ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০২

0
890

ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০২
– আবির খান

পরের দিন সকালে,
মায়াঃ ভাইয়া ও আবির ভাইয়া উঠো। ভারসিটিতে যাবানা??

আবির মায়ার ডাক শুনে তারাতাড়ি লাফিয়ে উঠে।

মায়াঃ বাবাহ! আস্তে ভাই আস্তে। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নেও। তারপর নাস্তা করতে এসো।

আবিরঃ আচ্ছা। তুমি যাও আমি আসছি।

মায়া চলে গেলো। আবির ভাবছে, মেয়েটা আমার এতো যত্ন নেয় কেনো??হয়তো ভাই নাই তাই। আসলেই এরকম একটা বোন পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। নাহ এখন তারাতাড়ি ফ্রেশ হই। ওহ তার আগে মার সাথে একটু কথা বলি।

আবিরঃ হ্যালো মা!! কেমন আছো??

মাঃ আছি বাবা ভালো আছি। রাতে ঘুম হয় ঠিক মতো??

আবিরঃ হ্যা মা হয়। তুমি চিন্তা করো না আর ঔষধ ঠিক মতো খাওতো??

মাঃ খাই বাবা খাই। তুই চিন্তা করিস না।

আবিরঃ মা আজকে প্রথম ভারসিটিতে যাচ্ছি দোয়া করো।

মাঃ আচ্ছা বাবা। তোর সাথে সবসময়ই আমার দোয়া আছে।সাবধানে যাস ভারসিটিতে।

আবিরঃ আচ্ছা মা তুমি টেনশন করোনা। রাখি এখন তাহলে।

মাঃ আচ্ছা।

আবির ফ্রেশ হয়ে চাচার সাথে ভারসিটিতে চলে যায়।
চাচাঃ এই নে বাবা কিছু টাকা। এটা রাখ ক্ষুধা লাগলে কিছু কিনে খাস। আর ক্লাস শেষ হলে ঠিক মতো বাসায় চলে যাস। রাস্তা মনে আছে না??

আবিরঃ জ্বি চাচা মনে আছে। আপনি নিশ্চিন্তে যান।

চাচাঃ আচ্ছা বাবা তাহলে তুই ভিতরে যা।

আবির চাচাকে বিদায় দিয়ে এই প্রথম ভারসিটিতে ঢুকলো। অন্য রকম একটা ফিল হচ্ছে। নিজেকে বড় বড় লাগছে। গেটের পাশেই একজন ভিখারিকে বসে থাকতে দেখে তাকে ১০ টাকা দিলো আবির। টাকা দিয়ে যেই আবির ভিতরে আসতে নেয় হঠাৎ আবির দেখে একটা সাদা মাঝারি আকারের কুকুর ওর দিকে তেড়ে আসছে। আবির আগ থেকেই কুকুরকে অনেক ভয় পায়। এক বার এক্টুর জন্য বেচে গিয়েছিল কুকুরের কামড় থেকে। কিন্তু আজ মনে হয়না আর বাচবে। আবির ভয়ে পাগলের মতো দৌড়াতে থাকে।

আবিরঃ ওরে আল্লারে আজকে মনে হয় আমি শেষ!!! আল্লাহ বাচাও এই কুকুর থেকে বাচাও। এভাবে আবির কুকুরের দিকে তাকিয়ে বলছে আর সামনে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎই আবির যেন কারো সাথে ধাক্কা খায় আর তার উপর পরে যায়। যার উপর পরেছে তাকে খুবই নরম লাগছে মনে হচ্ছে একগাদা তুলার উপর পরেছে।

আবির দেখে একটি মেয়ের উপর সে পরেছে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে, এ যেনো কোন এক পরী তার চোখের সামনে। যার রূপের নাই কোন কমতি। মায়ায় ভরা তার চোখ। ঠোঁট দুটো একদম গোলাপি। গোলাপের পাপড়ির মতো। ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে। যা তার সৌন্দর্যকে আরো দিগুণ করে দিয়েছে। নাকটার কারুকার্য আর কি বলবো। এক কথা এ যেনো কোনো মেয়ে না পরী। অবশ্য আবির পরী দেখেনি তবে শুনেছে পরীরা নাকি এরকমই সুন্দরী হয়। আবির মেয়েটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ মেয়েটি আবিরকে ধাক্কা দিয়ে তার উপর থেকে সরিয়ে দেয়। আর উঠে দাঁড়ায়। আবিরও সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। দেখে সবাই ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আকস্মিকভাবে মেয়েটি আবিরকে কসিয়ে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দেয়। আবির ব্যাথায় গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েঃ ওই ইডিয়েট, লম্পট, এস্কাউন্ডেল তোর এতো বড় সাহস হলো কি করে রিয়া চৌধুরীর গায়ে এসে পরার। ড্রেসিং দেখেতো মনে হচ্ছে আস্তো একটা ফকিন্নির বাচ্চা। আজ তোকে শেষই করে ফেলবো। কিভাবে আমার গায়ে এসে পরিস। তোকে চোদ্দোসিকের ভাত খাওয়াবো আজকে।

আবির কিছু বলেও বলতে পারছে না। বলার সুযোগ পেলে না বলবে। আর সাথে সবাইতো হাসছেই।

আরেকটি মেয়েঃ আরে রিয়া থামতো। ও জনির ভয়ে এভাবে দৌড়ে এসেছে। ওর দোষ নেই।

আবির মেয়েটিকে দেখে আর সাথে সেই কুকুরটাও। আবির আবার ভয়ে একটু পাশে চেপে দাঁড়ায়। সবাই তা দেখে আরো হাসে।

মেয়েটিঃ আরে ভয় পেয়েও না ও কাউকে কামড় দেয়না।

আবিরঃ…..

রিয়াঃ যাই হোক, আমার গায়ে এসে এভাবে পরার কোন মানে হয়না। ছোটলোক একটা। গেও কোথাকার। ইসস কি ড্রেসিং, দেখলেই ঘিন্না করে।উফফ।

মেয়েটাঃ রিয়া অনেক হয়েছে থাম।

আবিরঃ আমি আসলে বুঝতে পারি নি মাফ করবেন।
বলেই আবির সেখান থেকে চলে গেলো।

মেয়েটিঃ রিয়া তোর এভাবে ছেলেটাকে সবার সামনে মারা ঠিক হয়নি।

রিয়াঃ দেখ সানজিদা আমাকে মানে রিয়াকে জ্ঞান দিবি না। আর তার আগে বল এতো লেট করলি কেন??

সানজিদাঃ এতোক্ষন যাবত কি বলছি তোকে, জনি(কুকুর) হারিয়ে গেছিলো। ওকে খুজতে খুজতেই লেট হলো।

রিয়াঃ আচ্ছা এখন চল ক্লাসে।

এই হলো রিয়া আর সানজিদা। রিয়া বড়লোক বাবার এক মাত্র মেয়ে। বেশ রাগী আর স্বাধীনচেতা। যা বলে তাই করে। কারো কথা শুনে না। সেও এবার নতুন ভারসিটিতে ভর্তি হয়েছে। তবে হাবভাব দেখলে মনে হয় ভারসিটিটা তার। বড়লোকের অহংকারী মেয়ে।

অন্য দিয়ে সানজিদা রিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেও রিয়ার মতো বড় ঘরের তবে ব্যবহার এবং মন দুটোই তার অনেক ভালো। এবং দেখতেও বেশ সুন্দরী তবে রিয়ার চেয়ে কিছুটা কম।

এদিকে আবির গালে হাত দিয়ে অন্য ছাত্রদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে সোজা টয়লেটে চলে যায়। টয়লেটে গিয়ে আয়নায় দেখে গালদুটো লাল আর ৫ আঙ্গুলের ছাপ পরে গিয়েছে। আবির পানি দিয়ে অনেকক্ষন ধুয়ামুছার পর একটু ব্যাথা আর দাগ কমেছে।

আবির ভাবছে,
জীবনে প্রথম ভারসিটিতে আসলাম আর এসেই এই অবস্থা। আমার ভাগ্যেটাই খারাপ। আবিরের খুব খারাপ লাগছে। কতোগুলো মানুষের সামনে রিয়া মেয়েটা ওকে মারলো। ওতো ইচ্ছা করে পরেনি। শালার কুকুরটা ধাওয়া না দিলে কোনদিনই এই মেয়ের সামনেও যেতাম নাহ। এরকম অহংকারী মেয়ে আমার জীবনেও আমি দেখি নাই। বেশি রূপবতী দেখেই এই অবস্থা নিশ্চিত। এর জামাই যে হবে ভাইয়ের কপালে সেই দূর্ভোগ আছে। নাহ এখন আর দাগ নাই। যাই এবার ক্লাসে যাই।

আবিরে টয়লেট থেকে বের হয়ে ক্লাস খুজতে খুজতে যখন তার ক্লাসটা খুঁজে পায় আর ভিতরে ঢুকে, আবির যেন আকাশ দিয়ে পরে। হায় আল্লাহ এখন কি হবে…

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে