চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১০

0
1733

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১০

রাতের খাবার শেষ করে আন্টি আর আম্মুকে বিছানা ঠিক করে দিয়ে সব গুছিয়ে আমি রুমে ফিরলাম।

নিরব রুমে ছিল না।তাই বেলকনিতে এসে দেখলাম সে বসে আছে।
আমিও তার পাশের টুলটায় বসলাম।

আমার উপস্থিতি পেয়ে সে আমার দিকে ঘুরে বসল।
বেলকনি অন্ধকার থাকায় বাইরের হালকা আলোগুলোতেও বেলকনিটা সুন্দর লাগছিল।

“ঘুমাবে না?”

“হ্যাঁ”

“চলো তাহলে”

নিরব আমার কথায় উঠে দাঁড়ালো। আমিও তার পিছন হাঁটতে গেলাম কিন্তু হঠাৎই সে দাঁড়িয়ে গেল আর তার সাথে আমিও দাড়িয়ে গেলাম।
হঠাৎই সে বেলকনির লাইট জ্বালিয়ে দিল। কিছুক্ষণ অন্ধকারে থাকায় সে আলো চোখে লাগায় আমি দুই হাতে চোখ ঢেকে নিলাম।
চোখ খুলেই দেখলাম নিরব আমার করা পেন্টিংটার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরব কি এক্সপ্রেশন দিবে এখন?
নিরব আমার দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার নাহারের জায়গা যেমন নিয়েছি তেমনি পেন্টিংটাতেও নিজেকে এঁকে ফেলেছি।
সে কি রাগ করবে?
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম”ওভাবে কি দেখ?”

“তুই এঁকেছিস?”

“হ..হুম”

তার দিকে একবারও তাকাচ্ছি না আমি। একবার এইদিকে আবার ওইদিকে তাকাচ্ছি।
তা দেখে সে ফিক করে হেসে উঠল।

তা দেখে আমি বললাম”হাসো কেন?”

আমার বিনুনি করা চুলের মাঝেও কয়েকটা অবাধ্য চুল কানের পাশ ছুঁয়ে ছিল।নিরব সেগুলোকে হাত দিয়ে কানের পাশে গুজে দিল।
তার স্পর্শে খানিকটা কেপে উঠলাম আমি। তবুও বুঝে উঠার চেষ্টা করছিলাম সে কি করছে।
হুট করেই সে বেলকনির লাইট অফ করে দিল।
আমি তা দেখে বললাম”আরে লাইট অফ করতে….

পুরো কথা শেষ করার আগেই সে আমার মাথার পিছনে এক হাত দিয়ে তার কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল।
তার স্পর্শে পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।
তারপর সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল।তারপর শুইয়ে দিয়ে বলল”লাইট অফ ই থাকবে এখন”

______________
সকালে,
নিরব আর আন্টি নাস্তা করে বিদায় নিল।আমি সামনে যায় নি একবারও।
নাস্তা দেওয়ার সময় শুধু ছিলাম।

তারপর সারাটা দিন শুধু এই ভাবনাতেই গেল যে নিরব হঠাৎ কাছে কেন আসল আমার?
এমনটা না যে আমি খুশি হই নি। কিন্তু নিরবও কি খুশি হয়েছে?
নাকি আমার প্রতি অবিচার হচ্ছে ভেবে কাছে এসেছে?
শুধু এই কারণটাই ভাবাচ্ছে আমাকে।

সন্ধ্যায় হঠাৎ নিরব ফোন দিল। এসময়টাতে সে সাধারণত অফিস থেকে ফেরে।
এমনি দিন হলে একবার সম্পুর্ন রিং হওয়ার আগেই রিসিভ করতাম তবে এখন একটা দ্বিধা কাজ করছে।

এমন ভাবতে গিয়েই প্রথমবার কল কেটে গেল। দ্বিতীয়বারের বেলায় রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নিরবের কন্ঠ ভেসে আসল।
তবে স্বাভাবিক কন্ঠ না।উত্তেজনা বা ভয় পেলে কন্ঠ যেরকম শোনায় তেমন।
তাই ভয় লজ্জাকে একপাশে রেখে আমিও কথা শুরু করলাম।

“অথৈ?”

“বলো!”

“I..I am extremely sorry মানে আমি সেরকম করতে চাই নি, আমি মানে কিভাবে যে কি হয়েছিল আমার। তুই প্লিজ কিছু মনে করিস না!”

নিরবের কথা শুনে আমার কি বলা বা করা উচিৎ কিছুই বোধগম্য হলো না।অশ্রুকণাও যেন চোখে আসছে না।

“তুমি ভালোবেসে কাছে আসো নি আমার?”অবাক হয়ে বললাম আমি

“আম..আমি বললাম তো….(অপরাধ বোধের সাথে বলতে গিয়েও পারছে না)

“তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না! নারী দেহ ছোঁয়া সাধনার বিষয়। ভালোবেসে ছুঁতে হয়।
আমার মধ্যে ভালোবাসা ছিল কিন্তু তোমার মধ্যে? তাহলে কি ধরে নিব তুমি চাহিদার জন্য?….”

খট করে কল কেটে দিলাম আমি।আর কিছু বলতে পারলাম না। ইচ্ছা ছিল জলদি ফিরে যাব তবে এখন ইচ্ছাটাই শেষ হয়ে গেল।
যাকে এতটা বিশ্বাস, ভালোবাসা দিয়েছি সে?সে কি না!
সেও অন্যদের মত পাশে আসল শুধুই নিজের!
.
.
.
নিরব উদাসীন মনে তার বেলকনিতে বসে আছে।সে সত্যিই এরকম কিছু করতে চায়নি।
সেও চেয়েছিল ভালোবেসে অথৈকে কাছে টেনে নিতে। তাহলে কেন কেন সে পারল না?সে কি দেহের প্রতি এতই দূর্বল হয়ে গেল যে আর কিছুটা দিন অপেক্ষা করতে পারল না?
তার স্ত্রীর থেকে এত বড় অপবাদ পেয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তার।এখন অপরাধ বোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।সে কি করবে?
ক্ষমা চাইবে?ক্ষমা চাইলেই কি পাওয়া যায়?
ক্ষমা হয়ত পাবে তবে আগের মত বিশ্বাস ভালোবাসা কি আদৌ পাবে?
কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে।তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখল।
তবে তখনো অথৈ এর চেহারাই ভেসে আসছে।
তাই সে রেগে বেলকনি থেকে উঠে চলে গেল আর শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল।
কি করবে এমনিতেই মাথায় আসছে না তারউপর শান্তিতে বসতেও পারছে না।
তাই সে আবারো অথৈকে কল করল।

চুপচাপ টিভির দিকে চোখ রেখে বসে আছি আমি।পাশে আব্বু বসে কার সাথে যেন কথা বলছে।
আম্মু এখন একটু সুস্থ কিন্তু তবুও তাকে ঘরেই থাকতে বলেছি।
দৃষ্টি টিভির দিকে থাকলেও মনোযোগ নেই।

হঠাৎ মোবাইলের রিং বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম”Love” উঠে আছে অর্থাৎ নিরবের কল।

হঠাৎ ফোন কেন করবে ও?
বিরক্ত লাগছে বলে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আবারো টিভির দিকে তাকালাম।

তবে পাশে যে আব্বু আছে তা আমার খেয়ালেই ছিল না। তিনি নিজের ফোনে কথা শেষ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কে কল করেছে।আমি চুপচাপ বললাম”নিরব ভাইয়া!”

আমার কথা শুনে আব্বু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বললেন”কি ধরনের কথা এগুলো অথৈ?স্বামী হয় সে তোমার আর ভাই বলছ!
কোন দরকারে ফোন করছে হয়ত,এখনই ধরো”

“কেন ধরব আব্বু? ভালো লাগছে না আমার!”

“ঝগড়া করেছ নাকি? বিয়ের দুই দিন হতে না হতেই ঝগড়া?নিজের পছন্দে বিয়ে করেছ কিন্তু!”

বলে রাখা ভালো,সব জায়গার মত আমার আব্বু এখানে ভিলেনের মত নিরব ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলেন না।যদিও সেটার কারণ নিরব ভাইয়ের চাকরি পাওয়া নিয়ে ছিল।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম”কোন সমস্যা হয় নি আব্বু!এরকম করো কেন?মাথা ব্যথা করছিল বলে ধরতে চাই নি”

বলেই টিভি অফ করে ফোন নিয়ে ঘরে চলে আসলাম।দরজাও লাগিয়ে দিলাম।
এখন আচ্ছা মত ঝগড়া করলেও কেউ টের পাবে না।

এদিকে আমার যাওয়ার পর আব্বু হালকা হাসলেন। আমার স্বভাব চরিত্র তিনি ভালই জানেন।এখন হয়ত রাগ করছি তবে সেটা বেশিক্ষণ থাকবে না।
আব্বুও ঘুমাতে চলে গেলেন।

“হ্যালো!”

“অথৈ!এত সময় লাগে?”

“কিয়ের সময়?আপনি ফোন দিসেন কেন সেইটা আগে বলেন”

“ফোনও দিতে পারব না?”অবাক হয়ে বলল নিরব

“না পারবেন না!”

“তাহলে ফোন কেটে দিচ্ছি”অভিমানের সুরে বলল নিরব

তার অভিমানি কন্ঠ আগে কখনো শুনি নিই। অভিমান তো তার সাথেই করা যায় যে আপন হয়।তাহলে কি সে আমায় আপন ভাবছে?
মুখের কোণের বিরক্তি হাসিতে পরিণত হলো তবুও সেই হাসিকে আড়াল করে বললাম”কেন?কাটবেন কেন? আগে বলবেন ফোন করার কারণ!”

“তুই আমাকে মাফ কর!আমি…আমি বুঝি নাই তোর খারাপ লাগবে”

“মাফ চাইছেন ভালো কথা তবে খারাপ লাগবে কেন?”

“ওইযে রাতে..

“তোমার কি মনে হয়?আমি না চাইলে তুমি চুপচাপ সব করতে পারতা?আমি চুপচাপ থাকতাম!”

“মানে তোর? তোর সম্মতি ছিল!?”

“তা নয়ত কি”আনমনেই বললাম আমি

নিরবের নিজেকে থাপড়াইতে মন চাইছে।ওর আগেই ভাবা উচিৎ ছিল কোন মেয়ের সম্মতি না থাকলে সে কি টু শব্দও করবে না?
তবুও তার মনের সন্দেহ দুর হলো একটু।সে আবার বললো”তাহলে রেগে ছিলি কেন?”

“তো?তুমি খুব ভালোবাসো আমাকে?”

“তুই কি ফিল করেছিস?”

“আ,, আমার বলাতে কি আসে যায়?”কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম আমি

“আমি কি রেপিস্ট?বউ এর কাছে যাব ভালোবেসে,চাহিদার জন্য না”নেশাতুর কন্ঠে বলে ফোন রেখে দিল নিরব

আমি স্তব্ধ হয়ে ফোন কানে নিয়ে বসে রইলাম।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে