জীবন সঙ্গী ৮ম পার্ট

0
1989

জীবন সঙ্গী ৮ম পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

ঘুম ঘুম চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রশ্ন করল তাসপিয়া —- কি বেপার তুমি এভাবে হাসতেছ কেন?
নিলয় হেসে বলল—- তুমি যে এত ঘুমকাতুরে মেয়ে আমি জানতাম না।সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকতেছি আর তুমি তো সেই গভীর ঘুমে মগ্ন,এত করে ডাকার পর এখন বুঝি তোমার ঘুম ভাঙল।
তাসপিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।
—- এই যে লজ্জাবতী, আর লজ্জা পেতে হবে না।আমি কিন্তু মজা করেই বলছি।এখন উঠে পড়তো।
—– এখনি উঠব কেন?
—– আরে ঘুমানোর আগে তুমিই না বললে যে,তাহাজ্জুদ নামাজ পরবে,তাই তো ডেকে দিলাম।
—- হুম,কিন্তু তুমি জেগে গেলে কি করে?
—- মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম।
এখন বেশি কথা না বলে উঠে পর,অজু করতে হবে।
তাসপিয়া কোন কথা না বলে ঊঠে পরে।
—– আচ্ছা,আমাকে কিছুটা অজুর পানি দিবে?
তাসপিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে—-কেন,তুমিও কি অজু করে নামাজ পরবে নাকি?
—– হুম চাইছিলাম তো।এখন যে অবস্থা,তাতে তো বেড থেকে উঠাই দায়।
—– ওও,কিন্তু অজু করতে তো বাহিরে যেতে হবে।এই বেডের অপর পাশেই পানির টেপ আছে,সেখানে যেতে হবে অজু করতে।এখানে তো পানিও নেই আর এখানে অজু করাও সম্ভব না।
—- হুম,কিন্তু বাহিরে যাবে এত রাতে।যদি কোন ক্ষতি হয়ে তোমার,আমিতো এখন পঙ্গু।
তাসপিয়া রাগি কন্ঠে বলল—— এই চুপ করেন তো,কি সব আবোলতাবোল বলছেন।নিজেকে নিজের কাছে কেন ছোট করছেন।হয়তো এটাই আপনার জন্য মঙ্গল জনক তাই আজ এই অবস্থা।আর আল্লাহর রহমতে তেমন কিছুই হবে না আমার,এত রাতে কেওই হয়তো জেগে নেই।
আপনি এখানে থাকুন,আমি অজু করে এসে আপনাকে অজু করার জন্য নিয়ে যাব।
—-আচ্ছা,তবুও উড়না দিয়ে যথাযম্ভব সমস্থ শরীর ডেকে পর্দার মাঝে থাকবে। আমি চাইনা আমি ব্যতিত অন্য কোন পরপুরুষ তোমাকে দেখুক।
—– হুম, কেওই দেখবে না ইনশাল্লাহ।আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি অজু আসতেছি।
নিলয় হেসে বলল—- তোমার মতন জীবনসঙ্গীর জন্য একটু কেন,সারাজীবন অপেক্ষা করতেও আমি রাজি আছি।
তাসপিয়া মুচকি হেসে যথাযম্ভব উড়না দিয়ে নিজেকে পর্দাবৃত করে অজুর উদ্দেশ্যে বাহিরে চলে গেল।

মিনিট পাচেক পরে তাসপিয়া এসে আস্তে আস্তে নিলয়কে বেডে থেকে নামিয়ে এক হাত দিয়ে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে আরেকহাত দিয়ে নিলয়ের এক হাত জরিয়ে ধরে আস্তে আস্তে হেটে বাহিরে চলে গেল।
……

অজু শেষে দুজন বেডে আসলে, দুজন একসাথে কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে লাগল।কারন,তারা জানে যে ব্যক্তি প্রত্যহ অজুর পরে কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের ৮ টি দরজাই খুলে যাবে,উক্ত ব্যক্তি যে কোন দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
তাসপিয়া একটা চেয়ার টেনে নিলয়কে বসিয়ে দিল।
কারন,নিলয় দাঁড়িয়ে নামাজ পরতে পারবে না।।
অতঃপর দুজন নামাজ শেষ করে কিছুক্ষন গল্প করার পরপরই ফজরের আজান দিয়ে দিলে দুজন ফজরের নামাজ পরে নেয়।
নামাজ শেষে তাসপিয়া নিলয়কে আকড়ে ধরে বেডে আধশোয়া করে দেয়।
তারপর নিলয়ের আঙ্গুলের কড় গুনে আস্তে দোয়া দরুদ ও জিকির পাঠ করতে থাকে।তা দেখে নিলয় জিজ্ঞেস করে— আচ্ছা তাসপিয়া, তুমি তোমার হাত রেখে আমার হাতের কড়গুনে দোয়া দরুদ,জিকির পাঠ করছ কেন?
—– কারন,আমি চাই আমি দোয়া দরুদ,জিকির পাঠ করে যা সওয়াব পাব তুমিও সেই সওয়াবের অংশীদার থাক।
এখন কথা না বলে একটু ঘুমাও তো,রাতে তেমন ঘুম হয়নি।
—– তুমি ঘুমাবে না?
—– না,কিছুক্ষন পরই সকাল হয়ে যাবে।তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নিলয় তাসপিয়ার কপালে চুমু দিয়ে তাসপিয়ার এক হাত আগলে ধরে ঘুমিয়ে পরল।তাসপিয়া নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিলয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে লাগল।
……

সকালে নিলয়ের মা ও তাসপিয়ার পরিবারের সবাই হাসপাতালে এল।
ডাক্তার নিলয়কে একটা ইনজেকশন দিয়ে বললেন—আর দুই তিনদিন পরই নিলয়কে বাসায় রিলিজ করানো যাবে।কিন্তু নিলয়ের পা আবার আগের মতন সুস্থ হয়ে যাবে কি না সে বেপারে ডাক্তার তেমন কিছুই বলল না।
………
…..

আজকে নিলয়ের রিলিজের দিন।তাসপিয়া সকাল থেকেই প্রয়োজনীয় সকল কিছুই গুছিয়ে রেখেছে।নিলয়ের এক্সিডেন্ট এর দিন থেকে আজ এপর্যন্ত প্রতিদিন প্রতিটি সময় তাসপিয়া নিলয়ের কাছে ছিল।সময় মত খাবার খাওয়ানো, ঔষধ খাওয়ানো,নিলয়ের যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজ সবই তাসপিয়া নিজ হাতে করে দিয়েছে।
সকাল সকাল সবকিছু গুছিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে তাসপিয়া।
আজ সে প্রথম তার স্বামীর বাসায় যাবে,তার কারনে অনেকটা আগ্রহের সাথেই প্রয়োজনীয় কাজগুলা করে রেখেছে সে।আজ নিলয়ের বাসায় যাবে বলে মনের মধ্য অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে।
……

সকাল ১০টার দিকে নিলয়ের মা ও তাসপিয়ার পরিবারের সবাই হাসপাতালে উপস্থিত হলে, তাসপিয়ার মা বাবা আর বড় ভাই তাসপিয়া আর নিলয়ের জন্য দোয়া করে চলে গেলেন।
তারপরই তাসপিয়া রওনা দেয় তার স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সারারাস্তায় নিলয় তাসপিয়ার হাত জড়িয়ে ধরে রেখেছিল।একটিবার
ের জন্যও কোনভাবেই হাত ছাড়েনি নিলয়।
………
……

এখন নিলয়ের বাসায়ই আছে তাসপিয়া।নিলয়ের অফিসের দেখাশোনা তার মা করে আর নিলয় বাড়িতে বসেই বিভিন্ন ভাবে মাকে অফিসের কাজে সহয়তা করে।
আজ সকালে তাসপিয়া নিলয়ের জন্য গরম স্যুপ করে নিয়ে রুমে এসেছে।
কারন কয়েকদিন ধরে নিলয়ের শরীর তেমন ভালো নেই।
নিলয় খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর তাসপিয়া নিজ হাতে নিলয়কে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে।
—– তাসপিয়া, আমি মনে হয় তোমাকে সুখী করতে পারলাম না,হঠাৎ করে আমার এমন দুর্ঘটনা তোমার সকল সুখের দিনগুলি কেড়ে নিল।তোমার তো কত স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে হয়তো এখনো তা পূরন করতে পার নি, আমার হাত ধরে তো তোমার স্বপ্নগুলি পূরন করার কথা ছিল,কিন্তু আজ তা অপূর্নই রয়ে গেল।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
আমি যে তোমার সকল স্বপ্ন সুখ কেড়ে নিয়েছি।
তাসপিয়া স্যুপের বাটিটা খাটের এক কোনে রেখে নিলয়ের বুকে মাথা রাখল,নিলয়ও এক হাতে তাসপিয়াকে জরিয়ে নিল তার বুকে।
তাসপিয়া বলল—- এত বাজে কেন আপনি?শুধু শুধু এগুলা বলে নিজেও কষ্ট পান আর আমাকেও কষ্ট দেন।আমি আপনার কাছে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী হতে পেরেছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে পরীক্ষা নিচ্ছেন।আল্লাহ চাইলে ইনশাল্লাহ আপনার পা ভাল হয়ে যাবে,আপনি আবার আগের মতন হাটতে পারবেন।পা ভাল হয়ে গেলে তো তখন আর আমাকে আপনার প্রয়োজন পরবে না।তারচেয়ে এখনি ভাল আছি।এখন আপনার পাশে থেকে আপনার সেবা করতে পারছি এতেই আমি খুশি।
নিলয় তাসপিয়ার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল—- কে বলছে তোমাকে আমার প্রয়োজন পরবে না।তোমাকে আমার সারাক্ষন প্রয়োজন, প্রতিটি মুহুর্তে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমাকে,শুধু তোমাকেই চাই,সত্যি আমি তোমার মতন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে অনেক সুখী। তাইতো প্রতিটি মুনাজাতে তোমাকে পরকালের সঙ্গী করে পাওয়ার জন্য দোয়া করি।
নিলয় তাসপিয়ার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে আবার বলল—- তুমি কি আমার ইহকালের পাশাপাশি পরকালের সঙ্গী হবে,আমার সুখ দুঃখের ভাগীদার হবে,আমার জোৎনা রাতের চাঁদ হবে,কোন এক ঝড়ের রাতের বৃষ্টি হবে,আমার ভালবাসার রাজ্যের রাণী হবে,আমার আদর্শ স্ত্রী হিসেবে আমার জীবনসঙ্গী হবে?
তাসপিয়া মুচকি হেসে নিলয়ের বুকে মাথা রেখে বলল— হুম হব।তোমার সব কিছুই আমি হব।তুমি শুধু আমাকে ভালবেসে তোমার সেবা করতে দিও, যাতে করে আমি তোমার আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ জীবনসঙ্গী হতে পারি সেই অধিকার টুকুই দিও আর আমার পরকালের সঙ্গী হইয়ো আমি আর কিছুই চাইনা।
—–যথা আজ্ঞা মহারাণী , আপনি যেমন চাইবেন আমিও ইনশাল্লাহ তেমনি ভালবাসা দেওয়ার চেষ্টা করব।
—- হুম,আর কখনওই নিজের অসুস্থতা নিয়ে বাজে কিছু বলবে না।আল্লাহ যে এক্সিডেন্ট থেকে বাচিয়ে তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এতেই আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ তায়ালা বলেন— দুঃখ করো না,আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন(সূরা তাওবাহ–৪০)
,
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন—-যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করেন,তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন(সূরা ত্বালাক–৩)তাই আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—– হয়তো তোমরা কোন একটি বিষয় পছন্দ কর,যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর না।আবার একটি বিষয় অপছন্দ কর, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আসলে,আল্লাহই জানেন আর তোমরা জান না(সূরা বাকারা–২:২১৬)
এই এক্সিডেন্ট টা আমাদের অপছন্দ মনে হলেও এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর।
আল্লাহ তায়ালা বলেন— আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না।আর যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস পূষন করে,তিনি তার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন(সূরা তাগাবুন–১১)
সুতরাং এই বিপদটা আল্লাহর হুকুমেই এসেছে।তাই আমাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস পূষন করতে হবে,তাহলেই আল্লাহ আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন— তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইয়ো না,নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত কেও
নিরাশ হয় না(সূরা ইউসুফ –১২/৮৭)
আপনি যে বেচে আছেন এটাও আল্লাহর রহমতে, তাই এই সামান্য দুর্ঘটনা নিয়ে নিরাশ হলে চলবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—- তোমরা সবর(ধৈর্য)কর নিশ্চয় শুভ পরিনাম মুত্তাকীদের জন্য(সূরা হুদ–৪৯)
তাই আমাদের ধৈর্য ধারন করতে হবে,কেননা ধৈর্যের ফল যে মিষ্টি হয়।
তাই এখন থেকে এসব বিষয় নিয়ে আর মন খারাপ করবে না,সবসময় হাসিখুশি থাকবে।তোমার হাসিমুখ দেখলেই আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হই।
এরকম আরও কিছু বলছে তাসপিয়া। এমন সময় তাসপিয়ার ফোন বেজে উঠল।
ফোনে কথা বলা শেষ করেই তাসপিয়া এসে নিলয়কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিল…হঠাৎ করে তাসপিয়ার এমন কান্নায় নিলয় কিছুটা ঘবড়ে গেল………………………………………………………………

চলবে ইনশাল্লাহ ……………………………………………????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে