জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড পর্ব-০২

0
2634

#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ২

ডান পা দিয়ে মাটিতে ধপাস, ধপাস করে বারি মারছি। আর ফুপিয়ে গুনগুন করে কান্না করছি। কিন্তুু যখনি বুকটা ফাইট্টা যায় টাইপ অবস্থা হচ্ছে। তখনি চিৎকার করে হাউ মাউ করে কান্না করছি। পাশেই শুভ্র চিকন লাঠি হাতে দাড়িয়ে ধমক দিচ্ছে। শুভ্রর ধমক খেয়ে কতক্ষণ চুপসে থাকি। আমি দুঃখে মনে হচ্ছে শহীদ হয়ে যাবো। আমাদেরই বাসায় এসে আমাকেই কি না গাছের সাথে বেধেছে। হুশ ফেরার পর দেখি আমি গাছের সাথে বাধা। হায় আল্লাহ কি লজ্জাজনক ব্যাপার। কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে কি না গাছের সাথে বেধেছে। সেটাও তারই বয়ফ্রেন্ড+খালাতো ভাই। ওদিকে আমার আবাল ভাইয়া কতক্ষণ পর, পর আসছে। আর আমাকে এভাবে দেখে দাত কেলিয়ে যাচ্ছে। গুনগুন করে কান্নার এক পর্যায় চিৎকার করে উঠলাম। ওমনি শুভ্র ওর হাতে থাকা চিকন লাঠি দিয়ে। আমার ডান পায়ে ঠাস করে এক বারি মারলো। বারি খেয়ে আমি আল্লাহ গো বলে চিৎকার করে উঠলাম। শুভ্র রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো।”

—-” আর কোনদিন আমাকে গন্ডার বলবি?”

আমি হু হু করে কেঁদে বললাম,

—-” শুভ্র ভাই আর কোনদিন বলবো না। এবারের মতো আমাকে ছেড়ে দাও। প্রয়োজনে তোমার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলবো!”

ওমনি আমার বাম পায়ে বারি পড়লো। ভ্যা, ভ্যা করে কেঁদে দিলাম, শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কে তোর ভাই? আর কি বললি ব্রেকআপ করবি?”

বলে লাঠিটা বাম হাতে নিয়ে। ডান হাত দিয়ে ঠাস, ঠাস করে ২থাপ্পর মারলো। থাপ্পর খেয়ে আমার মাথা মনে হচ্ছে লাটিম হয়ে গিয়েছে। চারদিক ভনভন করে ঘুরছে। শুভ্র ভাই দাত কিড়মিড় করে বললো,

—-” তোকে বলেছি না আমি? ব্রেকআপের নাম মুখেও নিবি না তুই!”

আমি ফুপিয়ে কান্না করে বললাম,

—-” আর কোনদিন গন্ডার বলবো না। ব্রেকআপের নামও মুখে আনবো না। এবারের মতো ছেড়ে দাও প্লিজ!”

শুভ্র দাত কেলিয়ে বাধন খুলে দিলো। বাধন খোলা পেয়ে গন্ডার বলে ভো দৌড় মারলাম। এবার আর আমার নাগাল পায় কে? আগে একবার গন্ডার বলায় বেধেছিলো। তখন আর গন্ডার বলবো না বলার পর ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তুু ছাড়া পেয়ে গন্ডার বলে দৌড় দেই। কিন্তুু শুভ্র ঠিকই আমাকে ধরে ফেলে। ধরে বাগানের নারকেল গাছের সাথে বেধে পিটালো। আল্লাহ কি একটা অবস্থা বয়ফ্রেন্ডের হাতে মার খেলাম। তাই এবার গন্ডার বলে এক দৌড়ে রুমে চলে আসি। আম্মু আমাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে চেঁচিয়ে বলে।”

—-” এই তুই কি অলিম্পিকে জয়েন হবি নাকি?”

ধুর কে শোনে কার কথা? রুমে এসে দরজা আটকে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। কারন আজকে যদি শুভ্র আমাকে ধরতে পারে। তাহলে ও আমাকে চুবানি দেবে ইচ্ছেমতো। না হলে ঠাস, ঠাস করে থাপ্পর। নয়তো চিকন লাঠি দিয়ে ধাপুস, ধুপুস বারি মারবে। কতক্ষণ বিছানায় বসে থেকে শাওয়ার নিয়ে নিলাম। আম্মু বললো শুভ্র নাকি চলে গিয়েছে। বাহ আমাকে শায়েস্তা না করেই চলে গেলো এত উন্নতি? অবশ্য আমার জন্য ভালই হলো হা হা। রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে টিভি দেখছি। ভাইয়া আমাকে দেখে দাত কেলিয়ে বললো,

—-” কি রে ব্লাক রোজ শুভ্র কেমন মাইর দিলো?”

আমি রেগে গিয়ে বললাম,

—-” কেমন ভাইয়া হ্যা তুই? তোর সামনে তোর বোনকে গাছে বেধে রাখলো। আর তুই দাড়িয়ে আফ্রিকার সেই কাইল্লার মতো দাত কেলালি?”

ভাইয়া একটা ভাব নিয়ে বললো।”

—-” ডোন্ট কম্পেয়ার মি উইথ কাইল্লা। বিকজ আই এম টু মাচ হ্যান্ডসাম!”

মুখ ভেংচি কেটে চলে এলাম। পরেরদিন কলেজে হেলেদুলে হাটছি। ওমনি কোথাথেকে শুভ্র এসে আমার হাত ধরলো। ঠোটের কোনে শয়তানি টাইপ হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। এদিকে আমার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। শুভ্র আমাকে টেনে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলো। একি রেস্টুরেন্টে কেন নিয়ে এলো? হায় মনে হয় ইয়াম্মি খাবার খাওয়াবে। শুভ্র আমাকে বসিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এলো। আর আমার ফেবারিট সব খাবার এনে বললো!”

—-” নে এগুলো খা।”

আমি খুশি মনে সব খেতে শুরু করলাম। অথচ একবারও ভাবলাম না এরপর কি হবে। খাওয়া শেষে শুভ্র আবার উঠে গেলো। ভাবলাম হয়তো আরো ইয়াম্মি কিছু আনবে। কিন্তুু শুভ্র নিয়ে এলো বরফ এগুলো দিয়ে কি করবে? শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো,

—-” রেড রোজ বরফ মুখে দে!”

আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তারমানে বলি দেওয়ার আগে যেমন আদর, যত্ন করে। শুভ্রও আমার সাথে তেমন করলো। আল্লাহ গো এখন আমি কি করবো? শুভ্র আমার মুখে বরফ ঢুকিয়ে বললো।”

—-” এবার আমাকে গন্ডার বল,

এদিকে আমার মুখের অবস্থা টাইট। মাথা ঘুরছে সবকিছু ঝাপসা দেখছি। শুভ্রর হাত সরিয়ে উঠে দাড়ালাম। বরফগুলো মুখ থেকে ফেলে দিয়ে বললাম!”

—-” শালা বেদ্দপ কোথাকার।”

শুভ্র রাগী ফেস করে বললো,

—-” কি বললি তুই?”

শুভ্রকে কিছু বলার আগে ধপাস করে পড়লাম। শালা সেন্সলেস হতে গিয়েও শান্তি নেই। লে টেবিলের কোনায় কি ধাক্কাটা লাগলো মা গো মা। এবার সত্যিই ধপাস করে পড়ে সেন্সলেস হয়ে গেলাম!”

সেন্স আসার পর দেখি আমি আমার রুমে। পাশেই আম্মু বসা আর বাবা দাড়িয়ে আছে। ভাইয়া চেয়ারে বসে স্পিড গিলে যাচ্ছে। আমাকে বসতে দেখে গোল, গোল চোখ করে বললো।”

—-” এই রোজ তুই সেন্সলেস হয়ে গেলি কেন?”

ভাইয়াকে এখন কিভাবে বলি? যেদিন থেকে শুভ্র আমার বয়ফ্রেন্ড হয়েছে। ঠিক তার ১৫দিন পর থেকে নিজেকে মিরকি রোগী মনে হয়। থুরি সেন্সলেসের উপর পিএইচডি করা রোগী। কারন ১৫দিন শুভ্র অতি ভদ্র ছেলে হয়ে ছিলো। যেন তাহার চেয়ে ভদ্র দুটি হয় না। সবসময় ভাবতাম ১৫দিন যাক একে দিয়ে যা ইচ্ছে করাবো। কিন্তুু কে জানতো? শেষে ১৫দিন পর গিয়ে এরকম শুভ্রকে আবিষ্কার করবো। আজও মনে পড়ে ৫মাস ১৫দিন আগের কথা। সেদিন প্রথমবার শুভ্র ঠাটিয়ে আমাকে চর মেরেছিলো। আহা কি ব্যথা পেয়েছিলাম আমি সেদিন। মনে হয়েছিলো দাত খুলে পড়ে যাবে। পরেতো থাপ্পরের ব্যথা ভুলে গিয়ে। দাত খুলে পড়ে যাবে সেই ভয়তে কেঁদেছিলাম। আমার কান্না থামাতে না পেরে। শুভ্র আবারো আমাকে থাপ্পর মেরেছিলো। মনে হয়েছিলো আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে থাপ্পর থেরাপি দিচ্ছে,

ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আম্মু আমার পিঠে থাপ্পর মেরে বললো।”

—-” কি রে বল সেন্সলেস কি করে হলি?”

তখনি রুমে শুভ্র এলো। শুভ্রর হাতে একটা প্লাস্টিক বক্স। শুভ্র মুচকি হাসি দিয়ে বললো!”

—-” রোদ, মামনি তোমরা যাও। আমি রোজকে আস্ক করছি ও আমাকে বলবে,

আমি বড় বড় চোখ করে আছি। কিছু বলতে গেলেই শুভ্র বললো।”

—-” থেরাপি লাগবে রোজ বেবি?”

ওমনি আমি ভয় পেয়ে মুখে আঙুল দিলাম মনে মনে ভাবছি,

—-” ইয়া মাবুদ এ কেমন বয়ফ্রেন্ড পেলাম? যে কি না কথায় কথায় থেরাপি দেয়। কতগুলো চুবানি যে খেয়েছি এর। আর ঠাস, ঠুসতো আছেই পাগল বয়ফ্রেন্ড থুরি জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে