জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড পর্ব-১৩

0
2017

#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ১৩

আমি বেক্কল মার্কা হাসি দিলাম। শুভ্র গোল, গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে। মামনি কতক্ষণ দাড়িয়ে থেকে কিচেনে চলে গেলো। এদিকে নিরব এখনো ফ্লোরে বসে আছে। মামনি চলে যেতেই আমি দাত কেলিয়ে বললাম।”

—-” হেই দেবরজী তুমি উঠতে পারো। এমন ভাবে ফ্লোরে বসে আছো। যেন ফ্লোরে তোমাকে কেউ সিন্নি দিচ্ছে,

শুভ্র হু, হা করে হেসে দিলো। নিরব উঠে দাড়িয়ে নাক ফুলিয়ে বললো!”

—-” দেখ ভাইয়া তোর বউকে বল। এরপর থেকে যেন আমার সাথে না লাগে। আমার সাথে বাঁদরামি করতে বারন কর। বিকজ আমি কিন্তুু বাঁদরামিতে পিএইসডি করেছি হু,

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম।”

—-” তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?”

নিরব সোফায় বসে বললো,

—-” তুই কি ভয় পাচ্ছিস?”

আমি হেসে দিয়ে বললাম!”

—-” ভয় আর আমি? হাউ ফানি কথা বার্তা,

নিরব গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। শুভ্র রিমোট নিতে, নিতে বললো।”

—-” কি ব্যাপার বল তো? তোদের দুজনের বনে না কেন? এক জায়গায় হলেই ঝগড়া করিস কেন?”

আমি আর নিরব আমরা দুজনেই। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। সেটা দেখে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন তোরা? আমি আবার কি করলাম হ্যা?”

আমি রেগে বললাম!”

—-” রিমোট কেন নিয়েছো তুমি?”

শুভ্র সোনি ম্যাক্সে দিয়ে বললো,

—-” আজব প্রশ্ন করছো তো তুমি। রিমোট মানুষ কেন নেয়? অবভিয়েসলি টিভির চ্যানেল পাল্টাতে।”

শুভ্রর এরকম গা ছাড়া কথায়। রাগে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আমার সাথে নিরবও যোগ দিয়ে বললো,

—-” এটা একদম ঠিক না। এতক্ষণ আমরা রিমোট নিয়ে যুদ্ধ করলাম। আর তুই এসেই রিমোট কেন নিয়ে নিলি?”

বলেই টেনে রিমোট নিয়ে গেলো। নিরবের থেকে কেড়ে আমি নিয়ে নিলাম। আমার কাছ থেকে আবার শুভ্র নিয়ে নিলো। এমন টানাটানি করতে, করতে। রিমোট ঠাস করে ফ্লোরে পড়লো। শব্দ শুনে মামনি এসে দেখলো। তার স্বাধের টিভির রিমোট। ইতিমধ্যে আমাদের হাতে শহীদ হয়ে গিয়েছে। এদিকে আমরা ৩জনই কাঁচুমাচু করে আছি। মামনি এগিয়ে এসে রিমোট হাতে নিলো। এরপর কতক্ষণ হাতে ধরে রেখে। চেঁচিয়ে বলে উঠলো শুভ্র, নিরব!”

আমার নাম না নেওয়ায়। মনে মনে কয়েক দফা নেচে নিলাম। নিরব আর শুভ্র আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আম্মু আমরা কিছু করিনি।”

আমি ভেংচি কেটে বললাম,

—-” তাহলে কে করেছে শুনি? হলুদ দাতওয়ালা নোবেল?”

শুভ্র রাগী লুকে তাকালো। আর নিরব দাত কিড়মিড় করছে। মামনি ওদের দুজনকে ইচ্ছেমতো ঝাড়লো। এরপর রেগে হনহন করে চলে গেলো। মামনি যেতেই দুজনে আমার দিকে বাঘের মতো তাকালো। আমি জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে। মানে, মানে ওখান থেকে কেটে পড়লাম। কিচেনে এসে মামনিকে বললাম!”

—-” মামনি কোনো হেল্প লাগবে?”

মামনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” কেন সোনা? নিরব, আর শুভ্র বুঝি ভয় দেখিয়েছে?”

আমি মুখটা চুপসে বললাম।”

—-” ইয়ে মানে হয়েছে কি,

মামনি হাসতে, হাসতে বললো!”

—-” পাগলি মেয়ে হেল্প করতে হবে না। তুই বরং রুমে গিয়ে রেস্ট নে,

আমি মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম। আসতে, আসতে শুনলাম ২ভাই প্লান করছে। তারা নাকি কালকে রাতে পিকনিক করবে। আমি আপাতত এসবে কান দিলাম না। রুমে এসে আচারের বয়াম নিয়ে বসলাম। এরমাঝে শুভ্র হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে বললো।”

—-” পালিয়ে এলে কেন?”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—-” আমি মোটেও পালিয়ে আসিনি হু!”

শুভ্র চুপচাপ আমার পাশে বসে পড়লো। এরপর আলতো করে আমার পেটে হাত রাখলো। আমি চোখ বড়, বড় করে বললাম,

—-” কি করছো?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” ভাবছি কবে আমার প্রিন্সেস আসবে,

আচার মুখে দিয়ে বললাম!”

—-” প্রিন্সেস না প্রিন্স আসবে,

শুভ্র বিছানায় শুয়ে বললো।”

—-” উহু প্রিন্সেস শুভ্রর মেয়ে শুভ্রতা আসবে দেখে নিও,

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম!”

—-” নো শুভ্রর ছেলে অভ্র আসবে!”

তখন নিরব রুমে এসে বললো,

—-” আর যদি অভ্র, আর শুভ্রতা দুজনই আসে?”

শুভ্র ভ্রু নাচিয়ে বললো।”

—-” মানে?”

নিরব শুভ্রর পাশে বসে বললো,

—-” মানে যদি টুইন হয়!”

ওমনি শুভ্র চট করে উঠে বললো,

—-” নাহহহ।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—-” কেন না কেন?”

শুভ্র মুখ কালো করে বললো!”

—-” দেখো রোজ তুমি এমনিতেই ছোট। একেইতো এত তাড়াতাড়ি কনসিভ করে ফেলেছো। আবার টুইন না, না ছেলেই হোক। বাট টুইন যেন না হয়,

নিরব মিটমিট করে হেসে চলে গেলো। নিরব যেতেই শুভ্র আমার কাছে এসে বললো।”

—-” আমার এমনিতেই খুব ভয় হয়। আর যাইহোক আমার কাছে আগে তুমি। এরপর বাকী সবকিছু। আমি বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি,

আমি আচারের বয়াম রেখে। শুভ্রর হাত ধরে বললাম!”

—-” তুমি এত টেনশন করছো কেন? আমার কিন্তুু কোন কষ্ট হচ্ছে না শুভ্র,

শুভ্র ছলছল চোখে বললো।”

—-” তোমার তো কষ্ট হচ্ছেই। তুমি ঠিকমত খেতে পারছো না। আবার একটু খেলেই বমি করছো। এটা কি কম কষ্ট নাকি?”

আমি শুভ্রর গালে হাত রেখে বললাম,

—-” তুমি কি কম কষ্ট করছো? আমি না খেলেতো তুমিও খাও না!”

শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—-” আমি যদি জানতাম। যে তোমার এত কষ্ট করতে হবে। তাহলে আমরা বেবি নিতাম না।”

আমি শুভ্রর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললাম,

—-” ব্যাস, ব্যাস শুভ্র এমন করছো কেন?”

শুভ্র আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো!”

—-” জানিনা আমার এক অজানা ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলবো,

আমিও শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। এখন আর কিছু বললাম না। কতক্ষণ পর আমি বললাম।”

—-” আমি কোনদিন হারিয়ে যাবো না শুভ্র,

শুভ্র আমাকে ছেড়ে মুচকি হেসে বললো!”

—-” তুমি যেতে চাইলেও যেতে দেবো না,

পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো গান শুনে। মানে সাউন্ড বক্সের আওয়াজে। এটা নতুন কিছু না যেদিন থেকে নিরব এসেছে। তার পরেরদিন থেকেই এটা হচ্ছে। কিন্তুু শুভ্র এখনো ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আমি বুঝিনা এক ভাই সকাল হতে না হতেই। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচতে শুরু করে। আর আরেক ভাই এত শব্দর মাঝেও কি করে ঘুমায়? রুম থেকে বের হতেই দেখলাম। মামনি তেড়ে নিরবের রুমে যাচ্ছে। মামনির পিছন, পিছন আমিও গেলাম। নিরবের রুমে আসতেই মুখটা হা হয়ে গেলো। একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। আর হাতা কাটা গেন্জি পড়ে। মেয়েদের মতো কোমর দুলিয়ে নাচছে। সেটাও আবার মিকা সিংয়ের গানে।”

?ও বেবি তেরে হেয়ার সারাবী?
?ও বিল্লো তেরে লিপস গুলাবী?
?কান মে ঝুমকে, সেক্সি ঢুমকে?
?টোল মে কারে কারাবী?

মামনি চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে আছে। নিরবের মুখটা অন্যদিকে আছে। যার জন্য আমাদের দেখেনি,

?সুনকে তেরে ফ্লাগ কে ছার্ছে?
?আহে ভারতে সাব লারকি?
?ওহ লারকি হাসি, ও বিউটি কুইন?
?ওহ মুন্ডে তেরে আদাপে মারতে?

মামনি প্রস্তুতি নিচ্ছে নিরবকে সাইজ করার!”

?ইসকি ম্যা দিলবার দি, দি, না,?
?দি, দি, না বাই দি, দি, না?

মামনি কিছু করার আগেই। আমি পিছন থেকে ওকে ধাক্কা মারলাম। পড়তে, পড়তে নিজেকে সামলে নিলো। এরপর পিছনে তাকিয়ে আমাদের দেখে বললো,

—-” তোমরা এখানে? ওহ নাচতে এসেছো?”

মামনি এক ধমক দিয়ে বললো।”

—-” চুপ ফাজিল কোথাকার। তোর কি মনে হচ্ছে? আমরা এখানে নাচতে এসেছি?”

নিরব দাত কেলিয়ে বললো,

—-” আরে আম্মু আমার কাছে লজ্জা কিসের? আমি তোমার একমাএ ছোট ছেলে। তুমি চাইলে নাচতে পারো। আমি মোটেও মাইন্ড করবো না!”

আমি না চাইতেও জোরে হেসে দিলাম। মামনি রেগে এখান থেকে চলে গেলো। আমি এখনো হাসছি সেটা দেখে নিরব বললো,

—-” এই আমার রুম থেকে যা। এখনো তো ফ্রেশ হসনি মনে হচ্ছে।”

ভেংচি কেটে বললাম,

—-” তুমি ফ্রেশ হয়েছো?”

নিরব কিছু বলার আগেই চলে এলাম। কারন ওখানে থাকলে পাক্কা ঝগড়া লাগতো। রাতে সবাই ছাদে বসে আছি। কারন আজকে ওরা পিকনিক করছে। সব রান্না মামনি আর সার্ভেন্টরাই করছে। আমিও হেল্প করতে চেয়েছিলাম। কিন্তুু মামনি কিচেনে থাকতে দেয়নি। শুভ্র আর নিরবের ফ্রেন্ডরাও আছে। আমি আর শুভ্র একপাশে বসা। আমার ডানপাশে শুভ্র, বামপাশে ভাইয়া। আর আমার সামনে নিরব বসা। সবাই নিরবকে গান গাইতে বলছে। সবার রিকোয়েস্টে নিরব রাজী হলো। গিটার বাজিয়ে?আমি শুধু চেয়েছি তোমায়? গানটা গাইলো। সবাই হাত তালি দিলো আমি গলা ঝেড়ে বললাম!”

—-” থ্যাংক গড গান শেষ হলো। এতক্ষণ তো কান যাচ্ছিলো,

নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” মানে কি বলতে চাইছিস তুই?”

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,

—-” এরকম কাকের গলায় কেন গান গাও? কাকও তোমার গান শুনে পালাবে!”

সবাই হেসে দিলো, নিরব রেগে বললো,

—-” কি বললি তুই?”

শুভ্র চোখ টিপ মেরে বললো।”

—-” আসলেই রোজ এটা কি বলো তুমি? আমার ভাইয়ের এত সুন্দর। হুতুম পেঁচার মতো গলাকে তুমি কাক বলছো?”

নিরব ফোস, ফোস করে বললো,

—-” কি এত বড় ইনসাল্ট? আমার এত সুন্দর কোকিলের গলাকে। তোরা কাক আর হুতুম পেঁচার গলা বললি?”

শুভ্র হু হা করে হেসে দিলো। সাথে সবাই জোরে হেসে দিলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে