চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৭

0
1972

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৭

লেখা আশিকা জামান

বাঞ্জির জন্য আবারো ব্রিজে যেতে হলো। এবার অবশ্য তানভীরের আগের থেকে ভয় কম লাগছিল। তবে জিজ্ঞাস না করে আর থাকতে পারলো না,
“কোনটা বেশি স্ক্যারি? বাঞ্জি না সুইং?”

সবাই একযোগে বললো বাঞ্জি!
এরপর থেকেই তানভীরের পূর্বের ভয়টা আবার ফিরে এল।
” ধুর ছাই! ক্যান যে জিজ্ঞাস করতে গেলাম। এবার খামোকা ভয় পাও।”
নিজেই কতক্ষণ বিড়বিড় করে রেডি হয়ে বাঞ্জি স্টেশনে চলে গেল।এবারো সে বললো,
” ভাই হবেনা আমারে দিয়া, ছাইড়া দেন৷”
কিন্তু উপায় নাই ঝাঁপ দিতেই হল।
বাঞ্জি তে একবার নিচে ফেলে যখন দ্বিতীয় বার উপরে টান দিয়ে আবার ফেলে তখনকার ফিলিংস টা অন্যরকম।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


বাঞ্জি তে ফ্রি ফল ২-৩ সেকেন্ড মত আর সুইং এ ১০ সেকেন্ড মত। দুটা জিনিস- ই ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেয়া তবে অল্প কটা টাকা না বাঁচিয়ে একসাথে দুটা করা উচিৎ।

সবার জাম্প শেষ হলে আবার একসাথে হয়ে রিসোর্টটা ঘুরে ফিরে দেখছিল। একটু পরেই বাসে উঠতে হবে। থামেলে পৌছাতে হবে।
এরমাঝেই দীশা বলল,
” চল আজকের রাতটা এখানে থেকে যাই।”
সবাই হৈ হৈ করে রাজি হয়ে গেল কেবল অনন্যা আর অঙ্কন ছাড়া। ওদের মুখটা ছাইরঙা মেঘে ঢেকে গেল। দুজনেই চাইছিল আলাদাভাবে একান্ত নিজের করে সময় কাটাতে। সেটা এখানে কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে। এই যাতনায় প্রায় ধৈর্য্যচুত হয়ে অঙ্কন বিমর্ষ মুখে বলল,
” ইমপসিবল আমার কালকে সকাল সকাল শুটিং আছে। আর এখানে থাকা লাগবে না।”

দীশা কিছু বলল না। তানভীর একটু ভেবে নিয়ে বলল,
” হ্যাঁরে সাইমুন, এখানে থাকতে হলে অতিরিক্ত কত রুপি গুণতে হবে রে!”
” ৩০০০ নেপালি রুপী দিতে হবে। এতে একরাত থাকা যাবে আর পরের দিন দুপুর পর্যন্ত তিন সন্ধ্যা ব্যুফে খাবার পাওয়া যাবে।”

” উফ্ এখানে থাকতে পারলে কতটা এক্সাইটিং মোমেন্ট ক্রিয়েট হত বুঝতে পারছিস অনন্যা!
তাবুতে রাত্রি যাপন করার না অনেক শখ ছিল তোর?” দীশা অনন্যার মনযোগ আকর্ষনের জন্য বলল।
কিন্তু অনন্যা নির্বিকারভাবে বলল,
” ধুর এখানে ফ্যান নাই, এসি নাই আমি ঘুমাতে পারব না।”
” সো হোয়াট হৃদয় ঠান্ডা করা পরিবেশ তো আছে!”
একটুও গরম লাগবেনা। বরং খুব সামান্য ঠান্ডা লাগতে পারে। গরম কাপড় নিয়ে আসছিস নাহ? তাবুর ভিতরে সৌর বিদ্যুত চালিত একটা লাইট আছে, পরিপাটি ২টাবিছানা আছে, খুব পরিস্কার রুম, ব্লাঙ্কেট এবং পাতলা কাথা টাইপ কাপড় আছে। মোট কথা এখানে অস্বস্থিকর কিছু পাবি না। ট্রাস্ট মি এখানে রাত্রি যাপন করলে কাল ঠিক ফিল করতে পারবি ভাগ্যিস একটা রাত এখানে কাটাতে পারলাম।”
সাইমুনের এইসব কথা শুনে অনন্যা আমতাআমতা করতে লাগল। অঙ্কন আড়চোখে কেবল অনন্যার মুখভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে।
তানভীর চোখ মেরে বলল,
“আরেকটা জিনিস আছ খুব সুন্দর একটা বার যাবি নাকী!”
” তোমার মাথায় জীবনেও ভাল কিছু আসবে না সেইটা এইভাবে প্রকাশ না করলেও সবাই জানে!”

অনীহার কথায় তানভীর মুখ চোখ অন্ধকার বানিয়ে চুপ করে গেল।

নিনিত বলল,
” যাই বলিস এখানের মত এত ফ্রেশ খাবার আমি খুব কমই খেয়েছি। আচ্ছা আমরা কি নাস্তা করেই ব্যাক করব! ”

“তাহলে নিজের টাকা গচ্চা যাবে। ওদের বাসটা ছাড়ে প্রতিদিন জাম্প শেষ হওয়ার পর। এখন যদি সকালে নিজ খরচে যেতে চাই তাহলে
রিসোর্ট থেকে কাঠমন্ডু আসার জন্য যদি গাড়ী রিজার্ভ করি তাহলে প্রায় ৯০০০ নেপালি রুপি দিতে হবে । ” সাইমুন ঠোঁট বাকিয়ে বলল।

” কালকে তো পোখরাতে যাব। সেই মতে সকালেই বের হওয়া উচিৎ। আমরা চাইলে
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করতে পারি।” তানভীর উচ্ছ্বসিত গলায় বলল।

” যা, না করছে কে? টাকা বাচবে
৭০০-৯০০ নেপালি রুপি খরচ হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে ১২ টা যে বেজে যাবে! অনেক দূর সমানে রাস্তায় অনেক বার গাড়ী থামাবে, লোক তুলবে যেটা বিরক্তিকর! আমার মতে ওদের গাড়িতেই আসা উচিত হবে।”
সাইমুন বিরক্তি নিয়ে বলল।

” ওহ্ শিট হিসেব তো মিলছে না। ” নিনিত বলল অবশেষে।
অনন্যা কিছু বলতে চাইছিল তার পূর্বেই অঙ্কন বলল,
” আই থিংক তোমাদের থাকাটা উচিৎ। সরি আমি থাকতে পারছি না। তোমরা এনজয় করো আমি আসছি।”
অঙ্কন বিনাবাক্যব্যয়ে গটগট করে বন্ধুদের জটলা থেকে বের হয়ে আসল।
সবাই হতভম্ব হয়ে পথের দিকে চেয়ে থাকল। এই উচ্ছ্বাসভরা জটলা মুহুর্তেই ম্লান হয়ে যেতে বেশিক্ষণ লাগলো না

পুরো পরিবেশটাই কেমন দমবন্ধ লাগল অনন্যার। অজানা সঙ্কোচে এতোক্ষণ যে কথাটা সে বলতে পারেনি মুহুর্তেই মাঝেই মুখ দিয়ে সেই কথাটা বের হয়ে গেল,
” আমি এখানে থাকছি না। তোরা থাকলে থাকতে পারিস।”
অনন্যা কথাটা বলে আর এইমুহুর্তও দাঁড়ালো না।

আর একটু পরেই গাড়ি ছেড়ে দিবে। অঙ্কন একধ্যানে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। মনটা কিঞ্চিৎ বিষন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে তার নিজের সুন্দর সাজানো গুছানো রঙ্গিন পৃথিবীটা যেন আস্তে আস্তে এক ধূসর দেয়ালে ঢেকে যাচ্ছে। কী থেকে কেন হচ্ছে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। এরকম এলোমেলো খাপছাড়া জীবনতো সে চায়নি?
একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস পিছলিয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করেই রাখে। জানে অনন্যাকে কাছে পাওয়া হবে না তবুও অবাধ্য মনটা বারবার অনন্যার সান্নিধ্য চাইছে। এতোটা ব্যাকুলতা কী করে লুকিয়ে সে রাখবে! কোন উত্তর নেই।
হঠাৎ কারো ধপাস করে পাশে কেউ বসার শব্দে অঙ্কন হতচকিত তাকায়।
অনন্যা মুখটা হাড়ির মত বানিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু বলার জন্য অঙ্কন মুখটা খুলে। তার পূর্বেই বুকে এলোপাথাড়ি আঘাত পড়তে থাকে। ইতিপূর্বে এমনতর মধুর আঘাত তার পাওয়া হয়নি। তাই বিস্ময় ভরা চাহনিতে অনন্যার রুদ্রমূর্তি তার খারাপ লাগলো না। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলো ঘোর লাগা চোখে৷ ধাতস্থ হলো যখন অনন্যার দু’ফোটা চোখের জল তার বুকের ঠিক মাঝখানে আছড়ে পড়ে হৃৎপিন্ড ভেদ করে চলে যায়। তার সমস্ত শরীর নীলচে বেদনায় গুঙাতে থাকে। অনন্যাকে দু’হাতে জাঁপটে ধরে বুকের কাছে টেনে নিতে নিতে সে বলে,
” অনন্যা, প্লিজ শান্ত হও। আমাকে কিছু বলতে দাও।”
অনন্যা বুকের সাথে মিশে গিয়েও এই কথার প্রতিউত্তরে ছটফট করে উঠল।
” তুমি খুব খারাপ! একটাও কথা বলবে না।”
” জানি আমি!”
এই কথাতেও অনন্যা আরো দ্বিগুন চটে গেল।
” কী করে পারলে আমাকে ফেলে আসতে! একা একা ব্যাচেলর হিসেবে ঘুরে বেড়াতে খুব মজা তাই না! এই লুকোচুরি বিয়ে আমার ভালো লাগছে না। আমার কিচ্ছু চাইনা। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়।”
অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে প্রায় হেঁচকি তুলে ফেলছিলো।
অঙ্কনের বুকের পাজর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। গভীরভাবে অনুভব করে আর যাই হোক অনন্যার চোখের জল তার সহ্য হয়না। সবচেয়ে কষ্টদায়ক ব্যাপার হচ্ছে স্বেচ্ছায় অনন্যাকে এই কষ্টগুলো সে জেনে বুঝেই দিচ্ছে। হঠাৎ করেই তার মস্তিষ্ক অসাড় নিশ্চল হয়ে পড়লো।
দু’হাত কাঁপতে কাঁপতে অনন্যার চিবুক স্পর্শ করলো। জল মুছতে মুছতে কোনরকমে ধরা গলায় বলল,
” তোমাকে ছাড়া আমারও খুব কষ্ট হয়। এই বুকে বড় ব্যাথা। তুমি বুঝতে পারো অনন্যা! একটু ছুঁয়ে দেখ কতটা কষ্ট জমানো আছে।”
অঙ্কন অনন্যার ডান হাত নিজের বুকে ছুঁইয়ে দিতে দিতে বলল।
অনন্যা অনেকটা শান্ত হয়ে অঙ্কনের জ্বলন্ত চোখের দিকে তাকায়। হঠাৎ করেই কপালে উষ্ণ
চুম্বন একে দিয়ে অঙ্কন বলল,
” আমি সবসময় চাই তুমি ভালো থাক আনন্দে থাক। আমি ভেবেছি ওদের সাথে থাকলেই তুমি ভাল থাকবে। তাছাড়া তুমি নিজে থেকে সম্মতি না জানালে আমি কী করে জোর করে নিয়ে আসতাম। ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটু কেন বুঝনা। আর তো প্রায় তিন চারদিনের মত এখানে আছো। বাড়ি ফিরে যাও। আমি ব্যাক করে যা করার একটা কিছু করব। ততদিন একটু অপেক্ষা করো। তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয়না। খবরদার আমার সামনে আর একটুও কাঁদবে না।”
অনন্যা কেবল নির্বাক চোখে অঙ্কনের টানা চোখের দীঘল ঘণ পাপড়ির দিকে তাকিয়ে থাকল। হাসলে তার চোখও যেন হাসে। মনে মনে ভেবে নেয় তার প্রথম সন্তান যেন ছেলে হয় আর হবুহু বাবার মতো হয়। যখন সে কাছে না থাকবে তখন জুনিয়র অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে সমস্ত দুঃখ পোষাবে। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করে সে। এরপর কী জানি কেমন করে মনটা অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গেল।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে