ছোঁয়ার শিহরণ ২য় খন্ড পর্ব-১২+১৩

0
1629

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-১২

রাদিদ, নীরা আর আফরিন ভার্সিটিতে যখন পৌঁছাল তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে। আফরিন বিরক্তিসূচক শব্দ উচ্চারণ করছে বারংবার। ভার্সিটির গেইটের সামনে আসতেই তার মোবাইলে কল এলো। রিসিভ করেই সে বলল, ‘আমি এখনই আসছি।’

কলটা কেটে রাদিদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘রাদিদ ভাইয়া! আমার এক বন্ধু আসছে। ওকে একটু রিসিভ করে নিই। বেচারী এখানের রাস্তাঘাট তেমন একটা চিনে না তাই।’

রাদিদ মাথা নেড়ে সায় দিল। নীরা বলল, ‘তোমার বন্ধু এতটুকু পথ আসতে পেরেছে আর এখন এইটুকু আসতে পারছে না! এটা কেমন কথা?’

‘তুই চুপ থাক। আমি কি তোর সাথে কথা বলছি?’ ধমকের সুরে বলল, আফরিন।

তারপর হনহন করে হেঁটে চলে গেল। সেই যে গেলো এখনো আসার নাম নেই। রাদিদ অনুষ্ঠানে কিছু সময়ের জন্য থাকলেও পরে বেরিয়ে এসেছে। তার ভালো লাগছিল না এসব। তাই বেরিয়ে ক্যাম্পাসে পায়চারি করছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখ দুটো আটকে গেল তার ঘুম কেড়ে নেওয়া রাজকন্যাকে দেখে। কেমন ধীর লয়ে হাঁটছে সে। যেন কোনো ছন্দের তালে হেঁটে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত কোনো এক গন্তব্যে! রাদিদ মুগ্ধ হয়ে দেখছিল কেবল। নাহ! শুধু মুগ্ধ নয়। এটা মুগ্ধতার এক চরম মাত্রা। রাদিদ তো সেই শেষ মাত্রাটাও কবে যেন অতিক্রম করে ফেলেছে সে নিজেই জানে না। ভালোবাসাটাও তার দারা সম্ভব হয়ে গেল শেষমেশ । সে ভীষণ অবাক হয়ে যায় নিজের এই আমূল পরিবর্তনে! সত্যিই জীবন মানুষকে অনেককিছু শিখিয়ে দিয়। আর সেই তার প্রকৃষ্ট উদারহণ। সে তো নিজের জীবন দিয়ে শিখেছে। তার মাথার উপর থেকে ‘বাবা’ নামক বটবৃক্ষের ছায়া সরে যেতেই সে ধীরে ধীরে জানতে শিখেছে, জীবনকে বুঝতে শিখেছে, হুট করেই সমস্ত খামখেয়ালিপনা ইস্তফা দিয়ে সেই যে চিরতরে বিদায় জানাল আর কখনোই তার পথ মাড়ায়নি। ফলশ্রুতিতে তার চরিত্র পরিবর্তন হতে হতেই আজকের এই রাদিদ। জীবন পরিবর্তনশীল, আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া হোক সূক্ষ্ম কি বৃহৎ মানুষের চরিত্রেও তার প্রভাব পড়ে।

রাদিদের দৃষ্টি সেই রাজকন্যার পদচারণ অনুসরণ করছে কেবল। জাফরানি রঙটাতে কেমন মোহনীয় দেখাচ্ছে তাকে। চুলের খোঁপায় লাগানো গাজরাটা তার শ্রী অনিকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। কী মিষ্টিই না দেখাচ্ছে তাকে! রাদিদের মনে হলো প্রথম ও শেষবারের মতো দুঃসাধ্য কিছু একটা করে ফেলতে! তার মনটা খুব করে চাইছে বহ্নির হাতটা একটিবারের জন্য ধরতে। ধরে কেবল বলতে, ‘তুমিই, কেবল তুমিই আমার মনের সিংহাসনে আসীন রাজকন্যা। যার কারণে হয়েছি আমি নিরুদ্দেশ। হারিয়ে গেছি শতবার তোমার শহরে, তোমাকে খুঁজতে গিয়ে তবুও মিলল না দেখা। আর হারানো বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে গেছে আমার মনের শহর। যেই শহরে কেবল তোমারই বসবাস। তবুও পাই না খুঁজে তোমার উদ্দেশ।’

মনে মনে এমন ভাবনা আসাতেই রাদিদ নিজেই অবাক হলো। একট গোপন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক চিরে। তার দৃষ্টি এখনও তার মনের রাজকন্যার পদচারণ অনুসরণ করছে। কিন্তু রাজকন্যা তার মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিল আবারও। ঘাসের উপর নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে থাকা একটা ছেলের হাত ধরে। রাদিদের মনের শহরে আচমকাই এক তুফান শুরু হলো। নিমিষেই লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল সাজানো গোছানো সমস্ত কিছু। হারানো বিজ্ঞপ্তিগুলো মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মনের শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। রাদিদ কেবল তাকিয়ে আছে খুব দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরা হাতের দিকে।

নীরা পাশ থেকে করুণ কণ্ঠে বলল, ‘ভাইয়া! ছেলেটা কে চিনতে পেরেছ?’

নীরার আচমকা প্রশ্নে একটু কেঁপে উঠল রাদিদ। তার চোখের তারায় ফুটে ওঠা বিষাদের চিহ্নটুকু মুছে নিয়ে বলল, ‘তুই কবে এলি?’

‘তুমি যখন মনে মনে শত শত কবিতা লিখছিলে তখন।’ নীরা কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলল, ‘আচ্ছা বলো তো ছেলেটাকে চিনো না-কি?’

রাদিদ প্রথম দেখায় চিনতে না পারলেরও পরে একটু ভালোভাবে তাকাতেই চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি। এ যে আর কেউ নয় বরং বহ্নির হৃদয়ের মণিকোঠায় রাজত্ব করা অতল। সে ভাবলেশহীনভাবে বলল, ‘অতল, আমার বন্ধু।’

নীরার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । সে মনে মনে কত শত পরিকল্পনা করেছিল তার রাদিদ ভাইয়ার জন্য। অথচ এই অতল সব ভেস্তে দিল। তার কী দরকার ছিল এই সময়ে উদয় হওয়ার ! নীরার মনে গভীর আক্ষেপ দেখা দিল।

‘রাদিদ ভাইয়া! তোমার কি মন খারাপ?’

‘নাহ্! মন খারাপ হবে কেন?’

‘এই যে তোমার বন্ধু অতলকে দেখে?’

‘না! বরং ভালো লাগছে।’

‘তাহলে কথা বলবে?’

‘নাহ্!’ রাদিদ দৃঢ়তার সাথে বলল, ‘আমার এখন আর বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর মতো সময় নেই। তুই তো জানিস সব। তাই না ?’

‘হুম।’ ছোট্ট করে জবাব দিল নীরা।

‘চল। এবার বাসায় যাওয়া যাক।’ রাদিদ মনের শহর বিষাদগ্রস্ত। সেই বিষাদ ফুটে উঠল তার কণ্ঠে।

‘তাহলে অন্তত বহ্নি আপুর সাথে একবার দেখা করো। একটু কথা হলেও বলো।’ আকুল কণ্ঠে বলল, নীরা।

‘নাহ্! তার সাথে তো আমার আর কখনোই কথা হবে না।’ বিষণ্ন শোনাল রাদিদের কণ্ঠ।

‘কেন হবে না? হতেও তো পারে।’

‘হবে না। কথা হোক তা আমি চাই না।’

‘তুমি চাও না সেটা মিথ্যা।’ প্রগাঢ় কণ্ঠে নীরা বলল।

রাদিদ প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না। খানিক নীরব থেকে বলল, ‘আফরিনকে কল দে। ওকে তাড়াতাড়ি আসতে বল। বাসায় যাব।’

নীরা কথা না বাড়িয়ে আফরিনকে কল দিল। রিং পড়ছে কিন্তু কল রিসিভ করছে না সে। রাদিদকে বলতেই তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাল।

নীরা রাদিদকে আশ্বস্ত করতে বলল, ‘ভাইয়া! আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।’

রাদিদ অতল আর বহ্নির উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ের স্বস্তি পাচ্ছে না। যেন তার ভিতরের একটা সত্তা অশান্ত হয়ে গেছে। আর তাই সেও অশান্ত হয়ে পড়ছে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ক্রমাগত। সে মনে মনে ঠিক করল সে এই শহর থেকে খুব দ্রুতই চলে যাবে। খুব দ্রুত।

______________________

অতল আর আয়মান গাড়িতে উঠল বাসায় যাবার জন্য। আয়মান বসল উইন্ডো সিটে আর অতল তার পাশে বসল। আয়মান বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করে কিছু একটা দেখে সে অতলকে বলল, ‘দেখ তো ওই কমলা রঙের টপ পরা মেয়েটার সাথে ছেলেটা আতিক ভাইয়া না?’

অতল তৎক্ষনাৎ ফিরে তাকাল। কিন্তু ততক্ষণে কমলা রঙের টপ পড়া মেয়েটা আর তার সাথের ছেলেটা তাদের দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেল।

অতল আয়মানকে বলল, ‘তুই চোখে বেশি দেখছিস ইদানিং।’

‘সত্যি বলছি। আমি পেছন থেকে যতটুকু দেখেছি তাতে আমি নিশ্চিত যে ছেলেটা তোর ভাই আতিক।’

‘তুই চুপ করবি? আতিক ভাই এখানে কী করে আসবে বল তো। তার তো এখন অফিসে থাকার কথা।’

‘দেখ, আতিক ভাই নীল রঙের শার্ট পরেছে। তুই একটু মনে করে দেখ তো আজ আতিক ভাই কি কালারের শার্ট পরেছিল।’ আয়মানের কণ্ঠে কৌতুহল ।

‘ধুর! এসব কি শুরু করেছিস? শার্টের কালার দিয়ে কী বুঝাতে চাইছিস? একই কালারের শার্ট কি দু তিনজন পরতে পারে না?’

‘তা পারে। তবে আমি নিশ্চিত ওটা আতিক ভাইয়া।’ আয়মান নিশ্চিত গলায় বলল।

‘আচ্ছা, দাঁড়া । ভাইয়াকে কল দিচ্ছি এখনি।’

অতল সাথে সাথে তার ভাইয়ের নাম্বারে কল করল। প্রথমবার কলটা কেটে গেল। অতল আবার ডায়াল করল। তৃতীয়বার রিং পড়তেই আতিক কল রিসিভ করল।

অতল ব্যস্ত গলায় বলল, ‘ভাইয়া! তুমি কোথায় এখন?’

‘কেন? এখন আমি কোথায় থাকব তুই জানিস না?’

‘হ্যাঁ, ভাইয়া। আসলে তোমাকে…!’

‘এখন রাখছি। আমি অফিসে আছি।’

অতল কিছু বলার আগেই আতিক কলটা কেটে দিল। আয়মানকে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘দেখলি তো?’

আয়মান একগুঁয়ে স্বরে আবারও বলল, ‘ওটা আতিক ভাইয়া ছিল। আমি নিশ্চিত।’

‘আচ্ছা, হলে হবে। তাতে কী?’ অতল আয়মানের কথা পাত্তা দিল না।

‘আচ্ছা আতিক ভাইয়ার কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু আজকের ওই মেয়েটার কথা তো বলতেই পারি। তাই না?’ আয়মান বলল, উৎসাহী গলায়।

‘কোন মেয়ের কথা?’

‘আরে ব্যাটা! এখনই ভুলে গেলি?’

‘কোন মেয়ে বললে বল নয়তো বাদ দে। এখন একটু চুপচাপ বসে থাক।’

‘আমার মনে হচ্ছে বহ্নি তোকে পছন্দ করে।’ আমান দ্রুত গতিতে বলল।

‘হুম, পছন্দ করতেই পারে। তাতে কী?’ অতলের ভাবলেশহীন উত্তর।

‘আরেহ্! তেমন পছন্দ না যেমন তুই ভাবছিস। আই থিঙ্ক সি ইজ সো মাচ ইনটু ইউ।’

‘জাস্ট স্টপ রাইট দেয়ার। আর কখনও বলবি না এই কথা। গট ইট?’ গম্ভীর গলায় বলল, অতল।

আয়মান কথা বাড়াল না। দুজনেই চুপ থাকল পুরো জার্নিতে।
_________________________

শিহরণের নতুন অফিসে কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি। তাদের কোম্পানির সাথে এই ছোট কোম্পানির মার্জ করার কারণে বেশ কিছু কাজ জমে গেছে। কোম্পানির লিগ্যাল ডকুমেন্ট ঠিক করাসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বন্টন করার মতো ঝামেলাপূর্ণ কিছু কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। তাই কাজের চাপ মারাত্মক রকমের বেশি বলা চলে। আর এই সব কাজ সাব্বির আহমেদ শিহরণকে দিয়েছেন। শিহরণ যদিও বেশ কয়েকবার না করেছে তবুও সাব্বির আহমেদ তার কথা গ্রাহ্য করেননি। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন,’ আমি জানি আমার আব্বুটা দক্ষতার সাথে সব কাজ সামলে নিতে পারবে।’

শিহরণ বাবার কথায় ভরসা পেয়েছে। বাবার বলা প্রতিটি কথাতে সে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় । কিন্তু এখন ঝামেলা বাঁধিয়েছে মান্নাত। বলেছে শিহরণের অফিস শেষে তার সাথে শপিং করতে যাবে। এখানে এসে সুপার গ্লু এর মতো আটকে আছে। শিহরণের রীতিমতো অস্বস্তি হচ্ছে। সে কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না। এভাবে বেবি সিটার হয়ে বসে থাকার মধ্যে মানুষ কী এমন আনন্দ পায় শিহরণের তা জানা নেই!

কোনোরকমে একটা ম্যাগাজিন ধরিয়ে দিয়েছে তাকে। এতক্ষণ ধরে তার সামনের চেয়ারে বসে তার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিল। এত কথা কেমনে বলতে পারে মেয়েটা! তবে অধিকাংশ কথাবার্তাই আজাইরা!

ছোঁয়া নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে। তবে মন পড়ে আছে অন্য জায়গায়। খানিক পরে পরেই সে হাতের কলমটা মুখে দিয়ে কামড়াচ্ছে। অমনোযোগী হয়ে পড়লে সে এমনটাই করে । শিহরণের সাথে মান্নাতকে দেখে তার মধ্যে এক ধরনের সূক্ষ্ম অথচ তীব্র খারাপ লাগা কাজ করছে। উপরন্তু মেয়েটাকে তার কাছ খুবই ক্লামজি মনে হলো। আর একটা ধূর্ত ভাবও আছে। যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ছোঁয়া তার ডেস্কের উপর রাখা ফাইলগুলো নিয়ে শিহরণের কেবিনের দিকে এগুলো। দরজায় নক করার সাথে সাথেই ভেতর থেকে গম্ভীর এক কণ্ঠ ভেসে এলো।

‘কাম ইন।’

ছোঁয়া ফাইল নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। শিহরণ ল্যাপটপে কাজ করছে খুবই মনোযোগ সহকারে। সে ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল, ‘ফাইলগুলো রেখে যান। আমি ফ্রি হয়ে সাইন করে দিব।’

ছোঁয়া বিষম খেলো । শিহরণ এক বারের জন্য ল্যাপটপ থেকে চোখ সরায়নি। তাহলে তাকে দেখল কী করে! প্রচণ্ড অবাক হলো সে। থতমত খেয়ে বলল, ‘স্যার, ইটস্ ভেরি আর্জেন্ট।’

মান্নাত ম্যাগাজিনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ছোঁয়াকে আপাদমস্তক দেখছে। ভালোভাবে তাকাতেই সে ভারি অবাক হয়ে গেল। এখন তার কাছে কিছু বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিহরণ সেদিন এই মেয়েটাকেই দেখছিল। এই বিষয়টা সে এখন শতভাগ নিশ্চিত। অফিসে ঢোকার সময়ও সে একটু ভালোভাবে তাকে দেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সামনের চুলগুলোর জন্য মুখটা ভালো করে দেখতে পারেনি। তাই প্রথম দেখায় চিনতে পারেনি। চিনতে পারার পর সে এবার ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘তোমাকে ফাইল রেখে যেতে বলেছে রেখে চলে যাও না। কেমন এমপ্লয়ি তুমি…!’

শিহরণ তার ডান হাতটা উঁচু করে থামতে বলল মান্নাতকে। তারপর ছোঁয়ার হাত থেকে ফাইলগুলো নিয়ে বলল, ‘প্লিজ সিট ডাউন। আমি এখনই সাইন করে দিচ্ছি।’

এটুকু বলেই শিহরণ সাইন করতে শুরু করল। ছোঁয়া ছোট্ট করে বলল, ‘থ্যাঙ্কস স্যার।’

‘ইটস্ অ্যাবসোলিউটলি ফাইন। আজকে আর কোনো মিটিং আছে?’

‘নো, স্যার।’

মান্নাত বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে। শিহরণ এই মেয়েটাকে কেন এতটা প্রায়োরিটি কেন দেয় সেটা ভাবতে ভাবতে তার প্রচণ্ড ক্রোধ উপচে পড়ছে। মনে মনে সে ছোঁয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে। কিন্তু এখন সঠিক সময় নয় তার রিয়েকশন দেখানোর। তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করল।

শিহরণ তার হাতের সবগুলো ফাইলে সাইন করার পর ফাইলগুলো ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমি আপনাকে একটা ছোট্ট কাজ দিয়েছিলাম। সেটা হয়েছে?’

‘কোন কাজের কথা বলছেন?’ ছোঁয়াকে বিভ্রান্ত দেখাল।

‘এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?’ ভারিক্কি গলায় বলল, শিহরণ।

ছোঁয়া ভাবল খানিক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার মনে পড়ল। ঝটপট বলল, ‘না, স্যার। এখনও শেষ হয়নি। তবে শীঘ্রই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’

‘ভেরি গুড। ইটস্ রিয়েলি ইম্প্রেসিভ ।’

‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।’

সাইন শেষ হতেই শিহরণ ফাইলগুলো ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিল। ছোঁয়া ফাইলগুলো হাতে নিয়ে শিহরণের কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ল। নিজের ডেস্কে বসেই সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।

_____________________________

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-১৩

পড়ন্ত বিকেল। পশ্চিমাকাশে সূর্য মামা হেলে পড়ছে। ছায়াঘেরা পরিবেশ মুখরিত করে রেখেছে চারদিকে। মৃদুমন্দ বাতাস শরীরে আঁচড় কাটছে, প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে মন ও শরীর জুড়ে। রাদিদের চেহারাতে সেই ভালোলাগার ছোঁয়া দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। চোখ দুটোতে ভীষণ রকমের বিষণ্নতার ছোঁয়া দৃশ্যমান। তবে নীরা বেশ উপভোগ করছে এই প্রশান্তি ছড়ানো বিকেলটা। চারপাশে জোড়ায় জোড়ায় হেঁটে বেড়াচ্ছে ছেলে-মেয়েরা। কেউবা একদল বন্ধু মিলিত হয়ে ফুচকা, চটপটি আর ঝালমুড়ি খেতে খেতে গল্পের আসর জমিয়েছে।

রাদিদ আর নীরা আফরিনের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু আফরিন এলো না। আফরিনকে না পেয়ে শেষমেশ ওরা বাসার উদ্দেশে রওনা দিল। তবে বাসায় পৌঁছানোর পর ওরা খুবই অবাক হলো। আফরিন বাসায় চলে এসেছে। নওশীন হক ওদের দেখে প্রশ্ন করলেন, ‘কী ব্যাপার! তোরা কোথায় ছিলি? আফরিন তোদের খুঁজে না পেয়ে বাসায় চলে এসেছে।’

রাদিদ আর নীরা প্রচণ্ড অবাক হলো। নীরা কিছু একটা বলতে মুখ খুলতেই আফরিন বলল, ‘তোদের আমি কোথায় না খুঁজেছি বল তো। ছিলি কোথায়? আমার কত কষ্ট করে বাসায় আসতে হলো। তোদের খুঁজে না পেয়েই তো একা চলে আসলাম বাসায়।’

‘আমরা তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রথমে কল রিসিভ করলে না পরে তো তোমার ফোনটাও অফ ছিল। আমরা কী করে তোমাকে খুঁজি বলো তো?’ নীরা বলল, অবাক হয়ে।

‘হুম। এখন সব দোষ আমার। মোবাইল অফ হয়ে গেছে সেটাও এখন আমার দোষ। তাই না?’ ঝগড়াটে গলায় বলল, আফরিন।

নীরা আর আফরিনের তর্ক-বিতর্কে বিরক্ত হয়ে নওশীন হক বললেন, থামো তোমরা! যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি নাস্তা দিচ্ছি টেবিলে।’

রাদিদ শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে ছিল দরজার পাশে। তার মনটা ভীষণ রকমের খারাপ। এই শহরে তার ভালো লাগছে না। এই শহরে ভালোবাসা নেই। তাই সে মনে মনে এই শহর ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নওশীন হক ভাইপোর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললেন, ‘কি রে! তোর কী হলো? মুখটা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন?’

নীরা অভিযোগের সুরে বলল, ‘আম্মু! রাদিদ ভাইয়াকে কত করে বললাম ভাত না খাও অন্তত নাস্তা তো করো। কিন্তু করেনি। বলেছে বাসায় গিয়ে তারপর খাবে।’

ফুফুকে আশ্বস্ত করতে রাদিদ বলল,’ ফুফু! আমি একদম ঠিক আছি। তখন ক্ষিধে ছিল না তাই খাইনি।’

‘ভাবি তো বলবে তোকে আমি না খাইয়ে শুকনো বানিয়ে ফেলেছি। যা দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয়। ভাত খাবি এখন। একদম দেরি করবি না। এখনই আসবি।’ আদেশের সুরে বললেন, নওশীন হক।

রাদিদ মুখ লটকিয়ে অসহায়ের মতো বলল, ‘এখন ভাত খেতে হবে?’

‘আর একটা কথাও বলবি না। যা দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয়।’ চোখ বড়ো বড়ো করে ধমকের সুরে বললেন, নওশীন হক।

‘একদম ঠিক হয়েছে। আমার কথা তো না শুনে পেরেছ। এখন আম্মুর কথা তো শুনতেই হবে।’ নীরা ভেঙচি কাটল।

আফরিন থমথমে গলায় বলল, ‘আম্মু! তুমি খালি তোমার ভাইপোর কথা ভাবলেই হবে? আমাকে নাস্তা দাও তো আম্মু।’

‘আচ্ছা, দিচ্ছি। তোর আব্বুকে ডেকে নিয়ে আয়।’

রাদিদ নীরবে নিজ রুমে চলে গেল। এখন কোনো কথা বলেও লাভ হবে না। তাই চুপ থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করল সে।

নওশীন হক নীরার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নীরা মা জলদি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে আয় তো আম্মুকে সাহায্য করতে।’

নীরা প্রশস্ত হেসে বলল, ‘আসছি, আম্মু।’

__________________________

শিহরণের মেজাজটা প্রচণ্ড রকমের বিগড়ে গেল। মান্নাত সারাদিন ওকে বিরক্ত করেছে। অফিস শেষে শপিং মলেও যেতে হলো। মেয়েটার শপিং শেষ হবারই নাম নিচ্ছিল না। মাসে যে কতোবার শপিং করা লাগে এই মেয়েটার শিহরণ তা ভেবে পায় না! শিহরণের ইচ্ছে হলো মান্নাতকে রেখেই চলে আসতে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার আম্মুর বকার কথা মনে করে মান্নাতের সাথে ছিল। বাসায় আসার পরেই প্রচণ্ড ক্লান্তি ওকে পেয়ে বসেছে। দ্রুত শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হলো সে। ফ্রেশ হয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ল সে। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। কপালের উপর ডান হাতটা রেখে চোখ বুজে ছিল কিছুক্ষণ। চোখের দৃশ্যপটে ভিজ্যুয়ালি চলছে মনের মানুষটার আনাগোনা। কেমন করে অবলীলায় ভাসছে তার মুখাবয়ব। মায়াবী মুখখানা দেখে শিহরণ বারবার শিহরিত হয়। তার ইচ্ছে করে সমস্ত পরিকল্পনার কথা ভুলে নিজের মনের অদম্য ইচ্ছেটাতে সায় দিতে। একটিবার, কেবল একটিবার ওই মায়াবীর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিতে। প্রবল ইচ্ছেকে যে কীভাবে সে দমন করছে তাতে সে নিজেও বেশ অবাক হয়ে যায়! আরাম করে শুয়ে শুয়ে স্বপ্নরাজ্যে যেন হারিয়ে যাচ্ছে শিহরণ!
কিন্তু এই আরামটাও তার জুটল না। ক্ষুদে যন্ত্রটা বেজে উঠল তারস্বরে। শিহরণের বিরক্তির মাত্রা তখন চরমে। সে ভেবে পেল না এই সময়ে তাকে কে কল করছে আবার। মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই মায়ার নামটা দেখল। সাথে সাথেই সমস্ত বিরক্তি দূর হয়ে গেল। দেরি না করে ঝটপট কলটা রিসিভ করল সে।

‘তোমার সঠিক সময় কবে হবে বল তো, শিহরণ?’ মায়া বলল, ঝগড়াটে গলায়।

‘মায়া! তুমি কি ঝগড়া করার জন্য কল করেছ? আমি কেমন আছি একবার জানতেও চাইলে না!’ শিহরণ শোয়া থেকে উঠে বসে ভারি অবাক হয়ে জানতে চাইল।

‘হুম, তুমি যদি এটাকে ঝগড়া বলতে চাও তাহলে ঝগড়াই। কিন্তু আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই। আজকে উত্তর না পেলে আমি কোনোভাবেই কল কাটব না। আর তুমি যে ভালো আছ তা আমি জানি।’ তেজী গলায় বলল, মায়া।

শিহরণ কৌতুকের স্বরে বলল, ‘আজ এতটা রাগী গলায় প্রশ্ন করছে আমাদের মায়মাণি! ব্যাপার কী?’

‘আজ তুমি কোনোভাবেই প্রশ্ন এড়াতে পারবে না শিহরণ। তোমাকে বলতেই হবে কেন তুমি এখনও অবধি কনফেস করছ না।’ ঝাঁঝালো গলায় বলল, মায়া।

শিহরণ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। সূর্য মামা তখন পশ্চিম আকাশে তার লালিমা ছড়িয়ে দিয়েছে। রক্তিমাকাশের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শিহরণ বলল, ‘কারণ তো একটা আছেই । তবে সিরিয়াস কোনো কারণ না। আমি কনফেস কেন করিনি তার কিছুটা তো তুমি নিজেই জানো। আর একটা গৌণ কারণ আছে সেটা তোমার না জানলেও হবে।’

‘হুম, আমি জানি কারণটা। তবে এখন তো আর সেসব কারণের অস্তিত্ব নেই। ছোঁয়া তো এখন আর অসহায় মেয়ে নয়। শি ক্যান হ্যান্ডল এভরিথিং ভেরি স্মার্টলি। ইউ নো, রাইট?’ মায়া বলল, প্রগাঢ় কণ্ঠে।

‘ইয়েস, আই নো, মায়া! বাট প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ইটস্ নট দ্যা রাইট টাইম ইয়েট।’ অনুনয় ভরা কণ্ঠে বলল, শিহরণ।

‘সিরিয়াসলি, শিহরণ! ছোঁয়ার মা তার জন্য পাত্র খুঁজছে। তুমি কি জানো সেটা?’ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, মায়া।

‘পাত্র খুঁজলে খুঁজুক। খুঁজলেই কি বিয়ে হয়ে যাবে? আর আমি জানি ছোঁয়া কখনোই রাজি হবে না। তুমিও জানো এটা। বরং বলা ভালো তুমি আমার চাইতে আরও বেশি ভালো জানো।’ দৃঢ়তার সাথে বলল, শিহরণ।

‘আমার বন্ধুকে আর অপেক্ষা করাইও না। প্লিজ, শিহরণ।’ মিনতির সুরে বলল, মায়া।

‘ওকে, ডিয়ার মায়ামণি। আমি একজনের অপেক্ষা করছি। আমি জানি সে ছোঁয়াকে দেখা মাত্রই পুনরায় তাকে পাবার চেষ্টা করবে। আমি শতভাগ নিশ্চিত এই ব্যাপারে।’

‘তুমি কি অতলের কথা বলছ?’ সন্দিহান কণ্ঠে বলল, মায়া। ।

‘হুম, অতল। ও যা করেছে তা ঠিক করেনি। খুব ভুল করেছিল সে।’ মৃদু ক্রোধ ঝড়ে পড়ছিল শিহরণের কণ্ঠে ।

‘সে ভুল করেছে। তুমিও তো ভুল করেছিলে তাকে বিশ্বাস না করে। তোমার রাগ হতে পারে ওর কি রাগ হতে পারে না?’ প্রতিবাদের সুরে বলল, মায়া।

‘পারে। রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমি তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সে আমার সাথে আর একটিবার দেখা করেনি। জেদ ধরে বসেছিল। আমার মুখোমুখি হয়নি সে। তখন হয়নি তাতে কি হয়েছে? এবার তো তাকে আমার মুখোমুখি হতেই হবে। এবার আর সে পালাতে পারবে না। ‘ শিহরণের কণ্ঠে ভয়ংকর কিছু একটার ইঙ্গিত প্রকাশ পেল।

মায়া উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল,’তুমি কি অতলের কোনো ক্ষতি করার কথা ভাবছ?’

‘একদমই না। সে আমার বন্ধু। আমার ভাইয়ের মতো। আমি শুধু তার ভুল ধারণা বর্জন করতে তাকে সাহায্য করব। এতে যদি সে কষ্ট পায় তবে পাবে। এই কষ্টটুকু তাকে সহ্য করতেই হবে।’ অবিচলিত কণ্ঠে বলল, শিহরণ।

‘আমার কিন্তু খুব ভয় করছে শিহরণ। তুমি হয়তো ভালো কিছু করার চেষ্টা করছ। কিন্তু যদি হিতে বিপরীত হয়! তাই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।’

‘চিন্তার কিছু নেই। এটা হবার ছিল এবং হবে। ফলাফল যাই হোক আমাদের তা মেনে নিতে হবে।’ গম্ভীর গলায় বলল, শিহরণ।

‘হুম, তা ঠিক বলেছ। কিন্তু আমি তোমাকে ওয়ার্ন করছি ছোঁয়া যাতে কোনোভাবেই কষ্ট না পায়।’ মায়া বলল, সতর্ক গলায়।

‘তুমি আমাকে চিনো মায়া। আমি কোনোভাবেই ছোঁয়াকে কষ্ট পেতে দিতে পারি না। তা ভালো করেই জানো তুমি।’

‘জানি। তারপরও আমার ভয় হচ্ছে খুব। তুমি তো জানো আমার বিয়ের কথা চলছে। আমার বিয়ে হয়ে গেলে ও খুব একা হয়ে যাবে। মেয়েটা নিজের অনুভূতিগুলো কারো সাথেই শেয়ার করতে পারবে না তখন। যদিও সাইফ আছে। তারপরও ভীষণ চিন্তা হয় ওর জন্য। ও তো কারো ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারে না। বরং নিজের ক্ষতি করে হলেও অন্যের ভালো করতে বদ্ধপরিকর সে।’

‘সাইফের নাম নিবে না একদম। ছেলেটাকে অসহ্য লাগে আমার।’ তিক্ততা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, শিহরণ।

‘শিহরণ! সাইফ আমাদের বন্ধু। ওকে নিয়ে কোনো বাজে কথা আমি শুনব না।’

‘ও তোমাদের বন্ধু, আমার না।’ শিহরণ মায়াকে সংশোধন করে দিল।

‘সাইফ খুবই ভালো একজন বন্ধু। ওকে নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করবে না একদম।’

‘ঠিক আছে সব। তবে আমার সাইফকে ভালো লাগে না। সত্যটা তোমাকে জানিয়ে দিলাম।’

‘ঠিক আছে। তোমার ভালো লাগতে হবে না। আমরা ওকে খুব পছন্দ করি। আর ও খুবই হেল্পফুল একজন বন্ধু।’

‘বাহ্! সাইফের তো ভালোই গুণগান করছ।’ ব্যঙ্গ করে বলল, শিহরণ।

‘ভালোকে তো ভালো বলতেই হবে। তাই না?’ তীক্ষ্ম স্বরে বলল, মায়া।

‘আচ্ছা ঠিক আছে। এবার রাখছি।’ ব্যস্ত গলায় বলল, শিহরণ ।

‘হুম, রাখতে পারো। তবে আর দেরি করিও না প্লিজ।’ কাতর কণ্ঠে বলল, মায়া।

‘ঠিক আছে, মায়া।’ মৃদু হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে বলল, শিহরণ ।

কলটা কেটেই শিহরণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। মায়ার বলা প্রতিটা কথাতে যুক্তি আছে, শিহরণ তা ভাল করেই জানে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে নিজেদের ঠিকানায়, নিজেদের নীড়ে। আকাশের বুকে একটা মাত্র তারা এই সন্ধ্যেবেলাতেই মিটিমিটি করে জ্বলতে জ্বলতে তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। আচমকাই শিহরণে এসবকিছু খুব ভালো লাগছে। মনের মধ্যে এক ধরনের ভালোলাগার আবেশ আর স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে হঠাৎ করেই। ছোঁয়ার কথা ভাবতেই, তার কথা বলতেই এই ভালোলাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে তার মনজুড়ে।

______________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে