজ নদীর পাড়ে যাই ।
একজন : কিন্তু ক্লাস ?
শুভ : আরে ছাড় তো একদিন না করলে কিছুই হবে না ।‌ আনহাকে নিয়ে আজ প্রথম ভার্সিটি আসলাম । ও তো আসতেই চায় না । না ঘুরিয়ে আমি ছাড়বো না ।
সবাই : আচ্ছা চল ।
.
সেখানে সবাই গল্পে ব্যস্ত ছিলো । আমার একটু একা একা মনে হলো । পাশে একটু দূরে একটি ফুল গাছ দেখতে পেলাম । ভাবলাম নিয়ে আসি এরা গল্প করুক । যেই ভাবা সেই কাজ ।
.
আমি যেয়ে ফুল পাড়ানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু আমার হাতের নাগালের একটু দূরে হওয়ায় পারছিলাম না । হঠাৎ পড়ে যেতে ধরলাম কিন্তু কে জানি ধরে ফেললো ।
.
শুভ : না বলে এলি কেনো ? এখনি পড়লে কি হতো তোর । এতো কেয়ারলেস কেনো তুই ।
আমি : সরি
শুভ : কি সরি ফুল ছিঁড়তেও তো পারিস না পিচ্চি মেয়ে ।
.
শুভ ভাইয়া ফুল টা ছিড়ে দিলো আমাকে ।
আমি ফুল পেয়ে হাসি দিয়ে….
আমি : থেংকু রে
শুভ : পিচ্চি মেয়ে
আমি : না আমি পিচ্চি না
শুভ : তা কি বুড়ি ?
আমি : না আমি বুড়িও না
শুভ : আগে সিওর হ তুই কি ?
আমি : হুহ
.
.
হঠাৎ পিছন থেকে শুভ ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড এলো ।
সে : কি রে আমাদের ছেড়ে এখানে কি করো তোমরা ?
শুভ : ফুল ছিঁড়ি
সে : তাই নাকি
শুভ : হুম চল তো
সে : কথা ঘুরানো হচ্ছে
শুভ : মার খাবি ?
সে : না
.
আমরা সেদিন ঘুরে বাড়ি ফিরছিলাম ।
আমি : বাইক থামা
.
বাইক থামিয়ে…..
.
শুভ : কি হলো ?
আমি : আইসক্রিম কিনে দে না
শুভ :‌ কুত্তি আইসক্রিমের জন্য বাইক থামাইলি
আমি : হুম দে না
শুভ : যা ভাগ দিবো না
আমি : দে না
শুভ : না
আমি : আচ্ছা
.
মন খারাপ করে চুপ হয়ে গেলাম । কিন্তু শুভ ভাইয়া গিয়ে আইসক্রিম আনলো ।
শুভ : যা নে তুই ও কি মনে রাখবি কোন দয়ালু আমি
আমি : থেংকু হিহি
শুভ : ওই দুইটায় কেন মুখ দিলি
আমি : ও দুইটা আমার না ?
শুভ : হালি আমি খাবো না ?
আমি : ও নে এটা খা
শুভ : মুখ লাগায় কইতাছিস এটা খা
আমি : হিহি তাইলে আমিই খাইলাম দুইটাই ।
শুভ : না দে আমি খাবো
আমি : এমা তুই আমার এটো খাইলি ।
শুভ : ব্যাপার না
.
চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে